প্রেম পাগলামি পর্ব ৪+৫

পর্ব ৪+৫
প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:০৪
#নিহীন_রুবাইয়াত

–বাবা এসে গেছে তোমার আদুরে মেয়ে…

আপুর কথাই সবাই আমার দিকে রাগী একটা লুক দিলো।

–কি হয়েছে?তোমরা এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন??
–তোর ঘরের জানালার কাচ ভাংলো কিভাবে?

–এই যাহ!আমি এখন কি করব??(মনে মনে)
–কি হলো বল..
–না মানে মা ভুল করে ভেঙে ফেলেছি সেদিন তুমি বকা দেবে বলে,,সরি মা।প্লিজ…..

জোর করে হেসে দিলাম,মা চোখ গরম করলো ঠিকই কিন্তু কথাটা যে সে বিশ্বাস করিনি তা বুঝেছি ভালোই।আমি আর কথা না শুনেই ঘরে চলে গেলাম।ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবছি মাকে মিথ্যা বলা লাগলো।কারন মা যদি জানতো মাঝ রাতেতে কোন ছেলে তার মেয়ের জানালাই পাথর ছুড়ে মারে তাহলে মা অনেক ভয় পেয়ে যাবে আবার এটাও ভাবতে পারে আমার কোন সম্পর্ক আছে সেই হয়ত কাজ টা করেছে।এসব ভাবতে ভাবতেই আপু আসলো ঘরে,,

–নিহী খেতে আয় মা ডাকে..
–আসছি
–তাড়াতাড়ি আয়।
–আপু শোননা(আপু আমার ডাকে পিছু ঘোরে)
–কি?
–তোর জন্য ছেলে দেখছে বাবা তাই না?যাক ভালোই হবে
–হুম কেন?
–না মানে তুই বিদায় হবি তো তাহলে তখন বাড়িটা পুরো আমার দখলে এইজন্যই..

হোহোহ করে হেসে দিলাম আপু আমাকে গালি দিতে দিতে চলে গেলো…

সন্ধ্যায় ফেসবুকিং করছি হটাত ইউ মে নো পিপুল এ মাহামুদুল শিবলি নামের আইডিটা দেখলাম,প্রোফাইল পিকটা দেখেই চিনে ফেলেছি।কি মনে করে আইডির ভিতরে গেলাম।কভারে দুইটা বাচ্চা ছেলের ছবি বয়স ৬-৭ হবে।ছবিটা বেশ পুরোনো মনে হচ্ছে,স্কুল ড্রেস পরা,গলায় পানির পট,চুলগুলো খুব সুন্দর করে আচড়ানো।এর মধ্যে যে ছেলেটা একটু লম্বা তার হাসিমুখটা অনেক ভালো লাগলো।কিন্তু এরা কারা?শিবলি ভাইর আইডিতে?ছবিটার রিয়াক্টদের দেখলাম,,

–অনেকেই আছে তো।না কমেন্ট পড়ে দেখি,হুম এটাই ভালো হবে।বাই দা ওয়ে আমি কেন এতো মাথা ঘামাচ্ছি।ধুর যার হয় হোক..

ওনার আইডি থেকে বের হয়ে আবার ফেসবুকিং এ লেগে গেছি।একটা ছেলে বেশ কয়েকদিন ধরে ফ্লার্ট করে,আমিও মাঝে মাঝে টুকটাক করি।ছেলেটা নক দিছে আমিও মজা নিচ্ছি এরি মাঝে মীরা মেসেজ দিলো,খুব রাগ হলো,নক দিয়ার আর টাইম পাইনি?বাধ্য হয়ে রিপ্লাই দেয়া লাগলো তা না হলে ও কাল আমার মাথা পাগল করে দেবে।
–দোস্ত
–কি বল…
–জানিস আর ৫ দিন পর আমাদের নবীনবরন…
–তো?
–আমার তো অনেক মজা লাগছে,নবীন বরন হবে..ওয়াও।
–তো আমি কি নাঁচবো?
–হুম নাচতে পারিস তুই..

(শালা গাধী,আমি তো যাস্ট কথার কথা বললাম যে নাঁঁচবো আর বুঝলো কি?)

