#প্রথম_প্রেম
১৯তম পর্ব।
উর্মি রিকশা নিয়ে, হুড ফেলে জুম বৃষ্টিতে ভিজছে, কারণ আজ সে খুব খুশি। তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, শাওন আজ প্রিলিতে পাশ করেছে।
রিকশার ড্রাইবার মুখ পিছন দিকে এনে বললো,
আপা, আপনের জ্বর আইবো কলাম। আপনি কি পাগল নাকি?
– আপনি ভিজছেন কেন?
– কারণ, আমাদের অভ্যাস।
– আমি ও আজ খুব খুশি, তাই ভিজছি।
– তয়, আপনের জ্বর আইবো কলাম।
– আসুক।
উর্মির মনে হচ্ছে, ঢাকা শহরের সবচেয়ে সুখী মেয়ে হচ্ছে সে। এতো আনন্দে সে যেন প্রকাশই করতে পারছেনা, তাই বৃষ্টি বিলাস করছে, করে মন কে আনন্দ দিচ্ছে।
শাওনের মা, জমিলা বেগম খুশি ধরে রাখতে পারছেন না। কয় রাকাত যে শোকরানা নামায পড়ছেন, তিনি নিজেই জানেন না।
আল্লাহ, চাইলে হয়তো তার গতি হবে। তাছাড়া, তার মেজ ছেলেও পল্লি সঞ্চয় ব্যাংকে ছোট্ট একটা পোস্টে চাকরি পেয়েছে। জমিলা বেগমের দিন হয়তো আল্লাহ একদিন সুখের দিন করবেন, তাই বার বার ভাবছেন তিনি।
আজ সকালে শিরিন বাবার বাড়ী এসেছে, সে ও ভাইদের খবরে খুব খুশি। শিরিন মায়ের পাশে গিয়ে বসলো, এবং মাকে বললো, আম্মা, এখন মেজ ভাইকে বিয়ে দাও।
– এই টিনের ঘরে, কে মেয়ে দিব মা?
– ভাইজানের সার্টিফিকেটে আব্বা বয়স কমাইয়া দিছিলেন, বয়স তো বত্রিশ শেষ।
– তাতো বুঝি রে মা। কিন্তু একটা রুম তো বউয়ের জন্য বানানো দরকার। তাই না? এই ঘরে দুই রুম। এক ঘরে শাহিদা তার পোলাপান নিয়ে থাকে, এই ঘরে আমি সাগর রে নিয়া থাকি। বউ তুলবো কোথায়?
– আর কয়দিন পরে, তোমার ছোট পোলা, ম্যাজিস্ট্রেট হইবো, তখন বিল্ডিং তুলিও।
– আল্লাহ যদি দিবার দেন, তখন হইবো।
– আম্মা, শাওন যে মেয়ের পছন্দ করে দেখছো?
– বউমা এক নজর দেখাইছিল।
– কেমন লাগছে?
– অতিশয় বড় লোক আমি ভয় পাই মা। তবে মেয়ে সুন্দর আছে।
– একটু চিকন চাকন তবে, চেহারা খুব মায়াবী।
– হ।
– আম্মা, আইজ ভর্তা বানাও।
– আইচ্ছা।
শিরিন ফোন হাতে নিয়ে শাওন কে কল দিলেন, শাওন যদিও অফিসে, তবুও ফোন ধরলো।
হ্যালো
– কি রে ব্যস্ত নাকি?
– না, তেমন না! কেমন আছ তুমি?
– আমি ভালো আছি, তোর জন্য তো সু খবর, মা তো তোর বউ পছন্দ করে ফেলেছে।
– আমার বউ?
– উর্মি কে।
– ওহ।
– এই, তুই আমাকে উর্মির সাথে কথা বলিয়ে দেয়, কনফারেন্স কর।
– সময় চলে যাচ্ছে?
– তুই আজ দিবি শেষ?
– আচ্ছা, সন্ধ্যার পরে ওকে বলবো। এখন রাখি।
– এই শোন ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখ তোরা!
– হ্যা, দেখার সময় তো আসছে।
– আচ্ছা, সন্ধ্যার পরে কল দিস, এখন কাজ কর।
শাওন ভাবছে, উর্মি কি কথা বলবে ছোট আপুর সাথে! লজ্জা পাবে নাকি কে জানে।
শাওন উর্মিকে কল দিল, উর্মি সাথে সাথে ধরে বললো।
জি বলুন, জনাব।
– ছোট আপু তোমার সাথে কথা বলবে।
– আমার সাথে?
