শিশিরের বিন্দু পর্ব ১৮

শিশিরের বিন্দু
১৮ তম পর্ব

___ ” কেমন দেখাচ্ছে আমাকে শুনি “।
শিশির চোখ মুখ কুঁচকে বলল। তখন আবির আবারো বলল,
___ ” দেখে মনে হচ্ছে কে যেন আখের রস সব বাইর করে ছোবড়া ফেলে রেখেছে।”
বিপ্লব আবিরকে থামায়ে শিশিরের দিকে ঘুরে বলল,
___ ” দোস্ত তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে জম্মু স্টেশনে চলে এসেছি প্রায়। ”
শিশির চারদিক তাকিয়ে বলল,
___ ” বিন্দু কই রে? ”
___ ” বিন্দু ফ্রেশ হতে গেছে “।
শিশির ফোন বের করে দেখলো সিগনাল নেই ফোনের। ও বিপ্লবের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” কি রে এটা না ভোডা ফোনের সিম তো ফোনের নেটওয়ার্ক কই? ”
___ ” দোস্ত এটা কাশ্মীর বুঝতে হবে। ইন্ডিয়ান নরমাল কোন সিম এখানে কাজ করবে না। এখানকার সিম আলাদা আর সিম না থাকলেও সমস্যা নেই। এস টি ডি ফোন আছে স্টেশনে যখান থেকেও কথা বলা যায়।”
শিশির ওদের সাথে কথা বলতে বলতেই বিন্দু এসে হাজির। ওকে দেখেই আবির আর বিপ্লব বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। সকাল বেলায় যেন বিন্দুকে আরো স্নিগ্ধ লাগছে। গাল দুটো হালকা গোলাপি হয়ে আছে। ও এসেই ব্যাগ গোছাতে লাগল। শিশির ওর পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বিন্দু হেসে বলল,
___ ” তাড়াতাড়ি যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো লেট হয়ে যাবে না হয়৷ “.
___ ” তোকে চাই রে পাগলী। আরো কাছে চাই তোকে!”
বিন্দু ঘুরে শিশিরের নাক টেনে বলল,
___ ” সকাল সকাল রোমান্সের ভূত মাথায় চেপেছে সাহেবে৷ ”
___ ” ভালবাসি অনেক অনেক। ”
___ ” যাও না প্লীজ।”
শিশির তখন অনিচ্ছায় গেল ফ্রেশ হতে। এসে দেখে বিন্দু একদম টিপটপ হয়ে রেডি হয়ে বসে আছে। শিশির একটানে টিশার্ট খুলে ফেলল। ওর ধবধবে ফর্সা শরীর দেখলে সবসময় বিন্দুর যেন কেমনই লাগে। ও সোজা ট্রেনের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। কারণ শিশির যদি বুঝতে পারে যে ও তার শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে তখন আবারও দুষ্টমি শুরু করবে।

স্টেশনে নেমেই ওরা সোজা একটা রোড ধরে হাঁটা শুরু করে। নিনা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” কি গো হাঁটিয়ে হাঁটিয়েই কি কাশ্মীরে নিয়ে যাবে নাকি?”
