মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩২

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩২
❤❤
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

শ্রাবন রুমে বসে চিন্তা করছে যে আজ বৃষ্টি তাকে কি বলে গেল।শুধু তাই নয় আজ বৃষ্টির কথা গুলোর মাঝে কেমন জানি রহস্য কাজ করছিল। মনে হচ্ছে এমন অনেক গোপন কথা রয়েছে যা বৃষ্টি সবার থেকে আড়াল করছে।বৃষ্টি সবাইকে ওপরে যেমন দেখায় আদো তা নয়, নিশ্চয়ই কোনো ঘাবলা আছে। হঠাৎ তার মাথায় বৃষ্টির শেষের কথা টা আসলো।শ্রাবন তো প্রায় ভুলেই গেছিলো।





বৃষ্টি বলেছিল তৃনা শ্রাবনকে ভালোবাসে কিন্তু এতোদিন ওর সাথে মেশার পরও একবারও কেন শ্রাবনের তেমন কিছু মনে হয়নি।তার মানে ও বৃষ্টির জন্য এতোটাই মগ্ন ছিল যার জন্য সে তৃনার ভালোবাসে দেখতে পায়নি।কিন্তু সে নিজের অজান্তেই যে তৃনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। না বুঝে সে তৃনার সামনে অন্য জনকে ভালোবাসার কথা বলেছে যেখানে তৃনা এসেছিলো ওকেই প্রপোজ করতে।এখন কেমন জানি খারাপ লাগছে কারণ, নিজেকেই নিজে বকা দিতে লাগলো।,

,
,
,
,
,
আসলে প্রতিটা মানুষই এমনি। নিজের সামনে থাকা মানুষটার ভালোবাসা উপেক্ষা করে অন্যের পেছনে ছুটতে থাকে।প্রকৃতিগতভাবে, সোনাকে ছাড়িয়ে যেমন মরীচিকার পিছে ধাওয়া করা হয় শ্রাবনের ও হয়েছে একি দশা।কিন্তু না সে এমনটা করবে না। বৃষ্টি যেহেতু তাকে বন্ধু হিসেবে মানছে অতএব সেও আর বৃষ্টিকে এ নিয়ে ফোর্স করবেনা।যে মানুষটা তাকে সত্যি কারের ভালোবাসে সে তাকেই আপন করে নিবে।বলে ফোনটা হাতে তুলে নিলো।এদিকে বেচারি তৃনা চোখের জল ফেলতে ফেলতে পুরো টিস্যুর বাক্স খালি করে ফেলেছে তবুও যেন কান্না বন্ধ হওয়ার নামি নেই। কীভাবে বন্ধ হবে যাকে ভালোবাসে তার মুখে অন্য কারো নাম শুনলে তো যে কারো মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে।হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রীনে ভেসে ওঠা নামটা দেখেই তার কান্নার গতি যেন আরো বেড়ে গেল। তবুও কান্না চেপে রেখে ফোনটা ধরলো।ওপাশে শ্রাবন তৃনার আওয়াজ শুনে বুঝে গেল তৃনা কান্না করছে। তার কেমন জানি বুকটা ধক করে উঠলো।তবুও না বোঝার ভান করে,

———–তৃনা তুমি হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলে জানো আমি তোমায় কতো খুঁজেছি তাই না পেয়ে কল দিলাম।

———-আসলে কেমন জানি অসুস্থ ফিল করছিলাম তাই চলে এসেছি।

———-আচ্ছা কাল কি আমার সাথে দেখা করতে পারবে আসলে আমি কাল আমার ভালোবাসার মানুষকে প্রপোজ করবো আর তোমায় তো বলেছি আমি এ বিষয় টা নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছি তাই তুমি যদি আমার সাথে থাকো তবে একটু সাহস পেতাম আরকি।





শ্রাবনের কথা শুনে তৃনার ইচ্ছে করছে মরে যেতে।কি বলে ছেলেটা নিজের ভালোবাসার মানুষ নাকি অন্যকে প্রপোজ করবে আর সেটা নিজের চোখে দেখতে হবে।তৃনার কান্না এখন আরো বেড়ে গেল। তবুও চেপে রেখে,

———–না আমি কাল বিজি আছি আমি পারবো না তোমার সাথে দেখা করতে।আর তুমি তোমার ভালোবাসাকে প্রপোজ করবে সেখানে আমি থেকে কি করবো। কথা গুলো বলতে তৃনার গলা ধরে আসছিল তবুও কষ্ট করে বলে।

