তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -১৫

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৫

হাত বাড়িয়ে যেই না পোস্টার টা ছিঁড়তে গেলো ওমনি ক্লাসরুমের ভেতর থেকে একটা হাত এসে নিঝুমের হাত ধরল। ভয়ে চিৎকার করে উঠল নিঝুম। তার হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পেরে উঠছে না। শেষমেষ ক্লাসের ভেতর চলেই গেল সে। আহিম এসে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল। নিঝুম ধপাস করে দরজার কাছে বসে পড়ল। জলদি করে উঠে দরজা ধাক্কা দিতে লাগল। চিৎকার করতে লাগলো কিন্তু কেউই তার কথা শুনছে না। হঠাৎ হাতের ফোনের কথা মনে করল। মেঝেতে পড়ে যাওয়াতে ফোনটা ছিটকে দূরে পড়ে গেছে। নিঝুম তা খোঁজার জন্য’ই পাগল হয়ে গেল।‌হঠাৎ শান্ত বলে উঠল,

“তুমি কি এটা খুঁজছো!

নিঝুম ফিরে দেখল শান্ত’র হাতে তার ফোন। সে ছুটে গেল সেটা নেবার জন্য। বিপত্তি তখন ঘটল যখন শান্ত তার হাত উঁচু করে বলল, “নাও!

নিঝুম লাফিয়ে তা নেবার চেষ্টা করল কিন্তু সম্ভব হলো না। শান্ত হেসে নিঝুমের মাথায় হাত দিয়ে দূরে সরিয়ে বলল,

“তুমি এখনো খুব ছোট বুঝলে!

“আমার ফোন দিন।

“আমি ধরে রেখেছি কোথায় নিয়ে নাও!

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে ফোনের দিকে তাকাল। ফোনের স্ক্রিন অফ, শান্ত’র ফোন অন করতে হলে অবশ্যই আনলক করা লাগবে। তাছাড়া সম্ভব না। আর রইলো রেকডিং! তা কি হচ্ছে! হচ্ছে বোধহয়! নিঝুম চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

“আমায় এখানে কেন নিয়ে এসেছেন!

শান্ত হেসে বলল, “তোমার সারপ্রাইজ! ভুলে গেলে নাকি।

“যেতে দিন এখান থেকে আমায়।

“চলে যাও, আমি তো তোমায় আর বেঁধে রাখি নি।

“দরজা বাহির থেকে বন্ধ!

“আমি তো তোমার সামনে এর মানে নিশ্চিত আমি বন্ধ করি নি।

“তাহলে কি ভূত এসে করে গেল।

“করলেও করতে পারে।

“আআআ! আপনি কেন করছেন এমন।

“তোমাকে জ্বালাতে বেশ ভালো লাগে মিস চশমিশ!

“একদম বাড়াবাড়ি করবেন না বলে দিলাম। আমার ফোন আমায় দিন। যেতে দিন এখান থেকে।

“মামার বাড়ি আবদার নাকি।

“আপনার মতো মামার আমার দরকারও নেই।

শান্ত ধপাস করে নিঝুমের মাথায় বাড়ি মেরে বলে, “মাথাটা কি গেছে তোমার?

“আমার না আপনার গেছে।

“তা ঠিক, তুমি চড় মারার পর সবকিছু্ই উল্টো হয়ে গেছে। মনে আছে আমায় চড় মেরেছিলে তুমি।

“বেশ করেছি মেরেছি। দরকার পড়লে আরেকটা মারবো!

বলেই হাত তুলতে গেল। শান্ত তখনই তার হাত মুচরে ধরে পেছনে ঘুড়িয়ে নিল। অতঃপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, “দ্বিতীয় বারের মতো ভুলটা না তুমি করবে আর না আমি। এবার আমায় মারলে আমি বসে থাকবো না।

“কককি করবেন?

“উপরে ফ্যান দেখছো!