– হ্যা।
– কেন, বিয়ে ঠিক করতে আসবে নাকি?
– এই মেয়ে, তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?
– হওয়া লাগবে কেন?
– আমি, সন্ধ্যায় কল দিব।
– না, শাওন সন্ধ্যায় না, আজ রুবা আপুর বাসায় দাওয়াত, কথা বলা যাবেনা। তুমি এখন কথা বলিয়ে দাও, এখন ক্লাস নেই, ফ্রি আছি।
– হুম।
শাওন ভাবেনি, উর্মি এতো তাড়াতাড়ি রাজী হয়ে যাবে, কথা বলতে। বেশ সাহস আছে মেয়েটার।
শাওন কল দিল কনফারেন্স করে। শিরিন কল ধরলেন।
হ্যালো,
– আপু কথা বল, উর্মির সাথে।
– আসসালামু আলাইকুম আপু, কেমন আছেন?
– ভালো আছি। তুমি করে বলি, রাগ করবে না তো?.
– না, আপু। কি যে বলেন!
– আমার ভাইয়ের বউ হয়ে কবে আসবে?
– যেদিন আপনার ভাই চাইবে। আমার সমস্যা নাই।
– বাহ, তাহলে তো শুধু কাজির দরকার।
– জি।
– আচ্ছা, আমার মায়ের সাথে কথা বলবে?
আপু, তুই কি করছিস? আম্মা রাগ করবে।
– তুই চুপ থাক।
উর্নি কথা বলবে?
– আচ্ছা দিন।
শিরিন মায়ের হাতে, ফোন দিয়ে বললো তোমার ছোট ছেলের বউ, কথা বলো।
হ্যালো,
-আআসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ মা?
– জি, ভালো আছি মা। আপনি কেমন আছেন?
– ভালো আছি। আমার কাছে আসবে কবে?
– জি?
-বলছি, আমার ছেলের বউ হয়ে তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আসো।
– জি, মা আসবো।
– তোমার আব্বা, আম্মা ভালো আছে?
– জি ভালো আছেন।
– তাড়াতাড়ি শুভ কাজের দিন ঠিককর, তাহলে বউ রে আদর করতে পারবো। বয়স হইছে মা।
– দোয়া করবেন মা।
– দোয়া তো করছি, সারাদিন। ভালো থাইকো মা।
– জি।
জমিলা খাতুন ফোন কেটে দিলেন, শাওন সাথে সাথে বললো ভালই কথা জানো?
– তাই?
– আম্মা কে এতো সহজে মা ডেকে দিলে, খুব অবাক হয়েছি।
– অবাক হবে কেন? আমি আমার শ্বাশুড়ি কে মা ডাকবো না? তোমার মতো কি ভাবী ডাকবো?
– ব্রেইভ গার্ল।
– ইয়েস, এখন রাখি, ক্লাস আরম্ভ হবে।
– ওকে।
শাওন ভাবছে, বাড়ীতে কি যে ভাবছে কে জানে! কারণ মা এতো আধুনিক না! উর্মি হঠাৎ করে এমন করে মা ডাকবে শাওন একদম বুঝেনি। আবার, ছোট আপু যে হঠাৎ করে মা কে কেন দিল! এখন বাড়ীতে কি ভাববে, এই চিন্তায় একদম ভালো লাগছেনা শাওনের….
এদিকে, রুবা আপুর বাসায় যাওয়ার পর, রুবা আপুর শ্বাশুড়ি বারবার রুনা খানম কে বলছেন,
বেয়ান, আপনার ভাগ্নী বিয়ে দিয়েছেন বড় ছেলের সাথে, আমার ছোট ছেলে মাহদীর সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে, আমি আপনাকে ডাবল বেয়ান করতে চাই।
– আমার মেয়ে অনেক ছোট এখনো।
– আমার ছেলে কি বড়? ঢাকা মেডিকেলে মাত্র থার্ড ইয়ারে পড়ে, এখন এনগেজমেন্ট করে রাখি, দুজনের পড়া শেষ হলে বিয়ে দিলাম।
– সময় আসুক বেয়ান।
– আরে, আজকাল কের মেয়ে, প্রেম করা ছাড়া নাই, দবাই প্রেম করছে। আপনার মেয়েটা ছোট আছে, তাই আগে বুকিং দিতে চাই। আপনি তো জানেন আমার মুয়াজ কেমন? আমার মাহদী ও এমন। দুইটা ছেলের জন্য তার বাবা দুই ফ্ল্যাট গুলসানে কিনেছে। আমরা আমাদের এই তিন তলা বাড়ীতে থাকবো, বউদের ডিস্টার্ব করবো না। রুবা আমাদের ছেড়ে থাকতে চায়না, তাই একসাতগে থাকি।
– বেয়ান, আপনি এখন চিন্তা করবেন না, সময় হলে দেখা যাবে।
রুবা, একদম উর্মির কানের কাছে এসে বললো তুই আমার জা হবি, জানিস? আমার দেবরের বউ।
– প্লিজ আপু, এগুলি বললে কোন দিন আর আসবো না।
– কেন? আমার দেবর কি কালো নাকি বেটে?
