প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:০৬
#নিহীন_রুবাইয়াত
–নিহী এখন কেমন আছিস?
–আমি এখন কোথায় আছি?আমার মাথা ঘুরছে।(মাথায় হাত দিয়ে উঠার চেষ্টা করলাম,মা আমাকে উঠতে দিলো না)
–তুই সুয়ে থাক মা তোর শরীর ভালো না।
–মা তুমি?আমি বাসায় কিভাবে….আমি তো…
–হ্যা মা তুই ভার্সিটিতে কিভাবে যেন অজ্ঞান হয়ে গেছিলি মীরা আর একটা ছেলে এসে তোকে দিয়ে গেছে বাসায়।তুই সুয়ে থাক,জানিস আমাদের সবার কত্তো চিন্তা হচ্ছিলো।তোকে ওরা বাসায় এনেছে দুপুর ৩ টার দিকে আর এখন বাজে রাত ১:৩০।তোর বাবা,দাদি,ফুফু ফুফা,আপু সবাই এই ঘরেই ছিলো কিছুক্ষন আগে ওদের পাঠিয়েছি।তুই সুয়ে থাক মা আমি তোর জন্য স্যুপ করে আনি।
মা উঠে চলে গেলো।আমি সকালের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম,আমাকে কেউ আটকে দিলো আমি কান্নাকাটি করলাম কিন্তু কেউ দরজা খুললো না।একটা গান শুনলাম তারপর আহ,তারপর না মনে পড়তেছে না।মাথা চেপে ধরলাম,খুব বেশি করে মনে করতে চাইছি মনে পড়ছে না।রাগ হচ্ছে,কেন পড়ছে না??
–নিহীন তুই উঠেছিস কেন?একা একা কেন উঠতে গেলি বলতো
–………………..
–হা কর দেখি স্যুপ টা খাইয়ে দিই
–আমি খাবো না মা
–খাবো না বললে হবে না হা কর,এরপর ওষুধ খাওয়া লাগবে
মা জোর করে খাইয়ে দিলো।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।একটা সময় মা ঘুমিয়ে পড়ে আমি ঘুমাতে পারিনা।ভাবছি আমার সাথে কে এমন করলো আর আমাকে রুম থেকে বের করলোই বা কে?মীরা তো নিশ্চয় জানবে ওরে একটা কল দিই..ফোন টা খুজতে লাগলাম কিন্তু কিছুক্ষন পর খেয়াল হলো আমার তো ফোনই নেই..নিজের রাগের জন্যই নিজের ওপর রাগ লাগছে এখন।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছি।
–নিহু,ভালো আছিস এখন?(চোখ মেলে দেখি মীরা)
–মীরা,দোস্ত আমাকে তুই কই পাইছিলি?আর কখন?আমার কিচ্ছু মনে পড়ছে না জানিস।মনে করতে পারছি না কেন আমি?
–রিলাক্স নিহু,তুই শান্ত হ আমি সব বলছি..আমি তোকে পাইনি তোকে পেয়েছিলো(মীরা সোফার দিকে ইশারা করে।সোফায় শাওন বসা)
–আরে আরে নিহীন উঠো না,তুমি সুয়ে থাকো।
–তুমি কিভাবে আমাকে পেলে?
–সব বলবো তার আগে বলো তুমি ওখানে আটকে গেলে কি করে?
–আমার শাড়িতে কে যেন জুস ফেলে দিছিলো,আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম কিন্তু আমার হাত টেনে ধরে কে ওই ঘরটাই আটকে দেই,আমি মুখ দেখিনি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কেউ আমার আওয়াজ পাইনি হয়তো এক্টা সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তারপর আর…
–আচ্ছা।ফাংশন শেষে মীরা তোমাকে খুজছিলো আমি ওর কাছে গিয়ে জানতে পারি তোমাকে নাকি ও অনেক্ষন ধরে পাচ্ছে না।তোমার ফোন না থাকায় কল ও দিতে পারছে না।আমি ভেবেছিলাম তুমি বাসায় চলে এসেছো কিন্তু পার্কিং সাইডে তোমাদের ড্রাইভার কে দেখি তখন খুব চিন্তা হচ্ছিলো।মাইকে এনাউন্স করলাম তোমার খোজ নেই।তখন এক সিনিয়র ভাই বললো তুমি নাকি ওইদিকে গেছো আমি মীরা আরো অনেকেই ছুটে যায় দেখি তুমি ওই রুমটাই পড়ে আছো কিন্তু রুম তো লক ছিলো না…
–কি?রুম লক ছিলো না?
