মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৪

0
2265

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৪
❤❤
রোদ_রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

রোদ রুমে বসে কাজ করছে।হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ আসে।রোদেলা রান্না ঘর থেকে এসে দরজা খুলতেই দেখে মেঘ এসেছে। রোদেলা গিয়ে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। এতোদিন পর ভাইয়ের সাথে দেখা।তাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি

———কেমন আছো ভাইয়া। এতোদিন পর আমার কথা মনে পরলো।বিয়ে হয়ে গেছি বলে কি পর হয়ে গেলাম।এই বোনকে কি একটু মনে পরেনা বলে আবারও কান্না করে দেয়।

———-সরি আসলে জানিস তো ব্যবসার জন্য কোথাও যাওয়া হয়না।চেষ্টা করি তোর সাথে দেখা করার কিন্তু সময়ে সুযোগ হয়ে উঠে না।আর তাছাড়া এখন নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ চলছে তাই আগের থেকে আরও বেশি বিজি হয়ে পরেছি।প্লিজ বোন আমার রাগ করিস না।এ দেখ কান ধরছি এবার থেকে তোর সাথে ফোনে কথা আর সপ্তাহে একবার হলে দেখে যাবো প্রমিজ করছি।








রোদেলা ভাইয়ের এসব কথা শুনে রাগ ধরে রাখতে পারল না। হেসে দিল। তারপর মেঘকে নিয়ে নিজেদের রুমে নিয়ে গেলো।রোদ মেঘকে দেখে উঠে পরলো।তারপর দুজনে কুশল বিনিময় করলো।রোদেলা দুজনকে কথা বলার জন্য রেখে রান্না ঘরে গেল নাস্তার ব্যবস্থা করতে। এতোদিন পর তার ভাই এসেছে ভালো মন্দ না করলে কি হয়।রোদ, মেঘ মুখোমুখি বসে আছে।

——–তা মি. মেঘ হঠাৎ কি মনে করে আমার বাসায় এলেন।ওপস সরি এখন তো আর নাম ধরে ডাকা যাবে না হাজার হোক সম্পর্কে আমার বউয়ের ভাই হোন।তো বলেন কেন আসছেন। কারণ ছাড়া যে আসেননি তা আমি সিউর। তো কারনটা কি বলুন।

———-আমি কেন এসেছি সেটা তো বলবো।বলতে গেলে তোমার সাথে বোঝা পরা করতে এসেছি আজ।

কথা টা বলে মেঘ উঠে দরজার বাইরে গেল, কেউ আছে কিনা দেখতে।বাইরে কেউ নেয়, রোদেলা রান্না ঘরে, মেঘ ফিরে এসে আবারও নিজ জায়গায় বসলো।

———-আমি জানি, আমি তোমাদের সাথে যা করেছি সেটা ঠিক করিনি।আবারও ভুলও কিছু করিনি।কারণ আমি বৃষ্টিকে সেই কলেজ থেকে ভালোবাসতাম কিন্তু বৃষ্টি আমাকে কখনো পছন্দ করতো না, তাই অফিসে যখন বৃষ্টিকে দেখেছিলাম তখনি আমি রেজিস্ট্রির কাজটা করি।জানি পদ্ধতিটা ভুল ছিল কিন্তু কি করবো ওকে যে বেশি ভালোবাসি তাই অন্যের পাশে কীভাবে সহ্য করতাম কিন্তু তার মাসুল যে তুমি এভাবে আমার থেকে নিবে আমি ভাবতে পারিনি।

তুমি আমার বোনকে ব্যবহার করে যে আমাকে শাস্তি দিবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।আমার একমাত্র বোন যাকে কখনো আমরা কেউ কষ্ট দিই নাই কিন্তু ও তোমায় ভালোবেসে আমাদের ছাড়তেও দ্বিধা করে নাই তাহলে কেন তুমি ওকে শাস্তি দিচ্ছো।আর এখন তুমি জানো বৃষ্টি বিবাহিত তাহলে ওকে ভুলে গিয়ে কেন তুমি রোদেলাকে নিয়ে সব কিছু নতুনভাবে শুরু করছো না।যদি তুমি ওকে ভালো নাই বাসো তাহলে কেন ওকে বিয়ে করলে।