___ ” নিনা ফাজলামী বন্ধ করো তো সামনে বাস আছে ওটা ধরে হোটেল র‍্যাডিসন ব্লু এর সামবে যাব। আমাদের কাশ্মীর নিয়ে যাওয়ার গাড়ি ওখানেই আছে।”
নিনা বুঝলো কোন কারণে আবিরের মেজাজ খারাপ তাই আর ঘাটালো না ওকে। নিনা কথা ঘুরানোর জন্য বলল,
___” আমারে কি কিনে দিবা বলো তো “।
___ ” উনি আছে কিনাকিনির তালে আল্লাহ আল্লাহ করো যেন ঝামেলায় না পড়ি।”
শিশির আর বিন্দু হাত ধরে হাটছিল। বিন্দু শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” আচ্ছা আমরা তো রিজার্ভ গাড়িতে যাচ্ছি। অন্য কোন ওয়েতে যাওয়া যায় না এখান থেকে কাশ্মীরে? ”
___ ” যাবে না কেন যায় তো। এখান থেকে ডাইরেক্টর বাস যায় ভাড়া মনে হয় জনপ্রতি ৫০০ রুপি। আর শেয়ার জীপেও যায় সেখানে লাগে ৮০০ রুপি করে।”
___ ” ট্রেনে যাওয়া যায় না? ”
বিন্দু বাচ্চাদের মত একটার পরে একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। শিশির তখন বলল,
___ ” হ্যাঁ যাওয়া যায় তো। কিন্তু ভেঙে ভেঙে যেতে হয়।”
কথা বলতে বলতে ওরা চলে এলো মিনিবাস গুলোর সামনে যেগুলোকে বলা হয় ম্যাটাডোর বাস। এক একজনের ১০ রুপি করে ওরা চলে এলো হোটেল র‍্যাডিসন ব্লুর সামনে। সেখানে এসে দেখলো ওদের গাড়িটি আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। আগামী ছয়দিনের জন্য এই হাইচ গাড়িই ওদের ভ্রমন সঙী। ওরা বসতেই গাড়িটি ছেড়ে দিল। ড্রাইভার মুসলমান না নুর মোহাম্মদ। ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে ওর সাথে আলাপ জুড়ে দিল আবির। গাড়িতে উঠে বসতেই বিন্দু বাইরে তাকিয়ে দেখতে লাগল। এত এত সুন্দর চারপাশ যা বলার মত না। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এত মুসৃন রাস্তা আর অবাক করা ব্যাপার হল একটু পর পরই টানেল। পাহাড়ের নিচ কেটে সুড়ঙ্গ করা রাস্তাকে বলা হয় টানেল। শিশির ছাড়া আর কেউই এর আগে টানেল দেখে নি। সবাই খুব উত্তেজিত হয়ে টানেল দেখতে লাগল। শিশির বিন্দুর কোমরে হাত দিয়ে আরো টেনে কাছে নিয়ে আসলো। বিন্দু লজ্জায় লাল হয়ে গেল। গাড়ি চলতে চলতে দুপুরের দিকে একটা ধাবায় থামালো। সবাই ফ্রেশ হয়ে খেতে বসল। বাসমতী চালের সাদা গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, বেগুন ভর্তা আর চানার ডাল। এই সিম্পল খাবার যেন অমৃতের মত মনে হল ওদের কাছে। খাওয়া শেষে করে ওরা আবার রওনা হল শ্রীনগরের উদ্দেশ্য করে।

বেশকিছু দূরে যেয়েই ওরা বিশাল এক টানেলে ঢুকে পড়লো। আবির ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল এটা কোন টানেল। ড্রাইভার বলল,” এটা চেনানী নাসরি টানেল। এই রুটের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় টানেল। যেটা কিনা নয় কিঃমিঃ এর চেয়েও বড় “। ওরা সবাই অবাক হয়ে টানেলটা দেখতে লাগল। এত বড় টানেলে কোথাও যেন কারো শ্বাসকষ্ট এর সমস্যা না হয় তাই একটু পর পর অক্সিজেন এর ব্যবস্থা রয়েছে। টানেল শেষ হতেই শুরু হল এবড়োখেবড়ো আর ধুলোমাখা রাস্তা। কিন্তু আশেপাশে প্রাকৃতিক দৃশ্য যে এত এত সুন্দর তা বলে বোঝানোর মত না। বিশাল সুউচ্চ পাহাড় আর দুই পাহাড়ের মাঝ থেকে বয়ে চলা বরফ গলা নদীর পানি। আর পাহারের খাঁজে খাঁজে ঘর বাড়ি। বিন্দু যেন খুশিতে বাচ্চা হয়ে গেছে। শিশিরের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
