শেষ বিকালের আলো
তানিশা আহমেদ
পর্ব ৭
প্লেটে ভাত বেড়ে খাবার নিয়ে বসল রুমাইসা। মেয়ে তখন ঘুমিয়ে আছে। সারাদিন পরে খেতে বসায় শরীর টানছে না। কি করবে খেতে তো হবে। মেয়েটা এখন ঠিক মত দুধ পায় না। তাই এক রকম বাধ্য হয়ে খেতে লাগল। একটু ডাল আর আলুর ভর্তা বানিয়েছে। রুমাইসা খাচ্ছে আর আগের কথা চিন্তা করছে। ফুপির বাসায় যত যাই কথা শুনুক। ফুপা কোন দিন ওর খাবারে কমতি রাখে নি। সব সময় বাসায় মাছ মাংস চলত ই। আর আজকে আলুর ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খাচ্ছে। আজকে অভির সাথে এতকিছু না হলে হয়ত ওর ভাগ্য টা আরো ভালো হত। ফুপা কে কষ্ট দেওয়ার ফল ই হয়ত আজকে ও কে এত করুন অবস্থায় পড়তে হয়েছে। রুমাইসা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগল। গলা দিয়ে ভাত নামছে না আর। কেন এত বড় ভুলে সেদিন পা বাড়াল। আজ নিজের করুন পরিণতি চোখের সামনে ভেসে উঠছে।আগে শুনত, কারো মনে কষ্ট দিলে সে কষ্টের নাকি হায় লাগে। আজ নিজের সাথে ঘটা প্রতিটা ঘটনায় যেন সেটায় মনে করাচ্ছে কোন ভালো মানুষ কে কষ্ট দেওয়ার ফল পাচ্ছে ও।
খাবার শেষ করতে পারল না। হাত ধুয়ে ভাত গুলো জানালা দিয়ে পেছনের ঝোপে ফেলে দিল। প্লেট টা ধুতে বের হুওয়ার জন্য দরজা খুলতেই দেখল রশিতে ধুয়ে দেওয়া ঝুলানো কাপড় গুলো নেই । রুমাইসা প্লেট মাটিতে রেখে এদিক ওদিক খুজতে লাগল। কিন্তু কোথাও পেল না।
ওর খুব দামী জামা ছিল ওটা। আশেপাশের কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করেও হদীস পেল না।উল্টা বলল “তোমার কি মাথা খারাপ বুইন। এই বস্তির মাঝখানে কেডা কার জিনিস নেয় কোওন যায়। আমাগো তো ফুরান কাপড়। আমাগো টা নিয়া লাভ কি। তোমার টা নিলে বেইচ্চা দিলেও পিনতে পাড়ব। ”
রুমাইসার মন ভেঙে গেল। এত সুন্দর জামা টা আসলেই বাহিরে রোদ দেওয়া উচিত হয় নি ওর। বস্তিতে মানুষ গুলা ওর মত ই অভাবী। যে যেটা পাবে সেটা সুযোগ বুঝে নিয়ে নিবে না এর ই কি নিশ্চয়তা। তার উপর খোলা বস্তি বাড়ি। বাহিরের কেউ এসেও নিয়ে গেলে কে জানবে। রুমাইসার মনে হুট করে ভয় ঢুকে গেল।যেখানে কাপড় পর্যন্ত চুরি করে সেখানে ওর মেয়ে তো কোন কথাই না। এইটুক বাচ্চা চুরি করে নিলেও তো খুঁজে পাবে না।ভয়ে উদ্ভ্রান্তের মত রুমে ছুটে গেল। না মেয়ে ঘুমিয়ে আছে বিছানায়।
ঝুকে গিয়ে কোলে তুলে নিল মেয়েকে। বুকের সাথে লাগিয়ে বলল “তুই আমার সাত রাজার ধন রে মানিক। দুনিয়ার সাথে যুদ্ধ করে তোকে এতদূর এনেছি। আমার মানিক কে কেউ নিলে আমি বাচব না। ”
দরজা আটকে দিল আবার। মন টা খারাপ লাগছে কাপড় টা চুরি হওয়ায়। আন্দাজে কার ঘরে যেয়ে দেখবে। প্রতিটা পদে পদে জীবনের শিক্ষা গুলো পাচ্ছে রুমাইসা।
