মোনালিসা পর্ব ৪৩

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৪৩
বিভা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।প্রিয়মের চোখে-মুখের অবস্থা স্বাভাবিক। মোনা অস্বস্তি’তে গুলিয়ে যাচ্ছে। প্রিয়ম ক্রুদ্ধ হয়ে বিভার দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এখানে কি তোর?”
বিভা প্রিয়মের কথার জবাব দিলো না।বিভার শ্যেন দৃষ্টি মোনার দিকে। বিভা মোনার উদ্দেশ্যে সন্দিহান গলায় বলল,
– “এত রাতে এখানে কি মোনালিসা?”
মোনা জবাব দেওয়ার জন্য তাকায় বিভার দিকে।মোনা উত্তর দেওয়ার আগেই প্রিয়ম বলে,
– “ফ্যামিলি প্ল্যানিং করছি।বিয়ের পর কয়’টা বাচ্চা নিবো,কয় বছর পর পর নিবো। এগুলো শুনে তুই কি করবি বল?”
প্রিয়মের জবাব শুনে মোনা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। চোখে মুখে রাগের ফুলকি ছড়াচ্ছে মোনার। রাগ সংযত করে বিভার দিকে তাকিয়ে বলল,
– “নিশানের ঘুমের ভিতর হাঁটাহাঁটির স্বভাব আছে। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে ঘুম ভেঙেছে। আমি ও’কে শুইয়ে দিতে এসেছি।প্রিয়ম ভাই আপনার আর তাঁর লাভ স্টোরি শুনাচ্ছে।”
মোনার কথা প্রিয়ম অস্বাভাবিক ভাবে হেসে উঠে।বিভা একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
– “তা এত ফিসফিস করে কথা বলার কি আছে?”
বিভা কয়েক পা এগিয়ে আসলো।প্রিয়ম ঠাণ্ডা গলায় বলল,
– “বিভা শোন, মোনা আমার গার্লফ্রেন্ড।বলতে পারিস হবু বউ।মোনা চাইলে আমি এখুনি ও’কে বিয়ে করব।এভাবে নিজের নিজের উপস্থিতির জানান না দিয়ে মানুষের কথা শোনা, অভদ্রতা না বিষয়’টা?”
অপমানে বিভার মুখ থমথমে।মোনা রাগে চিৎকার করে উঠে খাট ছেড়ে দাঁড়ালো। সাঁওতাল শিকারীর কোচে ঘা খাওয়া গুঁইসাপের মত রাগে গড়গড় করতে করতে বলল,
– “প্রিয়ম ভাই প্রবলেম কি আপনার?এসব অসংলগ্ন কথাবার্তা কেন বলছেন?”
বিভা তীব্র আক্রোশে প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এত ভদ্রতা শিখলে কোত্থেকে?কে শিখালো?তোর কি মনে হয় না তুই বেশি বেশি করছিস?”
– “আমি কি করছি জানি না। কিন্তু এখানে যদি মোনা না থাকত তাহলে তোকে এই বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলতাম।আমার হাই স্যালারির জব হয়েছে,এটা শুনে বিয়ের জন্য এত তোড়জোড়?”
প্রিয়ম একটু থামে। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে বলে,
– “যা তুই এখান থেকে। মোনার সাথে কথা আছে আমার।”
এই কথা যে বিভা হাবিব সাহেব আর লিলি বেগমের কাছে বলে দিবে এ ব্যাপারে মোনার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।মোনা চায় না এমন টা। মোনা অবিশ্বাস্যর সুরে বলে,
– “আপনার সাথে আমার কি কথা প্রিয়ম ভাই? আপনাদের দুইজনের মাঝে আমায় কেন জড়াচ্ছেন? নিজেদের ঝগড়াবিবাদ নিজেরা মিটিয়ে নিন।দুই দিন পর বিয়ে। আপনি আমায় এত রাতে জোর করে নিজেদের লাভ স্টোরি শুনালেন।আর এখন উল্টাপাল্টা কথা বলছেন?”
