প্রেম পাগলামি পর্ব ৩

প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:০ ৩
#নিহীন_রুবাইয়াত

–তোমাদের মধ্যে নিহীন কে??

ক্লাস শেষ করে রুমেই ছিলাম কিছু মেয়ে এসে আমাকে খুজলো।একটু অবাক হলো ওনারা আবার আমার নাম নিলেন।আমি উঠে দাড়ালাম।

–তুমিই নিহীন?
–হ্যা,আমিই নিহীন
–চলো আমাদের সাথে,,ফাস্ট
–কোথায় যাবো আমি?আর আপনারাই বা কারা?
–আমরা তোমার সিনিয়র,,বেশি বেশি বকবক না করে চলো(কালো মতো একটা মেয়ে বললো)

আমি আর কথা বাড়ায়নি,কারন ক্যাম্পাসের সিনিয়র রা যে খুব ডেঞ্জারাস তা আমার বুঝা হয়ে গেছে।আমি ব্যাগটা নিয়ে মীরার হাত ধরে যাবো তখনই কালো মতো মেয়েটি বলে তুমি একা আসবে।আমি ভ্রু কুচকে তাকাই…

–আপু আমি নিহুর বেষ্ট ফ্রেন্ড,আমি আর ও সবসময় একসাথে থাকি।
–তুমি আর ও কি সেটা কেউ জানতে চাইনি।ও একা যাবে এটাই শেষ কথা
–কিন্তু আমরা তো
–চুপ বেয়াদব,বড়দের মুখে মুখে তো ভালোই তর্ক করো দেখছি

মীরা মাথা নিচু করে মুখটা গোমড়া করে ফেলে,,আমার বেষ্টুর সাথে রুড বিহেভ করায় আমার বেশ রাগ হয় কিন্তু রাগ কান্ট্রোল করি।মীরার হাতটা ছাড়িয়ে মুচকি হাসি দিই..

–চলুন আপু…

প্রায় ঘন্টা খানিক হয়ে গেলো ওনারা আমাকে ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশের বকুল গাছটার নিচে দাড় করিয়ে রেখেছেন।না ভুল বললাম ওনারা গাছের নিচে আর আমি রোদে।আমাকে রোদে দাড় করিয়ে রেখে ওনারা হয়ত বেশ মজা পাচ্ছে।কিন্তু বোকারা এটা জানে না,এখন জানুয়ারি মাস,শীতকাল।রোদে দাড়িয়ে থাকতেই আরো মজা।আমার বেশ হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসা যাবে না।এতোক্ষন সব মেয়েরাই ছিলো,১০/১২ টা মেয়ে হবে এখন দূর থেকে কিছু ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি এদিকেই আসছে..মুখগুলো দেখতে পারছি না ঠিক,একটু কাছে আসতেই বুকের ভেতর কেপে উঠলো,কালকে যারা আমাকে র‍্যাগ দিয়েছিলো তাদের কয়েকজন আছে এর ভিতর কিন্তু শিবলি বা সৌভিক কেউ নেই।আমার হাত পা কাপা শুরু করেছে।কেন জানি না মনে হচ্ছে আজ আবার বিপদ আছে।আরো দশ মিনিট কেটে গেলো,এই শীতেও আমি ঘামছি।মন চাচ্ছে ছুট্টে পালিয়ে যায়।
আমার ভয়টা আরো বেড়ে গেল যখন আমার ঠিক সামনে একটা বাইক এসে থামলো।বাইকে দুইটা ছেলে,কিন্তু হেলমেটের কারনে মুখ দুটো চিনলাম না।প্রথমজন হেলমেট খুললো,ও আল্লাহ..এ তো সেই শিবলি তাহলে অপরজন সিউর সৌভিক।

আমি অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছি,আমার আগ্রহের অবশান ঘটিয়ে উনি হেলমেট খুললেন।ব্লাক জিন্স,ব্লাক জ্যাকেট হাতে ব্লাক বেল্টের ঘড়ি পরা,,ডান হাত দিয়ে হেলমেটটা ধরে বাম হাত দিয়ে ওনার কপালের ওপর থাকা অবাধ্য চুল গুলো সরানোর চেষ্টা করছে,,ঠিক যেন কোন তুর্কিস হিরো।আমি আগের দিন ক্রাশ খেতে খেতেও খায়নি কিন্তু আজ ক্রাশ না খেয়ে থাকতে পারলাম না।আমার ক্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকাটা খেয়াল করে কিনা জানি না তবে উনি মুচকি একটা হাসি দিলেন।ওনার পাতলা ঠোট জোড়ার দিকে নজর যেতেই হার্টবিট যেন বেড়ে গেলো।উনি তো আমার দিকেই আগাচ্ছেন।আমার হার্টবিট ততো বাড়ছে।উনি আমার কাছে এসেই আমার ব্যাগটা কেড়ে নিলেন,জয় নামটা ডেকে ব্যাগটা ছুড়ে মারলেন এক্টা ছেলে সেটা ধরলো..

