#শুধু_তোমাকে_প্রয়োজন
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়
আঁধার কেটে নিমে আসে দিনের আলো৷ মানুষ ছুটে চলে নিজ নিজ কাজে৷ ব্যস্ততা হয়ে পড়ে সকলে। ছুটে চলে নতুন কিছু পাওয়ার জন্য৷ মুছে যায় ঝড়া৷ ঝড়ে যায় গ্লানি। কিন্তু প্রকৃতিও নিয়তি বিরুদ্ধে চলে গেছে৷ তার সকালের সূর্যি মামার আলো নিয়ে আসে এক রাশি বেদনা৷
নিয়তি কান্না করতে করতে কখন যে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ সকালে এক বলতি জল দিয়ে ঘুম ভাঙে অধির৷
— “ছাদঁ ভেঙে পড়ল। দূরে সবাই পালাও৷” হতদ্বন্দ্ব হয়ে।
— এটা ছাঁদ ভেঙে পড়ার কোন জল নয়৷ নবাবের ব্যাটি এত ঘুম কোথা থেকে আসে৷ আমি না খেয়ে অফিসে যাব।
— আসলে কাল রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল ছিল না৷
— খেয়াল থাকবে কি করে? সারা রাত ভর মশার মতো ঘ্যান ঘ্যান করে যাস৷
— আপনার জন্য কি করতে হবে?
— আমি আজ তেমন কিছু খাবো না৷ শুধু ফ্রুটস জুস করলেই হবে৷
— ওঁকে,, আমি ফ্রেশ হয়ে তৈরি করে দিচ্ছি।
নিয়তি ঘর ঝাড়ু দিয়ে ঘর মুছে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
নিয়তি সবার জন্য খাবার তৈরি করে সার্ভেন্ট দের সাহায্যে। কিন্তু অধিরের জন্য খাবার বানায় অন্য রকম ভাবে৷ নিয়তি কিছুতেই অধিরকে ছেড়ে দিবে না৷ সে এতদিন আমাদের টর্চার করে গেছে৷ আজ দেখবে আমি তাকে কিভাবে টর্চার করি৷
নিয়তি অধিরের জুসে করলার রস মিশ্রিত করে৷ করলার রস মিশ্রিত করার সাথে সাথে ফ্রুটস জুসেট রং পাল্টে যায়। করলা সবুজ রঙের হওয়ার জন্য ফ্রুটস জুস কিছুটা সবুজ রঙের হয়ে যায়৷ জুসকে লাল রঙে ফিরিয়ে নিয়ে আনার জন্য ফ্রুটস জুসে মরিচের গুঁড়ো যুক্ত করে। যেন অধির মরিচ + করলার রসের জন্য জুসটা খেতে না পারো৷ আবার ফেলেও দিতে পারবে না৷ কেননা অধির তার মা বাবার সামনে কিছু করে না৷ তাদের প্রচুর সম্মান করে৷
নিয়তি সবাইকে ডেকে খাবার টেবিলে নিয়ে আসে৷ আর সবার খাবার দিয়ে দেয়৷ যেন পরবর্তীতে অধিরকে খাবার দিতে সমস্যা না হয়৷
— নিয়তি মা অধির কোথায়? (অধিরের মা)
— মা এই তো আমি এসে গেছি। অধির সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে৷
— তোর জন্য আর কত অপেক্ষা করব তারাতাড়ি শুরু কর৷ (অধিরের বাবা)
— নিয়তি ফ্রুটস জুসটা অনেক ভালো হয়েছে৷ দেখছি তুমি খুব ভালো রান্না করতে পারো৷ ইভেন ভালো জুসও বানাতে পার৷ (অধিরের মা)
— দেখতে হবে না বউদিটা কার? (সিগ্ধ)
— কি হলো আপনি খাচ্ছেন না কেন? ভালো হয়নি বুঝি? (নিয়তি)
— ভালো হয়নি মানে? অনেক ভালো হয়েছে৷ (অধিরের বাবা)
— খাচ্ছি
অধির গ্লাস হাতে নিতেই নিয়তি মনে মনে বলে উঠে ” সালা আজ বুঝবি তুই কি খেতে চলেছিস৷ তুই আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছিস৷ আমি তোকেও ঠিকমতো থাকতে দিব না৷ তুই আমার বোন নিঝুমকে কোথায় রেখেছিস তার খোঁজ আমি না নিয়েই তোকে ছেড়ে দিব৷
অধির জুসটা মুখে দিতেই করলা এবং মরিচ মিশ্রিত বুঝতে পারে৷ মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে ফেলে।
