প্রীতিলতা পর্ব -২০+২১

#প্রীতিলতা ❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#২০_তম_পর্ব🍂

ড্রয়িং রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে প্রীতমের জন্মদিন উপলক্ষে। ওর কিছু ফ্রেন্ডস কেউ নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আব্বু অফিস থেকে ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসে সাফওয়ানের সাথে কথা বলছেন।

টেবিলে সবকিছুই প্রায় সাজানো গোছানো হয়ে গেছে শুধু কেক টাই প্যাকেট থেকে বের করে রাখা বাকি। প্যাকেট খুলে কেকটা টেবিলে রাখতে গিয়ে সাফওয়ানের দিকে নজর চলে গেল। দেখলাম আব্বুর সাথে কথা বলতে বলতে তিনি আর চোখে আমার দিকে তাকালেন। তাড়াতাড়ি আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।

মুহূর্তে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে পড়ে গেল।

তার স্পর্শগুলো গভীর থেকে গভীরতার হওয়ার আগেই নিজেকে তার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।

কি দরকার নিজেকে এই মিথ্যা মায়ায় জড়ানো। উনি এটা বললেন ঠিকই যে সে সাইমাকে পছন্দ করেন না। তিনি একবারও বললেন না তিনি আমাকে পছন্দ করেন। বা ভালোবাসেন। দুটো শরীর একত্রে থাকলে আকর্ষণ তো আসবেই কিন্তু মনের আকর্ষণ…!

এটা তো বেশি ইম্পরট্যান্ট তাই না। একটা সময় পড়ে গিয়ে শরীরের উপরে আর কারো আকর্ষণ থাকে না। চামড়া কুঁচকে যায় বয়সের ভারে নুয়ে যেতে হয় কিন্তু মনের আকর্ষণটা সে প্রথমবারের মতোই সতেজ থেকে যায়। যার আকর্ষণে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত সমস্ত ঝর ঝাপটা পেরিয়ে প্রিয় মানুষটার হাত আঁকড়ে ধরে থেকে যাওয়া যায়।

আজ আবারও সেই প্রথম দিনের মত বুকের বা পাশটা খুব যন্ত্রণা করছে। আমি ভেবেছিলাম আজ হয়তো তিনি সবকিছু বলে আমাকে নিজের মনের কথাগুলো বলবেন। আশায় বুক বেঁধেছিলাম আমি। আজি হয়তো বলবেন,

— প্রীতি আনমনে সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি । থেকে যাওনা সারা জীবন আমার পাশে। আমি তোমাকে প্রয়োজন আর মনের প্রয়োজনে

বেহায়া মত বারবার তাকে একই প্রশ্ন করেছি কিন্তু একবারও তিনি বললেন না। উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখছিলাম। তিনি হয়তো অবাক হয়ে গিয়েছিলেন আমার আচরণে।

এতদিন তো স্বেচ্ছায় তার কাছে ধরা দিতে চেয়েছি। ভগ্ন বিক্ষুব্ধ হৃদয় নিয়ে ফিরে এসেছি। কিন্তু আজ নিজেই নিজেকে তার কাছ থেকে গুটিয়ে নিচ্ছি।

দুটো মানুষকে এক ছাদের নিচে বাধলেই সংসার হয় না। উভয় দিক থেকে ভালোবাসা বরাবর হতে হয়। একজন কাঙালের মত ভালবাসবে আরেকজন তা বসে বসে উপভোগ করবে এমনটা হলে আর যাই হোক সংসার করা যায় না।

এমন একজনকে ভালো না বাসলেই বোধ হয় ভালো করতাম।

_________🌺🌺________

প্রিতমের বন্ধুরা বেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। প্রীতম আজ বেজায় খুশি। তার জন্মদিনটা একদম তার মনের মতো করে পালন করা হয়েছে। এবং এবারের জন্মদিনের সে তার সবথেকে পছন্দনীয় উপহার তার দুলাভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছে।

রাত আটটা বাজে,

আম্মু ডাইনিং এর খাবার গোছাচ্ছে। আজ সবাই অনেক ক্লান্ত। তাই আগে আগে খেয়ে নেওয়াই ঠিক হবে বলে আমার মায়ের মনে হয়। পুতুলকে দেখলাম সোফায় বসে বসেই ঝিমুচ্ছে। বেচারী আজ দুপুরে আর ঘুম হয়নি। সারাদিন লম্প ঝম্প করে এখন সে খুবই ক্লান্ত। তাকে ডাকতে যাব তখন দেখি কলিং বেল বেজে উঠল।

