মোনালিসা পর্ব ৪২

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৪২
মোনার হৃদয়’টা আবার যেন চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল।এ মুহূর্তে মোনা কিছুই ভাবতে পারছে না আর।প্রিয়ম কেন এমন করছে? হতবিহ্বল হয়ে চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলেছে মোনা। মর্মদেশে হুতাশন বিস্ফোরিত হয়ে দাউদাউ করে জ্বলছে। চোখে কান্নার শুষ্ক রেখা। মাথার ভিতর ঝিমঝিম করছে।কঠিন এক বিভ্রমে আটকে গেছে মোনা, এর থেকে বের হওয়ার সব রাস্তা বন্ধ। বালিশের নিচে রাখা মোবাইলের ম্যাসেজ টিউন আবার বেজে ওঠে। মোনা কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল’টা বের করে। ঝাঁপসা চোখে তাকায়।বিভা আবার ম্যাসেজ করেছে,
“আবার কোন মেয়ে পটাতে ব্যস্ত তুই?যা নিখুঁত অভিনয় জানিস, যেকোন মেয়ে দুই দিনে রাজি হয়ে যাবে। বিছানা অবদি নিয়ে তো ছেড়ে দিবি।”
মোনা ঘেমে যাচ্ছে। প্রচণ্ড যন্ত্রনায় কাঁদতে ভুলে গেছে।সব’টা অভিনয়? গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে হচ্ছে করছে। রুমের দরজার সামনে থেকে লিলি বেগম বলে,
– “এই তোর সমস্যা কি?বাসায় মেহমান আর তুই এখানে বসে আছিস।”
এই বলে লিলি বেগম মোনার দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসে আবার বলল,
– “এগুলো কেমন আচরণ?বিভা,বিহি ওরা কি ভাববে বল তো?”
মোনা অন্যদিকে ফিরে আছে।চোখে মুখের অবস্থা অস্বাভাবিক,সঙ্গিন। উদভ্রান্তের মত দেখাচ্ছে। কারো সামনে যাওয়ার মত ইচ্ছে নেই, কারো সাথে কথা বলার মানসিকতা নেই। যন্ত্রনায় ছলছল করা চোখে লিলি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “খালা আমার মাথা ব্যথা করে।আমার কিছু ভালোলাগছে না।”
লিলি বেগম সন্দিহান চোখে তাকায় মোনার দিকে। ভিতর থেকে কান্না বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে,কান্নার বেগে ঠোঁট বেঁকে যাচ্ছে মোনার। মাথা ব্যথার যন্ত্রনার কান্নায় কারো মুখের অভিব্যক্তি এরকম হয় না। মানুষ যখন শোকে,দুঃখে কিংবা কষ্টে কাঁদে তখন চোখে মুখের অভিব্যক্তি এক রকম থাকে। আর যখন ব্যথা কিংবা রোগের যন্ত্রনায় কাঁদে তখন মুখের অভিব্যক্তি আরেক রকম থাকে। লিলি বেগম এসে মোনার পাশে বসে। মোনার কাঁধে হাত রেখে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকায় মোনার মুখের দিকে। গম্ভীর হয়ে বলে,
– “সত্যি বল কি হয়েছে?ঘামছিস কেন এত?অস্থির দেখাচ্ছে কেন তোকে?”
লিলি বেগমের কথা মোনার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে না।চোখ বন্ধ করে রেখেছে মোনা। বন্ধ চোখের কোটর বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। লিলি বেগম অস্থির হয়ে বলল,
– “মোনা কি হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে?”
মোনা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। লিলি বেগম আবার জিজ্ঞেস করে,
– “অন্য কোন প্রবলেম হলে আমায় বল।”
মোনা কান্নার ধকলে জড়িয়ে আসা গলায় বলল,
– “অন্য কোন প্রবলেম না।”
– “শুধু মাথা ব্যথা?”
মোনা উত্তর দেয় না। কাঠের পুতুলের মত শক্ত হয়ে বসে থাকে। মোনা’কে নিরুত্তর দেখে লিলি বেগম আবার বলল,
– “মাথা ব্যথার ওষুধ নিয়ে আসবো?”
এইটুকু বলে থেমে মোনার হাত ধরে আবার বলল,
– “চল ওই রুমে চল।”
মোনার হাত ধরে টানতে টানতে পাশের রুমে চলে যায়। মোনা নির্বাক হয়ে আছে,কোন কিছুর দিকে খেয়াল নেই। মোনা গিয়ে খাটের উপর বসে। বিভা মোনার কাছে গিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে বলল,
– “কি হলো মোনালিসা? আমরা আসাতে খুশি হও নি নাকি?”
