নষ্ট গলি পর্ব ২৩

#নষ্ট_গলি
পর্ব-২৩
লেখা-মিম

বিকেলের লাল কমলা রংয়ের আলোটা মায়ার বেডরুমের একপাশের দেয়ালে এসে লেপ্টে আছে। তৈরী হচ্ছে মায়া। শাড়ির আঁচলটা টেনে ঠিক করে নিচ্ছে। আর সোহান ফ্লোরে হাঁটু ভেঙে বসে মায়ার শাড়ির কুঁচিগুলো ঠিক করে দিচ্ছে। আজ সকালেই সোহান মার্কেট থেকে কিনে এনেছে শাড়ীটা। লালের উপর কমলা পাড়ের তাঁতের শাড়ি। শাড়িটা দেখা মাত্রই খুব মনে ধরেছিলো ওর। চোখের সামনে মায়া ভেসে উঠছিলো। কল্পনায় মায়াকে অপরূপ দেখাচ্ছিলো। কিন্তু বাস্তবে সোহানের মনে হচ্ছে সে একটা পরী দেখছে। শাড়ির কুঁচি ঠিক করে খাটে বেশ আয়েশ করে বসলো সোহান। গালে হাত দিয়ে মায়ার কানে ঝুমকা পড়া দেখছে। সোহানের এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে মায়াকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই৷ মেয়েটাকে সামনে বসিয়ে রেখে সারা বিকেল, সন্ধ্যা, রাত পর্যন্ত ওকে দেখতে।
– ভাইয়া তোমরা রেডি?
– হুম? হ্যাঁ রেডি।
– বের হই চলো।
– হ্যাঁ আসছি। তুই নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়।
মায়া হয়েছে?
– হ্যাঁ। আচ্ছা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
– তেমন সুন্দর না। লাগছে আরকি মোটামোটি।
মূহূর্ত্বেই কালো হয়ে গেলো মায়ার মুখটা। আয়নায় নিজেকে ভালোভাবে দেখতে লাগলো। কোনো কিছুর কমতি রয়ে গেলো সাজে? সাজটা কি সুন্দর হয়নি?
– এখন আর দেখে লাভ নেই। চলো। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
– সাজ ভালো হয়নি তাই না?
– হয়েছে মোটামুটি।
– কিসের কমতি? বলেন না?
– কিসের কমতি পরে বলছি। এখন চলো।
– নাহ। আগে বলুন।
– উফফ!
মায়ার হাত ধরে টানতে টানতে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে সোহান। মায়ার মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আজ ওর দোকানের উদ্বোধন হবে। অথচ ওকে ভালো দেখাচ্ছে না। ব্যাপারটা বড্ড বেমানান। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে সোহান বললো
– মাঝে মাঝে প্রেমিকার ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়াটা জরুরী। তবেই প্রেমিকা আমার প্রশংসার ক্বদর করবে। ঘটনা হচ্ছে তোমার কোনো ত্রুটি আমি দেখতে পাইনা। তাই মিথ্যা মিথ্যি তোমার ত্রুটি ধরলাম। তোমাকে পরীর মতো দেখাচ্ছে। লাল পরী। ইচ্ছে হচ্ছে রুমের দরজা আটকে তোমাকে সামনে বসিয়ে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকি। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? আগে যদি জানতাম শাড়িটা তোমাকে এত মানাবে তাহলে এখন ভুলেও শাড়িটা এখন পড়তে বলতাম না। রাতে পড়তে বলতাম। ঘরের ভিতরে আসা জোছনার আলোতে তোমাকে সামনে বসিয়ে রাখতাম। আর ভাবতাম রুপালী জোছনায় একটা লাল পরী দেখছি।
সোহানের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে মায়া। লজ্জা ভর করেছে ওর চোখে মুখে। সেই সাথে ভালোবাসাও।
– দেখো এমনিতেই তোমাকে দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তারউপর এভাবে হাসি দিয়ে আমাকে আর পাগল করো না প্লিজ। একটা বিশেষ কাজে আমরা বেরুচ্ছি। কাজটা ঠিকমতো করতে দাও প্লিজ। বাসায় এসে আমার দিকে তাকিয়ে যত পারো মুখ টিপে হেসো৷ আমি দেখবো। বাসায় বসে পাগল হলে সমস্যা নেই। রাস্তাঘাটে বের হয়ে পাগল হলে সমস্যা আছে৷ কখন আবার রাস্তা ঘাটে তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু টুমু খেয়ে বসি তার কোনো ঠিক নেই। সো প্লিজ হাসি বন্ধ করো।
নিচতলায় লিফট এসে থামলো। বেরিয়ে এলো সোহান আর মায়া। সোহান আগে হেঁটে যাচ্ছিলো। পিছন থেকে মায়া এসে সোহানের হাত টেনে আটকালো।
– কি? কিছু ফেলে এসেছো?
