তোমার_অপেক্ষায় পর্ব ৪+৫

#তোমার_অপেক্ষায় 🥀
#পর্ব_৪
#Arohi_Ayat

–এবার বল কোথায় আমার সাফির ভাইয়া?

–চিন্তা করো না বেচারা হাস্পাতালে ঠিক মতই আছে!

–হাস্পাতালে মানে?

এটা শুনে আরো অবাক হলাম৷ রাফি একটু হেসে বলল
–আসলে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার পথে তোমার সাফির ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়ে যায়,, একটু আগে সাফির এর ফোন থেকে তোমার ফোনে কল আসে যেটা আমি রিসিভ করেছিলাম তারপর এই খুশির খবরটা শুনি!

এটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম৷ আমার মাথাটা যেন ঘুরছে,, ভালো মত দাড়াতে পারছি না৷ আমি রাফির কর্লার ধরে বললাম

–তুমি আমাকে আগে বললে না কেন?

রাফি কিছু বলল না আমি আবার কিছু বলবো তার আগে আমি মাথা ঘুরিয়ে নিচে পরে গেলাম আর সাথে সাথে চোখ গুলো বন্ধ হয়ে গেলো এর পর আর কিছু মনে নেই৷

চোখ খুলতেই নিজেকে একটা রুমের মধ্যে আবিস্কার করলাম৷ মাথা চেপে ধরে উঠে বসলাম৷ ভালো করে খেয়াল করতে দেখলাম রুম টা অনেক সাজানো গুছানো৷ আমার মাথাটা এখনো ঝিম ধরে আছে৷ দরজা খুলার আওয়াজে দরজার দিকে ফিরে তাকালাম৷ দেখলাম রাফি ঢুকছে রুমে,,রাফি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
–ওহ্ তুমি উঠেছো তাহলে! উফফ কতক্ষন ধরে এভাবেই পরে আছো এখন উঠেছো,,নাহলে আমার বাশর রাতের বারোটা বেজে যেতো!

এখন বুঝলাম তাহলে আমি কোথায় আছি৷ রাফিকে আমার দিকে এগোতে দেখে আমার বুক ধুক করে উঠলো,, আমি বেড থেকে তারাতাড়ি করে নেমে রাফিকে বললাম
–দেখ রাফি এইবার আমি এইসব কোন মতেই সহ্য করবো না আর যাই হোক!

–কি সব সহ্য করবে না? আমি তো এখনো কিছুই করলাম না!

আমি কিছুনা বলে তারাতাড়ি রুম থেকে বের হতে নিলে রাফি আমার হাত ধরে ফেললো৷ তারপর বলল
– দাড়াও কোথায় যাচ্ছো এখন?

আমি হাত ছারানোর চেষ্টা করতে লাগলাম আর রেগে বললাম
–ছারো আমার হাত,,ছারো! আমি আমার সাফির ভাইয়ার কাছে যাবো!

–ভুলে যাবে না তুমি এখন আমার স্ত্রী! এখন এই সাফির ভাইয়া, সাফির ভাইয়া করে কোন লাভ নেই!

–তুমি ছারো আমাকে টাচ করবে না!

–আচ্ছা যাও করবো না তোমাকে টাচ,,কিন্তু এখন থেকে তো তুমি শুধু আমার স্ত্রী তাই আমার কোন চিন্তা নেই!

