প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ১০+১১

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_10
#Writer_TanhaTonu

আরশির শরীর কাঁপছে সিদ্রাতের সাথে এভাবে মিশে থাকায়।কাঁপা কাঁপা হাতে সিদ্রাতকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।সিদ্রাত আলতো হাতের ছোঁয়া আরশির পিঠে বুলায়।কিছুক্ষণ পর সিদ্রাত আরশিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা করে বসায়।আরশি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।গালগুলো গরম হয়ে যাচ্ছে।সিদ্রাত মৃদু কন্ঠে বলে…
—”সরি,,উপরে একটা টিকটিকি ছিলো।মনে হলো তোমার উপর লাফ দিবে,,সরি”

আরশির নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।শরীর এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে।সিদ্রাতের ছোঁয়া যেনো লেগেই আছে।আরশি তো পারলে টিকটিকিটাকে একটা থ্যানক্স দিতো।সিদ্রাত আরশির মুচকি হাসি দেখে নিজেও অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে…
আরশির মাথায় এটা এলোই না তিনদিন পর অমাবস্যা…লাইটস সব অফ তারপরও এতো অন্ধকারে সিদ্রাত টিকটিকি দেখল কিভাবে।যদি আসত..তাহলে কি ভাবত ও..কি কি ভাবনা তাড়া করত মেয়েটাকে!

কিছুক্ষণ পর সিদ্রাত গলা ঝাড়ি দিলো।আরশি এক পলক সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে আবারও অন্যদিকে মুখ ঘুরালো।কেমন যেনো লজ্জা লাগছে!নীরবতা ভেঙে সিদ্রাত নিজেই বলল…
—”অন্ধকার ভয় পাওনা?”
—”নাহ..অন্ধকার আমার প্রিয়।দিনের আলো ভালো লাগে না।দিনের বেলা যদি কখনো ঘুমাই তাহলে দরজা-জানালা লাগিয়ে একদম অন্ধকার করে ঘুমাই।আর রাতে তো কথাই নেই।আপনি একদম আমার সাথে ঘেষে শুয়ে থাকলেও আইডেন্টিফাই করতে পারবেন না কোনটা আমার হাত,কোনটা পা..এতো অন্ধকার করে ঘুমাই”
সিদ্রাত হাসল আরশির কথায়।আরশিও হাসল সিদ্রাতের হাসি দেখে।আরশি নিজেই বলল….
—”আপনার কি দিনের আলো পছন্দ নাকি?”
সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”আলো-আঁধার দুটোই সমান।তবে সুযোগ পেলে দেখতাম অন্ধকারে তোমার হাত-পা সত্যিই আইডেন্টিফাই করা যায় কিনা?”

আরশি চমকে উঠল সিদ্রাতের কথায়।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।সিদ্রাত খুব সহজেই ব্যাপারটা সামলে নিলো…
—”এভাবে তাকাচ্ছো কেন?সুযোগ তো আর নেই।তোমার সাথে তো বেড শেয়ার করতে পারব না।মনে হচ্ছে কেন মেয়ে হলাম না..ধরো যদি মুনের জায়গায় আমি থাকতাম তাহলে তোমার সাথে বেড শেয়ার করা যেতো…”

আরশির কান গরম হয়ে যাচ্ছে।লজ্জায় রাঙা রক্তিম আভা দুগালে স্পষ্ট!আরশি বুঝে উঠতে পারছে না সিদ্রাত এতো অদ্ভুত কথা কেন বলছে আজ…

—”স্যার কাউকে ফোন দিয়ে দেখেন..যদি ডোর খুলে”

সিদ্রাত মুচকি হেসে ফোন দিলো পরীকে।কিন্তু পরীর ফোন বিজি।প্রিয়া ফোন রিসিভ করছে না।আর মৌরি তো কেটেই দিয়েছে।সিদ্রাত আরশির লজ্জা রাঙা মুখটা দেখে মনে মনে হাসল।পরিস্থিতি সামলাতে কথা ঘুরালো….
—”হোয়াটেভার..পড়াশুনার কি খবর তোমার?পড়ো তো ঠিকমতো?তুমি কিন্তু এসএসসি ক্যান্ডিডেট ”
আরশি মৃদু কন্ঠে জবাব দিলো…
—”জ্বি পড়ি..কিন্তু বাংলা আর বিজিএস পড়তে খুবই বিরক্ত লাগে”
—”বিরক্ত লাগলে তো হবে না।ফার্স্ট গার্ল তুমি।তোমার থেকে কেউ গোল্ডেন এ প্লাস আশা করেনা।ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি আশা করে সবাই”