–খুব থাপ্পড় মারতে ভালো লাগে তাই না??অকারনেই মানুষকে থাপ্পড় মারাটা কি তোমার শখ নাকি??কাল একবার মেরেছো,কিন্তু আজ বিনা দোষে মারার মানে টা কি?
–………………
–চুপ করে আছো কেন ড্যামেট?অন্য সময় তো বড্ড কথা বলো।
–সরি,আসলে আমি আ আমি……
–থাক তোমাকে কিছু বলতে হবে না,যাও আমার জন্য কোল্ড ড্রিংক আনো।
–আমি?
–হ্যা তুমি,সকালে বিনা কারনে আমাকে মেরেছো তার জন্য পানিশমেন্ট তো পাওয়া লাগবে,এই নাও টাকা আর কোন প্যাঁচাল না পেড়ে হাটা শুরু করো।

আমার বেশ রাগ হলো আমাকে কিনা বলে কোল্ড ড্রিংক কিনে আনতে,বাড়িতে আমি পানিটুকু ঢেলে খাইনা আর এরা….. আমি তাও আজ কথা বাড়ালাম না,আজ অল্পের ওপর দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে ভেবে টাকা নিয়ে ওকে বলে হাটছি।
–এই এই ফুলকলি ওয়েট,১০টা কোল্ড ড্রিংক আনবা,ঢান্ডা..
–এই শীতে কোন পাগলে ঢান্ডা ড্রিংক খাই?পাগলের দল সব(মনে মনে বললাম)

আমি মাথা নাড়িয়ে ঠিক আছে বললাম।১০ টা কোল্ড ড্রিংক এর ক্যান কিনে এনেছি।শিবলি ভাইয়া একটা ক্যান খুলতে বলে,আমি ক্যানটা খুলার সাথে সাথে ভিতরের ড্রিংক উপচে পড়ে সৌভিকের গায়ের ওপর,ওনার চোখ সেকেন্ডের মধ্যে লাল হয়ে যায়,আমি ভয় পেয়ে যায়।

–নিহী আজ আবার আরেকটা ভুল।আল্লাহ বাচাও..(মনে মনে)

আমি চোখমুখ খিচে ফেলি কিন্তু উনি কিছু বললো না।আমি ধীরে ধীরে চোখ খুললাম,সবাই আমার সামনে হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে।সৌভিক বললো,
–যাও ছেড়ে দিলাম আজ..(ওনার কথা শুনে আমার মনে লাড্ডু ফুটলো,না উনি হয়তো ওতোটাও খারাপ না)
–থ্যাংকস ভাইয়া।

আমি ব্যাগটা নিয়ে পিছু ঘুরেছি সৌভিক আমাকে ডাকলো,ওনার কথা শুনে পিছু ঘুরতেই

–আহ….(উনি আমার মুখে কোল্ড ড্রিংক ছুড়ে মারলেন,শুধু উনিই না ওনারা সবাই।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওনারা হাসা শুরু করলেন)

ওনাদের হাসিতে আমি কেঁদে ফেললাম,আমার খুব খারাপ লাগছিলো।আমি দৌড়ে চলে আসলাম।বাড়ি এসে সবার সামনেই রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলাম।আমার পিছু পিছু সবাই ছুটলো।আমি ঘরের সব কিছু ভাংচুর করছি আর বাইরে থেকে ডাকছে আমি শুনছি না।রাগ কুমছে না,রাগ কুমানোর জন্য ব্লেড নিয়ে হাতে অনেক গুলো পোচ দিলাম।অন্যদিন পায়ে দিই আজ হাত কেটেছি।দেড় ঘন্টা পর দরজা খুললাম,আমার দরজার সামনে আপু,মা,বাবা,ভাইয়া সবাই দাড়িয়ে আছে।দাদি আর ফুফু কোথায় যেন গেছে তা না হলে ওনারাও থাকতো।

আমাকে এই অবস্থায় দেখে মা,আপু কান্না কাটি শুরু করে দিলো,কার উপর রাগ করে এসব করেছি জানতে চাইলো,আমি মুখ দিয়ে টু শব্দটুকু করলাম না।চোখ গরম করে দিলাম কেউই পরে আর কিছু বলেনি কারন আমাকে তারা আবার রাগিয়ে দিলে আমি এর থেকেও খারাপ কিছু করবো।কিন্তু মার মরা কান্না থামছে না এমন একটা ভাব করে আছে যে আমি মরে গেছি।বিরক্তি কর।