–হুম নিহু ও ঠিক বলছে
–আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।এটা কিভাবে সম্ভব।
আরো কিছুক্ষন থাকলো তারপর চলে গেলো।আমি ভেবে পাচ্ছি না আমার সাথে এমন কে করবে?কার শত্রুতা আছে আমার সাথে?ভার্সিটিতে তো একটাই মানুষ আছে যার সাথে আমার…..আচ্ছা উনি করেননিতো?ধুর আন্দাজে ওনাকেও দোষ দেয়াটা অন্যায়…
এভাবেই কেটে গেলো তিনদিন..আমি ভেবেই পেলাম না।সন্ধ্যায় শুয়ে আছি বাবা রুমে আসলো
–মা কেমন আছিস এখন?
–ভালো আছি বাবা..
–তোর জন্য অনেক চিন্তাই ছিলাম রে এখন তোকে দেখে একটু চিন্তা কমলো
(আমি হালকা হাসলাম)
–মা তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি..
–কি জিনিস বাবা?
–এই নে,নিজেই দেখ
আমি প্যাকেট টা খুললাম,,
–আইফোন!!
–হ্যা
–থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ বাবা।লাভ ইউ,
বাবার গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিলাম একটা বাবাও আমার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো।আমার আগের নাম্বারটাই আছে দেখি।
রাত ২ টা বাজে,হটাত একটা কল আসলো ঘুম ভেঙে গেলো।নাম্বার টা আননোন চিনতে পারলাম না।কেটে গেলো,আবার কল দিলো আমি রিসিভ করে হ্যালো বলেছি কেটে দিলো।
–আজব তো!রাত দুইটার সময় কল দিয়ে ঘুম ভাঙাই আবার কথা না বলেই কেটে দেই।ফালতু পোলাপান কোথাকার…যত্তসব
ফোন রেখে আবার শুলাম এবার একটা মেসেজ এলো,লক স্ক্রিন থেকে দেখলাম সেই নাম্বার থেকে মেসেজ
‘আমাকে ক্ষমা করে দিও নিহীপাখি তোমাকে অনেক বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি,আমি যদি জানতাম বন্ধ ঘরে তোমার দম আটকে আসে আমি কোনদিন ওমন করতাম না’
–কে এটা?আমাকে নিহীপাখি বললো আবার ক্ষমা চাইলো।ব্যাপারটা কি?আমি অনেকবার কল দিলান নাম্বার অফ। কিছুই মাথাই ঢুকছে না।আর তাছাড়া আমাকে তো ওই নামে কেউ ডাকে না খালু ওই পিচ্চিটা কোন ভাই সে একদিন চিঠিতে ওয়েট ওয়েট।।ওই লোকটাই কি তাহলে আমাকে ওইভাবে….কি খারাপ!!আমাকে এতোদিন কতোই না কেয়ার করার নাটক করছে আর নিজে কিনা…শয়তান বেটা একবার তোরে পাই আস্ত রাখুম না।তুই তো আর আমকে চিনিস না।
সকালে খুব জোর করে ভার্সিটিতে এলাম মা আসতে দেবে না তাও অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে এসেছি।
–নিহু সেই কখন থেকে ভার্সিটি চক্কর দিচ্ছি তুই কি করছিস বলত।আমার তো পা ব্যাথা করছে।
–……….
–ধুর আমি আর হাটতে পারবো না,তুই যেখানে যাবি যা।
মীরা ঘাসের উপর বসে পড়লো।আমি খুজেই চলেছি কিন্তু পেলাম না।ওই পিচ্চি ছেলেটা কোথাও নেই।কিন্তু ওর যে খুব দরকার,তা না হলে তো লোকটার ব্যাপারে কিছুই জানতে পারবো না আমি।খুজে পেলাম না।
(দেখতে দেখতে কেটে গেছে ছয় মাস।আমার সাথে কোন অস্বাভিক কিছু ঘটেনি আমিও আগের ব্যাপার টা নিয়ে মাথা ঘামাই না।এদিকে শাওনের সাথে আমার অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে,শুধু বন্ধুত্ব বললে ভুল হবে,ও হয়তো আমকে পছন্দ করে তবে আমি ওকে বন্ধুই ভাবি আপাতত,ফিউচারে কিছু হতেও পারে)
বর্ষাকাল এখন আমি আজ গাড়ি আনিনি,একটা রিক্সাও নেই,কি করবো ভাবছি হটাত শাওন আসল,
–এই যে মিস বাসায় যাবেন না??
