মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩১

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩১
❤❤
রোদ_রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

বৃষ্টি অফিসে গিয়ে নিজের ডেক্সে যাবে তখনি তৃনা ওর সামনে এসে দাড়ালো।বৃষ্টি ওপর থেকে নিচ ভালো করে তৃনাকে পর্যবেক্ষন করতে থাকে।আজ তৃনা খুব সুন্দর করে সেজেছে। শাড়ি পরেছে সাথে হালকা সাজ। খুব কিউট লাগছে মেয়েটাকে।বৃষ্টি তো দেখে বুঝতে পারল নিশ্চয়ই আজ কোনো কিছু আছে তাই তৃনার এমন সাজ।

——–কিরে আজ হঠাৎ এমনভাবে সাজলি যে কোনো স্পেশাল কিছু নাকি।

——–হুমম ওরকম আরকি।গ্যাজ কর না।কি হতে পারে।

———এতো ভঙ্গিমা না করে বল তো কি ব্যাপার।

——–ওকে আজ আমি শ্রাবনকে প্রপোজ করবো তাই শাড়ি পরছি কেমন লাগছে বল তো।

———সত্যি???? অনেক ভালো হবে আর তোকেও অনেক সুন্দর লাগছে। যা আর দেরি করিস না।

তৃনা বৃষ্টি থেকে বিদায় নিয়ে শ্রাবনের কাছে গেল।শ্রাবন দেখেই এগিয়ে এলো,

———তুমি হঠাৎ, আমি তো আরো তোমার কাছে যাচ্ছিলাম ভালো হলো এসেছো।আসলে আমার তোমার সাহায্য লাগবে।বলতে গেলো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু।

——– ও আচ্ছা আসলে আমি তোমাকে কিছু বলতে এসেছিলাম। ঠিক আছে আগে বলো তোমার কি সাহায্য লাগবে তারপর না হয় আমারটা বলবো।

———আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি আর তাকে বলতে পারছি না তাই।






কথা টা শুনে তৃনার মন যেন উড়ুউড়ু করতে লাগলো। এ যেন মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি। তার মানে শ্রাবনও তৃনাকে প্রপোজ করার জন্য একি কাজ করছে।তৃনা অধিক আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,

——– ও তাই নাকি তো কে সে।

——–বৃষ্টি? হুমম আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।আসলে ওর সাথে থাকতে থাকতে ওর কথা বার্তা, চাল চলন সবকিছু মনোমুগ্ধকর। তাছাড়া খুব ভালো একটা মেয়ে। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো বন্ধুত্ব কিন্তু বন্ধু থেকে যে কখন ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে টের ও পায়নি।তাই আজকে ওকে আমার মনের কথা জানাবে ভাবছি কিন্তু ভয় লাগছে তাই তুমি যদি সাহায্য করো তবে আমি একটু তোমার সাথে প্রপোজের অভিনয় করতে পারি।মানে কিছু সময়ের জন্য তুমি বৃষ্টি সাজো প্লিজ।
,
,,
,
,
,
,
,
,
শ্রাবনের কথা শুনে তৃনা পাথর হয়ে গেল। যাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাতে এসেছিল সে নিজেই অন্যকে ভালোবাসার কথা বলছে। তার ওপর তাকেই অভিনয় করতে বলা হয়েছে।এটা মেনে নেওয়া কোনো মেয়ের পক্ষে সম্ভব না। তৃনার ক্ষেত্রে ও সম্ভব হয়নি।তার চোখ টলমল করছে মনে হচ্ছে এ বুঝি পরে যাবে তার চোখের জল। তবুও ঠিক রেখে,

——–না শ্রাবন আমি পারবো না আমার কেমন জানি অসুস্থ লাগছে তুমি অন্য কাউকে দিয়ে করো।





বলে সেখান থেকে বের হয়ে আসে শ্রাবনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে। শ্রাবন বুঝলো না হঠাৎ কি হয়ে গেল তৃনার সে চেয়ে রইল ওর যাওয়ার দিকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কেন্টিনে মুখোমুখি বসে আছে বৃষ্টি আর শ্রাবন।বৃষ্টিকে কিছু কথা বলবে বলে শ্রাবন এখানে ডেকেছিল কিন্তু ১৫ মিনিট হয়ে গেল শ্রাবন এখনো কিছু বলেনি এদিকে সে যে সকালে তৃনাকে দেখেছে এখনো পর্যন্ত ওর দেখা পায়নি।বৃষ্টি আর না পেরে জিজ্ঞেস করে,

——-কি হলো কখন থেকে বসে আছি তুমি তো কিছুই বলছো না।

——–আসলে তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল কিন্তু কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না

———যা বলার বলে ফেলো আর তুমি তো জানো এখন আমাদের কতো কাজ। তাই যদি তাড়াতাড়ি বলতে।

——–আসলে আমি মানে আমি…. আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সাথে থেকে আমি সবসময় আলাদা কিছু ফিল করি, তোমার সাথে কাটানো সব মুহূর্ত আমার মনে গেঁথে আছে, আমি জানি না কীভাবে আমি তোমার মায়ায় জড়িয়ে গেছি সত্যি বলতে আমার মনে তোমার জন্য যে অনুভূতি কাজ করে তার নাম কি আমার জানা নেই। আমি শুধু এটা জানি যে তোমাকে আমি ভালোবাসি।






