#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
সাইকেলটা একপাশে রেখে ব্যাগটা নিয়ে গেটের কাছে এলো এনাক্ষী। একটা অফিসে ডেলিভারি দিতে এসে সে। সিভি স্টোরে সে সপ্তাহে চারদিন যায়, বাকি তিনদিন সে একটা রেস্তোরাঁয় কাজ নিয়েছে। গার্ডকে বলার পর সে এনাক্ষীকে ভেতরে যেতে বাঁধা দিলোনা।
রিশেপশনে দাঁড়িয়ে এনাক্ষী অর্ডারকারীকে ফোন করলো। ফোন রিসিভ করলো একটি মেয়ে। মেয়েটি থাকে সেখানেই অপেক্ষা করতে বললো।
দাঁড়িয়ে কাস্টমারের জন্য অপেক্ষা করছিলো এনাক্ষী। অফিসটা বেশ ভালোই বড়, গুছানো। তবে এনাক্ষীর চোখ আটকে গেলো অন্যদিকে, একজোড়া মানব-মানবীর উপর। যারা কথা বলতে বলতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কায়ান এবং সুজি এসে এনাক্ষীর সামনে দাঁড়ালো। তবে মাস্ক পড়ে থাকার কারণে দু’জনের কেউ তাকে খেয়াল করেনি বা বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে বুঝতে পারেনি। সুজি এনাক্ষীর হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে নিলো এবং দেখলো সব ঠিক আছে কিনা।
” সবঠিক আছে। বিল আগে থেকেই পে করা আছে। ধন্যবাদ ডেলিভারির জন্য। কায়ান চলো, খেয়েনি। না হলে মিটিং এ দেরি হয়ে যাবে।”
কায়ান ফোনের দিকে তাকিয়েই আবারো উল্টে দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো। সে একবারের জন্যও মাথা তুলে এনাক্ষীর দিকে তাকালোনা তবে এনাক্ষী ঠিকই তাকে দেখছিলো। কায়ান তাকে চিনতে না পারাই এবং একবারো কথা না বলার কারণে এনাক্ষীর বেশ খা’রা’প লাগলো৷ তবে সে নিজে এটা বুঝালো হয়তো মাস্ক পড়ে থাকার কারণে তাকে চিনতে পারেনি।
” কায়ান।”
পরিচয় কন্ঠ শুনে কায়ান থমকে গেলো। বামে-ডানে তাকালো সে তবে কাউকে দেখলোনা। তারপর সে সুজির হাতে থাকে প্যাকেটটার দিকে তাকালো এবং ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকালো। সন্দেহজনক কন্ঠে বললো,
” এনাক্ষী?”
ব্যস্ত পায়ে এনাক্ষীর দিকে এগিয়ে এলো কায়ান।
” এনাক্ষী তাই না?”
এনাক্ষী মাথা নাড়িয়ে মাস্কটা খুলে ফেললো। কায়ানের এবার নিজের কপাল চাপ’ড়াতে ইচ্ছে করছে। সে ফোনে এটাই ব্যস্ত ছিলো যে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে সে খেয়ালই করেনি।
” তুমিই খাবার ডেলিভারি দিতে এসেছো?”
” হুম। তুমি বুঝি খু্ব ব্যস্ত?”
কায়ান বুঝতে পারলো তাকে খেয়াল না করায় এনাক্ষী ক’ষ্ট পেয়েছে।
” সরি এনা, আসলে মিটিং এর প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। ফাইলগুলো চেক করতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম যে তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলে তা আমি খেয়ালই করিনি।”
” এতো কাজের মধ্যে থাকো যে কেউ পড়ে গেলেও তুমি জানতে পারবেনা। আচ্ছা যাও আর বিরক্ত করবোনা। তোমার কাজে ডিস্টার্ব হবে।”
” আরে দাঁড়াও৷ দুপুর হলো কিছু খেয়ে যাও, তারপর নাহয় যেও।”
” না কায়ান আমার আরো ডেলিভারি আছে। দেরি হলে মালিক ব’কা দেবে। আসি সাবধানে থেকো। সুজি অন্নি কায়ানের খেয়াল রেখো।”
এনাক্ষী দ্রুত পায়ে সেখান থেকে প্রস্তান করলো। কায়ান অপ’রাধী দৃষ্টিতে এনাক্ষীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে টান পড়ায় সে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। সুজি তাকে টেনে উপরে নিয়ে গেলো।
.
.
