ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব -০৩

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#লেখনী_আলো_ইসলাম

” ৩ ”

–” রুহির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে কেউ তাকে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কিন্তু সে চোখ মেলে তাকানোর শক্তি পাচ্ছে না ঘুমে এতো বিভোর হয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে ভ্রু কুচকে থাকে রুহি। তাই দেখে মুচকি হেসে উঠে রোহান।

–” রোহান রুহির কাছে এগিয়ে এসে কপালে এলোমেলো হয়ে থাকা বেবি চুল গুলো হাত দিয়ে গুছিয়ে দেয়৷ আর তাতে হাল্কা নড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে যায় রুহি। রোহানের চোখ যায় রুহির গলার দিকে। ফর্সা শরীরে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আঙ্গুলের ছাপ। রুহির গলা দেখে রোহানের খারাপ লাগে কিন্তু কি করবে সে রেগে গেলে যে হিতাহিত জ্ঞ্যান থাকে না তার। হঠাৎ চোখ যায় রুহির ডান হাতে যেখানে রোহান শক্ত করে ধরেছিলো। সেখানেও রোহানের দুই আঙ্গুলের ছাপ বিদ্যমান। রোহানের এবার ভীষণ আফসোস হয় তার কাজের জন্য এতটা বাড়াবাড়ি হয়ত না করলেও হতো। রুহি যে দুষ্টু এটা তো সে জানে। কিন্তু রুহি যা করেছে আজ তাতে এইটুকু দরকারি ছিলো তার ভেবে দীর্ঘশ্বাস নেয় রোহান। প্যান্টের পকেট থেকে একটা মলমের প্যাকেট বের করে রুহির গলা আর হাতে যত্ন করে মালিশ করে দেয় রোহান। কিন্তু রুহি কেঁপে কেঁপে উঠে ব্যথায়।

–” রুহির গায়ে চাদর টেনে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় রোহান বার কয়েক। এক পলকভাবে কিছুখন চেয়ে থেকে বেরিয়ে যায় রুহির ঘর থেকে। এটা রোহানের নিত্যকার কাজ। সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রোহান রুহির ঘরে আসে একবার করে। তার প্রিয়সীর মুখ না দেখলে যে তার শান্তি হয়না। লোকচক্ষুর সামনে রোহান নিজেকে কঠিন দেখালেও সবার আড়ালে তার ভালোবাসা প্রকাশ পায় রুহির প্রতি। যেটা একমাত্র রোহান ছাড়া আর কেউ জানে না বা রোহান কাউকে বুঝতে দেয়ও না। এই ভালোবাসাটা একান্ত তার। সময় আসলে নিজেই প্রকাশ করবে, সে অপেক্ষায় অপেক্ষিত রোহান।

–” সকালে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে রুহি। ঘড়ির দিকে চোখ যেতে চমকে উঠে।
– হায় হায় ৯টা বেজে গেছে কখন। ‘কেউ একবার ডাকেনি পর্যন্ত আমায়। অন্যদিন হলে তো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে আমার ঘুমের ১৪টা বাজিয়ে দেয় সব। রুহি বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে দেখে অনিতা বেশ কয়েকবার ফোন করেছে তাকে।।

– আজ নিশ্চিত বকা খাবো অনিতার কাছে। উফফ এই মরার ঘুম একবার আসলে আর যেতেই চাইনা বলে তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায় রুহি। হঠাৎ তার হাতের কথা মনে পড়তে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতের লাল ভাব অনেক কমে গেছে ব্যথাটাও তেমন নেই যেনো। রুহি আয়নার সামনে গিয়ে গলা দেখে একই অবস্থা। রুহি চিন্তিত হয়ে ভাবে কাল রাত পর্যন্ত তো আমি এই হাত নাড়াতে পারছিলাম না ব্যথায়। রাতের মধ্যে ব্যথা হাওয়া। তবে যায় হোক ভালো হয়েছে ভেবে মুচকি হেসে ওয়াসরুমে চলে যায় রুহি।

–” রুহি কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে ফ্রেন্ডের সাথে। অনিতা পায়েল বকবক করছে আর রুহি মুচকি মুচকি হাসছে কিছু একটা ভেবে। অনিতা রুহিকে লক্ষ্য করে দেখে রুহি আনমনে কিছু একটা ভেবে মুচকি মুচকি হাসছে। তাই দেখে পায়েলকে এক হাতের কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে রুহির দিকে দেখায় অনিতা।

