মন ময়ূরী পর্ব -১৮

#মন_ময়ূরী
#Tahmina_Akther

১৮.

কারো নিচু কন্ঠের কথা শুনতে পাচ্ছি ; আমি দেখতে চাই কে কথা বলছে?খুব বেশি চোখ জ্বালা করছে। আপ্রাণ চেষ্টা করার পর চোখ মেলে তাকাতে সফল হলাম।

চোখ মেলে তাকাতে অবাক হলাম কারণ আমি আমার ঘরে শুয়ে আছি। তারমানে, আমি বর্তমানে বাংলাদেশে আছি!

-মা,তুমি আসার সময় আমার পরনের কিছু ড্রেস নিয়ে এসো।

আবারও সেই চিরচেনা কন্ঠের স্বর আমার কর্ণ কুহুরে পৌঁছেতে আমি ডানপাশে তাকিয়ে দেখি, খেয়া মাথা নিচু করে মোবাইলে কথা বলছে।

-আলমারিতে আপনার ড্রেস রাখা আছে। নিশ্চয়ই আপনার পছন্দ হবে।

কথাটি বলে আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো ফায়েজ।

খেয়া ফায়েজের কন্ঠ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ফায়েজ উঠে বসেছে। খেয়া কল কেটে দিয়ে ফায়েজকে জিজ্ঞেস করলো,

-এখন, কেমন লাগছে আপনার? জ্বর আছে?

-আগের থেকে বেশ ভালো,জ্বর বোধহয় নেই। আপনি কখন এলেন এই বাড়িতে?

-আমি কখন এই বাড়িতে এসেছি এটা আপনার জানা জরুরি নয়। আগে আপনি আমাকে এটা বলুন গত পরশু আপনার সাথে যখন আমার মোবাইলে ভিডিও কলে কথা হয়েছিল, তখনও আমি আপনাকে দেখে বলেছিলাম, আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? উত্তরে আপনি বলেছেন,শুটিংয়ে ছিলেন তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে। অথচ, আব্দুল জব্বার বলছে আপনি ইন্ডিয়ায় যাবার পর থেকে জ্বরে ভুগছেন। গানের শুটিং পর্যন্ত ক্যান্সেল করে দিয়েছে আপনার ডিরেক্টর। এতটাই অসুস্থ আপনি ছিলেন যে, আপনাকে অচেতন অবস্থায় এই বাড়িতে নিয়ে আসতে হয়েছে। আমাকে না-হয় না বললেন, কিন্তু আপনার পরিবার তাদের সাথে অসুস্থতার কথা বললে কি হবে আপনার?

কথাগুলো বলতে বলতে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছে খেয়া। ফায়েজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে খেয়ার দিকে। খেয়া কথা শেষ করে যখন হাঁপাচ্ছিল ঠিক তখন ফায়েজ খেয়াকে বললো,

-খেয়া,আপনি আজ এখানে থাকবেন না-কি চলে যাবেন?

খেয়ার মেজাজ বিগড়ে গেলো ফায়েজের কাছ থেকে এহেন কথা শুনে। ফায়েজের খুব কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

-কেন,নায়ক সাহেব আপনাকে দেখতে আপনার নায়িকারা এলে খুব অসুবিধা হবে আমি এই বাড়িতে থাকলে?

-আমি কখন এই কথা বললাম!

-তাহলে,চুপ থাকুন আপনি। আমার যখন ইচ্ছা আমি তখন যাবো এই বাড়ি থেকে।

-সব আপনার ইচ্ছায় কেন হতে হবে,খেয়া? আমার কোনো ইচ্ছার মূল্য নেই?

খেয়া ফায়েজের কাছ থেকে সরে এসে বসলো।এরপর, ফায়েজের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আপনার কোন ইচ্ছার মূল্য রাখা হয়নি?

খেয়ার প্রশ্ন শুনে ফায়েজ ঘাড় নিচু করে ফেললো।কি উত্তর দিবে সে? না-কি খেয়াকে বলে দিবে, যে তোমাকে আমি বিয়ে করেছি তুমি আমার স্ত্রী হয়ে বাড়িতে থেকে যাও। তুমি কেন ওই বাড়িতে থাকবে?
না, এই কথা বললে খেয়া যদি ওকে বলে বসে,
“আপনি তো কথার মান রাখতে জানেন না। আপনাকে তো আমি বিয়ের আগে শর্ত জানিয়েছিলাম। না-কি বিয়ে করার পর সকল পুরুষদের মতো আপনারও মতামত বদলে গিয়েছে?”

ফায়েজ যখন নিজের সাথে আলাপ করছে ঠিক তখনি খেয়া বলে উঠে,

-প্রশ্নের উত্তর আছে?নেই হয়তো,!কারণ আমার তো কারো ইচ্ছার মান রাখার কথা ছিল না। এখন বলুন আপনি কিছু খাবেন?

-ভালো লাগছে না। পুরো মুখ তেঁতো হয়ে আছে। আপনি একটা কাজ করুন মা’কে গিয়ে বলুন কষ্ট করে আমার জন্য ফ্রুটস কেটে নিয়ে আসতে!