নিয়তি অধিরের অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসি আটকিয়ে রেখেছে৷ তবুও আটকিয়ে রাখতে পারছে না৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে বলে উঠে ” কি হলো? “জুস ভালো হয়নি বুঝি!” মা জানেন ভালো কমেন্ট করলে যদি আমি কিছু চেয়ে বসি৷ আমাকে হিংসা করে৷ দেখবেন এখন হিংসা করে না খেয়েই উঠে যাবে৷
— অধির নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ” বেশি হয়ে যাচ্ছে? ”
— দেখেন সবাই আমার সাথে কেমন করছে৷ আচ্ছা আপনার কাছে আমি কিছু চাই না৷ প্লিজ সম্পুর্ন খেয়ে নেন (দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে)
অধির না পারে ফ্রুটস জুসটা ফেলতে না পারে খেতে৷ কিভাবে ফ্রুটস জুসটা খাবে৷ একে গো করলার রস তার উপর মরিচের গুঁড়ো।
“সালা অধির এভার বুঝতে পারবি নিয়তি কাউকে ছেড়ে দেয়না৷ নিয়তি তার প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়ে৷ নিয়তি তার শত্রুকে কখনো ভুলে যায়না৷ তুই আমার মা বাবার সাথে যে অন্যায় করেছিস তার শাস্তি তোকে পেতেই হবে৷ আর আমি আমার বোনকে ঠিক তোর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসবো৷ তুই বুঝতেও পারবি না৷ “মনে মনে নিয়তি বলে উঠে
অধির অল্প পরিমাণ জুস খেয়ে মরিচের গুঁড়োর ঝালের চোটে জল খেতে নেয়৷ কিন্তু নিয়তি জলেও লরণ মিশিয়ে রেখেছে। যা খেতে আরও বাজে লাগে৷
— সিগ্ধ তোর গ্লাসটা একটি এদিকে দে তো? আসলে আমার গ্লাসের জল অনেকটা গরম হয়ে গেছে৷
— না না আমি আছি তো৷ আমি আপনাকে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল নিয়ে এনে দিচ্ছি। (নিয়তি)
— তোর ঠান্ডা জল খাওয়া বাজে অভ্যাস এখনো ছাড়তে পারলি না৷ (অধিরের বাবা)
— আসলে বাবা,, (অধির)
— থাক বাবা। উনি তো সেই ছোট থেকে ঠান্ডা জল খেয়ে আসছে কি করে ছাড়তে পারবে৷ তবে চিন্তা করবেন না আমি সব বাজে অভ্যাস ছাড়িয়ে দিব৷ জল নিয়ে আসছি।
সালা নিজেই কাজটা সহজ করে দিল। কি ভেবেছেন আমি ফ্রিজের কথা এমনিতেই বলেছি ? আমি ফ্রিজে আপনার জন্য জল রেখেছি লবণ দিয়ে মিশ্রিত করে৷
অধির আর কিছু খেতে না পেরে সব কিছু ফেলে দেওয়ার জন্য নিজের রুমে চলে যায়৷ রুমে এসেই ওয়াসরুমে চলে আসে। ওয়াসরুমে এসে জল দিয়ে গারগিল করতে থাকে। তবুও একটু কমছে না ঝাল৷ ঝালের কারণে সমস্ত মুখ লাল হয়ে যায়। হাতের শিরা পর্যন্ত লাল বর্ণ ধারণ করতে শুরু করে৷
নিয়তি অধিরের পিছু পিছু পিছু সেও চলে আসে৷ অধির যেন কিছুতেই বাহিরে যেতে না পারে সেজন্য ওয়াসরুনের বাহিরে তেল ঢেলে রাখে।
নিয়তি বিছানার পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। যেন নিয়তিকে দেখেই অধির রেগে বোম হয়ে যায়৷ ঠিক তাই হলো৷ অধির ওয়াসরুমের দ্বার খোলতেই নিয়তি দেখতে পায়৷ নিয়তিকে দেখে নিজের রাগ আরও ভেড়ে যায়।।
কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে ” তুই এখানে৷” আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। তুই জানিস না তুই কার সাথে গেম খেলতে চাইছিস৷ ”
