বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -০৫

গল্প: #বাক্সবন্দী_চিঠি
লেখক: Ninika Jaman Noor
পর্ব: ৫
আবির মনে মনে সিধান্ত নিয়ে নিলো সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাবে।এইভাবে চললে ইতুর সাথে কোনোদিনই কথা বলতে পারবে না।আর না ওর কাছে মাফ চাইতে পারবে।আবির বুঝে গেছে ওকে আগের ফর্মেই ফিরতে হবে।ইতুর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তা করে আবির বাঁকা হাসলো।
ইতু আবিরকে খুঁজতে খুঁজতে বাইরে এসে দেখে সে বাবুর্চিদের ওখানে দাড়িয়ে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে।ইতুর কি হলো সে জানে না একটা চেয়ার নিয়ে আবির থেকে কিছু দূরে গিয়ে বসলো।তাকে মন ভরে দেখতে লাগলো।
আবির একবার এইদিকে থেকে অন্যদিক দৌড়ে যাচ্ছেন।গাড় নীল পান্জাবি কি সুন্দরটাই না লাগছে।ফর্সা গায়ে যেনো ফুটে উঠেছে এই রং।ঘামে ভিজে কপালের চুলগুলো লেপ্টে আছে।ভ্রু জোড়া ঈষত্‍ কুঁচকে রেখে কাকে যেনো ধমক দিয়ে যাচ্ছেন।একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা কোনো কিছুতে কমতি রাখতে চান না।কেউ সামান্যতম ভুল করলে তাকে ধমক দিচ্ছে।ইতু দূর থেকে বসে তার কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে।উঁহু দেখে যাচ্ছে বললে ভুল হবে।এক প্রকার নিজের চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।তার ছোটবেলার একমাত্র ভালোবাসা।কতরাত তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেই কাটিয়ে দিয়েছে।”কিরে ভাবুকরানী তুই ওখানে বসে আছিস কেনো? দেখছিস কতো কাজ পড়ে আছে?এতো অলস কেনো তুই?যা গিয়ে অনুকে দেখে আয়।
আবির আজ দুই বছর পর এই নাম তার মুখে নিয়েছে। ডাকটা শুনেই বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।
“কিরে হা করে বসে আছিস কেনো? যা।”
তাকে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো ইতু।শারমিন বেগমের সাথে দাঁড়িয়ে চপ খেয়ে যাচ্ছে সে।কেউ এসে আমার কান ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।ইতু আম্মু বলে চেঁচিয়ে উঠলো।শারমিন বেগম দেখেও না দেখার ভান করে কাজ করতে লাগলো।ইতু মানুষটাকে ইচ্ছা মতো গালি দিয়ে যাচ্ছে তাও ছাড়ছেনা।আবিরের কথা শুনে ইতুর আত্মা যায় যায় অবস্থা।
ইতুর দুই বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”তোর সাহস কি করে হয় আমার কথা ফেলে দেয়ার? খুব বেড়েছিস না? দুইটা বছর ছিলি না দেখে সাহস বেড়ে গেছে? ভুলে যাস না আমি কিন্তু সেই আবিরটাই আছি।আর কখন যদি এমন করিস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
আবির কথাগুলো বলে তাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো।ইতু তার যাওয়ার পথে চেয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,”হুহ দুই বছর একটা খরব পর্যন্ত নিলো না এখন এসে খবরদারি শুরু করেছে।কচু ডরাই তোকে। গন্ডারের মতো মুখ করে ষাঁড়ের মতো চেঁচালেই যেনো ভয় পেয়ে যাবো। ইচ্ছে তো করছে এক লাথি দিয়ে বিনা টিকেট এ উগান্ডা পাঠিয়ে দিতে।এতোদিন তো শান্তিতে ছিলাম এসেই আবার ধমক দেয়া শুরু করেছে।তোর কপালে বউ জুটবে না দেখিস।”
“সমস্যা নেই কাউকে না পেলে তোকে বিয়ে করে নিবো।”
“হুহ আমার ঠেকা পড়ছে। তোকে বিয়ে করে শহীদ হওয়ার কোনো ইচ্ছা নাই।তোর মতো হিটলার…”
আনমনে কথাগুলো বলে পিছনে ফিরতেই কথা বন্ধ হয়ে গেলো।আবির অগ্নিচোখে ইতুর দিকেই তাকিয়ে আছে।এই লোক এখানে এলো কখন টেরই পেলো না।আজ আর শেষ রক্ষা হবে না।আবিরকে এগিয়ে আসতে দেখেই চোখ মুখ খিঁচে ইতু বলতে লাগলো,”ভাইয়া মাফ করে দাও আর জীবনেও এইসব বলবো না। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।”
আবির ইতুর অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে চলে গেলো।এতোক্ষনে ইতুর মুখ থেকে কথা বের করতে পেরে নিজেকে বিজয়ী মনে হচ্ছে তার।এইভাবে কয়েকটা ডোজ দিলেই ইতু সোজা হয়ে যাবে।
ইতু অনেকক্ষন সাড়া শব্দ না পেয়ে একচোখ খুলে দেখলো আবির নেই।একটু অবাক হলেও যমের হাত থেকে ছাড়া পেয়েই দৌড়ে অনুর কাছে চলে গেলো।ইতুকে দেখেই অনু বলে উঠলো,”কিরে এমন হাঁপাচ্ছি কেনো?কেউ তাড়া করেছে মনে হয়?”
