প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৮+৯

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_8
#Writer_TanhaTonu

সিদ্রাত সবার সাথে বসে গল্প-গুজব করছে।ও বাসায় আসতেই ওর কাজিনরা ওকে ঘিরে ধরে।সিদ্রাতের দুই চাচ্চু।তাদের পাঁচজন ছেলে-মেয়ে।মূলত তারা এসেছেই সিদ্রাতদের নতুন বাড়ি দেখতে।আজ সিদ্রাতদের বাসা একদম ভরপুর।সবাইকে কোনো রকম ঠেলে-ঠুলে শাওয়ারটা নিতে পেরেছিলো ছেলেটা।তারপরই আবারও সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সিদ্রাতের উপর।সবাই সোফায় বসে গল্প করছে।ওদিকে সিদ্রাতের দুই চাচী,সিদ্রাতের আম্মু আর আরশির আম্মু ভিতরের রুমে গল্পের আসর বসিয়েছে…
সিদ্রাতের বড় চাচ্চুর দুই মেয়ে প্রিয়া,পরী আর এক ছেলে রিহান।আর ছোট চাচ্চুর এক মেয়ে এক ছেলে..মৌরি আর মেসবাহ।তবে বয়সের দিক থেকে সবার বড় মেসবাহ,তারপর পরী আর তারপর প্রিয়া।এরা তিনজন সিদ্রাতেরও বড়।রিহান সিদ্রাতের দুই বছরের ছোট আর মৌরি মুনের সমান।গল্পের মাঝে রিহান বলল…
—”ভাই তোদের এবাসার শেয়ার পার্টনারের নাকি এক মেয়ে আছে?দেখতে নাকি সেই সুন্দর?”
সিদ্রাত ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাস করল…
—”কার কথা বলছিস তুই?”

রিহান হালকা হেসে বলল
—”ওই তো মুনের মোবাইলে দেখলাম মেয়েটাকে।নাম বোধয় আরশি”
সিদ্রাত নির্লিপ্তভাবে বলল…
—”তো?সমস্যা কী?পিচ্চি মেয়ে ও।দৃষ্টি সামলা নিজের।আর তোর জিএফের কি অভাব পড়েছে?আমার জানামতে তো প্রতি মাসে তোর সাথে নিউ একটা করে গার্লফ্রেন্ড দেখাই যায়”

রিহান দাঁত কেলিয়ে বলল…
—”আরে ভাই ওগুলো তো টাইমপাস।তাদের কারও মাঝে কি আর ভালোবাসা দেখেছি নাকি?কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আমার ভালোবাসার ঘন্টাটা বেজেই গেলো।”
সবাই মিটমিট করে হাসছে রিহানের কথায়।সিদ্রাত বিরক্তি নিয়ে শুনছে রিহানের কথা।রিহান চোখ বন্ধ করে আবারও বলতে লাগল…
—”কি সুন্দর তার চাহনী!ঠোঁটের উপর-নিচের দুটো তিল!একদম ঘায়েল করার মতো।সরু নাক.চিকন ঠোঁ,,,”
—”রিহায়ায়ানন”
সিদ্রাতের ধমকে রিহানের হাওয়া ফুস।ও আড়চোখে তাকিয়ে দেখল সিদ্রাত হালকা রেগে আছে। পরী সামলানোর জন্য বলল…
—”আহ সিদ্রাত ধমকাচ্ছিস কেন ওকে?তুই যে কখন কোন টেম্পেরাচারে চলে যাস বুঝি না।হঠাৎ এতো রেগে গেলি কেন?আর রিহানের কি কাউকে ভালো লাগতে পারেনা?”

সিদ্রাত স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল…
—”আপু তুমি বুঝতে পারছ না।মেয়েটা ভালো।আর তোমার ভাই যে কয় নাম্বারের ফ্রড তা আমরা সবাই জানি।সো ও যা ভাবতে চাচ্ছে তা এখানেই যেনো অফ করে দেয়।ভাবনাগুলো যেনো আর না এগোয়।শুধু শুধু বাচ্চা মেয়েটার লাইফ নষ্ট হবে”