বাসায় তো সবাই আছে। এখন আবার কে এলো? তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেখে একটা ছেলে কিছু শপিং ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে সালাম দিয়ে বলল,

— সাফোয়ান স্যারকে একটু ডেকে দিন। এগুলো ওনার পার্সেল।

আমি ভ্রু কুচকে মনে মনে ভাবলাম ওনার পার্সেল এখানে আসবে কেন? লোকটাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে আমি সাফওয়ানকে যেই ডাকতে যাব।

তখন দেখলাম তিনি রুম থেকে বেরিয়ে মেইন দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন। ছেলেটার হাত থেকে প্যাকেট গুলো নিয়ে সালাম বিনিময় করে বিদায় জানালেন। তারপরে দরজা আটকে দিয়ে প্যাকেট গুলো নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলেন।

প্যাকেট গুলো ভালোভাবে চেক করে সোফার এক সাইডে রেখে দিয়ে আমার এসব বললেন রুমে এসো তোমার সাথে কথা আছে।

আমি তাকিয়ে দেখলাম মা রান্নাঘরে। প্রীতম টিভি দেখছে পাশের সোফায় প্রিতমের হাতের উপরে হেলান দিয়ে পুতুল শুয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পরে আমি চলে গেলাম আমার রুমে। গিয়ে দেখলাম তিনি রেডি হয়ে বিছানায় বসে হাতে ঘড়ি পরছেন। আমাকে দেখে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

— তাড়াতাড়ি রেডি হও আমরা কিছুক্ষণ পরে বাড়ি ফিরে যাব।

— আমি দুইদিন পরে যাব।

— তোমার ব্যাগের সাইজ দেখে তো মনে হচ্ছে না তুমি দুই দিনেও ওই বাড়ি আসবে। কালকে সকালে ফ্লাইটে মা বাবা ওমরা পালন করে ফিরছে।

আমি সাফওনের দিকে তাকালাম । তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম,

— ও আচ্ছা এবার বুঝেছি। আপনি কেন বারবার আমাকে ওই বাড়ি ফিরে যেতে বলছেন। কাল সকালে যখন মা-বাবা আসছেন তার আগে আমি ওই বাড়ি পৌঁছে যাব। কিন্তু রাতে আমি এই বাড়িতে থাকব।

— কাল সকালে তুমি কার সাথে যাবে?

আমি দায়সারাভাবে উত্তর দিলাম,

— আমি তো আগেও খুলনা থাকতাম। হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছি। আমার একা একা যাতায়াতে অভ্যাস আছে। চিন্তা করবেন না ভোরেই পৌঁছে যাব।

সাফওয়ান আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

— আমাদের বাড়ির মেয়ে বউরা এমন একা একা যাতায়াত করে না। একা একা এ বাড়িতে এসেছো ঠিক আছে কিন্তু এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে ফিরবে তুমি আমার সাথে।

কথাগুলো বলে দরজা খুলে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন সাফওয়ান কিন্তু আমার একটা কথা শুনে তিনি থেমে গেলেন।

—- চিন্তা নেই আপনাদের বাড়ির বউ এর তকমাটা আমার নামের পাশ থেকে কিছুদিনের মধ্যেই মুছে যাবে।

শব্দ করে দরজা আটকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

__________🌺🌺__________

মামনি আমি রাতেই প্রীতিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে যাচ্ছি।

কেন বাবা এত রাত থেকে যাও আমাদের বাড়িতে এতদিন পর আমার মেয়েটা এসেছে আর তুমিও তো প্রথমবার এসেছ। জামাই মেয়ে প্রথমবার বাড়িতে এলে একরাত থাকতে হয়।

আম্মু খুবই অনুরোধের সুরে কথাটা বললেন। সাফওয়ান আম্মুর হাত জোড়ায় জড়িয়ে ধরে বলল,

কাল সকালে মা বাবা চলে আসছে। প্রীতিকে নিয়ে এয়ারপোর্টে যেতে হবে। না হলে ও আর আমি এক সপ্তাহ থেকে যেতাম এই বাড়িতে।