মোনা কঠোর ভাবে চেষ্টা করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে মন্থর গলায় বলল,
– “কি সব বলছ? খুশি হবো না কেন?আসলে আমার শরীর’টা হঠাৎ করেই খুব খারাপ হয়ে গেছে।”
মোনা বিধ্বস্ত মুখে বসে আছে।চোখ গুলো নিমীলিত।লিলি বেগম মাথা ব্যথার ওষুধ নিয়ে আসলো। মোনার মোটেও মাথা ব্যথা করছে না। সাত-পাঁচ না ভেবে ওষুধ’টা খেয়ে ফেলল। মুনির হাসান নিপা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “মোনালিসার শরীর বোধ হয় অনেক করেছে।ও’কে হসপিটালে নিয়ে চলো।”
মুনির হাসানের কথা মোনার কানে বিদ্ধ হলো।মোনা ইচ্ছে করছে একা থাকতে, বিশ্রী রকমের অসহ্য লাগছে। চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে,কারো কথা শুনতে ভালো লাগছে না। দুর্বল গলায় বলল,
– “না আংকেল হসপিটালে যাওয়ার দরকার নেই। ঠিক হয়ে যাবো।”
মুনির হাসান লিলি বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,
– “লিলি মোনালিসা’কে পাশের রুমে নিয়ে যাও। মানুষের ভিতর মাথা ব্যথা বাড়বে।”
মোনা পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে রইল।বুকের ভিতর ভারি এক যন্ত্রনা। সুখ গুলো বার বার দুঃখে পরিণত হচ্ছে। কি করবে প্রিয়ম’কে ভুলে যাবে? বিছানার চাদর আঁকড়ে করে চাপা গলায় কাঁদছে। চোখের পানি বর্ষার ধারার ন্যায় গড়িয়ে গড়িয়ে বালিশে পড়ছে। কিভাবে বেরিয়ে আসবে এই মায়াজাল থেকে?চাপা কান্নার ফলে মোনার শরীর কাঁপছে।এর ভিতর নিশান আসে স্কুল থেকে। দৌড়ে মোনার কাছে এসে উৎফুল্ল হয়ে একটা ঘড়ির বক্স দেখায়। মোনা চিৎকার করে বলল,
– “নিশান যাও এখান থেকে।আমার মাথা ব্যথা করছে আমায় বিরক্ত করবে না।”
এই যন্ত্রনা মোনার সহ্য হচ্ছে না কিছুতেই। এদিকে‌ কষ্ট, অন্যদিকে প্রিয়মের উপর ক্ষোভ। মোনা বিছানা ছেড়ে উঠে ওষুধের বক্স থেকে দুই’টা ঘুমের ওষুধ হাতে নেয়।এর ভিতর লিলি বেগম আসে। মোনা লিলি বেগমের দিকে এক নজর তাকিয়ে বলে,
– “খালা আমার অসহ্য রকমের যন্ত্রনা হচ্ছে। আমি ঘুমের ওষুধ খেয়েছি ঘুমাবো।আমায় ডাকে না যেন কেউ। তোমরা দুপুরে খেয়ে নিও।আর বাসায় তো খাট দুই’টা। এতগুলো মানুষ ঘুমাবো কিভাবে? সন্ধ্যা হওয়ায় আগে চলে যেয়ো।”
লিলি বেগমের কাছ থেকে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে বিছানায় নিয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ঘুমে চোখ লেগে আসতে লাগলো। এক সময় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
___
মোনা ঘুম থেকে উঠে দেখে রুম’টা অন্ধকার। পাশের রুমের লাইটের সরু কয়েক খন্ড আলো আসে মোনার রুমে। মোনা উঠে বসে। ঘুমিয়ে কিছুক্ষণের জন্য সব ভুলে গেছে। হঠাৎ আবার সব মনে পড়ে, মোনার পাঁজর কাঁপিয়ে ধ্বক করে উঠে।আবার যন্ত্রনা শুরু হয়। এত সব ভালোবাসা সব মিথ্যে? মোনার চোখ ভিজে উঠে।কি জবাব দিবে প্রিয়ম এর বিপরীতে?