–এ দোস্ত
–কিইইইই????
–টাইপিং..
–আম্মু ডাকছে বাই।

ও কি মেসেজ দেবে আর অপেক্ষা না করেই বাই বলে ওয়াইফাই অফ করে দিলাম।এমনিতেই আমার ফ্লার্টিং এর মাঝে আইছে,মেজাজটা খারাপ করে দিলো আবার বকবক শুরু করেছে।ফোনটা রেখে নিচে গেলাম,আমিনা খালাকে কফি দিতে বলে টিভি ছেড়ে সোফায় বসলাম।একেরপর এক চ্যানেল পাল্টে যাচ্ছি কোনটাই ভালো লাগছে না।আমিনা খালা কফি দিয়ে গেলো।কফিটা হাতে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম।ব্যালকনিতে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছি আর চাঁদ দেখছি ফোনে কল আসলো ঘরেরে এসে দেখি আননোন নাম্বার।নাম্বারটা চেনার চেষ্টা করেও পারলাম না।রিসিভ করতে যাবো কল কেটে গেলো।আমি আর ব্যাক করিনি।আমি বরাবরই একটু কেয়ারলেস।কোনদিন কাউকে কল ব্যাক করি না।কারোর সাথে কথা বলার মুড না থাকলে অনেক সময় কল রিসিভ ও করিনা।

পরের দিন সকালে ভার্সিটির জন্য রেডি হবো,কি মনে করে কালো একটা শাড়ি নিলাম পরার জন্য (আব্বু আম্মুর গত এনিভার্সারিতে দুই বোন সেম শাড়ি কিনেছিলাম কিন্তু পরতে পারিনি ওইদিন,দাদি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ছিলো তাই সেলিব্রেশনও করছিলাম না) শাড়িটার সাথে ম্যাচিং হিজাব,হালকা অর্নামেন্টস।কিন্তু কথা হলো আমি তো শাড়ি পরতে জানি না।মন খারাপ হয়ে গেলো।শাড়িটা নিয়ে ওয়ারড্রবে রাখতে যাবো তখন…

–আমি পরিয়ে দিই??(দরজার দিকে তাকালাম দেখি আপু দাড়িয়ে আছে)
–তুই?তুই পরিয়ে দিবি?
–হুম আমি…হাহ!কেন আমি কি তোর মতো যে শাড়ি পরতে যানি না বা পারিনা..আমি তোর মতো অকম্মার ঢেঁকি না।(বেশ ভাব নিয়ে সে কথাটা বলে)
–তা না হয় বুঝলাম বাট তুই নিজে থেকে আজ আমাকে হেল্প করতে চাইচিস তো তাই অবাক হলাম।

আমি কিছুক্ষন বকবক করলাম এর মাঝে আপুর শাড়ি পরানো শেষ।
–নে হয়ে গেছে..
–ও মা!!হয়ে গেলো এতো তাড়াতাড়ি?
–হুম গেলো তো..

আমাকে আজ আপু নিজেই হিজাব বেধে দিলো।ও অনেক সুন্দর করে হিজাব বাধতে পারে কিন্তু আমাকে কোনদিন দেয়না।আজ নিজে হিজাব বেধে দিলো বলে বেশ অবাক লাগলো,মনে মনে ভাবছি আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে,ছোটবেলা থেকেই ও আমার সাথে সবসময় ঝগড়া করেছে এটাই হয়ত প্রথম ও নিজে থেকে কিছু করলো আমার জন্য অবশ্য আমিও ওর জন্য কিছুই করি না।আপুকে এক্টা ধন্যাবাদ জানানো দরকার,আমি হাশি মুখে ধন্যবাদ বলতে যাবো তার আগেই,,
–থ্যাংকস দেয়ায়া লাগবে না,দয়া করলাম তোর ওপর।
কথাটা বলে ও চলে গেলো আর আমি মুখ ভেংচে দিলাম ওরে।

চোখে গাড় করে কাজল পরে নিলাম,ঠোটে হালকা লিপস্টিকও পরেছি,,আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভাব নিলাম একটু।আমি প্রায়ই এটা করি,বেশ ভালো লাগে..

