মোনালিসা পর্ব ৪১

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৪১
কষ্টের মহাতরঙ্গ মোনার অন্তরতম অঁচলে প্রবল বেগে প্রলয়ের সৃষ্টি করেছে। মোনার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মোনা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে বসে। মোনার চিৎকারে নিশানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অন্ধকারে হতবিহ্বল হয়ে নিশান মোনার দিকে তাকিয়ে আছে। মোনা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে লাইট অন করল। তিন গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেলল। নিশানের কাছে এসে বলল,
– “বাজে স্বপ্ন দেখেছি। ভয় পেয়ো না। ঘুমাও।”
নিশান শুয়ে পড়ে। মোনার বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটা করছে যেন কেউ। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েছে, তাই স্বপ্ন দেখেছে। হৃদস্পন্দন স্প্রিংয়ের বলের ন্যায় লাফাচ্ছে। মোনা ফোন হাতে নিয়ে টাইম দেখে।প্রিয়মের অফিস এখনো শেষ হয়নি?নাকি বাসায় চলে গেছে?প্রিয়ম আর বিভা এক ছাদের নিচে থাকবে, মোনা কিছুতেই মানতে পারছে না। এর ভিতর ম্যাসেজের টিউন বেজে ওঠে,
– “মোনা পাখি সজাগ আছো?”
কাঙ্ক্ষিত ম্যাসেজ পেয়ে মোনার ঠোঁটে হাসি ফুটে। ম্যাসেজের রিপ্লাই দেওয়ার আগেই প্রিয়ম ফোন দেয়। মোনা সাথে সাথে রিসিভ করে। মোনা হ্যালো বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে বলল,
– “এই তুমি এখনো সজাগ? আমি তো ভেবেছি ঘুমিয়ে গেছো।”
মোনা এসব কথার উত্তর না দিয়ে অস্থির গলায় শঙ্কিত হয়ে বলে,
– “আপনি বাসায় এখন?হবু বউ’কে সময় দেন যান।”
তীব্র অভিমান ছিলো মোনার কথায়।প্রিয়ম হেসে উঠে। বলে,
– “আমি একটু আগে অফিস থেকে বের হলাম। বাসায় যাবো না। আপনার বাসায় আসছি ম্যাম। বাসায় গেলে তো কারো মনে মহাপ্রলয় হয়ে যাবে।”
মোনা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দেয়।একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মোনা।বসে বসে প্রিয়মের অপেক্ষা করছে। প্রিয়মের আসতে পনেরো-বিশ মিনিট লেগেছে। ডোর বেল বাজার সাথে সাথে দরজা খুলল মোনা। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে প্রিয়ম’কে। রুমের ভিতর ঢুকে মোনার দিকে তাকিয়ে বলল,
– “আজ রাতে এখানেই থাকবো।ভয় পেয়ো না তুমি। পাশের রুমে থাকব, ভিতরের দরজা আটকে দিও।”
– “আমি ভয় পেলাম কখন?আপনি বাড়িয়ে বাড়িয়ে ভাবেন সব সময়।”
প্রিয়ম হেসে মোনা’কে আলতো করে জড়িয়ে ধরল। মোনার চুলের ভিতর নাক ডুবিয়ে জড়ানো গলায় বলল,
– “মুখ’টা এমন করে রেখেছ কেন?যাবো না তো আমি বাসায়। বিভার সামনে’ই পরবো না।একটু হাসো না মোনা পাখি।”
প্রিয়মের উষ্ণ নিঃশ্বাস মোনার মাথায় বিঁধছে। মোনা আবেশে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। মোনার শ্বাস ক্রমশ ভারী হচ্ছে।প্রিয়মের স্পর্শে মোনা যেন আহ্লাদি হয়ে ওঠে। আহ্লাদপূর্ণ গলায় বলে,
– “বিভা যত দিন বাসায় থাকবে, ততদিন যদি বাসায় পা রাখেন তাহলে এবার গলার ছুরি মারব।”
প্রিয়ম হাসে। মোনা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “যাবো না মোনা পাখি।”
মোনা মুহূর্তেই চিন্তিত হয়ে ওঠে। চিন্তাগ্রস্থ চিত্তে বলে,
– “আচ্ছা আপনার বাসা থেকে বিয়ের কথা বললে তখন কি করবেন?উনারা তো বিয়ের ব্যাপারে আসছে। আমি খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি।”
– “তুমি এত বোকা কেন মোনা?আমার লেখাপড়া কমপ্লিট, আমি জব করি, হাই স্যালারি পাই। আমার মত একটা এস্টাব্লিশড ছেলে’কে জোর করে বিয়ে দিবে?”