___ ” চারপাশ এত অসহ্য সুন্দর কেন। চোখ যেন পুড়ে যাচ্ছে।”
___ ” সবচেয়ে সুন্দর হল আমার বউ “।
শিশির বিন্দুর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলল। বিন্দু শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” তুমি ও না…… খালি কি কি বলো।”
___ ” আজকে চলো হোটেলে খবর আছে তোমার “।
এবার বিন্দু জমে গেল লজ্জায়। ও তাড়াতাড়ি পেছনে ঘুরে দেখলো কেউ শুনেছে কি না। আবিরের চোখদ বিন্দুর চোখ পড়তেই আবির বলল,
___ ” আমরা কিছুই শুনি নাই বিন্দু “।
সারা গাড়িতে হাসির রোল পড়ে গেল। অবশেষে দীর্ঘ আট ঘন্টার জার্নির পরে ওরা বিকালে পৌছালো শ্রীনগল যাকে বল হয় কাশ্মীরের রাজধানী। ওদের হোটেল আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। শ্রীনগরে ওদের হোটেল ছিল আব্বাসিয়া হোটেল। ট্রাভেল এজেন্ট আগেই বুকিং করে রেখেছিল ওদের হোটেল। হোটেলে চেকিং করেই ওরা যার যার রুমে চলে গেল। বিন্দু রুমে ঢুকে টাওয়াল বের করতে করতে বলল,
___ ” রাস্তায় এত এত ধুলোবালি মুখে লেগেছে নিজেকে নিজে চিনতেই পারছি না।”
শিশিরের মুখের কোনে দুষ্টামির হাসি খেলে গেল। ও হঠাৎ করে বিন্দুকে আড়কোলে তুলে নিল। বিন্দু হাত পা ছোঁড়া ছুড়ি করতে লাগলে শিশির হেসে বলল,
___ ” যত যাই করো না কেন ছাড়া তো যাবে না তোমাকে!”
___ ” আরে দরজা লক করো নাই কেউ চলে আসবে।”
___ ” তুমি কি ভাবো তোমার বর ভয় পায় প্রচুর? যে কেউ আসলেই ফেলে দেবে কোল থেকে? ”
___ ” আসলেই একটা পাগল তুমি “।
____ ” হুম তোমার জন্য পাগল। আর তুমি আমার পাগলী “।
শিশির বিন্দুর নাকে নাক ঘসে দিয়ে বলল। বিন্দু তাড়াতাড়ি শিশিরের কোল থেকে নেমে বলল,
___” এখানে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে যেতে হবে। আমি গোসল করে আসি।”
শিশির এক টানে ওর টিশার্ট খুলে বিন্দুকে টেনে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। বিন্দু যেন লজ্জায় চোখ মেলতেই পারছে না। গিজারের কুসুম কুসুম গরম পানির শাওয়ারের নিচে টেনে নিয়ে গেল বিন্দুকে। শিশিরের সারা শরীরের উপর দিয়ে মুক্তার দানার মত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। বিন্দু দেখবো না দেখবো না করেও চোখ মেলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ওর ভেজা ঠোঁট মুখ বেয়ে পানি পড়ছে। শিশির বিন্দুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। বিন্দুর নিঃশ্বাস যেন দ্রুত পড়তে লাগল। শিশির বিন্দুর ঠোঁট ছেড়ে গলায় নামলো। বিন্দু শিশিরকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। ও বিন্দুর গলার নিচে গভীর ভাবে আদর করতে লাগল। বিন্দু তখন যেন পাখির মত আকাশে উড়ছে। ঠিক এমন সময় দরজায় কে যেন নক করল। বিন্দু হাসতে হাসতে শিশিরকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
____ ” যেয়ে দেখো নে এসেছে?”
___ ” আজকে খুন করে ফেলবো যেই হোক না কেন “।
শিশির মেজাজ খারাও করে বলে টাওয়াল টেনে নিয়ে চলল দরজায় কে সেটা দেখতে। দরজা খুলেই দেখলো
……….
চলবে
মারিয়া আফরিন নুপুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here