আরশির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।মনে মনে ভাবল…
—”এতোদিন তো ঠিকই ছিলো সব।আপনি আমার লাইফে আসার পর থেকেই তো পড়াশুনারা বিদায় নিয়েছে।বইয়ের ভিতরেও আপনাকে দেখি”

রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত দুজন বারান্দায় বসে গল্প করল।এর মাঝে কম করে হলেও সিদ্রাত সাত/আটবার মৌরিদের ফোন করেছে।কিন্তু ওরা কেউই রিসিভ করেনি।এদিকে আরশির খুব লজ্জা লাগছে সিদ্রাতের সাথে বসে থাকতে।অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে মেয়েটাকে।আবার তো আছেই বাসায় যাওয়ার তাড়া।ভয় আর চিন্তার ছাপ আরশির মুখে ফুটে উঠেছে।সিদ্রাত আবারও ট্রাই করল।না পেরে নিজের মাকে ফোন দিলো।কিন্তু তাতেও রিসিভ হলো না।সিদ্রাত বুঝল ওর মা ঘুমিয়ে পড়েছে।কারণ এগারোটার সময়ই ঘুমিয়ে যায় ওদের বাসার সবাই।সিদ্রাত করুণ চোখে আরশির দিকে তাকালো।আরশি অসহায় কন্ঠে বলল…

—”এবার কি হবে?বাসায় যাবো কি করে?আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আব্বু যদি জানে এসব তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে”

সিদ্রাত বুঝল আরশি প্রচুর ভয় পাচ্ছে।তাই অভয় দিয়ে বলল…
—”আন্টি-আঙ্কেলকে নিয়ে চিন্তা করো না।মৌরিরা যেহেতু ইচ্ছা করে এখানে তোমায় আটকে গিয়েছে তাহলে সিউর ওদিকটা ওরাই সামলে নিয়েছে।হয়ত বলেছে তুমি আজ ওদের সাথে থাকবে”

সিদ্রাতের কথায় আরশি কিছুটা আশ্বস্ত হলেও কতক্ষণ এভাবে এখানে থাকবে তাই ভাবছে।ঘুমও পাচ্ছে খুব।আরশি পরপর কয়েকটা হামি দিলো।সিদ্রাত আরশির অবস্থা বুঝতে পেরে বলল…
—”তুমি আমার বেডে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।সকালের মধ্যে ওরা খুলে দিতে পারে”
আরশির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।ও বলে উঠল…
—”আমি আপনার সাথে ঘুমাবো নাকি?মাথা খারাপ নাকি?”
সিদ্রাত হেসে বলল…
—”একদমই না..একদমই মাথা খারাপ না।তাই তো তুমি বেডে আর আমি সোফায় শুবো”
আরশি নিজের কথায় নিজেই লজ্জা পেলো।এটা ভেবে আরও লজ্জা পাচ্ছে যে ও এমন একটা কথা ভাবল কি করে।আরশি আর দাঁড়িয়ে না থেকে গুটিগুটি পায়ে বেডের দিকে এগিয়ে গেলো।বিড়ালছানার মতো গুটিসুটি মেরে বেডে শুয়ে রইল।সিদ্রাতও ওয়াশরুম থেকে ড্রেস চ্যাঞ্জ করে এসে ডিম লাইট অন করে সোফায় শুয়ে পড়ল।পরক্ষণেই আরশির কথা মনে হতেই ডিম লাইটটা অফ করে দিলো।আরশি তো একটু আগেই বলল অন্ধকার ছাড়া ওর ঘুম আসেনা।সিদ্রাত আবারও নিজের জায়গায় এসে শুয়ে পড়ল।দুজনই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু অন্ধকারে কেউই কাউকে দেখতে পাচ্ছে না….