শ্রাবন কথা গুলো বলতে বলতে বৃষ্টির হাত জোরা নিজের মুঠোয় নিয়ে নেয়।বৃষ্টি এতোক্ষণ শ্রাবনের কথা শুনে চুপ করে বসে আছে। আসলে তার জানা নেই সে এসব কথার কি উত্তর দিবে।বৃষ্টি নিচে দৃষ্টি তাক করে শ্রাবনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে ওপরে তাকালো।শান্ত স্বরে উওর দিলো,

———–শ্রাবন তুমি যা বলছো হয়তো তুমি তোমার অনুভূতি টা জানিয়েছো।এবার আমারও কিছু বলার আছে। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই না। তবুও তোমার কিছু কথা জানার আছে। কারণ এসব জানার পর হয়তো তুমি তোমার সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত থাকবে না।আসলে তুমি এখনো আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানো না।যদি জানো তবে কখনো এটা বলতে না।

আসলে আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি হতে পারবো না।কেননা আমি এমন একটা অবস্থার মধ্যে আছি যেখান থেকে চাইলেও আমি আর কোনো সম্পর্কে জরাতে পারবো না।জিজ্ঞেস করো না কারণ কি, শুধু জেনে রেখো সময় হলে সব জানতে পারবে। আর আরেকটা কথা তৃনা মেয়েটা না তোমাকে অনেক ভালোবাসে,অনেক আগে থেকে। শুধু বলতে পারেনি পারিবারিক সমস্যা আর তোমাকে হারানোর ভয়ে।কিন্তু ও আজ এসেছিলো তোমাকে সব জানাতে, কিন্তু জানি না সকাল থেকে ওর আর দেখা পায়নি। জানো তো মেয়ে টা না অনেক ভালো,আমি জানি ওর সাথে যদি তুমি সম্পর্কে যাও তবে তুমি অনেক সুখী হবে।তাই আমাকে ভুলে গিয়ে ওর সাথে সুখে থাকার চেষ্টা করো।আর ক্ষমা করে দিও আমার কথায় কষ্ট পেলে কিন্তু আমি নিরুপায়, সময় হলে সব কিছু জানতে পারবে।






কথা গুলো বলেই বৃষ্টি চলে গেল। আর শ্রাবন সেখানে বসে আছে। কেননা বৃষ্টি যা বলে গেলো সব তার মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে। বৃষ্টির এমন কি অজানা কথা থাকতে পারে যার জন্য বৃষ্টি শ্রাবনকে রিজেক্ট করলো।না সে কোনোভাবে হিসাব মেলাতে পারছেনা।
,
,
,
,
,
,
,
রোদ ল্যাপটপে কাজ করছে।এমন সময় আননোন নাম্বার থেকে কল এলো।দুবার রিসিভ করেনি।৩বারে রিসিভ করতেই,

———-হ্যালো কে বলেছেন

————————————————————–

———ওকে আমি আসছি।





রোদ অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখলো কোনার একটা টেবিলে কেউ বসে আছে। রোদ গিয়ে চেয়ার টেনে বসল।

———কেন ডেকেছেন।

———খুব বিজি নাকি।আগে কিছু অর্ডার করি।তারপর না হয় বলবো।বলো কি নিবে।

——–দেখুন আমি এখন কিছু খাবো না আপনার ইচ্ছে হলে নিন।আর আমি কাজ রেখে এসেছি তাই যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন

——– ওকে। আসলে আমি তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি। বলতে গেলে তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।এতে আমার ও উপকার হবে আর তোমারও।

———প্লিজ হেয়ালি না করে যা বলার সরাসরি বলুন।এমন কি কাজ যেখানে আমার উপকার হবে।

———-আমি জানি তোমার আর বৃষ্টির মধ্যে কি সম্পর্ক আছে। আর এও জানি তুমি রোদেলাকে বিয়ে করেছো নিজের লক্ষ্য পূরনের জন্য। বলতে গেলে আমাদের দুজনের লক্ষ্য এক। তুমি বৃষ্টিকে ভালোবাসো আর আমি মেঘকে। যদি আমরা দু’জনে একসাথে কাজ করি তাহলে তুমি পাবে বৃষ্টিকে আর আমি পাবো মেঘকে।তাই আমার তোমার সাহায্য লাগবে। তাহলে খুব সহজেই আমরা আমাদের কাছের মানুষকে পেয়ে যাবো।এবার বলো তুমি কি রাজি আমার শর্তে।

———-তারমানে আপনি বলতে চাইছেন আপনি বৃষ্টিকে পেতে আমায় সাহায্য করবেন।কিন্তু আমার আপনার সাহায্য লাগবে না।কেননা আমি কারো সাহায্য ছাড়াই নিজের জিনিস অর্জন করতে পারি।আর আমাদের চারজনের মাঝে যদি আপনি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে না আসেন তবে সেটা আপনার মঙ্গল। কেননা আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করবো সেখানে বাইরের কাউকে লাগবে না।আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার অফার দেওয়ার জন্য কিন্তু দুঃখিত আমি সেটা নিতে পারলাম না।আসি ভালো থাকবেন।

ওপরপাশের ব্যাক্তিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রোদ বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে।

———আমায় তুমি ফিরিয়ে দিলে কোনো ব্যাপার না, এবার তোমাকে দিয়েই আমি নতুন চাল চলবো।কারণ এবার আমি প্ল্যান হবে অন্য কিছু। বলে মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুললো।,
,
,
,
,
,
,
,
,
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here