তোমার_অপেক্ষায় পর্ব ১

– কা,,,কালকে আমাদের বিয়ে রাফি,,আর আজকে তুমি,,তুমি এইসব!!

এইটা বলতেই আমার সারা শরীর শিউরে উঠলো,, হাত পা কাপছে,,চোখে পানি টলটল করছে,,আর গলা দিয়ে যেন কিছু বের হচ্ছে না৷ রাফি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বিছানা ছেরে উঠে আমার কাছে এসে বলল
–হ্যা,,কালকে আমাদের বিয়ে! আর আজকে আমাদের হলুদ তুমি এখানে কি করছো তারাতাড়ি গিয়ে রেডি হয়!

আমি বিছানার দিকে তাকালাম শরীরে চাঁদর জরিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে একটি মেয়ে যার সাথে এতক্ষন আমার হবু বর,,,,,,,এবার চোখের পানি আর সামলাতে পারলাম না,, দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কেদে দিলাম৷ রাফি একবার পিছনে তাকিয়ে রাগি শ্বরে সেই মেয়েকে বলল
–এই মেয়ে তোর মন ভরে নি,, এভাবে বসে আছিস কেন? এখনি চলে যা এখান থেকে,, দেখছিস না আমার হবু বউ এসেছে আমার সাথে দেখা করতে!

সাথে সাথে মেয়েটা চাঁদর জড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো৷ তারপর রাফি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
–হ্যা তুমি কি জন্য এসেছিলে এখানে? আজকে আমাদের হলুদ গিয়ে রেডি হয়ে নাও তারাতাড়ি!

আমি মুখের থেকে হাত সরিয়ে কান্না করতে করতেই বললাম
–রাফি প্লিজ আর একটা কথাও বলো না,,আমি আর সহ্য করতে পারছি না প্লিজ!

রাফি আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–কেন কি হয়েছে? তুমি খুশি না যে আজকে আমাদের গায়ে হলুদ?

আমি সাথে সাথে আমার মাথা থেকে রাফির হাত সরিয়ে ফেললাম তারপর কিছু বলবো তখন ওই মেয়েটা ওয়াশরুম থেকে জামা কাপর পরে বের হয়ে একবার রাফির দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷ তারপর আমি একটু রেগে রাফিকে বললাম
– রাফি সত্যি তোমার মনে হয় এর পরেও আমি আজকে গিয়ে রেডি হবো তোমার সাথে বিয়ে করতে!

এটা বলে কান্না করতে করতে সেখান থেকে চলে আসতে নিলে পিছন থেকে রাফি ডেকে বলল
– তুমি জানো তোমার বাবা একজন হার্ট এর রোগি,,আর উনি তোমার ভালোর জন্যই তোমাকে আমার হাতে তুলে দিচ্ছে,,তুমি যদি এখন উনাকে গিয়ে বল যে তুমি এই বিয়ে করতে চাও না তাহলে তুমি জানো কি হতে পারে,,,তাছারা তোমার বাবার কাছে বেশি সময়ও নেই,,,আর চাইলে তুমি এইসব সত্যিও বলে দিতে পারো উনাকে কিন্তু তুমি জানো উনি বিশ্বাস করবে না কারন উনি জানে আমার মতো ভালো ভদ্র ছেলে আর হতেই পারে না!

আমি পিছনে ঘুরে একবার ওর দিকে ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকালাম তারপর কাদতে কাদতে সেখান থেকে এক ছুটে চলে এলাম৷

