“রূপের_তরী🍁🌷পর্ব ২+৩

0
388

পর্ব ২+৩
#পর্ব_২
গল্পঃ #রূপের_তরী🍁🌷
writer: #Ashura_Akter_Anu
..
“বিয়ে?”
‘জ্বি’

কথাটি শুনে তরীর বাবা চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে রইলেন।

তৎক্ষনাৎ লোকটি তরীর বাবার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলেন। ব্যাগটা ওজনে বেশ ভারী লাগছিল তাই সামাল না দিতে পেরে হাত থেকে মাটিতে পরে যায়।

ব্যাগের চেইনটা খোলা থাকায় ব্যাগের ভেতরে থাকা বস্তুগুলো বেরিয়ে আসে।যেগুলো হলো টাকার বান্ডেল।
তরীর বাবা আর যাই হোক লোভী নন। তবে এমন সময় সংসার চালানোও বেশ কঠিন।ওনারও বয়স হয়েছে। খুব একটা খেটে রোজগার করারও সামর্থ্য ওনার নেই।

তাই সামনে থাকা ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়ে উনি বলেন,

‘সাহেব আমি জানিনে আপনে কে,এইটেও জানিনে আমার মিয়েকে কির জন্নি নিজের বাড়ির বউ বানাইতে চান।তবে আপনেকে দেখে ভদ্দর লোক মনে কয়। তাই কই,আমি আমার মিয়েকে দিতে পারবো,তবে আমারে দুটে দিন সমায় দেন। ‘

(আকুতির স্বরে বলল কথাগুলি)

লোকটি কিছু একটা ভেবে উত্তর দিল,

“দেখুন আমি কালকের মধ্যেই আপনার মেয়েকে নিয়ে যেতে চাই।তাই যা ভাবার জলদি ভাববেন।আমি এখন আসি”

কথাটি বলে আর এক মূহুর্ত দেরি না করে চলে গেল লোকটি। যাওয়ার পথে লোকটি দেখতে পেল লাল হিজাবে তরী বাড়ির দিকেই আসছে।

বাড়ির সামনে অত বড় গাড়ি দেখে বেশ বিস্মিত হয় তরী। তাড়াতাড়ি গিয়ে বাড়িতে ঢোকে সে। উঠোনে গিয়ে দেখে,ওর বাবা উঠোনে একটা ব্যাগের পাশে পড়ে থাকা অনেকগুলো টাকার বান্ডেল গোছাচ্ছে।
বাবার কাছে গিয়ে কপাল হালকা কুচকে জিজ্ঞেস করে,

‘বাবা? এত টাকা কোথায় পেলে তুমি?’

তরীর বাবা বেশ হকচকিয়ে জবাব দেন,

‘তুই ঘরে যা তো,সব কতা তোর না শুনলেও চলবো,যা এহন ঘরে যা ‘

তরী আরও বেশি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় বাবার দিকে। টাকার ব্যাগ বাবার হাত থেকে উঠোনের একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলে,

“বাবা তোমায় যেটা বলেছি তার জবাব দাও,এতটাকা কোথায় পেলে?’

‘দেখ তরী, তোরে যেইডা কইছি সেইডা শোন।যা ঘরে যা। মাতা গরম করাবি না কইলেম'(বেশ রাগান্বিত হয়ে)

তরী বাবার এমন রাগ দেখে আর কিছু বলল না৷ ঘরে চলে গেল। আর যাই হোক এ বাড়ির কারও ওপর দিয়ে কথা বলার সাহস ও অনেকদিন আগেই হারিয়েছে ।

যখন থেকে এ বাড়িতে ওর নতুন মা এসেছে।

বিকেলের দিকে মা মেয়ের পুরো পাড়ার খবরাখবর নেয়া হয়ে গেলে বাড়ি ফেরে। রসুইঘরের দায়িত্বটা তরীই সামলায়।বলা চলে প্রায় সকল কাজই সে করে। ওদিকে মা মেয়ে দুজনে মিলে সারা গাঁ মেরে খায়।

পুকুরে গিয়ে গোসল সেরে দুজনে মিলে ঘরে ঢোকে। ঘরে ঢুকে চৌকির এক পাশে সেই ব্যাগ দেখতে পায়। ব্যাগে কি আছে তা দেখতে ব্যাগের চেইন খুলতেই দেখে অনেক টাকা। টাকাগুলো দেখে মা মেয়ে দুজনেরই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে টাকার বান্ডেলগুলো নাড়তে থাকে।

তরীর বাবা ঘরে প্রবেশ করলেই জিজ্ঞেস করে,

“হ্যা গো?কোথায় পেলে গো এত টাকা?চুরি চাকারি কইরলা নাকি লটারি লেগে গেছে?”

