মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৩

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৩
❤❤
রোদ_রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

দুজনের মাঝে পিনপিনে নিরবতা।কোনো কথা নেই কারো মাঝে। রোদের কেমন জানি আনইজি লাগছে।কীভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না। নিরবতা ভেঙে রোদ বলল,

———-বৃষ্টি আমি তোর কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে এখানে ডেকেছি।

———কিসের প্রশ্ন আর কিসের উত্তর

———দেখ তোর সাথে আমি বোঝা পরা করতে চাই। তুই জানিস আমি রোদেলাকে নয় তোকে ভালোবাসি। শুধু মাএ মেঘকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি রোদেলাকে বিয়ে করেছিলাম।কিন্তু আমি এখনো তোকেই ভালোবাসি।তাই আমরা চাইলে কি আবারও নতুন করে সব শুরু করতে পারিনা।

———-মানে কি বলছিস তুই। পাগল হয়ে গেছিস।চাইলেও কি নতুন করে সব শুরু করা যায়। আর মেঘ না হয় দোষী কিন্তু রোদেলা ওকে কেন শাস্তি দিবো।

———দেখ আমি জানি ওর দোষ নেই কিন্তু মেঘকে শিক্ষা দিতে হলে তো ওকে শাস্তি পেতেই হবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি রোদেলাকে ডিবোর্স দিবো, তুই ও মেঘকে ডিবোর্স দিবি তারপর আমরা দুজনে বিয়ে করে নিবো।






দূর থেকে কথা গুলো শুনছিল মেঘ।এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও ডিবোর্সের কথা শুনে আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না। তার মাথায় যেন রক্ত উঠে গেলো।ওরা দুজন এভাবে রোদেলার জীবন নিয়ে খেলবে সেটা মেঘ কখনো হতে দিবে না।মেঘের ইচ্ছে করছিলো এক্ষুনি রোদ যে মুখে ডিবোর্সের কথা বলেছে সে মুখ ভেঙে দিতে।কিন্তু এতো মানুষের সামনে মেঘ কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাই না। তাই রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে মেঘ সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।

———-কীরে বৃষ্টি কিছু বল এভাবে চুপ থাকিস না।আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি এবার তোর সিদ্ধান্ত জানতে চাই।
,
,
,
,
,
,
বৃষ্টি কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে নিরব রইল। তারপর ওপরের দিকে তাকিয়ে রোদকে বললো,

———-রোদ আমি তোকে এখন যা বলবো তুই ঠান্ডা মাথায় সব শুনবি কোনো প্রশ্ন করবি না। যতোক্ষণ আমি বলবো ততক্ষণ কোনো শব্দ করবি না।আমি বলার পর তোর কিছু বলার থাকলে বলবি।

————————————————————–

————————————————————–
,
,
,
,
,
,

,
,
,
রাত ৮ টা।বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি প্রায় আধভেজা হয়ে বাসায় ফিরেছে।বাসায় পৌঁছে বৃষ্টি নিজের রুমে গিয়ে লাইট অন করতেই ভয় পেয়ে গেল। কারণ মেঘ বিছানার উপর বসে আছে। আচমকা মেঘকে রুমে দেখবে বৃষ্টি সেটা ভাবতে পারেনি।মেঘের চোখ পুরো রক্তিম বর্ন হয়ে গেছে যা দেখে বৃষ্টি কিঞ্চিৎ ভয় পেলো।তবে সেটা ওপরে দেখালো না।

———-আপনি আমার রুমে কি করছেন

———তুমি কোথায় গিয়েছিল আর কোত্থেকে আসলে এখন

———আমি ই…..য়ে….ই….

——–কি হলো আমতা আমতা করছো কেন,উওর দাও।চিৎকার দিয়ে।

———আমার একটু কাজ ছিল তাই।

———কি এমন কাজ ছিল যে তুমি অফিস টাইমে বেরিয়ে গেলে এমন কি আমাকে জানানোর দরকার মনে করলে না।আর কাজটা কি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে এতোটা সময় পর তুমি বাসায় ফিরলে।তুমি কি জানো এখন কয়টা বাজে। ৩ঘন্টা যাবত তুমি বাসার বাইরে ছিলে।কোথায় ছিলে,কার সাথে ছিলে।বলো চুপ করে আছো কেন।আবারও চিৎকার দিলো মেঘ।