আমি খাওয়ার টেবিলে বসে মা আর সাফোয়ানের কথাগুলো শুনছি আর খাচ্ছি। নিরবা নির্মিত ভঙ্গিতে। তাদের কথা যেন আমার কোন কিছু যায় আসে না।

পরে অনেক জোরাজুরি শেষে আম্মু আমাদেরকে যেতে দিলে রাজি হলেন। কিন্তু শর্ত দিলেন সামনের সপ্তাহে এ বাড়িতে দাওয়াত আছে সে সময় আম্মু আমাকে ১০ দিন এ বাড়িতে রেখে দিবেন।সাফওয়ান
বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিলেন।

খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাইকে সাফওয়ান ড্রইং রুমে ডাকলেন। সোফায় বসে এক এক করে মা বাবা আর প্রীতমের দিকে তিনটি শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলেন।

বাবা সাফোয়ান কে বলে উঠলেন,

— বাবা এসবের আবার কি দরকার ছিল?

সাফওয়ান মুচকি হেসে বাবার পাশে বসে বললেন ,

— মা বলছিল জামাইরা প্রথম শ্বশুরবাড়ি গেলে শ্বশুরবাড়িতে বাজার করে নিয়ে যেতে হয় আরো অনেক উপঢৌকন দিতে হয়। আমিও প্রথমবার আসলাম কিন্তু তাড়াহুড়ায় তেমন কিছুই আনতে পারিনি। এই সামান্য …!

আমরা তোমাকে আমাদের ছেলের মতোই মনে করি। কোন বিষয় নয় তুমি এসেছ এটাই অনেক।

— আমিও সেই ভেবে এইগুলো এনেছি বাবা। তাছাড়া এগুলো দেওয়ার আরও একটা কারণ আছে যেটা এখন বলতে পারছি না পরে সবাইকে বলব ইনশাল্লাহ।

এবার আমাদের বিদায় দিন। আমাদেরকে এখন বেরোতে হবে।

______🌺🌺_______

প্রায় দেড় ঘন্টা জার্নি শেষে বাসায় এসে পৌছালাম আমরা। রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। তাছাড়া এমনিতে সকালে জার্নি করে যাওয়া তার উপর ভাইয়ের বার্থডে সেলিব্রেশন আবার এই জার্নি সবমিলিয়ে আমি অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

ঘুমে দুচোখ বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে আমার অনেক কষ্টে পা চালিয়ে মেইন রোডের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম বেশ কয়েকবার ডোরবল বাজালাম বেশ খানিকটা সময় পড়ে এসে কে জানি দরজাটা খুলে দিল কিন্তু চেহারাটা দেখতে পেলাম না।

আমিও আর অত কিছু না ভেবে নিজের প্রায় অবশ হয়ে যাওয়া পা জোড়া টেনে নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছিলাম তখন পেছন থেকে কারোর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।

— কেমন আছেন মিসেস প্রীতিলতা? এই অধমের দিকে তো একটু দৃষ্টিপাত করুন। তিনি তো আপনার অপেক্ষায় অনেকক্ষণ যাবত আপনার পথ চেয়ে বসে আছে।

পিছনে ফিরে দেখলাম। সুঠাম দেহের টোল ওয়ালা ডাক্তার ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে আমার পিছনে। আমি ক্লান্ত মিশ্রিত হাসি হেসে বললাম,

— আরে কখন এলেন ভাইয়া?

— সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরে। সে শুনলাম আপনারা নাকি সবাই বাইরে গেছেন। এই তো বসে বসে আপনাদের অপেক্ষা করতে লাগলাম। তা এই অধমের সাথে কি দুমুঠো ভাত খাওয়া যায়।

তখনই পেছন থেকে সাফওয়ান বলে উঠলো,

— ওই বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছি। তুই খেয়ে নে সায়েম। আমরা অনেক ক্লান্ত আজ। কাল সকালে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া হবে।

কথাগুলো বলে সাফওয়ান আমার বাম হাত টেনে নিয়ে আসলেন রুমে। পুতুলকে রুমে নিয়ে যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেলেন ফ্রেশ হয়ে নিতে।

আমিও বিনা বাক্য ব্যয় ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখি। সাফওয়ান অলরেডি পোশাক চেঞ্জ করে বিছানায় বসে পানি খাচ্ছে। হয়তো পুতুলের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেছে।

আমি ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে সাফয়ানের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলেন ‌। আমার হাত ধরে আটকে দিয়ে বললেন,

— কোথায় যাচ্ছ তুমি?

