মন ময়ূরী পর্ব -০১

১.

-আমি একজন ভার্জিন স্বামী চাই যেমনটা আপনারা সকল পুরুষেরা চান একজন ভার্জিন স্ত্রী। দশটা হিরোইনের পেট হাতানো হিরো আমার দরকার নেই।

সামনে বসে থাকা মেয়েটির কথা শুনে আমার মুখ দিয়ে জুস বেরিয়ে গেলো।

কি সাংঘাতিক মেয়ে! ভাবা যায়।হাত থেকে জুসের গ্লাসটি টেবিলের উপরে রেখে ট্যিসু দিয়ে মুখ মুছে, স্বাভাবিকভাবে আমার সামনে বসে থাকা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম,

-আপনি বলতে চাইছেন আ..মি ভার্জিন নই?

-জি।কেন হিরো সাহেব আপনি কি নিজেকে অত্যন্ত শুদ্ধ পুরুষ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাইছেন?

-দেখুন, খেয়া আপনি কিন্তু ইনডিরেক্টলি আমাকে ইনসাল্ট করছেন। আপনার যদি আমাকে আপনার জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ না হয় আমাকে সরাসরি বলতে পারেন। কিন্তু, এভাবে বাড়িতে ডেকে এনে অপমান করার কোনো মানে হয় না,আমি চললাম।

ঘরে ছেড়ে বের হয়ে গেলো দি মোস্ট পপুলার হিরো ফায়েজ চৌধুরী।

দরজা খুলে ঘরে ছেড়ে বের হতেই সর্বপ্রথম যার সামনে সম্মুখীন হলাম সে হলো আমার পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট জব্বার উদ্দিন। আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে সালাম দিয়ে বলছে,

-স্যার,আমাদের ভাবিজান দেখতে কেমন?

-ভালো।

একবাক্যে বললো ফায়েজ কিন্তু সে তো জানে আসলে খেয়া কেমন?

-স্যার,আপনার ঘর্মাক্ত লাল মুখ দেখে মনে হচ্ছে আপনি ভাবিজানকে দেখে অনেক নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। নার্ভাস হওয়াটাই স্বাভাবিক স্যার, মেয়ে মানুষকে চোখের সামনে দেখলে স্যার এমনিতেই দিলে কেন যানি ধকধক বেশি হয়। আর আপনি তো স্যার নিজের হবু বৌকে দেখছেন স্যার। আপনি বোধহয় স্যার দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে বাসরঘর পর্যন্ত চলে গেছেন, স্যার।

-জাস্ট শাট আপ, জব্বার। মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। আমি আর একমুহূর্তের জন্য এই বাড়িতে থাকবো না। মা’কে গিয়ে বলবে আমি জরুরি কাজে বাইরে চলে যাচ্ছি।

জব্বার মাথা নিচু করে সায় জানিয়ে ড্রইংরুমের দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে।

ফায়েজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে খেয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

-কি রে খেয়া ছেলেটা ওভাবে আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে কেন?

খেয়া তখন বই পড়ছিল, তার মায়ের কন্ঠ পেয়ে পিছু ফিরে তাকিয়ে বললো,

-আমি কি জানি তোমাদের হিরো সাহেব কেন তোমাদের কিছু না জানিয়ে চলে গেছে। দেখো গিয়ে কোনো ডিরেক্টর হয়তো কল করেছে অন্য হিরোইনের শরীর হাতাতে।

-ছিহ্ খেয়া কি বলিস এসব! ছেলেটা এসব শুনলে কি ভাববে ভেবেছিস একবার? আর জানিস তুই ফায়েজ বাংলাদেশের সবচেয়ে ফেমাস একজন নায়ক।

-মা, আমি জানি কে ফেমাস! আর বললে না হিরো সাহেব আমার কথা শুনলে কি ভাববে? তাকে আমি অলরেডি এই কথা বলে ফেলেছি তাই উনি আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

খেয়ার আম্মু মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

-আর একটা কথা মা, আমি তোমাদের কথা শুনে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। কিন্তু আমার জন্য দরকার হলে রাজমিস্ত্রী এনো তবুও ওসব ফিল্মের হিরো এনো না।

খেয়া তার মা’কে কথাগুলো বলে বই বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেলো, উদ্দেশ্য ওর দাদির ঘরে।

জয়নাব বেগম তখন এশারের সালাত আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। হুট করে ঘরের দরজা খুলে প্রবেশ করলো উনার নাতনি খেয়া। উনি কোরআন শরিফ বন্ধ করে চুমু দিয়ে কোরআন শরীফ রেখে দিলেন পাশে রাখা টেবিলে।

খেয়া এসে তার দাদির কোলে মাথা পেতে শুয়ে পড়লো। জয়নাব বেগম নাতিন চুলে হাত বুলিয়ে মৃদু আওয়াজে বলেন,

-কি রে দাদিবু, মন খারাপ হয়েছে?

খেয়া ততক্ষণে কাঁদতে শুরু করলো। খেয়ার কাঁপা শরীর দেখে জয়নাব বেগম বুঝতে পারেন, তার নাতনি কান্না করছে।

-ছেলে পছন্দ হয়নি?

-দাদি, আমি কোনো হিরো-জিরোকে বিয়ে করবো না।

হিচকি তুলতে তুলতে বললো খেয়া।

-কেন হিরো সাহেব কি খারাপ?

