পর্ব ২৭+২৮
#ভালো তোকে বাসতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-২৭
ভদ্রমহিলা শারীরিক ভাবে বার্ধক্যে পড়ে গেলেও কথায় বোঝা যায় বেশ চনমনে।একটু বাদে বুঝলাম বেশ রসিক ও। তবে এই মুহূর্তে আমার আর কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছে না।রাত ভাইয়া হয়ত এতোক্ষণে চলে গেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ওনাদের সাথে পার্কিংয়ে যেতেই দেখি সত্যিই রাত ভাইয়া গাড়ি নিয়ে চলে গেছেন। আমার আর কি,,? চোখমুখ কুচকুচে টঠে বসলাম গাড়িতে। গন্তব্য বাসা,,।
❤️
আটটা পঁচিশে গিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হলাম। ভূমিকম্পকে বাড়িতে ঢুকানোর দায়িত্ব এসে পড়ল আমার ঘাড়ে।
সবাই কাজে খুব ব্যস্ত।মা বাড়িতে ঢোকা মাত্র আবার হুড়োহুড়ি শুরু করেছে। হলুদের অনুষ্ঠান যেহেতু আমাদের বাড়িতে হচ্ছে তাই আমাদের বাড়ির ছাদ সাজানো হচ্ছে। সাথে পুরো বাড়িটা মরিচ বাতি দিয়ে আলোকিত করা হচ্ছে। জেরিনের দুঃসম্পর্কের নানীমা কে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে একঝলক ছাদে যাব। সেই ফাঁকে ডেকরেশন ও দেখা হবে তেমনি রাত ভাইয়াকে একবার দেখা যায় কিনা দেখি।
সমস্যা হলো ভূমিকম্পকে নিয়ে।মনে হয় এক পা ফেলে তো দু’পা পিছিয়ে যায়। তার মধ্যে আবার ভূমিকম্পের মতো কম্পন। ওনার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমার মধ্যে ও কেমন যেন কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। নিজেকে ঝাড়া দিয়ে কম্পন থামালাম। যেতে যেতে বাড়ীর বাইরের দিকটায় একটা উকি দিলাম এই আশায় ,,যদি রাত ভাইয়ার দেখা মেলে। কিন্তু না উনি নেই কোথাও । পার্কিং থেকে বাড়ির ড্রয়িং রুমে যেতে সর্বোচ্চ ৫মিনিট সময় লাগে সেখানে ১৫ মিনিট যাবত হেঁটে চলেছি কিন্তু ড্রয়িং রুমে ঢুকতে পারলাম না। অসহ্য লাগছে এই হাটা হাঁটি। এতো কাজিন এসেছে বিয়েতে এখন কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।,,ধুর মাথাটাই গরম হয়ে যায়,,! ,,মাথার মধ্যের নার্ভসগুলো ও লাফালাফি শুরু করেছে।জেরিন ও যে কোথায় ডুবে মরল কে জানে?? হঠাৎ তিশার সাথে দেখা হলো।(তিশা হলো বড় মামুর ছোট মেয়ে) আমার ছোট এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আমার চোখ মুখ চকচক করে উঠলো খুশিতে। খুশি খুশি মুখে তিশাকে ডাকলাম,,,
,,এই তিশা ,,,তিশা,,(হাত উঁচু করে ইশারা করছি)
তিশা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখান থেকে আমার ডাক শুনে স্লোমোশন পা ফেলে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি তাকিয়েই আছি ওর দিকে আর ভাবছি,, স্লোমোশন যেন করোনার মতো সংক্রামক ব্যাধি হয়ে গেছে। সবাইকেই কি আজ প্রোমশনের ভাইরাস আক্রমণ করল?? কি সাংঘাতিক কান্ড!!WHO(বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)জানতে পারলে হয়তো আমাদের বিয়ে বাড়ির সকলকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে ও রেখে দিতে পারে। তবে একটা জিনিস ভালো হলো এই এক স্লোমোশন আর নানিমা একজন দুজন ভালো মিলবে।
২মিনিট পর হাজির হয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলল,,
,,”সোনালী আপু ,,?? তুমি কি কিছু বলবে??”
