#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ৩০
মিরান সকালে ঘুম থেকে উঠে মর্নিং ওয়ার্ক করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবার গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে।
মম জিবনও যৌবনও,
মম আঁখিলো ভবনও, তুমি ভরিবে গৌরবে।
নিশি দিনের সময়,
“তুমি রবে নিরবে হ্নদয়ে মম,
তুমি রবে নিরবে নিবিড় ও নিভিত পূর্নিমায়
নিশি দিনের সময়,
“তুমি রবে নিরবে হ্নদয়ে মম “তুমি রবে নিরবে,
জাগিবে কাগি, তব করুন ও আখিঁ। তব অন্ঞ্চল ও ছায়ায়, মোরে এএ রহিবে ঠাকি।
মম দুঃখ বেদন ও মম সপল ও সভন ও, তুমি ভরিবে সৌরভে, নিশি দিনে এসময়।
“তুমি রবে নিরবে হ্নদয়ে মম, তুমি রবে নিরবে নিবিড় ও নিভিত পূর্নিমায়।
নিশি দিনে এসময় “তুমি রবে নিরবে ”
হুহুহ
তুমি রবে নিরবে…..
শান্ত হন্তদন্ত হয়ে চৌধুরী বাড়িতে এসেছে। হলরুমে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করারও সুযোগ না দিয়ে এক দৌড়ে মিরানের রুমে চলে আসে। মিরান এখনো ঘুমাচ্ছে দেখে শান্তর রাগ আরো কয়েক শ গুণ বেড়ে যায়। গান বন্ধ করে, মিরান হাত ধরে টেনে ঘুম থেকে তুলে শান্ত। হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে এমন ঘটনায় মিরান ভয় পেয়ে যায়। পরক্ষণে চোখের সামনে শান্ত কে দেখে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—-” কিরে তোর আজ থানায় কাজ নেই? সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙাতে চলে এলে যে?”
শান্ত রেগে কটমট করে মিরানের দিকে তাকায়। শান্তকে এমন রেগে থাকতে দেখি মিরান বিছানা ছেড়ে উঠে শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” সকালবেলা এমন রেগে আছিস কেন? কারো সঙ্গে ঝামেলা টামেলা কিছু হয়েছে?”
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-” কাল তুই তোহাকে কী বলেছিস?”
মিরান শান্তর থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” কেন কী হয়েছে?”
শান্ত মিরানের কথা শুনে গম্ভীর গলায় বলল,
—-” হওয়ার আর কি বাকি আছে শুনি?”
মিরান চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,
—-” মানে!”
শান্ত কর্কশ গলায় বলল,
—-” মানে হল তোহা বিয়ে করছে সাত দিনের মধ্যে ওর বাবার বন্ধুর ছেলেকে।”
মিরান বিস্ময় চোখে শান্তর দিকে তাকায়ে কথা যেন ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না। মিরানের এমন বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকানো দেখে শান্ত বলল,
—-” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? তুই কী ভেবেছিলি ও তোর পিছনে ঘুরতে থাকবে আর তুই ওকে ঘুরতেই থাকবি? তাহলে তুই ভুল ভেবেছিস, তোহা সে ধরনের মেয়ে নয়। আর তোর তো কপাল ভালো যে তোহার মত তোকে ভালোবেসেছে। শুধু ভালোবেসেছে বললে ভুল হবে ও তোকে পাগলের মত ভালোবেসেছে। আর তুই কী না…. ছাড় তো তোর সঙ্গে আমি এসব কথা বলছি কেন?”