‘আহ, তোমার শুরু হইয়া গেল না?আরে আজ একটা লোক তরীর বিয়ার জন্নি আইসিলো।সেই দিয়ে গেল এত টাকা,এহন এই টেকাডা যদি আজীবনের মত চাও, তাহলে আগে তোমরা দুজনে মিলে তরীরে বিয়ের জন্নি রাজি করাও,বুঝলা?’
——
সকাল সকাল সৎ মা ও বোনের আদর দেখে তরী হতভম্ব হয়ে বসে আছে। যে মহিলা কালই ওর মাথার চুলগুলো কেটে দিল আজ সে ওর চুলের জন্য আফসোস করছে?

হাতে একবাটি পায়েস,ছানার সন্দেশ, আরও কয়েকপ্রকার মিষ্টি এনে তরীকে আদুরে ভাবে খাওয়াচ্ছেন উনি। এতটা আদর তরীর মনে কেমন যেন ঝড়ের আভাস দিচ্ছে। কারন এর আগে যতবার এমন হয়েছে ততবারই কোন না কেন গন্ডগোল হয়েছে জর জীবনে।।

খাওয়া বাদ দিয়ে সৎ মাকে বলে ওঠে তরী,

“মা কিছু হয়েছে?আমাকে এত আদর যত্ন করছেন? ”

নাটকীয় ভাবে সৎমা বলে ওঠে,

“আর বলিসনে তরী,আজ তোর বিয়া হইয়ে গেলে তো আর আদর করবার পারুম না, তাই জন্নি আজ তোর পছন্দের মিস্টিগুলান খাওয়াইতে আনলাম রে’

” বিয়ে?’কার বিয়ে?’

‘ওমা, তোর বিয়ে’

‘কিহ্!???’

এমন কিছুরই আশংকায় ছিল তরী। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওর সৎমায়ের দিকে। ওদিকে বোনও মিটিমিটি হাসছে।

নিজেকে প্রচুর বোকা মনে হচ্ছে তরীর। এটা ছাড়া এ বাড়িতে আর কিই বা আশা করতে পারে ও। এর প্রতিরোধ কখনোই করতে পারবেনা সে জানে। এটাও বোঝার বাকি নেই কালকের টাকাগুলো কিভাবে এসেছে। বাকি রইল নিজের বাবার কথা,আচ্ছা নিজের মেয়েকে তাহলে বিক্রি করে দেওয়াটা খুবই গর্বের ব্যাপার?

সব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করে দিয়ে তরী ওর সৎ মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আমি কোন বিয়ে টিয়ে করতে পারবোনা ‘

কথাটি শুনে মূহুর্তের মাঝে ওর সৎমায়ের মুখ কালো হয়ে গেল। রাগান্বিত স্বরে বলল,

‘বিয়ে করবি না মানে?’

‘করবোনা ব্যাস।’তোমরা আমায় জোড় করতে পারবেনা’

‘হুহ মরন!তুই বিয়ে করবিনা তোর ঘার করবে। শোন তরী আজ তোরে বিয়ে করে নিয়ে যাবি, কোন গন্ডগোল পাকালে তোরে জম্মের শিক্ষা দিয়ে দিব’চল মিলি(তরীর সৎ বোনের নাম মিলি)

কথাগুলো শরীরে কাটার মত বিধলেও কিচ্ছু করার নেই।সৎ মায়ের স্বভাব সম্পর্কে খুব ভাল করে জানে।

যদি ওনার কথামত না চলা হয় তাহলে তরীর অবস্থা আরও খারাপ করে দিতে পারে। মন চায় পালিয়ে যেতে কিন্তু তাও করতে পারবেনা সে, কারন অতটা সাহস ওর মাঝে নেই। আর কোথায়ই বা যাবে ও,কিই বা করবে?কোথায় থাকবে?…

এতকিছুর মাঝে আরও একটা জিনিস ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আচ্ছা কে এত টাকা দিয়ে আমায় কিনে নিল?

