প্রীতিলতা পর্ব -১৮+১৯

#প্রীতিলতা ❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#১৮_তম_পর্ব🍂

ছোটবেলা থেকে খুব দুরন্ত স্বভাবের ছিলাম আমি। আর ভাইয়া ছিল আমার একদম বিপরীত একদম শান্ত বাচ্চা। আমার ক্রিয়েটিভ জিনিসপত্র খুব ভালো লাগতো। কোন কিছু তৈরি করা, এক্সপেরিমেন্ট চালানো এ বিষয়গুলোর উপরে আমার আলাদা ঝোঁক ছিল।

এমনও হয়েছে ছোট্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাতে গিয়ে আমি পুরো ঘর নোংরা করে ফেলেছি। আম্মুর সে কি বকাবকি।

বলে হাসলেন সাফওয়ান। ছাদের উপরে ডিভান এ পাশাপাশি বসে আছি। কথাগুলো বলতে গিয়ে কেমন যেন একটা শিশুশুলভ আচরণ ফুটে উঠলো তার মুখে।

তারপরও যান এসব আমি কখনো গায়ে মাখতাম না। আমি তো সবসময় আমার মর্জি মতোই চলতাম। খেলাধুলা , পড়াশোনা কোন কিছুতেই পিছিয়ে ছিলাম না আমি। যখন যেটা চেয়েছি হাতের মুঠোয় পেয়েছি। এজন্যই হয়তো আমি একটু উগ্র টাইপ।

আমার জীবনে ছোট খালামনির অবদান অনেক। তাকে প্রথম প্রথম আম্মু বলে ডাকতাম এখনো ডাকি ছোট আম্মু বলে। শুধু একটা জিনিসের অভাব ছিল একটা ছোট পুতুলের মত বোন যেটা আমার ছিল না।

একদিন দেখলাম খালামণি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পেট আঁকড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে কাঁদছে। সবাই তাড়াতাড়ি ছোট আম্মুকে নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল।

আমি রুমে গিয়ে দেখি সায়েম বসে কাঁদছে। আমি যে তাই আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কান্না করে দিয়ে বলল,

— আম্মুকে সবাই কোথায় নিয়ে গেল?

আমি সায়েমকে কাঁদতে নিষেধ করে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,

— ছোট আম্মুর পেটে ব্যথা করছে তাই হয়তো ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। দেখবি কিছুক্ষণ পরেই ছোট আম্মু সুস্থ হয়ে বাসায় চলে আসবে।

সেদিন সারারাত মা বাবা ছোট ফুপা ছোট আম্মু কেউই বাসায় আসেনি। সারারাত আমি সায়েম আর সামিরা আপু একসাথে ছিলাম। সায়েম কান্নাকাটি করছিল। আম্মুর কাছে ফোন দিয়েছিলাম আম্মু বলল,
— ছোটআম্মু সকালে একদম সুস্থ হয়ে যাবে।

পরে সকালবেলায় আম্মু ফেরত এসে আমাদের সবাইকে তৈরি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছোট আম্মুর পাশে তোমাদের পেছানো একটা ছোট্ট পুতুল রাখা আছে। পুতুলটাকে ছুঁতে ই কেমন যেন নড়ে চড়ে উঠলো।

সত্যি বলতে ওই সময় তোয়ালে পেঁচানো ওই ছোট্ট পুতুলকে দেখে আমি যে কি খুশি হয়েছিলাম সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। ছোট্ট একটা পুতুল বোন। তোয়ালে পেঁচানোর একটুখানি ফাক দিয়ে মুখটা দেখা যাচ্ছে। আমি আর সায়েম তো একেবারে হামলে পড়েছিলাম দোলনার উপরে।

পরে আর বাসায় আসিনি। একেবারে ছোট আম্মুকে সাথে করে নিয়ে হসপিটাল থেকে বাড়ি এসেছিলাম সন্ধ্যায়।

ছোট্ট পুতুল বোনের নাম রাখা হলো সায়েম আর আমার নাম অনুসারে সাইমা।

কথাটা শেষ করে উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি চমকে উঠলাম। উনি সাইমাকে বোন বলে সম্বোধন করলেন কেন?

আমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে উনি আবার বলতে শুরু করলেন,

— সায়েম আর আমার সারাদিনের কাজ ছিল সায়মা ওর ছোট ছোট হাত নাড়িয়ে কি বলতো? কি বুঝাতো তাই নিয়ে একজন আরেকজনের সাথে ঝগড়া করা। বলতে গেলে সারাদিনই সাইমাকে নিয়ে বসে থাকতাম আমরা। সারাদিন দেখতাম চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে মাঝে মাঝে যখন খিদে লাগতো তখন ভ্যাক করে কেঁদে দিয়ে জেগে উঠতো সে।