– পায়েল রুহিকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলে কি ব্যাপার রুহি বলতো। তুই হঠাৎ মিটিমিটি হাসছিস তাও কোনো কারণ ছাড়া। রহস্য কি জানু ক্লিয়ার করো হেসে বলে পায়েল।

– পায়েলের কথায় রুহি মুখের হাসিটা আরো তীব্র করে বলে আজ মিস্টার ডেভিল’কে উচিত শিক্ষা দিয়ে এসেছি। এতখনে নিশ্চিত চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় করে ফেলেছে। বেশ হয়েছে। আমাকে ব্যথা দেওয়া না এবার বুঝুক খারুস’টা।

* রুহির কথার আগামাথা কিছুই বুঝে না অনি পায়েল। তাই তারা ভ্রু কুচকে বিষ্ময় চোখে বলে তুই ঠিক কি করেছিস বলতো ক্লিয়ার করে। রুহি মুচকি একটা হাসি দিয়ে সব খুলে বলে তাদের। রুহির কথায় ওরা সেই অবাক হয়ে তাকায় রুহির দিকে।

– তোর একটু ভয় করলো না এই কাজ করতে৷ একবার যদি কোনো ভাবে জানতে পায় রোহান ভাইয়া যে এটা তোর কাজ তাহলে কিন্তু তোর কপাকে শনি রবি সব রকম গ্রহ নাচচে রে রুহি। ওদের কথায় রুহি ভয় পেয়ে ঢোক গিলে একটা।

– তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ভয় দেখাস না তো৷ আমি তো কলেজে কে করেছে কে জানে। দোষ দিলে হবে নাকি। আমি যে করেছি তার কোনো প্রমাণ আছে নাকি হুহ বলে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকে রুহি।

-” চোখ মুখে তীব্র রাগের ছাপ নিয়ে ড্রয়িং রুমে একটা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে রোহান। আর সবাই রোহানের সামনের সোফায় বসে চিন্তিত মুখে৷ রোহান একটা টকটকে লাল রঙের শার্ট পড়ে আছে৷ তাই দেখে আমিনা বেগম আর রাজিয়া বেগম মুচকি মুচকি হাসছে রোহানের চক্ষু আড়ালে। এর আগে কখনো রোহানকে এই সব কালারের ড্রেস পড়তে দেখেনি কেউ। রোহান সব সময় ফর্মাল গেটাপে থাকে। সাদা শার্ট বেশি ইউজ করে রোহান৷ হাতে গোনা কয়েকটা কালো আর এ্যাশ কালার শার্ট আছে। লাল শার্টে রোহানকে কেমন বিশ্রি দেখাচ্ছে।

– ছোটমা রুহিকে কুইকলি বাড়ি আসতে বলো। আমি ৫ মিনিটের মধ্যে ওকে আমার সামনে দেখতে চাই কাটগলায় বলে রোহান।
– তুই অযথা মেয়েটার দোষ দিচ্ছিস রোহান। সব কিছুতে তুই শুধু রুহিকে খুজে পাস তাই না। সেতো সকালে উঠে কলেজে চলে গেছে তাহলে তোর রুমে গেলো কখন?
–” মায়ের কথায় বিরক্ত নিয়ে তাকায় রোহান। তাই দেখে আমিনা বেগম চুপ হয়ে যায়।
– তোমাদের কাউকে ফোন করতে হবে না। আমি দিচ্ছি ওয়েট বলে ফোন বের করে কল লাগায় রুহির নাম্বারে।

– জুনিয়র একটা ছেলেকে র‍্যাগিং করতে ছিলো রুহির গ্যাং। তার অপরাধ এটা যে সে বেশ কয়েকবার রুহির দিকে তাকিয়েছে। তাই অনি পায়েল ছেলেটাকে ধরে পানিশমেন্ট দিচ্ছে। রুহি বসে মজা নিচ্ছে এদের কান্ডে। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় চমকে উঠে রুহি। পার্স থেকে ফোন বের করে রোহানের নাম্বার দেখে হেচকি উঠে যায় রুহির। মনে তার ভয় জেকে বসে।

