নিঃশ্বাসে তুই পর্ব -০৬+৭

#নিঃশ্বাসে_তুই (৬)

“দোস্ত জানিস আজকে সে এসেছিল। আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি।”

“কে এসেছিল? কাকে দেখেছিস?”

“আরেহ ধ্রুব চৌধুরী।”

ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে এলো পুষ্পর এক্সাইটিং চিৎকার…..

“রিয়েলি সে সত্যি এসেছিল। ইস আমি মিস করে গেলাম। আমাকে তখন কেন বলিস নি? আচ্ছা তা কেন এসেছিল?”

অহমি মিয়িয়ে গেল। লাজুক কন্ঠে মিনমিনিয়ে বলল,
“আমাকে দেখতে।”

“ওহ মাই গড, সত্যি এমনটা হয়েছিল?”

“হুম।”

“আচ্ছা আচ্ছা আমি বিকেলে আসব ক্ষণ এখন রাখছি মা ডাকছে।”

পুষ্পর ছোট্ট করে বলা কথায় অহমি বুঝে গেল পুষ্পর মা তাকে কাজ করার জন্য ডাকছে৷ মেয়েটা যতক্ষণ বাড়িতে থাকে একদণ্ড শান্তি পায় না। অহমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোন রেখে দিল। প্রিয় বান্ধবীর এমন নাজেহাল অবস্থা মেনে নেওয়া টা তারজন্য ভীষণ কষ্টসাধ্য। তবু সে নিরুপায়।

.

কলিং বেলের শব্দ কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই আনন্দের উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল অহমি। ভেবেছে পুষ্প এসেছে। কিয়ৎক্ষণ অতিবাহিত হতেই যখন কাঙ্ক্ষিত মুখের জায়গায় অন্য একটি প্রিয় মুখ ভেসে উঠল দ্বিগুণ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল অহমি। পুচকি তিশা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। অহমি পরম স্নেহে তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নেয়। অহমির সান্নিধ্যে এসেই তিশার আধো আধো বুলি ফুটে উঠতে শুরু করে। অভিমানের সুরে বলে,

“থোতো আম্মি, থোতো আম্মি তানো আম্মা না আতকে আমাতে বকেতে (ছোট আম্মি,ছোট আম্মি আম্মা না আজকে আমাকে বকেছে)।”

“হাহহহ আম্মার এতো বড় সাহস। তা কেন বকলো আম্মা তিশুমনিকে?”

“তিতুমুনি দুত্তুমি করেতে তাই ( তিশুমনি দুষ্টুমি করেছে তাই)।

” ওহহ এই ব্যাপার! তাহলে তো আম্মা বকবেই। দুষ্টুমি করলে বকা তো খেতেই হয় তিশুমনি। তুমি কেন দুষ্টুমি করেছিলে? আমি তোমাকে বলেছিলাম না দুষ্টুমি না করতে। দুষ্টুমি করলে আম্মার কষ্ট হয় তাই তখন আম্মা বকে। বুঝেছ? আর কখনো করবে দুষ্টুমি?”

তিশা এপাশ ওপাশ মাথা দুলিয়ে বলল,

” নাহহহ ”

“এই তো গুড গার্ল। তাহলে এবার আমাকে একটা কিসি দাও।”

“উম্মাহহহ।”

“আমি তোমাকে একটা দেই। উম্মাহ……. ”

তিশা, অহমির স্নেহময় আলাপনের মধ্যে ভেসে এলো এক অভিমানী কন্ঠ….,

“কী অবস্থা এখন?”

অহমি তিশার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকাল। অহনা গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে তার উত্তরের অপেক্ষায়। অহমি তিশাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে অহনার কাছে এগিয়ে গেল৷ মিষ্টি হেসে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল,

“আগের থেকে বেটার। তুমি এসেছ এখন আরও বেটার হবে।”

“হয়েছে হয়েছে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। যাকে কেউ একটা খবর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না সে এলেই বা কী আর না এলেই বা কী।”

“ওরেহ আমার আপ্পি টা। রাগ করেছে বুঝি? আচ্ছা শুনো না আম্মা তো তুমি চিন্তা করবে সে জন্যই জানায় নি তোমাকে। আম্মা তো জানে তুমি আমাকে সবার থেকে বেশি ভালোবাসো। আমার এমন অবস্থা শুনলে কষ্ট টা সবথেকে বেশি তুমিই পেতে, টেনশন করতে। আর অধিক টেনশন করে করে অসুস্থ হয়ে পড়তে। এজন্যই তো তোমাকে বলেনি। এটা নিয়ে রাগ বা অভিমান করে থেকো না প্লিজ। প্লিজ প্লিজ প্লিজ………”