এটা বলে রাফি চলে গেলো রুম থেকে৷ তারপর আমি নিচে বসে পড়ালাম,, না জানি সাফির ভাইয়ার কি হয়েছে? রাফির বলা কথাটা কি সত্যি ছিল? যদি সত্যি হয় তাহলে,,,,না তার মানে এত বছর পর আমাদের দেখা হওয়ার আগেই এভাবে ভাইয়ার সাথে এমন হলো কেন? আর আমার রাফির সাথে বিয়েটাও হয়ে গেলো,, কেন? তার মানে কি আমি এটাই ভাববো যে আমার জীবনের সব খুশি এই পর্যন্তই ছিলো? সাফির ভাইয়া এখন কোথায় আছে? আমার যেতে হবে ভাইয়ার কাছে! এটা ভেবে উঠে দাড়ালাম,,তারপর দরজা খুলে বাহিরে যেতে নিব তার আগেই রাফি কোথা থেকে যেন এসে দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে আমাকে বলল
–যদি এখন তুমি এইটা ভাবো যে তুমি তোমার ওই সাফির ভাইয়ার কাছে যেতে পারবে তাহলে সেটা সম্পুর্ন ভুল! কারণ,, আমি তোমাকে অনুমতি দেই নি কোথায় যাওয়ার!

– সরো তুমি সামনে থেকে,, আমার কোথাও যেতে তোমার অনুমতি লাগবে বলে আমি মনে করি না!

–আ,,আ,,এখন আমি তোমার সম্পর্কে স্বামী আর তুমি আমার স্ত্রী হও! এখন থেকে তুমি কোথায় যাবে না যাবে সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করে যাবে!

–আর যদি না করি তো?

আমি এটা বলার সাথে সাথে রাফি আমার হাত ধরে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে বলল
–যদি আমার কথা না শুনো তাহলে তুমি জানো না এখন তোমার সাথে কি হবে!!

এটা বলে রাফি আমার উপর উঠতে নিলে আমি কেদে দিয়ে বললাম
–রাফি প্লিজ এমন কিছু করবে না প্লিজ আমি তোমাকে অনুরোধ করছি প্লিজ!!

রাফি সাথে সাথে উঠে গিয়ে বলল
–আমার একটা শর্ত আছে! যত দিন তুমি না বলবে আমি তোমাকে টাচ ও করবো না কিন্তু আমি যেন তোমার মুখে ওই সাফির নামটা আর না শুনি!

এটা বালে রাফি আমার দিকে তাকালো আমি কিছু না বলে শুধু একবার চোখের পলক ফেললাম রাফিও আর কিছু না বলে চলে গেলো৷ আর আমি সেইভাবেই বিছানায় লুটিয়ে পড়লাম কাদতে কাদতে৷

রাফি রুম থেকে বের হয়ে ছাদে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বড় বড় নিশ্বাস ছারতে লাগলো৷ রাফি ভাবছে ‘ আজ পর্যন্ত আমি কোন মেয়েকেই এভাবে ছার দেই নি তাহলে ওকে কেন? আমি তো অনেক আগে থেকেই ওর নেশায় ছিলাম,, সাদিকা অনেক ভালো আর ভদ্র মেয়ে আমি যদি ওকে বলতাম আমি চরম ভাবে ওর নেশায় নেশাক্ত তাহলে ও কখনোই রাজি হতো না আমাকে ওর উপর এই নেশা মিটানোর জন্য৷ এত দিন শুধু পাগল ছিলাম ওর সাথে বিয়ে করারা জন্য যেন আমার নেশা মিটাতে পারি,, কিন্তু এখন আমি বুঝলাম না আমি কি করে ওকে এই কথাটা বললাম যে ও যখন বলবে আমি শুধু তখনি ওকে টাচ করবো! বুঝলাম না৷ ‘ রাফি এইসব ভাবছে আর সিগারেট এর ধুয়া উরাচ্ছে৷

সকালে,,,

দরজা বারির আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙলো৷ আমি আস্তে করে চোখ খুলে উঠে বসলাম৷ আমার কালকে রাতে যে ভাবে ছিলাম ওই অবস্থায় আছি৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১০:২২ বাজে৷ আমি তারাতাড়ি উঠে দরজা খুলতে দেখলাম একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে,, মহিলাটা ভিতরে ঢুকে বলল
– রাফি বাবা আপনাকে রেডি হয়ে নিচে আসতে বলেছে!