আমি তার দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

— পুতুলের ঘরে।

সাফওয়ান উঠে আমার সরাসরি দাঁড়িয়ে বললেন,

— কেন বিয়ে করে বউ হয়ে কি এ বাড়িতে এসেছিল পুতুলের রুমে থাকার জন্য?

আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— এখানে মানুষটাই আমার নয় সেখানে এই রুম দিয়ে আমি কি করবো?

সাফওয়ান কিছুটা চাপা ধমকের সুরে বলে উঠলেন,

— তখন থেকে খালি আজেবাজে কথাবার্তা বলে যাচ্ছ তুমি। কি বলতে চাইছ কি তুমি?

— মুক্তির ঘণ্টা বেজে গেছে সাফোয়ান। আমার মুক্তি চাই সবকিছু থেকে। মুক্তি…..!

তিনি যেন আর রাগ সংবরণ করতে পারলেন না। আমার দুই বাহু সে তার শক্তপাঞ্জা দ্বারা আটকে ধরে ঝাঁকিয়ে উচ্চস্বরে বললেন,

— মুক্তি…! কিসের মুক্তি। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ মৃত্যু ব্যতীত এই ঘর থেকে তোমার কোন মুক্তি নেই…..!
#প্রীতিলতা ❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#২১_তম_পর্ব🍂

ফজরের নামাজ শেষ করেই রান্নাঘরে চলে এসেছি। আর বের হওয়ার সুযোগ পাইনি। কতদিন পরে মা-বাবা আসছেন। তাদের জন্য প্রায় ১৫ থেকে ১৬ টা আইটেম রান্না করার প্রস্তুতি নিয়েছি আমি। আর আমাকে সব দিক থেকে সাহায্য করছে রহিমা খালা।

দশটার ফ্লাইটে যশোর এয়ারপোর্টে এসে নামবে, মা বাবা। তারপর সেখানকার ফরমালিটি কমপ্লিট করে বাসায় পৌঁছাতে কটা বাজবে তার ঠিক নেই। তাছাড়া জার্নিপথেও তেমন কিছু খাওয়া দাওয়া করা যায় না। তাই এলেই তাদেরকে আগে খাবার দিতে হবে। সে অনুযায়ী তো আমাকে আগে আগেই রান্না শেষ করতে হবে তাই আমার এত তাড়াহুড়ো।

রহিমা খালা এক এক পদ কেটে কুটে গুছিয়ে দিচ্ছে আর আমি রান্নার জন্য তা চুলায় চাপিয়ে দিচ্ছি। জার্নি করে আসছেন সেজন্য লাইট খাবার যেমন শাকসবজি আছে তার পাশাপাশি মাছ মাংসের রান্না করছি আমি।

বড় ভাইয়া, সাফওয়ান, সায়েম ভাইয়া, আর পুতুল নয়টার দিকে বের হবেন যশোরের উদ্দেশ্যে। এর আগে তাদেরকেও সকালের নাস্তা দিতে হবে। বলতে গেলে একেবারে তাড়াহুড়ো বেধে গেছে আমার।

হঠাৎ ভাবি এসেছেন রান্নাঘরে। আমার সাইডে এসে দাড়ালেন তিনি। আমি শত ব্যস্ততার মধ্যেও তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। তরকারির কড়াইটা চুলার উপর থেকে পাশে নামিয়ে রাখতে রাখতে ভাবিকে জিজ্ঞাসা করলাম,

— তোমার র কিছু লাগবে ভাবী?

ভাবি না বোধক মাথা নাড়ালেন। তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— রান্নাবান্না কি সব শেষ হয়ে গেছে তোমার?