–……….(মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছি)
–কি হয়েছে মন খারাপ কেন?
–গাড়ি আনিনি আর রাস্তাই একটা রিক্সাও নাই।কিভাবে যাবো?
–ওহ এই ব্যাপার তুমি চাইলে আমার সাথে শেয়ারে ছাতার নিচে আসতে পারো(মাথা চুলকাতে চুলকাতে সে বলে আমিও কিছু না বলেই ছাতার নিচে চলে যাই)
–নিহীন
–হুম?
–তোমার কদম ফুল কেমন লাগে?
–ভালো লাগে অনেক..
–আচ্ছা।নাও তোমার বাসায় চলে এসেছি।
সত্যিই তো বাসা এসে গেছে,গল্প করতে করতে কখন যে চলে এসেছি খেয়াল করিনি।আমি ওকে বাই বলে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়ি।
ফ্রেস হয়ে ফোন চেক করে দেখি শাওনের মেসেজ
‘ধন্যবাদ আমার সাথে এটুকু সময় হাটার জন্য’
আমি মেসেজটা পড়ে মুচকি একটা হাসি দিলাম।
রাতে শাওনের সাথে প্রায় ২ টা পর্যন্ত চ্যাট করলাম,
–নিহীন,আমার না একটুটু কাজ আছে,আমি কাল কথা বলবো।এখন বাই প্লিজ কিছু মনে করো না
–ওকে।আর কি মনে করবো।বাই তাহলে টেক কেয়ার
–গুড নাইট।
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম,ভোরে নামাজ পড়তে উঠেছি।নামাজ শেষে সকালের সূর্যটা দেখতে বেশ ভালোই লাগে,আমি ব্যালকনিতে যেয়ে তো শকড,,ফ্লোরে একগুচ্ছ কদম আর একটা চিঠি।কিন্তু এটা কে রেখে গেলো এখানে,রুম তো ভিতর থেকে লকড ছিলো তাহলে কেমনে কি?কে এসে আমার বেলকনিতে রাখলো?চিঠিটা খুলে দেখলাম,
“এই একগুচ্ছ কদম শুধুই তোমার”
আমার মাথায় কিছুই আসছে না।আচ্ছা এটা শাওনের কাজ না তো??
ভার্সিটিতে যেয়ে শাওনকে ধরলাম কিন্তু ও বলল করেনি এমন কাজ।অনেক বার শুনলাম কিন্তু ও একি কথা বলছে ও জানেনা।আমার মনে হলো ও মিথ্যা বললো।
কেটে গেল আরো কয়েক মাস,ফাইলাম এক্সাম কাছেই প্রায়।শাওনের সাথে এখন রাতে ওতো কথা বলিনা,সারা বছর ফাকি দিছি তাই এখন সব পড়া লাগছে।একদিন রাত জেগে পড়ছি একটা মেসেজ আসলো,নাম্বারটা তো সেই লোকটার,হ্যা আমি তো ওইদিন ওনার নাম্বার শয়তান বেটা দিয়ে সেভ করে রাখছিলাম যাতে পরে নক দিলে চিনতে পারি তাড়াতাড়ি মেসেজ সিন করলাম,
‘একটু বেলকনিতে আসবে নিহীপাখি।তোমাকে একবার দেখেই চলে যাব’
আমি বেশ শকড হলাম,আমাকে বেলকনিতে যেতে বললো।যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম কিন্তু আমার সাথে ওনার করা অন্যায়টার কথা মনে পড়ে গেলো,খুব রাগ হল।