শান্তর কথা শুনে মিরান মাথা নিচু করে নেয়। কী বলবে ও? বলার কী আর মুখ রেখেছে? মিরানকে শান্ত আবারো বলল,
—-” তোকে যেদিন তোহা প্রপোজ করে, সেদিন সকালে আমি নিজে তোহার সঙ্গে কথা বলি। আমিও প্রথমে মনে করেছিলাম তোমার যদি আর পাঁচটা মেয়ের মতো তোর সঙ্গে যদি খেলা করে। তাহলে? তাহলে তুই একেবারে ভেঙে পড়বি।”
শান্তর কথা শুনে মিরান শান্তর দিকে তাকায়। শান্ত সেদিন সকালের কথা মিরান কে খুলে বলে।
______________________________
সেদিন সকালে শান্ত অনন্যা কে দিয়ে তোহা কে ডেকে পাঠায় ছাদে। তোহা ছাদে এলে শান্ত শক্ত গলায় বলল,
—-” শুনলাম তুমি নাকি মিরানকে ভালোবাসো?”
তোহা শান্তর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,
—-” আপনি কি করে জানলেন ভাইয়া?”
শান্ত ধীর গলায় বলল,
—-” সে কথা দিয়ে তোমার কাজ কী? তোমার কাছে যা জানতে চাইলাম তাই বলো!”
তোহা মৃদু স্বরে বলল,
—-” হুম।”
শান্ত তোহার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
—-” নাম মাত্র ভালোবাসো? না কী….
শান্তর কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে তোহা গম্ভীর গলায় বলল,
—-” নাম মাত্র ভালোবাসো মানে? আপনার কী মনে হয় আমি আর পাঁচটা মেয়ের মত? আমি আপনার বন্ধুর অনুভূতি নিয়ে খেলা করবো? তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন শান্ত। আমি ওর জন্য কতটা পাগল তা শুধু আমি নিজেই জানি। আপনার কাছে আমাকে আলাদা করে কিছু প্রমাণ করতে হবে না।”
শান্ত এতক্ষণ তোহার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তোহার চোখ বলছে ও মিথ্যা কথা বলছে না। শান্ত কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
—-” মিরানের বেপারে তুমি সবকিছু জানো?”
তোহা শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” না জানার কী আছে! ওর বেপারে সবকিছু ই তো জানি।”
শান্ত তোহার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
—-” আঙ্কেল আন্টির দত্তক নেওয়া ছেলে মিরান। সেকথা কী তুমি জানো?”
শান্তর কথা শুনে তোহা হতবাক হয়ে যায়। মিরান আঙ্কেল আন্টির পালিত সন্তান।
#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ৩১
থমথমে পরিবেশ, কারো মুখে কোন কথা নেই। শান্ত তাকিয়ে আছে তোহার মুখের দিকে কী উত্তর দেয় এই আশায়। হয়তো এখনি বলবে তার পক্ষে সম্ভব নয় কোন পালিত সন্তানকে ভালোবাসা। আজকে চলে যাবে এখান থেকে। এইসব ভেবে মনে মনে হাসে শান্ত। কিন্তু শান্তকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে তোহা শান্তর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
—-” তাতে কী হয়েছে ভাইয়া? পৃথিবীতে সবার বাবা-মা থাকে না। এই আমার কথাই ধরুন না, আমার মা আমার ছোটবেলার মারা গেছে। আমার মা মারা গেছে বলে কী আমাকে আর কেউ ভালোবাসেনি? ভালোবেসেছে, খুব ভালোবেসেছে। এমনকি ছোট আম্মু তুলির থেকে আমাকে প্রচন্ড বেশি ভালোবেসে। তাই আমি এসব নিয়ে ভাবি না ভাইয়া। আমি কাকে ভালোবাসি এবং কতটা ভালোবাসি এটা আমার কাছে দেখার বিষয়। তার অতীত বা পরিবার নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। আশা করি আমার কথাগুলো আপনি বুঝতে পেরেছেন ভাইয়া।”
এইটুকু বলে থামে তোহা। জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলল,