— না ভাবি এখনো কয়েকটা পদ বাকি আছে। মাছ-মাংসের সকল আইটেম শেষ হয়ে গেছে রান্না করা সবজি আর ভাত ,পায়েস আর সালাদ বাকি আছে।

তার আগে ওনাদের জন্য সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে তাই এখন রুটি বানাবো। মাংস রান্না করা হয়ে গেছে মাংস দিয়ে খেয়ে চলে যেতে পারবে তারা।

— আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আমার কাছে দাও আমি রুটি বানাচ্ছি।

আমি চমকেও উঠলাম। বিয়ের এক মাসের মাথায় এই প্রথমবার দেখলাম ভাবি রান্নাঘরে এসেছে তার উপর আবার রান্না করতে চাইছেন। খালামণি বলেছিলেন। সামিরা ভাবি নাকি ভালো রান্নাবান্না পারেন না।

আমি হেসে বললাম,

— ভাবি তুমি কি কি রান্না করতে পারো?

দেখলাম ভাবির মুখটা কেমন ভয়ে চুপসে গেছে। আমতা আমতা করে বললেন,

আসলে তেমন রান্নাবান্না পারিনা আমি কিন্তু রুটি,ভাত, পায়েশ চা কফি নুডুলস এগুলো টুকটাক রান্না করতে পারি।

আমি ভাবীর হাত জোড়া আঁকড়ে ধরে বললাম,

— চা টা এখনো আমি বানাতে পারিনি। একটু কষ্ট করে চা বানিয়ে দেবে। তারে আমি এদিকে রুটিগুলো বেলে দি ই তুমি না হয় ছেঁকে দিও।

ভাবির মুখে খুব মিষ্টি একটা হাসি ফুটে উঠলো। সম্মতি জানিয়ে চা বানাতে উদ্ধত হলেন তিনি। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম রহিমা খালার কিছুটা রাগ হয়েছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় মাথা নাড়িয়ে রাগ করতে নিষেধ করলাম।

সবাই সব গুণের অধিকারী হতে পারে না।ভাবি হয়তো রান্নাটা পারেন না কিন্তু ডাক্তারি চিকিৎসায় তার নৈপুণ্যতা আছে। মানুষের সেবায় তিনি ফ্রন্ট লাইনার হিসাবে কাজ করেন। মানুষ হিসেবে উনি যথেষ্ট ভালো। এটাই তার বড় গুণ।

তার মধ্যেই ভাবি আমাকে বলে উঠলো,

— সাফওয়ানের কাপে কয় চামচ করে চিনি দাও প্রীতি?

— এক চামচ দাও ভাবি।

কথাটা বলে আমি রুটি বেলায় মনোযোগ দিলাম।

_________🌺🌺_______

সাফোয়ান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখল এখনো চা নিয়ে আসেনি প্রীতি। বিরক্তিতে তার মুখটা সামান্য কুঁচকে গেল। সাফওয়ান রুম থেকে বের হয়ে পুতুলের রুমে গেল। দরজা ঠেলা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখল পুতুল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক একটা জামা নিজের গায়ে ধরছে আর দেখছে আর বিছানার উপর ফেলে দিচ্ছে।

সাফওয়ান পুতুলের রুমে ঢুকে দেখে বিছানার উপরে পাহাড় বানিয়ে ফেলেছে জামাকাপড়ের। তা দেখে তার কপালে আরো বেশি বিরক্তি ভর করলো। বিছানা থেকে চোখ সরিয়ে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

— তোর অত দেখে কাজ নেই যা পরবি তাতেই পেত্নীর মত লাগবে। আর বিছানার উপরে কি জঙ্গল বানায় রাখছিস। দেখে তো মনে হচ্ছে সুন্দরবনে চলে আসছি।

— তোমাকে কে আসতে বলেছে আমার সুন্দরবনে।

— বেশি কথা বলিস তোর ভাবী কোথায় রে?

— ও আমার প্রীতিলতা হয়।

— তার আগে ও আমার বউ হ…..

কথাটা বলে নিজেই তাজ্জব বনে গেল সাফোয়ান। পুতুল চোখ মোটা মোটা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

— তুই কি বললি ভাইয়া?

সাফওয়ান আমতা আমতা করে বলল,

— ক্ কোথায় কী বলছি? যা তোর প্রীতিলতাকে গিয়ে বল আমাকে চা দিতে। আর বিছানার উপরে জঙ্গল পরিষ্কার কর । না হলে এসব জামা একটা ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রেল স্টেশনে ফেলে দিয়ে আসব। তখন তোকে পাতা পুতি দিয়ে কাজ চালাতে হবে।

পুতুল সাফোয়ানের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,

— তোর হাতে কামড় দিব আমি।

— আমারও দাঁত আছে।

— বের হ তুই।

— হুহ…!