বিভার মুখের অভিব্যক্তি দেখে মনে হলো সন্দেহের তীর মোনার দিক থেকে সরেছে। মোনা মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সমস্ত ক্ষোভ,যন্ত্রনা চাপিয়ে বলল মোনা,
– “আপনারা কথা বলুন, আমি আসছি।”
প্রিয়ম জোর গলায় বলল,
– “মোনা আমি তোমাকে বসতে বলছি। কথা আছে তোমার সাথে।”
– “বিভা আপুর সাথে কথা বলুন। শুধু শুধু মিথ্যা বলে আপনি আমায় বিপদে ফেলছেন।ছিঃ!”
মোনা এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেল। দিনে দিনে পাক্কা অভিনেত্রী হয়ে যাচ্ছে যেন। অসহ্য লাগছে মোনার।তাকালো না আর প্রিয়মের দিকে। মোনা চলে আসার কিছু মুহূর্ত পর বিভাও চলে আসল।মোনা বুঝতে পারল বিভার সাথে খারাপ আচরণ করেছে প্রিয়ম। বিভার দিকে তাকাতে অস্বস্তি হচ্ছে মোনার। বিভা এসে বলল,
– “কি কি বলেছে প্রিয়ম তোমার সাথে?”
একটু থেমে মোনার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
– “তোমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক আছে?”
– “ছিঃ ছিঃ বিভা আপু কি বলছ তুমি! প্রিয়ম ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করো না তুমি। সব সময় আমার পিছনে লেগে থাকে। তোমাদের প্রেমকাহিনী শুনালো,উনার অনেক গুলো সম্পর্ক ছিলো তাও বলল।”
বিভা কে চিন্তিত মনে হচ্ছে।কপালে চিন্তার ছাপ। তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো না। মোনা শঙ্কিত হয়ে পড়ল।বিভার মনে কি চলছে বোঝার চেষ্টা করল।বলল,
– “আচ্ছা শুয়ে পড়ো।রাত তো অনেক হয়েছে।”
– “তুমি কিন্তু প্রিয়ম ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করো না।উনি সব সময় আমার সাথে জোকস করে।”
বিভা উত্তর না দিয়ে শুয়ে পড়ল,মোনাও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।প্রিয়ম’কে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আবার অবিশ্বাসও করতে পারছে না। প্রচণ্ড দোটানায় ভুগছে। প্রিয়ম অতীত!এত বিভৎস অতীত মেনে নেওয়া যায়? তাছাড়া মোনার মাঝে কি আছে যার জন্য প্রিয়ম নিজেকে এত বদলাবে?এসব চিন্তা ভাবনায় মোনা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। সুস্থ, স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক হতে পারল না? কেমন অসুস্থ একটা সম্পর্ক। গোলক ধাঁধায় পড়ে গেল মোনা। বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। অসহ্য রকমের ব্যথা। জীবনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে যাচ্ছে মোনা। ভালো কিছু পেল না কখনো,ভালো থাকতে পারল না। বিভা আর কিছু জিজ্ঞেস করল না মোনা কে। মোনাও কিছু বলেনি। বলার মত মানসিকতা নেই।
___
সকালে মোনা ঘুম থেকে উঠে।বিহি,বিভার হয়ত ১২ টা ছাড়া ঘুম ভাঙবে না। নিশানেরও বেলা করে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। মোনা দ্রুত হাতে নাস্তা বানাচ্ছে, ভার্সিটি’তে যাবে আজ। নির্ঘুম রাত মোনা’কে এক কঠিন সিদ্ধান্ত দিলো।প্রেম-ভালোবাসার ভুত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলবে। ঠিক মত লেখাপড়া করবে, নিশান’কে সুন্দর একটা জীবন দিবে। মোনা বুঝে গেছে সুখ ওর জন্য না, শুধু শুধু মরীচিকার পিছনে ছুটে তৃষ্ণার্ত হয়ে লাভ নেই। প্রচণ্ড আক্ষেপে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে। নিজকে এমন ভাবে তৈরি করবে যাতে প্রিয়ম ছেড়ে গেলেও সেটা যেন মোনার জীবন কোন প্রভাব না ফেলে।বুকের ভিতর জমানো কষ্ট,আক্ষেপ কিংবা বহুদিনের যন্ত্রনা থেকে এই সিদ্ধান্ত।প্রিয়ম’কে ছেড়ে দেওয়া একটা কঠিন কাজ,এই কঠিন কাজ’টা করার মানসিকতা মোনার নেই। যেহেতু প্রিয়ম তাঁর অতীত নিয়ে অনুতপ্ত, সেহেতু সুযোগ দিবে।সম্পর্ক’টাও থাকবে। কিন্তু এত আবেগী হওয়া যাবে না। শক্ত হতে হবে। ছোট বেলা থেকে ভালোবাসার অভাব ছিল মোনার জীবনে তাই হয়ত কারো একটু সহানুভূতি’তে কিংবা ভালোবাসায় দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রিয়ম নামক এক জটিল সমীকরণে আটকে গেছে,না পারছে বের হতে। তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী এর থেকে ভালো সিদ্ধান্ত আর হতে পারে না।
কারো পায়ের শব্দ পেয়ে মোনা পিছনে তাকায়। প্রিয়ম ঘুম জড়ানো চোখে তাকিয়ে আছে মোনার দিকে।নিচু গলায় বলল,
– “মোনা!”
