পুরোনো ডাকবাক্স পর্ব -০৬

#পুরোনো_ডাকবাক্স
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৬

রাতে আলিজা বসে বসে বই পড়ছিল এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ পেয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখে নেওয়াজ আঙ্কেল। ভেতরে আসার অনুমতি দিলে তিনি ভেতরে এসে চেয়ার টেনে আলিজার সামনে বসেন।

” আরসাল আসে নি?

” না এখনও আসে নি।

” বাসায় আসতে দেরি হলে কল করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলতে হয়।

” জি পরবর্তী থেকে মাথায় থাকবে।

” আরসালকে ভালো লাগে নি? সিদ্ধান্ত কি তোমার এই ব্যাপারে?

” আমি তার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই।

” দোয়া করি সুখী হও মা।

” জি আঙ্কেল।

” আমার সিদ্ধান্ত মেনে যেহেতু নিয়েইছো বাবা মা ডাকতে পারো আমাদের তবে ইচ্ছে না হলে থাক।

” হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। তদন্তের কি খবর আঙ্কেল, আপনি বা পুলিশ কেউই তো আমাকে কিছু জানাচ্ছেন না এটা কি ঠিক? আঙ্কেল আমি উনি আমার বাবা ছিলেন।

” সিসিটিভিতে একজনকে কালো চাদর আবৃত লোককে দেখা গিয়েছে, যে কি না গু*’লি চালিয়েছে।

” এত বড় কথা আমি জানি না! বুঝতে পারা যায় নি আঙ্কেল?

” আশেপাশের এলাকার কয়েকটি সিসিটিভি চেক করে দেখা হয়েছে বাইকের নম্বর দেখা হয়েছে। সে অনুযায়ী তদন্ত চলছে।

” সূত্র তো ঠিকই পাওয়া গিয়েছে এবার ধরতে পারলেই হলো।

” আগামীকাল হয়তো থানা থেকে ডাকতে পারে, আমি তোমাকে নিয়ে যাব। এখন আসছি থাকো…

” জি।

আলিজা এবার আরসালের বিষয়ে সিরিয়াস হয়। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না, আরসাল নিজে থেকে দূরে দূরে থাকে তাই বলে কি তার ও থাকতে হবে নাকি! দুজনই যদি দূরত্ব বজায় রাখে তাহলে সম্পর্ক গড়ে উঠবে কিভাবে? সে আরসালের স্ত্রী সবকিছুতে তার আগে অধিকার। এভাবে নিরব শান্তশিষ্ট থাকা আর চলবে না, এই একমাত্র সম্বল সে হারাতে পারবে না। সে এই কয়েকদিনে আরসালের সাথে থাকতে থাকতে তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে!!
__________

আরসাল বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে প্রতিদিনের মত আলিজাকে কল দেয়। কিন্তু আলিজা ফোনই রিসিভ করে না তাই বাধ্য হয়ে নওরীনকে কল দেয় এতরাতে কলিংবেল বাজালে বাবা-মার ঘুম ভেঙে যাবে। দুই মিনিটের মধ্যে নওরীন দরজা খুলে দেয়।

“প্রতিদিন এমন দেরি হয় কেন ভাইয়া? তুমি বিয়ের পরও প্রতিদিন তিথির সাথে দেখা করছো না তো?

” তিথি আপু বলতি সময় সময় ভাবিও বলতি কিন্তু এখন কি হলো।

“সেটা তোমার জন্য বলতে হতো। মন থেকে আমি তাকে একদম পছন্দ করতাম না, মেয়েটাকে একটুও ভালো লাগে না।

” নওরীন, কথা ঠিক করে বল।

” আগে শুনেছি ছোটরা অবুঝ, কিছু বুঝতে সময় নেয়। তোমাকে দেখে ধারণা পাল্টে গেল। চোখে যে পট্টি পড়ে আছো সেটা দয়া করে খুলে ফেলো। তোমার ঘরে পরীর মত সুন্দর একটা বউ আছে ভাইয়া, তাকে ঠকিও না প্লিজ। বিয়ে যেভাবেই হোক তোমরা এখন স্বামী স্ত্রী। আলিজা ভাবির কেউ নেই একমাত্র তুমি ছাড়া, তার প্রতি কঠোর হয়ো না।

” যা রুমে যা, অনেক কথা বলতে শিখে গিয়েছিস।

” আলিজা ভাবি তোমায় ভালোবাসে ভাইয়া। আর তুমি যদি এখনও তিথির সাথে যোগাযোগ রাখো তবে তাকে পরকীয়া বলে। আপাতত এই বইটা নাও, আশা করছি অবসর সময়ে পড়বে।

