মুখোশের আড়ালে পর্ব ১০

#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_১০
#Saji_Afroz
.
.
পৌষীর হাতে ব্যান্ডেজ বিধায় ফাহাদ তাকে খাইয়ে দিচ্ছে ।
এক চামচ স্যুপ শেষ করে পৌষী বললো-
আপনি এতো ভালো রান্না জানেন, আমি জানতাম না!
.
ফাহাদ বিড়বিড়িয়ে বললো-
আমিও জানতাম না ।
-কিছু বললেন?
-নাহ । এই একটু চেষ্টা করলাম আর কি ।
-সত্যি অনেক ভালো হয়েছে!
-হুম । আচ্ছা শুনো, ভাবছি তোমার বাসায় খবর দিবো । আমি অফিসে চলে গেলে তোমার দেখাশোনা কে করবে! তাই তোমার বাসায়…
-ছুটি নিয়ে নিন ।
-মানে?
.
মাথাটা নিচু করে পৌষী বললো-
কিছুনা ।
.
কেননা সে জানে, এমন আবদার সে ফাহাদকে করতে পারেনা । সেই অধিকার তার নেই । ফাহাদ তার আবদার রাখবেনা । স্যুপ বানিয়ে আনা আর অফিসের ছুটি নিয়ে বাসায় বসে সেবা-যত্ন করার মাঝে অনেকখানিই তফাৎ রয়েছে ।
ফাহাদ বললো-
আমি নার্সকে বলে রেখেছি । কোনো অসুবিধে হলে বলিও তাকে । আমার অফিসে যেতে হবে । তাড়াতাড়িই চলে আসবো ।
-হু ।
.
স্যুপের ব্যাপারে পৌষীকে কিছু জানালো না ফাহাদ । শুনলে হয়তো বিশ্বাসই করবেনা!
.
.
পরেরদিন দুপুরের দিকে পৌষীকে নিয়ে বাসায় এলো ফাহাদ ।
দরজার সামনে আসতেই চমকে গেলো পৌষী । দরজার উপরে রঙিন কাগজ লাগানো । তার উপরে লেখা-
স্বাগতম পৌষী!
.
পৌষীর চেয়েও বেশি অবাক হলো ফাহাদ । সে তো এসব করেনি ।
পৌষী মুচকি হেসে বললো-
ধন্যবাদ!
.
পৌষীর মুখে হাসি দেখে তাকে কিছু বললোনা ফাহাদ ।
চুপচাপ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো তারা ।
পৌষীকে বললো-
তুমি রুমে যাও । আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ।
.
পৌষী রুমে এসেই একটা চিৎকার দিলো । ফাহাদ তার চিৎকারের শব্দ শুনে দ্রুতবেগে এগিয়ে গেলো তার দিকে ।
হাঁপাতে হাঁপাতে ফাহাদ বললো-
কি হয়েছে?
আচমকা ফাহাদকে জড়িয়ে ধরে পৌষী বললো-
আপনি এসব করেছেন আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা ।
.
ফাহাদ কিছু বলার আগেই পুরো রুমটার দিকে নজর পড়লো তার । খুব সুন্দরভাবে বেলুন দিয়ে সাজানো চারপাশে । খাটে ফুলের পাপড়ি ছিটানো ।
এসব দেখে ফাহাদের চোখ চড়াক গাছে! ফাহাদ এসবের কিছুই করেনি!
নিজের কাছ থেকে পৌষীকে ছাড়িয়ে নিয়ে ফাহাদ বললো-
দেখো পৌষী…
.
ফাহাদের কথা শেষ হবার আগেই শব্দ করে কেঁদে উঠলো পৌষী ।
ফাহাদ বললো-
আবার কাঁদছো কেনো?
.
ভাঙাভাঙা গলায় পৌষী বললো-
আমি কখনো ভাবিনি আপনি আমার জন্য এতো আয়োজন করবেন । আমি কল্পনাও…
আবারো ভ্যা ভ্যা শব্দে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো পৌষী ।
তার এমন কান্না দেখে ফাহাদ হেসেই ফেললো ।
ফাহাদকে হাসতে দেখে পৌষীর কান্নার মাত্রা যেনো আরো বেড়ে গেলো ।
পৌষীকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে ফাহাদ বললো-
ওলে আমার পিচ্চি বউটা কাঁদেনা!