আরশির খুবই অস্বস্তি লাগছে ভিতরে ভিতরে।যতই ভালোবাসুক এভাবে এক রুমে তার সাথে ঘুমানো!আরশির কাছে একদমই নতুন অভিজ্ঞতা।সিদ্রাতকে ভালোবাসলেও হঠাৎ হঠাৎ মনের কোনো সংশয় জেগে উঠছে..সুযোগ নিবে না তো সিদ্রাত?আবার পরক্ষণে নিজেই নিজের ভাবনাকে বকা দিচ্ছে আরশি…

দুজনের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা হাজারো ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে একসময় দুজনই লুটিয়ে পড়ে ঘুমের কোলে…
নিস্তব্দ রাতে একই ঘরে দুজন মানব-মানবী।কাছে আসায় নেই কোনো বাঁধা।তবুও দুজন দুজনার কাছে লয়াল।কারও প্রতি কাউকে নিয়ে নেই কোনো বাসনা।একে অপরের প্রতি একে অপরের শ্রদ্ধা,মনের অনুভূতিগুলো যে কতটা পবিত্র তা বুঝি আজকের রাতটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে…

আরশি আর সিদ্রাত দুজনই একসাথে ঘুম থেকে সজাগ পায়।আরশি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে জামাটা একদম পেটের উপরে উঠে অাছে।স্যালোয়ারও হাঁটু অব্দি গুটানো।আরশি থতমত খেয়ে সাথে সাথে শরীরে চাদর টেনে নিলো।আড়চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর চোখ বন্ধ।আরশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।সিদ্রাত আস্তে আস্তে চোখ খুলে আরশির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিলো…
—গুড মর্নিং”
আরশিও লাজুক হেসে গুড মর্নিং বলল।তারপর শোয়া থেকে উঠে বসল।সিদ্রাতের সামনে এভাবে কিছুতেই শুয়ে থাকতে পারবে না মেয়েটা।রাতে তো অন্ধকার ছিলো।আর এখন তো সিদ্রাত দেখবে…

সিদ্রাত মৃদু হেসে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো।দেখল দরজা খুলা।আরশির দিকে তাকিয়ে বলল….
—”দেখেছো পাজিগুলো জাতে মাতাল তালে ঠিক।সারারাত একটাও ফোন ধরল না।অথচ ভোর হতে না হতেই নিজেরাই দরজা খুলে দিয়ে গিয়েছে…

আরশি বিনিময়ে ছোট্ট করে হাসল।তারপর মৃদু কন্ঠে বলল…
—”আমি তাহলে যাই এখন?”
—”হুম অবশ্যই।স্কুলে তো দেখা হচ্ছেই”

আরশি মুচকি হেসে রুমে চলে এলো।সিদ্রাত বাসায়ই ফজর নামাজ পড়ে নিলো।কারণ জামাত এখন আর ধরতে পারবে না।তারপর চলে গেলো মর্নিং ওয়াকে।যাওয়ার সময় গাড়ির কাচে পাঁচ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কোনো মানবীর ছায়া দেখে মুচকি হেসে চলে গেলো….
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_11
#Writer_TanhaTonu

সিদ্রাত মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাসায় এসে রেডি হয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে চলে যায়।স্কুলের গেইট দিয়ে ঢুকতেই ও খেয়াল করে ক্যাম্পাসের একপাশে অনেক ভিড়।সিদ্রাত তেমন একটা পাত্তা দেয়না।চলে যায় টিচারস রুমে।বেল বাজলেই ও আরশিদের ক্লাসে যায় ক্লাস নিতে।ক্লাসে ঢুকতেই হালকা অবাক হয় সিদ্রাত।কেমন যেনো নিস্তব্দ ক্লাসটা।অন্যদিনও সিদ্রাত ক্লাসে ঢুকলেই সবাই চুপ হয়ে যায়।কিন্তু আজকের ব্যাপারটা কেমন যেনো।একটা গাম্ভীর্য কাজ করছে ক্লাসে।সিদ্রাত আড়চোখে আরশির দিকে তাকায়।ওর নাকের ডগা লাল হয়ে আছে।চোখের পাপড়িগুলোও ভেজা…