সিদ্রাত এটা বলেই উঠে চলে গেলো।রিহান মুখটা বিড়াল ছানার মতো অসহায় করে সবার দিকে তাকালো।সবাই ফিক করে হেসে দিলো।রিহান মুখ ফুলিয়ে বলল…
—”শাট আপ গায়স..ঠিক হচ্ছে না কিন্তু।আমাকে সবাই মিলে বলির পাঠা বানিয়ে এখন মজা নিচ্ছো।কোন কুক্ষণে যে তোদের কথায় রাজি হয়েছিলাম।হাহ..যাকে দেখলামই না তার সম্পর্কে কত রোমান্টিক কথা মুখস্থ করিয়ে দিলি তোরা আমায়!সবগুলো শত্রু!”
মুন আর মৌরি হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।প্রিয়া হাসতে হাসতে বলল…
—”ভাই রিলাক্স।বলির পাঠার কি আছে?তুই তো ভালোইবেসেছিস”
রিহান চিৎকার করে বলল…
—”ওই পেত্নী একদম চুপ..ছি ছি..ভবিষ্যতের ভাবীকে নাকি ভালোবাসি আমি!আল্লাহ সইবে না তোদের চক্রান্ত”
পরী কিছুটা ভারী কন্ঠে বলল…
—”তোরা হাসি-তামাশা কর।এতো অভিনয় যে করল আমার ভাইটা এতক্ষণ তো সবাই কমেন্ট করো।কেউ কি কিছু বুঝলে যে আমাদের সিদ্রাতের মনে পিচ্চি আরশিকে নিয়ে কিছু আছে কিনা?”

সবাই হতাশজনকভাবে না সূচক মাথা নাড়ায়।পরীও ইশারায় বুঝায় ওরও একই অবস্থা…

সিদ্রাত ছাদের একসাইডে রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো।কথা বলতে বলতে অপরপাশে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও সাথে সাথে তাকালো..
—”আমি তোমায় পরে ফোন দিচ্ছি”

সিদ্রাত এটা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে অপর সাইডে এগিয়ে গেলো।আরশি রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়েছিলো।কারও উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকাতেই চমকে গিয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো।লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।সিদ্রাতকে দেখলেই যে লজ্জা লাগে।এমনিতেই গাড়িতে যেই কান্ড করল!আরশি আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করল…
—”স্যার কিছু বলবেন?”
—”হুম..আজ না পড়ালে প্রবলেম হবে?”
আরশি এবার চোখ তুলে তাকালো সিদ্রাতের দিকে আর মৃদু কন্ঠে বলল…
—”আপনার সমস্যা হলে পড়াতে হবে না”
সিদ্রাত কিছু একটা ভেবে বলল…
—”আচ্ছা আমি তো ওদেরকে ফোন দিয়ে না করে দিয়েছি।বাট তোমায় দেখে মনে হচ্ছে তুমি পড়তে ইচ্ছুক। এক কাজ করো তাহলে..আমাদের বাসায় আসতে হবে না।আমি তোমাদের বাসায় গিয়ে পড়িয়ে আসব নে।কিন্তু তাহলে একটু লেইট হবে..আব..তুমি সাড়ে ছয়টায় বই নিয়ে বসো। আমি তখন আসবো”

সিদ্রাতের কথা শুনে আরশির মনের ভিতরটা এক ঝাঁক খুশিরা চেপে ধরল।আরশি খুশিটা ভিতরে চাপা রেখে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসিয়ে ঝুলিয়ে বলল…
—”আচ্ছা সমস্যা নেই।আপনি যখন ইচ্ছা আসিয়েন”
সিদ্রাত মৃদু হাসল।তারপর বলল…
—”আচ্ছা বাসায় যাও এখন।এই রোদে দাঁড়িয়ে থেকে স্কিন কালার নষ্ট হয়ে গেলে পরে আবার তোমাকে চিনতেই পারব না”

আরশিও মুচকি হাসল।তারপর চলে গেলো।বাসায় এসেই লাফালাফি শুরু করে দিলো…
—”ইয়াহুউউ…উফফুউউ কি মজায়া..আমাদের বাসায় উনি আজ ফার্স্ট আসবে..ওহ মাই আল্লাহ!!আচ্ছা উনাকে কিছু রেঁধে খাওয়ালে কেমন হয়!হ্যাঁ এটাই সুযোগ।উনি ফার্স্ট আমাদের রুমে আসবে।সো এই উছিলায় খাওয়ানো যায়-ই।এতে কেউ কিছু বলবেও না।আর আম্মু তো উনাদের বাসায়ই..উফফফ আল্লায়ায়াহ অনেক ধন্যবাদ”

আরশি কিচেনে এসে ভাবতে লাগে কি বানাবে।মাথায় কিছুই আসছে না।মন চাচ্ছে পুরো কিচেনটা উঠিয়ে খাওয়ায় দিতে।অল্প সময়ে কি বানানো যায় ভাবতে লাগল আরশি।পরে ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিলো ক্রিমি পাস্তা বানাবে।সময়ও কম লাগবে আর ক্রিমি হওয়ায় ভালো লাগবে খেতে।