সন্ধ্যাবেলা কাজ শেষ করেও এনাক্ষীর বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছেনা। একটা নির্জন পার্কে চুপচাপ বসে রইলো সে। শীত বিদায় নিয়েছে প্রায় সপ্তাহ খানিক হচ্ছে। গাছে নতুন পাতা গজানো শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে হয়তো চেরি ব্লসমও ফুটতে শুরু করবে। এই দেশের অন্যতম আর্কষণ হচ্ছে চেরি ব্লসম। গোলাপি রঙের চেরি ব্লসমে দেশটা যেন মিষ্টি একটা অপূর্ব রুপ ধারণ করে। যার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর এই চেরি ব্লসমের মৌসুমে দূরদূরান্ত থেকে হাজারখানে মানুষ ছুটে আসে। পরিবেশটা শান্ত, রাতের আঁধারে প্রিয় মানুষের সাথে উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। চারিদিকে নানা ধরনের, নানা রঙের আলো পরিবেশটাকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। তবে এসবে এনাক্ষীর মন নেই। রাত বাড়ছে তবে তার বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছেনা। পরিবারের কথা তার এখন ভিষণ মনে পড়ছে। কতগুলো মাস সে নিজের পরিবার থেকে আলাদা, ভীনদেশে বসবাস করছে। এনাক্ষীর চোখ থেকে না চাইতেও ফোঁটা ফোঁটা জল পড়তে শুরু করলো। এনাক্ষী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পরিবার থেকে দূরে এলেই তার আসল মর্ম বুঝতে পারা যাই। তখন অনুভব করা যাই পরিবার মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
” এখানে একা বসে বসে কান্না করছো কেন? কিছু হয়েছে?”
আচমকা ফাঁকা পার্কে কারো কন্ঠ শুনে এনাক্ষী ঘা’বড়ে গেলো। দ্রুত চোখ মুছে দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
” আস্তে, এটা আমি। এতোটা ভ’য় পাওয়ার কোন কারণ নেই।”
” ইনস্পেক্টর হান আপনি এইখানে? এই সময়ে?”
” বাড়ি ফিরছিলাম। গাড়ি থেকে নেমেছিলাম ফোনে কথা বলার জন্য তখন তোমাকে দেখলাম। কান্না করছিলে কেন?”
” কিছু না, এমনিতেই।” এনাক্ষী এগিয়ে গিয়ে একটা বেঞ্জে বসলো৷ হান এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে নরম কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
” মন খা’রাপ তোমার? পরিবারের কথা মনে পড়ছিলো বুঝি?”
হানের কথা শুনে এনাক্ষীর মনে আবারো খা’রাপ লাগা ছেঁয়ে গেলো। মাথা নিচু করে নিরবে চোখের জল বির্সজন দিতে লাগলো সে। হান তার মাথা আলতো ভাবে হাত রাখলো। কিছুটা সময় যাওয়ার পর এনাক্ষীর পাশে বসলো সে।
” হয়েছে এবার কান্না বন্ধ করো। এভাবে কান্না করলে তো শরীর খা’রাপ করবে। তখন তোমার যত্ন নেবে কে?”
আস্তে আস্তে কান্নার গতি কমে এলো এনাক্ষী। চোখ মুখে নিজেকে ধাতস্থ করলো সে।
” দুঃখিত হঠাৎ কান্না করে আপনাকে বিব্রত করার জন্য।”
” এতোটা নরম হলে চলবে? শক্ত না হলে এই পৃথিবীতে কি করে ঠিক থাকবে বলো? দেখো তো কান্না করে মুখটাকে পুরো টমেটোর মতো বানিয়ে ফেলেছো। কিছু তো মনে হয় খাওনি।”
” না রেস্তোরাঁ থেকে এখানে এলাম। আপনি চলে যেতে পারেন। আমার কোন সমস্যা হবেনা।”
” কেন আমি তাহলে সমস্যা হবে?”