সিদ্রাত ক্লাস নেয়ায় মন দিলো।সবাইকে একটা উপপাদ্য বুঝিয়ে দিলো দুবার করে।তারপর আগের দিনের উপপাদ্যটা দশ মিনিটের মধ্যে করে দেখাতে বলল…
আরশি লিখার মতো অবস্থায় নেই।তবুও সিদ্রাত যেনো কিছু না বুঝে তাই নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে উপপাদ্যটা করল।ও যে কি লিখছে ও নিজেই জানেনা।খাতাটা নিয়ে দাঁড়িয়ে সিদ্রাতের দিকে তাকাতেই সিদ্রাত এসে খাতাটা দেখল।ধাপ-৪ পুরোটাই ভুল হয়েছে।আরশি বেশ ভয় পেলো।কারণ এটা আগের দিনের পড়া ছিল।ভুল গেলে অনেক হার্ড পানিশমেন্ট দেয় সিদ্রাত। আরশি ভয়ে ভয়ে তাকালো।সিদ্রাত শান্ত কন্ঠে বলল…
—”ভুলগুলো ঠিক করো বসে।আর যেনো এরকম না হয়”

আরশি কিছুটা অবাকই হলো।সিদ্রাত অন্যদের খাতা দেখতে চলে যায়।ক্লাস পিরিয়ড শেষ হলে সিদ্রাত বেরিয়ে যাওয়ার আগে আরশির সামনে গিয়ে শান্ত কন্ঠেই আরশিকে বলল…..
—”আমি ওয়েট করছি।গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসো”

আরশি হালকা অবাক হয়ে তাকায়।সিদ্রাত চলে যেতে থাকে।আরশিও আর কিছু না ভেবে সিদ্রাতের পিছু পিছু গ্রাউন্ড ফ্লোরে যায়।একদম শেষ কর্ণারে আসতেই সিদ্রাত জিজ্ঞাসা করে…
—”কি হয়েছে আজ?কে কি বলেছে?”
আরশি সিদ্রাতের কন্ঠে এটা শুনে আর নিজেকে সামলাতে পারেনা।নিচের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে।কিন্তু কিছু বলে না

—”আরশি এনসার দিতে বলেছি।কান্না করতে বলিনি।কাঁদার জন্য সারাদিন আছেই”

আরশি তবুও কেঁদে যাচ্ছে।সিদ্রাত আরশির দুকাঁধে ধরে মাথা উঁচু করে।আরশি ক্ষানিকটা কেঁপে উঠে।সিদ্রাতের দৃষ্টি শান্ত।সে আবারও বলে….
—”কি হয়েছে বলবে না?”

আরশি এবার নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।সিদ্রাতকে ঝাপটে ধরে আওয়াজ করে কেঁদে উঠে।সিদ্রাত আরশির মাথায় হাত রাখতে যাবে তখনি ওর চোখ যায় আরশির ঘাড়ের দিক থেকে হিজাবের কিছুটা অংশ সরে গিয়ে আচরের দাগ দেখা যাচ্ছে।অটোমেটিকেলি সিদ্রাতের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।আরশিকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে ধমকে জিজ্ঞাস করে…
—”কি হয়েছে বলো বলছি।কে কি করেছে তোমার সাথে?”

আরশি কাঁদতে কাঁদতে এবার বলে…
—”সকালে আমি স্কুলে আসতেই নিরা,ছোঁয়া আর কিছু,,কলেজের ভাইয়ারা,,,আমার পথ আগলে দাঁড়ায়…আ,,মি ওদেরকে সরে যেতে,,ব,,ললে নিরা আর,,ছোঁয়া আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে,,দেয়..আমি উঠতে,,নিতেই ওই তিনটা ভাইয়ার,,মধ্যে একটা ভাইয়া,,আমায় কোলে তুলে নিয়ে কলেজের বন্ধ ল্যাবে,,নিয়ে যায়…”

আরশি এটুকু বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।সিদ্রাতের বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠে।ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে….
—”কি করেছে ওরা তোমার সাথে?তোমাকে,,যখন নিয়ে,,যাচ্ছিলো..চিৎকার করোনি তুমি?”