–উফফ!!নিহীন তুই এতো সুন্দর কেন?কোন অধিকার নেই তোর এভাবে ছেলেদের পাগল করার।ভেরি ব্যাড নিহী

কথাটা শেষও করতে পারিনাই মীরার কল,
–ধুর এই ছেড়ির প্রব্লেম কি যখনই একটু চিল করি খালি জালাই।রিসিভই করব না।

আয়নার সামনে আর দাড়ালাম না।ব্যাগটা নিয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলাম।

–নিহু নিহু চল..(মীরা আমাকে টানতে টানতে হাটছে)
–কয়?
–থিয়েটারে..
–কেন??
–আরে নবীন বরন না আমাদের তাই নোটিশ বোর্ডে লিখে দিছে সব ফ্রেসার দের পার্টিসিপেট করা লাগবে..সিনিয়র আপু ভাইয়ারা ট্রেনিং দিবে তাই এখনি যেতে হবে।
–আমি এসবে নাই।আর আমি তো কিছু পারিও না।

মীরা আমার হাত ছেড়ে দাড়িয়ে পড়ে।
–এই তুই না নাচ জানিস,আকতেও পারিস তো।তাহলে কিছু পারিস না বললি কেন?
–আমি নাচ বাদ দিয়েছি জানিস না?
–হুউউউউউম তাই তো।আচ্ছা আগে চল তো তারপর দেখা যাবে কি করবি।

আমি আর জোর করলাম না কারন মীরা ছাড়বার পাত্রী না।থিয়েটারে কিছু সিনিয়র ভাইয়া আপুরা আর আছে ফ্রেসাররা।সিনিয়র ভাইয়া আপুদের দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো,,কারন এরা আর কেউ না ওই খাটাস বজ্জাত সৌভিকের গ্রুপটা।

আমি আর মীরা এককোনে দাড়ালাম।সবাই নাম লিখাচ্ছে কে কিসে অংশগ্রহণ করবে তাই।সৌভিক আর রুম্পা নামের এক আপু নাম গুলো লিখেছিলো,আর বাকিরা কথা বলছে ফ্রেসারদের সাথে।আমার কপাল ও বলি হারি,সৌভিক যেই লাইনের নাম লিখছে ওই লাইনে দাড়ানোর জায়গা পেয়েছি।লাইন যত কুমছে আমার ততো ভয় লাগছে।এই লোকটা আমার আশেপাশে থাকলেই কেমন ভয়য় লাগে না জানি কি করে বসে।লাইন কুমতে কুমতে এবার আমার পালা।উনি খাতার দিকে মুখ করেই লিখছে,তাই আমি এসে দাড়িয়েছি খেয়াল করেনি হয়ত..

–নাম??
–………….
–কি হলো নাম কি?ফাস্ট বলো আমার হাতে অনেক কাজ।
–নি নিহীন….

(আমার নাম শুনে উনি তাকালেন।উনি তাকিয়েই আছেন,ওনার চোখের পলক পড়ছে না।আমি তো ক্যাবলার মতো দাড়িয়ে আছি।দেড়-দু মিনিট মতো পর শিবলি ভাই এসে ওনার পাশে গলা ঝাড়া দেয়।উনি চোখ নামিয়ে ফেলেন)
–আমি গানে নাম দিতে…
–গেট আউট..
–সরি???
–আই সেড গেট আউট(উনি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কথাটা বলেন)
–বাট আমি তো নাম লিখাতে এসেছি
–কথা কানে যাই না,বললাম না গেট আউট(উনি অনেক জোরে চিল্লিয়ে উঠলেন,সবাই তাকিয়ে পড়েছে আমাদের দিকে)
–দেখুন আমি…

উনি আমার কোন কথাই আর শোনেননি,চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরেন,ওনার চোখ লালবর্ন ধারন করেছে।আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম উনি চোখ সরিয়ে নিলেন।তারপর আমাকে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে দেন,মীরা আসতে চাইলে এক আপু ওর হাত চেপে ধরে ওউ আর আসতে পারে না।কোনমতে নিজেকে সামলাই আমি।ওনার এমন ব্যাবহারে খুব রাগ হল সাথে কান্না পেলো।থিয়েটারের সিড়িতে বসে পড়ি।রাগের চোটে হাতের মোবাইলটা আছাড় মেরে দিই।২৬ হাজার টাকার ফোন মুহুর্তেই আবর্জনায় পরিনতো হয়।রাগ কোমেনা,কান্না করে ফেলি।

–কি দোষ করেছি আমি উনি সবসময় এমন করে কেন?আই হেট ইউ,হেট ইউ,হেট ইউ

নিজে নিজে এসব বলতে লাগি।হটাত একটা গান কানে আসে থিয়েটার রুম থেকে,আমার কান্নাও থেমে যায়।গানের গলা আরিজিত সিং বা আতিফ আসলামের থেকে কম যাবে না।খুব সুন্দর করে গাইছে,,

