তোমার_অপেক্ষায় পর্ব ২+৩

#তোমার_অপেক্ষায় 🥀
#পর্ব_২+৩
#Arohi_Ayat

মাত্র হলুদের ফাংশন শেষ হলো৷ এতক্ষন যে কিভাবে এইসব সহ্য করেছি আমিই জানি৷ নিজের রুমে এসে রাগে শরীরে যত গয়না আছে সব ফ্লোরে ছুরে মারলাম৷ তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে একেবারে ঝরনা ছেরে সেটার নিচে দাঁড়িয়ে পরলাম৷ আমি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই করতে পারছি না৷ মাথাটা একেবারে ভারি হয়ে আছে৷ আবার চোখ দিয়ে পানি পরছে,, আর হাত পা নারাতে পারছিনা,, শরীরটা অনেক দূর্বল লাগছে যেন আমার মধ্যে কোন শক্তি নেই৷ আস্তে আস্তে সেখানেই ঝরনার নিচে বসে পড়লাম৷ সেখানে বসেই অনেক কান্না শুরু করে দিলাম৷ প্রায় এক ঘন্টা পর্যন্ত পানির নিচে বসেই কান্না করলাম৷ হঠাৎ বাহিরে থেকে ফোন বেজে উঠার শব্দ পেলাম৷ হয়তো ওই রাফি কল করেছে, এটা ভেবে রাগে ফ্লোরে কত গুলি বারি দিলাম৷ কিন্তু বাহিরে গিয়ে ফোন ধরলাম না৷ অনেক্ষন ধরে ফোনটা লাগাতার বেজেই চলছে,, কিন্তু আমি ধরবো না কল৷ আরও কিছুক্ষন পর আর বসে থাকতে পারছিনা পানির নিচে শরীরটা এখন আরও বেশি দূর্বল লাগছে৷ তাই আস্তে করে উঠে ঝরনা অফ করে ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলাম৷ তারপর আস্তে করে শুয়ে পড়লাম৷ কানের সামনে ফোনটা আবার বেজে উঠলো৷ এভাবেই মাথা অনেক ব্যাথা তার উপর এই ফোন,,রাফি বার বার কেন কল করছে অনেক রাগ লাগছে৷ কে কল করেছে সেটা না দেখেই ফোন কানে নিয়ে রাগে বললাম
–কেন কল করছো আমাকে বার বার? আমি কথা বলতে চাই না তোমার মত একটা ছেলের সাথে,,,আমার ঘৃনা হয় তোমাকে অনেক অনেক বেশি!

এটা বলে কল কাটবো তখনি দেখলাম স্ক্রিনের উপর ‘সাফির’ নাম লেখা সাথে সাথে আমার ভয়ে আত্না কেপে উঠলো৷ আমি লাফ দিয়ে উঠে বসে ফোন আবার কানে দিলাম৷ ওইপাশ থেকে একটু রাগি শ্বরে সাফির ভাইয়া বলল
–সাদিকা কি বলছিস এইসব পাগল হয়ে গেছিস?আর এতক্ষন ধরে যে কল দিচ্ছে কেন পিক আপ করছিস না?

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না,, আমি এতক্ষন ভাবছিলাম এটা রাফি৷ আমি অনেকটা ভয়ার্ত শ্বরে বললাম
–আ,,আসলে আমি শাওয়ার নিচ্ছিলাম এতক্ষন!

–তাহলে এখন কি বললি এইসব উল্টা পাল্টা?

– আ,,আসলে আমি,,আমি ঘুমের মধ্যে ছিলাম,, আমি,,,,

আমার শরীর হাত পা অনেক কাপছে সাথে গলাও,, মাথাও অনেক ব্যাথা করছে৷ সাফির ভাইয়া বলে উঠলো
–তুই এভাবে কথা বলছিস কেন সব ঠিক আছে তো? তোর জর এসেছে নাকি?

–না,,না এমন কিছু না!