রুমাইসার সুপারভাইজার পদে চাকুরী হয়েছে। তৃতীয় ফ্লোরের সুপারভাইজার ও। সারাদিন দাড়িয়ে থেকে কাজের তদারকি করতে হয়। আবার দিন শেষ এ সব কাজ এর হিসাব দিয়েই মেয়েকে নিয়ে বের হয়। বেবি কেয়ার রুমে সব বাচ্চার সাথে ওর বাচ্চাকে রেখে আসে।সকাল ৮ টায় মেয়েকে দেখে আর দুপুর ১ টায়। বাকিটা সময় মেয়ে কিভাবে থাকে নিজেও জানে না। চিন্তায় ভালো লাগে না। ওয়াশরুমে যাওয়ার উছিলায় মেয়েকে দুইবার দেখে যায়। দুজন আয়া আছে। মেয়ে কান্না করলেই ফিটারে ভরা দুধ দিয়ে দেয় আর কিছু না। খুব কান্না পায় দিন শেষ এ মেয়েকে যখন কোলে নেয়। বাসায় যেয়ে আবার রান্না করতে হয়। বাসায় ফিরতে প্রতিদিন ই রাত হয়।ক্লান্ত হয়ে যায় রুমাইসা এত প্রেশারে।প্রথম একটা মাস বেশ কষ্ট হত। আসতে আসতে সবটা সয়ে নিয়েছে।
গত একমাসে ইহান কে অফিসে দেখে নি রুমাইসা। শুনেছে তেমন আসে না অফিসে। মাঝে মাঝে এসে উকি দিয়ে যায়। রুমাইসা ধন্যবাদ দিতে চাইছিল লোকটা কে।তার জন্য ই আজকে এত ভাল চাকরি টা হাতে পেল। কষ্ট হলেও মাস শেষ এ ১৫০০০ টাকা বেতন আসে হাতে এটাই বা কম কি। ইহান যে এতটা উপকার করবে ভাবে নি। ৮ ঘন্টা বললেও শেষ এ সব কিছু বুঝিয়ে দেখে আসতে আসতে ১০ ঘন্টা সময় যায় ওর। যখন বের হয় তখন অফিসে তেমন মানুষ থাকে না খুব একটা। দুই একজন এর সাথে পরিচয় হয়েছে এখানের। যদিও বুঝতে পেরেছে এরা কেবল নিজের স্বার্থ উদ্ধারেই ব্যস্ত।
এ মাসে বেতন ১৫০০০ টাকা পেয়েছে। জুই এর মা কে টাকা দিয়েছে পাওনা টা। সাথে কিছু বাজার সদাই করেছে।ঠিক করেছে এ মাসে ফ্লাটে উঠবে। এই পরিবেশ এ ওর মেয়ে বড় হলে নষ্ট হয়ে যাবে। এই তো গত পরশু বাসায় ফিরছিল বিকালের দিকে। হঠাৎ গলিতে ঢুকতেই দেখল চার পাচটা বাচ্চা খেলার ছলে গালি দিচ্ছে। কি নোংরা গালিগালাজ সেগুলো । অথচ বয়স বেশি হলে পাচ থেকে ছয় বছর। ১ বছরের বাচ্চাদের তাদের মা বাসায় রেখে কাজে চলে যায়। বাচ্চা সারাদিন মাটিতে পড়ে থাকে। ধুলাবালি মেখে একাকার গায়ে। আবার বেশি কান্না করলে বাচ্চার মা এসে মার লাগিয়ে দেয়। রুমাইসা প্রথম প্রথম বাধা দিতে যেত। উল্টা গালমন্দ খেয়ে সরে আসতে হত। আসতে আসতে বুঝেছে এটাই ওদের জীবনধারা। বাচ্চা গুলো হয়ত পরিবার, পরিবেশ থেকে এভাবেই যুদ্ধ করতে করতে বড় হয়। কিন্তু দিন শেষ এ নিজের বাচ্চার জন্য যুদ্ধ করতে এই মা কিংবা বাবা গুলো একবার চিন্তা করে না। দোষ থাকুক বা না থাকুক এরা যেন গা ঝাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে নেমে পড়ে একজন আরেকজন কে নিয়ে। এটা কি নিজদের স্বভাবতই বৈশিষ্ট্য নাকি নিজের সন্তানের ঢাল হয়ে দাড়ানো সেটা রুমাইসার মাথায় ঢুকে না। এ বস্তির সবগুলো বাচ্চাই রুমাইসার পরিচিত। এক মাসে এরা বেশ আপন হয়ে গেছে। রুমাইসা আসার সময় প্রতিদিন ২০ টা করে চকলেট আনবে আর একটা একটা করে এদেরকে দিবে। এরাও রুমাইসার প্রয়োজন এ ফুট ফরামায়েশী কাজে ছুটে আসে। যদিও বাচ্চার মায়েরা রুমাইসা কে দেখে কেমন যেন আড়ালে বদনাম করতে থাকে। এই বস্তির সবাই সবাইকে চিনে। সুখে দুঃখে বিপদে আপদে একজন আরেকজন এর আত্মীয় এরাই।