– রুহিকে নার্ভাস দেখে অনি পায়েল ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে রুহির কাছে এসে বলে কোনো সমস্যা রুহি?
– রুহি ফোন টা ওদের দিকে ঘুরালে ওরাও টাসকি খাই রোহানের নাম্বার দেখে।

– এবার কি করবি রে রুহি। আজ নির্ঘাত তোকে কাচা চিবিয়ে খাবে রোহান ভাইয়া। কেন যে উল্টো পালটা কাজ করতে যাস তুই।

– আচ্ছা ফোন টা ধর রুহি তুই আগে। অন্য কোনো কারণও তো হতে পারে পায়েল কে থামিয়ে কথাটা বলে অনিতা। রুহি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে অন্য কোনো কারণ না আমাকে ওই জন্য ফোন দিয়েছে আমি নিশ্চিত । তা নাহলে এই ডেভিল আমাকে কখনো ফোন দিবে না।
– দুইবার রিং হয়ে ফোন কেটে যায় কিন্তু রুহি ফোন তুলে না৷ তাই দেখে রোহানের রাগ তরতর করে বাড়তে থাকে।
– টুং করে মেসেজ আসার শব্দ শুনে রুহি কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ ওপেন করে দেখে যেখানে সুন্দর ভাবে লেখা আছে, ৫ মিনিটের মধ্যে তোকে আমার সামনে দেখতে চাই। যদি আমার কথায় নড়চড় হয় তো তোর জন্য সেটা খুব খারাপ হয়ে যাবে।

– রোহানের এই শান্ত শিষ্ট হুমকি দেখে রুহির আত্না কেঁপে উঠে। এক মুহুর্ত দেরি না করে উঠে দৌড় লাগায় বাড়ির দিকে। রুহির এমন কাজে অনি পায়েল অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে। আজ তো রুহি শেষ বলে একটা আফসোসের শ্বাস ছাড়ে তারা।

-রুহি হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে ড্রয়িং রুমে এখন শুধু আমিনা বেগম আর রাজিয়া বেগম বসে আছে। রোহান তার ঘরে গিয়েছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে রুহি আসলে যেনো তার ঘরে পাঠানো হয়। রুহিকে দেখে দুজনে উঠে দাঁড়ায়।

– রুহির মা গরম চোখে তাকিয়ে বলে সত্যি করে বলতো তুই কি কিছু করেছিস নাকি। তুই কি রোহানের ঘরে গিয়েছিস সকালে। মায়ের কথায় রুহি নেকা কান্না করে বলে বড়মা দেখো না মা খালি আমাকে সন্দেহ করে। আমি কি করেছি বলো। আমি তো বাড়িতেই ছিলাম না। তুমি তো জানো বড়মা আজ আমার কত দেরি হয়ে গিয়েছিলো কলেজ যেতে।

– তুই কিন্তু অযথা দোষ দিচ্ছিস মেয়েটাকে ছোট। ও কেনো এমন একটা কাজ করতে যাবে। কিন্তু এই কাজটা করলো কে এটাই বুঝতে পারছি না। ভাবান্তর হয়ে বলে আমিনা বেগম।

– রুহি এবার না জানার ভান করে বলে কি হয়েছে বড়মা বলো তো। এর মধ্যে উপর থেকে ডাক আসে রুহির। তাদের বাড়ির একটা সার্ভেন্ট এসে বলে রুহি আপাকে ছোট সাহেব এখনই উপরে যেতে বলেছেন। এটা শোনা মাত্র রুহির হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়৷
— আমি যাবো না বড়মা। তোমার ছেলে আবার আমাকে বকবে কান্না করে বলে রুহি। রুহির অবস্থা দেখে আমিনা বেগমের খারাপ লাগে কিন্তু তার ছেলে যে ভীষণ জেদি। তার কথায় হেরফের হলে যে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে দেবে বাড়িটা।

– ভয় পাসনা মা। আমরা তো আছি। কিছু বলবে না রোহান তোকে। তাছাড়া তুই যখন কিছু করিসই নি তাহলে ভয় কিসের৷ নিশ্চিন্তে যা তুই।

– আমিনা বেগমের কথায় রুহি অসহায় ফেস করে তাকিয়ে থাকে কিন্তু মনে মনে বলে অন্য কথা।