প্রিয়মের এই ডাকের কারণ বুঝে মোনা।শান্ত গলায় বলল,
– “রাগ নেই আপনার উপর আমার। আপনার অতীত নিয়ে রাগ করা’টা বোকামি।যা ইচ্ছে তা থাকুক আপনার অতীত জীবনে। অফিসে দেরি হয়ে যাবে রেডি হন।আর শুনেন এখানে আর আসবেন না।কাল থেকে আপনার বাসায় থাকবেন। যে ছেড়ে যাওয়ার সে এমনিতেই যাবে, কাউকে ধরে বেঁধে তো আর রাখা যায় না।”
মোনার উত্তর শুনে প্রিয়ম বিচলিত হলো কিছু’টা। এমন উত্তরের জন্য হয়ত প্রস্তুত ছিলো না। প্রিয়মের কণ্ঠে বিস্ময়,
– “কাউকে হারানোর ভয় আর ধরে বেঁধে রাখা এক জিনিস না মোনা।তুমি হঠাৎ এমন কথা কেন বলছ?”
– “আমি হারানোর ভয় করিনা।আমার জীবনে প্রাপ্তির খাতা শূণ্য, সেখানে হারানোর ভয় কিসের?”
– “মোনা তোমার কি হলো হঠাৎ? আমার খারাপ একটা অতীত আছে। কিন্তু আমি কি করব বলো?অতীত গুলো না চাইতেই সামনে আসছে বার বার।”
মোনা প্রিয়মের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,
– “আপনার অতীত নিয়ে কোন অভিমান নেই আমার। বিভা আপু ঘুম থেকে উঠবে আপনি এখান থেকে যান।”
প্রিয়ম চুপ। অনেকক্ষণ চুপ থাকল। কিছুক্ষণ পর বলল,
– “আমি তোমায় বিয়ে করব। আজ’ই আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলব।”
মোনার চোখ রাগে ধিকধিক করছে। চোখ জোড়া যেন ফার্নেসের চুল্লি।
– “খালা যদি এই বিষয়ে কিছু জানে খারাপ হবে খুব। আর আপনার বাপের কথা আমার সামনে বলবেন না দয়া করে।”
– “আম্মুর কাছে বলব না,আব্বুর কাছে বলব না—–”
– “হ্যাঁ কারো কাছেই বলা যাবে না।আর আপনার যদি মনে হয় আমি আপনার বাপের সামনে কখনো যাবো তাহলে আপনি ভুল।”
মোনা একটু থামে। আবার বলে,
– “আমি কি বলেছি আমি আপনায় বিয়ে করব?বিয়ে তো ছেলে খেলা না হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।”
মোনার কথায় প্রিয়ম বিস্ময়ের চূড়ায় পৌঁছে গেল।চোখ জুড়ে বিস্ময় ব্যাপ্ত হচ্ছে। অবিশ্বাস্যর সুরে বলল,
– “মোনা তুমি কি বলছ এসব?আমি তোমায় বিয়ে করে অন্য কোন দেশে স্যাটেল হয়ে যাবো।আমার ফ্যামিলির মুখোমুখি তোমার হতে হবে না।”
– “এসব কথা বলার মানসিকতা আমার নেই। জীবন চলতে চলতে আমি ক্লান্ত। আমার এখন ভালোবাসার থেকে শান্তির খুব দরকার।”
– “আমি দিবো তোমায় শান্তি। শুধু আমার অতীতের ব্যাপার গুলো নিয়ে কষ্ট পেয়ো না।”
মোনা আর উত্তর দিলো না। নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। প্রিয়ম আবার ডাকল,
– “মোনা, এমন আচরণ কেন করছ?”
