মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩০

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩০
❤❤
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

ইদানীং প্রজেক্টের জন্য অফিসের সবাই অনেক ব্যস্ত সময় পার করছে।এ কাজে মেঘ বৃষ্টি আর শ্রাবনকে মেইন হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে, তৃনা আর টিনা কে দিয়েছে তাদের সাহায্যে কারী হিসেবে। তাছাড়া সমস্যা হলে তো মেঘ আছেই।এ নিয়ে মেঘের সাথে বৃষ্টির অনেক কথা আর দেখাদেখি ও হয়। যদি ও প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারো সাথে তেমন কথাও বলে না।কিন্তু বৃষ্টি একটা জিনিস ভালোভাবে বুঝতে পারছে সে এখন ঠিক আগের মতো নেই। মানে একসময় মেঘের প্রতি তার যে রাগ, জেদ ছিল এখন তার কোনোটাই প্রকাশ পায় না।বরং কেমন জানি কথা বলতেও ভালো লাগে। সে চাই নিজ থেকে মেঘের সাথে কিছু কথা হোক কিন্তু কোথাও একটা বাধা ঠিকই কাজ করে। মেঘ তো ওর সাথে তেমন কথাও বলে না, আগের চেয়ে অনেক বেশি এড়িয়ে চলে।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
আরেকটা বিষয় হলো বৃষ্টি কেন জানি মেঘের পাশে কোনো মেয়েকেই সহ্যই করতে পারেনা।কেমন জানি অন্যরকম রাগ কাজ করে। কারণ হচ্ছে টিনা মেয়েটা কারণে অকারণে মেঘের গায়ের ওপর ঢলে পড়ে যা দেখলে বৃষ্টির মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তখন ইচ্ছে করে গিয়ে মেয়েটার চুল ছিড়ে ফেলতে।তবুও নিজেকে শক্ত করে রাখে। একটু আগে বৃষ্টি আর তৃনা গিয়েছিল মেঘের কেবিনে।সেখানে কোনো একটা সমস্যা নিয়ে কথা বলার পর বের হতে যাবে ওমনি টিনা দৌড়ে যায় মেঘের কাছে, বিষয়টা বৃষ্টি বুঝতে পেরে পা দিয়ে আটকে দেয়, আরকি, ধপাস করে মেঝেতে পরে যায়। আর বৃষ্টি তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর নিজের ডেক্সে গিয়ে তৃনা সহ কাজ করে। আর আড়চোখে মেঘের কেবিনের দিকে তাকিয়ে থাকে।এদিকে টিনা যখন পরে যায় মেঘ তাকে টেনে তুলে।

——–এটা কি হলো আমি পরে গেলাম কীভাবে।

মেঘ কিছু টা আন্দাজ করতে পেরেছিল তাই নিজের ভেতর হাসিটা চেপে রেখে,

———আসলে আমার মনে হচ্ছে তোমার জুতা ভালো নই হয়তো সমস্যা আছে, মেঝের সাথে এডজাস্টেট নই তাই। ও কিছু না। কেন এসেছো।

———আসলে তুমি তো এখন আর আমার সাথে আগের মতো কথা বলো না, সময়ও দাও না তাই কাজের মাঝে তোমার সাথে আড্ডা দিতে আসলাম

——–এখন কোনো আড্ডা না তুমি তো জানো আমরা এখন সবাই কতো বিজি তাই সব কাজ হয়ে যাক তারপর সবাই মিলে আড্ডার প্ল্যান করবো।








মেঘের কথায় টিনা কিছু টা ভাবনার ভঙ্গিমা করে হেসে মতামত জানালো।এদিকে দুজনের এমন ফেস দেখে বৃষ্টির চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।আর ওদিকে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো। তার সামনে যে তৃনা বসে আছে সেদিকে কোনো চিন্তা ও নেই। টুনা এতোক্ষণ সবটা দেখে বৃষ্টির সামনে থুড়ি বাজাইতে বৃষ্টি চোখ সরিয়ে বুঝতে পারল তৃনা সবটা দেখেছে।

———- কিরে অনেকক্ষন ধরে দেখছি তুই ওদিকে তাকিয়ে আছিস, আর রেগে লাল হয়ে গেছিস সমস্যা কি বলতো।

———কিছু না আসলে দেখছিস টিনা মেয়েটা কতো নির্লজ্জ সব সময় স্যারের গায়ের সাথে লেগেই থাকে মনে হয় কাঠালের আটার মতো।

———হুমম এটা আর নতুন কি আর আমাদের স্যারও তো কতো কিউট যে কোনো মেয়ে তো এমনি প্রেমে পড়ে যাবে।যদি চান্স থাকতো তবে আমি নিজেই…

