#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_12
#Writer_TanhaTonu
আরশি কেঁদেই যাচ্ছে।সিদ্রাত চেয়েও থামাতে পারেনা আরশিকে।তাই একটা ধমকই দিয়ে উঠে…
—”আরশিইই জাস্ট শাট আপ..বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু।খেয়ে নাও খাবারগুলো”
আরশি সিদ্রাতের ধমকানিতে কেঁপে উঠল।মুখ ফুলিয়ে একটু একটু করে খেতে লাগল।সিদ্রাত মনে মনে হাসল।আরশির খাওয়া হয়ে গেলে সিদ্রাতও ডায়নিং রুমে গিয়ে খেয়ে নিলো।তারপর রুমে এসে দেখল আরশি এক দৃষ্টিতে পূর্ব দিকের দেয়ালটায় তাকিয়ে আছে।সিদ্রাত ওদিকটায় তাকিয়ে জিহবায় কামড় দিলো কারণ ওখানে ওদের একটা ফ্যামিলি পিক ঝুলছে।
আরশি মুখ ফুলিয়ে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে বলল….
—”আমি কি স্ন্যাচার যে আপনাদের বাসা স্ন্যাচ করে নিয়ে যাবো?বললে কি হতো যে এটা আপনাদের বাসা?হুহ”
সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”আসলে ব্যাপারটা তেমন না।তোমাকে ওই অবস্থায় নিয়ে এসেছি তো..তখন যদি বলতাম এটা আমাদের আরেকটা বাড়ি তাহলে হয়ত তোমার মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি হতো।তোমার এই পিচ্চি মাথায় তাই শুধু শুধু চিন্তা দিতে চাইনি”
আরশি ঠোঁট উল্টিয়ে বলে…
—”কিন্তু আমার মনে তো এখনো প্রশ্ন ঘুরছে”
সিদ্রাত হালকা হেসে বলল…
—”আসলে আমরা এ বাড়িতেই থাকতাম আগে।একটা পারিবারিক সমস্যা..না পারিবারিক বলতে আমার নানু বাড়ির মানুষের সাথে সমস্যা হয়।ওই সূত্র ধরেই আমরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই ওখানে”
—”ওহ”
আরশি এদিক সেদিক তাকিয়ে উশখুশ করতে লাগল।আনইজি লাগছে সবকিছু ওর কাছে।আবার বুকের ভিতর মাঝে মাঝে ধক ধকও করছে সিদ্রাতের সাথে একা বাড়িতে থাকায়।কেমন যেনো ফিলিংস।আরশি নিচু স্বরে বলল…
—”স্যার আমরা বাসায় যাবো কখন?”
—”দুইটার দিকে রওনা দিবো।তুমি একটু ঘুমাও।ধানমন্ডি থেকে ওখানে যেতে এক ঘন্টার মতো লাগবে”
আরশি অবাক হয়ে বলল..
—”আমরা এখন ধানমন্ডিইইই??”
আরশির প্রশ্নের বিনিময়ে সিদ্রাত মৃদু হাসল।তারপর কিছু একটা ভেবে নিজের মোবাইলের লক খুলে আরশিকে দিলো।ইশারায় বলল মোবাইলটা নিতে।আরশি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকালো সিদ্রাতের দিকে আর বলল..
—”স্যার কি হবে এটা দিয়ে?”
—”তোমার হয়ত আনইজি লাগছে।তুমি মোবাইলে তোমার এফবি লগইন করে চালাতে পারো।আমি না হয় নিচে যাই”
আরশির লজ্জা লাগছে এভাবে মোবাইলটা নিতে।সিদ্রাত আরশির সাথে টুকটাক কথা বললেও আরশি এতোটাও ফ্রি হতে পারেনি যে সিদ্রাতের ফোন নিয়ে চালাবে।তাই কিছুটা ইতস্তবোধ করছে।সিদ্রাত তা বুঝতে পেরে অভয় দিয়ে বলল…
—”আরে এতো ভয় পেয়ো না।তাও আনইজি লাগলে আমাকে স্যার মনে না করে তোমার আয়িশা আন্টির ছেলে মনে করো শুধু।তাহলে আনইজি লাগবে না।নাও তো ফোনটা”
সিদ্রাত ফোনটা দিয়ে চলে গেলো।আরশি লাজুক হেসে বিড়িবিড় করে বলল…
—”আপনি স্যার হোন আর আয়িশা আন্টির ছেকে হোন..মন তো জানে আপনি আমার মনের রাজ্যের মহারাজ যার বিচরণ আমার পুরো অস্তিত্ব জুড়ে”
আরশি সিদ্রাতের ফোনটায় এফবি লগিন করে কিছুক্ষণ ফেইসবুকিং করল।হঠাৎ মাথায় আসতেই সিদ্রাতের গ্যালারিতে গেলো কিন্তু আফসোস গ্যালারি লক করা।পরে ডকুমেন্টস নামে একটা অ্যাপ মেনুবারে দেখে সেটায় ঢুকল।ঢুকতেই আরশি কিছুটা অবাক হলো একটা ফোল্ডার দেখে।ফোল্ডারটার নাম “প্রিয়তমা”। আরশির বুকটা মোচড় দিচ্ছে।তবে কি সিদ্রাতের লাইফে কেউ আছে?আরশি ফোল্ডারটা ঢুকতেই প্রথমে দেখল কয়েকটা লাইন লিখা এরকম যে…
” তোমার ওই টানা টানা দুটি চোখে কি আছে জানা নেই।তবে এটুকু বলতে পারি এ চোখের নেশা পৃথিবীর সব নেশাকে হার মানায়”
আরেকটায় দেখল এরকম কিছু লিখা..