———এতো আপনি তো মূল কথায় এসেছেন। দোষ করে একজন আর শাস্তি পায় অন্যজন।এটাই যে ভাগ্য।যেখানে আমরা দোষ না করেও আপনার জন্য কষ্ট পেতে হচ্ছে। একিভাবে রোদেলাও দোষ না করে ওকে শাস্তি পেতে হবে। আর সেটা হবে ডিভোর্স। আর ওর শাস্তির কারন হবেন আপনি।ওর মাধ্যমে আপনিও শাস্তি পাবেন।আপনার মনে আছে আমি আপনাদের বৌভাতে একটা কথা বলেছিলাম যে আপনার কাছের জিনিস নিয়ে আপনাকে ঠিক করবো আর সেটা আমি করেছি রোদেলাকে বিয়ে করে আর এখন সেই সুযোগের ব্যবহার করবো ওকে ডিভোর্স দিয়ে।

,
,
,
,
,
,
,
,
,
মেঘ প্রথমে অনেক শান্ত ভাবে কথা বলেছিলো কিন্তু ডিভোর্সের কথা শুনে মেঘ আর স্থির থাকতে পারলো না সে বসা থেকে উঠে রোদের কলার টেনে ধরলো,রোদ ও কম কীসে সেও একিভাবে মেঘের কলার ধরলো।একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেল। হঠাৎ দরজা করো আসার শব্দ পেয়ে দুজন দুজনকে ছেড়ে দিল। রোদেলা রুমে ঢুকতেই দেখে দুজনে দাঁড়িয়ে আছে।

———কি হলো তোমরা দুজনে এভাবে দাঁড়িয়ে কি করছো।আর তোমাদের চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন।

রোদেলার এমন প্রশ্নে দুজনে ঘাবড়ে গেল। কেমন জানি ভয় করছে রোদেলা আবার কিছু শুনে ফেলেনি তো।মেঘ বিষয়টা পরিষ্কার করতে,

———-না আসলে বসতে বাসতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে তাই দাঁড়িয়ে গেছি। তাই না রোদ।

মেঘের কথায় রোদ ও সাই দিয়ে মাথা নাড়লো।

———ও ভাইয়া আমি বলছিলাম কি আজ দুপুরে তুমি আমাদের সাথে খাবে। আমি তোমার পছন্দের সব রান্না করছি।

———নারে আজ পারবো না এখান থেকে একটু অফিসে যাবো ওখানে কিছু কাজ আছে আজ সময় হবেনা অন্য একদিন করবো।
.
.
.
.
.
.
.
.
বলে রোদেলা থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। মেঘের বের হওয়ার পর রোদ ও বেরিয়ে যায়। আর রোদেলা দুজনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেললো।কারণ দুজনের চেহারা দেখে রোদেলা বুঝতে পেরেছিলো দু’জনেই তাকে এড়িয়ে যেতে মিথ্যা বলেছে। কিন্তু কথায় আছে না দেয়ালেরও কান থাকে।রোদেলার ক্ষেত্রে ও তাই হলো।ওরা ভেবেছিলো হয়তো ওদের কথা এ রুমের বাইরে যায় নি।কিন্তু সব কথা যে রোদেলা একটু আগেই শুনে ফেলেছে।

কিছুক্ষণ আগে……









মেঘ বাহিরে চেক করে যাওয়ার পরই রোদেলা রুমে যাচ্ছিল মেঘকে তাদের সাথে দুপুরের খাওয়ার কথা বলতে।দরজার কাছে যেতেই রোদেলা থেমে যায়। সেখানে দুজনের সব কথা শুনতে পাই। ওদের কথা গুলো শুনেই রোদেলা ওখানে দাঁড়িয়ে কান্না করে। যখন দুজনে হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যায় তখনি রোদেলা পায়ের আওয়াজ করে যাতে ওরা বুঝতে পারে রুমে কেউ আসছে।কিন্তু ওরা কেউ জানতোই না ওদের অগোচরে কেউ একজন দরজার বাহিরে চোখের জল ফেলছে।আর পরের টুকু তো জানা।
,,
,

,
,
,
,
,
,
,
,
আজ পাঁচ দিন হলো বৃষ্টি অফিস যায় নি।আসলে যায় নি বললে ভুল হবে কারণ মেঘ নিজেই বৃষ্টিকে যেতে দেয় নি।কারণ সেদিনের পর থেকে বৃষ্টি এতোটাই অসুস্থ ছিল যে ডাক্তার তাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে বলেছিলো।তাই মেঘ তাকে কোনোভাবে অফিস আর অফিসের কোনো কাজে হাত লাগাতে দেয়নি।এমনকি বৃষ্টির নিজের কাজেও মেঘ একজন পারমানেন্ট সার্ভন্টে রাখে যাতে বৃষ্টির কোনো সমস্যা না হয়।তাছাড়া দিন শেষে মেঘ নিজেও বৃষ্টির সেবা করতো।










রাত ১০ টা।এখনো মেঘ বাসায় ফিরে নি। এদিকে বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেই সন্ধ্যা থেকে এখনো থামার নাম গন্ধ নেই। বৃষ্টি অনেকবার মেঘকে কল করেছে কিন্তু বারবার ফোন অফ জানাচ্ছে।এবার বৃষ্টির টেনশেন হতে লাগলো।কারন বৃষ্টি জানে যে মেঘ অফিসের কাজ নিয়ে বিজি কিন্তু এতো লেট হওয়ার তো কোনো মানে নেই তার ওপর ফোন ও রিসিভ করছে না তাই টেনশন টা আরো বেশি বেড়ে গেলো।হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ হতেই বৃষ্টি দৌড়ে দরজা খুললো।দরজা খুলতে দেখে মেঘ হাত দিয়ে চুল ঝারছে কারণ বৃষ্টির জন্য মেঘ পুরো ভিজে গেছে। মেঘ বাসায় ঢুকতেই বৃষ্টি জিজ্ঞেস করে,

———-আজ এতো দেরি করলেন কেন আর বৃষ্টিতে বা ভিজলেন কীভাবে

———আর বলো না অফিসের কাজ করতে লেট হয়ে যায়। কারণ এখন তো তুমিও অসুস্থতার জন্য অফিস যেতে পারছো না আর শ্রাবন বা কতো দেখবে তাই দুজনে মিলে কাজ করতে করতে লেট হয়ে যায়। কাজ শেষ করে যেইনা গাড়ি নিয়ে বের হলাম ওমনি মাঝ রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর কোনো গাড়ি পেলাম না তাই দৌড়ে দৌড়ে চলে এলাম বৃষ্টিতে ভিজে।তাছাড়া বৃষ্টির যে গতি থামছেই না তাই এ অবস্থা।

———-ও যান কাপড়টা চেঞ্জ করে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
মেঘ চলে যাওয়ার পর বৃষ্টি খাবার গরম দিয়ে টেবিলে রেখে মেঘের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু মেঘ নিচে আসছেনা দেখে বৃষ্টি ওপরে যায়, গিয়ে দেখে মেঘ বিছানায় শুয়ে পরেছে।বৃষ্টি গিয়ে মেঘের শরীরে হাত দিতেই তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নেই। কেননা মেঘের পুরো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে খাবার এনে মেঘকে তুলে খাইয়ে দেয়। তারপর ঔষধ খাওয়ানো হলে আবারও মেঘকে বিছানায় শুয়ে দেয়।তারপর মেঘের মাথার কাছে বসে জলপট্টি দিতে থাকে।জ্বর একটু কমলে বৃষ্টি গিয়ে নিচে বিছানা ঠিক করে শুয়ে পরে কারণ রাতে যদি মেঘের আবার কিছু দরকার পরে। নিচে শুলেও বৃষ্টির ঘুম আসছিলো না তাই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।কিছুক্ষন পর তার কানে কিছু শব্দ ভেসে আসে। সে চোখ খুলে তাকাতেই দেখে মেঘ ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে কি জানি বলছে।বৃষ্টি শোয়া থেকে উঠে মেঘের কাছে যায়। তারপর মেঘের ঠোঁটের কাছে কান এগিয়ে দিয়ে শুনতে থাকে মেঘ কি বলছে।

