প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৬+৭

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_6
#Writer_TanhaTonu

আজ ফ্রাইডে।আরশি অন্যান্য বার সকাল দশটায় উঠলেও আজ উঠেছে আজানের সাথে সাথে। কারণ একটাই।গতকাল সিদ্রাতের কথায়ই ও বুঝতে পেরেছে সিদ্রাত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।তাই আরশিও ভাবল আসলেই তো রেগুলার নামাজ পড়া উচিত।পরকালে জবাব তো দিতে হবে।আর ঘুম থেকে উঠার আরও একটা কারণ আছে।সেটা হলো সিদ্রাত যখন মসজিদে যাবে তখন ও বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিদ্রাতকে দেখতে পারবে…
আরশি তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।ওর জানামতে জামাত আরও দশ মিনিট পর শুরু হবে।এজন্যই দাঁড়িয়ে আছে। কখন না জানি সিদ্রাত চলে যায়।আরশি এসবই ভাবছিলো তখনই সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত সিদ্রাতকে দেখে ও একদম মুগ্ধ।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সিদ্রাত আরশির দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যায়।আরশি মুচকি হাসে।তারপর
বারান্দায় থাকা বেতের চেয়ারটায় বসে সিদ্রাতের জন্য ওয়েট করতে থাকে।কখন আসবে আর কখন ও আবারও দেখবে।

অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।কিন্তু আফসোস সিদ্রাত ভোর সাড়ে পাঁচটায় যে গিয়েছে এখন সাড়ে ছয়টা বেজে গিয়েছে এখনো আসেনি।আর আরশি এতোটাই ডুবে গিয়েছে সিদ্রাতের মাঝে যে এখনো বারান্দায় বসে আছে।মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গিয়েছে মেয়েটার…
—”আচ্ছা উনার কি কোনো বিপদ হলো?একঘন্টা ধরে তো মসজিদে থাকার কথা না?তাহলে গেলো কোথায়?আল্লাহ প্লিজ তুমি উনাকে সেইফ করো।আমি মরেই যাবো উনার কিছু হলে..”

আরশি টেনশনে বারান্দায় পায়চারি করছে। ঘড়ির কাটা সাতটায় গিয়ে থেমেছে।অথচ সিদ্রাতের কোনো খবর নেই।আরশি আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে ও বাসা থেকে বের হয়ে আসে।গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার রাস্তার দুপাশে উঁকি দিতে থাকে।এবার সত্যি সত্যি কেঁদেই দেয়।কাঁদতে কাঁদতে গেইট থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটা দেয়।ওদের বাড়ি আবাসিক এলাকায়।হেঁটে মেইন রাস্তায় যেতে সাত আট মিনিট লাগে।আরশি সেদিকেই হাঁটছে আর চোখের পানি মুছছে।পিছন থেকে কে যেনো আরশির কাঁধে হাত রাখে।আরশি ভয় পেয়ে পিছনে তাকাতেই সিদ্রাতকে দেখে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।সিদ্রাত আরশির এমন কাজে শুধু অবাকই হয়নি।রীতিমতো ভরকে গিয়েছে।আরশি সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদছে আর বলছে…

—”কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?আ,,আমি,,ভ,,য় পেয়ে,,ছিইই,,আপনি পঁচ,,চা,,”

সিদ্রাত আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে….
—”আরশি হোয়াট হ্যাপেইন্ড?প্লিজ শান্ত হও।কেউ কি কিছু বলেছে?তুমি এতো সকালে এখানেই কি করছ?না বললে বুঝব কীভাবে? ”

আরশি আরও কিছুক্ষণ সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।সিদ্রাত আরশিকে শান্ত করতেই পারছে না।বেশ কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়।হুশ আসতেই ও ছিটকে সরে যায়।ফ্যালফ্যাল চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকায়।পরক্ষণেই লজ্জায় একদম গুটিয়ে যায়।মাথা নিচু করে ফেলে আর এদিক ওদিক তাকাতে থাকে।সিদ্রাত ভ্রু কুচকে তাকায় আর জিজ্ঞাসা করে…

—”কি হয়েছিলো হুম?এতো সকালে এই রাস্তায় কি করছ?আর এভাবে কাঁদলে কেন?”
আরশি কি বলবে বুঝতে পারছে না।লজ্জায় একদম গুটিয়ে গিয়েছে মেয়েটা।আর সিদ্রাতের প্রশ্নের কি জবাবই বা দিবে বুঝতে পারছে না।কি একটা কান্ড করে ফেলল! এখন নিজেরই নাজেহাল অবস্থা।সিদ্রাত হালকা ধমক দিয়ে আবারও বলল…