এটা বলে উনি চলে গেলেন,,আমি ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি আমার অনেক সপ্ন ছিলো এই সকালটা নিয়ে,, আমি ভাবি নি যে এই সকালটা আমার এইভাবে যাবে! কলে পানি ছেরে ইচ্ছা মতো মুখে ছিটাতে লাগলাম৷ তারপর রেডি হয়ে নিচে গেলাম৷ রাফি সাথে রাফসান আংকেল বসে আছে৷ আমি নিচে যেতেই রাফসান আংকেল বলল
–সাদিকা,, তুমি রাফির সাথে তোমাদের বাসায় যাও! রাফি তোমাকে ড্রপ করে চলে আসবে আর তুমি সেখানে তোমার যত দিন ইচ্ছে থেকো!

আমি এটা শুনে কিছুই বললাম না শুধু মাথা নারিয়ে হ্যা বললাম৷ রাফি চলে গেলো গাড়ির কাছে আমিও ওর পিছনে গেলাম৷ রাফি আগেই গাড়িতে উঠে বসে আছে৷ আমিও গিয়ে গাড়িতে বসে চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ রাফি গাড়ি স্টার্ট দিল৷ সারা রাস্তা আমরা দুইজন চুপ ছিলাম৷ বাসার সামনে আসতে আমি তারাতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম৷ রাফিও সাথে সাথে নেমে বলল
–দাড়াও আমি তোমাকে এখানে রেখে যাচ্ছি এর মানে এটা না যে তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই করবে!

আমি ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে তারপর কিছু না বলেই ভিতরে চলে গেলাম৷ তারপর রাফিও কিছুক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজেও চলে গেলো৷

এইভাবেই কেটে গেলো একটা সাপ্তাহ,,,,এই ৭টা দিনে না আমি রাফির সাথে কোন কথা বলেছি আর না ওই বসায় গিয়েছি৷ এত দিন আমি শুধু নিজেকে নিজের রুমে বন্দী করে রেখেছি৷ আমি চুপচাপ বারান্দায় বসে আছি তখন বাবা আমার রুমে এসে আমাকে বলল
–সাদিকা,, তুই রাফির কল রিসিভ করছিস না কেন?

– উফফ বাবা মনে হয় ফোনটা সুইচড অফ হয়ে গেছে,, কি হয়েছে তো? (খুবি বিরক্তি সহকারে)

– রাফি আমাকে কল করেছিলো বলেছে আজকে ও তোকে ওর সাথে কোথায় যেন নিয়ে যাবে!

– উফফ বাবা প্লিজ আমি কোথাও যেতে পারবো না এখন!

– সাদিকা,, কি হয়েছে বল তো তুই এত দিন হয়েছে ওই বাসায়ও যাচ্ছিস না আর এখন ওর সাথে যেতেও চাইছিস না!

– প্লিজ বাবা এমনেই ভাললাগছে না তার উপর আবার তুমি জোর করছো!

– সাদিকা তুই আবার আমার উপির দিয়ে কথা বলা কবের থেকে শিখলি?

– এমন কিছু না বাবা আমি তো শুধু বলছি আমার ভালো লাগছে না!

–এইভাবে বসে থাকলে কিভাবে ভাললাগবে? বলছি রাফি এখন তোর স্বামী যা ওর সাথে!

এবার আমি অনেক বেশি বিরক্তি নিয়ে বারান্দা থেকে বের হয়ে অনেক রাগ নিয়ে রেডি হতে গেলাম৷ এখানে বসে বাবার উপর রাগ উঠানোর থেকে ভালো আমি চলেই যাই এখান থেকে৷ অনেক মানে অনেক বেশি পরিমাণ রাগ নিয়ে রেডি হয়ে নিচে গেলাম দেখলাম রাফি বসে আছে যেটা দেখে শরীরে আগুন জলে উঠলো৷ কিছু না বলে আমি আগেই বাহিরে চলে এলাম৷ একটু পর রাফি এলো আমার সামনে আমি রেগে বললাম
–কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে শুনি! যে এত কাহিনি?