রাত নয়’টা বেজেছে।পাশের রুম থেকে কথার শব্দ আসছে। গুনগুন শব্দ করে গান গাচ্ছে কে যেন। মেয়েলি গলা। নিপা খালারা যায় নি? মোনা এলোমেলো ভাবে পা ফেলে দরজার কাছে যেতেই দেখে বিভা আর বিহি বসে আছে সাথে নিশান। নিশান বিভা বা বিহির দুইজনের ভিতর কারো একজনের ফোন দিয়ে গেমস খেলছে। হঠাৎ বিভা দরজার দিকে তাকিয়ে মোনা’কে দেখে উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল,
– “আরে মোনালিসা! বেটার ফিল হচ্ছে এখন?ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমি এত চুপচাপ থাকো কেন বলো তো?”
মোনা এসে ওদের কাছে বসে।বিহি হেসে বলে,
– “তুমি অসুস্থ তাই আমরা যাই আমরা যাই নি, ভাবছি রাতে জম্পেশ আড্ডা হবে।”
মোনার চাহনিতে বিষণ্ণতা।হাসার চেষ্টা করল। বিভা মোনার কাঁধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,
– “আচ্ছা তুমি কি সব সময় এমন গম্ভীর থাকো?নাকি আমাদের ভালো লাগছে না?”
– “না আসলে আমার শরীর’টা খারাপ লাগছে।”
মোনা চুপচাপ বসে থাকে।ওদের কথার বিপরীতে দুই একটা কথা বলছে। এর ভিতর বিহি বিভার দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এ্যাই প্রিয়ম ভাইয়ার খোঁজ পেলি?”
প্রিয়মের নাম শুনে মোনার বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠলো। চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। হঠাৎ মোনার মনে পড়ল প্রিয়ম তো অফিস শেষে এখানেই আসবে।বিভা আর বিহিও এই বাসায়।ওরা কি ভাববে? তাছাড়া প্রিয়মের সাথে কথা বলা দরকার। প্রতিনিয়ত একটা সম্পর্ক নিয়ে যন্ত্রনায় না ভুগে, একবারেই শেষ করে দেওয়া ভালো। মোনার মাথার ভিতর অনেক প্রশ্ন।প্রিয়মের এত ভালোবাসা,এত পাগলামি,এত ব্যাকুলতা সব মিছে? মেয়েদের বিছানা অবদি নিয়ে ছেড়ে দেয়? কষ্টে মোনার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিভা রাগ রাগ বিহির প্রশ্নের উত্তরে বলে,
– “না পাই নি খোঁজ।”
মোনা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। স্বাভাবিক গলায় বলে,
– “কেন প্রিয়ম ভাইয়া কোথায় গেছে?”
বিভা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “সে এক লম্বা কাহিনী।”
মোনা বলে,
– “লম্বা কাহিনী নাকি প্রেম কাহিনী?খালা কবে যেন বলেছিল তোমাদের বিয়ে হওয়ার কথা না যেন কি। যতটুকু মনে পড়ে তোমরা বিয়ের ব্যাপারে’ই এখানে আসছো।”
বিভা কোন ভনিতা করলো না।খুব সাবলীল গলায় বলল,
– “প্রিয়মের সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক ছিলো। আমাদের সাথে সম্পর্ক চলাকালীন ওর ও আরো অনেক গুলো সম্পর্ক ছিলো,আমারও আরো অনেক গুলো সম্পর্ক ছিলো। কোন একটা কারণে আমি ওর সাথে ব্রেকআপ করে দিই দেড় বছর আগে। ব্রেক আপের দুই মাস পর আমি আবার ওর সাথে প্যাচ আপ করি। তারপর আমাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়। তার কয়েকদিন পর প্রিয়ম আমায় ইগ্নোর করতে থাকে। তারপর আর আমার সাথে ওর কথা হয়নি।”
শারীরিক সম্পর্ক কথা’টা মোনার বুকে ধারালো ছুরির মত আঘাত করল। মোনার মুখ থমথমে। মুখ থেকে আর কোন কথা বের হলো না।মোনা ভেবেছিল ওদের সাথে এখনো সম্পর্ক চলছে, দেড় বছর আগে ব্রেক আপ হয়েছে শুনে স্বস্তি পেলেও শারীরিক সম্পর্কের কথা শুনে নির্বাক হয়ে গেল। ছোট বোনের সামনে বসে কত সহজ ভাবে কথা গুলো বলল।মোনার সাথে পরিচয় আর কত ঘন্টার! এত স্বল্প পরিচয়ের একজন মানুষের কাছে এভাবে সহজ গলায় সব বলে দিলো! মোনা অনুভূতিহীন হয়ে ফ্যাকাশে মুখে বসে রইলো। ভিতরে কান্না দলা পাকাচ্ছে।
প্রায় তিন-চার ঘন্টা বসেছিল বিহি আর বিভার সাথে।ওদের সাথে বসে থাকতে খুব বেশি একটা খারাপ লাগছে না। ওরা হাসতে হাসতে বিছানায় লুটিয়ে পড়ছে কিছুক্ষণ পর পর। ওদের কাছে প্রেম কত সহজ। মোনা আনমনা হয়ে যাচ্ছে বার বার।ওদের কথায় সম্বিত ফিরে। মোনা আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “তোমাদের বিয়ে কবে হচ্ছে?”