—-” ওর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা অনেকটা রহস্যর মত এমনকি এই কথা আমি আমার ছোট বোনকে ও বলিনি। কয়েক মাস আগে গান রেকর্ডিং করে বাড়ি ফিরছিলাম তখন রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়ি। আমার গাড়ি ঠিক পাশে দেখি ফুটপাতে বসে একটা ছেলে রাস্তার কিছু ছেলে মেয়ের সঙ্গে হাসাহাসি করছে। ছেলেটার পোশাক-আশাক বলে দিচ্ছিল বেশ বড় ঘরের ও। ছেলেটার এমন কাজে অবাক হওয়ার থেকেও বেশি ভালোলাগা কাজ করছিল আমার মাঝে। যতক্ষণ জ্যামে আটকে ছিলাম ততক্ষণ ওদের হাসাহাসি দেখছি। রাস্তার জ্যাম ছাড়লে আমি চলে যাই আমার গন্তব্যে। আমাদের চলার পথে কতজনের সঙ্গে তো দেখা হয় আবার কতজনকে ই তো ভুলে যাই। কাজের চাপে ওই দিনের ঘটনা ভুলতে শুরু করি। কিন্তু ওই যে নিয়তি? নিয়তি বলতে একটা কথা আছে না? ভাগ্যের লিখন কেউ খন্ডাতে পারে না! তার কয়েক সপ্তাহ পরে আবার ছেলেটার সঙ্গে আমার দেখা হয় একটা পার্টিতে। সবাই যখন গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ডান্স করছে, ড্রিঙ্ক করছে তখন সেই ছেলেটা এক কোনে সোফায় মাথা নিচু করে বসে ছিল। আমি আড়াল থেকে ছেলেটা কে ফলো করছিলাম। কিছুক্ষণ পর সেই ছেলেটা একজন লোককে ডেকে নিরিবিলি জায়গা তে নিয়ে যায়। আমিও কৌতূহলবশত তাদের পিছনে যাই। ছেলেটা লোকটাকে বলে, ওর জন্য ওর মাম্মা অপেক্ষা করছে। ওকে এখন যেতে হবে। ছেলেটার এইটুকু কথা শুনে বুঝতে পারি ছেলেটা ওর মাকে ভীষণ ভালোবাসে। পরে ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ছেলেটাকে তার সিনিয়র একজন ডাক্তার ওকে এক প্রকার জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে। ছেলেটা পেশায় একজন নামকরা ডাক্তার। একটু একটু করে ছেলেটার বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করি আমি। ভালো লাগা থেকে হঠাৎ করেই ভালোবেসে ফেলি ছেলেটাকে। জানতে চাইবেন না ভাইয়া ছেলেটাকে? ছেলেটা আর কেউ নয় আপনার বন্ধু মিরান, আর আমার জীবন।”
তোহার কথা শুনে শান্তর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। শান্ত তোহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলল,
—-” এবার আমি নিশ্চিন্ত, তুমি মিরানের জীবনসঙ্গী হিসেবে একদম পারফেক্ট। জানো আমি প্রায়শই টেনশন করতাম এই ব্যাপারটা নিয়ে।”
তোহা ধীর গলায় বলল,
—-” ওর অতীত জেনেও কেউ ভালোবাসবে কিনা?”
শান্ত ছোট করে বলল,
—-” হুম।”
কিছুক্ষণ দুজনে চুপ থাকার পরে শান্ত সূক্ষ্ম গলায় বলল,
—-” তোমাকে কিছু কথা বলি এগুলো তোমার জানা দরকার। আমি আর মিরান তখন ক্লাস এইটে কিংবা টেনে পড়ি। ঠিকমতো সময়টা আমার মনে নেই শুধু এটুকু মনে আছে তখন বোর্ড এক্সাম ছিল আমাদের। আমাদের ক্লাসের ছেলে সুজন একদিন আমাদের ক্লাসের সবার সামনে বলে মিরান আঙ্কেল আন্টির পালিত সন্তান। সেদিন মিরান রেগে সুজনকে খুব মেরেছিল। পরে সুজনের বাবা-মা স্কুলে কমপ্লেন করে মিরানের নামে। সুজন এসব কথা ওর বাবা-মার কাছ থেকে জেনেছিল। আঙ্কেল আন্টি কে স্কুলে ডাকা হয়েছিল। সেদিন মিরান স্কুল থেকে ফিরে আন্টির কাছে জানতে চেয়েছিল মিরান ওদের পালিত সন্তান কিনা? আমি আংকেল এর কাছ থেকে শুনেছি ঐদিন আন্টি মিরান কে কোন উত্তর না দিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল। তার কিছুদিন পর আন্টি আর আঙ্কেলে মিরান আর মিরু কে নিয়ে লন্ডনে চলেছে যায়। ঐ ঘটনার পর থেকে মিরান ওর ভিতরে দুষ্টু আর দস্যি ছেলে টাকে লুকিয়ে রাখতে শুরু করে। বর্তমানের এই মিরানের সঙ্গে অতীতের মিরানের আকাশ-পাতাল তফাৎ। আগের মিরান সবসময় দুষ্টুমি করে সবাইকে মাতিয়ে রাখতো, আর এখনকার মিরান কেমন গম্ভীর মুখ করে থাকে।”