—”কি হলো আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি?”
আরশি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আর যাই হোক এটা তো আর বলা সম্ভব না যে আপনার জন্যই কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছি।সিদ্রাত আবারও ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল…
—”কি হলো বলো”
আরশি কেঁপে উঠল।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ধরা গলায় জিজ্ঞাসা করল…
—”আ,,পনি কোথায়,,ছিলে,,ন এতো,,ক্ষণ?”
সিদ্রাত আরশির এমন প্রশ্নের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না।অনেকটা অবাক হলেও কিছু বলল না জবাবে।থমথমে কন্ঠে বলল…
—”বাসায় চলো”
আরশি প্রচুর ভয় পেয়েছে আজ।তারপর সিদ্রাত কিছু সন্দেহ করেছে কিনা সে ভয়েও আছে।চুপচাপ সিদ্রাতের সাথে হাঁটতে লাগল বাসার উদ্দেশ্যে।দরজার সামনে গিয়ে সিদ্রাত কলিংবেল বাজানোর আগে শুধু বলল…
—”পড়াশুনায় মনোযোগ দাও।সামনে এসএসসি এক্সাম।লাইফ ইজ শর্ট কিন্তু এর মানে এই নয় যে দুদিনেই জীবনের সব কাজ করে ফেলতে হবে।সবকিছুর নির্দিষ্ট সময় আছে”

সিদ্রাত রুমের ভিতর চলে যায়।আরশি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।সবকথা ওর মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে।সিদ্রাত কি বলল ও কিছুই বুঝতে পারল না।এ বিষয় নিয়ে আর মাথাও ঘামালো না।এমনি মাথা ভনভন করছে এই চিন্তায় যে সিদ্রাত কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে কিনা যে আরশি ওকে পছন্দ করে..

আরশি এসব ভাবতে ভাবতে বাসার ভিতর যেতেই ওর আম্মুর ডাকে থেমে গেলো…
—”কিরে ছাদে গিয়েছিলি নাকি?তোর হাঁটতে মন চাইলো তাহলে?কত বলি নিয়মিত হাঁট ছাদে গিয়ে।কিন্তু তুই তো তুই-ই।একদিন হাঁটলে পাঁচদিন হাঁটিস না”

আরশি বিরক্তি নিয়ে ওর আম্মুর দিকে তাকালো আর বলল…
—”আম্মু তুমি পারোও বটে।ছাদে হেঁটে আর কি হবে।ছাদে কি মর্নিং ওয়াক করা যায়!রাস্তায় হাঁটতে হয় বুঝলে আর আমি মোটা নাকি”
আরশির আম্মু বলল…
—”তো রাস্তায় কি ভোরবেলা তুই একা হাঁটবি নাকি?এমনি মেয়ে মানুষ।আমি একা তোকে বেরুতে দেই আর দুই ঘন্টা পর নিউজ চ্যানালে তোর সোনায় সোহাগা মুখটা দেখি।আর মোটা হলেই হাঁটতে হয়?হাঁটা স্বাস্থের জন্য ভালো”
আরশি ভেঙচি কেটে রুমে চলে গেলো।ঘেমে গিয়েছে পুরো শরীর।ফ্রেশ হয়ে স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে বসে রইল।ক্ষানিকটা সময় পর ঠান্ডা হওয়ার পর ভাবল ঘুমাবে।পরে আবার ভাবল ঘুমাবে না।ফোন নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকল আরশি।ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে মুনতাহা মুন নামে আইডি থেকে।আরশি মুচকি হেসে রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে প্রোফাইল পিক আর কভার পিক দেখল মুনের।তারপর গুড মর্নিং মেসেজ দিয়ে মুনের আইডিটা ঘাটল।একটা পোস্টে এসে আরশি থেমে গেলো।মুন আর সিদ্রাতের একটা পিক..মুন কেকের প্লেট নিয়ে সোফায় বসে আছে আর ওর গালে কেকের ক্রিম।পাশেই সোফার হ্যান্ডেলে সিদ্রাত মুনের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আরশি লাভ রিয়েক্ট দিলো পিকটায়।তখনই দেখতে পেল ওপরের লিখাটা “Muntaha tagged sidrat ajoyad”