নিঝুম ঢোক গিলে উপরের ফ্যানের দিকে তাকাল। শান্ত’র হাসির শব্দ পাচ্ছে সে। রাগে তার পায়ে পারা মেরে বসল নিঝুম। শান্ত ছেড়ে দিল তাকে। নিঝুম নাক ফুলিয়ে বলল,

“ঠিক হয়েছে , এহ আমাকে আসছে ফ্যানে ঝুলাতে। আপনাকে শেউলা গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখবো আমি। শেউলা গাছের পেত্নীর সাথে বিয়ে দেবো তখন বুঝবেন।

শান্ত কোনমতে বেঞ্চের সাথে হেলান দিয়ে বলল, “পেত্নির মরার পর বিয়ে নাকি। তুমি যে ঘটকালি করছো! তা কতো টাকা দেবে তোমায়।

নিঝুম বিড় বিড় করে বলল, “অশান্ত’র বাচ্চা!

“কি বলছো জোরে জোরে বলো। বিড় বিড় করে কি বলো হুম?

“সব অশান্তি মূল আপনি জানেন সেটা।

“না তোমার থেকেই জানলাম।

নিঝুম হন হন করে শান্ত’র সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“ভালোই ভালোই এখনো বলছি এখান থেকে যেতে দিন আমায়। নাহলে আমি..

“কি কামড় দেবে!

বলেই হাসল শান্ত। নিঝুম লক্ষ্য করলো শান্ত’র হাতে তার ফোন। সে ছুটে যেই না সেটা নিতে যাবে অমনি শান্ত তাকে ল্যাং মেরে সরে গেলো। নিঝুম আর একটুর জন্য বেঁচে গেল। নাহলে এখনি এসে বেঞ্চের সাথে বাড়ি খেয়ে রক্তা*রক্তি কান্ড ঘটতো। শান্ত আরেকটা বেঞ্চের উপর বসে বলে,

“ছোট মরিচের ঝাল বেশি! পিচ্চি একটা মেয়ে আসছে আমার সাথে লাগতে। একবার ভেবেছিলে চড় মারার আগে।

“ভাবি নি! আপনি যা করেছেন এরপর আর ভাবতে হয় নি।

“তোমার সমস্যা এখানেই, না ভেবে লাফিয়ে যাও।

“বেশ করেছি তাতে আপনার কি? আপনার ভাগের টা খেয়ে নিয়েছি নাকি।

“চাইলে খেতে পারো আমি ডাইটে আছি।

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। তার এখন ইচ্ছে করছে চেঁচিয়ে বসে কাঁদতে। আআআআ করে চিৎকার করে ঝপাস করে মেঝেতে বসে পড়ল। শান্ত’র সাথে কথায় পাড়ছে না সে। শান্ত জোরে জোরে হেসে বলল, “হার মানছো তাহলে!

“হ্যাঁ‌ মানছি, এবার যেতে দিন আমায়।

“এভাবেই এভাবেই! আমি যে সারপ্রাইজ আনলাম তার কি হবে?

নিঝুম ভ্রু কুঁচকালো। শান্ত এবার উঠে দাঁড়াল। বলতে লাগল, “যদিও আমার মনে হচ্ছে তুমি এগুলো দেখেই ফেলেছো!

বলেই সেই পোস্টার গুলো বের করল। অনেক গুলো পোস্টার!

নিঝুম হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। শান্ত তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “দেখেছো এখানে তোমাকে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। চশমা টা একদম ঠিক আছে। নামটাও পারফেক্ট! মিস চশমিশ!

“আ… আপনি এতো গুলো পোস্টার ছাপিয়েছেন!

“হ্যাঁ , কিন্তু এখনো লাগানো হয় নি!

নিঝুম উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “পাগল নাকি! একদম না এগুলো একটাও লাগাবেন না আপনি।

“কিন্তু আমি তো লাগাবো।

“অশান্ত!

শান্ত হেলে দুলে বলে, “ঝুম ঝুমাঝুম ঝুম!

অতঃপর পোস্টার গুলো সব ছুঁড়ে মারে নিঝুমের দিকে। নিঝুম একে একে পোস্টার গুলো উঠিয়ে ছিঁড়তে থাকে। শান্ত দাঁড়িয়ে তার কাজ দেখছে। একে একে সব গুলো পোস্টার ছিঁড়ছে সে। রেগে তাকিয়ে আছে অশান্ত’র দিকে। ইচ্ছে করছে এই কাগজের মতো তাকেও যদি ছিঁড়তে পারতো সে।

—–

শান্ত’র খোঁজ করছে আহনাফ। পুরো ভার্সিটিতে খোঁজ শেষ তার। বার বার ফোন করে যাচ্ছে তাকে কিন্তু ফোন তুলছে না সে। অতঃপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো সে।

এদিকে নিঝুম সব পোস্টার ছিঁড়তে ছিঁড়তে এখন ক্লান্ত! অনেকটা হাঁফিয়ে গেছে সে। রেগে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে শান্ত’র দিকে! শান্ত দাঁত বের করে হেসে বলল, “তা সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলল। অনেক হাঁফিয়ে গেছো, পানি খাবে!