বলে সাফওয়ান চলে আসছিলেন নিজের রুমে তখন হঠাৎ নিচের দিকে নজর যেতে দেখলো। আমি ডাক্তার ভাইয়াকে চা এগিয়ে দিয়ে সোজা আবার রান্নাঘরে চলে এসেছি। কিছুক্ষণ পরে সাফওয়ানের জন্য চায়ের কাপ হাতে আমাকে উপরে উঠতে দেখে তিনি তার রুমে চলে গেলেন।

আসলে তখন চায়ের কাপ নিয়ে আমি উপরেই আসছিলাম । সায়েম ভাইয়া সোফায় বসে নিউজ দেখছিলেন আমাকে দেখতে পেয়ে ডেকে আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলেন। যার ফলে আবার আমাকে রান্নাঘরে গিয়ে সাফোয়ানে জন্য চা নিয়ে উপরে আসতে হয়েছে।

চায়ের কাপ নিয়ে রুমে ঢুকে দেখি বিছানার ওপরে সাফোয়ান বসে আছে। মুখে রাগের আভাস। তাকে দেখে গত রাতের ঘটনা মনে পড়লো আমার।

তখন আমার উপর রাগ ঝেড়ে আমার হাত থেকে বালিশটা কেড়ে নিয়ে তার বালিশের পাশে ছুড়ে দিয়ে বলল,

— এখনই গিয়েও ওই পাশে শুয়ে পড়ো। আমার কথা যদি তোমার বোধগম্য না হয় তাহলে বল দ্বিতীয় বারে কিন্তু অন্যভাবে বোঝাবো তোমাকে।

আমিও আর কথা বাড়াইনি। চুপচাপ গিয়ে বিছানার অপর পাশে শুয়ে পড়েছিলাম। এমনিতে তো ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুম আসতেও বেশি দেরি হয়নি। মুহূর্তে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গিয়েছিলাম।

চায়ের কাপটা তার পাশে রেখে চলে আসতে নিলে আমার উদ্দেশ্যে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলেন,

— চায়ের কাপটা নিয়ে যাও।

অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,

— কেন?

— এই কাপটা আমার নয়।

আমি অবাক এর সর্বোচ্চ চূড়ায় চলে গেলাম।

— চায়ের কাপেও কি আপনার নাম লেখা আছে?

আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল

— না। চা টা নিয়ে যাও।

দেখুন আবোল তাবোল কথা বলা বন্ধ করুন। আর চা টা খেয়ে রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসুন। ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি। আর নিচে সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনাদের বের হতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আসছিলাম আমি তখনই সাফওয়ানের একটা কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম।

— যাও যাও তোমার ব্রেকফাস্ট খাওয়ার জন্য তো একজন উদগ্রীব হয়ে আগে থেকে রেডি হয়ে সোফা সেটের উপরে বসে আছে। কি রসগোল্লা বানিয়েছো? তাকে গিয়ে গেলাও। আমার ব্রেকফাস্ট লাগবে না।

আমার এবার সত্যি সত্যি রাগ হলো। এমন কেন এই লোকটা? তার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললাম,

— সমস্যা কি আপনার? এভাবে কথা বলছেন কেন?

উনি যেন এমনই একটা প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল।মুখে কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আমার মুখোমুখি হয়ে এসে বলল,

— অন্য সময় তো দেখি রুমের মধ্যেও ওড়না পেচিয়ে বসে থাকো। আজ কি হয়েছে। ওড়না কি খাটো হয়ে গেছে নাকি দোকানদার সিট কাপড় কম দিয়েছে। যে কাপড় মাথায় দেওয়া যাচ্ছে না।

আমি মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম সত্যি ওড়না মাথায় নেই। কাজের চাপে অতটা খেয়াল নেই। উনাকে এটাই বলতে যাব তার মধ্যে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে আমার শরীর থেকে ওড়না খুলে মাথায় পরিয়ে দিলেন। টাইট করে ওড়নাটা মাথার সাথে আটকে দিলেন। তারপর বিছানায় বসে চায়ের কাপটা হাতে নিলেন।

উহ রান্নাঘরে ওই তাপে আমি সিদ্ধ হয়ে যাব। এত টাইট করে কেউ ওড়না বাধে?