__’নিহীপাখি আসো না প্লিজ’
__’কে আপনি?’
__’সময় হলে জানতে পারবে,প্লিজ এখন একবার এসো না প্লিজ।তোমাকে না দেখে পড়ায় মন বসাতে পারছি না।প্লিজ’
__’যাবো না’
__’আই বেগ ইউ একবার এস,খুব মশা তোমার বাসার নিচে।দাড়াতে পারছি না।প্লিজ’
ওনার মেসেজটা দেখে খুব হাসি পেয়ে গেল,ঠিক হয়েছে আরো মশা কামড়াক আমি তো যাবো না।বইটা হাতে নিলাম হটাত মনে হল আমি কি পাগল?যাকে এতদিন খুজেছি সে আমার বাসার নিচে দাড়িয়ে আর আমি কিনা তাকে দেখতেতে গেলাম না ধুর…..তাড়াহুড়া করে দৌড়ে বেলকনিতে গেলাম কিন্তু নিচে কাউকেই দেখলাম,মনে হয় চলে গেছে।সত্যিই তো যে মশা তাতে ৫ মিনিট দাড়ানো যাই না।রুমে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
মেসেজ আসলো,,
–থ্যাঙ্কু ইউ সো মাচ নিহীপাখি,আমার খুব ভালো লাগছে তোমাকে দেখতে পেয়ে।অনেক অনেক থ্যাঙ্কস।
–আপনি আমাকে দেখতে পেয়েছেন?
–হ্যা।এই প্রথমবার তোমাকে সামনা সামনি হিজাব বাদে দেখলাম,শুধু হিজাব কেন বলছি ওরনা বাদে দেখলাম,খুব সুন্দর লাগছিলো গো তোমাকে(লজ্জার ইমুজি)
এ্যা..শীট!আমি তো তাড়াহুড়া ওরনা নিয়ে যেতে ভুলে গিছিলাম বেশ লজ্জা লাগলো কিন্তু নিচে তোল কেউ ছিলো না তাহলে…..
আবার মেসেজ,
__তোমাকে লুকিয়ে দেখেছি নিহীন তুমি হাজার চেষ্টা করেও দেখতে পারবে না।ভালো থেক নিহীন,,লাই ইউ
আমি মেসেজ দিলাম আপনি কে কিন্তু নো রিপ্লাই,বেশ সময় কেটে গেলো।কল দিলাম নাম্বার অফ।আমি মীরাকে কল দিলাম কিন্তু ওউ কিছুই বুঝলো না।
ফাইনাল এক্সাম শেষ।এ কদিনে রোজ আমি শাওন কে খুটিয়ে দেখি যে লোকটা ও কিনা।কিন্তু ওর কথাবার্তা ওনেক কনফিউজড করে দেই আমাকে।আজ সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম দিন আজও গাড়ি একা চালিয়ে এসেছি যেমনটা এক বছর আগে এসেছিলাম কিন্তু সেদিন যা ঘটেছিলো তা ভাবলেই কলিজা শুকিয়ে যায়।আজ খুব সৌভিক ভাইর কথা মনে পড়ছে।
–আচ্ছা কোথায় উনি?হটাত করেই ক্যাম্পাসের ক্রাশ বয়য় উধাও হয়ে গেলো কেন?নবীন বরনের দিন থেকে সৌভিক বা শিবলি কারোর সাথেই দেখা হয়নি।মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে খুজেছি কিন্তু পাইনি।ধুর ওনাদের কথা ভাবছি কেন আমি?
গাড়ি পার্ক করে ভিতরে গেলাম।ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ের দিকে কেমন যেন ভীড় জমে আছে।আমিও এগিয়ে গেলাম..
–সৌভিক ভাই…
আমার কথাই সবাই তাকিয়ে পড়লো।কিছুক্ষন পর আমাকে দেখে উনি উঠে দাড়ালেন।রুম্পা আপু বলে উঠলো
–কিরে গান গাইবি না??
–ফালতু মেয়ে ছেলের সামনে আমি গান গাইবো না।
কথাটা আমার দিকে তাকিয়ে বলাই সবাই আমার দিকে তাকালো।আমার খুব খারাপ লাগল আজ এতোদিন পর দেখা হলো তাও উনি এমন করলেন।আমি আর এক মুহুর্ত দাড়ালাম না চলে আসলাম ওখান থেকে….
চলবে…
#প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:৭
#নিহীন_রুবাইয়াত
–সবার সামনে উনি আমাকে অপমান করলেন,আমার মতো মানুষের সামনে নাকি উনি গান গাইবেন না।বলি আমার সামনে গান গাইলে কি মান খোয়া যেত?ফালতু লোক,সবসময় আমার মন খারাপ করে দেয়।
–এই নিহীন একা একা কি বিড়বিড় করছো এখানে বসে??
(শাওনের কথাই খেয়াল করলাম,আমি পুকুর পাড় থেকে ওনার কথা ভাবতে ভাবতে মাঠের মাঝখানে এসে গেছি।)
–নিহীইইইইন…কই হারায় গেলে??
