তোমার_অপেক্ষায় পর্ব শেষ

#তোমার_অপেক্ষায় 🥀
#পর্ব_৬ (last part)
#Arohi_Ayat

বাবাকে হাস্পাতালে আনার পর ডাক্তার তারাতাড়ি বাবার চিকিৎসা শুরু করে দেয় আর এইসিকে আমি কান্নায় ভেঙে পরি,, বাবার জন্যই তো এত কিছু করলাম শেষে যদি বাবাই আমাকে ছেরে চলে যায় তাহলে কি হবে? রাফি আমার পাশে বসে আমাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো৷ পাশে তাকিয়ে দেখলাম সাফির ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে আমি দৌড়ে গিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম৷ ভাইয়াকে দেখে রাফি দাঁড়িয়ে গেলো৷ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
–সব ঠিক হয়ে যাবে!

তারপর রাফির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
– তুই সাদিকার সাথে এত কিছু করার পরেও যে বেচে আছিস এটা তোর শুকপালের ভাগ্য!

– সাদিকা এখন আমার স্ত্রী!

–ওহ্ আচ্ছা এতে আমার কিছু আসে যায় না,, সাদিকা শুধু আমার!

– তুই যাই বল সাদিকা এখন শুধুই আমার তুই মান আর না মান এতে আমারও কিছু আসে যায় না!

এটা বলার সাথে সাথে ভাইয়া রাফিকে একটা ঘুষি মেরে দিল,,আবার রাফিও৷ আমি ওদের থামাবো কিভাবে বুঝতে পারছিনা৷ কতগুলো লোক এসে ওদের থামালো৷ আমি ভাইয়ার সামনে গিয়ে বললাম
–প্লিজ ভাইয়া! এটা হাস্পাতাল!

ভাইয়া রাফির দিকে আবার তেরে এসে বলল
–ওকে তো আমি আজকে শেষ করে ফেলবো!

– ভাইয়া প্লিজ তুমি চলে যাও এখান থেকে!

ভাইয়া ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি চলে যাব এখান থেকে,,, মানে কি সব দোষ আমার?

– ভাইয়া প্লিজ তুমি এখন এখান থেকে যাও!

–ওহ্ তো এখন তোর কাছে তোর হাসবেন্ড বেশি তাই না? ভালো খুব ভালো তাহলে আমি চলে যাই এখান থেকে!

এটা বলে ভাইয়া রেগে মেগে সেখান থেকে চলে গেলো৷ আর আমি দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে পড়লাম৷ এভাবেই বাবার জন্য এক চিন্তা আবার তার উপর এইসব আমার আর ভাললাগছে না এইসব! একটু পরেই ডাক্তার ডেকে বলল বাবার নাকি হুশ ফিরেছে৷ আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে বাবার কাছে গেলাম৷ আমি বাবার কাছে গিয়ে দাড়ালাম৷ তারপর আমি বাবাকে বললাম
– বাবা কেন তুমি বার বার আমাকে ভয়ে ফেলে দাও?

বাবা আস্তে করে বলল
– আমি সব শুনেছি তোর আর রাফির কথা! এর পর আমার এটাই প্রাপ্য! আমি কি করে তোকে একটা এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলাম? আসলে মা আমি তো জানতামই না যে রাফির এই রুপ,, আমিতো সবসময় ওকে ভালো একটা ছেলে ভেবে এসেছি৷ আমাকে তুই পারলে মাফ করে দিস!

–বাবা কি বলছো তুমি এইসব? মাফ করে দিস তার মানে কি? এখানে কি তোমার কোন ভুল ছিল?

বাবা আমার হাত ধরে বলল
– আমি চাই তুই এই রাফিকে ডিভোর্স দিয়ে দে! আর তুই তোর ভালবাসার কাছেই চলে যা৷ সাফিরকে আমি আজ পর্যন্ত ভুল ভেবে এসেছি!

– বাবা রাফি যেমনি হোক কিন্তু রাফি এখন আমার স্বামী নামে পরিচিত৷ আর আমি সাফির ভাইয়াকে অনেক ভালবাসি অনেক বেশি কিন্তু আমি রাফিকে ডিভোর্স দিতে পারবো না বাবা!

এটা বলে রুম থেকে বের হয়ে আবার চেয়ারে বসে পড়লাম৷ তখন রাফি এসে আমার পাশে বসে বলল
–সাদিকা তুমি ভুল করছো! তুই ওই বার তোমার বাবার কথা শুনে আমাকে বিয়ে করেছিলে,, কিন্তু এইবার তোমার বাবার কথা শুনে আমাকে ডিভোর্স কেন দিচ্ছো না?

আমি মাথা উঠিয়ে রাফির দিকে তাকালাম৷ রাফি আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল
– আমিও তোমাকে ভালবাসি যেটা আমি এই কয়েকদিনে তোমাকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি,,কিন্তু আমার এই ভালবাসার কোন মুল্য নেই,, তুমি আমাকে ছেরে গেলে হয়তো আমি আগে যা পাপ কাজ করেছি সেই কাজের শাস্তি পাবো৷ আর তাছারা একদিন না একদিন আমার এই শাস্তিই প্রাপ্য,,,, আমি তোমাকে আজকে নিজে বলছি তুমি তোমার নিজের ভালবাসার কাছে চলে যাও৷ একমাত্র সাফিরই সেই মানুষ যে তোমার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য!