আরশি চারটার পরে প্রায় পৌনে পাঁচটায় কিচেনে গেলো পাস্তা বানাতে।কারণ বেশি আগে বানালে আবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।হোয়াইট সসটা বানিয়ে ঠান্ডা করতে একটু সময় লাগে।তাই সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচটা পঞ্চান্ন বাজে রান্না শেষ করতে করতে।প্যানে সবার জন্য রেখে সিদ্রাতের জন্য একটা প্লেটে বেড়ে নেয় পাস্তাগুলো।ওটা নিজের রুমে বেডসাইড টেবিলে রেখে তারপর দৌড়ে যায় ফ্রেশ হতে।কারণ সিদ্রাতেরও আসার সময় হয়ে গিয়েছে।আরশি ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই দেখে ছয়টা তেইশ বাজে।চোখগুলো বড় বড় হয়ে যায় ওর।দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মুখে ক্রিম লাগিয়ে উড়নাটা ভালো করে শরীরে জড়িয়ে নেই।তারপর নজর পড়ে চুলের দিকে।চুলের অবস্থাও ভালো না।ক্রাশের সামনে কি এভাবে যাওয়া যায়?আরশি তাড়াতাড়ি করে চুলের ব্যান্ডটা খুলতেই লম্বা চুলগুলো পিঠ ছাড়িয়ে আরও নিচ পর্যন্ত আচড়ে পড়ল।তাড়াতাড়ি করে চুলগুলো আচড়ে নিলো।যেই ব্যান্ডটা বাঁধতে নিবে তখনি দরজায় নক পড়ল।আরশি চমকে গেলো।পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখল সিদ্রাত মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে দরজায়…
—”আসব?”
আরশি জিহবায় কামড় দিয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।সিদ্রাতে আরশির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে আরশির রুমটায় চোখ বুলাতে বুলাতে এসে বসল।পুরো রুমের দেয়াল পিংক কালার।বিছানার চাদর,বালিশ,বালিশের পাশের কুশান সবই পিংক আর হোয়াইট কালারের কম্বিনেশনের।বিছানার একপাশে একটা ছোট্ট বেড সাইড টেবিল আর অপর পাশে পিংক আর হোয়াইট কালারের খুবই বড় একটা টেডিবিয়ার..
আরশি মাথা নিচু করে বই আর খাতা নিয়ে সিদ্রাতের সামনা সামনি চেয়ারটায় বসে।সিদ্রাত মুচকি হেসে বলে…
—”তোমার রুম দেখলে যে কেউ নিসন্দেহে বলবে তুমি পিচ্চি”

আরশি ফিক করে হেসে দেয়।বলে..
—”ওটা তো সবাই-ই বলে।কিন্তু আমি অতোটাও পিচ্চি না।জানেন আমার এইজ কত?১৭+..কয়েকমাস পর ১৮ হবে”
সিদ্রাত আরশির কথায় হেসে বলে…
—”মাত্র সতেরো!সতেরো মানে তো খুকিই..হাহা”
সিদ্রাত এটা বলে আরশি খাতা খুলে হোমওয়ার্কগুলো দেখতে থাকে।আরশি মুখ ফুলিয়ে বলে…
—”আপনার যেনো অনেক বয়স?আপনিও তো আমার থেকে কয়েক বছরের বড় হবেন”

সিদ্রাত চোখ সরু করে তাকায়।আরশি বোকার মতো হেসে আমতা আমতা করে বলে…
—না মানে..এই তো ছয়/সাত বছরের বড় হবেন।এটাই মিন করেছি।বড় জোর আপনার এইজ পঁচিশ হবে।এর থেকে তো আর বেশি না”

সিদ্রাত মুচকি হেসে বই খুলতে খুলতে বলল…
—”হুম আমি তোমার থেকে বেশি বড় না।এই তো কয়েক বছরের বড়..মাত্র দশ বছরের”

আরশি সিদ্রাতের কথা শুনে সাথে সাথে বিষম খায়।সিদ্রাত বেড সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে আরশির দিকে এগিয়ে দেয়।আরশি পানিটা খেয়ে গোল গোল চোখ করে তাকায় সিদ্রাতের দিকে…
—”আপনার বয়স সত্যিই সাতাশ?”
সিদ্রাত মুচকি হাসে।তারপর বলে…
—”ওকে বয়সের অঙ্ক পরেও করা যাবে।এখন বইয়ের অঙ্ক করো”

আরশি ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে অঙ্ক বুঝে যাচ্ছে।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো মেয়েটার।ভেবেছিলো ছয়-সাত বছরের বড়।এখন তো দেখছে পুরো দশ বছর!তাছাড়া এতো ইয়াং যে দেখেও বুঝার উপায় নেই।সিদ্রাতের এইজ নিয়ে আরশির প্রবলেম নেই।ও ভাবছে ওর ফ্যামিলির কথা।আবার সিদ্রাতের কথাও ভাবছে।কেউ কোনোদিনই কি মেনে নিবে আরশির অনুভূতিগুলো!আরশি মনে মনে ভাবে…