-এতোটাও পিচ্চি না ।
-আমার কাছে পিচ্চিই । দেখি আসো ফ্রেশ হয়ে নাও । জামাটা বদলে নাও ।
.
ফাহাদের বুকে মুখটা লুকিয়ে পৌষী বললো-
হাসপাতালে নার্স সাহায্য করেছিলো জামা বদলাতে । আমার হাতে ব্যথা । এখন একা একা কিভাবে করবো?
.
খানিকক্ষণ চুপ থেকে ফাহাদ বললো-
আমি সাহায্য করবো তোমাকে ।
-এ কি আপনি!
-কোনো সমস্যা? আমি তোমার স্বামী । করতেই পারি । শুধু জামা পাল্টাতে সাহায্য নয় । আরো অনেককিছুই করতে পারি ।
.
কথাটি শুনে পৌষীর ফর্সা মুখটা লাল আবরণ ধারণ করলো । ফাহাদের মুখে কথাটি শুনেই তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে আর যদি সত্যিই কিছু করে তবে হয়তো শ্বাসটা আটকেই যাবে!
ফাহাদ বললো-
কি? লাগবেনা সাহায্য?
.
শান্ত স্বরে পৌষী বললো-
লাগবে ।
.
.
পৌষীকে জামা বদলাতে সাহায্য করে নিজেও ফ্রেশ হতে গেলো ফাহাদ ।
এদিকে পৌষী খাটের উপরে ঘুপটি মেরে বসে আছে ।
একটু আগের মুহুর্তটাকে থামিয়ে দিতে ইচ্ছে করেছিলো । ফাহাদের তরফ থেকে এমন আচরণ সে ভাবতে পারছেনা! তবে কি ফাহাদের মনে সে জায়গা তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে? কিন্তু কিভাবে! হঠাৎ তার প্রতি ফাহাদের এমন আচরণের কারণ কি হতে পারে?
এসব ভাবতে ভাবতে পৌষী এগিয়ে গেলো রান্না ঘরের দিকে । দুপুরের খাবার তৈরী করা প্রয়োজন ।
রান্নাঘরে এসে পৌষীকে দেখে ফাহাদ বললো-
তোমার রান্না ঘরে আসার কি প্রয়োজন পৌষী?
.
পৌষী হেসে বললো-
আপনি যে সব রান্না করে রেখেছেন আমি জানতাম না । তাহলে সকালে বাসায় আসার কারণ এসবই!
.
না চায়তেও মুখে হাসি এনে ফাহাদ বললো-
হু! তুমি ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসো । আমি খাবার নিয়ে আসছি ।
.
ফাহাদ প্লেটে চিকেন বিরিয়ানি নিয়ে পৌষীর পাশে এসে বসলো ।
পৌষীকে বললো-
দেখি ভালো মেয়ের মতো হা করো । আমি খাইয়ে দিই ।
-তাতো খাবোই । তার আগে এটা বলুন আপনি কি করে জানলেন আমার প্রিয় খাবার এটি?
-আমি জানতাম না ।
.
কথাটি শুনে পৌষী মুখটা মলিন করে বললো-
আসলেই! আপনি কিভাবে জানবেন? আপনার ইচ্ছে হয়েছে রান্না করেছেন । আমার পছন্দের সাথে মিলে গেলো ।
.
ফাহাদ পৌষীর পাশে ঘেঁষে বসে বললো-
এখন থেকে জানার চেষ্টা করবো । দেখি খেয়ে নাও ।
.
দুপুরে পৌষীকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের রুমের বারান্দায় এলো ফাহাদ । কিছুদিন ধরে যা ঘটে চলেছে কিছুই স্বাভাবিক নয় । সব কিছুই ঘোলাটে মনেহচ্ছে তার কাছে । তবে এতোসব কিছুর মাঝে একটি বিষয় ভালো হয়েছে। পৌষীর প্রেমে পড়েছে সে ।
মাথাটা ঝাকালো ফাহাদ । যেহেতু তার সাথে সব ভালোই হচ্ছে এই বিষয়ে এতো ভাবতে চায়না সে । হয়তোবা সব কিছু তার সামনে এমনিতেই পরিষ্কার হয়ে যাবে ।
.
.