আমার নাম সাদিকা মাহবুব,,২ বছর আগে মা মারা গেছে তখন থেকে বাবারও শরীর ভালো থাকে না,,বাবার হার্ট এর সমস্যা আছে এর আগে একবার মা মারা যাওয়ার পর হার্ট অ্যাটাক করেছিল বাবা,, তখন আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,, আমি একা কি করবো বুঝতে পারছিলাম না,,বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল রাফসান আংকেল উনি এসে আমাকে হেল্প করে বাবাকে হাস্পাতালে নিয়ে যেতে,, ডাক্তার বলে যে বাবার যদি আর একবার এমন হয় তাহলে বাবা মারা যাবে তাই বাবা যেন কোন ধরনের কষ্ট বা কোন এমন সিচুয়েশনে না পরে যার ফলে বাবার আবার এমন হয়৷ আমার দুনিয়াতে কেউ নেই, এখন বাবা মরে গেলে আমার কি হবে এটা ভেবে বাবা আর রাফসান আংকেল মিলে আমার আর উনার ছেলে রাফির সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে যেখানে আমার কোন মত ছিল না কারন,,,,,,৷ কিন্তু রাফি অনেক পাগল হয়ে যায় আমাকে বিয়ে করার জন্য,, আমি বাবাকে প্রথমে একবার বলেছিলাম যে আমি বিয়ে করতে চাই না বাবা আমাকে বুঝাতে লাগে কিন্তু আমি বুঝতেই পারছিলাম না হঠাৎ বাবার বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়৷ এর পর আমার আর সাহস হয় না এই বিয়েতে না করার৷ আমার করনিয় একটা জিনিসই ছিল সেটা হলো কান্না করা আর শুধুই কান্না করা৷ প্রথমে আমি জানতাম রাফি একটা অনেক ভালো ভদ্র ছেলে কিন্তু আজ তা ভুল প্রমানিত হয়ে গেলো৷ আমি একটা কাজে গিয়েছিলাম রাফির বাসায়,, গিয়ে দেখলাম বাসায় কেউ নেই,, তারপর রাফিকে খুজতে খুজতে রাফির রুমে চলে গেলাম৷ হঠাৎ রুমের দরজা খুলে যা দেখলাম তাতে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো৷

রাফির বাসা থেকে বের হয়েই সোজা বাসায় চলে এলাম৷ আজকে আমি বাবাকে সব সত্যিটা বলে দিব যাই হোক,, রাফির মত একটা কাপুরুষ কে আমি কি করে বিয়ে করবো এটা কক্ষনো সম্ভব না,, যে নাকি নিজের হবু বউ এর সামনেই অন্য মেয়ের সাথে,,,,৷ চোখের পানি মুছে বাবার কাছে এসে দাড়ালাম৷ বাবা কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে৷ ফোনে কথা বলতে বলতেই বাবা নিজের বুক চেপে ধরলেন৷ আমি বুঝলাম না কি হচ্ছে বাবা কার সাথে কথা বলছে৷ বাবা ফোন রাখতেই আমি কিছু বলবো তার আগেই বাবা বলে উঠলো
–সাদিকা আমি তোকে আগেও বলেছি রাফি অনেক ভালো ছেলে তুই,,তুই কেন এমন করছিস? তুই যদি রাফিকে বিয়ে না করিস তাহলে,,

–বাবা আগে আমার কথাটা শুনো আমি,,,,,

হঠাৎ বাবা দুই হাত দিয়ে তার বুক চেপে ধরলেন,,আমি ভয় পেয়ে গেলাম তারাতাড়ি বাবাকে ধরে তারপর পানি এনে আর বাবার ঔষধ এনে বাবাকে খাওয়ালাম৷ ঔষধ খাওয়ার পর যেন বাবা একটু শান্তি পেলেন৷ কিছুক্ষনের জন্য যেন আমার আত্না উরে গিয়েছিল৷ না না আমি বাবাকে হারাতে পারবো না কিছুতেই না,, বাবা ছাড়া আমার কেউ নেই আর আমি আমার বাবাকে অনেক ভালোবাসি৷ কিন্তু আমি কি করে রাফিকে বিয়ে করবো? একটা মেয়ে যদি তার হবু বরকে এভাবে,,,,,,এটা কি করে সম্ভব? আমি এখন বাবাকে কিভাবে বুঝাবো? বাবাকে বাবার রুমে শুইয়ে দিয়ে আমি আমার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগলাম৷ নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না৷ হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো,, আমি ফোন হাতে নিতে দেখলাম রাফির কল৷ ফোনের স্ক্রিনে রাফির নাম দেখে আমার আরো কান্না আসছে৷ যে মানুষ কে এত ভালো ভেবেছিলাম সে এমন কি কিরে হলো? আসলেও মানুষের এক রুপের পিছনে আরেক রুপ লুকিয়ে থাকে যেটা দেখা বা চিনা বড় দায়৷ আমি ফোন ধরে কানে দিতে রাফি বলল
–কি হয়েছে সাদু বেবি এবার বলো আমাকে বিয়ে করবে নাকি?