খুব সুন্দর একটা জীবন্ত খেলনা পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা। স্কুলে যাওয়া ছাড়া প্রায় সময় পড়ে থাকতাম সাইমার পাশে। বাহির ও খেলতে যেতাম না আমি আর সায়েম। তাই নিয়ে বন্ধুদের সাথে অনেক গন্ডগোল তারপরে মারামারি হয় আমাদের। তারপরে সায়েম এবং সায়মা এরা দুজনই আমার একমাত্র বন্ধু হয়ে ওঠে ।

সায়েম আর আমি একসাথে কলেজ পর্যন্ত পড়েছি। তারপরে ও বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে চান্স পেল সেখানে চলে গেল আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে। কিন্তু সাইমা যখন ক্লাস এইটে পড়ে তখন থেকে ওর মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন দেখা শুরু করি।

আমি আমার সামনে লজ্জা পাওয়া। ভাইয়া বলে ডাকতে না চাওয়া। কিন্তু প্রথমে আমি ব্যাপারটা অতটাও পাত্তা দিইনি। কিন্তু আমার কলেজ ফ্রেন্ড এর বোন সায়মার সাথে পড়তো ।

আমার সেই বন্ধু একদিন এসে আমাকে বলল,

— কিরে খালাতো বোন ফিক্সড করে রাখছো নাকি। তোমার নামে সাধারণ কথা বলা যায় না।

আমি আর সায়েম কিছুটা ক্ষেপে উঠে বললাম,

— কি যা তা বলতেছিস?

আমার সেই বন্ধু রাগ ঝেড়ে বলল ,

— সায়মা আমার বোনকে ধরে মারছে আর চিল্লায় চিল্লায় স্কুলে বলছে তুই নাকি শুধুমাত্র ওর জন্য তোদের নাকি বিয়েও ঠিক হয়ে আছে।

কথাগুলো শুনে আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম পরে সায়েম সায়েমাকে চেপে ধরলে সে সবকিছু স্বীকার করে। কিন্তু আমি ওকে সবসময় আমার বোনের নজরেই দেখেছি।

ব্যাস ব্যাপারটা ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সায়েম সাইমাকে খুব ভালোভাবে বুঝিয়েছিল। আমি ওকে অন্য দৃষ্টিতে দেখিনা ছোট বোনের মতোই দেখি।

সাইমা চুপ হয়ে গিয়েছিল। তারপরে আমাদের এডমিশন টেস্টের পরে আমি ঢাকা আর সায়েম বরিশাল, সায়মা খুলনায় থেকে গেল।

এসব ব্যাপার নিয়ে আর কোন আলোচনা হয়নি আমাদের মধ্যে। কিন্তু আবার এই ব্যাপারটা সূত্রপাত ঘটে সায়মার বুয়েটে চান্স পাওয়ার পরে। ওর খুশি দেখে কে?

যতটা না খুশি ছিল বুয়েটে চান্স পেয়েছে তার থেকেও বেশি খুশি ছিল ঢাকায় থাকতে পারবে বলে। ঢাকায় ওর ভালোভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম আমি।

আমিতো একটা ছোট ফ্লাট নিয়ে থাকতাম। বারবার যখন-তখন আমার ফ্লাটে এসে হাজির হত নানা বাহানায় থাকার চেষ্টা করত আমার ফ্ল্যাটে।

আমি দাঁতে দাঁত চিপে সাফওয়ানের কথার উত্তর করলাম,

— ফ্লাটে আর কি কি করতেন সেগুলো বলুন। ভেঙে বলুন শুনতে খুব ভাল লাগছে।

সাফওয়ান ক্ষেপে উঠলেন,

— তোমার ওই অশ্লীল মস্তিষ্ক থেকে এইসব অশ্লীল চিন্তাভাবনা বাদ দাও। জীবনে সুখী হতে পারবা।

হ্যাঁ আপনি তো সুখী মানুষ সৌখিন মানুষ ভদ্র নম্র ধোয়া তুলসী পাতা একেবারে।

সাফওয়ান ডিভানে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন,

— তোমার থেকে ভালো আছি।

আমি দাঁতে দাঁত চিপে বললাম,

— আপনাকে তো আমি।

সে চোখ বন্ধ করা অবস্থা তাই বলল,

— যেখানে বসে আছো সেখানেই চুপচাপ থাকো এখনো কথা শেষ হয়নি আমার।

আমি থেমে গেলাম। কারন আমার সবকিছু জানতে হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।

—- যেহেতু ছোট বোন মানি ওকে, সেহেতু ওর উপর একটা অন্যরকম দুর্বলতা ছিল আমার। ওর কোন কথা ফেলতে পারিনা আমি। হঠাৎ হঠাৎ ফ্লাটে এসে বায়না করতো চলো না ভাই আজকে একটু ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখি। চলনা আজ বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি। চলো আজ আমি রেস্টুরেন্টে খাব।

ওর সব বায়না আমি নির্দ্বিধায় মেনে নিতাম। আরো কি করতো গোপনে ছবি তুলে তুলে ফেসবুকে আপলোড করতো এবং বিভিন্ন ধরনের রোমান্টিক ক্যাপশন লিখতো।