– আমার এই কথা গুলি ভালো লাগেনা।
রুবার ননাস এসে তাদের সামনে বলছেন, এখন থেকেই দুই বোনের কানাকানি শুরু হয়ে গেল দেখছি!
উর্মির এতো রাগ লাগছে, মনে হচ্ছে এখনই শাওন কে একটা কল দিয়ে এই সস্তা রশিকতায় যে সে কতটুকু বিরক্ত, এটা বলতে। কিন্তু শাওন কি রাগ করবে? নাকি সুন্দর করে বুঝবে? আবার শাওন কে না বললেও মন খচ খচ করবে!
#প্রথম_প্রেম
২০ তম পর্ব।
শিরিন ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছে, অনেক ঝাল হয়েছে ভর্তা। তাই ভাত খাচ্ছে,আর পানি খাচ্ছে।
ভাত খেতে খেতে শিরিন জমিলা বেগম কে বললো,
আম্মা, তুমি আগে বললে বড় লোকের মেয়ে, তুমি তোমার ছেলের বউ করবেনা, তবে দেখি উর্মিকে বললে মা, তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আসো।
– মেয়েটা অনেক ভালো রে! কত সহজেই মা ডাকলো। আমার আপন ছেলের বউ তো আমাকে মা ডাকে না।
– ওহ, সেজন্য পছন্দ হইছে?
– না, মেয়ে ভালই আছে। কিন্তু মা-বাপ যদি রাজি থাকে, তবেই বিয়ে হবে।
– বিয়ে-শাদী অনেক দেরী আছে, আম্মা ভর্তা আরেক্টু দাও!
– না, আর না। মাছের তরকারি খেয়ে দেখ,
– না, আর খাবো না। ঝালে পেট জ্বলছে।
শিরিন ফোন হাতে নিয়ে ভাইকে কল দিল,
হ্যালো ছোট আপু।
– তোর বউকে আম্মার পছন্দ হয়ে গিয়েছে।
– মা, কি রাগ করেছেন৷ উর্মি এতো কিছু বুঝেনা। বয়স কম।
– আরে তোর চেয়ে বেশি ম্যাচুউর আছে ও। আর শাওন, পারলে বাড়ী ঘর ঠিক কর। মেজ ভাইয়ের বিয়ে দিতে হবে, তোর ও তো বিয়ে করতে হবে।
– আপা, বেতন যা পাই তার অর্ধেক বাসা ভাড়া আর খাওয়াই চলে যায়, বাকি অর্ধেক থেকে সামান্য হাত খরচ রেখে মাকে পাঠিয়ে দেই। ঘর বানানোর মতো টাকা নাই আপু।
– বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা মনোযোগ দিয়ে দিবি। বিসিএস হয়ে গেলে ভালো বেতন পাবি, তখন পারবি।
– দোয়া কর।
– প্রতিদিনই করি। আচ্ছা এখন রাখি রে, ঝাল ভর্তা খেয়ে পেট জ্বলছে।
– ওহ। আচ্ছা, সাবধানে থেকো।
শাওন কথা শেষ করতেই উর্মির ফোন চলে এলো। এতো রাতে কি কারনে ফোন দিয়েছে কে জানে!
হ্যালো
– তুমি কবে আমাকে বিয়ে করবা বলো?
– কেন? এখনই বিয়ে করে ফেলবা নাকি?
– শুনো, তুমি আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করবা।
– কিছু হয়েছে নাকি?
