#ফেমাস_বর🙈(বিবাহ পর্ব)
#পার্ট_১৫
#লেখিকা_রামিসা_মালিয়াত_তমা
অরিত্রি-ঐ ফাজিল ঠিক করে লাগা!এসব কী করতেছিস?
আবরার-কী করতেসি মানে?চোখে দেখিস না কী করতেসি?
অরিত্রি-চোখে দেখবোনা কেন?কিন্তু তুই যেভাবে মালাগুলো লাগাচ্ছিস সেভাবে লাগালে তো হচ্ছেনা।ভালোমতন লাগা!
আবরার-এই শোন,আমি ভালোভাবেই লাগাচ্ছি!কিন্তু তুই আল্লাহর রস্তে মাতবরিটা কম কর।
অরিত্রি-কী বললি?আমি মাতবরি করছি?বেশ করছি মাতবরি করছি।আরো ১০০ বার করব।
আবরার-সেটা তুই করবিই।তোর স্বভাবই তো ওমন!কারোর পিছে না লাগতে পারলে তো তোর ভাল্লাগেনা,অসভ্য একটা!আর এই তুই আমাকে তুই,তুই করে বলিস কেন হ্যাঁ?তমা কে দেখে কিছু শুনতে পারিস না?কী সুন্দর ভাইয়াকে আপনি করে ডাকে।আর তুই?তুই তো আমাকে এমনকি ভাইয়াকেও তুই,তুই করে বলিস!
অরিত্রি-শ্যাট আপ,আবরার ভাই।একদম আজে-বাজে কথা বলবিনা।আমি তোকে শুধু বলেছি ভালোমতন মালাগুলো লাগাতে।আর এই সামান্য কথার জন্য তুই আমাকে দুনিয়ার কথা শোনালি।হুহ!আর কী বললি?তোকে আর ভাইজানকে আমি তুই করে বলি কেন না?বেশ করি তুই করে বলি!আমার ভাইদের আমি কী বলে ডাকব সেটা আমার ব্যাপার।তোর যদি ভালো না লাগে,তাহলে তুই কথা বলা বন্ধ করে দে আমার সাথে যতোসব!আমি এক্ষুনি বড়মার কাছে নালিশ করব,দাঁড়া।
এই বলে অরিত্রি মই থেকে নামতে নিতে গেলে তাল সামলাতে না পেরে আবরারের উপর পরে গেল!আবরারের ঠিক উপরে অরিত্রি।আবরারের প্রত্যেকটা নি:শ্বাস শুনতে পারছে অরিত্রি!অরিত্রি উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।আবরার অরিত্রিকে কখন যে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে তা সে নিজেও জানেনা!
অরিত্রি-এই ছাড়,ছাড় আমাকে আবরার ভাই।
আবরারের হুস আসলে আবরার ছেড়ে দিল অরিত্রিকে!
আবরার-সামান্য দেখেও তো নামতে পারিস না,আবার উনি আসছে!
অরিত্রি-হুহ!(ভেংচি কেটে বলল)
এরই মধ্যে ভিতর থেকে অরিত্রির ডাক আসলো!তাই অরিত্রি আর কিছু না বলে চলে গেল ভিতরে!
আবরার কিছুক্ষন সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকেই অরিত্রির পিছেপিছে চলে এলো!
আফসানা হাসিব-এই শাড়ীটা আদির দাদির দাদির।উনি নাকি তোর নানুকে বলে গিয়েছিল যে বংশ পরায়মপর অনুযায়ী যত বড়বউ আসবে সবাই যেন বিয়ের দিন এই শাড়ীটা পরে,তুই এই শাড়ীটা পরবি!কেমন?
তমা-আচ্ছা!
অরিত্রি-সবাই তো শাড়ী চুজ করে ফেলল।কিন্তু আমি তো বুঝতেই পারছিনা যে আমি কোনটা পরব!(সবগুলো শাড়ী হাতাতে হাতাতে বলল)
আবরার-তোকে কোনটাতেই মানাবেনা!তুই যেমন দেখতে!হাহ!