ইসলামিক একটা বই আরসালের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নওরীন নিজের রুমে চলে যায়। আরসাল তাকিয়ে থাকে আর ভাবে এতকিছু জানা সত্ত্বেও কেন সে এটা করছে! সে তো খুব খারাপভাবে ঠকাচ্ছে আলিজাকে, কেন করছে সে এমন!! বইটা হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে আরসাল। রুমে এসে দেখে আলিজা ঘুমিয়ে গিয়েছে। বুকের ওপর বই রয়েছে হয়তো বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছে। সে আস্তে করে বইটা নিয়ে পাশে রেখে দেয়। আলিজা ওমনি আরসালের হাত জড়িয়ে পাশ ফিরে। আরসাল আর আলিজার থেকে হাত সরাতে পারে না। আলিজার স্পর্শ পেয়েই বুঝতে পারে তার হাতটা প্রচন্ড গরম তার মানে কি আলিজার জ্বর এসেছে! কপালে হাত দেয় দেখার জন্য, সে যা ভেবেছিল তাই আলিজার তো প্রচন্ড জ্বর এসেছে। নিজের কাছে নিজেকে কেমন ছোট লাগতে শুরু করে তার। বিয়েতে তো আলিজারও মত ছিল না মেয়েটার সাথে সে সত্যি সত্যি অন্যা*’য় করছে। কিন্তু সে তো তিথিকে ভালোবাসে কি করবে কিছু বুঝতে পারে না। আলিজাকে ডাকতে থাকে মেয়েটা হয়তো কিছু খায় ও নি, কিছু খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলে একটু কমবে জ্বর। আরসালের ডাক শুনে আলিজা চোখ মেলে তাকায়।

” উঠুন, খেয়েছেন কি কিছু?

“(মাথা নাড়িয়ে না জানায়)

” উঠুন খেতে হবে, গায়ে অনেক জ্বর। কিছু খেয়ে ওষুধ খাবেন চলুন।

” না আরসাল আমি কিছু খাবো না। কেমন কাটলো আপনার বিকেল, সন্ধ্যা, রাত?

” মানে?

” কেন করলেন আপনি আমার সাথে এমন?

” কি করেছি আমি?

” আপনি বিয়ের দিন আপনার বাবাকে না বলতে পারলেও আমাকে তো বলতে পারতেন আমি বিয়ে ভেঙে দিতেন। পুরো দুনিয়ার সাথে আপনিও আমাকে ঠকালেন? কেন আরসাল আমি কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার?

” ক কি বলছেন আপনি?

” আমাদের একসাথে থাকা তো কম দিন না, আপনি অন্য কাউকে ভালো না বাসলে ঠিক আমাকে সময় দিতেন কাছে আসতেন। আমার বাবা মা*’রা যাওয়াতেও আমি আপনাকে পাশে পাই নি। আল্লাহ আমাকে কেন নিয়ে যাচ্ছে না বলেন তো, আল্লাহ তো যাদের বেশি ভালোবাসে তাদের আগে নিয়ে যায়। প্রথমে জন্মের সময় মাকে হারানো, তারপর বাবাকেও হারিয়ে ফেললাম। যার হাত ধরে নতুন জীবনে পা রাখলাম সে মানুষটাও আমাকে ঠকালো। সে অন্য কারও সাথে…… আল্লাহ আমাকে কেন মৃত্যু…

আরসাল সাথে সাথে আলিজার মুখ চেপে ধরে, কি বলছে সে। নিজের মৃ*’ত্যু কেউ এভাবে চায়! নিজেকে ভীষণ অপ*’রাধী লাগছিল তার। এ কয়েকদিনে সেও একটু হলেও দূর্বল হয়ে গিয়েছে। তার মুখে এসব কথা মানতে পারছিল না সে। কিন্তু দুই নৌকায় পা রেখেও চলতে পারবে না সে।

” আ আমি নিজেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নিয়ে আসছি। আমি জানি অন্যা*’য় করে ফেলেছি আপনার সাথে কিন্তু কি করব বলুন।

নিজের মুখে থেকে আরসালের হাত সরিয়ে উঠে বসে সে। কি মনে করে আরসালকে জড়িয়ে ধরে। আরসালের কেমন যেন অনুভূতি হয়, কই তিথি ধরলে তো এমন লাগে না!

” আমি আপনাকে ভালোবাসি আরসাল, প্লিজ আমাকে আর একা করে দিবেন না। এবার একা হলে আর আল্লাহ আমাকে নিজের কাছে না নিয়ে নিলে আমার যে সুই*’সাইড করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আমিই একজন যার সাথে কি না পুরো দুনিয়া দুই নম্বরি করেছে।

” প্লিজ শান্ত হোন, আমাকে কিছুদিন সময় দিন। আমার অবস্থা হয়তো কেউ বুঝবে না আমি কোন পরিস্থিতিতে আছি সেটা সবার বোধগম্যের বাহিরে।

” প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আপনি প্রয়োজনে ওই মেয়েকে ছাড়তে না পারলে বিয়ে করে নেন। তার সাথেই থাকবেন শুধু আমার থেকে একদম আলাদা হবেন না। আমি চাই না আমার স্বামী আর পাপ করুক আমি আপনাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিলাম।

আরসাল নিজের বুক থেকে আলিজাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক পলকে চেয়ে থাকে কি অদ্ভুত মেয়েটা। নিজের বরের বিয়েতে অনুমতি দিচ্ছে শুধুমাত্র তাকে যেন না ছাড়া হয় তাই!!