আরশি কাঁদতে থাকে।কান্নার কারণে কিছু বলতে পারছে না।হাত-পা ভয়ে কাঁপছে।সিদ্রাত আরশির অবস্থা দেখে ওকে তাড়াতাড়ি নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।আরশি সিদ্রাতের বুকে মুখ গুজেই কাঁদছে।কান্নার কারণে সিদ্রাতের নীল শার্টটা ভিজে ব্লুয়িশ রঙ ধারণ করেছে।সিদ্রাত আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।আরশি কিছুক্ষণ কেঁদে তারপর নিজ থেকেই আবার কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে….

—”আমি স্কুলে তাড়াতাড়ি এসেছিলাম।তখন,,খুব বেশি,,মানুষ ছিলো না।ফাঁকা,,ছিলো ক্যাম্পাস।ওই ভাইয়া আমায় ওই রুমে নিয়ে যেতেই,,নিরা,ছোঁয়া আর বাকি দুই ভাইয়া,,হাসতে হাসতে দরজা বাইরে থেকে লক করে,,চলে যায়…”

আরশির বড্ড কষ্ট হচ্ছে এসব বলতে।এতোটা ভয় আর শক ও এর আগে কখনো পায়নি।যতবার মনে পড়ছে ততবারই কেঁপে উঠছে মেয়েটা।সিদ্রাত নিচু স্বরে জিজ্ঞাসা করে…
—”তারপর?”
—”যে ভাইয়া,,আমার সাথে ভিতরে ছিলো,,ও আমার সাথে অনেক জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করে।আমি,,ওর হাতে কামড় দিলে ও আমার গালে চড় মারে আর হিজাব খুলে ছুড়ে ফেলে দেয়।আমি ছুটে দরজার দিকে যেতে নিলে পিছন থেকে নখের আচড়ে,,,আমার ঘাড়ে দাগ বসিয়ে দেয়।আমি অনেক চিৎকার করার পর কয়েকজন,, এসে দরজা খুলে দেয়।ওই শয়তানটা পরে পালিয়ে যায়”

আরশি আরও শক্ত করে সিদ্রাতকে ধরে কাঁদতে থাকে।আজ আল্লাহ না বাঁচালে হয়ত অনেক বড় একটা অঘটন ঘটে যেতো।আরশি হিচকি তুলে কাঁদছে।সিদ্রাত আরশির অবস্থা রিয়েলাইজ করে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না।পাশে একটা বেঞ্চে আরশিকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে…

—”আরশি প্লিজ স্টপ ক্রায়িং..কিছু হয়নি।তুমি একদম সুস্থ আছে পিচ্চি।এটুকুতে ভেঙে পড়লে হবে হুম?তাহলে লাইফে পথ চলবে কীভাবে?মেয়েরা ভয় পায় বলেই তো কিছু পশু এভাবে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহসটা পায়..প্লিজ কুল আরশি।কিছু হয়নি।তুমি ভয় পেও না”

আরশি অনেক্ষণ কাঁদার পর শান্ত হয়।তবুও হিচকি তুলছে মাঝেমাঝে।সিদ্রাত তাকিয়ে থাকে আরশির দিকে।কিছুক্ষণ পর বলে…
—”আচ্ছা তুমি একটু বসো এখানে।আমি আসছি”

সিদ্রাত যেতে নিলেই আরশি সিদ্রাতের হাতের কবজির দিকের স্লিভসটা টেনে ধরে।সিদ্রাত পিছু ঘুরে তাকায়।আরশির চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ।সিদ্রাত বুঝতে পারে আরশি একা থাকতে ভয় পাচ্ছে।মুচকি হেসে সাথে করে নিয়ে যায় সিদ্রাতকে।দুতলায় আসতেই আরশিকে টিচারস রুমের সামনে দাঁড় করিয়ে সিদ্রাত ছুটি নিয়ে আসে।তারপর আরশির ক্লাস থেকে ওর ব্যাগ নিয়ে এসে আরশিকে বলে ওর সাথে আসতে।আরশি কিছুটা অবাক হলেও কিছু জিজ্ঞাসা করে না।চোখ মুছে সিদ্রাতের সাথে ওর কারে গিয়ে বসে।সিদ্রাত কার স্টার্ট দিতে নিলেই আরশি জিজ্ঞাসা করে…