–আচ্ছা শুন যে খবরটা দিতে তোকে কল করেছি,,আমি পরশু দিন বাংলাদেশে ফিরছি,,তোর কাছে ফিরছি,, এবার আমাদের মধ্যে আর কোন দুরুত্ব থাকবে না! (খুশি হয়ে)

এটা শুনে যেন আমার হাত পা অবশ হয়ে গেলো, আর আমার বুকের ধকপক বেরে গেছে৷ সাফির ভাইয়া পরশু দিন ফিরে আসছে, তাহলে কি হবে? ওহ্ নো! সাফির ভাইয়া যদি জানে আমি ওকে না বলেই এভেব বিয়ে করে ফেলছি তাহলে,,,,কিন্তু আমি ওকে কোন সাহসে বলবো,,না না এখন কি হবে?

–সাফির ভাইয়া তুমি,, তুমি ফিরে আসছো তুমি,,,,,

এর পরে আর কিছু বলতে পারছি না,,৩ বছর পর সাফির ভাইয়া দেশে ফিরছে এটা শুনে আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি দুঃখী বুঝতে পারছিনা৷ সাফির ভাইয়া বলে উঠলো
–কি হয়েছে আমাকে সব বল,, অনেক্ষন ধরে আমি বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে,,আমাকে বল বলছি!

– না ভাইয়া সত্যি কি,,কিছু হয় নি!

– আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে,,পরশুদিন তুই আমাকে এয়ারপোর্টে পিক করতে আসবি অকে!

–হ,,,হুম!

এটা বলে কাপা কাপা হাতে ফোনটা পাশে রেখে আস্তে করে আবার শুয়ে পরলাম৷ সামনে এখন আমার সাথে কি হবে আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা৷ সাফির ভাইয়া যদি এসে যেনে যায় তাহলে,,,,,,,৷ এটা ভেবেই বালিশে মুখ চেপে কান্না শুরু করলাম৷ সাফির ভাইয়াই সে যাকে আমি অনেক ভালবাসি আর সাফির ভাইয়াও আমাকে পাগলের মতো ভালবাসে ও একবার যদি এসে দেখে যে আমি ওকে না বলেই বিয়ে করে ফেলেছি তাহলে ও কোন ভাবেই সহ্য করবে না,,,আর আমার মধ্যে এত সাহস নেই যে আমি ওকে বলবো৷

সাফির আমার খালাতো ভাই,,,,সাফির ভাইয়াকে আমি আরও অনেক আগে থেকে পছন্দ করতাম কিন্তু কখনো তাকে বলি নি,,, কিন্তু সাফির ভাইয়াও যে আমাকে পছন্দ করতো সেটা আমি জানতাম না,,, ভাইয়া সব সময় আমাকে প্রোটেক্ট করে রাখতো৷ আর আমি কোন ছেলের সাথে কথা বললে যেন ওর সহ্য হতো না,,, সাথে সাথে এসে আমাকে বাঘের মতো ধরতো৷ ‘তুই ওই ছেলের সাথে কথা বলেছিস কেন? কোন সাহসে? কিসের জন্য? আর কোন দিন যেন না দেখি!’ আরও কত কি! ভাইয়াও আমাকে কখনো বলে নি যে ও আমাকে ভালবাসে,, আসলে আমরা দুইজনই বুঝতে পারি যে আমরা দুইজন দুইজনকে পছন্দ করি৷ একদিন রাতে আমরা দুইজন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন,,,,,,,,,৷