—”ভালোবাসার সামনে কি এইজটাই বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে শেষ পর্যন্ত!হয়ত..উনি তো আর আমায় ভালোবাসেন না।আর উনি আমার থেকে অনেক বড়।যেকোনো সময় খবর আসতে পারে সিদ্রাতের জন্য মেয়ে দেখা হয়ে গিয়েছে”

আরশি এটা ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠল।চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল সাথে সাথে।সিদ্রাত কিছুটা অবাক হলো..
—”আরশি এনি প্রবলেম?”
আরশি সিদ্রাতের কথায় আস্তে করে চোখটা খুলে আহত দৃষ্টিতে তাকায়। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে কেন জানি।কিন্তু সেটাও পারছে না।সিদ্রাত বলল…
—”শরীর খারাপ লাগলে বলো..আমি আজ চলে যাই”
আরশি মন ভারাক্রান্ত করে বলল…
—”শরীর খারাপ না।কিন্তু পড়তে মন চাচ্ছে না”
—”তাহলে আমি চলে যাই”
আরশি লাফ দিয়ে উঠে…
—”নায়ায়া..আমি আপনার জন্য পাস্তা বানিয়েছি তো”
সিদ্রাত কপালে ভাজ ফেলে তাকায়।আরশি বুঝতে পারে কথার ছলে ও কি বলে ফেলেছে।আমতা আমতা করে বলে…
—”আসলে আপনি তো আমাদের বাসায় নতুন আসলেন আজ।তো সে হিসেবে আপনি আমাদের গেস্ট।আর গেস্টকে কি খালি মুখে ফিরিয়ে দেয়া যায়?”
আরশি মৃদু হেসে বলল কথাটা।সিদ্রাত হাসল…
—”তাহলে তো তোমার বানানো পাস্তা খেতেই হচ্ছে”

আরশির মনটা খুশিতে নেচে উঠল।মূহুর্তেই মন খারাপটা ভুলে গেলো।চেয়ার থেকে উঠে বেড সাইড টেবিল থেকে পাস্তার প্লেটটা এনে সিদ্রাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়ল…
—”এবার খান”
সিদ্রাত হালকা হেসে একটু খেতেই মুচকি হেসে বলল…
—”হুউমম..দারুণ হয়েছে।তোমার হাতের রান্নায় তো মনে হচ্ছে ম্যাজিক আছে”
আরশি লাজুক হাসল।সিদ্রাত খেতে খেতে মুচকি হেসে বলল…
—”অন্তত সুস্বাদু খাবার খাওয়ার জন্য হলেও আম্মুকে বলতে হবে তোমার কার্বন কপি বৌ আনতে”

আরশি চমকে উঠল কথাটায়।সিদ্রাতের দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলল।গাল দুটো যেনো গরম হয়ে গিয়েছে লজ্জায়।চোয়ালে হাসি ঝুলে আছে।আরশি লজ্জায় এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।সিদ্রাতের দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জায়।সিদ্রাত হালকা হাসল।পরমূহুর্তেই বলল…

—”ওহহো দেখেছো আমি একাই খাচ্ছি।তুমিও খাও।পরে আবার বদনাম হবে যে স্যার স্টুডেন্টের বাসায় পড়াতে গিয়ে খেয়ে এসেছে কিন্তু স্টুডেন্টকেই খেতে দেয়নি”

আরশি হালকা হাসল সিদ্রাতের কথায়।মৃদু কন্ঠে বলল…
—”স্যার আপনিই খান।সমস্যা নেই।আমি পরে খাবো নে”
—”আরে না পরে পরেরটা খেও।যাও চামচ নিয়ে আসো।আমি এতগুলো একা খেতে পারব না?”

আরশি অবাক হলো সিদ্রাতের কথায়।সিদ্রাত কি ওকে একই প্লেট থেকে খেতে বলছে!আরশি কিছুটা অবাক হয়ে বলল..
—”মানে?”
—”মানে আবার কি?আমি কি এত্তগুলো খেতে পারব নাকি?এক সাইড থেকে তুমিও খাও।যাও এবার..স্যারের অর্ডার কিন্তু এটা”

আরশি আর উপায় না পেয়ে গুটিগুটি পায়ে কিচেন থেকে চামচ আনল।আজ কি লজ্জা দিবস কিনা সেটাই ভাবছে আরশি।এভাবে এক প্লেট থেকে কিভাবে খাবে।তাও আবার মানুষটা যদি হয় সে যার উপস্থিতি প্রতিনিয়ত হৃদয়ে দামামা বাজায়!