বৃষ্টি এবার পুরো কেপে উঠে কারণ এর আগে মেঘ কখনো এভাবে রেগে গিয়ে কোনো কথা বলেনি বা বৃষ্টির ওপর মেজাজ ও দেখায়নি। তাহলে কি মেঘ ওদের বিষয়ে কিছু জেনে গেছে। বৃষ্টি যখন এসব ভাবনায় মত্ত তখনই মেঘ আবারও বললো,
,
,
,
,
,
,
,
,
———-কি হলো কোনো উত্তর নেই তোমার কাছে তাই না ঠিক আছে এবার আমি বলছি। তুমি রোদের সাথে দেখা করতে গেছিলে।শুধু দেখা নয় ওর সাথে প্ল্যানিং করতে গিয়েছিলে কীভাবে আমাকে আর আমার বোনকে ডিভোর্স দিয়ে দুজনে আবারও নতুন করে শুরু করবে তাই না।আমি তোমায় বলছিলাম যে ডিভোর্স দিবো তার মানে এই নয় যে আমার বোনের সংসার ভাঙতে দিবো।তোমাদের সাহস কেমনে হলো আমার বোনের জীবন নিয়ে খেলার।তুমি আমার সাথে যায় করো,আমাকে কষ্ট দাও আমি মেনে নিবো কিন্তু আমার বোনকে কষ্ট দেওয়ার রাইট তুমি কই পাও। আজ তোমায় বুঝিয়ে দিবো আমার বোনের জীবন নষ্ট করার প্ল্যানিং টা কতোটা ভুল ছিল। আজ তোমার এমন হাল করবো তুমি কল্পনায় করতে পারবেনা।








দাঁত কটমট করে কথা গুলো বলতে থাকে আর প্যান্ট থেকে বেল্ট খুলে নিয়ে ইচ্ছে মতো বৃষ্টিকে মারতে থাকে।মেঘ এতোটাই রেগে ছিল যে বৃষ্টির সারা শরীরে ক্ষত বিক্ষত করতে থাকে।বৃষ্টি প্রথমে বাধা দিলেও পরে আর পেরে উঠে নি।তাই সে নিরবে মার খেতে থাকে।মেঘ যখন ক্লান্ত হয়ে পরে তখন বৃষ্টিকে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে যায়। তখন ও ঝুম বৃষ্টি পরছিলো।মেঘ বৃষ্টিকে ছাদে একা রেখে চলে আসে,আসার আগে বলে আসে,

———আজ সারারাত এখানে,এই বৃষ্টির মধ্যে থাকবি।আর এটাই তোর শাস্তি।






বলে ছাদের দরজা বন্ধ করে চলে গেলো।তারপর রুমে গিয়ে ইজি চেয়ারে বসে একের পর এক সিগারেট নিতে লাগলো। একসময় মেঘের চোখ জোরা বন্ধ হয়ে আসে। রাত ১ টা।হঠাৎ মেঘের গর্জনের শব্দে চোখ খুললো।চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মেঘ দেখলো অনেক রাত হয়ে গেছে। আচমকা মেঘের মনে পরলো বৃষ্টির কথা। সে এতোটাই রেগে ছিল যে বৃষ্টিকে সেই কখন ছাদে রেখে এসেছে এখনো পর্যন্ত ওকে নিয়ে আসেনি।সে দৌড়ে ছাদে গিয়ে দরজা খুলতেই দাঁড়িয়ে গেল কারণ বৃষ্টি ছাদের মেঝেতে পরে আছে।,
,
,
,
,
,
,
,
মেঘ তাড়াতাড়ি বৃষ্টির কাছে গিয়ে বৃষ্টির পালস চেক করে। দেখে বৃষ্টি অজ্ঞান হয়ে গেছে। মেঘ দ্রুত বৃষ্টিকে পাজকোলা করে রুমে নিয়ে আসে।তারপর কাপড় চেঞ্জ করে দেয়। বৃষ্টির পুরো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। মেঘ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তাই সে তাদের পারিবারিক ডাক্তারকে কল করলো।২০ মিনিট পর ওনি এসে বৃষ্টিকে চেকআপ করে।

———মি. মেঘ ওনার এই অবস্থা কি করে হলো।দেখে তো মনে হচ্ছে ওনাকে শারীরিকভাবে খুব টর্চার করা হয়েছে। আর তাছাড়া ওনি কি বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন?মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছে।

———-আসলে ডক্টর আমি ওর ওপর রেগে গিয়ে ওর গায়ে হাত তুলি, তারপর ওকে বৃষ্টিতে ছাদে রেখে আসি।

———হুমম বুঝেছি।আসলে অতিরিক্ত মার,বৃষ্টিতে ভিজা,তার ওপর ছাদে একা থাকায় ওনি অনেকটা ভয় পান যার জন্য অজ্ঞান হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ওনি শারীরিক আর মানসিক ভাবে খুব ডিপ্রেশনে আছে। আপনি কাজটা মোটেও ঠিক করেননি। আপনার মতো সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলে যদি এমন কাজ করে তবে আর কি বলবো।আমি ঔষধ লিখে দিচ্ছি এগুলো ওনাকে খাইয়ে দিবেন আর হ্যা ওনার অধিক পরিমাণে জ্বর, আর বৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় থাকায় ওনার শরীরে রক্ত হিম হয়ে গেছে তাই ওনাকে এমনভাবে তাপে রাখতে হবে যাতে ওনার কোনোভাবে শীত অনুভব না হয়।আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কি বুঝাতে চাইছি।