– কাজ টা তো আমি করেছি বড়মা। তোমার যে গোয়েন্দা ছেলে তো ঠিক বুঝে গেছে কাজ টা আমি করেছি। নাহলে আমাকে ডেকে পাঠাবে কেনো। তবে আমি স্বীকার করবো না। একদম না মনে মনে বলে রুহি নিজেকে।

–“রুহি রোহানের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ শব্দ করে তার ভয়ে৷ হার্টবিট ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রুহি মনে মনে উপর আল্লাহ কে ডেকে দরজায় নক করে। আর তাতে রুক্ষ কন্ঠে ভেসে আসে কামিং।

– রুহি মাথা নিচু করে রোহানের ঘরে ঢুকে। রোহান ইজি চেয়ারে আরাম করে বসে আছে। রোহানের দিকে চোখ পড়তেই ফিক করে হেসে উঠে রুহি। লাল শার্টে রোহানকে ইনোসেন্ট বেবি লাগছে একদম।

– রুহি যথা সম্ভব নিজের হাসি আটকানোর চেষ্টা করে। রোহান এবার চেয়ার থেকে উঠে রুহির সমান এসে দাড়ায়৷ তাতে রুহি চমকে উঠে দুই কদম পিছু সরে যায়। ভয়ে এদিক ওদিক তাকায় রুহি।

– তুই আমার সব ড্রেস নষ্ট করেছিস কেনো। কোনো রকম ভণিতা ছাড়া কথাটা বলে রোহান। রোহানের কথায় রুহি অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে আমি।
– আমি কি করে তোমার… তার আগে রোহান চিৎকার করে বলে উঠে শাট আপ। তাতে রুহি কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

– রোহান এবার তার ফোনটা নিয়ে রুহির সামনে ধরে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুহি মনের আনন্দে গান গাইতে গাইতে রোহানের সকল ড্রেস পানিতে চোবাচ্ছে। ভিডিওটা দেখে রুহির আত্না কেঁপে উঠে। বিষ্ময় নিয়ে তাকায় রোহানে দিকে। মনে মনে ভাবে এই ভিডিও কে করলো আর রোহানের কাছে বা কি করে আসলো।

– রুহি রে আজ তোকে কে বাঁচাবে। তুই আজ শেষ রুহি। এই ডেভিল যে তোর থেকে এক কাটি উপরে থাকে সেটা কেনো ভুলে যাস তুই একা একা বিড়বিড় করে বলে রুহি।

– জানিস আজ আমার কত বড় একটা ইমপোর্টেন্ট মিটিং ছিলো। সেখানে ডিল ছিলো কত টাকার জানিস? রেগে বলে রোহান।
– রুহি মাথা ঝাকিয়ে না বলে।
– ১২ কোটি টাকার ডিল হতো আজ। কিন্তু তোর এই সব ফালতু কাজের জন্য আমার এত বড় লস হয়ে গেলো। তুই আমার সব ড্রেস পানিতে ভিজিয়ে আমার জন্য লাল আর হলুদ শার্ট রেখে গিয়েছিস ইডিয়ট।

– রোহানের কথায় মাথা নিচু করে আছে রুহি। চুপচাপ বকা গুলো হজম করে যাচ্ছে সে।

– চুপ থাকবি না রুহি। আমার কথার জবাব দে। কেনো তুই এমন করেছিস?

– এই রে কি বলব এখন আমি৷ কেন যে এই সব করতে গেলাম৷ ধুর সব সময় উল্টো পালটা কাজ করি আমি। মা ঠিকই বলে কোনো কাজের নয় আমি। পালা রুহি এখান থেকে। এই ডেভিলের হাত থেকে বাঁচতে চাইলে তোকে এখনই পালাতে হবে ভেবে উল্টো ঘুরে দৌড় দিতে যায় রুহি তখন খপ করে হত চেপে ধরে রোহান রুহির। আর তাতে রুহির জান যায় যায় অবস্থা।