এইটুকু বলে থেমে মোনার দিকে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে বলল,
– “কি খারাপ স্বপ্ন দেখেছে?”
মোনা বিষণ্ণ গলায় বলল,
– “দেখেছি আপনার আর বিভার বিয়ে।”
প্রিয়ম উচ্চস্বরে হেসে উঠে। হাসি থামাতে বেশ সময় লাগে। মোনা অধৈর্য হয়ে বলে,
– “উফ! হাসছেন কেন?”
– “এমন ফানি কথা শুনলে সবাই ই হাসে।”
– “আচ্ছা ওরা যাবে কবে? বাসা থেকে আপনায় কিছু বলেনি?”
– “মোনা তুমি এসব কথা রাখো তো।আমার তোমার খালা-খালু পাগল হয়েছে বুঝলে?”
মোনা মন খারাপ করে বলল,
– “খালা তো আপনার বউ হিসেবে বিভা কে পছন্দ করে।খালা এসব জানলে আমায় কি ভাববে বলুন?এ বিষয়’টা আমায় খুব ভাবায়।”
– “আমি তো আমার বউ হিসেবে মোনা কে পছন্দ করি। মোনা আমরা বিয়ে’টা করে ফেলি?”
মোনা তাকায় প্রিয়মের দিকে।কোন উত্তর দিলো না। মোনা কিছুক্ষণ প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
– “আচ্ছা নিপা খালারা তো আসছে বিয়ের ব্যাপারে। আপনার পরিবারের সবাই রাজি।আপনার বাবা যদি আপনার উপর প্রেসার ক্রিয়েট করে?”
– “এত বেশি বেশি ভাবছো কেন বলো তো?কেউই প্রেসার ক্রিয়েট করবে না।তুমি এসব ভেবে ভেবে নিজের মাথা’টা নষ্ট করো না।আর যদি বেশিই চিন্তা হয়ে থাকে তাহলে চলো বিয়ে করে ফেলি। কালকেই বিয়ে করি?”
মোনা জটিল এক চিন্তায় পড়ে গেল। ভালোবাসার মানুষ’কে বিয়ে করবে সেখানে এর ভাবনা বেমানান। মোনা অনেকক্ষণ পর বলল,
– “বিয়ে যখনই হোক আমি কখনো আপনার বাবার সামনে যাবো না, আপনার বাবার মুখোমুখি হবো না। আপনা’কে ভালো না বাসার এটা সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো।”
প্রিয়মের কপালে ভাঁজ পড়ল। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।খুব অবাক হলো মনে হচ্ছে। চমকানো গলায় বলে,
– “এগুলো কেমন কথা মোনা?হ্যাঁ বাবা তোমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। তাই বলে এমন সিদ্ধান্ত?”
মোনা একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “এই বিষয়ে আমায় দয়া করে কিছু জিজ্ঞেস করেন না। আমি খালার কাছে কি জবাব দিবো বলেন?আমার জন্য খালা কষ্ট পাবে।”
মোনা উদাস হয়ে গেল। প্রিয়ম বিরক্ত হয়ে বলল,
– “এত আবেগি হয়ো না তো মোনা।আমি কি পাঁচ বছরের বাচ্চা যে তাঁদের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিবে?”