নিঝুম কিছু বলছে না। এদিকে শান্ত হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে, “ওই যে ওদিক! ওদিকে আরেকটা পোস্টার আছে সেটাও ছিঁড়তে ভুলে গেছো।

নিঝুম ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে বলল, “আপনি খারাপ! খুব খারাপ। এতোটুকু ভালো নেই আপনার মাঝে। সবসময় মানুষের খারাপ করেন আপনি, সবসময়। আমি ঘৃণা করি আপনার মতো মানুষদের।

শান্ত চুপ হয়ে গেল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে। নিঝুম রাগে ফুঁসছে! শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তুমি ভুল মিস চশমিশ! তুমি আমায় যতোটা খারাপ ভাবছো, আমি তার চেয়েও খারাপ! ( অতঃপর বাঁকা হেসে আরো কতোকগুলো পোস্টার হাতে নিয়ে বলল, ) এই দেখো তার প্রমাণ!

“অশান্ত’র বাচ্চা!

বলে চেঁচিয়ে নিঝুম হামলা করলো শান্ত’র উপর! শান্ত এবার আর তাকে পোস্টার গুলো দিচ্ছে না। হাত উঁচু করে ধরে রেখেছে। নিঝুম লাফিয়ে তা নেবার চেষ্টা করছে। শান্ত হেসে বলল, “নাও, তোমাকে একটা চান্স দিই। যদি এই পোস্টার গুলো নিতে পারো তাহলে আর এগুলো ভার্সিটিতে লাগাবো না আমি। রাস্তায় লাগাবো!

বলেই হেসে দেয়। নিঝুম রেগে এগুলো ধরবার চেষ্টা করে। শান্ত দৌড়ে অন্যদিকে চলে এসে বলল, “এই নাও ধরো! এই যে!

নিঝুম কে রীতিমতো তার পিছনে ঘুরপাক খাইয়ে যাচ্ছে সে। নিঝুম শেষমেষ উঠে দাঁড়াল বেঞ্চের উপর। পুরো হাত বুলিয়ে বেঞ্চে! শান্ত বলে উঠল, “আরে আরে চশমিশ কি করছো পড়ে যাবে যে!

“আমার ফোন দিন!

বলেই শান্ত’র মারামারি করতে থাকে। একসময় বেসামাল হয়ে শান্ত কে সাথে নিয়েই ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায় সে…

আহনাফ এখানে দাঁড়িয়ে শান্ত কে ফোন দিতে থাকে। হঠাৎ করেই কিছু পড়ে যাবার শব্দ পায় সে। আহনাফ হেঁটে এসে দাঁড়ায় ক্লাসরুমের দিকে। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ! ভেতরে কি কেউ আছে। আহনাফ দরজায় কান পাতল। না ভেতর থেকে কোন আওয়াজ তো পাওয়া যাচ্ছে না।

সব শান্ত! নিঝুম শান্ত’র উপর পড়ে আছে। চোখের চশমাটা ঠিক করে সামনের দিকে তাকাতেই হতচকিয়ে যায় সে। শান্ত তার দিকেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তার ঠোঁট শান্ত’র ঠোঁটের উপর। দুজনেই চোখের পাতা ফেলে একে অপরেকে দেখছে। নিঝুম দ্রুত মুখ তুলে চিৎকার দেয়। তার সাথে চিৎকার দিয়ে উঠে শান্ত’ও! নিঝুম দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। হাত পা কাঁপছে তার। শান্ত নিজের ঠোঁটে হাত রেখে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলে, “চশমিশের বাচ্চা!