পরের দিন ঘুম ভাংলো মীরার কথাই,বুঝতে পারছি আপু ওকে ডেকেছে কিন্তু ওউ তো কিছু জানে না কালকের ঘটনা তাই ওরে ডেকেও খুব বেশি লাভ হয়নি।ঘুম থেকে ওঠার পর পর ই মীরা সহ বাড়ির সবাই ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে দিলো,তাই ভাবলাম এর থেকে ভার্সিটি তে চলে যায় তবে আজ আর ওই বজ্জাতটার সামনে যাবো না।

আমি আর মীরা হাটছি একটা বাচ্চা মেয়ে এসে,
–আপু খুব শীত লাগছে,আমার কোন শীতের জামা নেই।আপনার চাদরটা দেবেন??
–না না ও দেবে না(আমি মীরাকে থামিয়ে দিলাম।মেয়েটাকে দেখে বেশ মায়া হলো আমি গা থেকে চাদর টা খুলে ওর গায়ে পড়িয়ে দিলাম)

আমি আর মীরা ক্লাস করলাম আজ সবগুলো,ক্লাস শেষে ও গেছে এক ম্যামের সাথে দেখা করতে,আমাকে বলেছে গার্ডেনে ওয়েট করতে,আমি চিপস খেতে খেতে হাটছি,কিন্তু এক অদ্ভুত ব্যাপার আমি একাই আছি।এতো বড় বিল্ডিং এ কেউ নেই।ভয় ভয় লাগছে,তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছি,কিন্তু হটাত ই কে যেন আমার হাত টেনে ধরে একটা অন্ধকার ক্লাস রুমে টেনে নিলো,আমি চিতকার করতে পারলাম না সে আমার চোখমুখ সব বেধে ফেলেছে।এক হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে অন্য হাত দিয়ে আমার দুই হাত একসাথে করে দাড়িয়ে আছে,আমি প্রানপন চেষ্টা করেও নিজেও ছাড়াতে পারলাম না।তার নিশ্বাস আমার মুখে এসে পড়ছে আমি আরো ব্যাস্ত হয়ে গেলাম তাকে সরানোর জন্য,জোরাজুরি তে একটা হাত ছাড়া পেয়ে তাকে ধাক্কা দিতে লাগলাম কিন্তু সে চুল পরিমান ও সরলো,মনের মধ্যে নানা বাজে খেয়াল আসছে..
–আচ্ছা লোকটা আমার কোন ক্ষতি করলরে দেবে না তো?আমি সমাজে মুখ দেখাবো কি করে??

এসব চিন্তাই মাথায় দোলা দিচ্ছে।আমার চোখ বাধা কিন্তু কেন জানি না মনে হচ্ছে লোকটা এক ধ্যানে আমাকে দেখায় ব্যস্ত।বেশকিছুক্ষন এভাবে থাকার পর আমার হাতের কাটা জায়গাটাই ঢান্ডা কিছু অনুভব করলাম,জ্বলে উঠলো জায়াগাটা।মুখ বাধা তাই শুধু উহউহ শব্দটাই বের হলো মুখ দিয়ে।মনে হচ্ছে হাতে কোন মলম লাগিয়ে দিয়েছে,আমি নিজেকে তার উপর ছেড়ে দিলাম,আমি যেন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি।

–নিহু,নিহু ওঠ।তুই এখানে এভাবে পড়ে আছিস কেন?কি হয়েছে তোর??নিহু..এই নিহু..
মীরা আমার মুখে পানির ছিটা দিয়াতে হুশ ফিরলো,নিজেকে এক্টা রুমে আবিষ্কার করলাম।

–আমি আ…
–তুই এখানে কি করে এলি..আর অজ্ঞানই বা হলি কি করে?