অহমির এমন বাচ্চামিতে অহনা না হেসে আর পারল না। সব দুঃখ, কষ্ট, অভিমান বিসর্জন দিয়ে বুকে টেনে নিল নিজের অতি স্নেহের কন্যাসম ছোট্ট বোনকে। এদিকে তিশা ডাগর ডাগর চোখ মেলে বড় বড় চোখের পিসি ঘন ঘন ঝাপটে ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। দুবোনের আদরের মাঝে সে বাদ পড়ে গেছে । ছোট্ট মস্তিষ্কে এই কথাটা মেনে নেওয়া বেশ কঠিন। তাই তো অকস্মাৎ উচ্চ শব্দে কেঁদে উঠল সে। সেই কান্নায় চমকে উঠল অহনা অহমি দু-জনেই। বসার ঘর থেকে ছুট্টে এলেন তাহমিনা বেগম। নাতনির চোখে পানি দেখে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন মেয়েদের দিকে। দুই মেয়েই তখন অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল মায়ের দিকে। যার অর্থ তারা কিছুই করে নি। তাহমিনা বেগম মেয়েদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নাতনির কাছে এগিয়ে গেলেন। পরম স্নেহে বুকে আগলে নিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,

“কী হয়েছে নানুভাই তুমি কাঁদছ কেন? আম্মা, ছোট আম্মি কিছু বলেছে?”

তাহমিনা বেগমের আহ্লাদ পেয়ে তিশা দ্বিগুণ কেঁদে কেঁদে বলল,

“ওলা আমাতে রেতে একালা আতর খাচ্তে ( ওরা আমাকে রেখে একারা আদর খাচ্ছে)।”

“ওহ এই কথা আচ্ছা আমি তোমাকে সব আদর করে দিচ্ছি নানুভাই তুমি আর কেঁদো না। চল আমরা মেঝ আম্মির কাছে যাই। মেঝ আম্মি তিশুমনিকে খুঁজছে না অনেক অনেক আদর করবে বলে।”

তিশাকে ভোলাতে ভোলাতে তাহমিনা বেগম ওকে নিয়ে চলে গেলেন। অহমি, অহনা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। দুবোনে জোর নিশ্বাস ফেলে একসঙ্গে হেসে ফেলল। অহনা অহমির মাথায় আলতো চড় বসিয়ে বলল,

“একদম তোর মতো হয়েছে বড্ড হিংসুটে।”

“এভাবে বল কেন আমি তো শুধু ভালবাসা নিয়ে হিংসে করি। আর কিছুতে নয়।”

“হুম জানি তো। আমার ভালবাসা-প্রিয় পিচ্চিটা।”

.

অহনা একাই এসেছে তিশাকে নিয়ে। ইখলাস আসেনি৷ অফিসের কাজে সে ব্যস্ত তাই ওরা একারা চলে এসেছে। ইখলাস দুদিন পর আসবে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে। এই মুহুর্তে আসতে পারছে না। পুষ্প আজ বিকেলে আসতে চেয়েও আসতে পারে নি। তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি তার মা। বাড়িতে থেকে কাজ করতে হবে তাকে। অহমির এমনটা নিমেষেই খারাপ হয়ে যায় এ খবর পেয়ে। তবুও তিশার সঙ্গে খুনসুটি করে এসব ভোলার চেষ্টা চালায়। বিভোর এসেছে সন্ধ্যার পরপরই। অহনাকে অনেক দিন পর বাড়িতে পেয়ে সারপ্রাইজড হয়েছে সে। সেই সঙ্গে তিশা তো এক্সট্রা সারপ্রাইজ। তিশা যে কয়দিন থাকে বাড়িটাতে হইহই আমেজ পড়ে যায়। সকলের মন ভালো থাকে।

কেটে গেল চারটি দিন। অহমি এখন বেশ সুস্থ। অসুস্থতার জন্য পাঁচদিন কোচিং করতে পারে নি। আজ তাকে যেতেই হবে। খুব শীঘ্রই ইয়ার ফাইনাল এক্সাম। এখন ঠিকঠাক পড়ালেখা না করলে রেজাল্ট ভালো আসবে না। আর রেজাল্ট খারাপ হলে এর থেকে লজ্জাজনক পরিস্থিতি অহমির কাছে আর দুটো নেই। লজ্জায় ম’র’তে ইচ্ছে হয় তখন। এমন পরিস্থিতির স্বীকার যাতে না হতে হয় সেজন্যই তাড়াতাড়ি পড়ালেখার ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।