— তোমার ওই এক গোছা চুলের মায়া থাকলে ভুলেও ওড়নাটা মাথা থেকে সরাবে না।।

রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে আবার বলে উঠলেন,

— সায়েম ভাবীর ভাই। তার যত্ন করার জন্য ভাবি যথেষ্ট। তোমাকে এত খাতির-দারি করা লাগবে না।

বলে চায়ে চুমুক দিলেন। মুহূর্তে তার মুখটা বিকৃত হয়ে গেল।

— উমহ এই চা কে বানিয়েছে?

রুম থেকে বের হতে হতে বলে আসলাম ,

—- আপনার ভাবি।

__________🌺🌺______

রুম থেকে বেরিয়ে এসে পুতুলের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম। ম্যাডাম খুব কনফিউজড হয়ে গেছে। আমি ওর রুমে গিয়ে চুপি চুপি আলমারি থেকে ওপরে কটি দেওয়া ফুল খাতার একটা গোল ফ্রক চুরিদার পায়জামা বের করে ওর সামনে ধরতে চমকে আমার দিকে ঘুরে বলল,

— এটা পরে যাব প্রীতিলতা।

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।

— ওকে। আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে নিচ্ছি।

— আর তাড়াতাড়ি নিচে নামবেন ম্যাডাম। ঠিক আছে।

— ওক্কে।

বলে ওয়াশরুমে চলে গেল পুতুল।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে দেখলাম ডাক্তার ভাইয়া ভাবিকে বকাঝকা করছে।

— বুড়ি হয়ে গেছিস এখনো ভালো করে চা বানাতে শিখলি না কি বানাইছি এটা?

ভাবিও কম না। সেও ডাক্তার ভাইয়াকে বকাঝকা করতেছে। ওপর পাশের সোফায় দেখলাম সাকলাইন ভাইয়া চুপচাপ বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর তাদের ঝগড়া দেখছেন।

ভাবি এবার না পেরে উঠে বড় ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসে বললেন,

— এই চা কি খারাপ হয়েছে?

না বোধক মাথা নাড়িয়ে চায়ের কাপটা উঁচু করে ধরে বললেন ,

— দারুন হয়েছে।

— তাহলে ও কেন বলতেছে যে চা খারাপ হইছে।

— আরে বাদ দাও তো। ছেলেমানুষ। বিয়েশাদি করছে নাকি যে বউয়ের চায়ের মর্ম বুঝবে। কোথায় কি বলতে হয় তা জানে না। আগে বিয়ে করুক শিখে যাবে।

ভাইয়ার বলার ধরন আর কথা শুনে অনেক কষ্টে নিজের হাসিটা চেপে রাখলাম পেটের মধ্যে কিন্তু ডাক্তার ভাইয়া তো অনেক ধাপ এগিয়ে আছে । হাসতে হাসতে পেট জড়িয়ে ধরে সোফায় বসে পড়লো।

আর ভাবি ভাইয়ার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন বাগে পেলে এখনই খেয়ে ফেলবে এমন ভাব। ভাইয়া সেদিকে তাকিয়ে এক চুমুকে চায়ের কাপ ফাঁকা করে দিয়ে বলল,

— সন্ধ্যায় এমন আরেক কাপ চা বানিয়ে দিও কেমন। এখন আমি যাই তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে নেই না হলে দেরি হয়ে যাবে আমার।

ভাবি ও চোখ ছোট ছোট ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— হ্যাঁ খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে এখান থেকে কেটে পড়ো তুমি। এটাই তোমার জন্য খুব ভালো হবে।

ভয় মিশ্রিত হাসি হেসে ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেলেন বলতে গেলে এক প্রকার কেটে পরলেন। আমিও হাসতে হাসতে রান্নাঘরে চলে আসলাম।

________🌺🌺________

সকাল সাড়ে আটটা।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে বসেছে সবাই। আমি আর ভাবি মিলে তাদের সবাইকে খাবার সার্ভ করলাম। সবাই যে যার মত তাড়াহুড়ো করে খেতে শুরু করলো। খাওয়ার মধ্যে হঠাৎ সায়েম ভাইয়া বলে উঠলেন,