———-আচ্ছা তুমি কি আমায় কখনো বুঝবে না, কখনো ভলোবাসবে না,আমাকে কি সারাজীবন এভাবে দূরে রাখবে।আমি তোমায় কতো ভালোবাসি। শুধু মাএ তোমাকে পাওয়ার জন্য কিনা করেছি কিন্তু তুমি, তুমি আমায় সবসময় দূরে রাখো।আমারও ইচ্ছে করে তোমায় কাছে পেতে কিন্তু তুমি আমায় কখনো সেই সুযোগ দাও নি। আমি না হয় ভুল করছি কিন্তু তার মাসুল আর কতোভাবে দিবো।যদি তুমি আমার জীবন ও চাও আমি তাও দিবো প্লিজ আমায় ছেড়ে যেওনা, আমাকে একা করে দিও না প্লিজ প্লিজ….








মেঘ একনাগাড়ে কথা গুলো বলে যাচ্ছে। বৃষ্টি কথা গুলো শুনে ওখানেই পাথর হয়ে গেছে কারণ না জেনে সে মেঘকে কতোয় না কষ্ট দিয়েছে। হয়তো ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলো কিন্তু তবুও তো নিজের ভালোবাসার কমতি রাখে নি তাহলে।এসব ভেবে বৃষ্টি কান্না করে উঠতে যাবে পেছন থেকে মেঘ শাড়ির আঁচল টেনে ধরে। বৃষ্টি গিয়ে দেখে আবারও মেঘের জ্বর এসেছে। তাই আবারও জলপট্টি দেয়। এখন শুধু জ্বর না সাথে কাপুনিও দেখা দিয়েছে।






বিছানায় থাকা চাদর টা মেঘের গায়ে টেনে দিলো।কাপুনি যখন কমছে না তখন বৃষ্টি নিজের রুমের চাদরটা এনে সেটাও গায়ে দিলো।শেষমেশ বৃষ্টি নিজেই চাদরের নিচে ঢুকে গেলো।শরীরে ওম পেয়ে মেঘ আরো জোরোসরো হয়ে গেল। বৃষ্টি মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে আর মেঘ এখনো বিড়বিড় করছে।মেঘ বাচ্চামো ভাবে কথা বলছে আর সেগুলো দেখেই বৃষ্টি ফিক করে হেসে দিলো।,
,
,
,
,
,
,
,
,
মেঘ যখন কথা বলছে তখন তার ঠোঁট গুলো ছোট দের মতো উল্টে ফেলছে।বৃষ্টির কেন জানি মেঘের এ ঠোঁট গুলো ছুতে ইচ্ছে করছে। বৃষ্টি আস্তে আস্তে মেঘের মুখের কাছে গিয়ে নিজের ঠোঁট দিয়ে মেঘের ঠোঁটে জোরা হালকা চেপে ধরলো।বৃষ্টির ঠোঁটের ছোয়া পেতেই মেঘের কাপুনি আর বিড়বিড় করা বন্ধ হয়ে গেল। ৫ মিনিট পর সরে আসতেই দেখে মেঘ ঘুমিয়ে গেছে। বৃষ্টি ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে দেখতে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ল।,
,
,
,
,
,
,
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here