আমার ফ্রেন্ড সার্কেলদেরও বলেছিল এবং প্রমাণ দেখিয়েছিল যে আমি নাকি ওর বয়ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ডরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ছাড়তো। আমার হাজারবার না বলা কে সহস্রবার এর মতো হ্যাঁ মনে করত ওরা।

তাই একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। কাউকে কিছু বলতাম না। এর মধ্যে প্রায় অনার্স কমপ্লিট হয়ে যায় আমার। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি। এরমধ্যে আমার এক ফ্রেন্ড পুরো খবর নিয়ে আসলো আমার সো কল্ড গার্লফ্রেন্ড মানে সায়মা নাকি বুয়েটের কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ।

কথাটা অতটাও যাচাই করার ইচ্ছা হলো না কারণ বন্ধুদের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার খুব দরকার ছিল যে আমি আর সায়মা কোন সম্পর্কে ছিলাম না। ফ্রেন্ডদের অনেকে বিশ্বাস করলো আবার অনেকে বলল সাইমা নাকি আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। তা গেল।

অনার্সে যেহেতু ভালো রেজাল্ট করেছি মাস্টার্সেও একটা ভালো রেজাল্ট আমার কাম্য‌ তাই বছরের প্রথম থেকেই পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দিলাম একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম সায়মা আগের মত অত ঘনঘন আমার ফ্ল্যাটে আর আসে না।

আগে যে মেয়ের সপ্তায় ৫-৬ দিন আসতো সে এখন মাসে সর্বসাকুল্যে একবার আসে। ব্যাপারটা তো আমিও খুশি হয়েছিলাম ভেবেছিলাম হয়তো পড়াশোনা একটু মনোযোগী হয়েছে।

এর মধ্যেই হঠাৎ বাড়ি থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া আর সামিরা আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে ফাইনাল পরীক্ষার পরেই বিয়ে। শুনে খুব খুশি হলাম আমারও সামনে পরীক্ষা পরীক্ষাটা শেষ হয়ে গেলে ভালোই মজার একটা মুহূর্ত কাটবে।

ধীরে ধীরে পরীক্ষার ডেট এগিয়ে আসতে লাগলো, আমিও পুরোটা পড়াশোনার মধ্যে ঢুকে গেলাম। সায়মার ব্যাপারটা পুরো মাথা থেকেই চলে গিয়েছিল আমার। এর মধ্যে সাইমা আর কখনো ফ্ল্যাটে আসেনি। পরীক্ষাটাও আলহামদুলিল্লাহ শেষ করলাম।

এখন খুলনায় ফিরে যাওয়ার পালা। ডিসেম্বর মাস আমরা প্রায় সবাই ঝনঝাট মুক্ত। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে সাইমাকে কল দিলাম ফোন ওয়েটিং পেলাম। মনে করলাম বাসায় হয়তো কথা বলছে।

প্রায় আধা ঘন্টা পরে আবার রিং দিলাম তখন ওয়েটিং। এবার ফোন রেখে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সায়মা আমাকে কল ব্যাক করল। জানালো কালকে আমার সাথে খুলনায় ফিরবে। আমি যেন ট্রেন স্টেশনে জন্য অপেক্ষা করি।

পরের দিন ট্রেন ছাড়ার সময়ের অনেকটা আগেই আমি রেল স্টেশনে গিয়ে উপস্থিত হই। টিকিট অনুসারে আমার আর সাইমার সিট দেখে সিটের উপরে লাগেজ তুলে রেখে জানালা বরাবর বাইরে এসে স্টেশনে পাকা করে বাঁধিয়ে রাখা জায়গায় বসি।

ট্রেন ছাড়ার ৫ মিনিট আগে দেখলাম সাইমা স্টেশনের মেন গেট থেকে ভেতরে আসছে। না দেখে আবার আমি আমার ফোনে নজর বন্ধ করলাম। এখন পরে দেখলাম সাইমা আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি।

নজর ঘুরিয়ে দেখলাম পিলারের পাশে কার সাথে কথা বলছে এবং লাস্টে জড়িয়ে ধরে বাই বলে টলি ব্যাগের হ্যান্ডেল ধরে এগিয়ে আসছে। পিলারের ওপাশে কে ছিল আমি দেখতে পাইনি।

আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

— তুমি কি আমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছো ভাইয়া?

