মুখোশের আড়ালে পর্ব ১৬

#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_১৬
#Saji_Afroz
.
.
.
পৌষীর কথা শুনে ফাহাদ বললো-
বুঝলাম না পৌষী ।
.
নিজের কাধ থেকে ফাহাদের হাতটি সরিয়ে পৌষী বললো-
আপনি এখন যান । আমাকে একা থাকতে দিন ।
-এই শীতের রাতে অসময়ে তুমি একা থাকবে! তাও আবার ছাদে? কি হয়েছে তোমার পৌষী?
.
শান্ত স্বরে পৌষী উত্তর দিলো-
কিছুনা ।
.
পেছন থেকে পৌষীকে জড়িয়ে ধরলো ফাহাদ ।
পৌষী বিরক্তিভাব নিয়ে বললো-
আমার অস্বস্থি লাগছে । ছাড়ুন আমাকে ।
.
পৌষীর চুলের ভাজে মুখ ডুবিয়ে ফাহাদ বললো-
এখনো লাগছে?
.
ফাহাদের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে পৌষী বললো-
হ্যাঁ লাগছে ।
.
ফাহাদ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো-
তোমার কি হয়েছে পৌষী? এমন ব্যবহার কেনো করছো? আর কি জেনেছো তুমি? আমি জঘন্য মানেটা কি?
-আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা এখন । প্লিজ আপনি যাবেন!
-যাবোনা । তুমি কথা বলবেনা । এইতো? ওকে ফাইন বলার প্রয়োজন নেই । আমি ছাদের এক কোণায় বসে থাকবো । তবুও এতো রাতে আমি তোমাকে একা ছেড়ে যেতে পারবোনা ।
-যা খুশি করুন আপনি ।
.
ফাহাদ সরে আসলো পৌষীর কাছ থেকে । এভাবে প্রায় ত্রিশ মিনিট কেটে গেলো । পৌষী নিচের দিকে নামতে থাকলে সেও পৌষীর পিছু নিলো । হঠাৎ করে মধ্যরাতে এই মেয়ের হলোটা কি!
.
.
.
উষ্ণের দুচোখে ঘুম নেই । সকাল থেকে কটা সিগারেটের প্যাকেট সে শেষ করেছে নিজেরি জানা নেই । মা-বাবার কাছেও যায়নি । এই বাড়িতে থেকে গিয়েছে সে ।
আজকের দিনটায় বড্ড কষ্ট পাচ্ছে উষ্ণ । দুই বছর আগে এই দিনে তার প্রিয়সীর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো তার ।
শোয়া থেকে উঠে বসলো উষ্ণ ।
ড্রয়ার খুলে একটা এলবাম বের করলো । যেটাই রয়েছে তার প্রিয়সী অর্থ্যাৎ তিশানীর অজস্র ছবি । এলবামটা নিয়ে বসে পড়লো উষ্ণ । উল্টাতে লাগলো এলবাম ও স্মৃতির পাতা ।
মিয়াজ শেখের বাসাতে প্রথম দেখা হয়েছিলো তার তিশানীর সাথে । কালো রঙের একটি শাড়ি পরা, লম্বা চুলে বিনুনি করা সব মিলিয়ে সাদাসিধে একটা মেয়ে তিশানী । তবুও মানুষের দৃষ্টি কাড়ার মতো কিছু একটা তার মাঝে রয়েছে । হু সে রুপবতী । যার উপর একবার চোখ পড়লে চোখ সরাতেই ইচ্ছে করেনা ।
তিশানীকে দেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে উষ্ণ । এরইমাঝে মিয়াজ শেখ এসে বললেন-
ও তিশানী । ওর সাথে খুব তাড়াতাড়ি কাজ করতে চলেছি আমি । সামনে কবিতার বই বের হবে ওর ।
-ওহ!
.
এরপরেই মিয়াজ শেখ তিশানীকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলেন উষ্ণের সাথে । তিশানী উষ্ণের ভক্ত এটা তার অজানা নয় ।
মিয়াজ শেখ ও আমেনা বেগমের বিবাহ বার্ষিকী আজ । ভেতরে অনেক শোরগোল হবার কারণে তারা বাগানে চলে এলো ।
উষ্ণকে এতো কাছ থেকে দেখে তিশানীর হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে । কথা বলার শক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছে সে । কেননা তিশানী উষ্ণের বিরাট ভক্ত । এতোদিন কল্পনায় উষ্ণকে ভেবে এসেছে । উষ্ণের ছবি দেখে নিজেরমনে কথা বলেছে । ঘুমানোর আগে উষ্ণের লেখা কবিতা পড়ে ঘুমিয়েছে । উষ্ণের লেখা সব বই সংগ্রহে রেখেছে । আজ এই উষ্ণই তার সামনে! সবটা যেনো স্বপ্ন মনেহচ্ছে তার কাছে ।
নিজের দিকে তিশানীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উষ্ণ হালকা কাশলো । তিশানী নিজেকে সামলে নিয়ে বললো-
দুঃখিত।
-কেনো?
-এভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য ।
.
কথাটি বলে জিভে কামড় বসালো তিশানী ।
উষ্ণ হাসতে লাগলে তিশানী বললো-
আমি কিন্তু আপনার অনেক বড় ফ্যান ।
-দেখতে মনেহচ্ছে পাঁচ ফুট তিন বা চারের বেশি হবেন না ।
-আরে লম্বায় বলছিনা । আমিতো…
.
তিশানীকে থামিয়ে উষ্ণ বললো-
বুঝেছি ।
.
এরপর লেখালেখি নিয়ে তাদের অনেক কথাই হলো । কথার এক পর্যায়ে তিশানী বললো-
মিয়াজ আঙ্কেল অনেক ভালো মানুষ । আমার না মা বাবা কেউ নেই । এক্সিডেন্টে মারা যায় অনেক আগেই । মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করেছি আমি । মামা-মামী ভালোবাসেন তবে অনেক শখই অপূরণ থেকে যায় , যেসব কেবল মা বাবাই পূরণ করতে পারতো । এমন একটা স্বপ্ন হলো বই বের করা । এই বিষয়ে কোনো সহযোগীতা করার কথা আমি বলতে পারিনি মামাকে । তিনি আর কতো করবেন আমার জন্য! ভেবেছি, ফেইসবুকেই আজীবন লিখে যেতে হবে । কিন্তু একদিন এক ভাইয়া আমাকে নক করে জানান, মিয়াজ শেখ আমার কবিতা পড়েছেন । তিনি কাজ করতে চান আমার সাথে । আমি না মিথ্যে ভেবেছিলাম এসব । পরে আঙ্কেলের সাথে দেখা করলাম । আসলেই উনি কাজ করতে চান!
-মিয়াজ সাহেব ট্যালেন্ট এর কদর করেন । তোমার ট্যালেন্ট আছে তাই কদর পেয়েছো ।
.
কথাটি বলেই থেমে গেলো উষ্ণ। আবার বললো-
সরি! তুমি করে বলে ফেললাম ।
-কোনো সমস্যা নেই । বরং খুশিই হবো আমি ।
-তাহলে আরেকটা পারমিশন দাও ।
-কি?
-তোমায় তিশা বলে ডাকবো আমি ।
-আপনার যা খুশি ।
.
বেশকিছুক্ষণ গল্প করার পরে তিশানীকে নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে উষ্ণ বললো-
যেকনো প্রয়োজনে আমাকে ফোন দিতে পারো ।
.
তিশানী খিলখিল করে হেসে বললো-
প্রয়োজন ছাড়া দেয়া যাবেনা?
-যাবে ।
.
নিজের ব্যাগ থেকে রুমাল ও কলম বের করে, উষ্ণের দিকে এগিয়ে দিয়ে তিশানী বললো-
একটা অটোগ্রাফ প্লিজ?
.
আর ভাবতে পারছেনা উষ্ণ । এলবাম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়লো সে । এসব ভাবনাতে আসলেই তার দমটা বন্ধ হয়ে আসে মনেহয় ।
হ্যাঁ সেদিনই ছিলো উষ্ণ ও তিশানীর প্রথম দেখা । এরপর প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে দুজনে অনেকবারই দেখা করেছে । উষ্ণ ভালোওবেসেছে তিশানীকে । তিশানীর জন্য এই বাড়িটি সে কিনেছে । বাড়িটি উপহার দিয়ে তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলো উষ্ণ । তিশানীও গ্রহণ করেছিলো তার প্রস্তাব কিন্তু মাঝখানে সব এলোমেলো হয়ে যায় । যে তিশানীকে নিয়ে সে স্বপ্ন সাজিয়েছে সেই তিশানীর এক নতুন রূপ সম্পর্কে জানতে পারে সে । তারপরেই সম্পর্কের ভাঙন ঘটে । আর এর পরে…..
চিৎকার দিয়ে উঠলো উষ্ণ ।
চেঁচিয়ে সে বললো-
আবার কেনো ভাবছি আমি এসব! আমি ভাবতে চাইনা আর । চাইনা ভাবতে! আমি ভালোবাসিনা তিশানীকে । ওমন একটা মেয়েকে আমি ভালোবাসতেই পারিনা । ওকে শুধু ঘৃণাই করা যায় । হ্যাঁ আমি ঘৃণা করি তিশানীকে, ঘৃণা করি!
.
চলবে
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here