– রুবা আপুর শ্বাশুড়ি তার ছোট ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
– সমস্যা কি বোকা? তোমকে এখন কেউ বিয়ে দিবেনা, পিচ্ছি মেয়ে।
– যেদিন আমাকে অন্য কেউ এসে নিয়ে যাবে, সেদিন ও তুমি উদাসীন থাকবে।
– আমি উদাসীন?
– হ্যা।
– তুমি আমার সাথে কখনো ঘুরতে যাও? না, যেতে চাও?
– উর্মি, তোমার আজ মেজাজ অনেক খারাপ আছে, প্রস্তাব আসা মানে বিয়ে নয়। এখন রাখি, ঘুমাও। সকালে ফোন দিও।
– ওহ, আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা।
কাউকে পেয়েছো নাকি?
– আমি একজন কেই পেয়েছি, সেই আমার সব। এখন রাখছি।
শাওন ফোন রেখে দিয়ে ডাইরি লিখছে, উর্মি এখনো কত পিচ্ছি রয়ে গিয়েছে। সে কবে বড় হবে? তার বউ হবে? তার বড় আপার ৫ জন মানুষ বাড়ীতে থাকে। তাদের কে সে কি মেনে নিবে? মাঝে মাঝে খুব ভয় লাগে শাওনের, সে তো উর্মি ছাড়া কিছুই কল্পনা করতে পারেনা। উর্মি ছাড়া থাকার কথা ভাবতেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। রিকশা দিয়ে ঘুরে কি হবে? সে তো সারাদিন তার মনের ভিতরে ঘুরাঘুরি করে।
ছোট আপু কত ম্যাচুউর ভাবে উর্মিকে, কিন্তু ও যে এখনো আস্ত বোকা একটা মেয়ে সেটা কি আপু জানে? জানেনা। আজ উর্মিকে মায়ের পছন্দের কথা জানানোর ইচ্ছে ছিল, কিন্তু না আজ উর্মি সেই কথার গুরুত্ব বোঝার মতো মুডে একদম নাই।
শাওন শেষ লাইনে লিখলো, উর্মিমালা তুমি অতি রূপবতী একজন মেয়ে, তোমাকে কত কত রাজপুত্র চাইবে, আমার মতো শাওন কে তুমি ভালবাসো তাই যে আমার ভাগ্য। আমার উর্মি, তুমি শুধুই আমার, আমার আর আমার।
আজ উর্মি রাজশাহী যাচ্ছে, রুয়েটে পরীক্ষা দিতে, রুনা খানম বার বার না করছেন, কেন রাজশাহী তে পরীক্ষা দিবে! তিনি তার একমাত্র মেয়েকে ঢাকার বাইরে দিবেন না। তাছাড়া উর্মির বুয়েটের পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু উর্মি একবার রাজশাহী যাবে, শুধু শাওন আসবে তাই, তাছাড়া শাওন কোন শহরে থাকে, সেটা তার উৎসুক মন দেখতে যায়। রুনা খানমের চাচাতো বোন থাকেন রাজশাহী তে, তাই সেখানে গিয়ে উঠবেন তিনি। দুই দিন থেকে পরীক্ষা দেওয়ায় পর, ঢাকায় ফিরবেন।
উর্মির পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে শুধু চিন্তা করছে কিভাবে বাইরে বের হবে? তাই তার কাজিন রুবি আপুকেই রাজী করালো, রাজশাহী বিশ্ববইদ্যালয়ে দেখতে যাবে, কারণ তিনিও সেখানেই পড়েন। আর এদিকে শাওন কে বলে রেখেছে সেখানে সময়মতো চলে আসতে।
শরীর অসুস্তগ বলে, আজ অফিস থেকে লিভ নিয়েছে, শাওন। তার প্রিয় মানুষ টির সাথে দেখা করতে, যদিও শাওন বার বারই বলেছে এভাবে, দেখা করাটাও রিস্ক। কিন্তু উর্মি কি আর সেই কথা শুনে! তাই সে শাওন কে রাজী করিয়েছে শেষ পর্যন্ত। কি ঝামেলা হয় সেটাই ভাবছে শাওন, উর্মির খুব চিন্তা রুবি আপুকে কেমনে ম্যানেজ দিবে? তিনি কি বুঝে যাবেন? নাকি সব স্বাবহাবিক থাকবে! গাড়ী চলছে, আর দুজনেই একই চিন্তা করছেন….
চলবে…
আন্নামা চৌধুরী।
২৯.০৮.২০২১