আরশি চামচ এনে গুটিশুটি হয়ে চেয়ারে বসে রইল।সিদ্রাত বুঝল আরশি লজ্জা পাচ্ছে।তাই নিজেই বাটিটা একটু এগিয়ে দিয়ে ইশারা করল খেতে।আরশি একটু একটু খাচ্ছে।কেমন যেনো আনইজি ফিল হচ্ছে।খেতে খেতে সিদ্রাত আরশির সাথে বিভিন্ন টপিক্স নিয়ে কথা বলল।আরশি সিদ্রাতের সাথে কিছুটা ফ্রি হতে পারল এতে।কিন্তু তাতে কী!ফ্রি হলেই কি হৃদয়ের সুপ্ত অনুভূতিগুলো মুছে যায় বা অস্পষ্ট হয়ে যায়?কখনোই না..বরং মানুষটা সম্পর্কে যত গভীরভাবে জানা যায় ততই তার প্রতি অনুভূতিগুলোও গভীর হতে থাকে।এসব ভেবে আরশি মুচকি হাসল।খাওয়া প্লাস গল্পের এক পর্যায়ে সিদ্রাত আরশির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।আরশি ইশারায় জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে।সিদ্রাত কিছু হয়নি বুঝিয়ে আরশির উড়নার একটা সাইড হাতে নিয়ে আরশির দিকে কিছুটা ঝুঁকে তা দিয়ে আরশির ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা ক্রিমটা মুছে দিলো।আরশির শরীরে যেনো অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায়।চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলল।সিদ্রাত মৃদু হাসল…
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_9
#Writer_TanhaTonu

সিদ্রাত আরশির ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা ক্রিমটা মুছে দিতেই আরশি চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।সিদ্রাত মৃদু হাসে।একটু পর আরশি মিটমিট করে তাকিয়ে আবারও লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে।হাতের আঙুলগুলো কচলাতে থাকে মেয়েটা লজ্জায়।সিদ্রাত বুঝতে পারে আরশি লজ্জা পেয়েছে।এটাই স্বাভাবিক।তাই সিদ্রাত উঠে দাঁড়ায় আর বলে…
—”ওকে আমি আসছি।আর হ্যাঁ আজ আমাদের বাসায় খাবে রাতে।আন্টি তো আম্মু আর চাচীমনিদের সাথে আমাদের বাসায়ই।তুমি সাজিদকে নিয়ে যেও”

আরশি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়।সিদ্রাত মৃদু হেসে চলে যেতে নিয়েও দাঁড়িয়ে যায়।আরশি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। সিদ্রাত মৃদু কন্ঠে বলে…
—”এতো লম্বা চুল সবাইকে দেখানো ঠিক না। মাথায় হিজাব পড়ে যাবে।মনে থাকে যেনো”

সিদ্রাত এটা বলে চলে যায়।আরশি ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থাকে।সিদ্রাতের কথাগুলো মনে করেই ব্লাশিং হতে থাকে।পাস্তার প্লেটটার দিকে তাকিয়ে থেকে সিদ্রাত যেই চামচটা দিয়ে খেয়েছিলো লাজুক হেসে আরশিও সেই একই চামচ দিয়ে বাকি পাস্তাগুলো খেলো।পরক্ষণেই লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল…

রাতে আরশির আম্মু একবার এসে বলে গিয়েছিলো সিদ্রাতদের বাসায় চলে যেতে।রাতে ওদের ওখানেই ডিনার করবে…
আরশি মাথায় সিম্পলভাবে একটা ব্রাউন কালার স্কার্ফ জড়িয়ে সাজিদকে নিয়ে সিদ্রাতদের ফ্লাটে যায়।ফ্লাটে ঢুকতেই আরশি ভরকে যায়।কারণ ড্রয়িংরুম ভর্তি বড় বড় আপু ভাইয়ারা।আরশির কেমন যেনো আনইজি লাগছে।সাজিদ এতক্ষণে আরশিকে রেখে ভিতরে চলেও গিয়েছে।আরশি চোখের মাধ্যমেই ওর আম্মু বা মুন-সিদ্রাতকে খুঁজছে।এতো অচেনা মানুষের সামনে আরশির নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে।তখনি মুন আরশিকে ডাক দেয়।আরশি সেদিকে তাকাতেই দেখে মুনও ওই আপু-ভাইয়াদের মাঝখানে আছে যা আরশি প্রথমে দেখতে পায়নি।কিন্তু আরশির খুবই নার্ভাস লাগছে এদের সামনে যেতে…
—”কি হলো..আসো..এদিকে আসো”
মুনের কথায় আরশি গুটিগুটি পায়ে মুনের পাশে গিয়ে বসে।মুন সবার সাথে আরশিকে পরিচয় করিয়ে দেয়।পরী বলে…
—”মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর গো তুমি দেখতে। ইশ আমার পরিবর্তে তোমার নামটা পরী হওয়া উচিত ছিলো”

আরশি লাজুক হাসি দেয়।প্রিয়া বলে…
—”ওয়ায়াহ..হাসিটাও তো ঘায়েল করার মতো।এই আরশি সত্যি করে বলো সিদ্রাতের সামনে এই হাসি দিয়েছিলে কিনা?তাহলে আমি সিউর দিয়ে বলতে পারব ও ঘায়েল অলরেডি”