আমি মাথায় একটা চাটি মেরে ভ্রু কুঁচকে বললাম,,
,,”এই তুই কি আগের চাইতে আরো সুন্দর হয়েছিস ??,,যে তোর চেহারা দেখার জন্য ডাকবো??কিছু বলার জন্যেই ডেকেছি।
তিশার মুখটা মলিন হয়ে গেল । বিষন্নতা তার চোখে মুখে।বড় আপুর কাছে এমন কথা হয়তো আশা করেনি। এখনকার জেনারেশনের এই একটা বড় সমস্যা,,একটু তেই সবার মুখ কালো হয়ে যায়।তিশাও মুখ কালো করে চাপা গলায় বলল,,
,,”হুম ,,বল আপু,,!!”
আমি ওর গাল টেনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,,
,, শোন নানিমাকে নিয়ে তুই ড্রয়িংরুমে যা ।আর আমার খুব টয়লেট পেয়েছে (ডাহা মিথ্যা কথা)।তাই আমি দৌড়ে রুমে যাচ্ছি।(বিনিত গলায় বললাম) প্লীজ বোন এই কাজটা একটু করে দে,,।
মাখনে মনে হয় কাজ দিয়েছে। তিশার মুখের মলিনতা কিছুটা কমেছে। আমাকে হালকা গলায় বলল,,
,,”ঠিক আছে,, তুমি যাও।”
আমি পারিতো এক দৌড় দেই। কিন্তু তেমন করলে তিশা উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে বসবেন।তাই চুপচাপ হাঁটা দিলাম রুমের দিকে। জোরে হাঁটতে পেড়ে ও যেন ভালো লাগছে। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠেছি। টয়লেট ফয়লেট কিছুই আমার পায়নি তাই টয়লেটে তো যাব না কিন্তু ফ্রেশ হতে হবে।তাই ওয়াশরুমে ঢুকালাম ফ্রেশ হতে।ওয়াশরুমগুলো পাবলিক টয়লেটে রুপান্তরিত হয়েছে।বাড়ি ভর্তি মানুষ তাই ওয়াশরুমেও সিরিয়াল। তাই ফাক পেয়ে ঢুকে গেলাম।
একটু বাদে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। একবার ছাদ থেকে ঘুরে আসি । বাসায় এসে তো রাত ভাইয়ার টিকিটির ও খোঁজ পেলাম না। জেরিন আর অপূর্ব ভাইয়ার ও খোঁজ নেই।রাত ভাইয়া হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত ,,। একঝলক দেখেই আসি।ওড়নাটা গলায় ঝুলিয়ে পা বাড়ালাম ছাদের উদ্দেশ্যে।সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে পড়লাম।যা ভেবেছিলাম তার ভিন্ন কিছু নয় উল্টো এখানে কিছু যোগ হয়েছে । কারণ এখানে রাত ভাইয়া ,, জেরিন ,, ভাইয়া সবাই তো আছেই সাথে আছে প্রিতি আপু।কেমনডা লাগে??