মীরা আমাকে বসতে সাহায্য করলো,মাথা কেমন ভারি ভারি লাগছে।মীরার হাত থেকে বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নিলাম।

–এই নিহু…
–হু হুম..
–তুই এখানে কেন?তোরে তো আমি গার্ডেনে দাড়াতে বলেছিলাম

আমি সব ঘটনা মনে পড়ে গেলো,কেউ আমাকে টান দিলো,চোখ বেধে দিলো,আমি সাথে সাথে হাতের দিকে তাকালাম।হাতে মলম লাগানো আমার।আমি তো ওই সময় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম তারপর আর কিছু মনে করতে পারছি না।দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে বসে রইলাম এদিকে মীরা বার বার প্রশ্ন করছে।

–মীরা তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে?
–আমি তো গার্ডেনে তোর জন্য ওয়েট করছিলাম কিন্তু তোর আসার কোন পাত্তাই নেই তাই ভাবলাম তুই হয়তো চলে গেছিস তখনি একটা বাচ্চা ছেলে এসে আমাকে বললো তুই নাকি আমাকে এই রুমে ডাকছিস তাই তো আমি এলাম,এসে দেখি তুই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিস…কিন্তু তুই আমাকে এখানে ডাকলি কেন বলতো?
–আমি তোকে ডেকেছি!(বেশ অবাক হলাম)
–হ্যা বাচ্চাটা তো তাই বললো..
–কিন্তু আমি তো তোকে ডাকিনি।আচ্ছা তুই যখন এখানে আসলি তখন কি আর কেউ ছিলো?
–আর কে থাকবে?
–আ আমার চোখ মুখ বাধা ছিলো কি?
–এই তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?তোর চোখমুখ বাধা থাকবে কেন?আজব!

মীরা বকবক করতেই আছে আমার কানে কিচ্ছু ঢুকছে না।ওর হাত ধরে নিচে নেমে গেটের দিকে যাচ্ছি।বাসায় যেতে হবে,প্রচন্ড মাথা ধরেছে।

–আপু আপু দাড়ান দাড়ান….

আমরা দাড়িয়ে পড়লাম,ছেলেটা কে চেনা চেনা লাগল আমার।
–আপু এই নেন ওষুধ,এটা দুইদিন তিন বেলা খাওয়ার পর খাবেন আর একটা মলম আছে ওটা সবসময় হাতে লাগাবেন।

আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ছেলেটার কথা,কে ভাই কোন ভাই আমাকে কেন ওষুধ দিচ্ছে,আমি ছেলেটার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করব তার আগেই,,
–এই পিচ্চি তুমি আমাকে তখন ওটা বললে কেন যে নিহু আমাকে ওই রুমে ডাকছে?ও তো আমাকে ডাকেনি উল্টা ও তো….

পিচ্চিটা আমার হাতে জোর করে ওগুলো দিয়ে,,
–আপু আপনার বান্ধবি এতো বকে কেন?ভাই কইছে উনি একটা ঢংগী।
–এই এই কি বললি তুই?বেয়াদব ছেলে দাড়া…

কে শোনে কার কথা,পিচ্চিটা তো দিছে এক দৌড়।।
–নিহু এই পিচ্চিটা অনেক দুষ্টু,আমাকে মিথ্যা বললো আর ওই ভাই বেশি খারাপ,বেটা শয়তান আমাকে কিনা কয় আমি ঢংগী।বলি আমি যদি ঢংগী হয় তাহলে আমার বেষ্টুর প্রতি এতো দরদ কেন?সেদিন জ্যাকেট দিলো আবার আজ মলম।বেটা শয়তান…
–ওয়েট ওয়েট জ্যাকেট দিলো মানে?
–হুম দিলো তো।এই পিচ্চিটাই তো তোরে জ্যাকেট দিয়ে গিছিলো,তুই ভিজে গেলি…

সত্যিই তো এই পিচ্চিটাই তো ছিলো,জ্যাকেটটার কথা আমার খেয়ালই ছিলো না।
–চল
— কই?
–আমার বাসায়..
–কি এখন তোর বাসায়?আম্মু আমাকে মারবে নিহু লেট হলে।
–মারুক,তুই এখন আমার সাথে যাবি এটাই ফাইনাল।

আমি আর মীরা তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলাম,মাকে দেখে মীরা মায়ের কাছে চলে গেলো পিঠা খাওয়ার বাহানা করতে আর আমিমি সোজা রুমে।রুমে এসেই ওয়ারড্রব থেকে জ্যাকেটটা বের করলাম,জ্যাকেট থেকে ঠিক একই স্মেল যা আজ ওই লোকটির থেকে পেয়েছি।হ্যা আমি ঠিকই ভাবছি,এটা ওই লোকই।কিন্তু লোকটা কে যে আমার এতো খেয়াল রাখছে..মাথায় আসছে না কিছু।

রাতে শুয়ে আছি,ঘুম হল না।লোকটা কে তাই মনে হচ্ছে।মাথা ব্যাথাও প্রচুর,চোখটা বন্ধ করলামলাম কিন্তু মিনিটেই আমার রুমের কাচের জানালা ভেঙে গেলো যেন।তাড়াতাড়ি লাইট অন করলাম,জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যিই ভাঙা।আর নিচে কিছু এক্টা পড়ে আছে।আমি ফ্লোর থেকে ওটা তুললাম,একটা পাথরে কাগজ
জড়ানো।কাগজ টা খুললাম কিছু একটা লেখা,,