———কেন রে এখন কি শ্রাবনকে ফেলে স্যারকে ধরলি নাকি।

———দূর বললাম আরকি কিন্তু চাইলে তুই একটা চান্স নিতে পারিস কেননা দেখতে শুনতে তো তুই ও কম না। এ দাড়া তোর এতো জেলাস হচ্ছে কেন টিনাকে দেখে তুই ও কি কোনোভাবে স্যারের ওপর…….
.
.
.
.
.
.
কথা টা বলেই চোখ টিপুনি দিয়ে মুখে দূষ্টমির হাসি ফুটিয়ে তুলে।বৃষ্টি বুঝতে পারল এটা যদি এখানে থামিয়ে দেওয়া না হয় তবে বিষয় টা তৃনা অনেক লম্বা করবে। তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে

———তুই ও না কি থেকে কি বলিস। এসব নিয়ে আর কথা নয় নাহলে এক্ষুনি তোকে এখান থেকে বের করে দিবো।

———-নারে সত্যি বলছি তোর সাথে স্যারের খুব ভালো মানাবে।আরেকটা কথা কি জানিস তে ইদানীং তুই কেন জানি আরো সুন্দর হয়ে গেছিস।তোর মধ্যে একপ্রকার লাবন্যতা কাজ করে কেন বলতো।

——– জানি না সর তো কাজ করতে দে আর নাহলে এখান থেকে নিজের ডেক্সে যা বিরক্ত করিস না।

তৃনাও আর কিছু না বলে চুপচাপ কাজ করে নিলো।

———রাত তো অনেক হলো এবার যাও ঘুমিয়ে পরো আর কতো জেগে থাকবে।সে সন্ধ্যা থেকে এখানে বসে আছো এবার তো তুমিও অসুস্থ হয়ে পরবে।

———-না মা আমার কিছু হবে না আর সমস্যা হচ্ছে না আমার আপনি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করেন আমি আপনার মাথা টিপে দিচ্ছি।










বেশ কিছু দিন ধরে রোদের মায়ের অসুখ।হঠাৎ করে তিনি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন আর এখনো পর্যন্ত সুস্থ হওয়ার কোনো লক্ষ্মণ ও দেখা দিচ্ছে না। ওনি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে রোদেলা দিন রাত ওনার সেবা করছে। একদিকে সংসারের কাজ অন্যদিকে ওনার সেবা দুটো সামলাতে ও হিমশিম খাচ্ছে তবুও যেন কোনো ক্লান্তি নেই। আর রোদেলার এমন ভক্তি দেখে রোদের মা যেন অনেকটা অপরাধ বোধে ভুগছেন। কারণ এতোদিন তিনি তার ওপর যথেষ্ট অত্যাচার করেছেন শুধু তাই নয় বিভিন্ন ভাবে তাকে হেনস্তা করেছে কিন্তু এতো কিছুর পরও রোদেলা তার সেবা করছে কথা গুলো ভাবতেই তিনি চোখের জল ছেড়ে দিলেন।তা দেখে রোদেলা বলল,

——— কি হলো মা কাদছেন কেন খুব বেশি খারাপ লাগছে, ডাক্তার ডাকবো।

———না মা আমার খারাপ লাগছে তবে শরীরের অসুস্থতার চেয়ে যে আমার মনের অসুখ বেশি।আমি বুঝে শুনে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি অনেক কথা শুনিয়েছি আর তুমি আমার সেবা করছো।আমার যে খুব লজ্জা করছে তোমার সামনে এভাবে থাকতে।

——–ছিঃ ছিঃ কি বলছেন এসব আপনি তো আমার মা,আর মা হয়ে সন্তানের কাছে কখনো লজ্জা পেতে নেই। আপনি যা করেছেন আমি কিচ্ছু মনে রাখিনি।আপনি ঘুমিয়ে পরুন

———-আসলে তোদের ওপর আমার অনেক রাগ ছিল তাই তোর সাথে এমন ব্যবহার করেছি।কিন্তু আমি যেমন হয়না কেন আমার ছেলেটা বড্ড সহজ সরল। কিন্তু তোর ভাইয়ের জন্য ও তোর সাথে এমন করেছে। কিন্তু আমি জানি তুই পারবি আমার ছেলেকে ভালো রাখতে।আমার ছেলেটা যে খুব অভিমানী তাই কখনো নিজের মনের কথা কাউকে বলতে পারেনা।তুই পারবি না ভালোবেসে ওর সব দুঃখ দূর করে দিতে বল না।

রোদেলার হাত ধরে কথা গুলো বলতে বলতে তিনি কান্না করে দিলেন। রোদেলাও তার হাত শক্ত করে ধরে

———মা আপনি চিন্তা করবেন না আমি আপনার ছেলের সকল দুঃখ কষ্ট দূর করে দিবো।পৃথিবীতে স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালোবাসার কাছে সবি তুচ্ছ। আমি আমার সব চেষ্টা দিয়ে হলেও ওনাকে আপন করে নিবো।