জেরিন আর ভাইয়া বাড়ীর সকলের অগোচরে একটু প্রেম সেড়ে নিচ্ছে। এমনিতে ও বেচারারা লজ্জায় কারো সামনে কিছু বলতেই পারছে না। অন্যদিকে এই কাকাতুয়া জুটি (রাত ভাইয়া আর প্রিতি আপু)একে অপরের সাথে সেটে আছে।প্রিতি আপু যে গায়ে পড়া মেয়ে সেটা আমি জানি কিন্তু রাত ভাইয়া?? সেও??রাত ভাইয়া আর প্রিতি আপু সামনাসামনি দুটো চেয়ারে বসে চিপস খাচ্ছে। চিপকু বাবু সোনা বলে চিপস খাইয়ে দিচ্ছে।রাত ভাইয়ার মুখে কিছুটা অস্বস্তির ছাদ থাকলেও চিপকু বেজায় খুশি।রাত ভাইয়া বসে বসে কিসের যেন লিস্ট বানাচ্ছেন। ডেকোরেটরের লোকেরা বিকালের ফাংশানের জন্য সবকিছু সাজাচ্ছে।
আমি ছাদে পা রাখতেই সকলে তাকালো আমার দিকে।রাত ভাইয়া একটু বিব্রত হলো বলে মনে হচ্ছে। আমার খুব রাগ লাগছে। রক্ত টগবগ করে ফুটছে।না চাইতে ও আমার মুখে রাগ স্পষ্ট। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকাচ্ছি রাত ভাইয়ার দিকে।রাত ভাইয়া আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। জেরিন আপু শুধু একবার আমার দিকে তাকালো । তার কোনো ভাবান্তর নেই। তবে রাত ভাইয়া যে উঠে দাঁড়ালো তাতে তার চিন্তার শেষ নেই। যেমন,,
,,”এই রাত??কি হলো তুমি দাঁড়ালে কেন??বসো।(ন্যাকামি করে)
এমনভাবে বলেছেন যেন দু বছরের ছোট বাচ্চা ।এক পা বাড়ালেই হোঁচট খেয়ে পড়বে।,,কি ন্যাকামি !! দেখলে গা জ্বলে যায়!!”আমি ঠোঁটে একটা মিথ্যে হাসি টেনে রাত ভাইয়ার দিকে পা বাড়ালাম।রাত ভাইয়ার উদ্দেশ্যে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,,
,,”রাত ভাইয়া ??চিপস খাচ্ছেন বুঝি??
রাত ভাইয়া কোনো জবাব দিলেন না শুধু আমার দিকে একপলকে তাইয়ে আছেন সন্দেহের নজরে। আমি ওনার পিছনে দাঁড়িয়ে আবার বললাম,,
,,”রাত ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন কেন?? প্লীজ বসুন!”
রাত ভাইয়া আমার কথায় ভড়কে গেলেন।ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবছেন। আমার দিকে সন্দেহের নজরে তাকিয়ে আছেন। আমি আবার বললাম,,
,,”বসেন রাত ভাইয়া। দাড়িয়ে আছেন কেন? দেখুন চি,,,, সরি প্রিতি আপুও আপনাকে বসতে বলছেন,, প্লীজ বসুন।”
প্রিতি আপুও আমার কথায় সায় দিচ্ছেন,,
,,”হ্যাঁ,, হ্যাঁ ,,রাত তুমি বসো।”
রাত ভাইয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে বসতে যাচ্ছেন আর ,,, তখন ধপাস করে পড়ে গেলেন মাটিতে। খুব ব্যাথা না পেলেও অবাক হলেন খুব। চিপকু আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে চেয়ার থেকে উঠে ঝাঁঝালো গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন,,
,, সোনালী ,,এটা কী হলো?? তুমি রাতকে ফেলে দিলে কেন??
চিপকুর চেঁচামেচি শুনে জেরিন আর অপূর্ব ভাইয়ার ছুটে এলেন।রাত ভাইকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে ভাইয়া ওনাকে ওঠালেন।
আমি ছোট করে হেসে একপলক রাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে চিপকুকে বললাম,,
,,”সেটা নাহয় ওনার কাছেই জেনে নেবেন কেমন?? আমি আসি এখন,,!!”(বলেই আমি হনহন করে ছাদ থেকে চলে আসলাম।)
আসলে হলো কি,,??আমি পেছন থেকে চেয়ারটা টেনে সড়িয়ে দিলাম। ওমনি উনি পড়ে গেলেন।”
আমি রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।রাগে দাঁতগুলো কিটমিট করছে। ইচ্ছে করছে ওদের দাঁতগুলো ভেঙে দেই । আবার ন্যাকামি করে চিপস খাওয়া হচ্ছে। একেবারে চিপস খাওয়া ঘুচে যেত। আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে ভালো আন্টি হাসি হাসি মুখ করে আমার রুমে এসে হাজির।আমাকে দেখে সে মহা খুশি।আদুরে গলায় ডাকছেন,,
,,”মিষ্টি মা?? শুনে পাচ্ছিস??”