” আচ্ছা এখন চলুন কিছু খেয়ে ওষুধ খেতে হবে নাহলে জ্বর কমবে না।

” আপনি বলুন আমাকে ছাড়বেন না আপনি?

” হুম ছাড়বো না।

” কথা দিন।

” আচ্ছা কথা দিলাম।

কথা শেষ করে আলিজা আবার আরসালকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল চমকে ওঠে, কি অদ্ভুত মেয়ে এভাবে কেউ কাছে আসে! কেমন হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে তার!!
______________

সকালে আটটা বেজে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি করে নাস্তা বানিয়ে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে আলিজা। টেবিলে খাবার রেখে আরসালের মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে থাকে। আরসাল ধীরে ধীরে চোখ খোলে পাশে আলিজাকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে।

” আ আপনি?

” হ্যাঁ আমি নয়তো কে থাকবে? আটটা বেজে গিয়েছে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নেন কলেজে যেতে হবে না?

” হ্যাঁ কিন্তু আপনার তো জ্বর ছিল! আপনি এত তাড়াতাড়ি উঠেছেন কেন?

” আমার জ্বর?

” হ্যাঁ রাতে তো আপনার খুব জ্বর ছিল, রাতে কিছু খেয়ে ওষুধ খেতে বললাম কিন্তু আপনি তো এমনিই তখন ঘুমিয়ে গেলেন। মনে নেই আপনার?

” না তো, আমার মাঝে মাঝে রাতে জ্বর আসে।

” আপনার জ্বরের ঘোরে কথা বলার অভ্যাস আছে?

“হ্যাঁ আছে, কেন কিছু বলেছি?

” না তেমন কিছু না রুমে এসে দেখি একা একা কথা বলছেন।

” ওহ আচ্ছা, এখন যান ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে কলেজে যান। দুপুরে তাড়াতাড়ি বাসায় আসবেন।

” তাড়াতাড়ি কেন?

” একটু বের হতে ইচ্ছে করছে।

” কোথায়?

” আশেপাশে ভালো কোন জায়গা নেই বা ভালো রেস্টুরেন্ট?

” হুম আছে।

” একটা কোথাও নিয়ে যাবেন তাহলেই হবে।

” আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

” ঠিক আছে।

আরসাল বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে যেতে থাকে আর ভাবে তার মানে রাতের কোন কথা আলিজার মনে নেই। কিন্তু যা বলেছে তা কি সত্যি, সে কি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে! আগের থেকে আজকে আলিজাকে অন্যরকমও লাগছে। এতদিন নিজে থেকে তেমন কথাই বলে নি, আর আজ একদম চেঞ্জ!
___________

দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে আছে। আরসাল প্রতিদিন বাসায় আসতে আসতে তিনটা বেজে যায়। আলিজা রুমে শুয়ে ছিল এমন সময় ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার ছোট মা কল দিয়েছে। উনি তো কল দেয় না আলিজাকে তবে আজকে কি মনে করে কল দিয়েছে! কল রিসিভ করে সে।

” আলিজা…

” জি, কি হয়েছে হাপাচ্ছেন কেন?

” প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় এসো, আমি পুলিশকে খবর দিয়েছি।

” কি হয়েছে?

” এক লোক আরিশকে তুলে নিয়ে গিয়েছে।

” মানে? কিভাবে, কখন! কি বলছেন আপনি?

” সামনের দোকানটায় গিয়েছিলাম, ওকে দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে জিনিস কিনছিলাম তখনই একটা গাড়ি এসে আরিশকে নিয়ে গেল। আমার আরিশ….

” কান্না করবেন না আমি আসছি। পুলিশকে সাথে সাথে জানিয়েছেন? গাড়ির নম্বর খেয়াল করেছিলেন তো?

” হ্যাঁ আমি পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছি তুমি প্লিজ কিছু কর, আমার ছেলেটাকে কারা নিয়ে গেল…

” আপনি বাসায় থাকুন আমি এক্ষুনি আসছি।

” হ্যাঁ প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো।

” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আসছি।

চলবে…………

(আসল টুইস্ট এখান থেকে শুরু হবে ইন শা আল্লাহ 😊)

বেশি বেশি মন্তব্য চাই❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here