– তার মানে তখন বাবাকে তুমি কল করেছিলে?

–হ্যা ভাবলাম তুমি গিয়ে উনাকে কি বলবে তার আগে আমি বলে দেই৷ আচ্ছা যাই হোক এইসব বাদ দিয়ে এখন রেডি হও গিয়ে আজকে আমাদের হলুদ!

আমি কান্না জরিত কন্ঠে বললাম
–রাফি প্লিজ,,,,!

– আ,,, কোন প্লিজ না সাদু বেবি! যাও গিয়ে রেডি হয়ে নাও,,, নাহলে আমার তোমার বাবাকে কল দিতে বেশি দেরি লাগবে না! তুমি বলো আমাকে বিয়ে করবে নাকি আমি তোমার বাবাকে কল দিয়ে বলবো যে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইছো না! যদি বলো না তাহলে ঠিক আছে আমি তোমার বাবাকে কল দিয়ে বলে দেই,,,এইতো বেশি কিছু হবে না শুধু তোমার বাবা একটু কষ্ট পাবে তারপর হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবে অকে আমি কল দেই তোমার বাবাকে,,,,,,

–না না রাফি প্লিজ! এমন কিছু করবে না প্লিজ!

–তাহলে বলো!

এবার আমার বুক ফেটে কান্না আসছে অনেক আমি কি করে বলবো যে হ্যা আমি তোমাকে বিয়ে করবো? মানে কি করে? আমার গলা দিয়ে এই কথাটা কোন মতেই বের হবে না,,,কিন্তু শুধু মাত্র বাবাকে বাচানোর জন্য আমার এটা সম্ভব করতে হবে৷ অনেক কষ্টে কান্না জরিত কন্ঠে বললাম
–হ,,,হ্যা আমি কর,,,,করবো!

রাফি আর কিছু বললো না ফোনটা সাথে সাথে কেটে দিয়ে একটা বাকা হাসি দিল৷ আর আমি ধপ করে নিচে বসে পড়লাম৷ তারপর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না করতে লাগলাম৷

আয়নার সামনে বসে আছি একেবারে হলুদের জন্য পুরো রেডি হয়ে৷ একটু আগে রাফসান আংকেল এসেছিল উনার সাথে পার্লার এর মেয়ে নিয়ে৷ এতক্ষন ওরাই আমাকে রেডি করে দিয়েছে৷ আর আমি মুর্তির ন্যায় বসে ছিলাম৷ এই মুহুর্তে আমার চোখে পানি টলটল করছে৷ মাথায় একটা জিনিসই চলছে ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছি আমার কি ওকে একবার কল করে সবটা বলা উচিৎ? কিন্তু কি করে ও এইসব কখনোই সহ্য করতে পারবে না,, ও এখনি ছুটে এখানে চলে আসবে আর আমার এই বিয়েটা হতে দিবে না আর বিয়ে না হলে,,,,,৷ আর এখন ওকে যদি আমি কল না করি আমার নিজেকে নিজে অনেক বড় অপরাধি মনে হবে৷ আমি এইসব চিন্তা করছি আর ভিতরে ভিতরে নিজেকে জালিয়ে মারছি৷ কারণ,,আমি ওকে শুধু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি! হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ‘সাফির’ নামটা যেটা দেখে আমার বুকে মোচর দিয়ে উঠলো৷

চলবে,,,,,,,

#তোমার_অপেক্ষায়🥀
#পর্ব_১
#Arohi_Ayat

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💖)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here