।।
আরও কিছুক্ষন ওনার পাশে বসে থাকে।ওনার জোরাজোরিতে না পেরে ওনার জন্য সব ব্যবস্থা করে নিজের রুমে চলে আসে। মাথার মধ্যে একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছিলো তোমার ভাইয়ের জন্য এমনটা হয়েছে। তার মানে ভাইয়াও এর জন্য তাদের বিয়েটা মেনে নেয়নি।তাহলে কি এখানে কোনো রহস্য আছে।
.
.।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বৃষ্টি অফিস থেকে এসে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুল মুছতে থাকে।আয়নার দিকে চোখ যেতেই সে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে।হঠাৎ তৃনার কথা টা তার মাথায় চলে আস।সত্যি কি তার মধ্যে লাবণ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু কীভাবে। বৃষ্টির নিজেরও কেন জানি মনে হচ্ছে আগের চেয়ে তার সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে গেছে। এটা আদো সম্ভব। বৃষ্টি প্রায় তার মায়ের কাছে শুনতো মেয়েরা বিয়ের আগে যতোটা সুন্দর থাকে বিয়ের পরও নাকি সেটা আরো বেড়ে যায় কারণ বিয়ের পর নাকি সংসার, নতুন মানুষের সমাগম, আর স্বামীর ছোয়ায় নাকি মেয়েদের মাঝে আলাদা সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। তাহলে কি মেঘের ছোয়ায় বৃষ্টির সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেল।









বৃষ্টি আয়না দেখে এসব এসব ভাবছিল হঠাৎ সে অনুভব করল তার পেটে কারো হাত আর সেই হাত দিয়ে কেউ যেন স্লাইড করছে তার পুরো পেটে।আস্তে আস্তে করে মানুষটির বুকের সাথে বৃষ্টির পিঠ মিশে গেল।মানুষটি একহাত বৃষ্টির পেটে অন্য হাত দিয়ে বৃষ্টির পিঠে স্লাইড করতে করতে পেছনে থাকা চুলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে পিঠে, ঘারে ঠোঁটের স্পর্শ লাগিয়ে দিল। ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো বৃষ্টির পুরো ঘার। এদিকে বৃষ্টির যেন পুরো দম বন্ধ হয়ে আসছে।এ ছোয়াটা আর মানুষটির শরীরের ঘ্রানটা যে বৃষ্টির অনেক চেনা। হয়তো একটা রাতেই বৃষ্টি মানুষটার এ ঘ্রানের সাথে অনেক বেশি পরিচিত হয়ে গেছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন একছাদের নিচে থাকতে থাকতে যে মানুষটাও অনেক চেনা হয়ে গেছে। বৃষ্টি চোখ বুজে অজ্ঞাত মানুষটির ছোয়া গুলো অনুভব করতে লাগলো। বৃষ্টির কেন জানি বাধা দিতে মন চাইছে না।ইচ্ছে করছিল থাকনা এ সময়টা কিছুক্ষনের জন্য থেমে ।বৃষ্টি অনুভব করতে লাগলো ঠোঁটের ছোয়াটা ঘার ছেড়ে কানের খুব কাছে চলে এসেছে কারন তার নিশ্বাসের শব্দ বৃষ্টির কানে গিয়ে বারি খাচ্ছে। বৃষ্টি আরো গভীরভাবে সেটা অনুভব করছে। হঠাৎ বৃষ্টি চিৎকার দিয়ে উঠলো।আর পেছনে থাকা মানুষটি নিকট থেকে সরে গেল।কারণ মানুষটি নিজের অজান্তে বৃষ্টির কানে বাইট করছে যার জন্য বৃষ্টি চিৎকার দিয়েছে। বৃষ্টি পেছনে ফিরে তাকাতে দেখে মেঘ অপরাধীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

———সরি আসলে জানি না কি হলো হঠাৎ এমন কিছু করে ফেলেছি। সত্যি পুরো অজ্ঞানের মতো কাজ করছি।তুমি ক্ষমা করে দিও।আর হ্যা রেডি হয়ে আমার রুমে আসো কিছু কাজ আছে।





বলে বেরিয়ে যায় আর বৃষ্টি এখনো দাঁড়িয়ে আছে কারণ মেঘের কোনো কথায় তার কানে ঢুকেনি সে তো একটু আগের ঘটনাটা মনে করছে।কেন জানি তার আজকে মেঘকে বাধা দিতেই ইচ্ছে হয়নি। বরং ইচ্ছে করছিল মেঘের ছোয়ায় আরো বেশি গভীরে যেতে।কই এর আগেও তো মেঘ তার কাছে এসেছে তখন তো এমন কিছু ফিল করেনি তাহলে আজ কেন এমন করলো।কোনোভাবে কি মেঘের মায়ায় জড়িয়ে পরলো।আবারও আয়নার সামনে দাড়িয়ে সে নিজেকে দেখতে লাগলো।তার মধ্যে কেমন জানি লজ্জা কাজ করছে।এবার আফসোস করতে লাগলো ইস কেন যে চিৎকার দিতে গেল।তারপর আবারও নিজেকে ঠিক করে নিলো।তারপর মেঘের রুমের দিকে পা বাড়ালো।,
,
,
,
,
,
,
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here