এইসব ভাবতে ভাবতেই চোখ দুটো কবে লেগে গেছে জানি না৷

সকালে,,,

আজকে সকালে আজানের আওয়াজ শুনেই ঘুম ভেঙে গেছে৷ উঠে ওজু করে নামাজ পড়ে তারপর জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে অনেক কান্না করলাম৷ শেষে এই ছিলো আমার কপালে আমি ভাবিই নি কোন দিন৷ অনেক কান্না করার পর বারান্দায় গিয়ে বসলাম৷ এখন এত সকালে বাহিরে অনেক কুয়াশা,, আমি মন মরা হয়ে বসে আছি বারান্দায়,, আজকে আমার বিয়ে,, বাবার জন্য আমার রাফির মত একটা ছেলেকে বিয়ে করতে হচ্ছে,, কিন্তু আমার জন্য আমার থেকে বাবা বেশি ইম্পোর্টেন্ট৷ সেখানে এভাবেই বসে আছি নিজেও জানি না কত সময় চলে গেছে৷ একটু পরেই বাবা দরজায় নক করলো৷ আমি গিয়ে দরজা খুলে দিতে বাবা রুমে এলো নাস্তা নিয়ে৷ তারপর রুমে এসে আমাকে বেডে বসিয়ে আমকে নিজের হাতে খাওয়ে দিল৷ আমার অনেক কান্না আসছে বাবাকে এভাবে দেখে৷ খাওয়া শেষ করে বাবা আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল
– এবার রেডি হয়ে নে মা! জানি তোর হয়তো মন ভালো না কিন্তু কি করবো আমি মরে গেলে তোর তো আর কেউ থাকবে না তাই তোকে রাফির হাতে তুলে দিচ্ছি! রাফি সত্যি ভালো ছেলে!

আমি সাথে সাথে বাবার বুকে মাথা রেখে কেদে দিলাম তারপর বললাম
–বাবা আসলে রাফিকে তুমি যেমন,,,,,,,

–চুপ কান্না করিস না আর কিছু বলিস না পার্লারের মেয়ে এসেছে গিয়ে রেডি হয়ে নে!

–কিন্তু বাবা,,,

বাবা আর কিছু বলতে দিল না রুম থেকে চলে গেলো৷ তারপর পার্লারের মেয়েরা এসে পড়লো আমাকে সাজাতে৷ বাবা কেন আমার পুরো কথাটা শুনছে না? আর এখন বাবাকে সত্যি বলতেও ভয় করে যদি বাবার কিছু হয়ে যায়৷ পার্লারের মেয়েরা এসে আনাকে সাজানো শুরু করে দিল৷

সাজানো শেষে চুপচাপ আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বসে আছি৷ সব মেয়েরি সপ্ন থাকে এইদিনটা নিয়ে আমারও ছিলো কিন্তু এভাবে না৷ আমার অনেক সপ্ন ছিলো যে আমি এইভাবেই বউ সাজবো কিন্তু শুধু মাত্র সাফির ভাইয়ার জন্য৷ সাফির ভাইয়া কালকে আসবে আর আজকে আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷ আর কালকে সাফির ভাইয়া আসলে কি হবে কে জানে? আমি কোন মুখ নিয়ে ওর সামনে যাবো? হঠাৎ আয়নার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলাম রাফি দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি সাথে সাথে পিছনে তাকালাম তারপর দাঁড়িয়ে গেলাম৷ রাফি আমার সামনে এসে একটা বাকা হাসি দিয়ে বলল
–ওয়াও,, আমার তো ভেবেই অনেক খুশি লাগছে যে তোমার মতো একটা সুন্দরি মেয়ে আমার বউ হতে যাচ্ছে!

এটা শুনে রাগে আমার গাঁ জলে উঠলো৷ আমি রেগে রাফির দিকে আঙুল তুলে বললাম
–আমি শুধু মাত্র আমার বাবার জন্য তোমার মত একটা বেয়াদব, লম্পট, অসভ্য ছেলের সাথে বিয়ে করছি৷ না হলে কখনোই তোমার সাথে বিয়ে করতাম না,, তোমাকে তো আমার ইচ্ছে করে কশিয়ে এক চর দেই!

রাফি সাথে সাথে আমার আঙুল ধরে নিচে নামিয়ে মুচকি হেসে বলল
– আ,,আ,,,ভুলে যাবে না আমি তোমার হবু বর,,,আর মাত্র কিছুক্ষন পরেই আমাদের বিয়ে!