প্রিয়ম একটু থেমে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে বলে,
– “কিন্তু বাবার বিষয়’টা—-”
মোনা রেগে গেল। ক্রুদ্ধ হয়ে বলে,
– “বলছি তো এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আপনায় অবজ্ঞা করার এটা গুরুত্বর কারণ বলতে পারেন। এত বাঁধা পেরিয়ে এই ভালোবাসার ভবিষ্যৎ কি হবে জানি না।সব’টা অনিশ্চিত।প্লীজ এই বিষয়ে আমায় দ্বিতীয় বার কিছু জিজ্ঞেস করবেন না ‌।”
প্রিয়ম কিছু বলতে গিয়েও বলল না। কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকল।মোনা আবার বলল,
– “খেয়ে এসেছেন?অনেক রাত হয়েছে।সকালে আবার লেইট হবে।”
প্রিয়ম ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলে,
– “না খাই নি।কালকের মত খাইয়ে দিবে?একটু চুমু-টুমু দেও না মোনা।”
মোনা কপট বিরক্তি দেখিয়ে প্রিয়ম’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কপাল ঘুচিয়ে রাখলো।প্রিয়ম হেসে বলল,
– “আচ্ছা আপাতত চুমু-টুমু লাগবে না। ভাত খাইয়ে দিলেই চলবে।”
মোনা হাসলো।প্রিয়মের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। খাওয়ার মাঝে প্রিয়ম বলল,
– “এই মোনা পাখি চলো না বিয়ে করি।”
– “আমার বিয়ের বয়স হয় নি।”
মোনার কৌতুকপূর্ণ কথায় প্রিয়ম হেসে উঠে।খাওয়া শেষ হলে মোনা বলে,
– “আজ না হয় এখানে থাকলেন কাল থেকে কোথায় থাকবেন? খবরদার বাসায় যদি এক পা দেন, বিভার সাথে যদি কোন রকম কথা বলেন খুন করে ফেলবো।”
– “তোমার উপর শতভাগ বিশ্বাস আছে, তোমার যা রাগ খুন করতে পারবে।”
মোনা হাসলো। বলল,
– “এখন ঘুমান।শুভ রাত্রি।”
মোনা উঠতে উদ্যত হলেই প্রিয়ম মোনার হাত ধরে হেঁচকা টান দেয়। মোনা টাল সামলাতে না পেরে বসে পড়ে। প্রিয়মের দিকে প্রশ্ন বিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়।প্রিয়ম মোনার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
– “আজকে রাত’টা নির্ঘুম’ই কাটুক। আকাশে মস্ত বড় চাঁদ।জ্যােৎস্নালোকিত রাত, চলো না বারান্দায় বসে চন্দ্রসুধা পান করি সাথে এক মগ কফি’তে দুইজনে চুমুক দিই।”
জগদ্বাসীর সবচেয়ে অগ্নিমূল্যের মত্ততা প্রিয়মের গলায়। মোনা বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। আবিষ্ট হয়ে যায় প্রবল ভালোলাগায়।জড়ানো গলায় বলল,
– “চলুন।”
– “আগে কফি বানিয়ে নিয়ে আসো। এক মগ কিন্তু।”
মোনা কিচেনে গিয়ে দ্রুত কফি বানায়।মোনার মন জুড়ে হিমশীতল এক অনুভূতি ঢেউ খেলছে। তীক্ষ্ণ, প্রবল সুখকর অনুভূতি। পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট,দুঃখের ঊর্ধ্বে চলে গেল যেন। মোনা কফি নিয়ে বারান্দায় যায়। শশিপ্রভার দীপ্ত আলোতে প্রিয়ম’কে দেখে।প্রিয়মের পাশে গিয়ে বসে। হাত খানেক দূরত্ব ছিলো দুইজনের মাঝে। পবিত্র,শুদ্ধ এক ভালোবাসা। কথা বলতে বলতে রাত পোহিয়ে যায়। ভোরের আলো ফুটে। মোনা ঘুম ঘুম চোখে ঢলে পড়ে প্রিয়মের কাঁধে।
___
মোনার ঘুম ভাঙে দুপুর বারো টায়।আর পাঁচ’টা দিনের মতোই ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙে। ঘুম জড়ানো মস্তিষ্কে মোনার রাতের কথা কিছুই মনে নেই। খানিক বাদে মনে পড়াতেই মোনা হাঁ হয়ে থাকে। বিছানায় আসলো কিভাবে? বারান্দায় ছিলো রাতে! নিশান কোথায়?প্রিয়ম কোথায়?মোনা বিস্ময় ভরা চোখে ফোনের দিকে তাকায়।দুপুর হয়ে হয়ে গেছে! মোনা হতচেতন হয়ে যায়। মোনার বালিশের পাশে একটা কাগজ চিঠির মত ভাঁজ করা, কাগজের উপরে একটা কলম। কাগজটার উপরিভাগে লেখা,
“ওপেন ইট এন্ড রিড ইট।”
মোনা কাগজ’টা খুলে। ঘুম ঘুম চোখে ঝাঁপসা দেখে। চোখ কচলিয়ে ভালো করে তাকায়।
– “রাতে বারান্দায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলে।কোলে নিয়ে বিছানায় শোয়াতে হয়েছে।আমার অফিসে যাচ্ছি, নিশান’কে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে যাবো।খেয়ে নিও। আর শুনো আম্মু আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে তুমি জানো না।”
মোনা হতবুদ্ধি হয়ে বসে রইলো। কিছুক্ষণ বসে থেকে কাগজ’টা বিছানার নিচে রেখে দিলো।লিলি বেগম ফোন দিয়েছে কয়েক বার। ফোন রিসিভ করে না বলে ম্যাসেজ দিয়েছে। কয়েক’টা ম্যাসেজ দিয়েছে।
“আমাদের বাসায় আসতে কিসে এত বাঁধে তোর?”