তুমি কি জানো কেউ আড়ালে বসে তোমাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসে,,
তুমি কি জানো কেউ আড়ালে বসে তোমাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসে,,
তার মনের যত কথা তার গোপন প্রেমের ব্যাথা,,
তার মনের যত কথা তার গোপন প্রেমের ব্যাথা,,
বলে যাই আমার এ গান আজ বলে যাই আমার এ গান,,আজ বলে যাই আমার এ গান,,
মনে রেখো আমার এ গান শুধু মনে রেখো আমার এ গান….

গানটা থেমে গেলো।গানটা যেন আমার হৃদয় ছুয়ে গেলো।আমি উঠে দাড়ালাম,দেখি মীরা আসছে।আমি ছুটে গেলাম ওর কাছে কে গান টা গাইলো জানার জন্য কিন্ত তার আগেই ও কথা বলা শুরু করলো।

–দোস্ত সৌভিক ভাই তোর সাথে ওমন ব্যবহার করল তোর অনেক খারাপ লেগেছে তাই না?আমাকে ওই আপুটা আসতে দিলো না,,আচ্ছা ভাই তোর সাথে এমন করে কেন?ওনাকে দেখে…

–উফফ,,থাম তো আমি ওনার কথা শুনতে চাচ্ছিনা,ভেতরে কে গান গাচ্ছিলো সেটা বল আগে।
–জানি না রে..
–জানিস না মানে?তুই না ভিতরে ছিলি?
–হুম বাট গান শুরু হওয়ার আগেই লোডসিডিং হয়ে গেলো।ওই ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে কে যে গাচ্ছিলো বুঝলাম না।তবে যাই বলিস গলাটা অস্থির।

মীরা ঠিকই বলেছে গলাটা সত্যিই অনেক সুন্দর।

–আচ্ছা চল ক্যান্টিনে যায়।
–হুম যাবো কিন্তু আমি একটা কাম কইরা ফেলছি।
–কি??(মীরার কথাই চোখ দিয়ে ইশারা করে আমার মোবাইলটা দেখালাম)
–আবাআআআআআরর??
–………..(আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলাম)
–এইবার আর আমি বাচাবো না আন্টিকে বলে দেবো তুই ইচ্ছা করে ভেঙেছিস..
–আমি ইচ্ছা করে কখন ভাংলাম আজব?
–তা ছাড়া কি?রাগ আরো মানুষেরও হয় বোইন কিন্তু তোর মতো না
–প্লিজ প্লিজ বেবি এবার বাচিয়ে দে,প্রমিস আর ভাঙবো না।
–সরি,প্রতিবার আমি বাচাতে পারবো না।তুই প্রতিবার ফোন ভাঙিস আর প্রমিস করিস আমি আর তোর কথাই ভুলবো না এবার।
–প্লিজ…(খুবি অসহায়ের মতো তাকালাম)
–ওকে(ও না চাইতেও আমার কথাই রাজি হল)
–থ্যাঙ্কু বেবি।উম্মাহ…

বাসায় এসে এবারো বললাম মীরার সাথে মারামারি করার সময় ভেঙে গেছে।অসভ্য নিলুফা মানে আমার ওই বোনটা মানতে চাইলো না।আম্মুকে বার বার বলছে আমি মিথ্যা বলছি কিন্তু আম্মু তেমন কিছু বললো না শুধু বললো আর ফোন কিনে দেবে না।আমি কিছু বললাম না,এখন যদি ফোনের জন্য বাহানা করি তাহলে ব্যাপারটা ভালো হবে না।দুয়েকদিন পর না হয় বাবাকে বলবো।

রুমে এসে ফ্রেস হয়ে হটাত সৌভিক ভাইয়ের আজকের ব্যবহারটার কথা মনে পড়লো,খুব রাগ হলো কিন্তু নিমিষেই ওই গানটার কথা মনে পড়লো।খুব ইচ্ছা হল গানটা কে গেয়েছে জানার।
দুপুরে আর খেলাম না ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরের দিন খুব দেরি হয়ে গেছে ঘুম থেকে উঠতে আজ আবার খুবি স্ট্রিক এক টিচারের ক্লাস লেট হলে উনি আস্ত রাখবে না।টি-শার্ট কোনরকম চেঞ্জ করে একটা জামা পরেছি,হাতে হিজাব নিয়ে নিলাম।মা খেয়ে যেতে বললো কিন্তু খেলাম না।গাড়িতে বসে বসে হিজাবটা মাথায় পেচিয়ে নিলাম…

