শিশিরের বিন্দু পর্ব ১৭

শিশিরের বিন্দু
১৭ তম পর্ব

বিন্দুর কাছে যেন অন্যরকম লাগতে লাগল। আসলেই তো বিয়ের পরে আজকে ওর আর শিশিরের প্রথম এক সাথে থাকা। বিন্দু কেবিনে ঢুকে দেখলো শিশির ব্যাগেজ গুলো রাখছে বেডের নিচে ঢুকিয়ে। শিশির হেসে বলল,
___” সারাদিন ঘোরাঘুরি করেছ এখন ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নেও। ”
এটুকু বলেই বেরিয়ে গেল। বাইরে বেরিয়ে শিশির কেবিনের ডোর লাগিয়ে দিয়ে দেখলো আবির আর বিপ্লব দাঁড়ানো। শিশির এগিয়ে যেয়ে বলল,
___ ” কি রে কি ব্যাপার তোরা এখানে দাঁড়িয়ে কেন? ”
বিপ্লব উওর দিতে যাবে এমন সময় ওকে থামিয়ে দিয়ে আবির বলল,
___ ” আমরা এখানে কেন সেটা পরের কথা তুই এখানে কেন সেটা আগে বল। ”
___ ” বিন্দু রুমে চেঞ্জ করছে তাই বাইরে এলাম “।
___ ” কালে কালে আরো কত কি দেখবো “।
বিপ্লব আবিরের মুখ চেপে ধরে বলল,
___ ” তুলি আর নিনাও চেঞ্জ করছে তাই আমরা বাইরে।”
তিনজনে মিলে হাসাহাসি করতে লাগল। একটু পরে আবিরদের কেবিনের দরজা খুলে তুলি বিপ্লবকে ডাক দিল চেঞ্জ করার জন্য। আবির আর বিপ্লব ওদের কেবিনে যেতেই শিশির বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। অনেক ক্ষন চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে ঠিক দশটার সময় ট্রেন ছেড়ে দিল জম্মুর উদ্দেশ্য করে। কিন্তু বিন্দু আর ডাক দেয় না। শেষমেশ শিশির অসহ্য হয়েই কেবিনের ভেতরে ঢুকল। কিন্তু কি ব্যাপার কেবিন এত অন্ধকার কেন। শিশির সাইডের সুইচ টিপ দিতেই সারা কেবিন আলোকিত হয়ে উঠলো। শিশিরের মুখ হাঁ হয়ে গেল। সামনে যেন এক পরী দাঁড়িয়ে আছে। বেগুনী কালারের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে বিন্দু। হাতে কয়েক গাছা চিকন চুড়ি আর কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। কি লাগে আর শিশিরের হার্টবিট বন্ধ করতে। এদিকে বিন্দু মুখ তুলতেই পারছে না লজ্জায়। কারো চোখের দৃষ্টিতে যে এত এত লজ্জা পাওয়া যায় তা হয়ত ওর জানাই ছিল না। শিশির কেবিনের ডোরটা লক করে দিল। তারপর একপা দু পা করে ধীরে ধীরে আগাতে লাগল। বিন্দু পেছনে পিছাতে পিছাতে একদম লেগে গেল দেওয়ালের সাথে। শিশিরের চোখ পড়ল বিন্দুর ওই গোলাপি ঠোঁটের দিকে। শিশির বিন্দুর কোমর জড়িয়ে ধরল ধীরে ধীরে। শিশিরের হাতের ছোঁয়ার বিন্দুর সমস্ত শরীর যেন কেঁপে উঠলো। শিশির বিন্দুর চোখে চোখ রেখে বলল,
___ ” অনুমতি দেবে আজকে আমায়? ”
বিন্দু লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। শিশির ওকে আরো কাছে টেনে নিয়ে এলো। ধীরে ধীরে ওর কানের পেছনের চুলের মাঝে আঙুল ঢুকিয়ে ওকে আরো কাছে নিয়ে এলো। বিন্দুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে শিশির যেন হারিয়ে গেল দূর অজানায়। বিন্দু শিশিরের টিশার্ট খামচে ধরল সজোরে। আসলেই হালাল জিনিসের পরে খুব বড় লোভ থাকে সবাই। কতক্ষন যে দুজন দুজনায় হারিয়ে ছিল সেটা কেউ জানে না। এমন সময় ফোনের রিংটোন শুনে ওদের ঘোর কাটে। শিশির বিন্দুকে কোলের উপর বসিয়েই বেডের উপরে বসে কল রিসিভ করল।,