প্রতিদিন বিকাল বেলায় এরা উঠানে বসে একজন আরেকজন কে নিয়ে আলোচনা করবে।তবে ঝগড়া এইখানের নিত্য পুরানো ব্যাপার।
এসবের মাঝে রুমাইসা চায় না ওর মেয়েটা কে নিয়ে থাকতে। সুযোগ পেলেই আশেপাশের ফ্লাট দেখতে চলে যায় রুমাইসা। মেয়ে ইদানীং রাতে একদম ঘুমাতে দেয় না। সারা রাত ও কে বসিয়ে রাখে এক রকম। রুমাইসা বিরক্ত হয়ে গেছে একদম। একটুও ঘুমাতে পারে না।বাসায় আসতেও লেট হয় খুব। কাজের চাপ বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক।
প্রতিদিন এর মত আজ ও কাজ শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। আজ পুরো ১.৫ মাস হল কাজ করছে এখানে। ভাবল আজ যাওয়ার সময় এখান থেকে কিছু দূরে একটা বিল্ডিং আছে ফ্লাট দেখে যাবে। এদিক টায় গার্মেন্টস ছুটি হয়ে গেলে সবাই চলে যাওয়ার পর নীরব হয়ে যায় একদম। রুমাইসা মেয়েকে নিয়ে হাটতে হাটতে বিল্ডিং এর দিকে যাচ্ছে। একজন এর থেকে খবর পেয়েছিল তাই আসা। তবে জায়গা টা এত নীরব যে রুমাইসার গা ছমছম করছিল। মন বলছিল ফেরত যাই কিন্তু ব্রেইন বলছিল আজ ফেরত গেলে আবার আরেকটা দিন নষ্ট হবে। তাই জোর করেই সেদিক যেতে লাগল এগিয়ে। রাস্তা টা বেশ লম্বা। খুব সম্ভবত শেষ মাথায় বাড়ি টা।কিন্তু যেই অন্ধকার গলি চিনবেই বা কি করে। এটা নাকি শর্ট কাট। বড় রাস্তা টা অনেক ঘুরে যেতে হয়। এত সময় ওর কাছে নেই। পছন্দ হলে আজ ই টাকা দিয়ে এডভান্স করে যাবে।
কিছুদূর হাটার পর খট করে আওয়াজ পেয়ে রুমাইসা ভয়ে কেপে উঠল। তাকিয়ে দেখল গলির মোড় থেকে একটা কুকুর বেরিয়ে গেল।এতটাই নীরব চারিদিকে । দু চারজন লোক হাটা চলা করছে তেমন কেউ নেই। রুমাইসা একটু সামনে আগাতেই দেখল এক কোনায় চারজন ছেলে বসে নেশা করছে। ও তাকাতেই ওর বরাবর বসা দুইজনের নজর পড়ল ওর দিকে। কি ভয়ানক চেহারা ওদের। চোখ কেমন লাল হয়ে আছে আর নাক দিয়ে ধোয়া নিচ্ছে কিসের যেন।
রুমাইসা ভাবল এখান থেকে পালিয়ে যাওয়াই ভালো। এক পা ঘুরতেই দেখল ছেলে গুলো জায়গা ছেড়ে উঠে গেছে। রুমাইসার সিক্সথ সেন্স যেন আগাম বিপদের আভাস দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি মেয়েকে কোলের সাথে চেপে পা বাড়াল। পেছন থেকে পায়ের আওয়াজ পেয়ে লোম দাড়িয়ে গেল। মানে লোক গুলো কি পেছনেই আসছে ওর। রুমাইসা একবার সাহস করে পিছনে ফিরে তাকাল। যে ভয় করেছিল সেটাই। লোকগুলো আসছে ওর পেছনে।