আরশির চোখ চকচক করে উঠল।সাথে সাথে আইডিতে ঢুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়ে দিলো।তারপর সিদ্রাতের পুরো আইডি ভিজিট করল।বিভিন্ন ধরণের পিক দিয়ে ভরপুর সিদ্রাতের আইডি।কোনো পিকে শার্টের হাতা ফোল্ড করে কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,কোনো পিকে চুলগুলো হাত দিয়ে ব্রাশ করছে,আবার একটা পিকে সিদ্রাত একটা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে একটা হাত পকেটে ঢুকিয়ে আরেক হাতে মোবাইল চালাচ্ছে।একটা পা হাটু মুড়ে পিছনের দিকে দেয়ালের উপর ভাজ করা,আরেকটা পিকে সিদ্রাত গিটার বাজাচ্ছে আর সিলকি চুলগুলো ওর কপাল অব্দি আচড়ে পড়ে আছে।আরশি এগুলো দেখে যেনো একদম সেন্স হারানোর অবস্থা হয়েছে।চোখ সরাতেই পারছে না।ব্লাশিং হচ্ছে আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এর মাঝেই নটিফিকেশন এলো যে সিদ্রাত রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে।আরশি তো চিৎকার দিয়ে লাফ দিয়ে উঠল….

—ইয়াহুউউউউ..ইম্মিইইইই..উফফফফ কি আনন্দ!আল্লাহ!”
আরশি খুশিতে ডান্স শুরু করেছে।পরে আবার ভাবল…
—”স্যারের তো আমার আইডি চিনার কথা না।আমার আইডির নেইম তো কিটকেট।পিকও তো কিউট দুইটা বিড়ালের।তাও এক্সেপ্ট করল?উনি কি সবার রিকুয়েস্টই এক্সেপ্ট করে”

আরশি এটা ভেবেই মুখ ফুলিয়ে ফেলল।ভাবতে লাগল কে জানে কয়টা মেয়ে আছে সিদ্রাতের আইডিতে…
—”নেহাত ফ্রেন্ডলিস্টটা অনলি মি করে রেখেছে।নাহলে সবগুলো মেয়েকে এখন ধুয়ে দিতাম উইদাউট ডিটার্জেন্ট”
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_7
#Writer_TanhaTonu

আজ সিদ্রাতদের পুরো বাড়িতে ব্যস্ততা।সিদ্রাতের আম্মু খুবই ব্যস্ত।সেই সাথে আরশির আম্মুও।দুজনের মাঝেই এই কয়দিনে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে।মানুষ দেখলে ভাববে এরা আপন বোন।সিদ্রাতের চাচ্চুর বাসার লোক নাকি আসবে আজ।তাই সিদ্রাতের মা একা হাতেই সব করছিলো।পরে আরশির আম্মুও সিদ্রাতের আম্মুকে হেল্প করতে লাগে।সিদ্রাতের আম্মু একটাতে মুরগির ঝাল মাংস রান্না করছে।আরেকটাতে আরশির আম্মু ডেজার্ট বানাচ্ছে।ফালুদার জন্য দুধে সাবুদানা দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলল…

—”আপা সিদ্রাত আর মুন দুজনই কি স্কুলে গিয়েছে?”
সিদ্রাতের আম্মু বলল…
—”মুন তো ওর রুমেই।আজ কি আর ও কলেজে যাবে?ওর বোনেরা আসবে বলে কথা।সিদ্রাতকে বলেছিলাম থাকতে বাসায়।কিন্তু নতুন জয়েন করেছে।এখনি বারবার অফ করলে ভালো দেখায় না।ছেলে তো আবার আমার বেশ পানচুয়াল”

আরশির আম্মু হাসল।বলল…
—”হুম আরশির মুখে তো সারাদিনই সিদ্রাতের নাম লেগেই থাকে।স্যার এটা,স্যার ওটা..কত কী?সুনাম আর সুনাম!সাজিদ তো আজ সকালে বলেই ফেলেছে স্যারেরা সাথে প্রেম করতে মন চাইলে উনাদের বাসায় যা।এবাসায় বসে বকবক করিস না।ব্যাস..মেয়ে আমার রেগে ফায়ার হয়ে সাজিদের স্কুল ব্যাগটা আছাড় মেরে মুখ ফুলিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে স্কুলে।বুঝলে সাজিদটার মুখ হলো তারকাটা।মুখে যা আসে সবই বলে”

সিদ্রাতের আম্মু হাসল।কিছুক্ষণ ইতস্ত করে নিজেই বলল…
—”তবে সাজিদ কিন্তু ভুল বলেনি।আমরা চাইলেই কিন্তু সম্ভব।একটা আত্মীয়তার সম্পর্কও তৈরি হবে।আর আরশিকে তো আমার ভারী পছন্দ”
আরশির আম্মু হেসে বলল..
—”কি যে বলো আপা।সিদ্রাতটা হলো লক্ষী একটা ছেলে।ওর গলায় আমার এই উড়ুনচন্ডি মেয়েকে ঝুলালে দেখা যাবে ছেলেটা আমায় আজীবন অভিশাপই দিয়ে যাবে।আবার ওদের বয়সেরও একটা গ্যাপ আছে”
—”তোর বয়সের গ্যাপ তোর কাছেই রাখ।আমি নিজেই সিদ্রাতের আব্বুর আট বছরের ছোট।এসব বয়স টয়স কিছুই না।”
আরশির আম্মু হাসল..