–বাবাহ এত দিন হয়ে গেছে আমি ভেবেছিলাম তোমার একটু হলেও এই রাগটা কমেছে কিন্তু তুমি তো দেখছি,,,,,,,

–প্লিজ আমার সাথে ফালতু পেচাল পারবে না যেখানে যাওয়ার চলো তারাতাড়ি নাহলে আমি চলে যাই!

–আচ্ছা গাড়িতে বসো!

আমি গাড়িতে বসে পড়লাম,,তারপর রাফিও বসে গাড়ি স্টার্ট দিল৷ রাফি একটা শপিং মলের সামনে গাড়ি ব্রেক দিল আমি ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতে রাফি বলল
– চল প্রথমে শপিং করি!

–ওহ্ শপিং তাই? আমার জন্য নাকি তোমার ওইসব রুমমেটদের জন্য?

রাফি আমার দিকে চুপ করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর গাড়ি থেকে নেমে গেলো৷ তারপর এসে আমার এইপাশের দরজাও খুলে দিল৷ আমিও গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম৷ তারপর আমরা দুইজন একসাথে মলের ভিতরে ঢুকলাম৷ আমি না কিছু বললাম আর না কিনলাম সব কিছু রাফি একাই করলো আমি শুধু ওর পিছনে যাচ্ছিলাম৷ অনেক্ষন পর আমি বিরক্ত হয়ে রাফিকে জিজ্ঞেস করলাম
–উফফ হয়েছে তোমার এই শপিং?

– আব,,,তুমি গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াও আমি আসছি!

আমি কিছু না বলে চলে গেলাম গাড়ির কাছে৷ আমি ফোন বের করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপা শুরু করলাম৷ হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা কালো গাড়ি আমার সামনে এসে ব্রেক করলো৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ গাড়ির দরজা খুলে কে যেন আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল৷ আমি লোকটাকে দেখার আগেই আমার মুখে কি যেন চেপে ধরলো তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম৷
#তোমার_অপেক্ষায় 🥀
#পর্ব_৫
#Arohi_Ayat

চোখ খুলতেই নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিস্কার করলাম৷ রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার৷ আমার অনেক ভয় করছে গলা দিয়ে তো কথা বের হচ্ছেই না৷ আমি একটু জোরে বলে উঠলাম
–কেউ আছে প্লিজ হেল্প মি!!!

কিন্তু কারো কোনো সারা শব্দ নেই৷ আমি আবার চুপ করে বসে রইলাম৷ কারো কোন শব্দ না পেয়ে এবার আরো ভয় করছে৷ দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছি না৷ হঠাৎ করে রুমে লাইট জ্বলে উঠলো,, আমি সামনের দিকে তাকিয়ে শুধু অবাক নয় অনেক বেশি অবাক হয়ে বললাম
–সাফির ভাইয়া!!

ভাইয়া ধীর পায়ে একটু আমার সামনে এসে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
–ও তাহলে দেখি তোর আমার নাম মনে আছে!

আমি উঠে দাঁড়িয়ে সাথে সাথে ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে বললাম
– তুমি কোথায় ছিলে এত দিন? আমি এত দিন ধরে শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিলাম!

–ও আচ্ছা,, কিন্তু আমি তো শুনেছি তুই বিয়ে করে ফেলেছিস! আবার আজকে শপিং করতেও গিয়েছিলি তোর হাসবেন্ড এর সাথে বাহ্ অনেক ভালো!

এটা শুনে আমি ভাইয়াকে ছেরে দিলাম৷ ভাইয়া আবার বলল
–সেই দিন আমি তোকে কল করেছিলাম আর বলেছিলাম যে আমি আসছি কিন্তু আমি তো জানতামই না যে তুই বিয়ের জন্য রেডি হয়ে বসে আছিস! আচ্ছা,, সেই দিন রাতের কথা তোর মনে আছে? তুই নিজেই আমাকে বলেছিলে যে তুই আমাকে ভালবাসিস! আচ্ছা কাউকে ভালবাসলে কি তাকে ছেরেও যেতে হয়? I think তুই এইসব ব্যাপারে ভালো জানিস আর আমি কিছুই জানি না কারণ এর আগে আমি কখনো কাউকে ভালবাসি নি তোকে ছাড়া,,, সেই অনেক আগের থেকেই আমি শুধু তোকেই ভালবেসেছি তাই এক্সপিরিয়েন্স নেই!