কিছুটা অনুরোধে স্বরে কথাটি বললো ফায়েজ।খেয়া বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে ফায়েজকে বললো,

-ডায়েট করবেন জ্বরের মধ্যে!আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি।

ফায়েজ মাথা উপর নিচ করতেই খেয়া ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেলো।খেয়া বের হয়ে যাবার পর ফায়েজ জোরে শ্বাস ফেলে ধীরপায়ে খাট থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

খেয়া রান্নাঘরে গিয়ে দেখলে ওর শ্বাশুড়ি কি যেন করছেন?খেয়া হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে বললো,

-চাচী, আপনার ছেলের ঘুম ভেঙেছে চাইলে দেখা করতে পারেন।

ফায়েজের মা ফ্রুটস কাটা বন্ধ করে খেয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। খেয়া উনাকে আশ্বাস দেয়ার জন্য আরও এগিয়ে এসে হাতের উপর হাত রেখে বলে,

-আমাকে বলেছে আমি যেন আপনাকে বলি উনার জন্য ফ্রুটস নিয়ে যেতে। তাই তো আমি এখানে চলে এলাম।

ফায়েজের মায়ের মুখে খুশির বলি রেখা দেখা ভেসে উঠেছে। বাটিতে কেটে রাখা ফ্রুটস গুলো হাতে নিয়ে চললেন ছেলের সাথে দেখার করার জন্য।

খেয়া মুচকি হেসে কি রান্না করবে ভেবে সব কিছু আয়োজন করতে লাগলো;ফায়েজের জন্য হোক তবুও আজ প্রথমবারের মতো সে রান্না করতে যাচ্ছে ওর শ্বশুর বাড়িতে।

খেয়া যখন রান্না করতে ব্যস্ত তখন ফায়েজের মা ছেলের ঘরে গিয়ে দেখলেন ছেলে সবেমাত্র ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। তড়িঘরি করে হাত থেকে বাটিটা খাটের উপর রেখে ছেলের হাত ধরে খাটে বসিয়ে দিলেন।

ছেলের গালে হাত দিয়ে একমনে তাকিয়ে ফায়েজের মা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো,

-আমরা কি তোর কেউই না, ফায়েজ?এত অসুস্থ হয়ে পড়েছিস অথচ আমাদের জানানোর চেষ্টা পর্যন্ত করিসনি!

ফায়েজ এক হাত দিয়ে ওর মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

-মা,আমি জানতাম তুমি এবং বাবা দুশ্চিন্তা করবে আমার অসুস্থতার খবর জানলে তাই বলিনি। কিন্তু, এতটা অসুস্থ হয়ে যাব ভাবতে পারিনি। এখন তুমি কান্নাকাটি বন্ধ করো।

-নে কান্না করছি। এবার এই ফ্রুটসগুলো খেয়ে নে আর শোন ডক্টরকে আসতে বলবো?

-ডক্টরকে আসতে বারণ করে দাও।একটা প্যারাসিটামল খেলে জ্বর সেড়ে যাবে।

-আচ্ছা,ঠিক আছে। কিন্তু, শরীর খারাপ লাগলে বলিস।

ফায়েজ মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে আপেলের এক টুকরো মুখে দিয়ে চিবাতে লাগলো।
ফায়েজের মা বাটিটা ছেলের কাছে দিয়ে উঠে ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেলেন।

ফায়েজের মা রান্নাঘরে এসে দেখলেন খেয়া সকালের নাশতা তৈরি করে ফেলছে। ফায়েজের মা খেয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

-সাহায্য করবো আম্মু?

খেয়া ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ওর শ্বাশুড়ি কথাটি বলে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

-না চাচী হয়ে গেছে, এখন রুটি ছেঁকবো।

-খেয়া,আমার মেয়ে নেই বলে আমি ভেবেছিলাম আমার দু’দুটো ছেলেকে বিয়ে করিয়ে মেয়ে আনবো এই বাড়িতে। তাদের মুখে মা ডাক শুনবো। তাদের চুলে তেল লাগিয়ে সুন্দর করে বেনী করে দিব। কিন্তু, আমার কপাল খারাপ। বড়ো ছেলের বৌ এখনও আমাকে চাচী বলে ডাকে। আমার কি আর মেয়ের মা হওয়ার শখ ঘুচবে না?

কিছুটা দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে কথাটি বললো ফায়েজর মা। খেয়া হাত থেকে খুন্তি রেখে ফায়েজের মা হাত ধরে বললো,

-আমি ভাবতেও পারিনি আপনি কষ্ট পাবেন!প্লিজ, আপনি কষ্ট পাবেন না আমি আপনাকে চাচী বলব না। মা বলেই ডাকবো তবে আমার একটাই অনুরোধ, আমার চুলে বেশী তেল লাগিয়ে দিবেন না।

খেয়ার কথা শুনে হেসে ফেললো ফায়েজের মা। খেয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলেন,

-তুমি ঘরে যাও ফায়েজ একা বসে আছে। আমি রুটি ছেঁকতে পারবো।কবির ভাই যদি দেখেন উনার পুতুল মেয়েকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি তবে আমার মেয়েকে নিয়ে উনি চলে যাবেন।

-কিন্তু, আপনি একা পারবেন?

-কেন পারবে না? তাছাড়া,বুয়া আজ ছুটিতে আছে দেখে আমি রান্নাঘরে এসেছি নয়তো ওরাই সব কাজ করে। তুমি যাও ফায়েজ একা বসে আছে।

খেয়া রান্নাঘর থেকে বের হয়ে ফায়েজের ঘরের দিকে চলে গেলো।

খেয়া ফায়েজের ঘরের সামনে আসতেই খেয়ার পা থমকে গেলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here