এইটুকু বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত। তোহার চোখ ছল ছল করছে যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে। তোহা ঠোঁট চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। তোহা শান্তর দিকে না তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
—-” আমি চেষ্টা করব ভাইয়া আপনার সেই দুষ্টু বন্ধুটাকে ফিরিয়ে দিতে।”
আর দাঁড়ায় না তোহা। ব্যস্ত পায়ের নিচে চলে যায়। আর শান্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আবার বুঝি তার বন্ধুটা আগের মত প্রাণ খুলে হাসবে!
______________________________
মিরানে চোখে পানি। মিরান ভাবতে পারিনি তোহা যে ওকে এতটা ভালোবাসবে! যার জন্য ওকে এতদিন দূরে সরিয়ে রেখেছে আর তোহা কী না সে সব জেনেই ওকে পাগলের মতো ভালোবেসেছে। এত বড় ভুল কী করলো ও?
মিরানের চোখে পানি দেখে শান্ত নরম সুরে বলল,
—-” আমি জানিনা তুই ওকে কী বলেছিলি যার কারণে ও এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু মেয়েটা তোকে ভীষণ ভালোবাসে। তুই জানিস এই একটি মাসের তুই যতবার তোহাকে প্রত্যাখ্যান করেছিস আর তোহা আমার কাছে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করত। কেন তুই ওকে মেনে নিতে পারছিস না? কেন ওকে ভালোবাসতে পারছিস না? সে যাই হোক এখন আর কেউ আর আমার কাছে ফোন করবে না আর তোকে বিরক্ত ও করবে না।”
শেষের কথাগুলো কর্কশ কন্ঠে বলল শান্ত। মিরান আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে শান্তকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দেয়। মিরানের এমন কান্না দেখে শান্ত হতবাক হয়ে যায়। মিরানের পিঠে হাত দিয়ে মোলায়েম গলায় বলল,
—-” কিরে এইভাবে কান্না করছিস কেন?”
মিরান চোখ মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
—-” আমি ওকে এই একমাস অবহেলা করতে করতে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেই বুঝতে পারেনি। যখন উপলব্ধি করি আমি ওকে ভালোবাসি।তখন মনে হয় না এটা ভুল আমি তো কাউকে ভালোবাসতে পারিনা। আর না আমাকে কেউ ভালোবাসবে! আমার সবটা জেনেও হয়ত আমার থেকে দূরে সরে যাবে। তখন সে যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারতাম না। তাই আমি ওকে ভালবাসি সত্ত্বেও ওকে বারবার দূরে সরিয়ে দিয়েছি।”
মিরানের কথা শুনে শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-” বাহ! বাহ! এই তোকে এত বেশি বুঝতে কে বলেছে? তোর জন্য এখন তোরা দু’জন কষ্ট পাচ্ছিস। এখন কী করে সবকিছু ঠিক করবি তা তুই ভাব! আমার মাথা কাজ করছে না আমি গেলাম।”
শান্ত আর না দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে নিয়ে চলে যায়। আর মিরানের চিন্তায় মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, এখন তার শুধু একটাই চিন্তা কী করে তোহার বিয়েটা আটকানো যায়।
______________________________
আজ কতগুলো দিন…. না না কতগুলো দিন না পুরো এক মাসের বেশি সময় হয়ে গেছে শান্ত জান্নাত কে ওর বাবা-মার কাছে দিয়ে এসেছে। ঢাকা এসেছে পর থেকে সব সময় মন খারাপ করে থাকে জান্নাত। না বাড়িতে মন বসে না ভার্সিটিতে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় অন্যমনস্ক হয়ে থাকে জান্নাত। জান্নাত বন্ধুদের সঙ্গে ভার্সিটির মাঠে বসে আছে, সবাই আড্ডা দিচ্ছে শুধু জান্নাত অন্যমনস্ক হয়ে আছে। তা দেখে জান্নাতের বান্ধবী কলি ওকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
—-” কী রে আবার কী ভাবছিস?”