তখনই দরজা খুলে প্রবেশ করে আহনাফ! নিঝুম দরজা খুলতে দেখে দ্রুত তার ফোন হাতে নিয়ে ছুটে চলে যায়। আহনাফ অবাক হয়ে সরে দাঁড়ায়! অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে শান্ত’র দিকে। শান্ত রাগে ফুঁসছে। কিন্তু হলো টা কি ? পায়ের কাছে একটা কাগজ উড়ে এলো তার। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে পোস্টার হাতে নিয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, “নিঝুম না!

শান্ত জবাব দেয় না। রেগে উঠে হন হন করে চলে যায় সে। আহনাফ তাকিয়ে থাকে ক্লাসরুমের দিকে। পোস্টার গুলো একে একে তুলতে থাকে সে!

——

নিঝুম দৌড়ে ছুটে যাচ্ছে। অনেক দূর আসার পর দাঁড়িয়ে হাঁফাতে থাকে সে। ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে কপালের ঘাম মুছে সে। অতঃপর হঠাৎ করেই হাত রাখে তার ঠোঁটের উপর।‌শরীর শিউরে উঠে তার। যা কিছু হলো সেসব কি সত্যি ছিল। নিঝুম মাথা নাড়িয়ে বলে, না না এমনটা হতে পারে না।

আবারো জোরে জোরে হাঁটতে শুরু করে সে। হঠাৎ করেই সামনে এসে দাঁড়াল তানিশা, রিয়া আর দিয়া! নিঝুম থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তানিশা বলে উঠল, “কি ব্যাপার খুব তাড়া দেখছি!

রিয়া বলে উঠে, “তাড়া হবে না। যেই কান্ড ঘটালো।

দিয়া বলে উঠে, “আমি এই মেয়েকে যত দেখি ততোই অবাক হই। সবসময় কান্ড ঘটানোর জন্য যেন বসে থাকে।

তানিশা বলে উঠে, “আমি তো ভাবছি শান্ত’র কথা। না জানি কি সব প্ল্যান করে রেখেছে ওর জন্য। শান্ত কে চড় মেরেছে এতো সহজে কি ছেড়ে দিবে।

“শুধু কি চড়, দেখলি না কাল তমা’র হয়ে কথাও বলছিল।

“সেধে এসে নিজেকে এসবের মাঝে ফেলে কি আর করার বল।

তানিশা নিঝুমের কপালে টোকা দিয়ে বলে, “তা তুমি কেন এলে ভার্সিটিতে। আমি তো ভেবেছি পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না। কখনো নাম করবে না ভার্সিটির। আর শেষমেষ এসে হাজির হলে বাঘের গুহায়!

একে একে তিন জনই কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিঝুম তাদের কোন কথা কানে দিচ্ছে না। সে শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়েই আছে। তানিশা তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল, “কি হলো? কোথায় হারিয়ে গেলে, আমার কথা শুনছো তুমি!

নিঝুমের ঘোড় ফিরল। তানিশার দিকে তাকিয়ে বলল, “আই নিড টু গো টু ওয়াশরুম। এক্সকিউজ মি!

বলেই তাদের সরিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমের দিকে দৌড়ে গেল সে। মুখে বার বার পানি ছিটাচ্ছে নিঝুম। আয়নায় নিজের মুখ দেখছে সে। ঠোঁটে হাত রাখতেই তখনকার কথা মনে পড়ল তার। নিঝুম ঢোক গিলে ঠোঁট ঢলতে লাগলো। ইচ্ছে মতো ঘসতে লাগল ঠোঁট দুটো। কোনোকিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না তার। মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। যা হয়েছে সেটা তো একটা এক্সিডেন্ট। এটা তো আর সে ইচ্ছে করে নি। নিঝুম ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে লাগল। অতঃপর নিজের ফোনের দিকে নজর গেল তার। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সব কিছূই‌ রেকর্ড হয়েছে। ফোনটা বন্ধ করে রেখে আবারো মুখে পানি ছিটাতে লাগল সে।

ভার্সিটিতে পেছনের দিকে খালি জায়গায় সব গুলো পোস্টার আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে আহনাফ। শেষ পোস্টার টা হাতে নিয়ে মুঠো করে আগুনের মাঝে ফেলে দিল সে। আগুনের মাঝেই সব পুড়ে ছাই হতে লাগলো!

#চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here