ওর মুখে ভাইয়া ডাক শুনে আমি যেন তাজ্জব বনে গেলাম। এবার বলে বলেও ভাইয়ার ডাক ডাকানো যায়নি। সে আজ নির্দ্বিধায় ভাইয়া বলে ডাকছে।

সাফানের মুখে সায়মার ভাইয়া ডাক সোনাটা শুনে নিজের মনের মধ্যে যেন একটা বসন্তের হাওয়া বয়ে গেল। সাফানের উপর অনেক রাগ হল ভাইয়া ডাকছে বলে পিত্তি জ্বলে গেছে ওনার। হুহ ঢং

তুমি আমার সাইট ব্যাগটা সরিয়ে ওই পাশে রেখে ওকে বসা জায়গা করে বললাম,

— বেশি নয় মাত্র 15 মিনিট হলো বসে আছি।

— ওহ

বলেও ফোনে কি যেন করতে লাগলো। ট্রেনে উঠে বসার সংকেত দিতেই আমরা তাড়াতাড়ি সিটে গিয়ে বসে পড়লাম।

খুলনা পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে গেল আমাদের। বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম আগামীকাল আপু আর ভাইয়ার এনগেজমেন্ট। রাতটুকু বিশ্রাম নিয়ে সকাল থেকে কাজে লেগে পড়লাম।

ভাইয়াকে সাথে করে নিয়ে শপিংয়ে যাব এছাড়া ঘরোয়া ভাবে এনগেজমেন্টের আয়োজন করা হলেও আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর ছিল বাড়িটা

সন্ধ্যাবেলায় যখন এনগেজমেন্ট এর জন্য ভাইয়াকে তৈরি তৈরি করছিলাম তখন ভাইয়া আরও একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন তৈরি হয়ে আসতে।

চেঞ্জিং রুমে গিয়ে প্যাকেট থেকে ড্রেস বের করতে দেখলাম ভাইয়ার এনগেজমেন্ট এর জন্য যে ড্রেস কেনা হয়েছে আমার জন্য সেই একই ড্রেস কিনেছে ভাইয়া। প্রথমে একটু সন্দেহ হলেও। পরে ভাবলাম তুই ভাই একই ড্রেস পরব। তাই হয়তো ভাইয়া কিনেছে।

ভাইয়া আর আমি তৈরি হয়ে নিচে চলে আসলাম। পরে দেখি সামিরা আপু এবং সায়মা ও একই ড্রেস পরা। এবার আমার সন্দেহটা গাড়ো হল কি করতে চাইছে কি?

আমার ভাবনার মধ্যে ভাইয়া আর সামিরা আপু হাঁকে স্টেজে তোলা হলো । আংটি বদল হয়ে গেল। তখন আব্বু স্টেজে উঠে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার আর সায়মার এঙ্গেজমেন্ট ঘোষণা করল।

আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে দ্বিগুণ অবাক হয়েছে সাইমা। ভয়ে ওর মুখটা রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেন সেটা আমি বুঝতে পারিনি।

আমাদের কথার মাঝে প্রীতম হঠাৎ ছাদে এসে বলল,

— তোমরা এখানে বসে গল্প করছ আর আমি সারা বাড়ি খুঁজে মরছি। কতক্ষণ এখানে আছো তোমরা? মা ওই দিকে তোমাদের খাওয়ার জন্য ডাকছে।

প্রীতম কে বললাম,

— তুই যা আমরা আসছি।

প্রীতম নাছোড়বান্দার মত সাফওয়ানের পাশে এসে তার হাত ধরে টেনে হিচড়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল আগে চলো পরে কথা বলবে তোমরা। এসো এসো

সাফওয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— খাওয়ার পরে বাকিটুকু বলবো।

আর এদিকে আমি হাজারটা প্রশ্নের মধ্যে ডুবে গেছি। সাইমা যদি সাফোয়ানকে এতটাই ভালবাসবে তাহলে এনগেজমেন্টের কথা শুনে কেন ভয় পেল এবং আতঙ্কে মুখটা রক্তশূন্য হয়ে গেল।

তারমানে সায়মা যা বলেছে সব মিথ্যে কথা। আমার সাফওয়ান কেউ কতটা বিশ্বাস করব আমি? কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। উফ উ ফ প্রীতমকে এখনি আসতে হলো।

আমায় বাকিটুকু শুনতেই হবে না হলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর ও আমি পাব না। আর না পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
#প্রীতিলতা ❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#১৯_তম_পর্ব🍂

পুরো টেবিল জুড়ে আম্মু তার জামাইয়ের জন্য এলাহী কাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছে ‌। কি নেই এখানে সরষে ইলিশ, চিংড়ি মাছের মালাইকারি,তেল কই, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, পোলাও,পায়েস, সালাদ।

চোখ বুলিয়ে শেষ করতে গিয়েই তো আমার চোখ ব্যথা হয়ে গেল আর এই ব্যাটা এত খাবে কি করে? কোথায় তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে বাকিটুকু বলবে তা না রান্নার যা বহর দেখছি খেতে খেতেই তো দুইদিন পার হয়ে যাবে।

সাফওয়ান হাত ধুয়ে এসে টেবিলে বসতেই চোখ চড়ক গাছ। দেখতে পেলাম ভয়ে তার মুখটা চুপসে গেছে। আহারে বেচারা…!

আমার মা আজ হাতে করে তার সকল ডায়েটের বারোটা বাজাবে। বেশ হয়েছে, একদম ঠিক হয়েছে।

সাফওয়ান এবার মুখ খুললেন,

— মামনি এত খাবার ?

