#দ্বিতীয়_বসন্ত-১৯
লেখা:Zannatul Eva
ডায়রির প্রথম পাতা খুলতেই কারো পায়ের আওয়াজ ভেসে এলো। রুহি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল এবং তার হাত থেকে ডায়রিটা নিচে পরে গেল।
মনে হচ্ছে দাদাভাই এসে পরেছে। এখন কী হবে!
রুহি তারাতারি করে দরজার আড়ালে লুকিয়ে পরলো। যা ভেবেছিলো তাই। সত্যিই দাদাভাই এসেছে। এখন এই ঘর থেকে কীভাবে বের হবে রুহি!! ভয়ে বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ করতে শুরু করলো তার।
তালেব আহমেদ ভেতরে ঢুকে দেখলেন, পুরনো ডায়রিটা নিচে পরে আছে। আলমারির গ্লাস খোলা। তার মানে কেউ তার ঘরে এসেছিল কিংবা এখনও আছে। তিনি নিচু হয়ে ডায়রিটা তুলতে যাচ্ছিলো এমন সময় রুহি দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পেছন থেকে তালেব আহমেদ বললেন, দাঁড়াও।
রুহি থমকে দাঁড়ালো।
তালেব আহমেদ ভারী গলায় জিজ্ঞেস করলেন, এখানে কী করছিলে তুমি? কেনো এসেছো আমার ঘরে?
রুহি আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরিয়ে তালেব আহমেদের দিকে ফিরলো। কিন্তু ভয়ে তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছে না।
তালেব আহমেদ আবারও ঝাঁঝালো গলায় জিজ্ঞেস করলেন, উত্তর দিচ্ছো না কেনো? কী করছিলে তুমি আমার ঘরে ঢুকে?
ইতোমধ্যেই মাহির এসে বলল, ও তোমার ঘরটা গোছাতে এসেছিল বড় দাদাভাই।আসলে আমিই ওকে বলেছিলাম ঘরটা একটু গুছিয়ে দিতে। না মানে তোমার মন ভালো নেই তাই ভাবলাম গুছানো দেখলে যদি তোমার মন ভালো হয়।
এটাকে গোছানো বলে!! ফ্লোরের মধ্যে বইটই পরে আছে।
এই রুহি তুমি ঠিক করে গোছাও নি কেনো? তোমাকে বলেছিলাম না আমি সুন্দর করে………
থাক থাক আমার ঘর আমিই বুঝে নেবো। ওকে যেতে বলো এখান থেকে।
রুহি মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। মাহির ইশারা করে তাকে চলে যেতে বলল। কিন্তু রুহি না সূচক মাথা নাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, ওনাকে প্রশ্ন করবো দাদিজানের ব্যাপারে?
তালেব আহমেদ রাগি স্বরে বললেন, এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তোমাকে না যেতে বললাম এখান থেকে!!
রুহি ভয় পেয়ে এক দৌড়ে চলে গেল। জোয়ান বয়সে তালেব আহমেদের রাগে বাঘে গরুতে এক ঘাটের জল খাওয়ার অবস্থা হতো। জোয়ান বয়সের সেই রাগের ছাপ এখনও অনেকটা রয়ে গেছে।
মাহির এক পা দু পা করে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় তালেব আহমেদ মাহিরকে ডাক দিলেন। বললেন, তোমার বউকে বলে দিও সে যেনো আর কখনও আমার ঘরে না আসে। শুধু ঘরে না। সে যেনো কখনও আমার সামনেও না আসে। ও বাড়ির কারো মুখদর্শন করবো না আমি। যতো তারাতারি সম্ভব আমি তোমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবো।
মাহির শান্ত গলায় বলল, আমি রুহিকে ভালোবাসি দাদাভাই। প্লিজ এরকম কোনো সিদ্ধান্ত নিও না।
দু’দিনেই একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেললে?
দু’দিন নয় দাদাভাই। আমি রুহিকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতাম। কিন্তু কখনও বলে উঠতে পারিনি। অথচ দেখো আল্লাহ কত সহজেই রুহিকে আমায় নিজের করে পাইয়ে দিলো। আমি ওকে হারাতে চাই না।
তালেব আহমেদ একদম নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে
রইলেন। মাহির কিছু বলার আগেই হাতের ইশারা করে মাহিরকে চলে যেতে বললেন।
মাহির চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেল।
তালেব আহমেদ তার রকিং চেয়ারটায় বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন____
“ঠিক কতটা ভালোবাসলে ভালোবাসি প্রমান হয়?
ঠিক কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষকে নিজের করে পাওয়া যায়?
যদি জানতাম তবে আমি ঠিক তেমন করেই তোমাকে চাইতাম সায়েদা।”
_____________________
দাদাভাইয়ের ঘরে কী করেছিলে বলতো তুমি?
ক্লু খুঁজতে।
ক্লু! কিসের ক্লু?
কিসের আবার! আমার দাদিজান আর আপনার দাদাভাইয়ের অজানা গল্পের খোঁজেই গিয়েছিলাম। ক্লু টা হাতে পেয়েও একটুর জন্য ফসকে গেল।
পেয়েছো? কী ক্লু বলো আমাকে।
তার আগে বলুন তো আপনি এ সময় বাড়িতে কী করছেন? আপনি না বাইরে বেরোবেন বলেছিলেন!