মোনা তীব্র বিরক্তি নিয়ে বলল,
– “আপনি যান তো এখান থেকে।”
একটু পর আবার বলল,
– “রাতে বিভা আপুর সামনে ওসব কি বলেছেন?খালা যদি এসব নিয়ে আমায় কিছু জিজ্ঞেস করে খারাপ হবে। ওদের সামনে আপনি আমার সাথে কোন কথা বলবেন না।”
প্রিয়ম এসব কথা উপেক্ষা করে বলল,
– “নাস্তা দেও। আমি খেয়ে অফিসে যাবো। আমি তোমায় ভালোবাসি।”
মোনা গম্ভীর মুখে বলল,
– “টেবিলে বসুন যান।”
এই টুকু বলে ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে আক্ষেপ করে বলল,
– “আমার এখন মনে হচ্ছে আমার ভবিষ্যৎ ও আমার মায়ের মত হবে,লিলি খালার মত হবে। খালার সাথে এত খারাপ আচরণ করে আপনার বাপ,কখনো প্রতিবাদ করেছেন?দুই ভাইয়ের এক ভাইও কখনো প্রতিবাদ করেন নি। মেরুদণ্ডহীন পুরুষ!এত বড় সন্তান থাকতে কিভাবে একজন মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে?”
প্রিয়মের মুখ পাণ্ডু বর্ণ হয়ে গেল। কোন প্রতিবাদ না করে বলল,
– “আমি যাচ্ছি।”
– “খেয়ে যান।”
– “উঁহু।”
– “খেতে বলছি আপনায়!”
মোনার গলায় প্রখর রাগ।প্রিয়ম কেবল আস্তে করে বলল,
– “আচ্ছা।”
বিহি, বিভা,প্রিয়ম,নিশান সবাই এক সাথে খেতে বসল। প্রিয়ম আগে আগে খেয়ে উঠে গেল। মোনা’কে চোখের ইশারায় আড়ালে ডাকল। মোনা দেখেও না দেখার ভান করে খেয়ে যাচ্ছে। প্রিয়ম শেষে বলল,
– “এই নিশান স্কুলে যাবে না তুমি?”
এর ভিতর বিভা বলল,
– “প্রিয়ম তুই কি আমার কথা শুনবি না? সমস্যা কি তোর?”
– “সমস্যা তুই নিজে।”
প্রিয়ম বিভার কথা না শুনে নিশান’কে নিয়ে বের হয়ে গেল।
বিহি মোনা’কে জিজ্ঞেস করল,
– “ভার্সিটি’তে যাবে না?”
– “হুম যাবো।আজ জরুরি ক্লাস আছে। তোমরা কিন্তু যেয়ো না।”
বিভার ফোন বেজে ওঠে। বিভা নাস্তা অর্ধসমাপ্ত রেখে ফোন নিয়ে উঠে যায়। মোনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছে। বিভার বলা কথা গুলো কৌতূহলী হয়ে শুনছে। বুঝতে পারল বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। মোনা চমকালো। বয়ফ্রেন্ড আছে তবুও প্রিয়মের পিছনে লেগে আছে কেন? মোনার রেডি হওয়া শেষে বিভা ফোন রেখে বলল,
– “এই মোনালিসা আমরাও চলে যাবো এখন। অন্য সময় আসবো।”
মোনা মেকি জোর দেখিয়ে বলল,
– “এই না,না কোথায়ও যাবে না। শরীর ক্লান্ত ছিলো তোমাদের সাথে কথা হয়নি তেমন।”
– “না, না আবার আসবো।আছি তো এখানে বেশ কয়েকদিন।”
মোনা ভার্সিটি গেল আর ওরা লিলি বেগমের বাসায় চলে গেল। ভার্সিটি,অফিস সব শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরল। লিলি বেগম অস্থির হয়ে বসে রইলো সোফায়।বাসায় ফিরে লিলি বেগম’কে দেখে বলল,
– “খালা কখন আসলে?”