রাফির চোখে আমি স্পষ্ট পানি দেখতে পারছি৷ আর আজকে প্রথম আমার মনে হচ্ছে যে রাফি সত্যি মন থেকে এইসব কথা গুলো বলছে৷ আমি রাফির হাত ধরে বললাম
–রাফি তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কিছু না,,, আর তুমি যে তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই বড় কথা৷ আর তুমি নিশ্চয়ই তোমার আসল ভালবাসাকে খুজে পাবে,,, দুনিয়াতে আল্লাহ সবার জন্যই তার আসল ভালবাসা আর তার জোড়া পাঠিয়েছে!

রাফি আমার হাতের উপর হাত রেখে বলল
– আমি তোমার সাথে অনেক ভুল করেছি তারপরেও তুমি আমাকে এভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছো! তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে আবার নতুন একটা আশা দেওয়ার জন্য! এখন যাও ওই সাফিরের বাচ্চা মনে হয় রাগ করে চলে গেছে!

–সাফিরের বাচ্চা?

– আরে বাবা সাফির! এবার যাও!

আমি উঠে চলে যেতে নিলে আবার এসে রাফির হাত ধরে বললাম
–আমরা আবার আগের মত ফ্রেন্ড হতে পারি না?

– আমরা সবসময়ই ফ্রেন্ড থাকবো!

আমি একটু মুচকি হেসে দৌড় দিলাম৷ দৌড় দিয়ে সাফির ভাইয়ার কাছেই যাচ্ছিলাম হঠাৎ কার সাথে যেন বারি লেগে নিচে পড়ে গেলাম৷ চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম সাফির ভাইয়া৷ আমি ভ্রু কুচকে ভাইয়াকে বললাম
– তুমি না চলে গিয়েছিলে?

– তোর সত্যি মনে হয় আমি তোকে ওই রাফির সাথে একা ছেরে চলে যাবো? নেভার!!

আমি হাত বারিয়ে দিয়ে বললাম
–আচ্ছা,, আগে আমাকে উঠাও!

আমাকে না উঠিয়ে ভাইয়া ঘুরে চলে গেলো৷ আমি ভ্রু কুচকে তাড়াতাড়ি করে উঠে দৌড়ে ভাইয়ার পিছনে গিয়ে বললাম
– কি হয়েছে একটু আগেই তো বললে আমাকে একা ফেলে যাবে না তাহলে এখন চলে গেলে কেন?

–তুই তো তোর হাসবেন্ড এর কাছে থাকতে চাইছিলি তাহলে তুই এসেছিস কেন আবার?

– কারণ এখন থেকে আমাদের মাঝে আর কোন ঝামেলা নেই আর কোন তৃতীয় ব্যাক্তি নেই!

– মানে?

–মানে,, এখন থেকে আমি শুধু মাত্র সম্পুর্ন ভাবে তোমার!

– ভাইয়া! প্লিজ!

– উফফ,, তোর মুখের থেকে আর এই ভাইয়া শব্দটা গেলো না,, খালি ভাইয়া ভাইয়া করিস কেন? আজকে আমাদের বাসর রাতেও তুই আমাকে ভাইয়া বলবি? আর যদি তোর মুখে ভাইয়া শুনি না তাহলে,,,,!

– ঠিক আছে ভাইয়া আর ভাইয়া বলবো না!

এটা বলায় ভাইয়া উঠে চলে গেলো৷ আমি ভ্রু কুচকে উঠে ভাইয়ার কাছে গিয়ে ভাইয়াকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললাম
– প্লিজ,, ৩ বছর ধরে আমি শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিলাম,,,এত কিছু হওয়ার পর ফাইনালি আমি আজকে তোমাকে পুরোপুরি নিজের করে পেয়েছি,, এখনো যদি মুখ ঘুরিয়ে রাখো আমার থেকে তাহলে কিন্তু আমিও তোমাকে পিঠ দেখিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিব!

এটা বলে আমিও ভাইয়াকে ছেরে পিছন দিকে ঘুরে গেলাম৷ হঠাৎ ভাইয়া আনাকে হ্যাচকা টান দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে আমার ঠোট আকরে ধরলো৷ প্রায় অনেক্ষন পর আমাকে ছেরে বলল
–আমিও এত দিন শুধু তোর অপেক্ষায় ছিলাম আর অপেক্ষা করতে চাইনা! I love you!

– I love you too!

এটা বলে আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম৷ এত কিছু হওয়ার পরেও যে আমি আমার ভালবাসা কে ফিরে পাবো সেটা আমি কোন সময় ভাবি নি৷ আজকে আমার ভালবাসা পুর্ন পেলো৷

🥀 সমাপ্ত 🥀

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💖)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here