অধির নিচে না তাকিয়েই তেড়ে নিয়তির দিকে আসতে নিলেই তেলের উপর স্লিপ খেয়ে পড়ে যায়। মাথা সোজা দেয়ালে লাগে৷ যার ফলে সাথে সাথে অধিরের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে৷
নিয়তি রক্ত দেখে ভয় পেয়ে যায়। যদি অধিরের কিছু হয়ে যায় তাহলে তার বোনকে খোঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে৷ নিয়তি দৌড়ে তেলের সাইট কাটিয়ে অধিরের কাছে যায়৷ নিজের গায়ের ওড়না দিয়ে অধিরের মাথা বেঁধে দেয়৷
মাথায় প্রচুর আঘাত লাগাতে অধির কথা বলতে পারছে না৷ তবুও কিছু বলতে চাইছে। তার বলা কথা হলো “সে কিছুতেই নিয়তিকে ছাড়বে না৷ ” যা অধিরের চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে।
নিয়তি অধিরকে টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে ডাক্তারের কাছে ফোন করে যেন ডাক্তার তারাতাড়ি বাসায় চলে আসে৷
নিয়তি ফোন কেটে দিয়ে তারাতাড়ি করে তেল মুছে ফেলে৷ যেন কেউ নিয়তিকে সন্দেহ করতে না পারে৷ এভার বুঝবে সালা মানুষকে আঘাত করলে কেমন লাগে৷ তার পর জল দিয়ে আবার মুছে ফেলে৷ তেলের কোন ছিঁটা ফোটাও রাখে না৷
।
।
ডাক্তার এসে অধিরের ব্যান্ডেজ করে দেয়৷ কিছু মেডিসিন দিয়ে দেয় অধিরকে৷
— অধিরের প্রতি খেয়াল রাখবেন যেন ৪৮ ঘন্টা কথা না বলে৷ কারণ অধির মাথায় প্রচুর চোট পেয়েছে। কথা বললে তার বিপরীত ইফেক্ট পড়তে পারে। (ডাক্তার)
— চিন্তা করবেন না। আমি আমার স্বামীর প্রতি ২৪ ঘন্টা খেয়াল রাখবো কুছুতেই তাকে কথা বলতে দিব না৷
— ওঁকে,, এখন আমি আসি৷
ডাক্তার চলে যায়৷
— অধিরের এমন অবস্থা কি করে হলো? (অধিরের মা)
— “সব আমার জন্য হয়েছে?” ন্যাকা কান্না কেঁদে।
— কি হয়েছে? সেটা তো বল?
— আসলে আমি সকলে স্নান করে ভেজা কাপড় বালতি রেখে দিয়েছিলাম৷ অধির ভেজা কাপড় দেখতে পেয়ে নিজেই নাড়তে চলে যায়৷ আর,, কান্না শুরু করে দেয়৷
অধির মনে মনে বলে উঠে ” এই মেয়ে দেখছি এক নাম্বার শয়তান৷ কিভাবে একের পর এক মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে । কিন্তু তুই যে কলেজে স্টুডেন্ট আমি সেই কলেজের পিন্সিপাল।”
— মা আমাকে কাটেন বকেন? আমি কিছু বলবো না৷ আর এমন কোন ভুল হবে না৷ আর আপনিই বলেন আমাকে বলেলে আমি নিজেই তো নেড়ে দিয়ে আসতাম৷
— না মা তোমার কোন দোষ নেই৷ আমি অধিরের জন্য ফ্রুটস জুস পাঠিয়ে দিচ্ছি৷
ফ্রুটস জুসেট কথা শুনে অধির কথা বলতে নিলেই নিয়তি অধিরের মুখ চেপে ধরে ‘” এখন কোন কথা বলতে পারবেন না৷ ”
নিয়তি সেদিন সব সময় অধিরের সেবা করে। তার কাছ থেকে ফোন নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করে কোন প্রমাণ পাওয়া জন্য কিন্তু কোন প্রমাণ পায় না৷
সারা রাত নিয়তি অধিরের পাশে বসে অধিরের সেবা করে যায়৷
চলবে….
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এটা সামান্য শাস্তি। আরও বিগ বিগ শাস্তি অপেক্ষা করছে।