আমার মা তার প্লেটে পোলাও বেড়ে দিতে দিতে বলল,

— আমি জানতাম প্রীতমের জন্মদিনে আমার মেয়ে জামাই ঠিকই আসবে আর প্রথমবার আমার মেয়ে জামাই আমাদের বাড়িতে আসছে আয়োজন করতে হবে না এই তো তাড়াহুড়োর মধ্যে এই টুকুই আয়োজন করতে পেরেছি।

আমি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারের উপর দুহাত ভাঁজ করে রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আম্মুর কথা শুনে চেয়ার নিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম।

এটাকে সামান্য আয়োজন বলে…..! উরি মা রে তাহলে বড় আয়োজন কাকে বলে রে ভাই?এই যে আয়োজন করেছে এই যদি আমি একা রান্না করতে যায় তো চোখের জল নাকের জল এক হয়ে যাবে।
আমার।

আম্মু আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল,

— কি হইছে একটু কোমর সোজা করে দাঁড়ায় থাকা যায় না। ঠুস ঠাস করে চেয়ার নিয়ে পড়ে যাচ্ছিস।

আমি চেয়ারটা টেবিলের সাথে সোজা করে লাগিয়ে রেখে মায়ের উদ্দেশ্যে বললাম,

— আমি ঠিক আছি কিন্তু তোমার এতো এতো রান্না গুলো তোমার জামাই বাবাকে খাওয়ালে তিনি ঠিক থাকবেন কিনা সন্দেহ।

আম্মু আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল কি বললি

না না কিছু বলিনি খাওয়াও খাওয়াও তোমার জামাই বাবাকে খাওয়াও। তা আমাদের কপালে কি কিছু জুটবে নাকি দেখেই পেট ভরতে হবে।

আম্মু আমাদের সামনে প্লেট দিয়ে বলল ,

তোরাও খেতে বস অনেক বেলা হয়ে গেছে।

আমি প্রীতমকে ডাক দিলাম। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম প্রিতমের হাত ধরে পুতুল হেলতে দুলতে এসে ডাইনিং এর চেয়ারে বসলো। আমি ওর সামনের প্লেটটা সোজা করে তাতে পোলাও তুলে বললাম,

— কি দিয়ে খাবি পুতুল সোনা?

— আমি পোলাও আর সরিষা ইলিশ খাব।

ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে গেল। আমি নিজেই ঠিকমতো ইলিশ মাছ বেছে খেতে পারি না। ওকে খাওয়াবো কি করে? পুতুলের কথার প্রতি উত্তরে মা শব্দ করে হেসে উঠলো।

— মামনি ও খাওয়াবে তোমাকে ইলিশ মাছ বেছে। নিজেই খেতে পারে না। ও নাকি আবার ইলিশ মাছ বেছে তোমাকে খাওয়াবে। আমার কাছে এসো মামনি, আমি তোমাকে ইলিশ মাছ বেছে পোলাও দিয়ে খাইয়ে দেবো।

পুতুল কিছুক্ষণ দুই ঠোট চিপে আমার দিকে তাকিয়ে বসে থাকলো চেয়ারে। আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

— আমি পোলাও আর রোস্ট খাব। খাইয়ে দাও প্রীতিলতা।

আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তাড়াতাড়ি প্লেটে পোলাওয়ের রোস্ট তুলে নিয়ে ভাত মেখে ওর মুখে তুলে দিতে দিতে আম্মুর দিকে তাকালাম দেখলাম আম্মু সহ সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

— বাবা কি ভালোবাসে প্রীতিলতাকে। তার হাতেই খেতে হবে। একদিন একটু আন্টির হাতে খাওয়া যাচ্ছিল না।

পুতুল মুখের খাবার চিবিয়ে খেয়ে নিয়ে বলল,

— তুমি আমাকে ইলিশ মাছ বেছে দিও আন্টি রোস্ট খাওয়ার পরে আমি তোমার বাছা ইলিশ মাছ খাব।

আমরা সবাই ওর কথা শুনে হেসে উঠলাম।

প্রীতম এসে সাফওয়ানের পাশে বসলো। আর আম্মু সে তো তার মেয়ে জামাইয়ের প্লেটের উপরে সুন্দর করে একটা পাহাড় বানাই দিল।

সাফওয়ান অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। আমি ক্যাবলাকান্তের মতো একটা করে হাসি দিচ্ছি। আব তেরা কেয়া হোয়েগা কালিয়া হিহি হিহি।

________🌺🌺________

সাফয়ানদের খাওয়ার পর্ব শেষ হলো কিছুক্ষণ আগে। একটা বিষয় দেখে অবাক ও সাথে খুশি হলাম যে সাফোয়ান আম্মুকে নিরাশ করেনি। আম্মু যত্ন করে যাই মেয়ে জামাইয়ের প্লেটে তুলে দিয়েছে সাফওয়ান তার সব ই অতি তৃপ্তি সহকারে খেয়েছে। খাবারের অপচয় করিনি। যেটুকু খেতে পারবে। সেটুকুই প্রত্যেকটা আইটেম থেকে নিয়েছে।