আমি উঠে বসলাম। স্বাভাবিক গলায় বললাম,,
,, হ্যাঁ ,, ভালো আন্টি বলো??”
উনি এগিয়ে এলেন আমার দিকে । আমার গালে হাত দিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বললেন,,
,,”দেখ না ,, বাসায় যেতে হবে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে হবে। কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না যে সাথে নিয়ে যাব !!তুই কি একটু আমার সাথে যাবি প্লীজ।”
ভালো আন্টি এমন করুন গলায় বললেন যে আর না করতে পারলাম না। এমনিতে ও এখানে থেকে কি হবে??রাত ভাইয়া আর চিপকুর নাটক দেখবো। তার চাইতে বরং ভালো আন্টির সঙ্গে যাই। মিষ্টি করে হেসে বললাম,,
,, ওকে ভালো আন্টি চলো। আমি যাব তোমার সাথে ।”
ভালো আন্টি তো খুব খুশি। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি ও বাধ্য মেয়ের মতো ওনার সাথে বেড়িয়ে পড়লাম চোখ মুখ খিচে।
#পর্ব-২৮
ভালো আন্টি তো খুব খুশি। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি ও বাধ্য মেয়ের মতো ওনার সাথে বেড়িয়ে পড়লাম চোখ মুখ খিচে।
❤️
প্রখর রোদ বাইরে। পড়ন্ত দুপুরে তার তেজ একটুও কমেনি বরং সূয্যি মামাতো আজ সোনালীর মতো রেগে মেগে ফায়ার হয়ে আছে।ভালো আন্টির সাথে যাচ্ছি তো কিন্তু মন পড়ে রয়েছে ছাদে।মনে মনে ভাবছি,,আরে মামা আমার এখানে রাগ না দেখিয়ে ,,যাও আমাদের ছাদে যাও ,,(কপাল কুঁচকে)আর ওই চিপকুকে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে দাও,,হমমম,,!! তবে রাত ভাইয়াকে কিছু করো না । তার জন্য এই সোনালীই যথেষ্ট। কোথায় একটা পঁচা দেখতে ছেলের সাথে প্রেম করব ।তা না,,এক “ফুল কুমারের”সাথে প্রেম করে এখন নিজে বডিগার্ড হয়ে গেছি।”
ভালো আন্টি কপাল কুঁচকে
আমার দিকে তাকালো । সন্দেহের নজরে বলেছেন,,
,,,”কিরে মিষ্টি মা একা একা বিরবির করছিস কেন??(ভ্রু নাচিয়ে)কি ব্যাপার?? আবার প্রেমে পড়লি না??””
আমি তো আকাশ থেকে পড়ে খেজুর গাছের মগডালে আটকে পড়লাম ভালো আন্টির কথা শুনে।উনি আমার কি বলছেন??আর এসব জানলেন কিভাবে?? আমি চোখ এদিক ওদিক করে জোরপূর্বক একটা মিছকে হাসি দিলাম।আর ঢোক গিলতে গিলতে আমতা আমতা করে বললাম,,
,,,”কিকি যে বববল না ভভালো আন্টি!! আমি আমার প্রেমম?? না না তুমি ভুল ভাবছো!!”
ভালো আন্টি একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন,,
,,”তাতো বুঝলাম । কিন্তু তুই এতো আমতা আমতা করছিস কেন??মনে হচ্ছে পুলিশের জেরার সম্মুখীন হয়েছিস??”