—”স্যার আমরা,, কোথায় যাচ্ছি?”
—”এখন তোমার ক্লাস করা ঠিক হবে না।একটু রেস্ট নেয়া দরকার।তুমি অনেক ভয় পেয়েছো”

আরশি চমকে উঠে আর বলে…
—”স্যার প্লিজ আমি বাসায় যাবো না।আম্মুকে এসব বললে আম্মু অনেক টেনশন করবে”

সিদ্রাত চিন্তিত মুখে তাকায় আরশির দিকে…
—”তুমি আন্টিকে এ ব্যাপারে জানাতে চাওনা?”
আরশি মুখটা করুণ করে দুদিকে মাথা নাড়ায়।সিদ্রাত মুচকি হেসে বলে..
—”ওকে জানাতে হবে না।তবে তোমার রেস্ট নেওয়ার জন্য জায়গার অভাব নেই।আমার সাথে যেতে আপত্তি নেই তো?নাকি আমাকেও ভয় পাচ্ছো?”

আরশি চোখটা মুছে হালকা হেসে মাথা নাড়ায় অর্থাৎ আপত্তি নেই…

সিদ্রাত কার থামায় একটা বাড়ির সামনে।আরশি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।সিদ্রাত বলে…
—”এটা আমার ফ্রেন্ডের বাসা।এখানে তিন/চার ঘন্টা অনায়াসে রেস্ট নেয়া যাবে”

আরশি কিছুটা আনইজি ফিল করছে।একে তো সিদ্রাত ওর স্যার মনে মনে যতই ভালোবাসুক।তারপর আবার স্যারের সাথে তার ফ্রেন্ডের বাসায় এসেছে তাও স্কুল টাইমে।আরশির অস্বস্তি বুঝে সিদ্রাত বলল…
—”চিন্তা করো না।বাসায় কেউ নেই।এটা ওদের সেকেন্ড বাসা।সাধারণত কেউ থাকে না এ বাসায়”

আরশি ছোট্ট করে ওহ বলে গুটি গুটি পায়ে সিদ্রাতের সাথে বাসার ভিতরে প্রবেশ করল।বাসাটা দুতলা ডুপ্লেক্স।ভিতরে সবকিছুই সুন্দরভাবে সাজানো।রুচিসম্মত সব ফার্নিচার।সিদ্রাত আরশিকে দুতলার একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে নিজে পাশেরটায় চলে গেলো।রুমে প্রবেশ করেই আগে কাকে যেনো ফোন দিলো।কিছুক্ষণ খুবই সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলে ফ্রেশ হতে গেলো..

আরশির খুব বেশিই অস্বস্তি হচ্ছে।ও হিজাবটা খুলে হাত-মুখ ধুয়ে আবারও হিজাবটা উড়নার মতো করে মাথায় দিয়ে দিলো।হাতে ওয়াচের দিকে তাকিয়ে দেখল এগারোটা বাজে।আরশি মাথা নিচু করে বেডে পা ঝুলিয়ে বসে রইল।সকালের ঘটনাগুলো আবারও মনে পড়ছে।একটা ভয় ঢুকে গিয়েছে মেয়েটার ভিতর।আর এটাই তো স্বাভাবিক।আরশি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নীরবে চোখের পানি ফেলতে লাগল।একটু পর সিদ্রাত কিছু খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই আরশিকে কান্নারত অবস্থায় দেখল।আস্তে করে আরশির থেকে হালকা দূরত্ব মেইন্টেইন করে বসল।স্বাভাবিক গলায় বলল….

—”এতো কাঁদলে আন্টি-আঙ্কেলকে বলতেও হবে না।তারা এমনিতেই বুঝে যাবে”

আরশি কান্নারত অবস্থায় সিদ্রাতের দিকে তাকালো।মুখ ঘুরিয়ে আবারও কাঁদতে লাগল….

চলবে…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here