– “এই তো একটু আগে। তোর সাথে আমার কথা আছে এদিকে আয়।”
অজানা শঙ্কায় মোনার বুকের ভিতর ধ্বক করে উঠে। কি বলবে লিলি বেগম? মনে মনে আতঙ্কপ্রবন হয়ে গেল মোনা।লিলি বেগমের কাছে গিয়ে বসল।
– “কি বলবে খালা?”
– “তোর সাথে প্রিয়মের কোন সম্পর্ক আছে?”
লিলি বেগমের কথায় মোনা যেন বজ্রাহত হলো। বিধ্বস্ত মুখে তাকালো। যথাসম্ভব স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করল। কিছু না বুঝার ভান করে বলল,
– “খালা কি বলছ এসব?ছিঃ ,ছিঃ।উনি আমার বড় ভাইয়ের মত।খালা তোমার কেন এমন মনে হলো বলো তো?”
কথা গুলো খুব আহত গলায় বলল মোনা।লিলি বেগম গম্ভীর মুখে বলল,
– “বিভার সন্দেহ হয়েছে।মোনা তুই জানিস না বিভার সাথে প্রিয়মের বিয়ে ঠিক? সব জেনেশুনেও—-”
– “খালা প্লীজ তুমি না জেনে কোন কথা বলবে না।প্রিয়ম ভাইয়ের সাথে মাসে আমার একবারও দেখা হয়না।”
– “তাহলে ওর রুমে রাতে কি করছিলি?”
মোনার হৃৎপিণ্ড শীতল হয়ে গেল যেন।মুখের অভিব্যক্তি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
– “তুমি তো জানো নিশান ঘুমের ভিতর হাঁটাহাঁটি করে। আমি নিশান’কে শুইয়ে দিতে গিয়েছিলাম।প্রিয়ম ভাই উনার আর বিভা আপুর লাভ স্টোরি শুনালো আমায়। তোমার ছেলে বিভা আপুর সামনে উল্টাপাল্টা বলল।”
এসব বলতে বলতে মোনার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।মোনা অবাক হয়ে যাচ্ছে।কি দারুন অভিনয় করছে! আবার চোখ থেকে পানিও পড়ছে। তীব্র অভিমানে বলল,
– “খালা তোমাদের আর এখানে আসার দরকার নেই।আমি পৃথিবী’তে একা বাঁচতে পারব। কোন না কোন উপায়ে আল্লাহ্ বাঁচিয়ে রাখবে। তুমি বিভা আপুর কথা বিশ্বাস করলে,আর আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে। বিভা আপুও তোমার বোনের মেয়ে,আমিও তো তোমার বোনের মেয়ে! দু চোখ করে দেখছ কেন?”
লিলি বেগমের সাথে কথা বলতে বলতে কলিংবেল বাজা শুরু করে। মোনা দরজা খুলে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। জ্যাকের এক কর্মচারীর সাথে প্রিন্সেস এসেছে। মোনা সব চিন্তা ভাবনা ভুলে প্রিন্সেস কে জড়িয়ে ধরে। আহ্লাদপূর্ণ গলায় বলল,
– “মাদার! রিয়েলি আই এম সারপ্রাইজড!”
প্রিন্সেসও মাদার মাদার ডেকে মোনার গালে চুমু খাচ্ছে। মোনা উৎফুল্ল হয়ে বলল,
– “প্রিন্সেস’টা কি বড় হয়ে গেছে।”
জ্যাকের কর্মচারী মোনার হাতে তিন’টা ডায়েরি দিলো। এর ভিতর একটা ডায়েরি মোনা দেখেছিল। মোনা প্রচণ্ডভাবে চমকে গিয়ে বলল,
– “এগুলো কেন?জ্যাক আসে নি?”
– “জ্যাক ব্যস্ত।জ্যাক এগুলো জ্যাকের ভাষায় লিখে দিতে বলেছে।জ্যাক আপনার ফোনে ম্যাসেজ করেছে দেখুন।”
(চলবে)
#ভুল ত্রুটি বুঝে নিন।প্রচুর মাথা ব্যথা। রিভিশন দিই নি। গল্প’টা তাড়াতাড়ি শেষ করে দিতে চাচ্ছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here