আম্মু আজ মেয়ে জামাইকে খাইয়ে অনেক সন্তুষ্ট। শেষে প্লেটে মিষ্টি আর দই তুলে দিতে গেলে সাফওয়ান বাধা দিয়ে বলে,

— মামনি এতক্ষণ কিন্তু তোমার ছেলে তোমার সব কথা শুনেছে। তুমি যা যা প্লেটে তুলে দিয়েছো সব কিন্তু আমি তৃপ্তি ভরে খেয়েছি। সত্যি বলতে পেটের মধ্যে আর এক ফোটাও জায়গা নেই। মিষ্টি আর দুই পরে খাব এখন আর নয়।

— আর তোমার রান্না এককথায় দুর্দান্ত । বাহিরে এসে এত খাবার কিন্তু আমি কখনো খাই নি। এবার বুঝেছি প্রীতির হাতের রান্না কেন এত সুন্দর।

লাস্টের কথাটা কানে আসতেই চমকে উঠলাম। তাকিয়ে পড়লাম সাফওয়ানের দিকে। উনি কি আদৌ সেই সাফওয়ান। নাকি এই বাড়িতে আসার আগে ওনাকে জিনে ধরেছে। আমার আম্মুকে ও মামনি বলছে আবার আমার হাতের রান্নার প্রশংসা করছে।

সাফানের মুখে আমার হাতের রান্নার প্রশংসা শুনে আম্মু খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

— তুমি যাও বাবা উপরে গিয়ে বিশ্রাম করো।

এই প্রীতম তোর ভাইয়াকে নিয়ে যা। পরে প্রীতমের সাথে সাফওয়ান রুমে চলে গেল। পুতুলেরও খাওয়া শেষ তাই পুতুল ও তাদের পিছন পিছন চলে গেল।

আমি আর আম্মু এবার খেতে বসলাম। আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি জ্বলজ্বল করছে। আমাকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বললেন,

ভাগ্য করে সত্যিই আমি একটা মেয়ে জামাই পেয়েছি। এত বড় লোকের ছেলে হওয়ার পরেও কত তৃপ্তি সহকারে গরিবের ঘরে ভাত খেলো। প্রিতমের সাথেও দেখলি কত মিলেমিশে চলছে। আবার তোর রান্নার প্রশংসা করলো।

মায়ের কথা সবগুলো শুনে আমার মনের মত আলাদা একটা শান্তি অনুভব করলাম । মুখে বিড় বিড় করে কয়েকবার আওড়ালাম,” আমার জামাই”।

_______🌺🌺_______

দই আর মিষ্টির ট্রে নিয়ে আমার রুমে আসলাম আমি। প্রথমে প্রীতমের রুমে গিয়ে দেখি সাফোয়ান সেখানে নেই। পরে প্রীতম বলল যে সাফওয়ান নাকি আমার ঘরে গেছে। রুমে এসে দেখলাম আমার পরিপাটি ছিমছাম রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছেন তিনি। আমার রুমে তেমন কিছুই নেই কিছু প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ছাড়া।

দই আর মিষ্টির ট্রেটা বিছানার ওপরে রেখে তাকে বললাম খেয়ে নিন মা পাঠিয়েছে।

সাফওয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— তোমার রুমটা খুব সুন্দর। আর ওয়াল আর্ট গুলো তো আরো বেশি সুন্দর। তোমার হাতের কাজ সত্যিই প্রশংসা যোগ্য আর এই মেডেল গুলো কিসের জন্য পেয়েছিল?

আমি স্থির দৃষ্টিতে সাফওয়ানে দিকে তাকিয়ে থাকলাম এই এক মাসে হয়তো তিনি আমার সাথে এত কথা একসাথে বলেননি। কিন্তু আজ উনার কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা।

আমি খাটে বসে দেয়ালে ঝোলানো মেডেল গুলোর দিকে পুরাতন স্মৃতি গুলোর মধ্যে ডুবে গিয়ে বললাম

— এগুলো আমি স্কুলে থাকতে পেয়েছিলাম। জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৮ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল “সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় খুলনা।”

যার তিনজন প্রধান প্রতিযোগী ছিলাম আমি , তন্বী আর হিয়া ট্রফি তো স্কুল রেখে দিয়েছিল কিন্তু এই মেডেলগুলো আমাদের পরিয়ে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ জাফর ইকবাল আর প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুর হক।

কথাগুলো বলা শেষ হতেই ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। ইস্ আবার যদি সেই লাল সাদা স্কুল ড্রেসটা গায়ে জড়িয়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ফিরে যেতে পারতাম সেই স্কুলের বারান্দায়। কতটাই না সুখময় ছিল সেই দিনগুলো।