আমি আরো স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি ।মানে চোরের মায়ের বড় গলা টাইপের কিছু করার চেষ্টা করছি। কিন্তু হচ্ছে কোথায়?? নিজের প্রতি নিজের অসহ্য লাগছে। আবার হাসি হাসি মুখ করে বলছি,,
,,,”ধুর কি যে বল,,!! আমি প্রথম করব আর তুমি জানবে না তা কখনো হয়??(মাখন লাগাচ্ছি) তুমি আমাকে এই চিনলে??(করুন চোখে তাকিয়ে)
ভালো আন্টিকে দেখে মনে হচ্ছে আমার কথা মোটামুটি বিশ্বাস করেছে।তাই কিছুটা দুঃখী দুঃখী মুখ করে আমার দিকে তাকালো। সান্তনা মুলক চাহনি দিয়ে আমায় বলছেন,,
,,”মিষ্টি মা প্লিজ তুই কষ্ট পাস না ,, আমি তো তোর সাথে দুষ্টুমি করছিলাম।(একটা মুচকি হাসি দিয়ে)
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।,,বাবা,, কিছু বোঝেনি ভালো আন্টি আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ছিল।একটুর জন্যে বেঁচে গেলাম।
১০মিনিটের মাথায় রাত ভাইয়াদের বাসায় পৌঁছলাম। বাড়িতে কেউ নাই। গেটে তালা ঝুলছে। থাকবেই কি করে ??বাড়িতে মোটে তিনজন লোক,,ভালো আঙ্কেল- আন্টি আর রাত ভাইয়া।বিয়ে উপলক্ষে সবাই এখন আমাদের বাড়িতে। ভালো আন্টি চাবি দিয়ে তালা খুলে বাড়িতে ঢুকলেন।পিছু পিছু আমিও ঢুকলাম। আন্টি কি কি জিনিস নিবেন তাই আমাকে বললেন,
,
,,”মিষ্টি মা তুই রুমে চল । আমি আর তুই মিলে গুছিয়ে নিয়ে নেব।”
আমিও মাথা ঝুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে আন্টির পিছনে পিছনে রুমে ঢুকলাম। আলমারি থেকে বেশ কিছু জিনিস বের করে একটা ব্যাগে নিয়ে নিলেন। আমাকে বললেন,,
স
,,”শোন মিষ্টি মা,, রাতের ঘর থেকে ও কিছু জিনিস নিতে হবে ।চলতো একটু,,”
ভালো আন্টি ব্যাগটা নিয়ে হাটা দিলে আমি ওনার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে অভিমানী গলায় বললাম,,
,,”আমি দাঁড়িয়ে থাকতে তুমি ব্যাগ টানবে??যতাহলে আমি আছি কি করতে?”
ভালো আন্টি ছোট করে একটা হাসি দিয়ে চোখ গোল গোল করে বলেন,,
,,,”তুই এতো বড় হলি কবে?? আমাকে বুড়ি প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছিস?? একটা মা দেব না,,,ব্যাগ টানাটানি বের হয়ে যাবে।”(বলেই জোরে জোরে হাসতে শুরু করলেন।)
সাথে সাথে আমি ও হাসতে শুরু করলাম । হাসতে হাসতেই ভালো আন্টির দিকে চোখ পাকিয়ে বললাম,,
,,”হয়েছে,, আমাকে আর বোকতে হবে না।লেট হয়ে যাচ্ছে । আবার বাসায় ও জেতে হবে।”
মনে মনে ভাবছি,,
,,”তোমার ছেলেকে আবার রেখে এসেছি চিপকুর আস্তানায়।কোথা থেকে আবার চুরি হয়ে যায় বলা তো যায় না??তাই তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়া জরুরি।”
ভালো আন্টি আবার ডাকতে শুরু করেছে,,
,