———-উফফ তোমায় তো বললাম আমার ভয় করছে তাই তোমায় ডাকছি প্লিজ না করো না কাল তুমি আমার সাথে দেখা করবে বেস, আমি ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি চলে আসবে।
,,
,
,
,
,
তৃনাকে কিছু বলতে না দিয়ে লাইন কেটে দিলো।তৃনা তো রেগে আগুন।কিন্তু কি করবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তৃনা কাল যাবে।সে দেখতে চাই শ্রাবন কীভাবে বৃষ্টিকে প্রপোজ করে। কষ্ট হলেও যাবে কারন দুজনই যে তার বন্ধু। সে তাদের মাঝে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এদিকে শ্রাবন কল কেটে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটালো।

———-অপেক্ষা করো তৃনা কাল যে তোমায় দেখতে হবে আমার ভালোবাসার মানুষটা কে।













পরদিন সকালে তৃনা তৈরি হলো।তৈরি বলতে টপস,জিন্স সাথে স্কার্ফ গলায় পেছিয়ে দেওয়া।তেমন কোনো সাজ নেই। তারপর বেরিয়ে গেল শ্রাবনের দেওয়া ঠিকানাই।শ্রাবন পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে, হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল। আজ তার মনটা বড্ড খুশি।কারণ সে আজ নিজের মনের কথা জানাবে।তৃনাকে আসতে দেখে শ্রাবন এগিয়ে গেলো।তৃনার মুখটা দেখে শ্রাবনের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।একদিনে কি হালটা না করেছে। মুখটা কেমন জানি শুকিয়ে গেছে, চোখ গুলো লাল হয়ে অনেকটা ফুলে গেছে। চোখের নিচে কালি জমা হয়েছে। একদিনেই কতোটা বাজে অবস্থা করেছে মেয়েটা।শ্রাবন নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো কারণ তার জন্যই তো এমনটা হয়েছে। বড্ড অপরাধী লাগছে নিজেকে।তৃনার সামনে কিছু প্রকাশ না করে জিজ্ঞেস করলো,

———-কেমন আছো

———-ভালো।বৃষ্টি আসেনি এখনো।

শ্রাবন বুঝতে পারল তৃনা অনেক কষ্ট করে কথা টা জিজ্ঞেস করছে।সে তৃনাকে একটু জ্বালানোর জন্য,

———–হুমম ও বলেছে একটু পর আসবে।চলো সামনের রেস্তোরাঁতে বসি।

দুজন মিলে পার্কের ছোট রেস্তোরাঁয় বসলো।২০ মিনিট হয়ে গেল কেউ কোনো কথা বলছে না।এবার তৃনা প্রশ্ন করলো,

———-কি হলো আর কতক্ষণ বসে থাকবো ও কি আসবে নাহলে আমার তাড়া আছে আমি চলে যাচ্ছি।

অবশেষে শ্রাবন উঠে দাঁড়লো।ধীর গতিতে তৃনার সামনে এলো।হাঁটু গেরে তৃনার সামনে বসে ফুলগুলো এগিয়ে দিয়ে,

———-আমি জানিনা কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়।জানি না এর অনুভূতি টা কেমন।তবে আমার মনে হয়েছিল আমার মনে হয়তো বৃষ্টির জন্য কোনো অনুভূতি আছে। কিন্তু বৃষ্টি যখন জানালো তার মনে আমার জন্য কোনো অনুভূতি নেই, তখন আমি বুঝতে পারলাম আমার সাথে বৃষ্টির যে সম্পর্ক তা বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছু না।তাছাড়া বৃষ্টি আমাকে এও জানায় যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। সত্যি বলতে বৃষ্টি যখন আমাকে না করে দেয় কিন্তু তোমার কথা বলে তখন কেন জানি নিজের খুব খারাপ লাগছিলো।কেন জানো বৃষ্টিকে না পাওয়ার জন্য নয়,না জেনে তোমাকে আমি যে কষ্ট দিয়েছি তার জন্য। কাল যখন তুমি কথা বলছিলে তখনি বুঝতে পারলাম তুমি কান্না করছো, তোমার কান্না দেখে আমার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠেছিলো।আমি ফিল করলাম আমি যাকে ভালোবাসি সে বৃষ্টি নয় তুমি।তাই আজ আমি তোমার সামনে বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, কতোখানি জিজ্ঞেস করোনা,হয়তো পরিমান করে বুঝাতে পারবো না।কিন্তু আমার হৃদয়ের সবটা জুরে এখন তোমার বসবাস।বিয়ে করবে আমায়?