#পর্ব:০৫
#নিহীন_রুবাইয়াত

স্যার ক্লাসে আসার আগেই পৌছে গেছি যাক বাবা।ভালোই হলো।

–এই মীরা,নিহীন এদিকে এসো তো…(ভার্সিটিতে এখনো তেমন কোন বন্ধু হয়নি।তবে দুয়েক জনের সাথে কথা হয়।তার মধ্যেই একজন শাওন।কি জন্য হটাত ও ডাকল জানি না)
–কি হয়েছে শাওন বলো..
–আসলে মীরা আমরা ফার্স্ট ইয়ার আই মিন ফ্রেসাররা ঠিক করেছি নবীন বরনে সেম শাড়ি পাঞ্জাবি পরবো…
–ওয়াও!!সত্যি??
–হ্যা সত্যি…
–নিহু শুনেছিস শাওন কি বললো?
–আমি কালা না ভাই শুনতে পাই।(মীরা আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচে দিলো)
–নিহীন বলছিলাম কি কোন কালারের ড্রেস হবে এটা কি তুমি ঠিক করে দেবে প্লিজ??
–আমি??
–হ্যা তোমার ড্রেসিং সেন্স বেশ ভালো।(শাওনের কথা শুনে খুব প্রাউড ফিল হলো,মনে মনে নিজেকে সাবাশী দিলাম)
–আরে নাহ…কি যে বলো।তবে তুমি যখন বলছো তখন আমি হেল্প করার ট্রাই করবো…
–ট্রাই না তোমাকে হেল্প করতেই হবে..
–ওকে ওকে তাহলে ছেলেরা সবুজ পাঞ্জাবি আর মেয়েরা গোলাপি শাড়ি পরতে পারে…
–হুম আইডিয়াটা ভালোই।থ্যাঙ্ক ইউ
–মোস্ট ওয়েলকাম…….

আজ সবাই মিলে ক্লাস শেষে নবীন বরন নিয়ে কথা বলছি,,আমি এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে কেউ একজন আমাকে দেখায় ব্যস্ত হয়ে আছে তা খেয়াল করিনি।আজ গাড়িতে আসিনি তাই হেটেই বাসায় যাচ্ছি,কেন জানি না খুব ভালো লাগছে।হটাত মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে।পিছন ঘুরলাম কিন্তু কেউ নেই,বেশ কিছুক্ষন পিছন ঘুরে খুজলাম,,
–আপু…(হটাত করে এভাবে কেউ ডাকাই ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠি।সামনে তাকিয়ে দেখি সেই পিচ্চি ছেলেটা)
–তুমি আজ আবার??আবার তোমার ভাই কি পাঠিয়েছে??
–এই প্যাকেটটা দেছে।নেন
–না নেবো না।উনি আমার কে যে নিতে হবে?
–উনি আপনার অনেক কাছের মানুষ…
–মোটেও না।উনি আমার কাছের মানুষ হলে এভাবে লুকিয়ে আছে কেন?আমি কিছু বলি না বলে যা নয় তাই করবে?(রাগ করে আরো অনেক কথা শুনিয়ে দিলাম।প্যাকেট না নিয়েই চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু হটাত মনে পড়লো পিচ্চিটার কাছে এই লোকটার খোজ নিয়ে দেখতে পারিতো)

–এই পিচ্চি..
–আমি পিচ্চি না,আমার নাম হাবিব..পিচ্চি বলবেন না আর
–ওকে ওকে,সরি।আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলবে সত্যি করে?
–কি কথা?
–তোমার ওই ভাইর নাম কি?
–হাহাহাহাহহাহাহহাহহাহহাহহাহাহাহহা…..আপু কই কি?(আমি বুঝলাম না ছেলেটা হাসলো কেন)
–কি হলো এভাবে হাসছো কেন?
–আপু শোনেন আপনাকে ভাইয়ের নাম বললে আপনি আমকে যেকটা চকলেট দেবেন আপনাকে নাম না বললে ভাই আমাকে আরো বেশি চকলেট দেবে।
(পিচ্চিটার কথাই খুব রাগ হলো)
–ওকে ফাইন বলা লাগবে না আমি শাড়িও নিবো না।
–ঠিক আছে নিয়েন না।আপনার আর কি?আমার দুপুরের খাওয়া জুটবে না।
–মানে?
–আপনাকে এটা ওটা দিয়ে যায় বলে ভাই আমাকে টাকা দেই তাই দিয়ে খাই আমি।এখন যদি আপনি না নেন ভাই কি আমাকে টাকা দেবে?আপনারা বড়লোক মানুষ,গরীবের পেটের খিদে বুঝবেন না।

