প্রথম প্রেম পর্ব ১৭+১৮

#প্রথম_প্রেম
১৭ তম পর্ব।

শাওন উর্মির জন্য বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে ধানমন্ডি লেকে। কখন আসবে সে! কি দিবে সে সুখবর।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে উর্মি এসে পাশে বসলো, সাদা একটা জামা পড়ে এসেছে সে। লাল সুন্দর একটা চুন্ড্রি ওড়না! এতো সাধারণ সাজ, তবুও যেন অসাধারণ লাগছে। তার হাতে একটা সুন্দর ফুলের তোড়া ।

কনগ্রেচুলেশন গ্রেজুয়েট সাহেব।
– থ্যাংক ইউ।
– সরি, একটু লেইট হয়ে গেল। আম্মুকে বলেছি আজ সাইয়ারার জন্মদিন। তাই আম্মু সাইয়ারার বাসার নিচে এনে দিয়েছে। আম্মু যাওয়ার পর আমি ওর বাসা থেকে বের হলাম।
– তাহলে অনেক পরিশ্রম হয়েছে।
– তাতে কি? এই যে তোমার সামনে বসে আছি, কথা বলছি, এটা যে কি আনন্দ দেয়, সেটা তুমি বুঝবেনা
– তাই? আনি বুঝিনা?
– ইয়েস, তুমি বুঝবেনা।
– আচ্ছা, এখন সুখবর বলো। সুখবর শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।
– এখনই?
– হ্যা।
– মেজ খালামনি গত কাল ইউএস থেকে এসেছেন।
– তাহলে তো বেশ ভালো।
– এটা কিন্তু সুখবর নয়,
– তাহলে কি?
– খালামনি আমার জন্য একটা ফোন এনেছে, রেজাল্টের গিফট। আমি ভাবতেই পারছিনা, এখন আমি রাতেও তোমার সাথে কথা বলবো। এর মধ্যে এটা বাবার টার মতো সাদা-কালো ফোন নয়, কালার ফোন।
– ওয়াও, সত্যি এটা অনেক বড় সু সংবাদ। তোমাকে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন দিতে পারবো। এটাই যে, কি শান্তির বিষয়। আহা! খুব ভালো লাগছে…

দুজনে প্রায় ঘন্টা খানেক গল্প করলো পাশাপাশি বসে, শাওনের উর্মির কথা শুনতেই বেশ আনন্দ লাগে। শাওন ভাবছে, এই মেয়ের সাথে যখন বুড়ো হবো, তখন কি তার কথা আরও বেড়ে যাবে? ভাবতেই কেমন শিহরণ লাগছে, দুজন একসাথে বুড়ো বুড়ি হবে।

শাওন উর্মিকে যাওয়ার সময় বললো দেখো উর্মি আমি চাইনা তুমি সারাক্ষণ ফোন নিয়ে বিজি থাকো, কিংবা আমার সাথে অধিক কথা বলার জন্য বাসায় অশান্তি হউক। তুমি জানবে সব কিছুর পর ও শাওন তোমার থাকবে, সামনে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা ভালো করে পড়বে, বাসায় যেন এই বিষয় নিয়ে না ভাবে। তাছাড়া আবার জানলে ঝামেলা হয়ে যাবে।

শিরিনের হাজবেন্ড ঢাকায় এসেছেন জরুরি কাজে। তাই শ্যালক কে সাথে নিয়ে ঘুরছেন, দুজন নীলক্ষেত বই কিনছেন, শিরিনের হাজবেন্ড জাহিদ বেশ কয়েকটা চাকরির বই, বিসিএস প্রিলিমিনারীর বই শ্যালক কে উপহার দিলেব। শাওন বার বার না করছে লাগবেনা আর দুলাভাই বলছেন, আরে এগুলি ইনভেস্টমেন্ট পরে যখন ফরেইন ক্যাডার হবে, তখন কয়েক গুন উপহার ফেরত নিব।
– কি যে বলেন দুলাভাই।
– ঢাকার বাইরে যাবে নাকি?
– কিসের জন্য?
– আমার বন্ধু রাসেল একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে আছে। এইখানে সেইলস ম্যানেজার নিবে, স্যালারী বারো হাজার, আর থাকা খাওয়া কোম্পানি বহন করবে।
– কোথায়?
– রাজশাহী।
– মাস্টার্স বাকি আছে যে!
– চাকরি করে, মাস্টার্স করে সবাই। ও আমাকে সেদিন বলেছিল, এখন তুমিই তো এপ্লাই করতে পারবে।
– দেখি, দুলাভাই।
– আমাকে দুই/চারদিন পরে জানিও।
– জি দুলাভাই।

শাওনের এই মুহুর্তে চাকরির খুব দরকার কিন্তু মাস্টার্স না করে, উর্মিকে একা রেখে রাজশাহী যেতে একদম ইচ্ছে করছেনা। শাওন মেসের ছাদে খালি গায়ে বসে আছে, বিদ্যুৎ নাই প্রায় দুই ঘন্টা। এতো অসহ্য গরম লাগছে!