“প্রেয়সী..তুমি কি আমায় মারতে চাও?তুমি কি জানো না তোমার ঘন দীঘল কালো কেশে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেয়ার ইচ্ছে আমার কতদিনের?কেন এতো মাতোয়ারা করছ আমায়?”
আরেকটা লিখা দেখল আরশি…
“জানি না কতটুকু ভাবে আমায়
তোমার এ মন,,
তবে জেনে রেখো আমার সবটুকু জুড়ে
শুধু তোমারই বিচরণ”
লাইনগুলো পড়ে আরশির প্রথমে খারাপ লাগলেও পরে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলো..
—”হুহ যা খুশি হোক আমার কী?উনার একশটা গার্লফ্রেন্ড থাকলেই বা কী?পাস্ট ইজ পাস্ট..বাট এখন থেকে নজরে নজরে রাখতে হবে আমার হাব্বিটাকে…মাই জানুউউ..বিয়ে তো করলে তোমাকেই করব সিদ্রুউউ,,,”
আরশি মুখে হাত দিয়ে ফেলল।মনে পড়ে গেলো সেদিন স্কুলের কথা।সেদিনও সিদ্রু বলে গান গেয়েছিলো আর ধরা খেয়েছিলো..ইশ কি লজ্জা কি লজ্জা!আরশি আনমনেই হাসল।তারপর সিদ্রাতের কথা ভাবতে ভাবতেই সিদ্রাতের ওই ফোল্ডারেই কয়েকটি লাইন লিখল…
—”ভালোবাসা কি শুধু স্পর্শেই রয়েছে??
আমি তো অনুভবেও ভালোবাসি…
তোমার ভালোবাসার সীমানাটা তো আমার অনুভূতির মাঝেই সীমাবদ্ধ!!
থাক না কিছু দূরত্ব তাতে কী!
ভালোবাসাটা তো দুজনের মনের গহীনেই
আজও একটা কথাই বলছে…
ভালোবাসতে চাই প্রিয়!.
প্রাণের চেয়েও প্রিয় তুমি আমার প্রিয়তম!!”
আরশি এতোটাই সিদ্রাতে মগ্ন যে ও বুঝতেই পারল না এই লাইনগুলো ও সিদ্রাতের মোবাইলে লিখেছে।
দুপুরে আরশি আর সিদ্রাত ওদের বাসায় চলে গেলো।এতোটা সময় সিদ্রাতের সাথে কাটিয়ে আরশির মনটা অনেকটাই হালকা হয়।সকালের ঘটনার প্রভাবটা মন থেকে অনেকটা কমে গিয়েছে।আরশি বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে সিদ্রাতের পড়াগুলো কমপ্লিট করে নেয়।কারণ সাড়ে তিনটায়ই তো আবার প্রাইভেট…
সিদ্রাত শাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই ওর ফোন বেজে উঠল।ফোনের ও পাশ থেকে কেউ কিছু বলল যা শুনে সিদ্রাত বাঁকা হাসি দিলো।ফোন কেটে দিয়ে রাখতে যাবে তখনই টাচ লেগে সিদ্রাতের ডকুমেন্টস এপটা ওপেন হয়ে যায়।সিদ্রাত নতুন একটা লিখার টাইটেল দেখে ভিতরে প্রবেশ করতেই ওর ভ্রুটা কুচকে এলো।আরশির লিখা পুরো লিখাটা পড়ে মুচকি হাসল আর বিড়বিড় করে বলল…
—”কিছু অনুভূতি নীরবতার মাঝেই বেশি মানায়,,
সব অনুভূতি হয়না প্রয়োজন প্রকাশ করার,,
ভালোবাসার গভীরতাগুলো আমি তোমায় দিলাম,,
তুমি বুঝে নিও আমার নীরব অনুভূতিগুলো,,
আর রাঙিয়ে দিও অল্প-স্বল্প বর্ণিল ভালোবাসায়”
চলবে…
আগামীকাল বড় করে দেয়ার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ..