মেঘের পরে মেঘ-২৬

মেঘের পরে মেঘ -২৬

নিজেদের রুমে ফিরে এসে খাটে শুয়ে পরলো শায়েরী।রুপসা আর মনিকা নিজেদের মতো ওয়াশরুমের কাজ সাড়লো।শায়েরীকে শুয়ে থাকতে দেখেও কিছু বললো না রুপসা।মাকে কেমন বিধ্বস্ত লাগছে।ওই মহিলার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই মা কেমন অন্যমনস্ক হয়ে আছে।কে ছিলো ওই মহিলা?
রুপসার বাবার কোন আত্নীয়? হতে পারে।যেহেতু নাবিল ভাই নাবিল ভাই করছিলো।মাকে আর ঘাটালো৷ না রুপসা।মনিকাকে নিয়ে রুমের বারান্দায় গিয়ে বসলো।
মনিকা শায়েরীকে ডাকতে গেলেও নিষেধ করলো রুপসা।থাক কিছুটা সময় নিজের মতো।

ওদিকে শায়েরী মনে মনে অংক কষে চলেছে।দীপাকে ঠিকানা দেয়াটা ঠিক হলো না বোধহয়।দীপা যেহেতু ঠিকানা নিয়ে গেছে তাহলে কাল অবশ্যই আসবে।কিন্তু শায়েরী আর দীপার মুখোমুখি হতে চায় না।দীপার মুখোমুখি হওয়া মানেই অতীতকে সামনে আনা।রুপসার সামনে ওর বাবার কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।
অনেক ভেবে শায়েরী সিদ্ধান্ত নিলো সকাল হলেই এ হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যাবে।রুপসা মনিকাকে কিছু একটা বলে বুঝ দেওয়া যাবে।মেয়ে কতো শখ করে বেড়াতে এসেছে ওদের আনন্দ টা মাটি করা যাবে না।
ওকে এভাবে নিশ্চুপ থাকতে দেখে রুপসা হয়তো মনে মনে ছটফট করছে।
একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে বসলো শায়েরী।মনকে নিজের আয়ত্তে এনে মুখে হাসি ফুটিয়ে রুপসাকে ডাকলো,

“রুপসা এদিকে আয়।বারান্দায় কি করছিস?”

“আসছি মা।”

_________

“তোমার ফিরতে এতো রাত হলো যে?সকালে না বলে গেলে তাড়াতাড়ি ফিরবে?আর তোমার মোবাইল কি হয়েছে? এতো ফোন দিলাম শুধু বন্ধ দেখায় কেন?”

দরজা খুলে দিয়ে বললো দীপা।হিমেল ততক্ষণে ভেতরে ঢুকে গেছে।
“বলছি।এক গ্লাস পানি দাও।”

দীপা পানি এনে দিলো।পানিটুকু খেয়ে হিমেল বেডরুমে গেলো।দীপাও গেলো পিছু পিছু।

“তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি খাবার রেডি করছি।”

হিমেল নিষেধ করলো।

“খাবো না আমি।খেয়ে এসেছি।”

“কোথায় খেলে? ”

“কবিরদের ওখানে।নাবিল এসেছে। ”

“নাবিল ভাই ও এসেছে? আমি ঠিকই ভেবেছি, শায়েরী নিশ্চয়ই দুস্টুমি করছিলো আমার সাথে। ”

হিমেল অবাক হলো।
“শায়েরী কে পেলে কোথায় তুমি?”

“এই তো মাজার গেটের রাস্তায়। মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল।আমার সাথে হঠাৎ দেখা।নাবিল ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো,ওরা নাকি একসঙ্গে থাকে না।তাহলে নাবিল ভাই এখন কোথা থেকে উদয় হলো?শুধু শুধু আমার সাথে মজা করলো।কাল কে পাই একবার।”

“কালকে কোথায় পাবে ওদের?”

“হোটেলের ঠিকানা নিয়ে এসেছি না।”

“খুব ভালো একটা কাজ করেছো।এতোদিনে নাবিলের অপেক্ষার অবসান হলো বুঝি।”

“মানে?”

“মানে হলো শায়েরী ঠিক কথাই বলেছিলো।ওরা অনেক বছর হলো আলাদা থাকছে।।ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।তাও ছোটখাটো না মারাত্মক। সেই কথাই তো নাবিল বললো।কিন্তু ওরা কোথায় ছিলো নাবিল জানতো না।অনেক খুঁজেছে পায় নি।”

“কি হয়েছিল?বলো না আমাকে।”

“বলবো।আগে একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।”

“যাও।”

“তুমি খেয়েছো?”