প্রিয়ার কথায় আরশির চোখগুলো গোলগোলার মতো হয়ে যায়।লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।প্রিয়া বুঝতে পারে কথায় কথায় ও কি কি বলে দিয়েছে।তাই জিহবায় কামড় দেয়।আরশি করুণ চোখে মুনের দিকে তাকায় কারণ ও ভালো করেই বুঝতে পারছে যে মুন সব বলে দিয়েছে।পরী পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বলে…
—”আরশি লেইট ইট গো..এতো লজ্জা পেলে হয়!তুমি তো এই জেনারেশনের মেয়ে।আর ভালো লাগা,ভালোবাসা কি বলে-কয়ে আসে নাকি?”

সবাই ফ্রিলি কথা বললেও আরশি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে।ও তাই ওয়াশরুমের বাহানায় উঠে পড়তে নেয়।এতে মৌরি এসে বাঁকা হেসে বলে…
—”আরশি তুমি তো মে বি চিনো না ওয়াশরুম কোথায়?চলো আমি নিয়ে যাই”
—”অব্ না আপু..আগে তো এখানে নূপুর আপুরা থাকত।আমি জানি কোথায় কোথায় ওয়াশরুম আছে”

মৌরি থতমত খেয়ে যায়। কি বলবে আর ভেবে পায়না।মুন বলে উঠে…
—”আরে আরশি কমন ওয়াশরুমে এখন যাওয়া ঠিক হবে না।বাসায় কত মানুষ!তুমি বরঙ মৌরির সাথেই যাও”
—”ওহ”

আরশি ছোট্ট করে ওহ বলে মৌরির সাথে যেতে লাগল।যাওয়ার সময় মৌরি ঘাড় ঘুরিয়ে সবাইকে চোখ টিপ দিলো।সবাই মিটিমিটি হাসল।সিদ্রাতের রুমের সামনে আসতেই আরশি চমকে উঠে বলল…
—” আপু এটা তো স্যারের রুম।অন্য কোনো রুমে চলো প্লিজ”
—”আরে পাগল ভাইয়া বাসায় না।একটু আগে বাইরে গিয়েছে।তুমি যাও ভিতরে।আমি এখানেই দাঁড়ালাম”

আরশির ভিতর অস্বস্তি হচ্ছে তবুও ধীর পায়ে সিদ্রাতের রুমের ভিতর এগিয়ে গেলো।তাকিয়ে দেখল সত্যিই সিদ্রাত নেই।আরশি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের দিকে গেলো।ওয়াশরুমের দরজা টান দিতেই দেখল ভিতর থেকে দরজা বন্ধ।আরশি মাথায় হাত দিয়ে ভয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে নেয়।দরজার সামনে এসে এবার পড়ে আরেক মসিবতে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ।আরশি মৌরিকে ডাকতে থাকে….
—”মৌরি আপুউউ..প্লিজ খোল।এমন করো না প্লিজ”

আরশি অনেকবার ডাকার পরও কেউ খোলেনা।ভয় আর লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে মেয়েটার।করুণ চোখে ওয়াশরুমের দরজাটার দিকে তাকালো।সিদ্রাত বের হয়ে ওকে দেখলে কি ভাববে?

ওয়াশরুমের দরজায় হালকা আওয়াজ হতেই আরশি চমকে গেলো।ভয়ে কোথায় লুকাবে তা-ই ভাবছে।সিদ্রাত বের হওয়ার আগেই আরশি দৌড়ে বারান্দায় চলে গেলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সিদ্রাত ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।বারান্দার থাই দিয়ে আরশি সিদ্রাতকে দেখতে পাচ্ছে।সিদ্রাতের ভেজা শরীরে কোমরে একটা হোয়াইট টাওয়াল প্যাচানো ছাড়া আর কিছুই নেই।আরশির যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে সিদ্রাতকে এভাবে দেখে।আরশি চোখ ফিরিয়ে নিতে যেয়েও পারল না।বেহায়া চোখগুলো যেনো সিদ্রাতকে গিলে খাচ্ছে।চুলগুলো থেকে মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ টুপ টুপ পানি পড়ছে।সিদ্রাত ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মাথা দুইপাশে ঝাকিয়ে চুলগুলো ঝেড়ে নিলো।আরশি চোখ বন্ধ করে নিলো যেনো মনে হচ্ছে সিদ্রাতের ভেজা চুলের পানি আরশির মুখে পড়েছে।হঠাৎ সিদ্রাতের ভ্রু কুচকে এলো।ও মুচকি হাসল।তারপর ধীর পায়ে কাবার্ডের কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা শার্ট আর প্যান্ট বের করল।প্রথমেই প্যান্টটা পড়ার জন্য যেই টাওয়ালে হাত দিলো আরশি চোখ বড় বড় করে অন্যদিকে ফিরে গিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগল…