উর্মি তখন কল দিল,
হ্যালো কি করছো,?
– ছাদে বসে আছি।
– রাতের বেলা ভয় লাগেনা।
– নাহ। তুমি কোথায়?
– আমি মেজ খালামনির বাসায়, সবাই ব্যস্ত, আমি ভাবলাম এই ফাঁকে আপনার সাথে একটু কথা বলি। আজ খালামনি আম্মুকে একটা এয়ার কুলার কিনে দিয়েছে। আব্বু কবেই এসি কিনতো, কিন্তু সরকারি বাসা তাই কিনেনা, এয়ার কুলার দেওয়ায় খুব ভালো হয়েছে, গরমে আরাম পাওয়া যাবে।
– হুম
– আর উত্তরার ফ্ল্যাটে যখন উঠবো, উদয় আর আমি আব্বুকে বলেছি তখন আলাদা রুমে আমাদের এসি দিতে। ভালো না বুদ্ধি?
– খুব ভালো। উর্মি?
– হুম!
– আমি যদি হঠাৎ ঢাকার বাইরে চলে যাই, তুমি কি করবে?
– একদম যেতে দিব না। কোয়ার্টারের বাইরে গিয়েছিলে, তাই টানা দুই দিন কেঁদেছি, এখন কাঁদবো না। একদম আটকে রেখে দিব। আমি আর কিছুদিন পর ভার্সিটিতে উঠবো, তখন দুজনে ইচ্ছামতো ঘুরবো।
– এখনো পরীক্ষার আরও সাত মাস বাকি, রেজাল্ট হবে, তারপর ভার্সিটি।
– আরেহ! হয়ে যাবে। গরম লাগছে খুব আজ তাইনা?
,- হুম।
– আচ্ছা রাখি, আম্মু দেখলে আবার ঝামেলা। রাতে কল দিব, ওকে?
– আচ্ছা।

শাওন ভাবছে এই ছোট্ট আদরের রাজকন্যা কি তার কষ্ট বুঝবে? যেখানে লোড শেডিং এ মোম বাতি দীর্ঘক্ষণ জ্বালিয়ে রাখতে পারা যায়না, সেখানে এসি আর এয়ার কুলার তো স্বপ্ন। মাঝে মাঝেই মনে হয় যে মেয়েটা তার পুরো হৃদপিণ্ড জুড়ে আছে সে কি তারা এই ভাঙ্গা তরীতে উঠে কি সুখ পাবে? তাক্র কি পূর্ণ সুখী করা যাবে?

দুদিন ধরে শাইনের মা বার বার ফোন দিয়ে বলছেন, দেখো বাবা, জাহিদের বন্ধুর এখানে চাকরি করতে পারিস কি না? এখন তো আর মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছেনা, কিছু দিন সময় তো যাবে। তিন মাস চাকরি করে আয় বাবা, এই সংসার টানতে গিয়ে সাগরের খুব কষ্ট হয়ে যায় বাবা! তুই টিউশনি করে টাকা দিস, এগুলি দিয়ে কিছুই হয়ন্স বাবা। দেখ, যদি তিন মাস পারিস, কর।

শাওন কি বলবে জানেনা, কিন্তু মাস্টার্সের ক্লাস হয়তো আরম্ভ হতে কিছু দেরী আছে, তাছাড়া চাকরি কি আর চাইলেই ছেড়ে আসা যায়? রাজশাহী তে অচেনা জায়গা, এদিকে উর্মি। কি করবে শাওন কিছুই বুঝতে পারছেনা, এখন চাকরি তে গেলে বিসিএস এর প্রস্তুতি কত টুকু হবে! শাওন আজ শুধুই ভাবছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা…
#প্রথম_প্রেম।
১৮ তম পর্ব।

আজ শাওনের চাকরীর প্রথম দিন, পোস্টিং হয়েছে রাজশাহী। অচেনা এক শহরে, যেখানে প্রথম বারের মতো যাচ্ছে সে।

তবে, শাওন প্রথম চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়েছিল। মাস্টার্স করা হবেনা, এই ভয়ে সে প্রথম চাকরি তে যোগদান করে নি। মাঝে কেটে গিয়েছে পুরো এক বছর। এই সময়ে শাওন মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়া শেষ করেছে, যদিও রেজাল্ট এখনো আসেনি।

এদিকে উর্মি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় সব কটি সাবজেক্টে এ+ পেয়েছে। এখন সে ভার্সিটি কোচিং করছে৷ এবং খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।

মোবাইল হাতে পেলেও, প্রতিদিন রাত বারোটায় বাবার কাছে মোবাইল জমা দেওয়া লাগতো। এজন্য চাইলেও দীর্ঘক্ষণ দুজনের কথা হওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে, শাওন বার বার বলেছে, তুমি ভার্সিটিতে উঠো, দেখবে কথা বলা কোন ব্যাপার না। শুধু এখন তোমার একটাই কাজ, শুধু মনোযোগ দিয়ে পড়া।