অরিত্রির আবরারের কথায় খারাপ লাগল।কিন্তু সে তা প্রকাশ করল না।উল্টে বলল,
অরিত্রি-আমার চেহারা যেমনি হোক,অন্তত তোর থেকে হাজারগুণে ভালো,বুঝলি?আর বড়মা,তোমার এই ছেলেটা এত ঝগড়ুটে কেন গো?একটু বলবে আমায়?
আবরার-কী আমি ঝগড়ুটে?আমি ঝগড়ুটে হলে তুই কী হ্যাঁ?বল তুই কী?তুই একটা..
আবরারকে কথা শেষ করতে না দিয়ে অরিত্রি বলল,
অরিত্রি-আমি ঝগড়ুটের বোন!মিস শান্ত-শিষ্ট-নম্র-ভদ্র অরিত্রি!
আবরার তো অরিত্রির কথা শুনে হাসিতে ফেটে পরল।অরিত্রি তো আবরারের হাসি দেখে রাগে ফুসফুস করছে।
আবরার কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল,
আবরার-অরু,তুই যদি শান্ত-শিষ্ট-নম্র-ভদ্র হোশ তাহলে আসলে যে শান্ত-শিষ্ট-নম্র-ভদ্র সে তো সুইসাইড করবে রে!
এই বলে আবার হাসতে লাগল!
অরিত্রি-আবরার ভাই!!!(রেগে গিয়ে বলল)
সবাই আবরার আর অরিত্রির কান্ড দেখে হাসতে লাগল।
আয়েশা-তা মিস শান্ত-শিষ্ট-নম্র-ভদ্র অরিত্রি,তোমার বেস্টুর তো বিয়ে হয়ে গেল।তোমার লাইনে তো ছাই পরে গেল!তা তোমারে কবে হচ্ছে শুনি?
অরিত্রি-আরে,ভাবিমনি!ওতো তারা কীসের?আদনান ভাই আর তমার বিয়েটায় ইচ্ছে মতন ইনজয় করে নিই আগে!তারপর নাহয় আমারটা নিয়ে ভাবা যাবে!আর তমার বিয়েতে যদি এহেম এহেম,কোনো ছেলেকে দেখে পছন্দ হয়ে যায়,তাহলে তো কেল্লা ফটে!
অরিত্রির মুখ থেকে অন্য ছেলের কথা শুনে আবরারের একটু খারাপ লাগল!কিন্তু তা সে প্রকাশ করলনা!
অন্যদিকে,
আদনান সেই কখন থেকে তমাদের লিভিংরুমে বসে আছে যে সকলে বের হয়ে গেলে একটিবার তমার সাথে দেখা করবে!সকাল থেকে সে তমার মুখটা একবারও দেখেনি!
আদনান-ধুর,সবাই যে তমুর ঘরে ঢুকেছে তো ঢুকেছেই!আর যেন বের হওয়ার নাম নেই! করে কী এরা এতোক্ষন ভিতরে,উফ!এদিকে আমার জানপাখিকে কাল রাতে যে দেখেছিলাম,এরপর তো আর দেখাই হয়নি।উফ্(মনে মনে)
আদনান খুব ছটফট করছে একটিবার শুধু তমার মুখখানি দেখার জন্য।
কিছুক্ষন পর সবাই ঘর থেকে বের হলো!সবাইকে বের হতে দেখে আদনান তারাতারি মোবাইলফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরল।সবাই বের হয়ে দেখলো আদনান ফোন নিয়েই ঘাটাঘাটি করছে!তাই কেউ আর আদনানকে না ঘটিয়ে যে যার রুমে চলে গেল!
সবাই যে যার ঘরে চলে আছে দেখে আদনান সোজা তমার ঘরে পা বাড়িতে নিলে কেউ একজন আদনানের চোখ ধরে ফেলল।আদনান মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে গেলে আদনানের মুখও ধরে ফেলল।আদনান অনেক চেষ্টা করেও ছুটতে পারলনা!কেউ একজন আদনানকে নিয়ে কোথায় যেন গেল!
