প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ১৩

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_13
#Writer_TanhaTonu

আরশি সিদ্রাতের রুমে টেবিলটায় মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।ওর রাগ এখন সপ্তম আসমানে।কারণ একটাই..ফার্স্ট দুটো চেয়ারে প্রতিদিনের মতো আজও নিরা আর ছোঁয়া বসে আছে।এমন একটা ভাব যেনো কিছুই হয়নি।সকালে এতো বড় অপরাধ করার পরও ওদের মুখে কোনো অনুতাপের চিহ্নই নেই।আর সিদ্রাতই বা কেমন!ওদেরকে না করে দিলো না কেন প্রাইভেটে আসতে!

আরশি মুখ ফুলিয়ে চার নাম্বার চেয়ারটা বসে আছে।আরশির পাশে একটা চেয়ার ফাঁকা রেখে আরোহী বসেছে।আর অপর পাশে তাশফিদের সাথে ফারহা বসেছে।কত শখ ছিলো মেয়েটা প্রতিদিন সিদ্রাতের পাশে বসবে।অপলক তাকে দেখে যাবে।আর হচ্ছে কী!সিদ্রাতের থেকে কত দূর বসতে হয়!

আরশির এসব ভাবনার মাঝেই সিদ্রাত রুমে প্রবেশ করে।সবাই সালাম দেয়।সিদ্রাত আরশির দিকে একবার তাকিয়ে ওর পাশের চেয়ারটায় বসে।আরশি চমকে সিদ্রাতের দিকে তাকায়।সিদ্রাত মৃদু হেসে বলে…
—”মাঝখানে বসলাম যেনো সবাইকে ভালোভাবে নজরে রাখা যায়।আমি থাকি এক কোণায় আমার স্টুডেন্ট থাকে আরেক কোণায়..সবাই তো কন্সামট্রেটও করতে পারে না..কি বলো সবাই?”

নিরা আর ছোঁয়া ছাড়া সবাই সিদ্রাতের কথায় সম্মতিসূচক হাসল।তারপর আরশির দিকে তাকিয়ে তাশফি আর বনি দাঁত কেলালো।আরশি হালকা লজ্জা পেলো।সিদ্রাত বলল…
—”সো পড়া কমপ্লিট করেছো সবাই?”
আরশি সব ম্যাথই বুঝেছে।তবুও ইচ্ছে করে নিজের খাতা বের করে বলল…
—”স্যার আমি বৃত্তের এই উপপাদ্যটা বুঝিনি।এটা অনেক হার্ড”

সিদ্রাত সবার দিকে তাকিয়ে বলল…
—”তোমাদের কারও কোনো প্রবলেম আছে?”
ফারহা আর আরোহী সেইম প্রবলেম দেখালো।ওদের ত্রিভুজের উপপাদ্যে প্রবলেম।আর নিরা আর ছোঁয়া তো বলেই ফেলল ওরা কোনোটাই বুঝেনি।সিদ্রাত যেনো সব বুঝিয়ে দেয় আবারও।আরশি নিচের দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটল আর মনে মনে বলল…
—”হুহ ঢঙ..কিছুই যেনো বুঝি না আমরা।ইচ্ছে করে বলেছে যেনো স্যার পুরো টাইম ওদেরকেই দেয়..ছোঁয়া আর নিরা বান্দর!তোদেরকে দেখিস চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কিমা বানিয়ে চামচিকাকে দিবো খেতে”

—”ওকে স্টূডেন্টস আগে আমি ফারহা আর আরোহীকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।তারপর নিরা আর ছোঁয়া তোমাদেরকে বুঝাবো।আর তাশফি রাফি তোমরাও বুঝো”

আরশি তো সিদ্রাতের কথায় চমকে উঠল।হালকা জোরেই বলে ফেলল…
—”স্যার আমি সবার আগে প্রবলেম দেখিয়েছি”
—”তাতে কী হয়েছে?রিলাক্স।আমি ধীরে ধীরে সবাইকেই বুঝাবো।আর তোমার তো মাত্র একটা অরবলেম।এটা যেকোনো টাইমেই তোমায় আমি বুঝিয়ে দিতে পারব।ওরা তো আর যেকোনো টাইমে বুঝতে পারবে না।ওদের বাসাও দূরে”