২০১৭ চ্যাম্পিয়ন কিন্তু আমরা ছিলাম খুলনা জিলা স্কুল এটা ভুলে যেও না কিন্তু। আর চ্যাম্পিয়নশিপের প্রধান প্রতিযোগী কিন্তু আমি ছিলাম।

আমি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে গাল বাঁকিয়ে হেসে বললাম,

— তাহলে তো আপনি আমার চিরকালের প্রতিদ্বন্দ্বী।

তা ঠিক বলেছ। যেহেতু দুইজনই চ্যাম্পিয়ন ছিলাম বিতর্কতে সেহেতু একদিন প্র্যাকটিকাল প্রতিযোগিতা করাই যাই বল।

আমি তার দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললাম,

— এখন কি কম হচ্ছে নাকি যে আলাদাভাবে প্রাকটিক্যাল প্রতিযোগিতা করতে হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে আমরা এভাবে এক জায়গায় বসে থাকবো তার কি গ্যারান্টি আছে। এমনও তো হতে পারে এটাই আপনার সাথে আমার শেষ যাত্রা।

সাফওয়ান বোধহয় কিছুটা চমকে উঠলেন। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। আমি উঠে চলে আসছিলাম তো আমার ডান হাতটা আঁকড়ে ধরে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

— বাকিটুকু শুনবেনা?

আমি তার দিকে না তাকিয়েই দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বললাম আপনার ওই অর্ধেক বিয়ের কাহিনী আমার শুনতে ইচ্ছা করছে না।

সাফওয়ান হাসলেন। তারপর আমার হাতটা জোরে টান দিয়ে তার বুকের সাথে আমার পিঠ ঘেঁষে বসিয়ে দিয়ে দুই হাতে আমাকে আটকে দিয়ে বললেন,

— আরে শোনো শোন, না হলে দুপুরে যে কটা ভাত খেয়েছ ওগুলো আর হজম হবে না।

ঐদিন এনগেজমেন্টের সন্ধ্যায় ভাইয়াদের পরে আমার আর সায়মার এনগেজমেন্ট ও হয়ে গিয়েছিল। খালামনির আমার হাত আঁকড়ে ধরে বলা কথাগুলো আমি ফেলতে পারিনি। তোমাকে আগেই বলেছি আমার জীবনে খালামণির অবদান অনেক।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সায়মার মুখে আমি কোন হাসি দেখতে পাই নি। মুখ দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে কি সে আদৌ খুশি হয়েছে নাকি আপত্তি আছে । অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমরা সবাই যে যার বাসায় চলে আসি এবং আমার বাবা আগ বাড়িয়ে ই একই দিনে দুই ছেলের বিয়ে ঠিক করেন তাও সামনের সপ্তাহে । মানে এগুলো তাদের আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিল।

রাতে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় হঠাৎ আমার সেই বন্ধুটার কথা মনে পড়ল যে বলেছিল বুয়েটের এক শিক্ষকের সাথে নাকি সায়মার সম্পর্ক আছে। আমি তাকে ফোন করলাম। আমার ব্যাপারে তার কাছে শুনলাম সে সিউরিটি দিয়ে বলল আমাকে যে যা সে যা বলেছে সব সত্য। ফোন কেটে দিয়ে এবার আমি সাইমাকে ফোন দিলাম। দেখলাম ফোন এনগেজড। পরে কিছুক্ষণ পরে সাইমা আমাকে কল ব্যাক করে তাড়াহুড়ো করে বলে,

— আসলে বাসা থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেবে আমি নিজেও জানতাম না। তোমার এই বিয়েতে মত আছে।

ওর কথার উত্তর না দিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলাম,

— তুমি কি অন্য কাউকে পছন্দ করো সাইমা?

সাইমা ওপাশে চুপ হয়ে গেছে আর একটা কথাও বলছে না। আমার সন্দেহ আরো গাড়ো হয়। ও হঠাৎ বলে ওঠে ,

— না না আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। এ বিয়েতে আমার কোন সমস্যা নেই।

সাফওয়ানকে থামিয়ে দিয়ে আমি তাকে বললাম,

— তাহলে বিয়েটা হলো না কেন? আর ও কানাডা চলে গিয়েছিল বলে, সেদিন তো আমাকে তাই বলল। ও নাকি অনেক সুন্দর একটা অপরচুনিটি পেয়েছিল।

সাফওয়ান গাল বেঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

অপরচুনিটি না ছাই। ওর ওই বুয়েটের স্যারের সাথেই পালিয়ে ছিল সেদিন।বউ কমিউনিটি সেন্টার থেকে পালিয়ে গেছে।

বিয়ের ঐ ভরা মঞ্চে ওতগুলো আত্মীয়-স্বজনের সামনে আমি একটা কার্টুনে পরিণত হয়েছিলাম। আমার ইউনিভার্সিটি টিচার আমার ফ্রেন্ডস সবাই ছিল সেখানে। আমার বাবার ওই হটকারী সিদ্ধান্তের জন্য সেদিন অনেক অবদস্থ হয়ে ছিলাম আমি।