– “কয়েক মাস পর হয়ত।”
– “ও।”
মোনা কিছুক্ষণ পর আবার বলে,
– “আচ্ছা প্রিয়ম ভাই রাজি বিয়েতে?”
– “প্রিয়মের কোন খোঁজ’ই নেই।রাজি থাকলে তো আমার সাথে কন্টাক্ট করত।ওর রাজী’তে কি এসে যায়?খালু উপর কথা বলতে পারবে না।”
বিভার বলা প্রতি’টা কথা প্রচণ্ড যাতনা রূপে মোনার বুকের ভিতর বিচরণ করছে। এই কষ্ট কারো কাছে প্রকাশ করার নয়।
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজে। মোনা হতবিহ্বল হয়ে যায়।প্রিয়ম এসেছে? এত রাতে প্রিয়ম’কে দেখে কি ভাববে ওরা? মোনা ত্রাসিত হয়ে যায়। বিভা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। চমকে গিয়ে বলল,
– “মোনালিসা কে এসেছে এত রাতে?”
মোনা উত্তর না দিয়ে খাট থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করবে তাই ভাবছে। মোনা দরজা খুলতেই প্রিয়ম বাসার ভিতরে ঢুকে।মোনা উৎফুল্ল হয়ে বলে,
– “আরে প্রিয়ম ভাই আপনি? কতদিন পরে দেখা আপনার সাথে। লিলি খালা,নিপা খালা উনারা তো দুপুরে এসেছিল।সন্ধ্যায় চলে গেছে। বিহি,বিভা আছে।আসুন আসুন।”
মোনার কথা কিছু’ই বুঝলো না প্রিয়ম। হঠাৎ দেখে বিহি আর বিভা খাটে বসা। বিভা তির্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।দ্রুত বেগে ছুটে আসে দরজার দিকে। বিভার দিকে তাকিয়ে প্রিয়ম স্বাভাবিক গলায় বলল,
– “তুই এখানে?এরিক তো বলেছিল তুই আসিস নি। তুই এসেছিস জানলে তো আমি আসতাম না। এরিক তো বলল আম্মু উনারা রাতে এখানে থাকবে।”
এইটুকু বলে মোনার দিকে আড়চোখে তাকালো প্রিয়ম। মোনা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে প্রিয়ম খুব নিপুণ ভাবে মিথ্যা বলেছে। বিভা যেন অপমান বোধ করল। থমথমে মুখে বিভা বলল,
– “প্রিয়ম তোর সাথে আমার কথা আছে। কতগুলো ম্যাসেজ করেছি তোর ফোনে।”
ফোনের কথা বলতেই প্রিয়মের মুখের ভাব বদলে গেল। চেহেরায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠল।ওদের সামনে মোনার কাছে ফোন চাইবে কিভাবে?প্রিয়ম বিভার দিকে তাকিয়ে বলল,
– “সারাদিন অফিস করে এসেছি।এখন আমি ক্লান্ত। আর তোর কথা শোনার আগ্রহ আমার নেই। বিরক্ত করিস না।”
বিভা চিৎকার করে বলল,
– “আমি তোকে বিরক্ত করি না?”