শেষোক্ত কথাটি মনে করে নিজের অজান্তেই চোখের কোনে জল চলে আসে তরীর।
💔
……

পরনে বোরখা ও মাথায় হিজাব পড়ে নিজের ঘরে বসে আছে তরী।
একটু আগেই রেজিস্টার পেপারে সাইন করলো সে।
এখন চলে যেতে হবে ওর।
একদম স্তব্ধ হয়ে বসে আছে সে। যাকে নিজের জীবনটা দলীল করে দিল তাকে দেখা তো দূর নামটাও জানা হয়নি।

একটুপর তরীর রুমে সেই মধ্যবয়স্ক লোকটি প্রবেশ করলো। এবং গম্ভীর গলায় বলল,

‘চল আমাদের অনেকটা পথ যেতে হবে’
.
#পর্ব_৩
গল্পঃ #রুপের_তরী🍁🌷
writer: #Ashura_Akter_Anu
…….
জমকালো সাজে সাজানো একটি আলীশান রাজপ্রাসাদের মত বাড়ির সামনে এসে গাড়িটি থামে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির বাইরে থাকা সিকিউরিটি এসে গাড়ির দুপাশের দরজা খুলে দেয়।

একপাশ থেকে সেই মধ্যবয়সী লোকটি বেরিয়ে আসে। গাড়ি থেকে নেমে অন্যপাশের দরজার কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেন উনি। হাতটাকে পাশ কাটিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে তরী। এতে লোকটির কিঞ্চিৎ খারাপ লাগলেও কিছু বলেন না।এমন হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। বাড়ির কয়েকজন কাজের লোককে গাড়িতে থাকা ব্যাগ নিয়ে আসতে বললে তরী বারন করে,

–আমি আমার ব্যাগ নিজেই উঠাতে পারবো। আমার কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই।

বাড়িটা বাইরে থেকে যতটা সুন্দর ভেতর থেকে আরও বেশি সুন্দর। বিভিন্ন রকম শো পিস,আসবাবপত্র যার বেশির ভাগই অ্যান্টিক এর। সবকিছু অনেক সুন্দর ভাবে গোছানো। হবেই না কেন?যেখানে বাড়ির একেক রকমের কাজের জন্য একেকটা করে কাজের লোক রাখা।

বাড়ির ভেতরে যাওয়ার পর লোকটি একজন মহিলাকে বললেন তরীর রুমটি দেখিয়ে দিতে।মহিলাটি ওনার কতামতো তরীকে নিয়ে দোতলার একটি রুমে নিয়ে গেলেন।

রুমটা দেখে তরী অনেকটা অবাক। এত্ত বড় রুম এর আগে কখনো দেখেনি সে। মনে হচ্ছে যেন ওদের বাড়ির সমান জায়গাও কম পড়বে এই রুমের সমান হতে গেলে। একটা ফুটবল গ্রাউন্ডের মত। তবে এসবকিছু দেখার পরও তরী অনেকটা উদাসীন। মনের মাঝে ঝড় বইছে ওর। কি করে আজ কি হয়ে গেল?এক মূহুর্তে ওর পুরো পৃথিবীটাই পাল্টে গেল। অভাগী হলেও কেউ এমন অভাগী হয়?