– রোহান রুহির হাত ঘুরিয়ে পিছনে নেয়। আর তাতে রুহির পিঠ এসে ঠেকে রোহানের বুকে। রোহানের স্পর্শে এসে হাল্কা কেঁপে উঠে যেনো রুহি। মনে তার অন্য রকম অনুভূতি আসে। শক্ত করে রুহির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে রোহান। হাতটা আর একটু চেপে ধরাতে রুহি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে আরো মিশে যায় রোহানের বুকে।
–” রুহির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে এবার কে বাঁচাবে তোকে রুহি। আমার থেকে পালানো এত সোজা। এই রোহান না চাওয়া পর্যন্ত একটা মাছি অন্য দিকে ফিরতে পারে না আর সেখানে তুই তো আস্ত একটা মানুষ। রোহানের বলা প্রতিটি কথা যেনো বাড়ি খায় রুহির কানে। রুহি একদম নিশ্চুপ মেরে গেছে। কিছু বলার জন্য শক্তি বা ভাষা কোনোটাই আসছে না।

– পানিশমেন্ট নেওয়ার জন্য রেডি হয়ে যা এবার। রোহানের এমন শান্ত হুমকিতে শিউরে ওঠে রুহি। ভয়ে সত্যি কেঁদে দেয় এবার।

– আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া। আমি আর কখনো এমন কাজ করবো না। এই প্রমিশ করছি কথা দিচ্ছি৷ আমি একদম ভালো মেয়ে হয়ে থাকবো আর কখনো তোমার পিছনে লাগবো না৷ একদমে কথাগুলো বলে থামে রুহি। রুহির কথায় রোহানের রাগ উবে যায়। মুচকি হাসে রুহির দৃষ্টির আড়ালে।

– ভুল যখন করেছিস শাস্তি তো পেতেই হবে রুহি৷ রোহানের এমন কথায় রুহি এবার জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। তাই দেখে রোহান ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
– এই চুপ একদম কান্না করবি না। আর একবার কান্না করলে এক চড়ে দাত ফেলে দেবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার। রোহানের হুমকিতে কান্না থেমে যায় রুহির। কিন্তু মাঝে মাঝে ফুপিয়ে উঠছে সে।

– তোর পানিশমেন্ট হচ্ছে সব ড্রেস তুই ওয়াস করে শুকিয়ে জায়গা মতো ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখবি।

– রোহানের কথায় রুহি অবাক হয়ে বলে এহহ।

– এ নয় হ্যাঁ ভুল যখন করেছিস তার শাস্তি ও তোকে নিতে হবে। সময় নষ্ট না করে জলদি কাজ শেষ কর৷ আমাকে বাইরে বের হতে হবে ড্রেস অর্ডার করেছি কিছুখনের মধ্যে চলে আসবে। তবে হ্যাঁ আমি এসে যেনো আমার সব ড্রেস জায়গা মতো পায় নাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন বলে রোহান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুহি অসহায় চোখে রোহানের চলে যাওয়ার দিকে একবার আরেকবার রোহানের সব ড্রেসের দিকে দেখে।

– নিজের ফাঁদে নিজেই পড়লাম আমি। এখন আমাকে এতো গুলো ড্রেস ওয়াস করতে হবে। এই ডেভিলটা সব সময় আমাকে প্যারার উপর রাখে৷ আমারও সময় আসবে একদিন সেদিন বুঝাবো হু বলে রুহি রোহানের সব ড্রেস নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।

– আসুন জেনে নিই রুহি কি করেছে আর কখন করেছে।

–” সকালে ঘুম থেকে উঠে রুহি ফ্রেস হয়ে একদম রেডি হয়ে নিচে আসে। রুহির রুমের পর রোহানের রুম পড়ে। রোহানের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রুহির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে। যদিও এটা গতকাল রাতেই ভেবে রেখেছিলো। রোহান এই সময় বাড়ি থাকে না। ভোরে নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হয়৷ ৯টার পর ফিরে রেডি হয়ে তবে অফিস যায়।

– রোহানের রুম ফাকা থাকায় রুহি এই সুযোগ কাজে লাগায়। রোহানের সব ড্রেসে পানি ঢেলে ভিজিয়ে দেয়। আর তার জন্য বাবার ঘর থেকে এনে রাখে লাল আর হলুদ দুইটা শার্ট। পড়ার মতো একটা টিশার্টও অবশিষ্ট রাখেনা রুহি। সবার দৃষ্টির আড়ালে কাজ গুলো করে রুহি। কিন্তু বেচারা রুহি তো আর জানে না রোহানের ঘরে প্রতিটি স্তরে সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। যার জন্য রোহানের কাছে ধরা পড়ে যায় রুহি।

— চলবে…….

(❌ কপি করা নিষেধ ❌ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here