বিকেল চারটা। তিশা ঘুমিয়ে আছে। বাড়ির সকলেই এখন রেস্ট নিচ্ছে। তিশার কপালে আলতো ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে অহমি বেড়িয়ে যায় কোচিং এর উদ্দেশ্যে। রাস্তায় বেড়িয়ে পুষ্পকে কল করে নেয়। পুষ্প তখন অলরেডি অহমির বাড়ির সামনে উপস্থিত। পুষ্পদের বাড়ি পেড়িয়ে অহমিদের বাড়ি তারপর কোচিং এর রাস্তা তারপর কলেজের। এভাবেই রোজ পুষ্প অহমিদের বাড়ির সামনে আসে তারপর দুজন একসঙ্গে যায়। বাড়ি থেকে কোচিংএর দূরত্ব বেশি না হওয়ায় তারা হেঁটেই যায়। কিন্তু কলেজ যেতে হয় অটো বা রিকশায়। কলেজ টা বেশ দূরত্বে কীনা!….

অহমি হাঁটছে আর ফোনে কিছু একটা করছে তখনই পুষ্প বলে ওঠে,

“কী এতো মনোযোগ দিয়ে করছিস?”

“একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ করছি। তোকে পড়ে বলব এখন নয়।”

“কেন পড়ে কেন? আমি এখনই শুনব। এমন কী কাজ যেটা আমাকে রেখে তোকে করতে হচ্ছে। এমন হলে আমি বেশ রেগে যাব কিন্তু অমু।”

পুষ্পকে আর একটু রাগিয়ে দিতে অহমি ডোন্ট কেয়ার স্টাইলে বলল,

“রাগলে রাগবি তাতে আমার কী। লস তোরই।”

পুষ্প ভ্রু কুঁচকে বলে,”লস আমারই মানে। এই কী করছিস তুই হ্যাঁ? দেখা, দেখা বলছি।”

শুরু হয়ে যায় দু’জনের মধ্যে জোরাজুরি। একবার অহমি ফোনটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে তো একবার পুষ্প টেনে নিয়ে তা দেখার চেষ্টা করছে। এমন করতে করতে কখন যে তারা রাস্তার মধ্যদিকে চলে গেছে খেয়ালই করেনি। বেশ ভালোই যানবাহনপূর্ণ রাস্তা। দুজনেই তার মধ্যে বেখেয়ালি পনায় মত্ত। অকস্মাৎ তখনই…………

———
চলবে,#নিঃশ্বাসে_তুই (৭)

“অমু……..”

স্বল্প উচ্চ চিৎকার দিয়ে অহমিকে একটানে রাস্তার কিনারায় নিয়ে আসে পুষ্প। নয়তো এখনই এ’ক্সি’ডে’ন্ট ঘটে যেত। বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস টানে। এখনই তার প্রাণপাখি টা উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অহমির কোনো বি’প’দ ঘটলে যতটা ভয় সে পায় ততটা ভয় নিজের বা অন্য কারো বি’প’দে পায় না। চোখ মেলে সহসা অহমিকে বুকে জড়িয়ে নিল পুষ্প। অহমি তখনও হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে। আচমকা কী ঘটে গেল বুঝতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তার। তবে ভালো কিছু যে হয়নি এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। পুষ্প অহমিকে সেভাবেই শক্ত করে জড়িয়ে রেখে ঘাবড়ানো কন্ঠে বলল,

“এখনই তো অঘটন ঘটে যেত। তোর ওপর দিয়ে এত বি’প’দ কেন আসছে বল তো? আল্লাহ সহায় হোক, এমন যেন আর না হয়। তোর সকল বি’প’দ, কষ্ট আমার হোক?”

অহমি আঁতকে উঠল। দ্বিগুণ শক্ত করে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“পুসি এসব কী বলছিস? আল্লাহ না করুক, এমনটা কখনোই হবে না। তিনি যেন সবসময় সকল বি’প’দ আপদ থেকে তোকে রক্ষা করেন। সর্বপরি এই প্রার্থনাই করি।”

“এমন বেখেয়ালিপনায় চললে তো বি’প’দ যখন তখন হেঁটে হেঁটে বাড়িতে চলে যাবে। কাউকে বয়ে নিতে হবে না।”