নতুন বউকে রেখে যেতে ইচ্ছে করলো না তাই চলে এলাম।
কী!!
ভাবছিলে এটাই বলবো? মোটেও না আমার ভীষণ পেটে ব্যাথা করছে তাই ফিরে এসেছি।
একটা কথা ঢাকতে গিয়ে এখন কয়টা মিথ্যে কথা বলতে হবে কে জানে!! আসলে তো সত্যিই আমি রুহির জন্যই ফিরে এসেছি। কিন্তু সে কথা উঁচু গলায় বলতে পারছি না কেনো!! হোয়াই? হোয়াট’স রং উইথ ইউ মাহির! নিজের বউকে ভালোবাসার অধিকার তোর অবশ্যই আছে। তুই চাইলেই এখন রুহিকে জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ বলতে পারিস।
রুহি তুরি মেরে মাহিরের ঘোর কাটালো।
কী ভাবছেন?
ভাবছি তোমাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাবো। এখানের লোকজনের কথাবার্তায় তুমি ডিপ্রেসড হয়ে পরবে। আর তোমার পড়াশোনাও তো আটকে আছে এখানে এসে। তাছাড়া আমাকে বাবার বিজনেসে জয়েন করতে হবে।
বিজনেসে জয়েন আপনি?
মাহির অদ্ভুত ভাবে রুহির দিকে তাকাতেই রুহি বলল, না মানে আপনি নাকি কখনও বিজনেস বা চাকরি করবেন না।শুধু টো টো করে বাইক নিয়ে দাদা গিরি করে ঘুরে বেড়াবেন? না মানে আমি বলিনি।ছোট চাচির কাছ থেকে শুনেছিলাম।
মাহির আড় চোখে তাকিয়ে বলল, তাতে কী হয়েছে! মানুষ কি পরিবর্তন হতে পারে না? আমি বিয়ে করেছি। আমার তো একটা দায়িত্ব আছে। আর আমি একবার যেই দায়িত্ব কাঁধে নেই সেই দায়িত্ব পালন করতে কখনও পিছ পা হই না।
আর আপনার দাদাভাই যে বললেন আমাকে আমার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে। তার কী হবে?
বউ তো দাদাভাইয়ের না।
কার?
আমার। ইয়ে মানে আইনত তো তুমি আমার বিয়ে করা বউই।
আপনার বউ যে ধর্ষিতা। তার গায়ে কলঙ্কের ছাপ লেগে আছে। সারা জীবন ধরে মুছলেও সেই ছাপ ধূয়ে ফেলা যাবে না। অপূর্ণতায় ভরা আমার জীবন।
মাহির মৃদু স্বরে বলল, শুনেছি ভালোবাসার নাকি অনেক জোর। যা দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত অপূর্ণতা দূর করা যায়।
রুহি অপলক দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।তার বলা কথাটার গভীরতা মাপতে গেলে হয়তো রুহি দুর্বল হয়ে পরবে। তাই সে আর কথা বাড়ালো না।
____________________
রেহনুমা খাবার খাচ্ছে না। দুপুর গিড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে এখনও পর্যন্ত তাকে একটু পানিও খাওয়াতে পারে নি কেউ।বাড়িতে এ নিয়ে ভীষণ তোলপাড় চলছে।
মুনিরা পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।
বড় ভাবি এবার আঁটসাঁট বেঁধে নেমেছে।এবার এই মেয়েকে বাড়ি ছাড়া করবেই করবে।বড় ভাবি তোমার জবাব নেই। ঠিকই তো কেনো এমন একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবে তুমি! এবার মাহির বাধ্য হবে রুহিকে ওর বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে।
মাহির অনেক চেষ্টা চালিয়েও তার মা কে কিচ্ছুটি খাওয়াতে পারলো না।তালেব আহমেদও কিছু বলছেন না।তিনিও চান না ও বাড়ির সাথে তাদের কোনো আত্মীয়তা থাকুক।তাই তিনি রেহনুমাকে কিছুই বললেন না।
এবং তারপর রাত পেরিয়ে ভোর হলো। কিন্তু এখনও রেহনুমা মুখে একটু পানিও তুলল না। এভাবে না খেয়ে থাকলে আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পরবে ভেবে মাহির বাধ্য হলো রুহিকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে।
বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে মাহির রুহিকে বলল, জামাকাপড় গুছিয়ে নিতে। আগে এদিকটা সামাল দেয়া যাক তারপর দেখা যাবে। এমনিতেও তো রুহির তার বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য মন কেমন করছিলো। এই উছিলায় বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসা হবে। তারপর মা আর বড় দাদাভাই কে মানিয়ে রুহিকে ঠিক ফিরিয়ে আনবে সে।
রুহি সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো। বেরোনোর সময় মাহিরের ফোনে একটা কল এলো৷ ফোনের ওপাশ থেকে যেই খবর এলো তা শোনার জন্য মাহির এবং বাড়ির কেইউ প্রস্তুত ছিল না।
চলবে……..