(খুব মায়া লাগলো আমার ছেলেটার কথা শুনে)
–আচ্ছা তোমার ভাইর টাকা দিয়া লাগবে না।আমি তোমাকে টাকা দিচ্ছি খেয়ে নিও।
–না লাগবে না।আমি নেমোখারাম না।ভাই আমাকে অন্ন দিয়েছে বেইমানি করব না।আপনি শাড়ি নেবেন কি নেবেন না আপনার ব্যাপার..

(এতো ছোট ছেলে এরকম পাকা কথা কিভাবে বলে বুঝি না।ছেলেটা চলেই যাচ্ছিলো,ছেলেটা ডাক দিলাম,শাড়িটাও নিলাম।শাড়িটা পরবো কি পরবো না পরের ব্যাপার কিন্তু আমার জন্য ও যদি না খেয়ে থাকে সেটা আমি মানতে পারব না।ছেলেটা হাসিমুখে শাড়ি দিলো,আমি ওর হাতে কিছু টাকা দিতে গেলাম ও নিচ্ছিলো না পরে জোর করেই দিলাম)

বাসায় এসে দেখি প্যাকেটে নিল একটা শাড়ি।আপু দেখে নিলে ঝামেলে হবে তাই আগে ভাগেই আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখলাম।দেখতে দেখতে নবীন বরন চলে এসেছে।এবার আর আপুরে তেলাই নি।আম্মুর কাছ থেকে শাড়ি পরে নিয়েছি।গোলাপি শাড়ির সাথে ব্লাক হিজাব পরেছি,হালকা মেকাপও করেছি।রেডি হয়ে নিচে গিয়ে দেখি মীরা ডাইনিং এ বসে লুচি,আলুরদম খাচ্ছে।ওউ আমার মতো সেজে এসেছে তবে চুল খোপা করা।আমাকে দেখেই বকবক শুরু করলো,,

–নিহু আই আই,,লুচি খেয়ে যা।অনেএএক মজা হয়েছে।
–তুই খা,আমি খাবো না…
–অল্প করে খেয়ে নে দিদুন।
–না দাদি এখন খাবো না।মীরা তুই কি আদৌ যাবি নাকি খাবিই?আজ কিন্তু আমাদের তাড়াতাড়ি যাওয়ার কথা।
–হুম হুম যাব তো…

ও তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো,হাত ধুতে গেলো আর আমি বাইরে এসে দাড়িয়েছি।মীরা ও একটু পর চলে আসল।
–নিহু তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে যে দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে…
–ফাফর দিস না।বাই দা ওয়ে তোকেও কম সুন্দর লাগছে না।

ভার্সিটিতে পৌছে গেছি।ফ্রেসাররা প্রায় সবাই আজ গোলাপি শাড়ি,সবুজ পাঞ্জাবি পরে এসেছে।আমাকে দেখে শাওন এগিয়ে আসলো।

–তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে নিহীন..মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে…
–থ্যাংকস।তোমাকেও সুন্দর লাগছে..
(শাওনকে ধন্যবাদ জানানোর পর দেখলাম ও আমার দিকে কেমনভাবে যেন তাকিয়ে আছে..আমার একটু অস্বস্তি লাগলো।কিন্তু মীরা এসে হটাত আমাকে ডাক দিলো)

–নিহু,আমি ক্রাশ খেয়েছি রে…আল্লাহ!!কেউ এত্তো কিউট কেমনে হয়?
–তুই আর ক্রাশ?কার উপর??
–সৌভিক ভাই…
–কি??ওই অসভ্য,বজ্জাত টার ওপর??
–এই খবরদার ওনাকে অসভ্য,বজ্জাত বলবি না।উনি অনেক সুইট…
–উনি বজ্জাত ই।তা না হলে উনি ওমন করতে পারত না।
–তোর ই তো দোষ,তুই তো আগে ঝামেলা করেছিলি
–ওয়েট ওয়েট এখন তোর আমার দোষ মনে হচ্ছে?লাইক সিরিয়াসলি?
–হ্যা হচ্ছে…