“না। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

“খেয়ে নাও এখন।”

“হুম।”

_______

দীপার কাছ থেকে হোটেলের নাম ঠিকানা জেনে নিয়ে তক্ষুনি নাবিলের কাছে ছুটলো হিমেল।সকালের অপেক্ষা করে আর কোন রিস্ক নিতে চায় না ও।যদি সকাল হতেই শায়েরী চলে যায়।না না।তার আগেই নাবিলকে নিয়ে ওখানে পৌঁছাতে হবে।

রাস্তায় বেরিয়ে কবিরকে ফোন দিয়ে শায়েরীর দেখা পাওয়ার ব্যাপার টা জানালো।কবিরকে বললো নাবিলকে সাথে নিয়ে সেখানে পৌঁছুতে।
কবির তাই করলো।নাবিল অবশ্য এতো রাতে বের হতে চাইছিলো না।বারবারই জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছে ওরা।কিন্তু কবির কিছু বললো না।যা হওয়ার সামনাসামনি হবে।

মিনিট পনেরোর মধ্যে ওরা হোটেলে এসে পৌঁছুলো।নাবিল অবাক।এতো রাতে হোটেলে কেন?

“কেউ কি এসেছে এখানে কবির?”

“চুপ কর তো।সেই কখন থেকে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছিস।এবার থাম।হিমেল আসুক আগে।ওই সব ক্লিয়ার করবে।”

“হিমেলও আসছে না কি?কি হয়েছে? ”

কবির উত্তর দিলো না।আরো মিনিট দশেক পর হিমেল আসলো।হোটেল ম্যানেজার কে বললো রুম নম্বর চারশ দুইয়ের ম্যাডাম কে ডেকে দিতে।ম্যানেজার কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না।একে তো এতো রাত। তার উপর মেয়ে মানুষ। যদি কোন সমস্যা হয়।তাহলে তো তার চাকরি যাবে।বহু কস্টে হাতে পায়ে ধরে উনাকে বোঝানো হলো।শেষে উনি রাজি হলেন।কল দিলেন চারশো দুইয়ে।
শায়েরীই ফোন তুললো।আসলে ওরা জেগেই ছিলো।নানা রকম গল্প করছিলো তিনজনে।বেশির ভাগই ছেলেবেলার গল্প। ম্যানেজারের ফোন আসাতে বেশ অবাক হলো শায়েরী।কি প্রয়োজন থাকতে পারে এতো রাতে?
রুপসা৷ সাথে আসতে চাইলেও নিষেধ করলো শায়েরী। যে কোন ঝড়ের প্রথম হাওয়াটা যেন ওর উপর দিয়েই বয়।

______

“কি বললো?”
ম্যানেজারকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো কবির।

“আসছে।”

“কতো সময় লাগতে পারে?”

“এই তো পাঁচ মিনিট।আপনার বরং ওয়েটিংয়ে গিয়ে বসুন।উনি আসলে আমি নিয়ে আসছি।”

“তোমার আনতে হবে না।আমরা এখানেই ওয়েট করছি।”

“তোরা কি একটু বলবি কে আসছে?”
বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো নাবিল।

“এখন বলা যায় কি বলিস?”
হিমেলকে জিজ্ঞেস করলো কবির।

“বলে দে।”
সায় দেয় হিমেল।

নাবিল অবাক হয়ে ওদের কান্ড দেখছে।
“কি বলে দিবি বল না।আমার তো টেনশন হচ্ছে। ”

“তোমার টেনশনের ঔষধ এসে যাচ্ছে? ”

“মানে? কে আসছে?”
বুকের ভেতর ছলাৎ করে উঠলো এক টুকরো আশা।

কবির কিছু বলার আগেই পেছনে কারো হেঁটে আসার শব্দ পেলো।কেউ খুব আস্তে কিন্তু সুপরিচিত গলায় কিছু বলছে।নাবিল খুব ধীরে পেছনে ফিরলো।আর তাতেই চার চোখের মিলন হলো।শায়েরী থেমে গেছে।থেমে আছে নাবিলও।আজ যেন মুখের সব কথা ফুরিয়ে চোখে জমা হয়েছে।

চলবে……..

মুনিরা মেহজাবিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here