,,”কি রে?? আবার কোন চিন্তায় পড়লি?? চিন্তাশীল একটা ,,জলদি আয়।”
চিন্তার পর্দায় ফুটো করে ভালো আন্টির পিছনে দৌড়োলাম । ভালো আন্টি রাত ভাইয়ার রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেছে। আমি ও ব্যাগ হাতে আন্টির সঙ্গে রাত ভাইয়ার রুমে উপস্থিত হলাম। ওনার রুমটা দেখলেই আমার কেমন যেন একটা ফিল হয়।এই রুমের বাতাসে ও রাত ভাইয়ার সুভাষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। কেমন একটা প্রেম প্রেম গন্ধে মম করছে পুরো ঘরটা।রাত ভাইয়ার ছোঁয়া প্রতিটা জিনিস ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়। এগুলো ছুঁলে হয়তো রাত ভাইয়াকে ছোঁয়া হবে। ওনার শার্টের গন্ধে পাগল হতে ইচ্ছে হয়। মনে হয় বুকের ভেতর শক্ত কিছু আঘাত করছে। ভালোবাসার আমেজে পরিপূর্ণ এই ঘর।আগেও আমি এই রুমে এসেছি কিন্তু আজ একটু অন্যরকম অনুভূতি গা ঝাড়া দিচ্ছে। ভালো আন্টি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত। আমি ঘুরে ঘুরে দেখছি রুমটা। হঠাৎ বিছানার কাছে এসে চোখ আটকে গেল সাইট টেবিলে রাখা সেই ডায়েরিটায়। যেখানে আমি S❤️ নামক অক্ষরটা দেখেছিলাম। সেদিন খোলা থাকলেও আজ মাঝের পাতায় কলম গুজে বন্ধ করে রাখা হয়েছে ডায়েরিটা। দুষ্টু বুদ্ধিরা ঘুর পাক খাচ্ছে। লোভ হচ্ছে ডায়েরিটা পড়ে দেখার। কিন্তু ভালো আন্টির সাথে তো আর এই ডায়েরি পড়া যাবে না। আর সেটা ভালো ও দেখায় না।,,”আচ্ছা,,ডায়েরিটা কি টুক করে ব্যাগে তুলে নেব??পড়ে না হয় এক সময় আয়োজন করে বসে পড়া যাবে মিস্টার রাতের কাচ্চা চিটঠা,,”। কিন্তু মাথা বলছে ,, অন্যের জিনিস এভাবে না বলে নিয়ে যাওয়া বা না জানিয়ে পড়া একদম উচিত না।একে এক কথায় চুরি বলে।”কি যে করি বুঝতেই পারছি না। আবার নিজের মনকে না বুঝিয়ে মাতাকে যুক্তি দিচ্ছি,,,”রাত ভাইয়াকে তো আমি ভালোবাসি আর উনিও আমায় ভালোবাসে।তো ওনার জিনিস আর আমার জিনিস তো এক ই হলো। তাহলে নিজের জিনিস নিলে তাকে চুরি বলবে কেন?? এখানে মস্তিষ্কের হার হলো আর মনের জিত। ভালো আন্টি কি করছে একবার দেখে নিলাম।উনি ব্যাগ গোছাতে গভীর মনোযোগ দিয়েছেন,,পাছে আবার কিছু রয়ে যায়। আমিও সেই সুযোগ নিয়ে টুক করে ডায়েরিটা হ্যান্ড ব্যাগে ভড়ে নিলাম। যদিও চুরি করেছি কিন্তু খুব খুশি খুশি লাগছে। তখনই ভালো আন্টি ডাকলেন,,
,,”মিষ্টি মা,,।
ভালো আন্টির ডাকে আমি হকচকিয়ে গেলাম।কাম সারছে,,চুরি মনে হয় ধরা পড়ল।ভয় ভয় চোখে ভালো আন্টির দিকে ঘুরলাম আর বললাম,,,
,,”হ্যাঁ,,আআন্টি!!”
ভালো আন্টি উঠে দাঁড়িয়ে চিন্তিত গলায় বললেন,,
,,”কি হয়েছে তোর?? মুখটা এতো শুকনো শুকনো লাগছে””?