মীরার কথা শুনে প্রচন্ড রাগ হল আমার।ছোটখাটো ঝগড়া হয়ে গেলো আমাদের মাঝে।দুজন দু রাস্তাই হাটা দিলাম।একা একা হাটছি পাশে এসে দেখি শাওন এসে আমার পাশে হাটছে।

–আচ্ছা তোমার সাদা গোলাপ কেমন লাগে?(শাওন হটাত করে এই কথা বলবে আশা করিনি)
–কি হলো বলো?

–ভালোই তো লাগে..

–ওহ।ভালো লাগলে নিজের কাছে রাখতে হয়,বুঝলে?

আমি একটুটু অবাক হলাম,এরকম কথা কেন বলল জানতে চাইবো কিন্তু তার আগেই,আমি যা দেখলাম তাতে আমি তো পুরো শেষ….

নীল পাঞ্জাবি,সাদা পায়জামা পরে,হাতে ডায়ালের ঘড়ি,চোখে সানগ্লাস তবে আজ চুলগুলো অবাধ্য হয়ে চোখের ওপর পড়ছে না,জেল দিয়ে সেট করা আছে।মীরা ঠিকি বলেছিলো ছেলেটা আসলেই কিউট।আমি নতুন করে আবার তার ওপর ক্রাশ খেয়ে গেলাম।উনি হাটছে আশেপাশের মেয়েরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।এমন একটা ভাব যে জীবনে সুন্দর ছেলে দেখেনি।বেশ রাগ হলো মেয়েগুলোর ওপর..

–নিহীন,নিহীন…
–হু হুম…
–কি ভাবছো??
–কই কিছু না তো।
–আচ্ছা।চলো ভিতরেরে যাই..
–আ তুমি যাও আমার একটু কাজ আছে একটুপর আসছি।
–ওকে এজ ইউ উইশ…

শাওন চলে যায় আর আমি আবার তার দিকে তাকাই,কিন্তু সে তো নয়।
–যাহ বাবা!কয় গেলো?এখনি তো ছিলো….

এদিকওদিক তাকালাম কিন্তু পেলাম না।
–এই যে ফুলকলি কাউকে খুজছো নাকি?
–হুম খুজছি তো..(লোকটির দিকে না তাকিয়েই বললাম)
–কাকে?
–কাকে আবার ওই অস…..উপস(কথাটা বলেই মুখে হাত দিয়ে ফেলেছি কারন সামনে শিবলি ভাইয়া)
–কি হলো বলো…
–না না কাউকে না,আমি আসি।
–আরে দাড়াও দাড়াও..
–জী বলেন(আজ আবার কেন দাড় করালো,আবার নতুন কোন প্লান নেই তো।আল্লাহ বাচিও)
–ভয় পেয়ো না।আমি আজ কিছু করবো না সৌভিক ও না।আমি তো এসেছি তোমাকে সরি বলতে।
–সরি!!
–হুম,তোমার সাথে আমরা অনেক অন্যায় করেছি।কিন্তু ট্রাস্ট মি আমরা ওতোটাও খারাপ না।তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না বোনটি।

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন।আমাকে কিছু বলার সুযোগ ও দিলেন না।হটাত ওনার এই ব্যবহার বুঝলাম না।

হলের ভিতরে গেলাম সব ফ্রেসাররা সহ অনেক সিনিয়রও আছে।সবার আগেই চোখ গেলো শিবলি ভাইর দিকে তার পাশেই সৌভিক ভাই।কিন্তু ব্যাপার টা বুঝলাম না।সিনিয়ররা সবাই তো সাদা পাঞ্জাবি পরেছে আর আপুরা বেগুনি শাড়ি শুধু মাত্র সৌভিক ভাই নীল।অদ্ভুত ব্যাপার।সবার মাঝে একা নীল পোশাকে থাকাই সবার নজরি ওনার দিকে যাচ্ছে।মেয়েরা তো হা হয়ে গেছে কেউ কেউ,কেউ কেউ আবার একে অপরের মাঝে ওনাকে নিয়ে কথা বলছে।

–ধুর আমি ওতো ভাবছি কেন?এই মীরার বাচ্চাটা কয় গেলো?