–রাফি প্লিজ আমি,,,,,,,

আমার এই কথার মাঝে হঠাৎ বাহিরে সবার চেচামেচি শুনে আমি রাফির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে তারপর বাহিরে গেলাম দুইজন৷ গিয়ে দেখালাম বাবা নিচে পরে আছে৷ আমি সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে ধরে চিৎকার করে উঠলাম৷ রাফসান আংকেল এসে তারাতাড়ি করে বাবাকে হাস্পাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাবাকে নিয়ে গাড়িতে উঠালো৷ সাথে আমিও উঠে গেলাম৷ তারপর রাফসান আংকেল রাফিকে ডাকতে লাগলো৷ রাফিও এসে আমাদের সাথে বসলো৷ তারপর বাবাকে হাস্পাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সাথে সাথে ডাক্তার এসে বাবকে চেকাপ করলো৷ আর এইদিকে আমার কান্না শুরু৷ আমি শুধু বাবার পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছি আর ডাক্তার কি বলে সেই অপেক্ষায় আছি৷ ডাক্তার চেকাপ করে বলল
– উনার কিছু হয় নি,,, হয়তো একটু চিন্তার কারনে প্রেশার বেড়ে গেছে৷

এটা বলে ডাক্তার চলে গেলো৷ তারপর আমি বাবার পাশে বসতেই বাবা বলল
–দেখ আমার কিছু হয় নি তোরা এত চিন্তা কেন করছিস? আর একটু পর তোদের বিয়ে তারাতাড়ি চল এখান থেকে!

–কিন্তু বাবা আমার কাছে সব থেকে তুমি ইম্পোর্টেন্ট! (কান্না জরিত কন্ঠে বললাম)

আমাদের মাঝখান দিয়ে রাফি বলে উঠলো
–আংকেল আমার কাছেও আপনি বেশি ইম্পোর্টেন্ট! আর আজকে আমাদের আপনাকে এভাবে রেখে বিয়ে করাটা ঠিক হবে না!

–না না বাবা তোমাদের বিয়েটা আজকেই হবে,,, আমি কিছু শুনবো না! আজকেই হবে তোমাদের বিয়ে! চল এখান থেকে!

রাফি আবার বলল
–কিন্তু আংকেল,,,,

–আমি আর কিছু শুনবো না তুমি তারাতাড়ি সাদিকা কে নিয়ে যাও এখান থেকে আমি আর রাফসানও আসছি!

আমি রাফির দিকে তাকাতে রাফি আমার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিল৷ তার মানে রাফি এতক্ষন নাটক করছিলো৷ আমি রাফির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ রাফি আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো৷ আমি সাথে সাথে রাফির থেকে হাত ছারিয়ে বললাম
–ছারো আমি কোথাও যাব না!

–তোমার যেতেই হবে,, আর আজকে আমাদের বিয়েটা হবেই হবে আর যাই হোক!

চলবে,,,,,,

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💖)

#তোমার_অপেক্ষায়🥀
#পর্ব_৩
#Arohi_Ayat

–না,,,না,,না আমি তোমাকে বিয়ে করবো না,, আমার কাছে আগে আমার বাবা!

এটা বলে অনেক রেগে সেখান থেকে চলে এলাম৷ রাগে শরীর পুরে যাচ্ছে,, এই রাফির জন্য তো এক রাগ উঠে তার উপর আবার বাবা! আমি বুঝলাম না বাবার কি সমস্যা,, একটু আমার কথাটাও শুনছে না শুধু বিয়ে বিয়ে করছে, ওই রাফির সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে! ধুর!!! এখন আমার মনে হচ্ছে,, যদি সারিফ ভাইয়া আজকে এসে পোরতো তাহলে হয়তো এই বিয়ে হওয়া থেকে আটকাতে পারতো৷ আমি চাই না রাফিকে বিয়ে করতে আবার আমি বাবাকেও হারাতে চাই না এই জন্যই তো বাবাকে কিছু বলতে পারি না সরাসরি,, যদি বাবার একবার কিছু হয়ে তাহলে আমি শেষ আমার পুরো দুনিয়া শেষ!