অকস্মাৎ এমন রাশভারি কন্ঠের তীক্ষ্ণ বাণী কর্ণগোচর হতেই দুই বান্ধবী নিজেদেরকে ছেড়ে পাশ ফিরে তাকালো। ততক্ষণাৎ যেন বেশ বড়সড় আকারে ধাক্কা লাগল দুজনের অন্তরে। অজান্তেই অহমির বাম হাত চলে গেল পুষ্পর ডান হাতের ওপর। যা এই মুহুর্তে সর্বশক্তি দ্বারা চেপে ধরে আছে পুষ্পকে এবং বুঝিয়ে দিচ্ছে সে ঠিক কতটা শকট। ওদেরকে এভাবে স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ধ্রুব বিরক্তবোধ করল। চেহারার গাম্ভীর্যতা দ্বিগুণ ফুটিয়ে তুলে বলল,

“এভাবে মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছ কেন? সৎবিৎ শক্তি হারিয়েছ নাকি?”

ধ্রুবের গুমোট কন্ঠে অহমির হুঁশ না ফিরলেও হুঁশ ফিরল পুস্পর। সে কিঞ্চিৎ হাসার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বলল,

“ন নন ননন নাহ ভাইয়া। আমরা তো ঠিকই আছি। ওই আরকি একটু ভুল হয়ে গেছে।”

অহমিকে সাপোর্টে আনার জন্য কনুই দ্বারা হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,”কী রে বল।” পুষ্পর ধাক্কায় অহমি চমকে ওঠে। আমতা আমতা করে বলে, “হহহহ হ্যাঁ ওই আরকি।”

ধ্রুব দুজনের দিকে তীক্ষ্ণ নজর ফেলে। দুজনেই এক ডোক গিলে মাথা নত করে ফেলে। কিয়ৎক্ষণ পেরতেই পুনরায় ভেসে এলো সেই গুরুগম্ভীর, শ্বাসরুদ্ধকর কন্ঠস্বর….

“গাড়িতে গিয়ে বসো।”

ধ্রুবর এহেন বাক্যে অহমি, পুষ্প দু’জন দু’জনেই চমকিত দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল। ধ্রুব ঠিক কী বুঝাতে চাইল ওরা কেউই বুঝে উঠতে পারল না। ধ্রুব পুনরায় কঠিন স্বরে বলল, “শুনতে পাওনি, দ্রুত ওঠো। লেট হচ্ছে আমার।”

পুষ্প ইতস্তত কন্ঠে বলল, “থাক না ভাইয়া। আমরা সামনেই যাব বেশি দূরে নয়। নিজেরাই চলে যেতে পারব।”

অহমিও দৃঢ় কন্ঠে পুষ্পর সঙ্গে তাল মেলালো। ততক্ষণাৎ
ধ্রুবর এতক্ষণের চেপে রাখা ক্রোধ নিমেষেই জেগে উঠল। ক্রুদ্ধ কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে অহমির দিকে তাকিয়ে বলল,

” ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া, একটু আগে কী হতে যাচ্ছিল? ভাগ্য সহায় ছিল তাই গাড়িটা ঘুরিয়ে নিতে পেরেছিলাম আর তোমার ফ্রেন্ড তোমায় টেনে নিয়েছে নয়তো…… ”

ধ্রুব থেমে গেল। কপালে আঙুল ঘষে ক্রোধ সংবরণের চেষ্টা করল। কিছুটা স্বাভাবিকতা এনে পুনরায় বলল,

“গো ফার্স্ট!”

অহমি মৃদু কাঁপছে। পুষ্প বিষয়টা লক্ষ্য করে ওকে আলতো ভাবে ধরে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ল। ওরা দু’জনে বসতেই ধ্রুব ড্রাইভিং সিটে উঠে বসল। ধ্রুব মিররে এক পলক অহমিকে দেখে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। পুষ্পকে বলল গন্তব্য স্থান সঠিক সময়ে চিহ্নিত করে দিতে। পুষ্প শুধু মাথা দুলিয়ে সায় দিল। মুখ দিয়ে টু শব্দ করার সাহস পেল না।

ওদের কোচিং এর সামনে নামিয়ে দিয়ে ধ্রুব চলে গেল।যতক্ষণ গাড়িতে ছিল অহমি বা পুষ্প কেউ আর একটি কথাও বলেনি।কোচিং এর সামনে গাড়ি চলে এলে পুষ্প শুধু মাত্র একবার বলেছে, ‘চলে এসেছি’ ব্যস এটুকু শুনেই ধ্রুব গাড়ি দাড় করায়। আর ওরা চুপচাপ নেমে চলে যায়।

.