– আমাকে কি খুব সুন্দর দেখাচ্ছে?
– এতক্ষণ কি বললাম আমি?
– আরেকবার বলেন।
শব্দ করে হেসে ফেললো সোহান।
– আরো প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে?
– হুমমম। অন্নেএএএক ইচ্ছে হচ্ছে।
– উহুম। এখন না। রাতে বাসায় আসি। তুমি আজকে এই শাড়ি খুলবে না। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আবার এই শাড়ি পড়বে। সাজগোজ করবে।
সোহানের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়া। ঠোঁটে বিস্তৃত হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মায়া সোহান। গাড়ির ভিতরে বসে ওদের দুজনকে দেখছে সালমান। আজকাল সোহানকে দেখলে মনে একধরনের শান্তি পায় সালমান। সোহান প্রচন্ড একা একজন মানুষ। ভাইটার জীবনে সব ছিলো। কিন্তু আগলে রাখার মতো কেও ছিলো না। প্রচন্ড দুশ্চিন্তার রাত গুলোতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার কেও ছিলো না। আজ তার এমন কেও আছে৷ মায়া নামের একটা পরী আছে। ভাইয়ের সুখ চোখে মুখে দেখতে পায় সালমান। অন্যরকম একটা সুন্দর ভাব ফুটে উঠেছে সোহানের মুখে। সুখের সুন্দর।
সালমান বসে আছে ড্রাইভারের সাথে। পিছনের সিটে বসে আছে মায়া আর সোহান। মায়ার ডান হাতের উপর সোহান নিজের হাতটা রেখে বসে আছে। কিছুক্ষন পরপর মায়ার দিকে তাকাচ্ছে সে। গাড়ির লুকিং গ্লাসে সে দৃশ্য দেখছে সালমান। খুব উপভোগ করছে ব্যাপারটা ও।
দোকানের উদ্বোধন সেড়ে রাতে একটা পাঁচতারা হোটেল থেকে ডিনার কমপ্লিট করলো ওরা তিনজন। খুব বেশি মানুষ না। খুব কাছের দশ বারোজন লোক নিয়ে দোকানের উদ্বোধন সেড়েছে সোহান। শিমুও এসেছিলো। আজ ওর বান্ধবীর গায়ে হলুদ। তাই ওদের সাথে ডিনারে আসতে পারেনি। দোকান থেকেই সরাসরি কমিউনিটি সেন্টারে চলে গিয়েছিলো।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেছে। ঘরে ফিরেই মায়াকে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আবার সাজগোজ করতে বললো সোহান। নিজের রুমে যেয়ে সোহানও ফ্রেশ হয়ে নিলো। মায়ার রুমে এসে দেখে তখনও সে বের হয়নি। মায়ার শাড়িটা বিছানার উপর রাখা। কয়েক সেকেন্ড পর মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো মায়া। বিছানার উপর থেকে শাড়িটা হাতে নিলো মায়া। শাড়ির একপাশ কোমড়ে গুঁজতেই মায়ার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে নিলো সোহান। মায়ার কোমড়ে শাড়িটা গুঁজে দিচ্ছে সে৷
– আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন?
– তেমন ভালো না।
– তাহলে আমাকে দিন। আমি পড়ে নিচ্ছি।
– উহুম। আমি পড়াবো। আমি তোমাকে সাজিয়েও দিবো।
মায়ার চোখে পানি ছলছল করছে৷ বড্ড আবেগী সে। অথবা বলা যেতে পারে ভালোবাসার কাঙাল। যত্ন ভালোবাসা না পেতে পেতে শুকিয়ে যাওয়া মরুভূমির অন্তরে পানি ঢালছে সোহান। ভালোবাসার ফুলগাছটা সেই পানি পেয়ে ধীরে ধীরে মনের চতুর্দিকে শক্ত শেকড় গজিয়ে উঠছে।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here