-হ্যা, হিরো সাহেব খারাপ। আমি যাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবো সে শুধু একান্তই আমার হবে। সে কেন অন্য মেয়ের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করবে?দাদি, প্লিজ তোমরা আমাকে দিয়ে সারাবছর বাড়ির কাজ করাও সমস্যা নেই কিন্তু ওই ফায়েজ চৌধুরীকে বিয়ে করতে বলো না।

নাতনির কথা শুনে জয়নাব বেগম মুচকি হেসে বলেন,

-তুই তো ঘরের কোনো কাজই করিস না। তাহলে, তুই কিভাবে আমাদের বাড়ির কাজ করবি?

-এতদিন কাজ করিনি কিন্তু এখন থেকে করবো। কিন্তু, তুমি আমার সাথে ওয়াদা করো তুমি বাবাকে বোঝাবে, আমি ওই নায়ককে বিয়ে করবো না।

-আচ্ছা, তোর বাবা এলে আমি তাকে বলবো। এখন চল খেয়ে আসি।

খেয়া দাদির কোল থেকে শোয়া থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। দাদির হাত ধরে বললো,

-চলো দাদি,

খেয়ার হাত ধরে জয়নাব বেগম মুচকি হেসে হেটে যাচ্ছেন।

******************

চৌধুরী বাড়ি

ড্রইংরুমে বসে আছে বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্য। মাহমুদ চৌধুরী সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলেন,

-ফায়েজ কোথায়?

-গুরত্বপূর্ণ কাজে বেড়িয়েছে,চলে আসবে। আপনি আসুন আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

মাহমুদ চৌধুরীর স্ত্রী, রেহনুমা চৌধুরী কথাগুলো বললেন।

– এখন না,তুমি বসো ফায়েজ আসুক। ফাহিম?

-জি, বাবা?

-তোমার ভাইয়ের পিএ জব্বারকে কল দিয়ে বলো,এখুনি যেন ফায়েজ বাড়িতে ফিরে আসে।

-জি, বাবা বলছি।

ফাহিম চটজলদি সোফা ছেড়ে একপাশে গিয়ে ফায়েজের কাছে কল দিলো,

-হ্যালো,

-ভাইয়া, তুমি কোথায়?

-এই তো আছি একজায়গায়। কেন?

-বাবা,তোমাকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসতে বলেছে।

-আসছি।

ফাহিম কল কেটে তার বাবার সামনে গিয়ে নিচু কন্ঠ বললো,

-বাবা,ভাইয়া আসছে।

মাহমুদ চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে আয়েশ করে সোফায় বসে পত্রিকা পড়তে লাগলেন।

গাড়ির উপরে শুয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ফায়েজ। ওর মস্তিষ্কে বারবার খেয়ার বলা এক একটি শব্দ প্রতিধ্বনি তুলছে।

শোয়া থেকে উঠে বসলো ফায়েজ, পকেট থেকে লাইটার বের করে আগুন ধরিয়ে সেই আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলো ফায়েজ।

-খেয়া, আজ তোমাকে দেখে আমার দেহে যতটা জ্বলন সৃষ্টি হয়েছিল ঠিক তারচেয়ে বেশি আগুন জ্বলছে তোমার মুখ থেকে উচ্চারিত এক একটি তিক্ত বাক্য। আমার অপরাধ আমি ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রির একজন হিরো। আমার এখন নিজের প্রতি ঘৃনা লাগছে, কেন আমি হিরো হলাম? যদি আমি সাধারণ কেউ হতাম তবে কি খেয়া বিনাবাক্য তার জীবনসঙ্গী হিসেবে আমায় নিবার্চন করতো?হয়তো,কিন্তু খেয়ার মতো এত চমৎকার একটি মেয়েকে কখনো কি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্হানে রাখতে পারবো না?

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লাইটার অফ করে পকেটে রাখলো ফায়েজ।গাড়িতে গিয়ে বসে কার স্টার্ট করে রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্য।

দেড় ঘন্টা পর চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করলো ফায়েজের গাড়ি। গাড়ি পার্ক করে বাড়ির মূল ফটকে প্রবেশ করতেই দেখলো তার বাবা সোফায় বসে নিউজপেপার পড়ছে, পাশে বসে আছে ওর মা আর ফাহিম মোবাইলে কি যেন করছে?

ফায়েজ সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিতেই ফায়েজের বাবা-মা,ভাই ফায়েজের দিকে ঘুরে তাকালো।

মাহমুদ চৌধুরী সালামের উওর দিয়ে বললেন,

-ফায়েজ?

-জি, বাবা?

-হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। আমরা সবাই রাতের খাবার একসাথে খাবো।

-জি বাবা,দশমিনিট অপেক্ষা করুন, আমি আসছি।

ফায়েজ অতিদ্রুত তার রুমে গিয়ে কাপড় বদলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।

ওয়াশরুম থেকে টাওয়াল পড়ে বেড়িয়ে এলো ফায়েজ। এরপর,কার্বাড থেকে গাঢ় সবুজ রঙের ফুলহাতার গেঞ্জি,ট্রাওজার পড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে নিচে ডাইনিংয়ে চলে এলো।

সবাই ডাইনিংটেবিলে বসে খাবার খাচ্ছিল এমন সময় ফায়েজের বাবা ফায়েজকে জিজ্ঞেস করলো,

-খেয়াকে কেমন লেগেছে?

খেয়ার নাম শুনে আমি খাওয়া বন্ধ করে বাবার দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও খাওয়ায় মনোযোগী হলাম।

-খেয়ার সময়ের প্রয়োজন আছে, ওর ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হলে, ও বিয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফোকাস করতে চায়,বাবা।

#মন_ময়ূরী
#সূচনা_পর্ব
#Tahmina_Akther

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here