রুমাইসা দ্রুত পা চালালো এক রকম দৌড়ে হাটা যাকে বলে। পেছন তাকিয়ে দেখল লোক গুলো দৌড়ে আসছে। রুমাইসা ভয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড় দিচ্ছে। লোক গুলো কি করতে পারে সেটা ওর কল্পনার ও বাহিরে। কত বার খবরে এমন নিউজ পড়েছে। মনে হচ্ছে এই অচেনা জায়গায় আজ বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে ওর মেয়েটা আর ও পড়ে থাকবে। কেউ তো ওদের চিনবে না।
রুমাইসা মেইন রোডে আসতেই আর দৌড় দিতে পারল না তার আগেই লোক গুলো ওকে ঘিরে দাড়াল। রুমাইসা ভয়ে মেয়ের সাথে মিশে রইল। লোক গুলো বাংলা ছবির ভিলেনের মত না। বরং আর দশজন লোকের মত ই স্বাভাবিক। কিন্তু নেশাখোর সেটা দেখলেই বুঝা যায়।
রুমাইসা ভয়ে ভয়ে বলল “কি চাই আপনাদের? ”
লোক গুলো নাক ফোসফাস করতে করতে বলল “সবকিছু ই চাই। তোকেও চাই, ব্যাগের ভেতর যা আছে তাও চাই। মেয়েটাকে দরকার নাই। ”
এমন সময় পাশ থেকে একজন বলল “মেয়েটারে বেচতে পারুম নিয়া। ”
রুমাইসার আত্মা কেপে উঠল কথা শুনে। মাথা ভো ভো করে ঘুরছে। এই রাস্তায় কে বাচাবে ওদের মা মেয়েকে। কান্না পাচ্ছে ওর, আর না পেরে কেদে দিল একদম। এক রকম হাত জোড় করে বলল “ভাই ব্যাগে ১০০০ টাকা আছে রেখে দেন। তবুও আমাদের মা মেয়েকে ছেড়ে দেন প্লিজ। আমরা এই তল্লাটে আর আসব না ভাই।”
একজন হেসে বলল “আমাগো তোমারে লাগব সোনা পাখি। তোমার রূপ যৌবন তো ভালোই দেখা যায়। আহো আমাগো মজা দিবা সোনা।”
রুমাইসা আবার বলল “দয়া করে ছেড়ে দেন প্লিজ। আমি আপনাদের ছোট বোনের মত। আমার দুধের বাচ্চা, আমাকে ছেড়ে দেন।”
একদম মেইন রোডের পাশে খালি জায়গায় ও কে আটকে ফেলেছে লোক গুলো। বড় বড় গাড়ি ও কে ক্রস করে চলে যাচ্ছে। কিন্তু রুমাইসার চিৎকার দেওয়ার উপায় নেই।মেয়েকে ছো মেরে ওর কোল থেকে নিয়ে গলায় চাকু ধরে রেখেছে। চিৎকার দিলেই গলায় পোচ দিবে। রুমাইসা হাত জোড় করে কান্না করছে আকুতি মিনতি করছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
একটা লোক এবার ওর হাত ধরে টান দিচ্ছে ঝোপে যাওয়ার জন্য।রুমাইসা কান্না করতে করতে বসে পড়ছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। কারণ জানে একবার
ঝোপে গেলে আজ ও জীবনের সব হারাবে। দুজন লোক ও কে টানছে হাত ধরে। প্রায় ঝোপের কাছে নিয়ে এসেই পড়েছে তখন পেছন থেকে ওর বাম হাত ধরে রাখা লোক টা কে কেউ ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে ফেলে দিল।
বাকি লোক গুলো পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখল একটা লোক সবে মাত্র বাচ্চা টা কে নিজের কোলে নিয়েছে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটা কে মেরে। লোক গুলো যেন হিংস্র হয়ে গেল। রুমাইসা তাকিয়ে দেখল সেই চেনা পরিচিত মুখ। মুখ দিয়ে বের হল “ইহান আপনি। ”