এই যে,,, ভালো আন্টি কিছুই বুঝতে পেরেনি আমি শুধু শুধুই অনুসূচনায় ভুগছি। তাড়াতাড়ি নিজেকে স্বাভাবিক করে সরল গলায় বললাম;,,
,,,”না না ভালো আন্টি আমি একদম ঠিক আছি আমার কিছুই হয়নি তুমি হঠাৎ ডাকলে তো তাই একটু লাফিয়ে উঠলাম। তুমি কি যেন বলতে চাইছিলে?বল,,!!(টপিক চেঞ্জ করার ধান্দা)
ভালো আন্টি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বললেন,,
,,”হ্যাঁ,,কি জেন বলছিলাম??এই দেখ কি বলবো সেটাই ভুলে গেলাম । আচ্ছা ডমনে পড়লে বলবো কেমন? এখন চল,, আমার সব নেওয়া শেষ,!!”
আমি ও তাড়া দেখিয়ে বললাম,,
,,”হ্যাঁ হ্যাঁ,,চল।”
ভালো আন্টি আর আমি বের হলাম। আন্টি আবার আগের মতো বাসায় তালা ঝুলিয়ে বাসার পথে রওনা হলেন। আমাদের এখন বেজায় তাড়া।তাই কথা বলার সময় নেই। তাড়াতাড়ি করে বাসায় আসলাম। ভালো আন্টি আম্মুর রুমের দিকে অগ্রসর হলেন আর আমি আমার রুমের দিকে,,।
সাড়া বাড়িতে কোথাও রাত ভাইয়াকে দেখলাম না। এখনো কি ছাদে আছে চিপকুর সাথে ,, এতো কিছুর পরেও ওখানে বসে থাকার লোকতো উনি না,,। রুমে এসে পা রাখলাম,,। জেরিন বসে কি যেন করছে।পাশে তিশা আর জেরিনের দুজন কাজিন ও আছে। আমি একটু বসবো বসবো করে কিন্তু জায়গা নেই পুরো খাট বিরোধী দলের দখলে। কোথাও বসার জায়গা নেই।আর সেখানে আমি কি করে বসব। জেরিন হাসি হাসি মুখ করে বললাম,,
,,”কিরে কোথায় ছিলি?? আমি তোকে কতো খুঁজলাম। কিন্তু কোথায়ও পেলাম না।,,”
আমি হ্যান্ড ব্যাগটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখে,, ভারাক্রান্ত মুখে বললাম,,
,,”পাবি কি করে আমি ভালো আন্টির সাথে ওনাদের বাসায় গিয়েছিলাম । ভালো আন্টি নাকি কি সব জিনিস আনবে তাই।”
জেরিনের কাছে থেকে ছাদ থেকে আমি আসার পড়ে কি হলো সেটা জেনে নিতে পারতাম কিন্তু এখানে অনেক লোকজন তাই আর এসব জানা যাবে না।রাত ভাইয়া কোথায় সেটাও হয়তো জানা যেত। কিন্তু কি আর করার?(মনে মনে)এর মধ্যেই আম্মুর জরুরি তলপ পড়ল আমার উপর। নিচের কিচেন থেকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে,,
,,,,”সোনালী,,,,,,,, সোনালী,,,, এদিকে আয়!!”
আমি ও বাধ্য মেয়ের মতো দৌড়ে দৌড়ে গেলাম আম্মুর কাছে নাহলে এখনই বাড়ি মাথায় তুলবে। কিচেনে উপস্থিত হলাম।হাঁপাতে হাঁপাতে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,,
,,কি হয়েছে আম্মু এভাবে চেঁচামেচি করে কেন??”
আম্মু বিরক্ত গলায় তরকারি নাড়তে নাড়তে বললেন,,
,,,”চেঁচামেচি করব না তো ফিসফিস করে ডাকব? তাহলে তুই শুনতে পাবি??”