সিদ্রাত এটা বলে সবাইকে বুঝাতে লাগল।আরশি গাল ফুলিয়ে যেটা বুঝে না বলেছিলো ওটা চোখ বুলাতে লাগল।সিদ্রাত ফারহার খাতায় উপপাদ্যটা লিখে বুঝাচ্ছে।বনি খেয়াল করল সিদ্রাতের ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি…

সবাইকে এতগুলো ম্যাথ বুঝাতে বুঝাতো পাঁচটা বেজে গেলো।প্রাইভেটের টাইম শেষ।সবাই ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।আরশি মুখ ফুলিয়ে বই ব্যাগে ভরছে।মুখটা ভার হয়ে গিয়েছে।সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”একি তুমি উপপাদ্য বুঝবে না?ব্যাগ গুছাচ্ছ যে?”

আরশি গাল ফুলিয়ে বই আর খাতা ব্যাগে ভরতে ভরতেই বলল…
—’টাইম থাকতে তো আর কারও মনে ছিলো না আমারও প্রবলেম আছে উপপাদ্যে।সমস্যা নেই..যেদিন টাইম হবে কারও আমাকে বুঝানোর জন্য আমি না হয় সেদিনই বুঝব”

আরশি চলে যেতে নিলে সিদ্রাত হালকা হেসে বলল…
—”আমার তো বুঝাতে প্রবলেম নেই।কিন্তু আমার স্টুডেন্ট যদি ভুলে যায় যে এটা সে দুদিন আগে নিজেই আমায় লিখে দেখিয়েছে তাহলে আর কী করার!অবুঝ আরশির উচিৎ ছিলো প্রবলেম হিসেবে অন্য কোনো ম্যাথ দেখানো..কারণ ওই যে..চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা;যদি না পড় ধরা”

আরশি জিহবায় কামড় দিলো।ইশ সিদ্রাতের ভাবনায় ভুলেই গিয়েছিলো উপপাদ্যটা যে ও সিদ্রাতকে লিখে দেখিয়েছে।একবার মুখটা ঘুরিয়ে পেছনের দিকে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে দৌড়ে চলে গেলো।সিদ্রাত হেসে দিলো..

পরের দিন আরশি স্কুল ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের লিফটে উঠেছে।লিফটের ডোর অফ হয়ে যেতে নিবে তখনই সিদ্রাত দৌড়ে ভেতরে ঢুকে যায়।আরশি ভ্রু কুচলায়।তারপর সালাম দেয়।সিদ্রাতও মুচকি হেসে সালামের জবাব দেয়।তারপর নিজেই জিজ্ঞাসা করে…..
—”স্কুলে কি আঙ্কেলের কারে করে যাবে?”
—”না।প্রতিদিন যেভাবে যাই সেভাবেই যাবো”
—”বাব্বাহ..তোমার তো ভারী সাহস।কাল এতো কিছু ঘটে গেলো আর আজই একা একা বাসা থেকে বের হচ্ছো?”

আরশি মাথাটা নিচু করে ফেলল।কিছু না বলে নিচের দিকেই তাকিয়ে রইল।অনেক সময় এমন হয় মন অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু তবুও কোনো কারবে হয়ত বলা হয়ে উঠে না।
আরশি জবাব না দেয়ায় সিদ্রাত নিজেই জিজ্ঞাসা করল…
—”হোয়াট?কি হয়েছে?এনি প্রবলেম?!
আরশি না সূচক মাথা নাড়ালো।সিদ্রাতের কাছে আরশির বিহেইভ কেমন যেনো লাগছে।ও নিজ থেকেই আবারও বলল…

—”আমি তোমায় কারে বসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।তুমি ড্রাইভার আঙ্কেলের সাথে চলে যাবে।আর আমার জানামতে আঙ্কেল আরও আধা ঘন্টা পর বের হবে।সো কার নিয়ে প্রবলেম হবে না।তোমায় ড্রাইভার আঙ্কেল দিয়ে আসবে”

—”নায়াহ..প্লিইইজ”

আরশি ছলছল চোখে বলল কথাটা।সিদ্রাত কিছুই বুঝল না।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে চলে আসতেই আরশি সিদ্রাতকে কিছু না বলে দৌড়ে রিক্সায় উঠে পড়ল।আর সিদ্রাত বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আরশির যাওয়ার পানে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here