কিছুক্ষণ পর চোখ খুলতেই আরশির শ্বাস প্রায় আটকে যেতে লাগল।সিদ্রাত আরশির দিকে ঝুঁকে একটা হাত দেয়ালে দিয়ে আছে।আরশি সিদ্রাতের হাতটার দিকে চেয়ে ঢোক গিলল।সিদ্রাত ভ্রু নাচালো…
—”কি করছিলে আমার রুমে?আরেকটু হলে তো আমার সবই দেখে নিতে”

আরশির চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো।ও কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু সব কথা মুখেই আটকে যাচ্ছে ভয়ে।তারপর আবার সিদ্রাত আরশির অনেকটাই কাছে তাও আবার শুধু টাওয়াল পড়া অবস্থায়…
—”কি হলো এনসার দাও”
আরশি করুণ চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাত আরশির থেকে সরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।আরশি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।সিদ্রাত শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল…

—”কোনো প্রবলেম হয়েছে?কেউ কি কিছু বলেছে?”
আরশি না সূচক মাথা নাড়ালো।সিদ্রাত জিজ্ঞাস করল…
—”তাহলে?”
—”আস,,লে আমি ওয়াশরুমে, এসেছিলাম।আমি এরুমে,,,আসতে চাইনি।মৌরি আপু,,জ,,জোর করে ভিতরে ঢুকিয়ে বলেছে আপনি নাকি নেই,,পরে আমি বেরিয়ে যেতে,,চচেয়েছি,,লাম।কিন্তু ডোর লক করে,,দিয়েছে আপু,,,”

সিদ্রাত কিছুটা অবাক হলো আর বলল…
—”তার মানে রুম বাইরে থেকে লকড!শিট..তাহলে বেরুবে কীভাবে?”
আরশি মাথা নিচু করে রাখে।সিদ্রাত আবারও বলে…
—”আচ্ছা রুমের ভিতর আসো।আমি রেডি হয়ে দেখি কি করা যায়”

আরশি রুমে গিয়ে বেডে পা ঝুলিয়ে বসে থাকে।সিদ্রাত ওয়াশরুম থেকে চেইঞ্জ করে আসে।আরশি সিদ্রাতের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসে।সিদ্রাত কফি কালার শার্ট আর হোয়াইট প্যান্ট পড়েছে।চুলগুলো ব্রাশ করে আরশির পাশে বসে মোবাইলটা হাতে নেয়।আরশি কিছুটা অবাক হয়।অল্প সরে বসে।সিদ্রাত মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।তারপর কাকে যেনো ফোন করে বলে…
—”ডোরটা কী তোর বাবার কিনা সম্পত্তি?খুলে দিয়ে যা”
ওপাশ থেকে কি বলল কিছু শুনতে পেলো না আরশি।সিদ্রাত বলল…
—”দেখ মৌরি ফাজলামো করিস না।বাসায় বড়রা আছে।খুলে দিয়ে যা”

মৌরি ফোনের ওপাশ থেকে কি যেনো বলল।সিদ্রাত বিরক্ত হয়ে ফোনটা পাশে রাখল।আরশির দিকে তাকিয়ে দেখল আরশি উশখুশ করছে।সিদ্রাত বলল…
—”আজ যদি ওরা ডোর না খুলে তাহলে কি করবে?”

আরশি অবাক হয়ে তাকালো আর বলল…
—”খুলবে না?খুলবে না কেন আর এভাবে দরজা লাগালো কেন?”
—”সেটা তো তুমি ভালো জানো।বলো ডোর লাগালো কেন?”
আরশি থতমত খেয়ে গেলো।সিদ্রাতের থেকে চোখ সরিয়ে ডানে-বামে তাকাতে লাগল আর উশখুশ করতে লাগল।ও কি আর বলতে পারবে সবাই জেনে গিয়েছে আপনাকে আমি ভালোবাসি তাই দুষ্টুমি করার জন্য হয়ত এমন করেছে।আরশির মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে সবার উপর।সিদ্রাত মৃদু হেসে বলল…
—”চলো বারান্দায় যাই।একটু পর এমনিই খুলে দিবে নে”
—”দুইদিন পর তো অমাবস্যা।আবার যাবো বারান্দায়?এমনিই অনেক্ষণ ছিলাম।আম্মু দেখলে বকবে”
সিদ্রাত বলল…
—”আন্টি আমাদের বাসায়ই।আর তোমার রুমে তো অন্য কেউ আসেনা।সো কেউ দেখবে না।আর আমার জানামতে তোমার রুমের বারান্দা ছাড়া আমার রুমের বারান্দা অন্য আর কোনো বারান্দা দিয়ে দেখা যায়না।ঠিক তো?!
আরশি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো…