ড্রাইভার এর সহযোগিতায় বাকিদের মেরে একরকম হাত পা ভেঙে দিল ইহান। রুমাইসা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে এক রকম কুকড়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোক গুলো কে শায়েস্তা করে ইহান রুমাইসার কাছে ফিরে আসল। রুমাইসা কৃতজ্ঞতার চোখে চেয়ে রইল ওর দিকে। ইহান কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল “গাড়িতে উঠুন। আপনার মেয়ে টা কান্না করছে অনেক। ”
রুমাইসা কাদো কাদো গলায় বলল “আমার মেয়ে আর আমাকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বাচিয়েছেন আপনি। কি বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব নিজেও জানি না । আপনার এই ঋণ কোন দিন পরিশোধ হবে না ইহান সাহেব।”
“গাড়িতে উঠুন পরিশোধ এর উপায় বলছি।”
রুমাইসা ফ্যাকাসে মুখে ওর দিকে চেয়ে বলল “মানে? ”
“আরেহ ভয় পাবেন না। আমি ক্ষতি করব না। গাড়িতে উঠুন আপনি তারপর কথা বলছি।”
রুমাইসা শেষ পর্যন্ত ইহানের কথায় গাড়িতে বসল। ইহান পাশেই বসল। মেয়েটা যে কেন কান্না করছে রুমাইসা জানে। কিন্তু ইহানের পাশে বসে এই মুহুর্তে মেয়েকে তো খাওয়ানো সম্ভব না। তাই চেষ্টা করছে চুপ রাখার।
এক সময় ইহান নিজে থেকে বলল “কিছু মনে না করলে আমার কাছে দিবেন? ”
রুমাইসা অবাক চোখে তাকাল ইহানের দিকে। ইহান চোখ দিয়া ইশারা করে জিজ্ঞেস করল আবার, দিবে কিনা।
রুমাইসা হাত বাড়িয়ে ইহানের কোলে দিল ইহিতা কে। রুমাইসার হাত ইহান কে স্পর্শ করতেই রুমাইসা কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করল ভেতরে ভেতরে। ইহান কিছুক্ষন ইহিতা কে নিয়ে আদর করতেই চুপ করে গেল। মিটমিট করে ইহানের দিকে চেয়ে রইল। রুমাইসা একদম অবাক হয়ে চেয়ে রইল ওর দিকে। মেয়েটা যেন ওর নিজের ই এমন ভাবে বিহেভ করছিল ইহান। রুমাইসা গাড়ির সীটে হেলান দিয়ে ওদের দুইজন কে দেখছিল। মেয়েটা ইহানের কোলে ঘুমিয়ে আছে পরম শান্তিতে। রুমাইসা খেয়াল করল কিছুক্ষন আগের ভয় টা আর নেই। এখন নিজেকে সবচেয়ে সেফ মন হচ্ছে।
গাড়িতে বসে রুমাইসার জীবনের গল্প টা ইহান শুনল। একদম বিচক্ষনের ন্যায় চুপচাপ শুনছিল। গল্প টা শেষ হতেই ইহান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল “মিস রুমাইসা এখন বাজে রাত ৯ টা প্রায়। আপনার আপত্তি না থাকলে আমরা কি এখন কাজী অফিসে যেতে পারি? ”
রুমাইসা বড় বড় চোখ করে ইহানের দিকে তাকিয়ে রইল। অবাক গলায় বলল “কাজী অফিসে মানে! ওখানে কেন যাব? ”
“আপনাকে বিয়ে করতে চাই। এখনি বিয়ে করব আপত্তি না থাকলে।”
কথাটা এতটাই আকষ্মিক আর অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল যে রুমাইসার মুখের কথা বন্ধ হয়ে গেল।