–না না কই আর হারাবো?(হাসার চেষ্টা করে)
–এখানে দাড়িয়ে কি করছো?ক্লাসে যাওনি কেন?
–ইশ!ক্লাস আছে তো…চলো চলো
–আরে দাড়াও দাড়াও।ক্লাস অলরেডি শুরু হয়ে গেছে এখন যেয়ে লাভ নেই পরের ক্লাসে যেও।এবার বলোতো কি বিড়বিড় করছিলে?
–কিছু না।
–আমি তো তোমার বন্ধু আমাকেও বলবেও না।
(আমি না এই শাওনকে বুঝি না।যখন সামনে থেকে নরমাল ফ্রেন্ডদের মতো বিহেভ করে কিন্তু ম্যাসেজিং বা চ্যাটে কথা বলার সময় কেমন ফ্লার্টিং আর রোমান্টিক।)
–ওই..
–হুম
–কি বলছিলে।
–জানো আজ ওনার সাথে দেখা হলো কিন্তু উনি আমার সাথে আজকেও খারাপ ব্যবহার করলেন।
–উনি টা আবার কে?
–ওই সৌভ..না না কেউ না।
–আচ্ছা,ফার্স্ট ক্লাস প্রায় শেষের দিকে।
–হ্যা তাই তো চল ক্লাসে যায়।
–তুমি যাও আমি আসছি।
–ওকে…
শাওনকে বিদায় দিয়ে আমি চলে আসি আর শাওন ওর ফোন বের করে কাউকে কল দেই,,
–তোর প্রব্লেম টা কি বলবি?সবসময় রুড বিহেভ না করলে হয় না?(অনেক্টা রেগে কথাটা বলে সে)
–…………………..
–মেয়েটা অনেক ভালো আর কষ্ট দিস না।এভাবে আর কতদিন চলবি?
–……………………
–ঠিক আছে এটাই লাস্ট টাইম।এরপর আমি কিন্তু আর চুপ থাকবো না,সত্যিটা বলে দেবো।এখন ক্লাসে যাচ্ছি।বাসায় যেয়ে কথা হবে।
–…………………..
–ওকে বাই।
ক্লাস শেষ করে নিহীন আর মীরা হাটছে।মীরা বার বার নিষেধ করছে সৌভিকের কথাই যেন মন খারাপ না করে কিন্তু নিহীন তাও মুখটা গোমড়া করে আছে।মীরা কতো জোক বলে তার মুড অন করার ট্রাই করলো।তাতেও কাজ হলো না।
–নিহু আইসক্রিম খাবি?
–না।
–তোর ফেভারিট কুলফি মালাই ফ্লেভার।আমি খাওয়াচ্ছি।
–খাবো না
–না খেতে হবে।আমার খুব ইচ্ছা করছে তাই তোর ও খেতে হবে।
(মীরার কুলফি মালাই একদম পছন্দ না তাও সে আমার জন্য এটা খেতে চাচ্ছে বুঝলাম।বেশ ভালো লাগলো।আমার বেষ্টু সত্যিই আমাকে অনেক ভালোবাসে)
–ঠিক আছে।খাবো।
–ওকে তুই দাড়া আমি এক্ষনি নিয়ে আসছি।
মীরা রাস্তা পার হয়ে দোকানে গেলো।আমি দাড়িয়ে আছি।ভাবছি ওনার কথা,উনি তো ওমন না করলেও পারে।মীরা ডাক দিলো।
–নিহীইইইইইইন
–কি হয়েএএএএএএছেএএএএএ??