দুজন পাশাপাশি বসে আছে বারান্দার ফ্লোরে।মাঝখানে অনেকটা গ্যাপ আছে দুজনের মাঝে তবুও আরশির খুবই অস্থির লাগছে।ভালোবাসার মানুষের সামনে যে সবই অস্থির লাগে।সে জায়গায় বন্ধ ঘরে একা বারান্দায় নির্জন এই রাতে দুজন একসাথে বসে আছে।আরশির কাছে ব্যাপারটা সত্যিই লোমহর্ষক। শরীরের লোমগুলোও যেনো কাঁপছে।হঠাৎ আরশির কানে গান ভেসে আসল।ও পাশে তাকিয়ে দেখল সিদ্রাত একটা গিটার নিয়ে মৃদু আওয়াজে গাচ্ছে।আরশি লাজুক হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।আর সিদ্রাত লজ্জাবতী সেই রমণীর দিকে তাকিয়ে গানটা কন্টিনিউ করল।এতোটা আবেগ নিয়ে গাইতে লাগল যেনো এটা কোনো গান নয়।তার মনের সকল অনুভূতির সমাহার……..

—”বলনা কি এমন হয়?
যদি আরেকটু চায় হৃদয়?
বলনা কি এমন হয়?
যদি তুই আমি স্বপ্নময়?
না হয় পেলাম সে স্বপ্নকে
তোর দু’চোখের নীল তারায়-
না হয় পেলাম সে সুখ ছোঁয়া- হিম বাতাসের আশকারায়!
বলনা কি করি হায়?
যদি স্বপ্নরাই তোকে চায়?
বলনা কি করা যায়?
যদি আনমনেই মন হারায়?—”

এটুকু গেয়ে সিদ্রাত আরশিকে ইশারা করল তাল মিলাতে।আরশি লজ্জায় ডানে-বামে মাথা নাড়ায়।সিদ্রাত চোখ গরম করে তাকায়।আরশি ভয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়েই বাকিটা শুরু করে…

—”ঘুম জাগা চিলেকোঠায়
মন ভেজা অমানিশায়,
মান করে কখনো ভান করে
তোকে আপন করে হারাতে চায়
স্বপ্নরা উড়ে পালায়, আনকোরা খেয়ালে হায়
দূর থেকে হৃদয় পুর থেকে
অচেনা সুর থেকে
কি করে পায়?
মন চাইছে ভীষণ হারাতে,
তোর বুক পাঁজরের পাড়াতে-”

সিদ্রাত মুচকি হেসে পরেরটুকু গায়…
—”নাহয় থাক পড়ে খেয়ালি অভিমান গুলো গোপনে-
নাহয় পুরোলো আশারা-আজ ছোট্ট এই জীবনে;
বলনা কি হবে তাই?
যদি আরেকটু কাছে পাই?
বলনা কি হবে তাই?
যদি দূর থেকেই হাত বাড়াই?”

আরশি চোখ বন্ধ করে তীব্র অনুভূতির সাথে গায়…
—”হুম্মম স্বপ্নরা কেন আজ ঘর ছাড়া?
হুম্মম তুই হিনা কেন দিন আনমনা?”

“না হয় কাটালি এক জীবন কিছু ছন্নছাড়া ঢঙে
না হয় রাঙালি স্বপ্ন তোর ঐ রংধনুর সাত রঙে
বলনা কি আসে যায়?
যদি আরেকটু পাশে পায়?
বলনা কি ক্ষতি হায়?
যদি একটু বুঝিস আমায়?”

সিদ্রাত লাস্টের টুকু শেষ করে আকাশের দিকে তাকায়।মনে মনে একটাই কথা আওড়ায়…

—”বলনা কি হবে তাই;যদি দূর থেকেই হাত বাড়াই”

আরশি আনমনা হয়ে সিদ্রাতের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সুর ছাড়া দুটো লাইন আবারও রিপিট করে..
—”মন চাইছে ভীষণ হারাতে;তোর বুক পাজরের পাড়াতে”

মূহুর্তেই সিদ্রাত হেচকা টান দিয়ে আরশিকে বুকে জড়িয়ে নেয়।এমন ঘটনায় আরশির রক্ত চলাচলও যেনো থেমে গিয়েছে।স্ট্যাচুর মতো সিদ্রাতের বুকের সাথে মিশে রইল মেয়েটা।শিরদাঁড়া বেয়ে বিদ্যুৎ নামছে যেনো।পেট বারবার মোচড় দিচ্ছে…
চলবে…

একদিন দেইনি।বড় করে দিলাম।কেমন লাগল আজকের পার্ট সবাই জানাও..
হ্যাপি রিডিং..
চলবে…

#প্রেম_ছোঁয়া আজ দিবো না।কেউ ওয়েট করো না।আমি কিছুটা বিজি আজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here