“জানতাম ওষূধ খাওয়ার কথা ভুলে যাবে,মলম টাও লাগাবে না।তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না।এমন করো কেন তুমি?তুমি নিজেকে কষ্ট দিতে যেয়ে আমাকেই তো কষ্ট দাও।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি যে শেষ হয়ে যাবো নিহীপাখি।এক্ষনি মলম টা লাগিয়ে নাও।প্লিজ….প্লিজ।আর যদি না লাগাও সকালের মতো কিন্তু আবার…….(আমি আর পড়তে পারলাম না জান টা কেঁপে উঠলো)

কিন্তু কে এত রাতে এরকম একটা কাজ করবে,ছুটে বেলকনি তে গেলাম কিন্তু নিচে কাউকে দেখতে পারলাম না।রুমে আসলাম,হাতে মলম টা নিয়ে খাটে বসে ভাবছি কাজটা কে করতে পারে।মলমটা ছুড়ে ফেলে দিতে গেলাম তখনই চিঠিটার শেষ লাইন টা মনে পড়লো না লাগালে সকালের মতো….না না রিস্ক নেয়া যাবে না।তাড়াতাড়ি মলম লাগিয়ে নিলাম হাতে।রাতে আর ঘুম আসল না।আজান দিলে নামাজ পড়ে নিলাম।সকাল সকাল না খেয়েই বেরিয়ে গেছি,মীরাকে ওর বাসা থেকে নিয়ে ভার্সিটিতে গেলাম।গেইটে ঢুকবো দেখি সেই পিচ্চি ছেলেটা দাড়িয়ে।হাতে এক তোড়া তাজা সাদা গোলাপ আর একটা প্যাকেট…
–আপু চলে আইছেন?আমি সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছি।ভাই কইছিলো আপনি আজ তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু তাও দেরি করছেন।এই নেন এটা ভাই দিছে।

পিচ্চিটা খুব দ্রুত কথা বলে গেলো,আমার হাতে প্যাকেট আর ফুলের তোড়াটা দিয়ে দৌড় আমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছি,ব্যাপার টা কি হলো?যখন বুঝলাম পিচ্চিটা গায়েব।
–এ নিহু..এই ভাইটা কে রে?ওয়াও তোর কতো খোজ রাখে।

মীরা ফুলের তোড়াটা আমার হাত থেকে নিয়ে নিলো।আমি প্যাকেট খুলে দেখি একটা খাবারের প্যাকেট,বার্গার আর পাস্তা আছে।আর একটা চিঠি।

“জানতাম তুমি সকালে খাবেনা তাই তোমার প্রিয় খাবার পাঠিয়ে দিলাম আর ফুলগুলো আমার অনেক প্রিয় তাই তোমাকে দিলাম”

মীরা চিঠিটা পড়ে বার বার বলছে
–ওয়াও দোস্ত।তুই কি লাকি,তোর সিক্রেট লাভার আছে।

মীরা বকবক করলেও আমার রাগ হচ্ছে।কে এই ব্যক্তি যে লুকোচুরি করছে এমন,আমার প্রতি এতোই দরদ যখন সামনে আসে না কেন?অসহ্য লোক,খুব রাগ হলো।মীরার হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে ছিড়ে ফেলে দিলাম,চিঠিটা ও ছিড়ে ফেললাম।খাবার টা ফেলতে যেও পারিনি।রাস্তার পাশে যে লোকটা ভিক্ষা করে ওনাকে দিয়ে দিলাম।

ক্যান্টিনে যেয়ে আমি আর মীরা বার্গার অর্ডার দিয়ে খেলাম।ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার সময় মনে হল কেউ যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আশেপাশে তাকিয়েও কাউকে দেখলাম না।

বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছি,আমার পাশে দেখি সৌভিক ভাইর বাইক।উনি এসেসে বাইকে উঠে চলে গেলো,আমি ভেবেছিলাম আজ আবার আমাকে অপমান করবে কিন্তু না উনি আমাকে না চিনার ভান করে চলে গেলো।ওনার মুখটা কেমন শুকনা।ধুর আমি এতো ভাবছি কেন?উনি জাহান্নামে যাক।আমার কি?
গাড়ি আসলে আমি উঠে বাসায় চলে আসলাম।

চলবে…….

(বানানে ভুল থাকলে ক্ষমা করবেন,যে কোন ভূলত্রটিই ক্ষমা করবেন।আর গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here