নিজের বাবার বাড়ী ছেড়ে আসার সময় একটা কথাও বলেনি সে। শুধু চোখের জল ভাসিয়েছে।আসার পথে লোকটি কে,কি তার পরিচয়? কিছুই জানা হয়নি তরীর। তরীর একটা কথা মাথায় ঘুরছিল, জীবনে একটা কাছের বন্ধুই ছিল যেটা বই।তার সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল আজ থেকে।তরী জানেনা এরপর কি হতে চলেছে তার জীবনে। অবশ্য জীবন নিয়ে ভাবনা তরী অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে কারন ওর জীবনের তরী যে, আগে থেকেই ডুবে রয়েছে।

তরীর রুমের বিছানা পুরোটা গোলাপ ও গাজরা ফুলে সাজানো। সমস্ত রুমের দেয়ালে গোলাপ ফুল লাগানো। জায়গায় জায়গায় চৌবাচ্চা রেখে তার মাঝে ছোট ছোট মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এককথায় রুমটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

সাথে আসা মহিলাটি তরীকে বাথরুম দেখিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে। এবং আলমারী খুলে একটা গোলাপি রংয়ের শারি এনে তরীর হাতে ধরিয়ে দেয়।

–হাত মুখ ধুয়ে এটা পড়ে নিন ম্যাডাম,আমি আপনার খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

বলে মহিলাটি চলে যান।তরীরও বেশ খারাপই লাগছিল। তাই বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়ীটা পড়ে নেয়। মাথার চুলগুলো না থাকার পরও তরীকে দেখতে মাশাআল্লাহ লাগছে। কারন এমনিতেও সে প্রচুর সুন্দরী।বলা চলে #রূপের তরী..।তবে নিজেকে কখনো সুন্দরীর তালিকায় রাখতে চায় না সে। যতটা পারে নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

কিছুক্ষন পর একজন সার্ভেন্ট এসে তরীর রুমে খাবার দিয়ে যায়। খাবারের প্রতি বেশ একটা ঝোক নেই ওর। তাই কিছু না খেয়েই বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো সে। আজ হয়তো তাকে অত টাকা দিয়ে বিক্রি হওয়ার মূল্য চোকাতে হবে। নিজের শরীর দিয়ে।

রুমের মাঝেই একটা বড় শেলফে থাকা বিভিন্ন মনীষীদের বইয়ের মাঝে ডেল কার্নেগির লেখা একটা বই পরছিল তরী। সে সময়ই একজন দরজায় নক করে বলে,

–আমি কি ভেতরে আসতে পারি?

তরী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।কারন এ বাড়ির কোন কিছুর ডিসিশন নেওয়ার বিষয়ে অজ্ঞাত সে। আবারও দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ আসে,,

–আসতে পারি?

কিছুটা ভেবেই তরী উত্তর দেয়,

–জ্বি আসুন

দরজার দিকে চোখ পড়ে তরীর। সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট,বা হাতের ওপর গুছিয়ে রাখা সাদা অ্যাপ্রোন ও গলায় ঝুলানো স্ট্যাথোস্কোপ সহ একজন সূদর্শন যুবক রুমে প্রবেশ করল।চুলগুলো অগোছালো হয়ে আছে।মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থাকায় ছেলেটির সৌন্দর্য আরও বেশি প্রকাশ পেয়েছে। হাসি দেওয়ায় গজ দাতটা বেরিয়ে এল। যেটা ছেলেটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিল।তরী নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। হালকা ভায়ার্ত সুরে বলে,

–আ আ আপনি?কে?

ছেলেটি হেসে দিয়ে বলে,

–কেন দেখতে পাচ্ছেন না?আর যাই হোক আমি কিন্তু ভুত নই.এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।আপনার ঘাড় মটকাবো না।

আরেকবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখে তরী। ছেলেটি সেখানে দাড়িয়ে মৃদু স্বরে হেসেই চলেছে। কিছুটা ভয় কন্ট্রোল করে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–আপনি আমাকে চেনেন?

তরীর এমন প্রশ্নে ছেলেটি আবারও হেসে দেয়। এবার হেসে দিয়ে বলে,

–বাবা ঠিকই খোজ নিয়েছিল আপনার ব্যাপারে৷ আপনি তো দেখছি আসলেই অনেক বোকা। আচ্ছা আপনাকে চিনবোনা তো কি অন্য কোন মেয়েকে চিনবো?

–বাবা?মানে ঠিক বুঝলাম না?