আদনানের চোখ এবং মুখ যখন খুলে দেওয়া হলো তখন আদনান দেখলো যে সে গার্ডেনে আর তার সামনে দিনা দাঁড়িয়ে আছে!
আদনান-কী হয়েছে?তুমি আমাকে এভাবে চোখ-মুখ বেঁধে গার্ডেনে নিয়ে এলে কেন?তুমি..
দিনা আদনানকে আর কিছু না বলতে দিয়ে আদনানকে জড়িয়ে ধরল।
দিনা-আমি আজকে তোমাকে একটা কথা বলবো,জান্টুস।আই,আই লাভ ইউ জান্টুস!
আদনান দিনার কথা শুনে অনেক রেগে গেলো!এক ঝটকায় দিনাকে ছাড়িয়ে দিলো আর বলল,
আদনান-হোয়াট দ্যা ফাঁ*।তুমি কী পাগল হয়ে গেসে দিনা?ভুলে যেওনা যে আমার আর তমুর কিন্তু বিয়ে আর সেটা এই উইকেই।আর তুমি কিনা এখন!এই তোমার লজ্জ্বা করেনা?
দিনা আবার আদনানকে জড়িয়ে ধরল আর বলল,
দিনা-আমি ওতো কিছু বুঝিনা!তুমি তমাকে বিয়ে করোনা।সবাইকে বলে দাও তোমার আর তমার বিয়ে হচ্ছেনা।তুমি আমাকে বিয়ে করছ!
আদনান দিনাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করল কিন্তু পারলনা।
আদনান-শ্যাট আপ দিনা!আমি তমুকে ভালোবাসি।আর বিয়ে করলে তমুকেই করব!আর এসব কি শুরু করলা?ছাড়ো আমাকে ছাড়ো!
কে শুনে কার কথা।দিনা যেন আদনানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল!
দিনা-কেন?কেন তোমার তমাকেই বিয়ে করতে হবে!ঐ থার্ডক্লাসের মধ্যে কী দেখেছো তুমি?আমাকে দেখো জান্টুস।আমি তোমাকে কত ভালোবাসি!আর তাছাড়া তমার মতো একটা ক্ষ্যাত যে কিনা খালি কামিজ পরে তাও আবার ফুল হাতা তাকে তুমি কেন বিয়ে করবা?আমাকে দেখো!আমি কত স্মার্টলি চলি।ইউ শুড মেরি মি,জান্টুস!
আদনানের এবার চরম লেভেলের রাগ উঠে গেল।আদনান দিনাকে আরো অনেক কথা শোনালো তমাকে থার্ডক্লাস বলার জন্য।কিন্তু কিছুতেই দিনাকে ছাড়তে পারলনা!
এদিকে তমাও আদনানকে অনেকক্ষন হয়েছে দেখেনি!তাই তমা বের হয়ে আদনানকে খুঁজতে লাগল!খুঁজতে খুঁজতে তমা গার্ডেনে চলে এলো!
দিনা এখনো আদনানকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আদনান কোনোমতেই পারেনি দিনাকে নিজের থেকে ছাড়াতে!
এদিকে তমা গার্ডেনে এসে সেখানে আদনানকে দেখতে পেল।আর সাথে যা দেখলো তা দেখে তমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল।
তমা-এটা কী দেখছি আমি?ঠিক দেখছি ত?(মনে মনে)
তমা দু-একবার চোখ কচলালো!কিন্তু না একই দৃশ্য।তমা বুঝল যে এটা বাস্তব,কোনো ভ্রম বা স্বপ্ন না।
এবার তমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগল।মুহূর্তের মধ্যে যেন তমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
তমা আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা।দৌড়ে চলে এলো নিজের ঘরে।এসে দরজার ছিটকিনি আটকিয়ে দিলো।দরজা আটকিয়ে দিয়ে তমা বাথরুমের চলে গেল।শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল।
তমা-কেন?কেন সবসময় আমার সাথেই এমনটা হয় কেন?
এই বলে তমা জোরে জোরে অঝোরে কাঁদতে লাগল!
চলবে,,,,,,,,,