প্রিয়ম বিভার কথা উপেক্ষা করে বলল,
– “এই মোনা শোয়ার জায়গা হবে?এখন বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। তোমাদের পাশের রুম তো খালি। নিশান আর আমি ওই রুমে ঘুমাই, তোমরা এই রুমে।”
মোনা প্রিয়মের দিকে না তাকিয়ে বলল,
– “আচ্ছা।”
মোনার গলায় বিষাদের সুর।বিহি আর বিভার মাঝে প্রিয়মের সাথে কথা বলার সুযোগ হলো না। বার বার বুক চিঁড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসতে লাগলো। প্রিয়ম নিশান’কে নিয়ে পাশের রুমে যাওয়ার সাথে সাথে বিভাও রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। মোনা শুধু নির্বাক দর্শকের মত দেখে চলেছে। মোনার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে, কাঁদতে হবে এখন। পাশের রুম থেকে প্রিয়মের গলায় আওয়াজ পাওয়া গেল। উঁচু গলায় চেঁচামেচি করছে বিভার সাথে।বিভা’কে রুম থেকে বের করে দিলো কয়েক মুহূর্ত পর। বিভা বেরিয়ে আসার পর মোনা নিশান ডেকেছে এই অজুহাত দিয়ে প্রিয়মের রুমে গেল।প্রিয়মের মোবাইল’টা প্রিয়মের দিকে ছুঁড়ে মারলো। রোষারক্ত চোখে তাকিয়ে শুধু বলল,
– “লম্পট।”
প্রিয়ম চাপা গলায় বলল,
– “মোনা তুমি সব কথা না শুনে আমায় ভুল বুঝবে না প্লীজ। মোনা আমি তোমায়—”
প্রিয়মের কথা না শুনেই রুম থেকে বের হয়ে গেল মোনা। শুনতে ইচ্ছে করছে না কোন কথা। রুমে এসে দেখে বিভা,বিহি দুইজন’ই শুয়ে পড়েছে।মোনাও লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।‌ চোখ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি গড়িয়ে পড়ছে নিঃশব্দে। মোনা বালিশে মুখ গুজে শব্দহীন ভাবে কেঁদে চলেছে। খুব সতর্কতার সাথে কাঁদছে। বিহি, বিভা কেউ’ই যেন না শুনে এই কান্নার আওয়াজ।মোনার ফোনের স্ক্রিনে প্রিয়মের দেওয়া একটা ম্যাসেজ ভেসে উঠে,
– “ওরা ঘুমালে এই রুমে এসো মোনা।বিভার একার কথা শুনে তুমি আমায় ভুল বুঝছ কেন?দুই জনের কথা শুনতে হবে তোমাকে। মোনা আমি তোমায় সম্পর্কের শুরুতেই বলেছিলাম আমার অসংখ্য রিলেশন ছিলো।”
মোনা উত্তর দিলো,
– “হ্যাঁ আসবো, আমারও কথা আছে আপনার সাথে।”
চোখ মেলে শুয়ে থাকে মোনা। অন্ধকার ব্যতীত কিছু’ই চোখে পরছে না।প্রিয়মের সাথে সম্পর্ক কতখানি ভুল ছিলো প্রতি পদে পদে মোনা উপলব্ধি করছে। দুই ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর মোনা খুব সাবধানার সাথে বিছানা থেকে উঠে।পা টিপে টিপে প্রিয়মের রুমে যায়।মোনা’কে দেখে প্রিয়ম উঠে বসে। অনেকখানি দূরত্ব রেখে বসে মোনা। প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলে,
– “কয়’টা মেয়ের সাথে ফিজিকাল রিলেশন ছিলো?”
– “মোনা আমি তো বলেছি তোমায় আমার অনেক গুলো গার্লফ্রেন্ড ছিলো আমার। আমি যাদের সাথে প্রেম করেছি তাঁদের কাছে শারীরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক একটা বিষয় ছিলো।হ্যাঁ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ ছিলাম, লম্পট ছিলাম। কিন্তু আমি তোমার জন্য নিজেকে বদলিয়েছি মোনা।আমি তোমায় বলেছি তোমার প্রতি আমার যে অনুভূতি তা আগে কখনো কারো প্রতি জাগে নি। আমার অতীতের আমি’টা কে না দেখে বর্তমানের আমি’টা কে দেখো। ওর সাথে আমার ব্রেকাপ হয়েছে আরো দেড় বছর আগে।ও কি জানে আমি বদলিয়েছি নিজেকে? ও তো আমায় আগের মত’ই ভাবে।”
দুই জন’ই খুব আস্তে কথা বলছে। হঠাৎ ওই রুমের লাইট জ্বলে ওঠে। বিহি বা বিভা কেউ একজন সজাগ হয়েছে। মোনা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে বিভা দাঁড়ানো দরজার সামনে।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here