জান্নাতের অন্য বান্ধবী মিলা ঠাট্টা সুরে বলল,
—-” আরে বুঝিস না, আমাদের সেই সুপার হিরো ভাইয়ার কথা ভাবছে।”
মিলার কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো। জান্নাতও ওদের সঙ্গে লাজুক হেসে অন্য দিকে তাকায়।
______________________________
ফোন বেজে চলেছে সেই কখন থেকে কিন্তু ফোন তুলছে না তোহা। মনে-মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে সে আজ সে কিছুতেই ফোন তুলবে না। ফোন বাজতে বাজতে ফোন নষ্ট হয়ে গেলেও ফোন তুলবে না সে। ফোনের ওপাশ থাকা ব্যক্তি বুঝুক অবহেলা কী জিনিস? তোহা বিছানার এক কোণে বসে আছে আর ফোনটা বিছানার মাঝখানে বসে বেজে চলেছে। আবারও ফোন বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেলো। তোহা উঁকি দিয়ে দেখল ইতিমধ্যে সাতান্ন বার ফোন দেওয়া হয়ে গেছে। আবারো জোরালো শব্দের ফোনটা বেজে উঠেছে স্ক্রিনে বড় বড় অক্ষরের ভেসে উঠেছে ‘জান’ নামটা। তোহা ফোনের উপর থেকে চোখ সরিয়ে বিড় বিড় করে বলল,
—-” আজ এত কেন মনে পড়ছে আমাকে? কাল তো আমাকে খুব অপমান করেছিলো, কাল কী অপমান করা কম হয়ে গেছিলো? যে আজ ফোন করে বাকি অপমান টা করবে! যাই করুক না কেন আমি ফোন তুলছি না। তার কন্ঠ আমাকে মাতাল করে দেয়। নতুন করে তার কন্ঠ শুনে মোহতিমির হতে চাই না আমি।”
এরমধ্যে তুলি এসে তোহা কে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
—-” আপু তুমি একা একা কী বিড়বিড় করছো?”
তোহা তুলির দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” তেমন কিছু না। কিছু বলবি আমাকে?”
তুলি ঠোঁট হাসি এনে বলল,
—-” শুনলাম তুমি নাকি তোমার জালিম এর সঙ্গে ঝগড়া করেছো?”
তোহা তুলির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,
—-” ঐ আমি তোকে বলেছি না ওকে একদম জালিম বলবি না।”
তুলি ঠোঁট হাসি আর একটু প্রসারিত করে বলল,
—-” কেন? কেন? আমি কেন বলবো না একশ বার বলবো। কী করবে তুমি?
তোহা তুলির দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
—-” দাঁড় আজ তোর একদিন কী আমার একদিন। তারপর দেখি তুই কী করে ওকে আর জালিম বলে ডাকিস।”
চলবে…..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। গঠনমূলক মন্তব্য করলে লেখা উৎসাহ আসে।
চলবে…..
আজকের গল্পটা শেষ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার কিছু পাঠক আমাকে খুব অনুরোধ করেছে, তোহার বিয়ের পর তোহা কেমন করে সংসার সামলায় তা দেখার জন্য। তাই আমি তাদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আরো কয়েক পর্ব লেখার পরে গল্পটা শেষ করব।