এতোক্ষণ স্তব্ধ হয়ে কথা গুলো শুনছিল তৃনা।টপটপ করে জল পরছে। সে ভাবতেও পারে নি যে শ্রাবন তাকে এভাবে ভালোবাসার কথা জানাবে।কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে শ্রাবন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। খুশিতে সে কি বলবে বুঝতেই পারছে না। না পেরে ঝাপিয়ে পরল শ্রাবনের বুকে।তারপর নিজের ভেতরে থাকা সকল রাগ,অভিমান,ভালোবাসা প্রকাশ করলো চোখের জল দিয়ে।শ্রাবন বুঝতে পারলো বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মেয়েটাকে।তাই নিজের বাহুডোরে আরও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরললো তৃনাকে।

ডেক্সে বসে কাজ করছিল বৃষ্টি। হঠাৎ ফোনের শব্দে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রোদের কল।রিসিভ করতেই,

———কেমন আছিস।

———ভালো।তুই?আজ বিকালে কি একটু দেখা করবি।কিছু কথা বলার ছিল।

———-আসলে এসময়টাতে আমি খুব বিজি।কারণ অফিসে নতুন প্রজেক্টের কাজ চলছে তাই কাজে বিরতি নেওয়ার সময়টুকুও পায়না।

———-বেশি সময় নিবো না। কিছু কথা বলার পর চলে যেতে পারবি।প্লিজ না করিস না।

———-ওকে আমি বিকাল ৫টায় বিপাশা রেস্টুরেন্টে আসবো।





বিকাল ৫ টার ঘন্টা বাজার সাথে সাথে বৃষ্টি বেরিয়ে গেলো রোদের সাথে দেখা করার জন্য। মেঘ কিছু ফাইল রেডি করছে ঠিক তখনি আননোন নাম্বার থেকে কল এলো।

———-হ্যালো কে বলছেন।

———আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর জানানোর জন্য কল দিয়েছি।

———-শুভাকাঙ্ক্ষী? কে আপনি আর কি জানাতে চান।

———-আমি কে সেটা জানার দরকার নেই এতোটুকু জেনে রাখুন আপনার স্ত্রী তার প্রাক্তনের সাথে দেখা করতে এসেছে। আমার বলার ছিল বলেছি এখন বাকিটা আপনার বিষয়।
,
,
,
,,
বলে ফোনটা কেটে দিল। মেঘ দৌড়ে বৃষ্টির ডেক্সে গেল।গিয়ে দেখে বৃষ্টি নেই। মেঘ বুঝতে পারল অচেনা মানুষটি ভুল কিছু বলেনি।মেঘ গাড়ি নিয়ে চলে গেল মানুষটির দেওয়া ঠিকানায়।





বৃষ্টি বসে আছে। ১০মিনিট পর রোদ ঢুকলো।তারপর বৃষ্টির সামনে গিয়ে বসলো।ওদের পৌঁছানোর ১৫ মিনিটের মাথায় মেঘ ঢুকলো তারপর ওদের আড়ালে গিয়ে এমনভাবে বসলো যাতে ওদের নজরে না পরে,আর ওদের কথা ও শুনতে পায় স্পষ্ট করে।
,
,
,
,
,
চলবে……….

(আসসালামু আলাইকুম পাঠকদের কাছে প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আসলে আমার কিছু সমস্যা থাকার কারণে আমি বেশ কিছু দিন গল্প দিতে পারিনি এর জন্য অনেকে আমার ওপর রেগে আছেন আবার অনেকে নিজেদের মনের কথা ও প্রকাশ করছেন কিন্তু কি করবো আমি চেষ্টা করি গল্প দেওয়ার জন্য আগে তো রোজ দিতাম কিন্তু এখন তো পারছি না তাই দয়া করে কেউ রাগ করবেন না আমি যখন সময় পাবো গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো আর গল্প বড় করে দিচ্ছি যাতে আপনারা রাগ টা ভুলে গিয়ে আনন্দের সাথে পরতে পারেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here