— উমমম…! রান্নাটা সত্যি অনেক সুস্বাদু হয়েছে। তাহলে পুতুল ঠিক কথাই বলেছিল প্রীতিলতা খুব ভালো রান্না করতে পারে।

পুতুল রুটির একাংশ নিজের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে সাথে বলল,

— পুতুল মিথ্যে কথা বলে না। হুম।

পুতুলের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,

— চুপ থাক এই প্রথম সত্যি কথা বললি তুই।

তারপর ডাক্তার ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— থাঙ্কস প্রীতিলতা ফর ইওর ট্রিট।

বিনিময়ে আমি শুধু মুচকি হাসলাম। আর চোখে তাকিয়ে দেখলাম সাফোয়ান তাকিয়ে আছেন সায়েম ভাইয়ার দিকে।

_________🌺🌺_____

সবাই বেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। যাওয়ার আগে পুতুল অনেকবার বায়না করেছে আমাকে নিয়ে যাবে বলে কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই যায়নি। ভাবি আমি আর রহিমা খালা একসাথে সকালের নাস্তা করে নিলাম। তারপরে রান্নাঘরে চলে আসলাম বাকি রান্না গুলো করার জন্য।

ভাবি কেউ দেখলাম কিছুক্ষণ পরে রান্না ঘরে চলে আসলেন। সে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

— পায়েস আর সালাদ আমি তৈরি করতে পারবো। পোলাও টা কিভাবে রান্না করতে হয় আমাকে একটু দেখিয়ে দেবে । আমি রান্না করতে চাই।

অবশ্যই।

বলে দুজনেই রান্নার কাজে লেগে পরলাম।এই প্রথম ২ জা মিলে রান্না করছি। ব্যাপারটা সত্যি অন্যরকম ভালো লাগছে আমার কাছে। ভাবি কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমার কাছ থেকে এটা ওটা দেখিয়ে নিচ্ছেন বিনা সংকোচে।আর আমিও যথাসম্ভব হেল্প করছি।

রান্না শেষ হয়ে গেছে। এগারোটার বেশি বাজে। ভাবি ফোন দিয়েছিল বড় ভাইয়ের কাছে। মা বাবা নাকি ভেতরে আছে ফর্মালিটি পূরণ করছেন। মধ্যে তারা যশোর থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। উনাদের ফিরে আসতে ৪৫ মিনিটের মত সময় লাগবে।

গোসল করার জন্য যে যার রুমে চলে আসলাম। ২০ মিনিটের একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলাম।পরনে গোলাপী রঙের সিল্কের শাড়ি। চুল থেকে বেয়ে পরা টপটপ পানি আটকাতে মাথায় টাওয়েল পেঁচিয়ে নিলাম। ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম। আয়নার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজেকে দেখে হঠাৎ পটাপট করে নাকফুল, গলার চেন, কানের দুল আর হাতের চুরি জোড়া খুলে ছোট একটা বক্সে ভরে নিলাম। পুরনো গুলো পড়ে নিলাম।

বক্সটা ড্রেসিং টেবিলের উপরে রেখে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলাম আলমারির উপর থেকে নিজের ব্যাগটা নামিয়ে আলমারি থেকে আমার সব জামাকাপড় ভরে নিলাম ব্যাগে। সবকিছু প্যাকিং করে চেন আটকে ব্যাগটা আলমারির পাশে রেখে দিলাম।

বারান্দায় চলে আসলাম চুল থেকে টাওয়েল ছাড়িয়ে মুছতে মুছতে পাশের ডালের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুটো হলুদ পাখি এসে বসেছে। এদিক ওদিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার উড়াল দিয়েছে তাদের নিজ গন্তব্যে।

সেদিকে তাকিয়ে হঠাৎ নিজ কণ্ঠে গিয়ে উঠলাম।

“শেষ হোক এই খেলা এবারের মতো ।।

মীনতি করি আমাকে
হাসি মুখে বিদায় জানাও

আমায় ডেকো না ফেরানো যাবে না
ফেরারী পাখিরা কুলায় ফেরে না”

চলবে……❣️

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here