আমি ও ভেবে দেখলাম ,, ঠিকই তো,, বাড়িতে যেমন মানুষ কিলবিল করছে তাতে আমি সত্যিই শুনতে পেতাম না।শান্ত গলায় আম্মুকে প্রশ্ন করলাম,,
,,”এবার তো বল ডাক ছিলে কেন??”
আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,
,,”হ্যাঁ যা বলতে ডেকেছিল,,শোন,,স্টোররুমের দিকে যা। বিকেলের অনুষ্ঠানের জন্য কিছু পর্দা লাগবে। তুই একটু নিয়ে আয় না!!”
আম্মুকে কিছু না বলেই হিটা দিলাম স্কোর রুম থেকে পর্দা আনতে।একেই হয়তো বলে বিয়ে বাড়ি। আম্মু ও একটু খিটখিটে হয়ে গেছেন। এতো মানুষের ভীড়ে তার ও হয়তো আমার মতো অস্থির অস্থির লাগছে।তাই এমন চেঁচামেচি করছেন। অন্যমনস্ক হয়ে হাটছি,, হঠাৎ কেউ আমার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে একটা ফাঁকা রুমে ঢুকিয়ে মুখ চেপে ধরল আর শুধু এই না আমাকে ও দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। আমি ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম।বড় বড় চোখ করে তাকালাম সামনে থাকা লোকটার দিকে। আমার চোখগুলো তুঙ্গে উঠে গেল ওনাকে দেখে,,কারন লোকটা ছিল রাত ভাইয়া। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অপলকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। খুব সুন্দর লাগছে ওনার মুখটা। ফ্যানের হালকা বাতাসে সমানে ওনার চুলগুলো দুলছে,,সরষে ক্ষেতের সরষে ফুলের মতো। চোখের পাতায় বড়ো বড়ো পাপড়ি,সে কি মায়াবী,,!!এসব দেখলে প্রেমে না পড়ে থাকা যায় না। কিন্তু আমি তো রাগ করেছি তাই এভাবে তাকিয়ে থেকে প্রেম ছড়ালে চলবে না। ওনার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি শুরু করে দিলাম। কিন্তু ওনার শক্তির সামনে আমি আগে ও পারিনি আর আজ ও না।। উল্টো রাত ভাইয়া আরো একটু জোরে চেপে ধরলেন। আমার মুখের একদম কাছে এসে বললেন,,
,,”কি হয়েছে সোনা তুমি এমন মিরকির ব্যারামের
রোগীদের মতো ছটফট করছো কেন??
আমার মুখে রাত ভাইয়ার হত দিয়ে চাপা দেওয়া কিন্তু আমি তারপর ও আমি কথা বলার চেষ্টা করছি। সেটা কথা না হয়ে কিছুটা এমন শোনা যাচ্ছে,,
,,,”উমমমম,,,মমমমমমম,,উমমমমমহড়হ,,”
,,
এগুলো কি বলছো সোনা,,?? নতুন কোনো ভাষা শিখছো?”
আমি মনে মনে ভাবছি,,এই লোকটার মাথা কি একদম গেছে?? নাকি আমার সাথে মজা করছেন?? নাকি আমার মুখে হাত চাপা দেওয়ার কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে??তাই হবে। আমি চোখ দিয়ে বারবার হাতের দিকে ইশারা করছি।রাত ভাইয়া হয়তো বুঝতে পেরেছে। আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বললেন,,
,,,”ওপস!!সোনাপাখি,,আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোমার মুখে হাত,,(লজ্জা জনক হাঁসি দিয়ে)
আমি অভিমানী গলায় বললাম,,
, আপনি তো কতোকিছুই ভুলে যান ,, মুখে হাত রেখে ভুলে যান,, ভালোবাসার মানুষটির কথা ভুলে যান।আরো কো কতকিছু। কোন দিন দেখবেন নিজেকেই ভুলে গেছেন।”
রাত ভাইয়া অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।করুন চোখের চাহনি,,। তাতে ও অদ্ভুত মায়া,,
,, চলবে,,❤️