হঠাৎ পিছন থেকে রাফি আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিল,,আমি টাল সামলাতে না পেরে রাফির সাথে গিয়ে ধাক্কা খেলাম,, আমি সাথে সাথে রেগে রাফিকে ধাক্কা মেরে বললাম
–রাফি এইসব আমার একেবারেই পছন্দ না!

রাফি কিছু না বলে আমার হাত শক্ত করে ধরে সেখান থেকে নিয়ে গেলো৷ আমি হাত ছারানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না হাতে অনেক ব্যাথা লাগছে৷ রাফি আমাকে নিয়ে গাড়ির সামনে এসে আমাকে বলল
–উঠো!

–না,,জীবনেও না! ছারো আমার হাত!

রাফি গাড়ির দরজা খুলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিল৷ তারপর নিজে গিয়ে গাড়িতে বসে তারাতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিল৷ আমি এবার অনেক রেগে বললাম
–রাফি! আমি তোমার সাথে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি তার মানে এটা না যে তুমি আমার সাথে এমন জোর জবরদস্তি করবে! আর কোন,,,,,,

–এই মেয়ে চুপ! এত কিছু জানি না আমি,, আমাকে তোমার কিছু বলতে হবে না! একদম চুপ!

কত বড় সাহস আমাকে চুপ করতে বলে! এইসময় রাগে আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে,, না পারছি কিছু বলতে আর না সহ্য করতে! অনেক বেশি রাগ লাগছে আমি রেগে আবার বললাম
–তোমার মত লম্পট ছেলে আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি৷ আমি শুধু তোমাকে ঘৃণা করি I just hate you!

রাফি কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু একটা বাকা হাসি দিল যেটা আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিল৷ আমি নিজের হাত খামচে ধরলাম,, অনেক বেশি রাগ লাগছে৷ বাসার সামনে এসে রাফি গাড়ি ব্রেক করে আমাকে নামিয়ে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো৷ আমি আবার ওর থেকে হাত ছারিয়ে বললাম
–ছাড়ো আমাকে তুমি এবার বেশি করে ফেলছো! তুমি নিজের ইচ্ছা মতো আমাকে বিয়ে করতে পারবে না!

রাফি আমাকে একেবারে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে ছেরে দিল তারপর বলল
–বাবা আর আংকেল আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকো!

এটা বলে দরজা বন্ধ করে চলে গেলো৷ আমি চুপচাপ বেডে বসে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলাম৷ উফফ,, আর ভাল লাগছে না এইসব! আমার মন কেন জানি সাফির ভাইয়ার অপেক্ষায় আছে৷ কিন্তু আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে যে আমার বাবার জন্য রাফিকে বিয়ে করতে হবে৷ হাতে ফোন নিয়ে হঠাৎ নিজের অজান্তেই সাফির ভাইয়াকে কল করে দিলাম৷ তারপর সাথে সাথে আবার কেটেও দিলাম৷ সাফির ভাইয়াকে আমি কেন কল করছি,,কল করেও কি বলবো? এবার দেখলাম ভাইয়াই আমাকে কল করেছে,,আমি কল রিসিভ না করে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি কল রিসিভ করে কি বলবো৷ এইসব ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে গেলো৷ কিন্তু সাথে সাথে আবার কল আসলো৷ এবার আমি তারাতাড়ি করে রিসিভ করলাম৷ ওইপাশ থেকে ভাইয়া বলল
–আচ্ছা তোর সমস্যা কি বুঝলাম না,, একবারে কল কেন রিসিভ করিস না?

– আমি,,,,,,

–হয়েছে আর বলতে হবে না আমি বুঝতে পেরেছি তুই এখন আমি আমি করা ছাড়া আর কিছু বলতে পারবি না,,আচ্ছা শুন আমার কালকের ফ্লাইট টা ক্যান্সেল হয়ে গেছে আমি কালকে আসবো না!

এটা শুনে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম তারপর অস্থির হয়ে বললাম
– আসছো না মানে? কেন? ৩ বছর আমার থেকে দূরে থেকেছো আর কত? তুমি,,,,,,

–আমি আজকে আসছি!