–একটু এদিইইকেএএ আই নাআআ।কুলফি নেই এখানেএএএ,অন্য কিছু নিতেএএএ হবেএএএএ।
ধুর আবার ওদিকে যাওয়া লাগবে।কিন্তু আমি তো রাস্তা পার হতে পারিনা।কি করবো এখন।না গেলেও মীরার খারাপ লাগবে।
আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে হাটা শুরু করলাম।আল্লাহ রক্ষা করো।আল্লাহর নাম নিয়ে রাস্তার মাঝ পর্যন্ত চলে গেলাম কিন্তু কি মনে করে ডান সাইডে তাকিয়েই ভয় পেলাম।একটা ট্রাক এদিকেই আসছে।আমাকে এখনি মেরে দেবে এই ভয় পেয়ে আমার পা থেমে গেলো,আমি এক পাও এগোতে পারলাম না।চোখমুখ খিচে কানে হাত দিয়ে চেপে ধরে দাড়িয়ে পড়লাম।শেষ মুহুর্তে আম্মু আর বাবার মুখটা মনে পড়লো কিন্তু আরো একটা চেহেরা ভেসে উঠলো।এক বছর আগে যেদিন প্রথম দেখছিলাম গাড়ির পাশে দাড়িয়ে ছিলেন উনি সেইদিনের ফেসটা।খুব জোরে ধাক্কা খেলাম মনে হলো।আমি এখনো চোখ বন্ধ করেই আছি।তবে কেন জানি না মনে হচ্ছে কেউ আমাকে খুব শক্ত করে ধরে আছে।আমি বেচে আছি কি মরে গেছি বুঝতে পারলাম না।
আমার মুখ ধরে কেউ ঝাকাচ্ছে,,
–নিহীন,নিহীন।তুমি ঠিক আছো??নিহীন,চোখ খোলো প্লিজ।
(আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম প্রথমে তারপর সামনে তাকাতেই দেখি সৌভিক ভাইয়া।ওনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব ভয় পেয়ে আছে।শীতকাল তাও ওনার কপাল,নাক ঘেমে গেছে।আমি বুঝতে পারছি না মৃত্যুর পরও ওনাকে আমার সামনে দেখতে পাচ্ছি।আচ্ছা আমি তো আর বেচে নেই তাহলে আম্মু বা বাবা কেন সামনে এলো না উনি কেন??)
–নিহীন কথা বলো..
–যখন বেচে ছিলাম তখন তো খালি অপমান করতেন এখন মারা যাওয়ার পর আইছেন কেন?(অভিমানী সূরে)
–বেচে ছিলে মানে?(উনি বেশ অবাক হলো)
–বেচে ছিলাম মানে আমি তো এখন মারা গেছি।ওই ট্রাকটা তো আমাকে মেরে দিয়ে গেলো।
(আমার এমন একটা কথা শুনে উনি হয়তো বুঝতে পারছেন না কিভবে রিয়াক্ট করবে।)
–আম্মু তোমার ছোট্ট মেয়েটা মরেই গেলো।তুমি ভালো থেকো।বাবা তুমিও…(আমি প্রায় কান্না করে দিয়েছি)
উনি এবার হেসেই দিলো।আমি ওনার দিকে রাগী একটা ফেস নিয়ে তাকালাম।উনি হাসি থামিয়ে দিলেন।
–আমি মারা গিয়েছি আর আপনি এতো খুশি হচ্ছেন?
উনি কিছুক্ষন নীরব হয়ে তাকিয়ে থাকলো তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে হোহহোহো করে হেসে দিলো।যে সে হাসি না পেট ধরে হাসছে।হাসতে হাসতে ফুটপাতে বসে পড়েছে।আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি।
–হাসছেন কেন?
–তোমার কথা শুনে।
–কি এমন বললাম আমি?
–ওই যে তুমি,,হাহাহাহহাহায়া তুমি হাহাহাহহাহহায়া
–না হেসে বলবেন?(আমি রাগ করে উঠলাম)
–বলছি বলছি।আগে আমাকে উঠাও।
উনি হাসিটা কোন রকমে থামালেন।আমি হাত বাড়িয়ে ওনাকে উঠতে সাহায্য করলাম।
–এবার বলেন।
–আচ্ছা তুমি এতো বোকা কেন?
–আমি বোকা হবো কেন?আপনি বোকা আপনার বৌ বোকা।
–হ্যা তা ঠিক আমার বৌ বোকা(উনি আবার হাসতে লাগলেন।চোখ ঢেকে ওনার হাসি দেখে আমি ক্রাশ খেলাম আবার।কিন্তু মনে মনে ওনেক কষ্ট পেলাম।আমি তো আর বেচে নেই।ক্রাশ খেয়েও লাভ কি?)
–হুম বোকা।আপনি তো অসভ্য একটা।বেচে থাক্তে তো ভালো করে কথাও বলেননি আর এখন এতো কথা।ঢং…
–আরে কি বেচে থাক্তে বেচে থাক্তে করছো?তোমার কিছু হয়নি।তুমি মরো নাই এখোনো।
–কিহ আমি ররিনি?
–না রে ভাই…
–সত্যি?
–হুম সত্যি?
–একটা চিমটি কাটেন তো?
–চিমটি কেন??