এদিকে আরশি রেগে ফায়ার হয়ে ক্লাশে বসে আছে।এখন থার্ড পিরিয়ড বাংলা ক্লাস চলছে।ম্যাম পড়াগুলো রিভিশন দিতে বলেছে।একটু পর সবার থেকে পড়া নিবে।আরশি না পড়ে শুধুই মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।বনি আর ফারহা সেই সকাল থেকে এতো চেষ্টা করেও জানতে পারল না আরশির এতো রাগের কারণ।ফারহা হালকা রাগী কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল…
—”এই ন্যাকার মা..এতো নাটক না করে বল না কি হয়েছে”
আরশি তো “খাইয়ালামু” লুকে ফারহার দিকে তাকাতেই ফারহা ঢোক গিলল।আরশি বিরক্তি নিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরালো।কয়েক সেকেন্ড পর আবার ওদের দিকে তাকিয়ে বলল…

—”আমার বজ্জাত ভাই আজ আব্বু-আম্মুর সামনেই আমার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিয়েছে।স্যারের একটু সুনাম করছিলাম এজন্য বলে স্যারের সাথে উনাদের বাসায় গিয়ে প্রেম করতাম।আম্মু আর আব্বু কি ভাবল বল তো।আমার আম্মু-আব্বু যেই এডভান্স আল্লাহ জানে কি কি ভাবছে”

বনি আর ফারহা ফিক করে হেসে দেয়।আরশি মুখ ফুলিয়ে তাকায়।বনি হেসে হেসে বলে…
—”স্কুলে তো তোমার মজনুর প্রশংসা করে পুরো টাইম আমাদের মাথা খাস।বাসায়ও এ কাজ করেছিস!সাজিদ একদম ঠিক করেছে”
আরশি রেগে বনির পেটে গুতো দিয়ে দিলো।ফারহা বলল…
—”আর আরশি তুইও আছিস!বাসায়ও সারাদিন তোর সিদ্রাত নামের টেপ রেকর্ডারটা চালিয়ে রাখা লাগে।বাসায় তো মুখটা অফ্ রাখতে পারিস।বাসায় এতো স্যারকে নিয়ে কথা বলিস কেন?”

আরশি দাঁত কেলিয়ে বলল…
—”উনাকে নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে”

বনি আর ফারহা বাঁকা চোখে তাকায় আরশির দিকে।বুঝতে পারে লাইলি পুরোই ডুবে গিয়েছে মজনুর প্রেমে…

স্কুল ছুটি হলে আরশি ওদের স্কুলের ফার্স্ট গেইট পেরিয়ে আসতেই দেখে সিদ্রাত কার সাথে যেনো কথা বলছে এক সাইডে দাঁড়িয়ে।পাশেই ওর কার।আরশি ভাবল সিদ্রাতের কাছে যাবে।পরমূহর্তেই ভাবল এটা ভালো দেখাবে না।একদমই না..
আরশি তাই ইতস্ত করতে করতে সিদ্রাতের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়।কয়েক পা এগুতেই সিদ্রাত আরশির সামনে এসে দাঁড়ায়।আরশি থতমত খেয়ে যায়…
—”স্যার,,কিছু বলবেন?”
—”হুম..বাসায় যাচ্ছো?”
—”হ্যা”
সিদ্রাত আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে আরশিকে আবারও জিজ্ঞাসা করে…
—”তোমাদের কার যে দেখছি না?ড্রাইভার আসেনি?”
আরশি আমতা আমতা করে বলে..
—”না,, আসলে তেমন কিছু না।আমি কার আনিনা।রিক্সা,,করে যাই”

সিদ্রাত ভ্রু কুচকালো আরশির কথায়।হয়ত হজম করতে পারল না কথাটা।তাই বলল…
—”মানে কি?তুমি একা মেয়ে মানুষ একা একা যাও।পাগল নাকি?আর বাসায় কার না থাকলে একটা কথা ছিলো”
—”স্যার কিছু হবে না।আর মাত্র কয় মিনিটের রাস্তাই?আমার সমস্যা হয়না”