–আমার মনে হয় আপনি ঠিকভাবে কিছু জানেন না তাইনা?অবশ্য বাবা বলেছিল পরে জানাবে। তবে একটু অপেক্ষা করুন,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।এসেই আপনাকে সব বলবো। ওকে?

বলে ছেলেটি একটা মুগ্ধ করা হাসি দিয়ে আলমারী থেকে পরনের জামাকাপড় ও টাওয়াল হাতে ওয়াশরগমে চলে গেল।
এদিকে তরী হা করে বসে আছে।
……..
কিছুক্ষণ পর ছেলেটি একটা লাল টি-শার্ট ও সাদা ট্রাউজারে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এল।
মাথার চুল মুছতে মুছতে তরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–রূপের তরী, ওভাবে তাকিয়ে থাকলে যে আমি অনেক লজ্জা পাব,তখন আমার মুখটা যে ঢেকে রাখতে হবে। (বলেই আবারও হেসে দিল)

কথাটি শুনে তরী বেশ লজ্জা পেল৷

চুল মোছা হয়ে গেলে ড্রেসিংটেবিলের সামনে থাকা টুল এনে তরীর সামনে এসে বসে পড়লো।
এবং বলল,

–এবার বলি? যে লোকটি আপনাকে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়ে নিয়ে এলেন উনি আমার বাবা। ডা. রিশাদ চৌধুরি। এবং আমি ওনার ছেলে এবং আপনার লিগ্যাল হাসবেন্ড রূপক চৌধুরী ওরফে রূপ। আমিও অবশ্য ডক্টর। তবে এখন ইন্টার্নি করছি। ছোট ডক্টর বলা চলে। আপনি এখন আছেন চৌধুরি ম্যানশনে। আজকে অবশ্য আপনার এবং আমার বিয়ের রেজিস্ট্রি হলো৷ হ্যা আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন আমি যাইনি,আসলে আজকে অনেক জরুরী একটা সার্জারীর জন্য ওটিতে থাকতে হয়েছে। নইলে আমার বিয়েতে আমিই নেই এমনটা তো মানতে পারা যায় না তাই না?(আবারও হেসে দিয়ে)

তরী সবকিছু বোঝার পরও মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কারন ও জানে এত বড় লোক ঘরে বিয়ে হওয়া মানে ওকে নয়, শুধুমাত্র ওর শরীটা ভোগ করতে হয়ত অত টাকা দিয়ে বিয়ে করে বিয়ে আসা হয়েছে।

তরীকে চুপ থাকতে দেখে রূপ বলে,

–দেখুন রূপের তরী (বলেই জিহ্বায় কামড় দেয়)আচ্ছা আপনাকে এ নামে ডাকছি বলে কি রাগ করছেন?

–নিশ্চুপ

–আমি কিন্তু “রূপ” শব্দটি দিয়ে নিজেকে বোঝাচ্ছি না, রূপটা আপনার রূপ দেখেই বলছি। রবীন্দ্রনাথ সোনার তরী লিখেছিলেন,দেখেছিলেন কিনা জানিনা,তবে আমি যে রূপের তরী দেখেও নিলাম আবার পেয়েও গেলাম।

তরীর আর বুঝতে বাকি নেই যে, ওকে এখানে কেন আনা হয়েছে। তবে ওকে অবাক করিয়ে দিয়ে রূপ বলে,

–অনেক দূর জার্নি করে এসেছেন, নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত। আপনি শুয়ে পড়ুন। আমিও শুয়ে পড়ি৷ আর হ্যা চিন্তা করবেন না আপনার আমার মাঝে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের মত বর্ডার থাকবে।
(বলে আবারও হেসে দিল)

বিছানার মাঝখানে একগাদা বালিশ দিয়ে দুটো সেকশনে বিছানা ভাগ করে দিল রূপ।

এরপর নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ল সে। তরী ছেলেটিকে দেখে ভীষন অবাক হলো।আসলেই কি সে এতটা ভালো?নাকি কোন ঝড় আসার আভাস মাত্র? এসব চিন্তা করতে করতে ওভাবেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই।
…..
মাঝরাতে হঠাৎ……..
.
.
#চলবে___
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here