“কে আবার তোর প্রান প্রিয় ভাইয়ের কবলে পড়েছিলাম প্রান নিয়ে ফিরেছি।”
আমার কথা শুনেই অনু ফিক করে হেসে দিলো।
অনুকে হাসতে দেখে ইতু বিরক্ত হয়ে বললো,”দেখনা আজ তো সবে এলো তোর ভাইয়ের জীবন তেজপাতা বানিয়ে ছাড়বো।এই ইতুর সাথে পাঙ্গা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ শান্তিতে থাকতে পেরেছে?”
অনু মুচকি হেসে বললো,”ভাইয়ার সাথে কথা বলবি না বলে পণ করেছিলি সেটার কি হবে?”
ইতুর মুখটা চুপসে পান্ডুর হয়ে গেলো।
“পণটা অলরেডি ভেঙ্গে গেছে।”
অনু অবাক হয়ে বললো,”কি বলছিস? কি করে হলো?”
“তোর যে গন্ডার মার্কা ভাই।একটা হুংকারে আমার ভিতরটাই নাড়িয়ে দিয়েছে।বুকটা এখনো কাঁপছে।কথা না বের হয়ে কই যাবে বল?”
অনু হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়লো।ইতু বিরক্ত চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।অর্পিতা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,”কি মিস করে গেলাম?”
অর্পিতার পিছু পিছু অহনা,রুপু আর অনু ফুফাতো বোন ইশা ঢুকলো।অর্পিতা,অহনা আর রুপু হচ্ছে অনু এবং ইতুর ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড।
অনু নিজের হাসিটা কোনো রকমে আটকিয়ে বললো,”আমাদের ইতুর পণটা ভেঙ্গে গেছেরে অর্পি।বেচারি ভাইয়ার ধমকে খেয়েই হিসু করে দিয়েছে।”
ইতু চোখ কটমট করে অনুর দিকে তাকালো।এই বজ্জাতগুলোর সামনেই কথাটা বলতে হলো?এরা এখন ইতুর মান সম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করবে।অর্পিত দাঁত সব কেলিয়ে ইতুর দিকে তাকিয়ে বললো,”কিরে ইতু এতো বড় হয়ে গেলি তাও ধমক খেয়ে হিসু করে দিস?তা তুই না কলাগাছ ধরে শপথ বাক্য পাঠ করে শপথ নিয়েছিলি আবির ভাইয়ার সাথে কথা বলবি না।কলাগাছটাকে এইভাবে মেরে ফেললি?বেচারা কতো সুন্দর পেয়ারা গাছের সাথে সংসার করছিলো।কলেজ পথে আসার সময় তো দেখলাম বাচ্চা ও দিয়েছে।বেচারি পেয়ারি তো বিধবা হয়ে গেলো।”
অর্পিতার কথা শুনে অনু,অহনা,রুপু অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।ইশা কিছু না বুঝলেও অর্পিতার কথার ধরন দেখেই হাসলো।
ইতু দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”খুব হাসি পাচ্ছে না?তোরা আমার বান্ধুবি না শত্রু?যা না একটা ধমক খেয়ে আয় তারপর বুঝতে পারবি ওটা কি জিনিস।”
অহনা লাজুক হেসে বললো,”আমি তো সারাজীবন উনার বকা শুনে থাকতে পারবো।”
ইতুর পুরো শরীর জ্বলে উঠলো।
অর্পিতা আর রুপু অহনাকে ব্যাঙ্গ করে “ওওওও তাই?”বলে চেঁচিয়ে উঠলো।অনু আড়চোখে ইতুর দিকে তাকিয়ে ঠোট চেপে হাসলো।
ইশার অহনার মজাটা পছন্দ হলো না তাই বেরিয়ে গেলো।
“বাজে কথা ছাড়।তোদের দিয়ে কাজ আছে।আবির ভাইকে সাইজ করতে হবে।”
সবাই চোখ বড়বড় করে ইতুর দিকে তাকালো।যে ইতু আবিরের ভয়ে কাঁপতো সে বলছে আবিরকে সাইজ করার কথা!
“ওই ভাবে তাকিয়ে লাভ নেই।ও ব্যাটাকে শায়েস্তা করার জোস একটা প্ল্যান মাথা এসেছে,শুন।”
সবাই কৌতুহলি হয়ে কান খাড়া করে বসলো।
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here