সিদ্রাত গম্ভীর কন্ঠে বলল…
—”যাও কারে উঠো।আর কিছু বলতে হবে না”
আরশি অবাক হয়ে তাকায়।ওর চাহনীতে জিজ্ঞাসু ভাবটাও স্পষ্ট।সিদ্রাত বলল…
—”আমার কারেই উঠতে বলেছি।চলো”

আরশির কেমন অস্থির লাগছে এটা ভেবে যে সিদ্রাতের সাথে একসাথে যাবে।তাই ও আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে রইল।সিদ্রাত ভ্রু কুচকে বলল…
—”আপনার জন্য কি এখন ঘোড়ার গাড়ি অর্ডার করতে হবে নাকি?যাও কারে গিয়ে বসো”

আরশি সিদ্রাতের ধমকে ভয় পেয়ে গেলো।গুটিগুটি পায়ে কারে গিয়ে বসল।সিদ্রাতও কারে বসে স্টার্ট দিলো।আরশি কেমন যেনো উশখুশ করছে।বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।বুকের ভিতর কেমন যেনো ফিলিংস কাজ করছে।আরশি বেশ কয়েকবার সিদ্রাতের দিকে আড়চোখে তাকায়।সিদ্রাতের দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির।হঠাৎ দুজনের সিটের মাঝখানে থাকা সিদ্রাতের ফোনটা বেজে উঠল।সিদ্রাত এক হাত কানে দিয়ে যেই ব্লুটুথ দিয়ে রিসিভ করবে দেখল ব্লুটুথটাই নেই কানে…
—”শিটটট,,,,,”
আরশি আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করল…
—”স্যার কোনো সমস্যা?”

এদিকে সিদ্রাতের ফোন বেজেই চলেছে।আরশি আড়চোখে দেখল স্ক্রিনে “Mouri”লিখা।সিদ্রাত ড্রাইভ করতে করতে বলল…
—” ফোন রিসিভ করা দরকার ছিলো।কিন্তু ব্লুটুথটা ডিসকানেক্টেড।মে বি পকেটে”

আরশি কি বলবে বুঝতে পারল না।তাই চুপ করে রইল।কিছুক্ষণ পর আবারও ফোনটা বেজে উঠল।সিদ্রাত ড্রাইভ করতে করতেই বলল..
—”আচ্ছা একটা কাজ করো তো..ফোনটা রিসিভ করে একটু আমার কানের কাছে ধরো”

আরশির চোখগুলো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।ও ওভাবেই জিজ্ঞাসা করল…
—”আমি?”
—”হ্যা একটু তাড়াতাড়ি পিকাপ করো।মনে হয় কোনো সমস্যা হয়েছে”

আরশি ফোনটা হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতটাই সিদ্রাতের কানের কাছে বাড়িয়ে দিলো।সিদ্রাত কথা বলছে আর ড্রাইভ করছে।সিদ্রাতের খোচা খোচা দাঁড়িওয়ালা গালটা আরশির হাতের একটা অংশে লাগতেই আরশি কেঁপে উঠল।চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে থাকল।মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে আরেকটু গভীরভাবে গালটা ছুঁয়ে দিতে।কিন্তু সাহসও পাচ্ছে না।আরশি চোখখুলে ওর হাতটা আরেকটু প্রশস্ত করে সিদ্রাতের গালে রাখতেই ভালোলাগার একটা অনুভূতি বয়ে গেলো।আরশি মুচকি হাসল।সিদ্রাত কথা বলা হলে মুচকি হেসে আরশিকে ইশারা করল ফোন কান থেকে সরাতে।আরশি ফোনটা আগের জায়গায় রেখে মাথা নিচু করে বসে রইল।আড়চোখে নিজেরই হাতটার দিকে তাকাচ্ছে বারবার।সিদ্রাতের গালের স্পর্শ যে লেগে আছে এখানে। হঠাৎ সিদ্রাতের কথায় আরশি লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেলো।সিদ্রাত ড্রাইভ করতে করতে মুচকি হেসে বলল…
—”তোমার হাত তো একদম বরফের মতো ঠান্ডা।মনে হচ্ছিলো আমার গালে কেউ বরফ ঘষছে”

আরশি জিহবায় কামড় দিয়ে লাজুক হাসল মাথা নিচু করেই।সিদ্রাতও আরশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবারও ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো…
চলবে…
চলবে…
আজ কারেন্ট ছিলো না।মোবাইলে চার্জও ছিলো না।কারেন্ট এসেছে একটু আগে।লেইট হয়ে যাওয়াত তাই ছোট করে দিলাম পার্টটা।প্রেম ছোঁয়াও ছোট হবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here