“আজ ভার্সিটি’তে যেতে হবে না। দুপুরের দিকে আসবো আমরা। নিপা তোদের দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে।”
“মায়ের মত একগুঁয়েমি স্বভাব।”
ম্যাসেজ গুলো পড়ে মোনা হতাশ হলো।মোনা চায় না কোন আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে কিংবা কথা বলতে। তীব্র এক ক্ষোভ রয়েছে মোনার মনে। বিভাও আসবে? বিরক্তি’তে মোনার কপালে কয়েকটা কপাল ভাঁজ পড়ল।মোনা ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গেল।রুটি সেঁকতে গিয়ে ডান হাতের তর্জনী পুড়ে ফেলেছে। মোনা ব্যথায় অস্থির হয়ে গেল। হাত পানির ভেতর ডুবিয়ে রাখলো। এই বেগতিক অবস্থায় কলিং বেল বেজে উঠল। বাজতেই থাকলো কয়েক মিনিট ধরে। মোনা ব্যথাতুর মুখে বিরক্ত হয়ে দরজার দিকে গেল। লিলি বেগম বলেছিল দুপুরের দিকে আসবে। উনারা এসেছে? মোনার অস্বস্তি হচ্ছে। জীবনের প্রথম দেখা তাই হয়ত। দরজা খুলতেই দেখে দরজার সামনে লিলি বেগম আর সাথে চার জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মোনা কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে দেখলো। লিলি বেগমের পাশে দাঁড়ানো ভদ্র মহিলা’কে চিনতে মোনার অসুবিধা হলো না। মোনার মায়ের চেহেরার ছাপ রয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ এক ভদ্রলোকও এসেছে, নিপা বেগমের স্বামী হয়ত। তারপর মোনার চোখ গেল সোনালী রঙা চুলওয়ালা মেয়ের দিকে। দুই’টা মেয়ে, একজনের চুল সোনালী অন্যজনের চুল লালচে। সমবয়সী মনে হচ্ছে।এদের মধ্যে কোন’টা বিভা মোনা বুঝতে পারলো না। মেয়ে দুই’টা মোনা’কে আপাদমস্তক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। নিপা বেগম মোনার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে বলল,
– “একদম লিপির মত চেহেরা।”
এই বলে মোনা’কে জড়িয়ে ধরল।এদের মাঝে মোনার কেন জানি অস্বস্তি লাগছে। নিপা বেগম পাশে দাঁড়নো ভদ্রলোক’কে দেখিয়ে বলল,
– “মোনালিসা তোমার খালু মুনির হাসান।”
মুনির হাসান মোনার দিকে এগিয়ে এসে মোনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
– “কেমন আছো আম্মু?”