এটা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম৷ ভাইয়া আজকে আসছে কিন্তু,,,,, উফফ আমি নিজেই বুঝলাম না আমার সাথে কি হচ্ছে প্রথমে ভাইয়া আসবে না এটা শুনে আমি কেমন অস্থির হয়ে পরেছিলাম৷ কিন্তু এখন আবার ভাইয়া আজকে আসছে এটা শুনেও মাথায় কেমন জানি একটা চিন্তা ঢুকে পরেছে৷ ভাইয়া আবার বল
– তুই তো দেখছি আর অপেক্ষাই করতে পারছিস না! আচ্ছা শুন তাহলে আমি এখন এয়ারপোর্টে আছি,,আর মাত্র এক ঘন্টা লাগবে আমার তোর কাছে আসতে!

এটা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম৷ আমি বুঝলাম না এত তারাতাড়ি এত কিছু কিভাবে হয়ে যাচ্ছে৷ ভাইয়া আর কিছু বলল না কল কেটে দিল৷ আমি ফোন রেখে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম৷ কি হচ্ছে কিছুই বুঝলাম না৷ চুপচাপ বারান্দায় কতক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম৷ এই সময় মাথায় কিছুই আসছে না৷ তারপর দরজা খুলার শব্দে পিছনে তাকালাম৷ একটা মেয়ে এসে আমাকে বলল
–আপু নিচে চল তোমার বাবা এসে পরেছে!

মেয়েটা আমাকে সাথে নিয়ে নিচে গেলো৷ নিচে গিয়ে দেখলাম কাজীও এসে পরেছে৷ আমাকে নিয়ে রাফির সাথে বসিয়ে দিল৷ আমি চুপচাপ মুর্তির মতো বসে আছি৷ এইদিকে কাজী বিয়ে পরানো শুরুও করে দিয়েছে৷ আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখনো ৪০ মিনিট বাকি আছে ভাইয়ার আসতে৷ আমি আছি ভাইয়ার অপেক্ষায়,, আমার মনেই হচ্ছে না যে ভাইয়া ঠিক সময় আসবে! এখন আমার হার্ট বিট অনেক বেশি বেরে গেছে৷ কাজি রাফিকে কবুল বলতে বললে রাফির ২সেকেন্ডও লাগলো না সাথে সাথে বলে ফেললো তারপর আবার সাইনও করে দিল৷ এবার আমার পালা এবার আমার বুকের ধুকপুক আরো দ্বিগুন বেরে গেছে,, হাত পা কাপাকাপি করছে৷ এটাই কি লিখা ছিল তাহলে আমার কপালে? আমি একবার বাবার দিকে তাকাতেই আমার চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি পরে গেলো কিন্তু সেটা আমি সাথে সাথে মুছে ফেললাম৷ কারণ আমার অনেক রাগ লাগছে আবার অনেক অভিমানও হচ্ছে বাবার উপর,, আমি জানি বাবার আমার ভালই চায় আমার ভালোর জন্যই আমাকে বিয়ে করাচ্ছে কিন্তু এই জন্য রাফির মত একটা মানুষের কাছে আমার বিয়ে দিবে বাবা? একবারো আমার কথা শুনলো না,,যদি একবার বাবা আমাকে বলার সুযোগ দিতো আমি বাবাকে অন্তত একটু শান্তিতে বুঝানোর চেষ্টা করতাম কিন্তু বাবা আমাকে কিছু বলতেই দিচ্ছে না যেন বাবা একেবারে ওয়াদা করে রেখেছে যে আমার সাথে রাফির বিয়েটা দিবেই! আমার এইসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ বাবা আমাকে ডেকে বলল
–সাদিকা,,,কবের থেকে কাজী সাহেব তোমাকে কবুল বলতে বলছে তুমি কি শুনতে পারছো না?

এখন যদি আমি কবুল বলে দেই তাহলে এক মুহুর্তে আমার জীবনের সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে৷ এবার রাফি আস্তে করে আমার কানের কাছে এসে বলল
–কার জন্য অপেক্ষা করছো? ওই সাফিরের জন্য? কিন্তু ভাগ্য বসতো বেচারা আর আসতে পারবে না!