–নিহীন,এই নাও এটা তোমার…(শাওন খুব সুন্দর একটা গোলাপি রং এর গোলাপ আমার দিকে এগিয়ে দাড়িয়ে আছে)
–আমার জন্য??
–হুম,কেন বন্ধু হিসেবে কি আমি দিতে পারি না?
–অবশ্যয় পারো।

আমি ফুলটা হাতে নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে সামনে তাকাতেই ভয় পেলাম,সৌভিক ভাই আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আমি তাকাতেই চোখ সরিয়ে আবার শিবলি ভাইর সাথে কথা বলা শুরু করলো…

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো এর মাঝে।আমাদের ভিসির বক্তৃতা দিয়ে শুরু হয়েছে।আমি এক কোনে দাড়িয়ে শুনছি স্যারের কথা হটাত কেউ যেন আমার শাড়িতে কোল্ড ড্রিংক ফেলে চলে গেলো।আমি এদিক ওদিক তাকিয়েও বুঝতে পারলাম কারন অনেক ভিড় ছিলো।রাগে তো আমার মাথায় আগুন জ্বলছে,যে এই কাজ করেছে তাকে গালি দিতে দিতে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছি।হটাত কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে একটা রুমের ভিতর ছুড়ে মারলো।আমি নিচে পড়ে গেলাম,ঘুরে তাকানোর আগেই গেট লক।আমি উঠে দরজা ধাক্কাচ্ছি,চিতকার করছি কিন্তু কেউ কথা শুনলো,খুব জোরে মিউজিক বাজছে এই জন্যই হয়তো।আমার এবার খুব কান্না লাগছে।প্রায় আধা ঘন্টা মতো দরজা ধাক্কালাম,আওয়াজ দিলাম কেউ দরজা খুললো না।আমি কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লাম।ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরটাই আমার খুব ভয় ও লাগছে।বাইরে অনেক শব্দ হচ্ছে।ক্যাম্পাসের অনেকেই গান গাচ্ছে।ঘড়ি দেখলাম এখানে আটকা পড়েছি দেড় ঘন্টা মতো।আমার তো ফোন ও নেই যে মীরা বা কাউকে কল দেবো।
শরীরটা কেমন খারাপ লাগছে।মাথা ঘুরছে,অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি যেন এরই মাঝে মনে হলো সেই চেনা গলাই গান গাচ্ছে কেউ,

|
~বড় ইচ্ছে করতে ডাকতে,তার গন্ধে মেতে থাকতে,
কেন সন্ধ্যে সন্ধ্যে নামলে সে পালাই??
~তাকে আটকে রাখার চেষ্টা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তেষ্টা,,,
~আমি দাড়িয়ে দেখছি শেষটা জানলাই……
~বোঝেনা সে বোঝেনা,বোঝেনা সে বোঝেনা সে বোঝেনা সে বোঝেনা বোঝেনা বোঝেনা……

~পায়ে স্বপ্ন স্বপ্ন লগ্নে তার অন্য অন্য ডাকনাম,তাকে নিত্যনতুন যত্নে কে সাজাই?
~সব স্বপ্ন সত্যি হয় কার তবু দেখতে দেখতে কাটছি আর হাটছি যেদিকে আমার দুচোখ যায়….
~বোঝেনা সে বোঝেনা,বোঝেনা সে বোঝেনা,বোঝেনা সে বোঝেনা বোঝেনা বোঝেনা…

~এটা গল্প হলেও পারতো,পাতা একটা আধটা পড়তাম,,,খুব লুকিয়ে বাচিয়ে রাখতাম তাকে,,,
~জানি আবার আসবে কালকে নিয়ে পালকি পালকি ভাবনা আর ফির চলে যাবে একলা আমাকে…
~বোঝেনা সে বোঝেনা,বোঝেনা সে বোঝেনা,বোঝেনা না সে বোঝেনা বোঝেনা বোঝেনা বোজনা…..(গানটা আমার অনেক প্রিয় তাই পুরোটাই লিখে দিলাম,কষ্ট করে পড়ে নিবেন)

গানটা শেষ হয়ে গেলো,আমিও জ্ঞান হারালাম……

চলবে….

(গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন আর কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন..ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here