ডাক্তার মেঘকে সব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল আর মেঘ সারারাত বৃষ্টিকে জলপট্টি দিতে লাগলো। মেঘের নিজের ওপর বড্ড রাগ লাগছে,এখন কেন জানি মনে হচ্ছে চাইলে তো সে বৃষ্টির সাথে এই নিয়ে কথা বলতে পারতো।তাকে বোঝাতে পারতো। কিন্তু যখন শুনলো রোদ রোদেলাকে ডিভোর্স দিবে তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি।কীভাবে পারবে পৃথিবীর এমন কোনো ভাই নেই যেকিনা বোনের ডিভোর্সের কথা শুনে নিজেকে সংযত রাখতে পারে।তার ওপর নিজের ভালোবাসার মানুষ যদি এমন একটা কাজে জরিত থাকে তাহলে কি আর মাথা ঠিক থাকে।হোক না বৃষ্টি ওকে ভালোবাসে না কিন্তু মেঘ তো বাসে তাহলে কেমনে পারলো এটা করতে।এসব ভাবতে ভাবতে মেঘ খাটের সাথে হেলান দিয়ে ওখানেই ঘুমিয়ে পরে।সকালে বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠে দেখে মেঘ ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত মেঘকে দেখে বৃষ্টির কেমন জানি ইচ্ছে করছিলো ছুয়ে দিতে।কিন্তু রাতের কথা মনে পরতেই বৃষ্টির চোখ ভিজে গেলো।

———–আপনি কীভাবে মনে করলেন আমি এমন একটা জঘন্য কাজ করবো।আপনি তো আমায় ভালোবাসেন তাহলে এমন চিন্তা করতে আপনার বিবেকে একটু বাধলো না। এতোদিনে আপনি আমার সম্পর্কে এতোটুকু জানলেন।রোদেলাকে আমি আমার বোন হিসেবে জানি,আর বোন হয়ে অন্য বোনের সংসার কীভাবে ভাঙতে পারি।যদি দোষ করেন তাহলে আপনি করেছেন ও তো কিছু করেনি।আপনার শাস্তি ওকে কেমনে দিই।আমি এতোটাও খারাপ নয় মেঘ সেটা আপনি এতোদিনেও বুঝতে পারলেন না।হয়তো শুরুর কথা গুলো শুনেছেন যদি শেষের কথা শুনতেন তবে কখনো আমায় ভুল বুঝতেন না।আপনি এতো অন্যায় করেছেন তবুও বলবো আজ আপনার ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। কারণ…..







মনে মনে এসব কথা ভাবছিলো বৃষ্টি। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠতেই পুরো শরীর অসর হয়ে পরে কারণ গতকাল মেঘ এমনভাবে মেরেছিল যে পুরো শরীর দাগ আর ব্যাথা হয়ে গেছে। দাগের জায়গা গুলো নীলচে বর্ন ধারণ করেছে। বৃষ্টি কোনোভাবে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। তারপর শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে আবারও ঘুমিয়ে পরে।
,
,
,,
,
,
,
,
,
,
সকাল ১১ টা।মেঘ চোখ খুলে দেখে বিছানার উপর বৃষ্টি নেই। বৃষ্টিকে না দেখে মেঘ দৌড়ে বৃষ্টির রুমে যায়। গিয়ে দেখে বৃষ্টি জোরো সরো হয়ে ঘুমাচ্ছে। বৃষ্টিকে দেখে মেঘ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বৃষ্টিকে না দেখে সে ভয় পেয়ে যায় কারণ ভেবেছিলো হয়তো কালকে রাতের বিষয়ের জন্য বৃষ্টি কোনোভাবে চলে যায় নি তো।তারপর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।কাপড় পরে মেঘ টাই ঠিক করতে করতে চিন্তা করে,

———আজ এর একটা বিহিত করতে হবে।ভাই হয়ে কখনো বোনের সংসার ভাঙতে দেওয়া যাবেনা।নিজের ভুলের মাসুল সে কোনোভাবে নিজের বোনকে দিতে দিবে না ।দরকার পরলে………..।
.
.
.
.
.
.
.
.
রেডি হয়ে মেঘ নিচে গিয়ে সার্ভন্টদের ডেকে বলে যে, যাতে কেউ বৃষ্টির রুমে গিয়ে বৃষ্টিকে ডিস্টার্ব না করে আর বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠলে যেন বৃষ্টির খাবার রুমে গিয়ে দিয়ে আসা হয় আর বৃষ্টির সব ঔষধ রাখা আছে যাতে সেগুলো খেয়ে নেই। আর যা যা দরকার সেগুলো যাতে বৃষ্টির নাগালে রাখে।আরও কিছু নির্দেশ দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
,
,
,
,
,
,
,
,
চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here