এটা শুনে আমি সাথে সাথে রাফির দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম রাফি একটু বাকা হেসে বলল
–ওর পক্ষে এখন আসা কোন মতেই সম্ভব না, তাই ওর অপেক্ষা না করে তারাতাড়ি করে কবুল বলে দাও!

–সাফিরের কি হয়েছে? আর তুমি কি করে জানলে যে ও আসছে?

–উফফ,,সাদিকা এখানে দেখছো তো সবাই আছে এখন এত কথা না বলে তারাতাড়ি করে আগে কবুল বলো!

আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম৷ আমাকে দাড়াতে দেখে রাফি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো৷ আমি বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম
–বাবা প্লিজ এবার তুমি না করবে না,, আমি রাফির সাথে একটু কথা বলতে চাই!

–কিন্তু সাদিকা এখন এইসবের মাঝে এমন করার মানে কি? এখন তোমাদের বিয়ে হচ্ছে যেটা এখনো অসম্পূর্ণ,, বিয়েটা শেষ হোক তারপর যত সব কথা!

এবার রাফিও দাঁড়িয়ে গেলো আমার সাথে তারপর বাবকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আংকেল! একটু শুনেন সাদিকার কথাটা,,ও মেয়ে মানুষ তাই ওর একটু টাইম লাগবেই ভাবার জন্য প্লিজ ওকে একটু আমার সাথে কথা বলতে দিন!

–কিন্তু এখানে আবার ভাবার কি আছে তাও এখন বিয়ের মাঝখানে! মাঝখান দিয়ে কেউ কি কথা বলবে বা কি ভাববে?

–আংকেল প্লিজ! আমি বলছি তো কিছু হবে না,, তাছাড়া সাদিকা আমার সাথে বিয়ের ব্যাপারে না অন্য একটা জরুরি কথা বলতে চাচ্ছে!

আমি আর সেখানে না দাঁড়িয়ে রুমে চলে গেলাম আমার পিছনে রাফিও এলো৷ আমার অনেক ভয় করছে কি হয়েছে বুঝলাম না তাও সাফির ভাইয়ার সাথে! রাফিকে রুমে আসতে দেখেই আমি গিয়ে রাফির কর্লার ধরে রেগে বললাম
–কি হয়েছে আমার সাফির ভাইয়ার? কি হয়েছে রাফি?

এটা বলতে বলতে কেদেই দিলাম৷ রাফি অন্য দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল
–আর সাফির ভাইয়া!!

এটা বলে আমার হাত নিজের কর্লার থেকে ছারিয়ে দাতে দাত চেপে আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল
– এখন তুই আমার সাথে যাবি আর কবুল বলে দিবে নাহলে তোর সাফির ভাইয়া আর থাকবে না! তুই গিয়ে দুনিয়ার যেই কোনায় খুজ না কেন!

এটা বলে আমার হাত সে ভাবেই চেপে ধরে বাহিরে নিয়ে গেলো৷ আর এইদিকে রাফির কথা শুনার পর আমি নিজেই কেমন যেন জিন্দা লাশ এর মত হয়ে গেছি৷ রাফি আমাকে নিয়ে সেখানে বসিয়ে দিয়ে বলল
–কবুল বল তারাতাড়ি করে! (আস্তে করে)

আমি চুপ করে বসে আছি দেখে রাফি আবার বলল
–তোর সাফির ভাই!

এটা বলতেই আমি চোখ বন্ধ করে দুই ফোটা পানি ফেললাম৷ রাফসান আংকেল আর বাবা কি যেন কথা বলছিলো রাফি ওদের ডেকে বলল যে আমি রেডি! তারপর বাবা আর আংকেল এখানে আসতে কাজী আবার আমাকে কবুল বলতে বললে আমি,,,,,,

–কবুল,, কবুল,,কবুল!

চলবে,,,,,,

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন💖)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here