” আরে না না সেরকমটা। আমার জন্য কেন নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন।”
” বড্ড বেশি কথা বলো তুমি মিস ফরেনার। চলো সামনে একটা রেস্তোরাঁ খোলা আছে, ডিনার করে নেবে।”
” না না ইনস্পেক্টর হান তার দরকার নেই। আমি…. ”
” চুপ একদম। যত্ন না নিয়ে নিজের শরীর খা’রা’প করবে তারপর সব জায়গায় খবর ছাপবে আমাদের দেশে ফরেনার স্টুডেন্টরা অনেক ক’ষ্টে থাকে। তখন আমাদের দেশের রেপুটেশন কমে যাবে। তাই চুপচাপ আমার সাথে চলো।” ধ’ম’ক দিয়ে বললো হান। হানের ধ’ম’ক শুনে এনাক্ষী আর কিছু বলার সাহস পেলোনা।
কোরিয়ানদের স্বাভাবিক রাতের খাবারের সময় বেশ আগেই পেরিয়ে গিয়েছে। তাই রেস্তোরাঁয় গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই।
সুপ, tteokbokki, রাইস এবং ফিস অর্ডার করলো এনাক্ষী। খাবার আসার আগপর্যন্ত এনাক্ষী একটা শব্দও উচ্চারণ করলোনা। হানও চুপচাপ নিজের ফোন দেখতে লাগলো। খাবার এলে দু’জনে চুপচাপ খেতে লাগলো। হানের সাথে একা বসে খেতে এনাক্ষীর কিছুটা অস্বস্তি লাগছিলো তাই সে আস্তে আস্তে খাচ্ছিলো। তা দেখর হান মজা করে বললো,
” এভাবে ইঁদু’রের মতো খাচ্ছো কেন? তাড়াতাড়ি খাও, বাড়ি যাবেনা বুঝি?”
এনাক্ষী চোখ তুলে একবার হানের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করলো। কিছুটা সময় পর আচমকা হান ফিক করে হেসে ফেললো। এনাক্ষী খাওয়া বন্ধ করে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। হান নিচের পকেট থেকে রুমাল বের করে এনাক্ষী মুখের দিকে এগিয়ে যাবে তার আগেই এনাক্ষী ঘাড় পেছনে সরিয়ে নিলো।
” হাসলেন কেন?”
” তোমাকে বলেছিলাম তাড়াতাড়ি খেতে তবে এভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো মুখে লাগিয়ে ফেলতে বলিনি, মুখটা মুছে নাও। বাচ্চা মেয়ে একটা।”
রুমালটা টেবিলে রেখে হান আবারো খাবারে মনোযোগ দিলো। এনাক্ষী খানিকটা লজ্জা পেলো, আস্তে করে রুমালটা নিয়ে মুখে লেগে থাকা খাবারের অংশটা মুছে নিলো।
” এনাক্ষী।”
মাত্রই দু’জনে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেবে সেইসময় পরিচিত কন্ঠ শুনে এনাক্ষী থমকে গেলো। হানও আর চেয়ার ছেড়ে উঠলো। ঘাড় একপাশে করে এনাক্ষীর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলে।
চলবে…….#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” কায়ান তুমি এখানে!” এনাক্ষী উঠে দাঁড়িয়ে বললো। কায়ান একবার হানের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো, ” সুজিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম। যাওয়ার সময় তোমায় এখানে দেখলাম। এতোরাতেও বাড়ি যাওনি যে?”
” আসলে…..” এনাক্ষী কি বলবে বুঝতে পারছেনা। পরিস্থিতিটা কিভাবে ব্যাখা করবে সে অনুযায়ী কথা গুছিয়ে নিচ্ছে তবে তার আগেই হান বললো,
” সে পার্কে মন খা’রা’প করে বসে ছিলো। তাই মন ভালো করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছিলাম। এনাক্ষী তুমি কি আর কিছু খাবে?”
” না আমার হয়ে গিয়েছে।”
হান একপলক কায়ানের দিকে তাকিয়ে পুনরায় এনাক্ষীর দিকে তাকালো।
” আমি কি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো?”
” ধন্যবাদ ইনস্পেক্টর হান। আপনাকে দুঃশ্চিন্তা করতে হবেনা। এনাক্ষীকে আমি আমার সাথে নিয়ে যাবো। আমরা তো একি জায়গায় যাবো আপনাকে আর কষ্ট করে যেতে হবেনা।”
” হ্যাঁ ইনস্পেক্টর হান। এমনিতেই আপনার অনেকটা সময় ন’ষ্ট করেছি। আপনি নিশ্চয়ই ডিডটির পর অনেক ক্লান্ত ছিলে তাও আমাকে কামফর্ট করেছেন, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”
” তাহলে সাবধানে যেও। আজকের মতো একা একা পার্কে বসে থেকো না। নাহলে দেখবে কোনদিন সাদা রঙের ভু’ত এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।”
” আমি মোটেও ভু’তে ভয় পাইনা। আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।” খানিকটা সাহসী ভাবে বললো এনাক্ষী। তার কথা বলার ধরণ দেখে হান হালকা হেসে চলে গেলো।
” তুমি কি কিছু খাবে?”
