#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_27
বৃষ্টির জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের শুরু হয়েছে। সেদিন বউভাতের অনুষ্ঠানে বৃষ্টির বক্তিতা শুনে রোদের মনোভাব বদলে গেছে। সে বৃষ্টির সাথে এখন স্বাভাবিক ব্যবহার করে। আর চার-পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক তাদের মাঝে গড়ে না উঠলেও নতুন এক সুন্দর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টি রোদের জন্য নাস্তা রেডি করে বসে থাকে।
এদিকে রোদ রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে রোজ সকালে বৃষ্টি তার জন্য অপেক্ষারত থাকে।
আজ রোদ বৃষ্টির সাথে ঝগড়া করার মনোভাব নিয়ে তার সামনে এসে উপস্থিত হয়।
বৃষ্টি রোদ কে দেখে হাসি মুখে দ্রুত এগিয়ে যায়।
রোদ রাগী ভাব নিয়ে বৃষ্টিকে এভোয়েড করে সামনে এগিয়ে যায়।
বৃষ্টি রোদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”কি হয়েছে তোমার? আমার সাথে কথা বলবে না?”
রোদ- নাহ!
বৃষ্টি – কিন্তু কেনো? আমি কি করেছি?
রোদ- রোজ তুমি ভুল কাজ করো!
বৃষ্টি- আমি রোজ ভুল কাজ করি কেমনে? একটু গম্ভীরভাব নিয়ে বলে।
রোদ- রোজ সকালে একজন আমার জন্য খাবার রেডি করে অপেক্ষা করে। কিন্তু কখনো সকালে আমাকে খেতে আসার জন্য একটি বারও রুমে ডাকতে যায় না। অযথা চুপচাপ এমন বসে থাকার মানে আছে? কেন সকালে আমাকে ডাকতে যাওয়া যায় না!
বৃষ্টি রোদ কে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,” ওরে আমার বৃষ্টির রোদ অভিমান করেছে। আহারে আমার হবু ভবিষ্যৎ বাবুর আব্বুটা আগে বলবে না। আচ্ছা সমস্যা নেই কাল থেকে তোমাকে আগে জাগিয়ে তুলবো তারপর আমি কাজ করবো।”
রোদ- থাক আলগা দরদ দেখাতে হবে না কাউকে।
বৃষ্টি – আচ্ছা হয়ছে! এখন আর এতো কাহিনী করতে হবে না। কাল থেকে দেখিও আমি কি করি।
রোদ- হুহু! দেখা যাবে।
এমন সময় মিসেস খান চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে বলে,”এখন তো বউ পাইয়া আমার মেয়েটার কথা ভুলেই গেছিস। সেই তো চার মাস আগে বিয়ে করে কোন পাড়াগাঁয়ে গেছে তার কোন খোঁজখবর নেওয়ার দরকার মনে করিশ না। তবে এই বেহায়া মেয়েকে নিয়ে ঠিকি তামাশা করতে পারছিস।”
রোদ- ওহহহ মা!প্লিজ নেকা কান্নাকাটি করো না তো।
মিসেস খান- আমি নেকা কান্না করছি? তুই এমন কথা বলতে পারলি আমাকে?
রোদ- কেনো বলতে পারবো না? তুমি জানো না! তোমার মেয়ে নিজের দোষের শাস্তি ভোগ করছে।
অযথা কারো গায়ে কাদাজল খাওয়াতে গেলে সেই কাদাজল নিজেকে খেতেই হয়।
মিসেস খান- বাবা তুই বোন সম্পর্কে এভাবে কথা বলতে পাড়লি?
রোদ- দেখো না রিনিকে নিয়ে কোন কথা বলার ইচ্ছা নেই আমার।
বৃষ্টি মা ছেলের এমন ঝগড়া দেখে খুব খুশি হয়। বৃষ্টির হৃদয়টা সিক্ত হয় একরাশ ভালো রাগাতে।
রোদ নিজের ডিউটিতে চলে যায়।আর এদিকে মিসেস খান নিজের ছেলে আর মেয়ের নামে নানারকম বিলাপধ্বনি উচ্চারিত করতে থাকে।
এসবের মাঝে রোদ- বৃষ্টির বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে পূর্ণতা পেয়েছে। রিয়ানা রোদ- বৃষ্টির বিয়ের পরে বিদেশে ফিরে চলে যায়। তবে রিয়ানার বাবা- মা এই দেশেতে আছে। রিয়ানা বিদেশে যাওয়ার পর পরিবারের কারো সাথে কোনো যোগাযোগ করে নাই। তবে রিয়ানা কে নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
রিনির ভাগটা বড়ই অদ্ভুত! সে বিবাহিত হয়েও তবে বিহানের সাথে তার স্বামী-স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই। বিহান কোনোদিন রিনির দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখে নি। এই ছয়মাস সে এবাড়িতে বাড়ির বউ কম কাজের মেয়ের ভূমিকা পালন করেছে। বিহান এ বাড়িতে থাকে না। মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে আসে দুই একদিন থেকে চলে যায়। তবে বিহানের একটা বিষয় রিনির খুব ভালোলাগে প্রতিমাসে রিনির দরকারি সকল জিনিষপত্র সময়মত তার রুমে পৌঁছে দেয়। তাকে এবাড়িতে কাজ করতে হলেও তাকে খাওয়া-পরাতে বিহানের পরিবার কখনো কোনো কষ্ট দেয় নি। রিনিও ভাবে বাড়ির মানুষেরা একটু অন্যরকম হলেও এতোটা খারাপ না। রিনির শাশুড়ি মা প্রচুর কড়া। তবে শ্বশুর মশাই, ননদী সবাই অনেক ভালো ব্যবহার করে। এসবে রিনির কী? বিহানের সাথে বিয়েটাকে তো পূর্ণতা দিতে পারে নাই!