কোচিং শেষ করে বাড়িতে ফিরেছে ওরা সন্ধ্যা ছয়টায়। কোচিং এর সময়সীমা মূলত দু ঘন্টা। বাড়িতে ফেরার পর থেকেই অর্পা লক্ষ্য করছে অহমি বেশ উদাসীন। তার চঞ্চল, ছটফটে বোনটা কিছু একটা নিয়ে হয়তো গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন। তাই তো আশেপাশে নজর কম। নয়তো কী আর চিকেন ফ্রাই এর দু টুকরো বিভোর খেয়ে নিতে পারত। এমন হলে অহমি তো চিল্লাচিল্লি বাধিয়ে দিত। কিন্তু সেই চিকেন পাগলী মেয়েটা আজ আর চিকেন নিয়ে টানাটানি করছে না। বিষয়টা বেশ ভাবাচ্ছে অর্পাকে। বারকয়েক ভেবেছে অহমিকে খোলাখুলি জিজ্ঞেস করবে কিন্তু ছোট বোনের সঙ্গে এভাবে বলাটা ঠিক বেমানান লাগছে তার। শত হোক বোন এখন বড় হয়েছে। তারও একটি প্রাইভেসি আছে।

রাতের খাবার খেয়ে তিশার সঙ্গে কিছুক্ষণ দুষ্টামি করে ঘুমতে চলে গেল অহমি। বিছানায় কতক্ষণ এপাশ ওপাশ করল কিন্তু ঘুম ধরছিল না। আজ কেন জানি বিকেলের পর থেকে তার মনটা অযথাই খারাপ হয়ে আছে। সেই যে ধ্রুবর সামনে মুখে কুলুপ এঁটেছে সেই কুলুপ বোধ হয় মনেও এঁটে সেঁটে লেগে গেছে। মনটা কিছুতেই রিফ্রেশ হচ্ছে না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই কল দেয় পুষ্পকে। দুবার কল বাজতেই রিসিভ হয়। পুষ্প এতক্ষণ উদাস মনে আকাশ দেখছিল আর মনে মনে তার অতিশয় নিকটস্থ কাউকে স্মরণ করছিল। তার মনটাও খারাপ হয়ে ছিল। অহমির ফোন পেয়ে খুশিই হয় সে। মেয়েটা ঠিক তার মন খারাপের সময় গুলোকে বেছে বেছে ফোন করে। কীভাবে বুঝে যায় কে জানে। ফোন রিসিভ করে কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে অহমির ব্যস্ত কন্ঠ ভেসে আসে পুষ্পর কর্ণে,

“জানিস পুসি আমার না আজ কিছুতেই কিছু ভালো লাগছে না। মনটা সেই থেকে অকারণেই খারাপ হয়ে আছে। কেন এমন হচ্ছে বলত? তোর কাছে কোনো উত্তর আছে কী? আমি তো অনেক খুঁজেও উত্তর মেলাতে পারছি না।”

পুষ্প দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। অধর কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে বলল,

“একটা কাজ কর, সোজা হয়ে বসে চোখ জোড়া বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টান আবার ফেল। এভাবে দুবার করে শেষ বারে ধীরে ধীরে শ্বাস ফেলবি। দেখবি মনটা কিছু টা শান্ত হবে। তারপর কিছুক্ষণ এভাবে থাকবি। তারপর ধীরে ধীরে কিছু স্মৃতি মনে করতে চেষ্টা করবি। লক্ষ্য করে দেখবি কোন স্মৃতি টা তোর মস্তিষ্কে আগে হানা দেয়। যেটা তোর আগে খেয়ালে আসবে তুই ঠিক সেই বিষয়টা নিয়েই আপসেট। হতে পারে সেটা যেকোনো কারণে।”

অহমি খুশি হয়ে গেল। আইডিয়া টা মনে ধরেছে। পুষ্পকে এত্তগুলো ভালবাসা জানিয়ে তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিল সে। মনোযোগী হলো নিজের লক্ষ্যে। পুষ্পর শেখানো পন্থা অনুযায়ী এগোতে লাগল। একে একে সবগুলো ধাপ শেষ করে শুরু করল শেষের ধাপ। ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে মনে করতে চেষ্টা করল কিছু স্মৃতি। পরক্ষনেই তার বদ্ধ চক্ষুর অন্তরালে যা ভেসে উঠল তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে। ততক্ষণাৎ তড়িৎ গতিতে চোখ খুলে ফেলল।

.
চলবে,
অহমিকা মুনতাহাজ ®

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here