” না আমি সুজির সাথে খেয়েছি। চলো।”
এনাক্ষী কোনকথা না বলে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে টেবিলে থাকা রুমালটা সে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো। কায়ান তা লক্ষ্য করলেও কিছু জিজ্ঞেস করলোনা।
এনাক্ষী সাইকেল নিয়ে হাঁটছে, তার পাশাপাশি হাঁটছে কায়ান। দু’জনের মাঝে নিরবতা ভেঙে কায়ান বললো,
” তোমার বুঝি মন খা’রা’প?”
” নাতো।”
” ইনস্পেক্টর হান যে বললো।”
” তখন ছিলো এখন নেই।”
” কেউ কিছু বলেছে তোমাকে?”
” না, কেন কিছু বলবে? আমি তো কাউকে চিনিও না। পরিবার থেকে অনেক দিন দূরে আছি তো তাই মন খারাপ করছিলো।”
কায়ান খেয়াল করলো কথাগুলো এনাক্ষী সামনের দিকে তাকিয়ে বলছে, একবারো সে কায়ানের দিকে তাকাইনি।
” এনাক্ষী তুমি কি সকালের কারণে আমার উপর রা’গ করেছো?”
এনাক্ষী ঘাড় গুড়িয়ে কায়ানের দিকে একপলক তাকালো।
” না এতে রা’গ করার কি আছে? আর ওটা তোমার কাজের জায়গা। স্বাভাবিক তুমি ব্যস্থ থাকবে। তাই নয় কি? আচ্ছা সুজি অন্নিকে কি তুমি প্রতিদিন তার বাড়িতে ছেড়ে আসো?”
” না প্রতিদিন নয় তবে প্রায় সময়।”
বিল্ডিং এর সামনে চলে আসায় এনাক্ষী আর কোন প্রশ্ন করলোনা। সাইকেলটা বেঁধে রেখে ঘরে চলে গেলো। যাওয়ার আগে কায়ানকে মিষ্টি হেসে বিদায় জানাতে ভুললোনা। এনাক্ষী ব্যবহার কায়ানের কাছে অদ্ভুত লাগলো তবে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলোনা। বাড়ি এসে এনাক্ষী সর্বপ্রথম ব্যাগ থেকে রুমালটা বের করে একজায়গায় রাখলো তারপর ফ্রেশ হতে গেলো।
.
.
দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে সিন হারি। সে যখন কাজ করছিলো তখন তার ছোট ভাই স্টোরে এসে বলেছিলো তার মা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হারি দেখলো তার কাছে ওষুধ কেনার জন্য পুরো টাকাটা নেই। তাই বাধ্য হয়ে সে একজন সিনিয়ার থেকে টাকা ধার করেছিলো। তাই তাকে একস্ট্রা কাজ করতে হয়েছে টাকা পরিশোধ করার জন্য। গডের কাছে প্রার্থনা করতে করতে সে হাঁটছে। তাই একটাই চাওয়া তার মা যেন সুস্থ থাকে। আচমকা হারি থেমে গেলো। তার মনে হলো কেউ তার পেছনে আসছে।
” কে ওখানে? এখুনি বেরিয়ে এসো বলছি।” চিৎকার করে বললো হারি। তবে সে ছাড়া আর একটা প্রাণীকেও সেখানে দেখা গেলোনা।
” ধুর আমিই বেশি চিন্তা করছি। মায়ের অ’সু’স্থতার কারণে উল্টোপাল্টা অতিরিক্ত চিন্তা মাথায় এসে ভর করেছে।”
হারি আর দাঁড়িয়ে না থেকে ব্যাগটা শক্ত করে ধরে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো। সিন হারি স্থানটি ত্যাগ করার পর গাড়ির পেছন থেকে একটা ছায়া দৃশ্যমান হলো।
.
.
আজ প্রায় দু’দিন এনাক্ষী অসু’স্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। জ্বর, মাথাব্যথায় সে বিছানা থেকে উঠতেও পারছেনা। তার অসুস্থতার কথা শুনে তার পরিবারের সবাই খুব দুঃশ্চিন্তায় আছে। তার মা তো কান্না করতে করতে নিজেও অসু’স্থ হয়ে পরছে। তিনি পারছেন না এখুনি ইতালি থেকে সউলে ছুটে আসতে।
বেলের শব্দ শুনে এনাক্ষী আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠলো। আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলো। চোখগুলো জ্বরের কারণে এভাবে কোটরে ডুকে গিয়েছে, মুখটা শুকিয়ে ছোট হয়ে গিয়েছে, চুলগুলো এলোমেলো। নিজের অবস্থা থেকে এনাক্ষী একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দরজা খোলার জন্য পা বাড়ালো।
দরজা খুলে কায়ানকে দেখে শুকনো হাসলো এনাক্ষী।
” কেমন আছো এখন? জ্বর আছে?”