___ ” কি রে আবির ফোন দিয়েছিস কেন?”
___ ” দোস্ত তোরে খুব মিস করতেছি তাই? ”
___ ” ফাজলামো করার জায়গা পাচ্ছিস না তাই না। ফোন রাখ আমি খুব বিজি! ”
___ ” জানি তো তুই ইজি কাজে বিজি। সেদিন রাতে কল দিছিলি তখন আমিও ইজি কাজে বিজি ছিলাম। বোঝ কেমন মজা লাগে এমন টাইমে বিরক্ত করলে “।
___ ” ঠিক আছে আমি তোদের কেবিনে এসে নিনা ভাবিরে তোর বিয়ের আগের সব ইতিহাস কেমিষ্ট্রি সব বলতেছি। বাকিটা তুই বুঝে নিস “।
___ ” দোস্ত আমার ভালা না, তুই এসব কি বলিস বল তো। ক্যারি অন কর তুই। আমি তোর কেবিনের সামনে লাঠি নিয়া বসতেছি কেউ তোরে ডিস্টার্ব করত না। ”
___ ” এই তো চান্দু সবে না লাইনে এসেছো। ”
___ ” আচ্ছ দোস্ত বায় “।
শিশির কিছু না বলে ফোন কেটে দিল। বিন্দু ততক্ষনে শিশিরের ঘাড়ের উপরে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। শিশির বিন্দুর দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মত বলল,
___ ” তুমি হাসতেছ? মেজাজ যে খইচে গেছে না “।
___ ” আমি তো আছিই নাকি আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন “।
শিশির বিন্দুর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
___ ” আমাকে কি তুমি করে বলা যায় না? ”
___ ” লজ্জা লাগে যে প্রচুর “।
বিন্দু শিশিরের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল। শিশির বিন্দুকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,
___ ” ভালবাসি তো অনেক।”
ততক্ষনে ট্রেনের খাবার চলে এসেছে। এসি কেবিনের খাওয়া আলাদা তাই ওদের রুমে খাবার দিয়ে যেতেই শিশির বিন্দুকে বলল,
___ ” তুমি খাবার রেডি করো আমি চেঞ্জ করে নিচ্ছি।”
শিশির আস্তে আস্তে ওর টিশার্ট খুলে ফেললো। বিন্দু চোখের কোনা দিয়ে ওর দিকে বারেবার তাকাতে লাগল। শিশির মুচকি হেসে বিন্দুর দিকে এগিয়ে আসলো খালি গায়েই। বিন্দুর তাড়াতাড়ি অন্যদিকে ঘুরে গেল। শিশির ওর কাছে এসে বলল,
___” এতই যখন খালি গায়ে দেখার শখ বললেই তো হত। ”
___ ” তাড়াতাড়ি কিছু পরে খেতে আসো। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
___ ” বাবাহ আমার বউ তো দেখি এখনই গিন্নীপনা শুরু করে দিয়েছে “।
শিশির হাসতে হাসতে বলল। খেতে বসে ওরা দেখো এবার খাবার দিয়েছে ভাত রুটি মাটন ভুনা ডিম আর সবজি। সাথে দিয়েছে দই আর গোলাপজাম। বিন্দু শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” কত নিয়েছে এই কেবিন ভাড়া “।
___ ” খাবার সহ আমাদেরটা নিয়েছে ১৩০০ টাকা আর ওদের ডাবল কেবিন ২২০০ টাকা ”
___ ” খাবার সহ হলে তো বেশ চিপই তাই না “।
এমন টুকটাক কথা খাবার খেতে খেতেই চলতে লাগল ওদের।