–আরে কাটেন তো আগে।
–ওকে।
উনি আমার হাতে খুব জোরে চিমটি কাটলেন।আমি ব্যাথায় আহ করে উঠলাম।কিন্তু একটু পরি খেয়াল হল আমার ব্যথা লেগেছে তার মানে এটা সত্যি।আমি মরিনি।
–আল্লাহ!আমি মরিনি এখনো।ইয়েএএএএ।।(আমি নাচতে শুরু করলাম)
উনি আমার দিক্র তাকিয়ে নীরবে হাসলেন,,আমি নাচতে নাচতে খেয়াল করলাম উনি তাকিয়ে আছেন।
–ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?(উনি যেন লজ্জা পেয়ে গেলো,অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিল কিন্তু সাথে সাথে নিজেকে সামিলে নিলেন)
–কই তাকিয়ে আছি?আমি তো তাকিয়ে নেই।
–ছিলেন আমি দেখেছি।
–ভুল দেখেছো।এসব বাদ দাও রাস্তার মাঝখানে ওভাবে দাড়িয়ে ছিলে কেন আর একটু হলেই তো সত্যিই মরে যেতে।আমি না আসলে কি হতো?
–কি আর হতো মরে যেতাম।
ঠাসসসসসসসস…!!!!উনি আমাকে থাপ্পড় দিলেন আবার।কিন্তু আমি বুঝালাম না আমার দোষটা কি।ওনার চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারন করেছে এক মুহুর্তেই।দাতে দাত চেপে উনি বললেন,
–মরে যাওয়া কি এতোই সহজ?
আমি এখনো গালে হাত দিয়েই আছি।কিন্তু ওনার চিল্লানিতে ভয় পেয়ে গেলাম।এতোক্ষন আমাদের এই ঘটনা লোকজন খেয়াল করিনি কিন্তু ওনার ষাড়ের মতো চিল্লিয়ে ওঠাই আশেপাশে মানুষ এসে ভিড় করল।
–কি হলো চুপ করে আছো কেন?বলো মরে যাওয়া কি এতোই সহজ।আন্সার মি ড্যামেট।অবশ্য তোমার মতো কেয়ারলেস মেয়ের কাছে মরে যাওয়াটা পানি পানি মনে হওয়ারই কথা।আমারি ভুল তোমাকে বাচানো টা।মরে যেতে ভালো হতো।
(উনি কথাটা রাগ করে বললেও এখন কেম জানি না কেমন শান্ত মনে হচ্ছে।ওনার গলা ভেঙে যাচ্ছে।চোখের কোনে পানি এসেও যেন আটকে গেছে।উনি আমার দিকে ঘুরে আমার বাহু খুব শক্ত করে চেপে ধরলেন।খুব ব্যাথা লাগলো আমার।আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম উনি আরো জোরে চেপে ধরলেন।ওনার চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু কেন সেটা আমার অজানা)
–আর কোনদিন যদি মরে যাওয়ার কথা শুনেছি তাহলে আমি নিজে তোমাকে জানে শেষ করে দেবো।
উনি খুবি শান্ত গলায় কথাটা বললেন।সাউডে মুখ ঘুরিয়েই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।আশেপাশের লোকজন কেমনভাবে তাকিয়ে আছে অনেকে ফিসফিস করে একে ওপরের সাথে কথা বলছে।আমি এতোক্ষন খেয়াল করিনি।লোকগুলোর মুখ দেখে আমার একটু অস্বস্থি হলো।উনি আর কিছু বললেন না রাস্তা পার হয়ে চলে গেলেন।ভিড়ের মধ্যে এতোক্ষন মীরাও ছিলো ওনার জন্য আসতে পারিনি।উনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে তাই ছুটে এলো।ধীরেধীরে ভিড় কমে গেলো।
–দোস্ত তুই ঠিক আছিস?
–হুম…
–উনি এমন কেন করছিলো তোর সাথে?
আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে সবটা বললাম।পুরো ব্যাপারটা শুনে ও আমাকে সরি বললো।ওর কথার জন্যই আমাকে একা একা রাস্তা পার হতে হচ্ছিলো।আমি ওরে বললাম সরি না বলতে।আমি তো ওনার কথা ভাবছি।ওনাকে আজ এতো অন্যরকম লাগল কেন?ওনার চোখের কোনে পানি আসল কেন?আর উনি আমাকে মারলেন তাও আমার রাগ হলো না কেন?কিছুই বুঝতিছি না।আমি বাসায় চলে আসলাম।রাতে সুয়ে আছি মীরা কল দিলো,,
–দোস্ত কি করিস?