” হুম একটু আছে। তুমি আবার কি নিয়ে এসেছো?”
” কিছু ওষুধ আর সুপ বানিয়ে এনেছি। সুপটা খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও।”
” তোমাকে অনেক ঝা’মেলা’য় ফেলছি আমি। সরি কায়ান। শুধু শুধু আমার পেছনে তোমার কথাটা সময় আর ওন খরচ হচ্ছে।”
” চুপ করো বেশি কথা বলো তুমি। এই তোমার না অসুখ, তাহলে এতো কথা বলছো কেন? অসুস্থ মানুষকে চুপ থাকা মানায়। নাও সুপটা খেয়ে নাও। আন্টি বলেছে তুমি নাকি এটা পছন্দ করো তাই এটা বানিয়ে আনলাম।”
এনাক্ষী একটা চামচ মুখে নিয়ে দেখলো বেশ ভালোই বানিয়েছে কায়ান।
” মা বুঝি তোমাকে ফোন করেছিলো?”
” হ্যাঁ। তোমার জন্য আন্টি অনেক টেন’শন করছেন।”
” হুম তা তো জানি। কিন্তু তোমাকে কেন শুধু শুধু ফোন করে বিরক্ত করলো? আমাকে করলেও পারতো।”
” তুমি ঠিক মতো নিজের যত্ন নেবেনা, সঠিক সময়ে ওষুধ খাবেনা তাই আন্টি আমাকে বলেছেন যেন তার কেয়ারলেস মেয়ের একটু খেয়াল রাখি।”
এনাক্ষী কয়েক চামচ খেয়ে সুপ রেখে দেবে তার আগেই কায়ান এক চামচ সুপ তাকে জোর করে খাইয়ে দিলো।
” আর আন্টি এটাও বলেছেন তার মেয়ে যদি খেতে না চাই তাহলে মা’র দিয়ে খাওয়াতে। আন্টি পারমিশন দিয়েছে মা’রা’র তাই মা’র খেতে না চাইলে চুপচাপ খেয়ে নাও।”
এনাক্ষী মুখ গোমড়া করে কায়ানের হাতে বাকি সুপটা খেয়ে নিলো। এনাক্ষী অসুস্থ হওয়ার পর তার মায়ের সাথে কায়ানের বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। ভীনদেশে মেয়ে কিভাবে থাকবে তার চিন্তায় তিনি অস্থির। তাই উপায় না পেয়ে কায়ানের কাছে মেয়ে খেয়াল রাখার অনুরোধ করলেন। এনাক্ষীকে দাঁড়িয়ে থেকে ওষুধ খাওয়ালো কায়ান। তারপর দু’জনে কিছুক্ষণ গল্প করলো। কায়ান যখন দেখলো এনাক্ষীর ঘুম আসছে তখন সে এনাক্ষীকে দরজা বন্ধ করতে বলে নিজের কাজে চলে গেলো।
.
.
ফিলিক্সকে দেখে হিতোমি দৌড়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
” তুমি আবারো লাফালাফি করছো। আর করলেও আমার সামনেই কেন লাফালাফি করো? লাফালাফি করতে হলে অন্যকারো সামনে গিয়ে করো।” বেশ বিরক্ত নিয়ে বললো ফিলিক্স। মুখে লেগে থাকা খুশির ছোঁয়াটুকু একমুহূর্তেই সরে গেলো হিতোমির চেহারা থেকে।
” সরি।”
” ঠিক আছে। এখন বলো কেন এসেছো আমার সামনে?”
” তুমি এবং এনাক্ষী একই বিল্ডিং এ থাকো না?”
” হ্যাঁ তো?”
” আমি তো ওর বাসা চিনিনা তুমি আমাকে একটু নিয়ে যেতে পারবে? প্লিজ।”
” কেন? ওর বাড়িতে তোমার কাজ কি?”
” সে তো অসুস্থ তাই একটু দেখতে যাবো, সেইসাথে নোটসগুলো দিয়ে আসবো কয়েক সপ্তাহ পরেই তো পরীক্ষা। প্লিজ না করোনা।”
অনেক আশা নিয়ে ফিলিক্সের দিকে তাকিয়ে আছে হিতোমি। কিন্তু ফিলিক্স তাকে কোন উওর না দিয়ে চলে যেতে লাগলো। তার থেকে কোন উওর না পেয়ে হিতোমির মন খারাপ হয়ে গেলো।
চলবে….