দুদিন পার হলো । পৌষীর হাতের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে । আগের চেয়ে অনেকটায় সুস্থ পৌষী ৷ তবে মানসিকভাবে সুস্থবোধ বেশিই করছে সে । কেননা ফাহাদ এই কয়েকদিনে স্বামীর দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছে । পৌষীর কাপড় পর্যন্ত নিজের হাতে ধুয়েছে সে । অফিস থেকে ছুটিও নিয়েছে । সবকিছুই পৌষীর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে ।
ড্রয়িংরুমে এসে বসলো পৌষী । হঠাৎ চোখ গেলো তার টেবিলে রাখা একটি চিরকুটের উপরে ।
হাতে নিয়ে পড়তে থাকলো সে-
আজ তোমাকে বউ এর সাজে দেখতে চাই! তোমাকে বউ সাজে কেমন লেগেছিলো মনে নেইতো । আমি খুব খারাপ স্বামী তাইনা? ভালো স্বামী হতে চাই তোমার ।
.
বিয়ের শাড়িটা পরে নিলো পৌষী । সেজেছে ঠিক বিয়ের কনের মতোই । এই শাড়িটা পরে যেদিন বউ সেজেছিলো, মনে ছিলো স্বামীর ভালোবাসা পাবার আশা । কিন্তু বিয়ের রাতেই ফাহাদ তাকে আলাদা রুম দেখিয়ে দিয়েছিলো । এই চারমাস একই বাড়ির নিচে থাকলেও দুজন অপরিচিত মানুষের মতোই ছিলো । এসবের কি অবসান হতে চলেছে?
ভাবতে ভাবতেই পৌষী দেখা পেলো ফাহাদের ।
পৌষী কি করছে দেখতে এসেছিলো সে । কিন্তু কনের সাজে পৌষীকে দেখে ফাহাদ যেনো অবাকই হলো । বিয়ের দিন পৌষীকে সে ভালো করে দেখেওনি । সেদিনও কি তাকে এতোটা সুন্দর লেগেছিলো?
পৌষীর ডাকে ঘোর কাটলো ফাহাদের৷ ।
ফাহাদ মুচকি হেসে বললো-
অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় । ঠিক যেনো নববধূ!
.
পৌষী এসে ফাহাদের বুকের মাঝে নিজের মাথাটা রেখে বললো-
আপনি আমার জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন, এতোদিন আমার সেবা করেছেন, আজ আমাকে বউ এর সাজে সাজতে বলেছেন । এসবের মানে আমি কি কিছু ধরে নিবো?
-কি ধরে নিতে চাও?
-কিছু ধরবো না?
.
ফাহাদকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে তাকে ছেড়ে দিলো পৌষী ।
শান্ত স্বরে বললো-
আমিই একটু বেশি ভেবে ফেলেছি বোধহয়!
.
পৌষী এগুতে চায়লে তার ডান হাতটি ধরে টেনে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো ফাহাদ ।
পৌষীর কানের কাছে মুখটি নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো-
বলো কি শুনতে চাও?
.
পৌষীর কানে ফাহাদের ঠোঁটের হালকা স্পর্শ পেতেই খানিকটা নড়ে উঠলো সে । এমন ছোঁয়া পেতে যেনো মন ব্যাকুল হয়ে আছে । কিন্তু তার লজ্জাও লাগছে প্রচুর ।
পৌষী বললো-
ছাড়ুন আমাকে ।
-সত্যি ছেড়ে দেবো?
.
নিশ্চুপ পৌষীকে দেখে তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবালো ফাহাদ ।
কিছুক্ষণ পৌষীর মিষ্টি ঠোঁটের স্বাদ নেয়ার পর মুখ উঠালো সে । পৌষী চোখ জোড়া বন্ধ অবস্থায় বড় বড় নিশ্বাস ফেলছে । মনেহচ্ছে এখুনি ফাহাদের কোলে ঢলে পড়বে সে । আচমকা তাকে পাজকোলে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো ফাহাদ । নিজের ভার যখন পৌষীর উপর দিতে চায়লো তখনি পৌষী বলে উঠলো-
আগে কথাটি বলুন?
.
পৌষীর নাক টিপে ফাহাদ বললো-
আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে?
-হু ।
.
পৌষীর নাকের সাথে নিজের নাক ঘষতে ঘষতে ফাহাদ বললো-
ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here