আমি কান্না জরিত কন্ঠে বললাম
–ভাইয়া প্লিজ তুমি এভাবে কেন বলছো? তুমি জানো আমিও শুধু তোমাকেই ভালবাসি আর বেসেছি!

–না আমি জানি না,,,আমি জানতাম যে তুই আমাকে ভালবাসিস কিন্তু তখন আমি ভুল ছিলাম! তুই যদি আমাকে ভালবাসতি তাহলে এভাবে কখনো আমাকে ছেরে দিতি না!

আমি ভাইয়ার হাত ধরে বললাম
–ভাইয়া শুনো আমার কথাটা আমি তোমাকে বলছি আমি বিয়ে কেন করেছি! প্লিজ আমার কথা শুনো!

ভাইয়া আমার হাতটা ঝারা মেরে দিয়ে চলে গেলো৷ আর আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে সেখানেই কান্না করতে লাগলাম৷ তারপর ফ্লোরে বসে পড়লাম৷

(একদিন রাতে আমি আর ভাইয়া একটা ফাংশন থেকে ফিরছিলাম,, তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো রাস্তা ঘাটে বেশি মানুষ ছিলো না পুরো রাস্তা খালি আর আমরা কোন গাড়িও পাচ্ছিলাম না তাই হেটেই যাচ্ছিলাম৷ আমরা দুইজনই চুপ,, আমি নিচে তাকিয়ে হাটছি আবার আড় চোখে ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি৷ হঠাৎ ভাইয়া বলল
–তোকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছিল!

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
–ওও সেটা এখন বললে কেন? আগে বলেই পারতে!

ভাইয়াও আমার দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না৷ আমি ভাইয়াকে অনেক আগে থেকে ভালবাসি কিন্তু সেটা ভাইয়াকে কি ভাবে বলবো বুঝতে পারছি না আর আমি জানি ভাইয়াও আমাকে ভালবাসে কিন্তু ভাইয়ার মুখ দিয়ে কখোনো এই কথা বের হবে না৷ আর আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আজকেই ঠিক সময় ভাইয়াকে এই কথা বলার কারণ আজকে আমাদের মাঝে কোন ঝানেলা নেই কেউ নেই কিন্তু আমি কোন ভাবেই সাহস করতে পারছিনা ভাইয়াকে বলার৷ কিন্তু না এখন বেশি ভাব্লে এইসময়টা নিষ্ট হয়ে যাবে পরে মনে হয় না আর সাহস আসবে৷ আমি আস্তে করে ভাইয়াকে বললাম
–ভাইয়া!!

ভাইয়া আমার দিকে ঘুরে তাকাতে আমি চুপ হয়ে গেলাম৷ ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে,, আমি এবার অনেক কষ্টে বলে ফেললাম
– আমি তোমাকে ভালবাসি!