দিল্লি থেকে জম্মুর দূরত্ব ৫৮৮ কিঃমিঃ। এটুকু দূরত্ব অতিক্রম করতে সব কিছু ঠিক থাকলে দূরন্ত এক্সপ্রেসের সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা। শিশির ঘড়ি দেখলো সবে বাজে রাত বারোটা। বিন্দু বাইরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু চারপাশে নিকেষ অন্ধকার। শিশির বিছানায় বসতেই বিন্দু ওর দিকে ঘুরে বসলো। শিশির কিছু না বলেই ওর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। বিন্দুর শরীরের এক মাতাল করা ঘ্রান আছে যা মনে হয় শুধু শিশিরই পায়। বিন্দু শিশিরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
___ ” সারাদিন ঘুমাও নি তুমি এখুনি ঘুমাও। ”
এই বলেই বিন্দু লাইট অফ করে দিল। শিশির কিছু বলতে যাবে কিন্তু বিন্দু কোন কথাই কানে তুলল না। শিশির বিন্দুকে টেনে ওর পাশে শুইয়ে দিল। বিন্দু সাথে সাথে শাড়ি চেপে ধরে বলল,
___ ” শাড়ি খুলে যাচ্ছে “।
___ ” যাক না “।
শিশির আর কিছু না বলেই বিন্দুর শাড়ির কুঁচি চেপে ধরে খুলে ফেলল। বিন্দুর নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। শিশির ওর গলার নিচে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ওর গরম নিঃশ্বাসে বিন্দুর গলার নিচ যেন পুড়ে যেতে লাগল। হঠাৎ শিশির বিন্দুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
___ ” বিন্দু আমি যে পারছি না আমার যে তোমাকে এক্ষুনি লাগবে”।
___ ” আমি তো তোমারই”।
বিন্দু ফিসফিসিয়ে বলল।
___ ” আমাদের ফ্যামিলি ”
বিন্দু ঘুরে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে বলল,
___ ” আল্লাহ যা করবেন মঙলের জন্যই করবেন। ”
শিশিরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল বিন্দুকে। পরের দিন সকালে বিন্দুর ঘুম ভাঙল দরজার খটখটানি তে। বিন্দু চোখ খুলেই দেখলো ও শিশিরের পিঠের উপরে ঘুমিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলেই দেখলো বাইরে আবির আর বিপ্লব দাঁড়িয়ে আছে। বিন্দু ওদের দেখে হাসির ট্রাই করল। বিপ্লব হেসে বলল,
___ ” বিন্দু প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি এজন্য তোমাদের ডাকতে এলাম। ”
___ ” না ভাইয়া সমস্যা নেই। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি “।
এই বলেই বিন্দু ওয়াশরুমে চলে গেল। এদিকে বিপ্লব আর আবির রুমে এসে ভাল করে শিশিরের দিকে তাকাতে লাগল। শিশিরকে জোরে জোরে ঢাক্কা দিতেই ও ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল,
___ ” আর একটু ঘুমাই না বিন্দু “।
___ ” ওঠ সালা সারারাত ডিউটি দিয়ে এখন ঘুমাতে পড়েছে পাবলিক।”
আবির মেজাজ খারাপ করে বলে উঠলো। শিশির তাড়াতাড়ি উঠে বসলো আবিরের গলা শুনে। খালি গায়ে ছিল তাড়াতাড়ি চাদর গলা পর্যন্ত টেনে দিল। আবির ওর দিকে গোয়েন্দা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
___ ” বাসর রাত তো আমাদের ও হয়েছিল কিন্তু এমন এমন তো দেখায় নাই “।

চলবে
মারিয়া আফরিন নুপুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here