কোন এক অদ্ভুত কারণে মোনার মনে হয়েছিল মুনির হাসান ও হাবিব সাহেবের মত।কয়েক মুহূর্ত পর ধারণা বদলে গেল মোনার। বিয়ের সময় কনে পক্ষ আর বর পক্ষের সাথে যেমন পরিচয় করানো হয় সেরকম পরিচয় পর্ব চলছে। ভিতরে ভিতরে মোনা অস্বাচ্ছনদ্য বোধ করতে লাগলো। নিপা বেগম মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “সোনালী চুলওয়ালা’টা বিভা,আর লাল চুলওয়ালা’টা বিহি।”
বিহি বিরক্তির সুরে বলল,
-“আম্মু এগুলো কেমন ধরণের পরিচয়? সোনালী চুল, লাল চুল।”
বিভা হেসে মোনা’কে জড়িয়ে ধরলো। যথেষ্ট আন্তরিক আচরণ করার পরও বিভা’কে অসহ্য লাগছে মোনার। সবাই সোফায় বসল। লিলি বেগম বলল,
– “মোনা দুপুরে কিন্তু এখানেই থাকব।”
মোনা কেবল আস্তে বলল,
– “না করেছি তোমায়?”
নিপা বেগম এগিয়ে মোনা শরীর ঘেঁষে বসে বলল,
– “তোমার ভাই কোথায় মোনালিসা?নাম যেন কি?”
– “নিশান।ও স্কুলে।”
নিপা বেগম নিজের ব্যাগ থেকে একটা ঘড়ির বক্স বের করে মোনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– “চমৎকার একটা ঘড়ি। তোমার জন্য এনেছি।ব্যাণ্ডু আর ঘড়ির ফ্রেম খাঁটি সোনার।”
নিপা বেগমের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই লিলি বেগম বলে উঠল,
– “এখন কি বলবি?নিতে চাইবি না? তোর তো অভ্যাস আছে।”
মোনা মনে মনে এটাই ভেবেছিল। কিন্তু নিপা বেগমের মনক্ষুণ্ণ করে না ও বলতে পারেনি। ছোট বেলা থেকে বেশিরভাগ সময়ে একা থাকতে থাকতে মোনার মানুষের ভিতর ভালো লাগে না। এখনো ভালো লাগছে না। এর ভিতর লিলি বেগম মোনা’কে ডেকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলে,
– “প্রিয়মের খোঁজ আছে তোর কাছে? ফোন রিসিভ করছে না, বাসায় যাচ্ছে না।”
মোনা হেসে উঠে বলল,
-“আমি কি ভাবে বলব?বিয়ের ভয়ে পালাচ্ছে বোধ হয় তোমার ছেলে।তা বিয়ে কবে?”
– “প্রিয়ম’কে ই তো পাচ্ছি না। আর বিয়ে কি জোর করে করানোর জিনিস নাকি?”
লিলি বেগমের সাথে কথা বলতে বলতে জানালা ফাঁক দিয়ে মোনার চোখ পড়ে পাশের রুমের দিকে। যে রুমে প্রিয়ম ঘুমিয়েছে। প্রিয়মের মোবাইল’টা খাটের উপর। প্রিয়মের মোবাইল লিলি বেগম নিশ্চয়ই চিনে। মোনা আঁতকে উঠে। অস্থির হয়ে বলে,
-” খালা তুমি দাঁড়াও,আমি আসছি।”
মোনা দ্রুত ছুটে রুমের দিকে যায়।প্রিয়ম মোবাইল ভুলে রেখে গেছে। মোবাইল’টা হাতে নিতেই মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে থাকা ম্যাসেজ’টা দেখে মোনা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।বিভা নামে সেইভ করা নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে-
-“পালিয়ে বেড়াচ্ছিস কেন তুই?আমার সামনে এসে দাঁড়া একবার। দুই বছরের সম্পর্ক সব ভুলে গিয়েছিস?”
মোনা ফোন’টা বালিশের নিচে রেখে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ-গল্পের মূল প্লট এখনো আসেনি। আরো অনেক পর্ব বাকি।কারো কারো কাছে মনে হয় স্টার জলসা,কারো কারো কাছে মনে হয় জ্বী বাংলা। এমন মনে করা মানুষ গুলো গল্প’টা ইগ্নোর করবেন প্লীজ। এসব কারণে প্রতি’টা গল্প তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দিয়েছি।গল্প সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত কিন্তু গল্প কত পর্ব হবে এটা অন্তত আমার উপর ছেড়ে দেন।
শরীর ক্লান্ত লাগে, এডিট করে রিভিশন দেই নি। ভুল ত্রুটি বুঝে নেন।নয়ত মার্ক করে দেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here