এটা শুনে ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষন তাহিকে থেকে তারপর সামনে ঘুরে গেলো কিন্তু কিছু বললো না আমি বুঝতে পারছিনা ভাইয়ার রিয়েকশন ভাইয়া খুশি হয়েছে না দুঃখী৷ আমিও নিচে তাকিয়ে মন খারাপ করে হাটা শুরু করলাম৷
আমরা এভাবেই হাটতে হাটতে দেখলাম রাস্তার মাঝ দিয়ে কিছু ছেলে যাচ্ছে৷ ওদের দেখে আমি একটু ভাইয়ার সাথে চিপকে দাড়ালাম৷ ভাইয়া আমার হাত ধরে আমার দিকে তাকালো৷ তারপর আমরা ছেলে গুলোর পাশ দিয়ে চলে গেলাম,, আমি একটি শান্তির নিশ্বাস ছারলাম আমার এইসব ছেলে দেখলে অনেক বেশি ভয় করে৷ হঠাৎ আমি আমার হাতে টান অনুভব করতে পিছনে তাকালাম দেখলাম একটা ছেলে আমার হাত টেনে ধরেছে৷ আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি আর এইদিকে ভাইয়ার ভয়ানক রুপ বেরিয়ে আসছে যেটাকে আমি অনেক ভয় পাই৷ ভাইয়ায় সাথে সাথে ছেলেটার হাত ধরে মুচরে মারা শুরু করলো৷ আমি একটু চিৎকার দিয়ে দূরে সরে দাড়ালাম৷ ভাইয়া ছেলেটাকে এমন ভাবে মারছে যেন ছেলেটা একজনমে ভাইয়ার অনেক বড় শত্রু ছিল৷ এটা দেখে বাকি সব ছেলেরা এভাবেই দৌড় দিল৷ আর ভাইয়া ওই ছেলেটাকে ছারছেই না যেন আজকে ওর এই হাত ভেঙে ফেলবে৷

–ভাইয়া প্লিজ অনেক হয়েছে!

আমি এটা বলায় ভাইয়া ছেলেটাকে ছেরে দিল৷ ছেলেটা আস্তে করে উঠে দৌড়ে চলে গেলো৷ ভাইয়ার রাগ এখনো কমে নাই৷ ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে আরও রাগে ফুসছে৷ আমি ভাইয়াকে এভাবে দেখে ভয়ে ভয়ে বললাম
–ভা,,ভাইয়া প্লিজ রিলেক্স!

ভাইয়া আমার হাত ছেরে সামনের দিকে তাকিয়ে কোমরে দুই হাত গুজে রাগ দমানোর চেষ্টা করছে৷ আমি আবার বললাম
–ভাইয়া প্লিজ রিলেক্স আমার অনেক ভয় করছে!

ভাইয়া পিছনে ঘুরে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে ঘুরে আবার পিছনে ঘুরে আমাকে বলল
–সাদিকা!! (একটু জোরে)

আমি ভাইয়ার দিকে তাকাতে ভাইয়া আবার বলল
– I want to kiss you!

– হু,,,,,,

আমি বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– আমার রাগ কমানোর জন্য!

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা৷ নিচে তাকিয়ে আছি চুপচাপ৷ ভাইয়া আমাকে বলল
– এখানে আয়,,

আমি আস্তে করে দু-পা এগুলাম ভাইয়ার দিকে৷ ভাইয়া আমার দুই গালে হাত দিয়ে আস্তে করে আমার ঠোটের দিকে এগুতে লাগলো৷ আমার বুক ধুকপুক করছে অনেক বেশি পরিমানে৷ ভাইয়া আমার ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিল,,সারা রাস্তায় শুধু মাত্র আমরা,,আর চাদের আলোয় পুরো রাস্তা আলোকিত হয়ে আছে৷)

ঘুমের মধ্যে অনুভব করলাম কে যেন আমার ঠোট আকরে ধরেছে৷ সাথে সাথে চোখ খুলে গেলো,, দেখলাম ভাইয়া আমার উপর ভর দিয়ে আছে৷ আমি সাথে সাথে ভাইয়াকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম৷ ভাইয়ার চোখ গুলো লাল বর্ন ধারন করে আছে৷ ভাইয়া রেগে বলল
– তুই বলেছিলি তুই আমাকে ভালবেসিস তাহলে কেন এমন করলি?

– আমার কথা শুনো প্লিজ!

– সাদিকা প্লিজ আমি আর কিছু শুনেই বা কি করবো তুই তো আমাকে ছেরেই দিলি তাই না!