এদিকে শিকদার মির্জা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। সে তো মহা খুশি। সবার সাথে নিজের খুশি উপভোগ করার পর সে ছুটে চলে আসে বৃষ্টির কাছে।
আজকে ছুটির দিন হওয়াতে বৃষ্টির শ্বাশুরবাড়িতে সবাই আছে। হঠাত এতোরাতে শিকদার মির্জা কে তাদের বাড়িতে দেখে সবাই একটু ঘাবড়ে যায়।
শিকদার মির্জা সকলের চোহার রং দেখে বুঝতে পারে তারা আতংকিত। তাদের সবাইকে আশ্বস্ত করে বলে,”আপনাদের ভয়ের কিছুই নেই। আমি আপনাদের সাথে নিজের খুশিটা ভাগাভাগি করে নিতেই আসছি।”
রোদ- সামনে এগিয়ে শিকদার মির্জা কে অভিনন্দন জানায়।
রোদের বাবা মা সবাই শিকদার মির্জা কে অভিনন্দন জানায়।
বৃষ্টি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”আমি তো জানতাম আপনি জিতবেন! এটা নিয়ে কোন সন্দেহ ছিলোনা। ”
শিকদার মির্জা – তুমি আমাদের নিয়ে এতো চিন্তা করো?
বৃষ্টি- করবো না? আপনাদের বাড়িতে দু বছর ছিলাম। আমার যত্নের তো কোনো কমতি রাখেনি আপনি। আপনাদের এই দয়া তো কোনোদিন ভুলতে পারবো না।
শিকদার মির্জা – প্লিজ এভাবে বলে আমাদের আর লজ্জিত করো না।
বৃষ্টি- তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”লজ্জিত কেনো করবো! আপনাদের কাছে আমি যা পেয়েছি তার বিনিময় আমি আমার মতো করে কিছুটা ফেরত দিয়েছি। আপনাদের মতো হতে পারি নাই আমি।
শিকদার মির্জা -বৃষ্টির দু হাত ধরে বলে,”মা রে আমাদের মাফ করে দিস! আমরা তোর সাথে বড়ই অন্যায় করেছি। আমরা জানি সে সব কিছু ইচ্ছা করলেই আমরা পুষিয়ে দিতে পারবো না। তবে কোনোরকম ভাবে যদি সাহায্য লাগে তাহলে অবশ্যই করবো।”
বৃষ্টি- আমার জীবনের ঐ দুই বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন?
শিকদার মির্জা – যে সময় চলে যায় তা আর ফিরিয়ে আসে না। তাই আমি কখনো পারবোনা তোকে তোর হারানো দিন গুলো ফিরিয়ে দিতে।
বৃষ্টি- জানি তো আপনি পারবেন না আমার জীবনে হারিয়ে যাওয়া কোনো কিছুই ফিরিয়ে দিতে। তাই বলছি যে আমার অতীত কে অতীত থাকতে দিন।
শিকদার মির্জা – অনুনয়ের সুরে বলে,”আমি কি তোমার কোনো ভাবেই সাহায্যদান করতে পারি না?”
বৃষ্টি – তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”পারবেন আমার পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ করিয়ে দিতে? পাড়বেন আমার চরিত্রের উপরে যে দাগ লেগেছে তা মিটিয়ে দিতে? উঁহু! কোন কিছুই করতে পারবেন না। এটা আপনার রাজনীতির মঞ্চ না! যেখানে দাঁড়িয়ে মিথ্যা শান্তনা আর ওয়াদা দিবেন। আমি নির্বোধ বাচ্চার মতো আপনার কথা গুলো মেনে নিবো।
শিকদার মির্জা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছুসময় পর সে স্থান ত্যাগ করে।
বৃষ্টি নিজের রুমে চলে আসে। রোদ রুমে এসে বৃষ্টিকে কিছু জিজ্ঞাস করতে চাই। তখন বৃষ্টি বলে,”আমার অতীত কে অতীত থাকতে দিন। নয়তো তা সামনে আসলে আমাদের ভালোবাসার মাঝে জোয়ারভাটা শুরু হয়ে যাবে।”
বৃষ্টির এমন কথা শোনার পরে রোদ আর কোনো প্রশ্ন করার ইচ্ছা পোষণ করে না মনের মাঝে। কারণ এতো অতীত জেনে কি হবে? বর্তামান নিয়ে তো আলহামদুলিল্লাহ্ সুখেই আছি। বৃষ্টির সিক্ত জলে রোদের তাপদাহ কমতে থাকে। আর বৃষ্টি রোদের উত্তাপে নিজেকে সজ্জিত করে রেখেছে।
(
‘
‘
চলবে……