নষ্ট গলি পর্ব ২৪

#নষ্ট_গলি
পর্ব-২৪
লিখা-মিম
একটু একটু করে চোখ মেলছে মায়া। ঘুম ভয়ানকভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ওর চোখ দুটোকে। সারারাত ভালোবাসায় বিভোর থেকে ভোররাতের দিকে সোহানের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়েছে মায়া। অনেক বেলা হয়েছে। ঘরের দেয়ালে রোদের তীব্রতা দেখে তাই বুঝা যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশে থাকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ১১.১৪ মিনিট। চোখ কচলাতে কচলাতে শোয়া থেকে উঠলো মায়া। পাশে সোহান নেই। বোধহয় অফিস চলে গেছে।
ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা সাদা কাগজের উপর তাজা লাল গোলাপ দেখা যাচ্ছে। বোধহয় সোহান রেখে গেছে। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে খাট ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে এগিয়ে গেলো মায়া। হাত বাড়িয়ে গোলাপ আর সাদা কাগজটা নিলো। কাগজটা খুললো সে।
” বাবা সকালে ফোন করেছিলো। সিলেট যেতে হবে। খুব জরুরী কাজ পড়ে গিয়েছে। আমি আগামীকাল রাতেই চলে আসবো। কোনো এক অজানা কারনে তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় অস্বাভাবিক রকমের সুন্দর দেখাচ্ছিলো। তোমাকে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি। সিলেট যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছি আর তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। এত মায়া কেনো তোমার মাঝে আমি বুঝে পাইনা।
এই শুনো,
আমি এসে পড়বো। খুব জলদি। নিজের খেয়াল রেখো। আর আমি আসার আগ পর্যন্ত বাসার বাহিরে যেও না।
কি ভাবছো? কথাগুলো ফোনে না বলে চিঠিতে কেনো বললাম? প্রেমিক হতে ইচ্ছে হলো তাই চিঠি লিখলাম।
ভালো থেকো।”
চিঠির উপর হাত বুলাচ্ছে মায়া। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছে ওর। নাকের কাছে গোলাপটা নিয়ে সুবাস নিচ্ছে। ভালোবাসার সুবাস।
মোবাইলে কল এসেছে মায়ার। দৌঁড়ে যেয়ে ফোনটা হাতে নিলো মায়া। সোহানের ফোন এসেছে। এক মূহূর্ত্ব দেরী না করে কলটা রিসিভ করে নিলো ও।
-…………
– হ্যালো।
-…………
– কি হলো? রিসিভ করে কথা বলছো না কেনো?
– কোনো কথা নেই আপনার সাথে।
– কেনো?
– একে তো আমাকে ফেলে চলে গেলেন অথচ আমাকে একটা বার জাগানোর প্রয়োজন মনে করলেন না?
– তোমাকে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি একদম। বিশ্বাস করো।
– আপনার উচিত ছিলো আমাকে ডেকে তোলা। আপনাকে একটা বার জড়িয়ে ধরতাম। দুদিন তো আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না।
– জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব?
– হুম।
– তাহলে চলে আসি এক্ষুনি?
– নাহ। কাজ শেষ করে ঢাকা আসেন। এরপর পুরো একদিন সময় শুধু আমার। অন্য কাওকে দিতে পারবেন না।
– উহুম। একদিন না। দুদিন তোমার জন্য পুরোপুরি বরাদ্দ থাকবে।
– ওহ একটা কথা তো জিজ্ঞেস করলাম না। আপনি পৌঁছে গেছেন?
– হ্যাঁ। চলে এসেছি। আধাঘন্টা হয়ে গেলো।
– নাস্তা…..
– এই মায়া! আমার ক্লাইন্ট কল করছে৷ পরে কথা বলছি।
কল টা কেটে দিলো সোহান। চিঠিটা এখনো মায়ার হাতে। কি যেনো একটা আছে এই চিঠিটাতে। নেশা জাতীয় কিছু একটা। মায়া যত বার চিঠিটা হাতে নিচ্ছে ততবার মনে হচ্ছে ও শরীরের তাল হারাচ্ছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
কলিংবেল বাজছে বাসার। রতন যেয়ে দরজা খুলে দিয়েছে। মায়া বেরিয়ে এসেছে নিজের রুম ছেড়ে৷ মেইন ডোর দিয়ে ড্রইংরুমে ঢুকছেন একজন বয়স্ক লোক। লোকটা মায়ার পরিচিত। এর আগে মানুষটার ছবি দেখেছে ও৷ উনি সোহানের বাবা। মায়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছেন উনি।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here