এটা বলে ভাইয়া চলে যেতে নিলে আমি দৌড়ে গিয়ে ভাইয়াকে পিছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললাম
– যাই হোক তোমার আগে আমার কথা শুনতেই হবে সেটা তুমি বিশ্বাস করো আর না করো!

– ছার আমাকে!

– না আগে আমার কথা শুনো!

আমি আর কথা না বলে একবারেই ভাইয়াকে সবটা বলে দিলাম৷ আমার কথা শুনে ভাইয়া ঘুরে আমার দিকে তাকালো৷ তারপর আমি বললাম
– আমি শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিলাম,, আর আমি শুধু তোমাকে ভালবেসেছি!

ভাইয়া আমার দুই গালে হাত দিয়ে বলল
–তুই শুধু আমার!

–হুম আমি শুধু তোমার!

রুমে ঢুকে দেখলাম রাফি বেডের সাথে হেলান দিয়ে নিচে বসে আছে আর হাতে একটা ড্রিংক্স এর বোতল৷ আমি ভ্রু কুচকে রাফির সামনে গিয়ে দাড়ালাম৷ রাফি চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে আমাকে জোরিয়ে ধরে বলল
– সাদিকা তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে? তুমি জানো এই দুই দিন আমার কি অবস্থা হয়েছিল? পাগলের মত খুজেছি তোমাকে,,প্লিজ আমাকে ছেরে আর যেও না কোথাও!

আমি রাফির থেকে নিজেকে ছারিয়ে বললাম
–রাফি প্লিজ তোমার আর ড্রামা করতে হবে না!

– প্লিজ সাদিকা বিশ্বাস করো আমি ড্রামা করছি না! আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ছেরে চলে গেছো! আমি তোমার স্বামী আর তুমি আমার স্ত্রী তুমি আমাকে ছেরে কোথাও যাবে না প্লিজ!

– রাফি আমি তোমাকে এখানে কিছু বলতে এসেছিলাম!

–সাদিকা প্লিজ আগে আমার কথা শুনো,,, জানো এমন প্রথম বার হয়েছে যে আমার রুমে আমার সাথে কোন একটা মেয়ে ছিল আর আমি ওর সাথে কিছু করি নি ওকে ছার দিয়েছি,, কিন্তু আমি জানি না আমি কি করে তোমাকে,,,! আর এই এক সাপ্তাহ যে তুমি আমার সাথে কথা বলো নি আমি শুধু পাগলের মত ছিলাম৷ আর এই দুই দিন আমার মনে হয়েছিল যেন আমি আমার পুরো দুনিয়া হারিয়ে ফেলেছি! আমি,, আমি তোমাকে ভালবাসি সাদিকা সত্যি অনেক ভালবাসি! প্লিজ আমাকে ছেরে যেও না,, আমি সত্যি নিজেকে সম্পুর্ন পাল্টিয়ে ফেলবো যেমনটা তুমি চাও,, আমি সত্যি এইসব কিছু ছেরে দিব আর কোন সময় কোন মেয়েদের সাথে এমন করবো না শুধু তোমার জন্য! প্লিজ প্লিজ প্লিজ সাদিকা আমাকে ছেরে যেও না!

রাফির চোখ দিয়ে পানি পরছে যেটা আমার বুকে এক ঢেউ এর সৃষ্টি করছে৷ রাফি এইসব কেন বলছে? আমিতো শুধু মাত্র আমার সাফির ভাইয়াকে ভালবাসি কিন্তু রাফি আমার স্বামী,, কিন্তু আমি শুধু মাত্র সাফির ভাইয়ার হতে চাই আর কারো না শুধু মাত্র সাফির ভাইয়ার! আমার মাথা ঘুরাচ্ছে আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা৷ হঠাৎ দরজার সামনে কিসের যেন আওয়াজ শুনে আমি দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখলাম বাবা নিচে পরে আছে৷ আমি চিৎকার করে উঠালাম৷

চলবে,,,,,,,

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💖)
চলবে,,,,,,

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💖)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here