শাওনের চাকরি হয়েছে একটা বেসরকারি ফার্মে, এক্সকিউটিভ হিসেবে, স্যালারি একুশ হাজার টাকা। চাকরি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট শাওন, শুধু দুঃখ একটাই যে রাজশাহী আসতে হয়েছে।

উর্মি ভর্তি কোচিং এ ঢুকার আগে, শাওন কে কল দিল, কারণ আজ শাওনের প্রথম অফিস।

হ্যালো।
– কি করছো?
– রেডি হচ্ছি।
– ইশ, আজ আমার ইচ্ছে হচ্ছে, সামনে এসে টাই বেঁধে দিতে।
– দিবে, অবশ্যই দিবে। দোয়া কর যেন বিসিএস যেন হয়ে যায়। প্রিলির রেজাল্ট এই মাসেই হবে। যদি বিসিএস হয়ে যায়, তোফায়েল ভাইকে বলবো, আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
– তোফায়েল ভাই?
– ওহ! না ভাই না তো।
– কি তাহলে?
– সময় হলেই না হয় জানবে।
– আর, তুমি কি বিসিএস না হলে বিয়ের প্রুপোজাল দিবেনা?
– অবশ্যই দিব, কিন্তু তখন সেট আপ হতে কিছু টাইম লাগবে।
– অতো টাইম দিতে পারবো না।
– আমার তো আজই গিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু এখন তো সঠিক সময় হয়নি। যাই হউক, দোয়া রেখো, আমি অফিসে যাবো।
– শুভ কামনা শাওন সাহেব। এখন রাখছি।
– জি ম্যাডাম।

শাওন আয়নায় নিজেকে দেখছে, বেশ ভালো লাগছে। ন্যাভি ব্লু শার্টের সাথে কালো প্যান্ট খুব মানিয়েছে। যদিও ড্রেস কোড রেডি করে দিয়েছে উর্মি।

শাওন ভাবছে, কবে উর্মি তার বউ হবে? যখন সে সব কিছু তার পছন্দ মতো ঠিক করে রাখবে।

উর্মির কোচিং আসলেই জাবির নামক ছেলেটার চাহুনি একদম তার ভালো লাগেনা। সে খুব ভাবে থাকে নটর ডেম কলেজের দেখে। কিন্তু উর্মি পুরো জীবন জুড়ে শুধু একজনই আছে। তাই উর্মি প্রায় দিন তার সামনে শাওনের সাথে কথা বলে। তবুও সে তাকিয়ে থাকবে, কি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে!

শাওন অফিস থেকে লাঞ্চ আওয়ারে দুই মিনিট কথা বলে উর্মির সাথে। আর অফিস ছুটির পর আরও দশ মিনিট। কারণ উর্মির বাসায় গেলে আর বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেনা। অথচ সারা রাত অঢেল সময় পরে থাকে, কিন্তু কথা বলার সুযোগ আসেনা। হয়তো প্রকৃতি তাদের এক হতে দিতে চায়না।

এর মধ্যেই রিং বেজে উঠলো, ফোন দিয়েছে আসিফ, শাওনের এক বন্ধু, তেমন ঘনিষ্ঠ নয়, তবে সে বিসিএস পরীক্ষায় তার পিছনের সিটে ছিল।
শাওন ফোন ধরলো, হ্যালো আসিফ?
– কনগ্রেচুলেশন দোস্ত।
– কেন রে? মাস্টার্সের রেজাল্ট হিয়েছে?
– আরে৷ ব্যাটা তুই প্রিলি তে পাশ করেচগিস, মিষ্টি খাওয়া।
– সত্যি?
– আরে, আমার টা দেখলাম, নআমার হয়নি। পরে ভাবলাম, তোর টা দেখে নেই। তখন তো দেখি, তুই পাশ করেছিস।
– বিশ্বাস হচ্ছেনা, একদম। সত্যি কি?
– জি সত্যি।এখন রাখছি।

শাওনের যে কি খুশি লাগছে, শুধু ভাবছে, বিসিএস হয়ে গেলে মায়ের মুখে, যেমন হাসি ফুটবে। তেমনি উর্মিমালার বাবার কাছে যেয়ে তাকে চাওয়া যাবে!

শাওনের হাত কাঁপছে কিভাবে জানাবে উর্মিকে, কতটুকু খুশি হবে সে! মনে হচ্ছে আজকের পুরো পৃথিবি শুধু শাওনের। শাওন মোবআইলের ডিজিট তুলছে৷ আর ভাবছে খুশি হবে তো উর্মি।

চলবে…
আন্নামা চৌধুরী
২১.০৯.২০২১

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
১৯.০৮.২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here