তারপরও সেদিন বড় ভাইয়া আর সামিরা আপুর বিয়ে সম্পন্ন হয়। খালামণি আমার হাত ধরে বলেছিল,

— মাফ করে দে সাফু বাবু। আমি বুঝতে পারিনি ওই মেয়ে এমন করবে। আর দয়া করে এই কথা তুই সায়েম কে জানাবি না ও তো এখন ইন্টার্নশিপের জন্য বান্দরবনে আছে। জানতে পারলে ওই মেয়ের মুখ আর কখনো সায়েম দেখবে না।

খালামনির কথাগুলো শুনে ওই কমিউনিটি সেন্টারে আরেক মুহূর্ত দাঁড়াইনি আমি বেরিয়ে চলে এসেছিলাম। আমার ফ্রেন্ডরা তো আমাকে বারবার বলতে লাগলো তোকে সাবধান করেছিলাম কিন্তু তুই শুনিস নি। দেখ গরিবের কথা বাসি হলেও মিষ্টি হয়।

বাড়ি এসে পোশাক পরিবর্তন করে কাউকে কিছু না জানিয়ে ফোন অফ করে ছোট একটা ব্যাগ গুছিয়ে রওনা হয়ে গেলাম উদ্দেশ্যহীন পথের দিকে। সেখান থেকেই আমার ভ্রমণের নেশা চেপে বসেছে। যখনই মনটা খারাপ হয়। বা মনে হয় যে আমার চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে গেছে তখনই আমি বেরিয়ে পড়ি মুক্ত বায়ু সন্ধানে।

পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম বুয়েটের ওই স্যারের অন্য আরেক জায়গায় আগেই বিয়ে হয়েছিল সেটা জানতে পেরে ঢাকায় সেই হোস্টেলে কয়েকদিন ছিল সায়মা। বাড়িতে আসার তো কোন উপায় ছিল না ওর ।তারপরে কানাডা চলে গিয়েছিল। এই কয়েকদিন আগে ফিরেছে কানাডা থেকে। ফিরে এসেই আবার….

কৌতুহলীভাবে প্রশ্ন করলাম,

— আবার কী?

— প্রথম অপশনটাকে হারিয়ে এখন দ্বিতীয় অপশনের পিছনে ছুটছে।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঝের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললাম,

— তা সমস্যা কোথায় বলুন। আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না। সাইমাকে না হয় একটা সুযোগ দিন।

সাফওয়ান দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে দুই হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে মুখটা নামিয়ে এনে আমার কানের কাছে বললেন,

— আমাকে কি বাজারের আলু পটল পেয়েছো? যে যাকে ইচ্ছা তাকে অধিকার দিয়ে বসে থাকবো। মনের সিংহাসনে বসার অধিকার মাত্র একজনের থাকে বুঝেছ।

তার বুকে পিঠ ঘেষে বসে থাকা অবস্থায় মাথাটা তার কাঁধে এলিয়ে দিয়ে ধিমে গলায় বললাম,

— তা পেয়ে গেছেন বুঝি…!

সাফওয়ান নিজের হাতের বাধন আরও শক্ত করে বললেন,

— হয়তো।

কথাটা শুনে অভিমানে চোখে পানি চলে আসলো আমার। ধরা গলায় বললাম,

— সে কি আপনার খুব বেশি আপন….?

আমার কাধের কাছে তার উষ্ণ নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব অনুভব করলাম। তৎক্ষণাৎ আমার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে জড়ানো কন্ঠে বললেন,

— হুমমমম খুবই….!

আমি আবেশে চোখ বুজে নিলাম।

লাস্টের লাইনটা কান পর্যন্ত পৌঁছালেও মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছালো না আমার।

#চলবে….❣️

👉[ আসসালামু আলাইকুম।

আজকে আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন নিয়ে এসেছি?

গল্পটা কি আর আপনাদের কাছে ভালো লাগছে না?
কিছু পাঠক ছাড়া অধিকাংশ পাঠক Nice/next এর বেশি মন্তব্য করেন না।
গল্প সম্পর্কে তেমন কোনো অনুভূতিপূর্ণ মন্তব্য আমি পাই না। আর

গল্পটা ভালো না লাগলে আমাকে জানাতে পারেন। তাহলে গল্পটা দাওয়া আমি বন্ধ করে দেব। আপনাদের জন্যই গল্প লিখি। আর আপনাদের যদি
ভালো না লাগে তাহলে আর আপনাদের কেন বিরক্ত করব।😊]

আর একটা কথা একদিন পরপর গল্প দিলেও পর্বের আকার থাকে কিন্তু অনেক বড়। সেহেতু আপনাদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। শুভ রাত্রি।
চলবে….❣️

[ কাল আরো একটা পর্ব পাবেন। সবাইকে ধন্যবাদ ।শুভ রাত্রি। আর সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন 🥳😊]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here