–সুয়ে আছি।তুই?
–আমিও।দোস্ত একটা কথা ভাবলাম সৌভিক ভাই আজ তোকে বাঁচালো।তোর উচিত ওনাকে একটা থ্যাঙ্কস দেয়া।
–উহ,,আমাকে তো পরে মারলোও তাহলে থ্যাঙ্কস কেন বলব?
–মেরেছে তো তোর দোষে ওমন আজাইরা কথা বললে মারবে ছাড়া কি করবে উনি তো একটা মেরেছে আমি হলে আরো দুটো মারতাম।
–কি??কুত্তি…
–কুত্তি কস আর যাই কস।তোর উচিত ওনাকে থ্যাঙ্কস বলা আর তাছাড়া আজ ওনাকে খুব অন্যরকম লাগছিল।কেন জানি না মনে হচ্ছিলো তোর মরার কথা শুনে উনি খুব কষ্ট পেয়েছেন।
–হুম আমারো।
–কি?বুঝতে পারলাম না আবার বল।
–কি কি কিছু না।ঘুম পাচ্ছে বাই।
আমি ফোন কেটে দিলাম।মীরাও তাহলে ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে।আচ্ছা উনি আজ এরকম কেন করলো?ধুর কিচ্ছু বুঝতেছি না।যাই হোক মীরা কথাটা ঠিক বলেছে।ওনাকে একটা থ্যাঙ্কস জানানো উচিত আমার।
পরের দিন ভার্সিটিতেতে যেয়ে ওনাকে খুজতে লাগলাম।কোথাও পেলাম না।মন খারাপ করে ক্যন্টিনের দিকে যাচ্ছি দেখি শিবলি ভাইয়া।ওনাকে দেখে খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে তাও ডাক দিলাম।
–শিবলি ভাইয়া দাড়ান..
আমার কথাই উনি পিছু ঘুরে তাকালেন।আমি দৌড়ে ওনার কাছে গেলাম।
–আরে ফুলকলি কিছু বলবে?
–না আসলে একটা কথা জানার ছিল।
–কি কথা বলো।
–না মানে আসলে….
–আমার একটু তাড়া আছে বোনটি।যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
–আপনার ওই অসভ্য বন্ধুটা কই?(চোখ বন্ধ করে বলেই দিলাম)
উনি প্রথমে বুঝতে পারেননি।আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন।
–না মানে…
–থাক ফুলকলি।অসভ্যটা পুকুর পাড়ে আছে।
উনি হাসতে হাসতে চলে গেলেন।ইশ!ওনার ফ্রেন্ডকে ওনার সামনে অসভ্য বলে ফেললাম কি ভাবলেন আল্লাই জানে!লজ্জা লাগল কিন্তু আমি কি বোকা সব জায়গা খুজেছি কিন্তু পুকুরপাড় টাই খোজা হয়নি।আমি আর দেরী না করে ছুটে পুকুর পাড়ে গেলাম।দৌড়ে গেছি বলে হাপাতে লাগলাম।উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন…
–হাপাচ্ছো কেন?
–…………………….
–তুমি কি হাপানির রুগী?
–এই না না……ওয়েট..(ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি খেয়ে নিলাম)
–এবার বলো কি বলবে?
–সরি
–সরিইইইই??ফর হুয়াট?আর তুমি কি সরি বলার জন্যই এসেছো?
–এই না না সরি বলতে আসিনি।আমি তো কথা না বলে হাপাচ্ছিলাম বলে সরি বললাম।আমি তো এসেছি থ্যাঙ্কস জানাতে।
–থ্যাঙ্কস এটা কেন?
–ওই যে কাল বাঁচালেন আমায় তাই।
–ওহ,ওই জন্য..থাক থ্যাঙ্কস ট্যাঙ্কস লাগবে না।আমি সবাইরেই হেল্প করি ওমন।
–ওহ ওকে।
–হুম তুমি এখন যাও।
–এখনি?
–তো?আমার সাথে গল্প করার ইচ্ছা আছে নাকি?
–এই না না
–তাহলে দাড়িয়ে আছো কেন?যাও….
–ওকে।
আমি উল্টা ঘুরে কয়েক পা হাটলাম,
–নিহীন শোন…..
আমি ওনার দিকে তাকালাম…………
চলবে……….