শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ৩
তবে মা তো জানেন না কেন আমি এমনটা করছি…এটা হচ্ছে টোপ যার মাধ্যমে আমি ছটুর বোনের বিয়েতে যাবার পথ পরিষ্কার করছি…
আপাতত ওই কয়দিন এই পদ্ধতি আমাকে চালু রাখতে হবে।।।।।
আমি আজ শাড়ি পড়েছি অনেক সুন্দর করে সেজেছি..
কিন্তু কিছু মানুষ আছে যাদের সাজলে নরমালের থেকেও বেশি বিশ্রী লাগে আর আমি সেটা নিজেই……
যতই মাঞ্জা সাজ দেই না কেন বিশ্রী কে তো আর সুন্দর লাগে না
তবে অনেকেই বলে এভাবে নাকি আমাকে দেখতে ভালোই লাগে..
তখন ভাবি এদের হয়তো মাথা খারাপ হয়ে গেছে না হলে চোখ..
সেখানে আমি নিজেই নিজেকে দেখে ভৎসনা করছি…
তবে এটাও বুঝতে পারি তারা আমাকে নিয়ে মজা করছে…..
তবে আমাকে খারাপ দেখতে লাগলেও বাকি সবাই কে কিন্তু অসম্ভব সুন্দর লাগছে…
এখানে এসে খুব ভালো লাগছে আর পরিবেশটা বেশ খোলা মেলায় হওয়ায় আমার লাফালাফি বা নাচানাচিতে কোন সমস্যাই হচ্ছে না….
আমি লাফিয়ে লাফিয়ে ছটুর আপুর কাছে যাচ্ছি হঠাৎই কারো সাথে বেশ জোড়ে ধাক্কা খেলাম….
তবে যেখানে আমার পড়ে যাবার কথা সেখানে সেই লোক মাটিতে পড়ে বসে আছে আর ওনার জায়গায় আমি চিৎকার করছি….
আমার চিৎকারের কারন আমাফ ওত সুন্দর জুতো জোড়ায় কাদা মাটি লেগে গেছে।।।
আর ওই লোক সেখানেই মাথা নিচু করে নিচেই বসে আছে যার মুখটা এখনো আমি দেখিনি….
তবে এতে আমার কোন আগ্রহ নেই…
তাই আবার চিৎকার করে উঠলাম তবে এবার মাথায় আঘাত পেয়ে।।।।
মাথায় ব্যথা আমি কোন কালেই সহ্য করতে পারি না।
তাই মাথায় হাত দিয়েই চোখ খুললাম….
চোখ খুলে দেখি আমি আমার রুমেই বসে আছি
তাও আমার চেয়ারে বসা আর আমার সামনে নীলাদ্রি দা বসে আছেন…
এ দৃশ্য যেন আমার ঠাহর হচ্ছে না..
তাই চোখ কচলে ভালো করে সামনের দিকে তাকালাম।
কিন্তু না আমিতো সেই একই যায়গায় তাও আবার বসে…..
তারমানে আমি এত সময় স্বপ্ন দেখছিলাম।
হায় হায় রে এত সুন্দর স্বপ্ন কি আজ না দেখলেই হতো না।
ধুর ভালো লাগে না…..
আমাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে নীলাদ্রি দা বললেন….
— রাতে ঘুমাস না, না কি যে সামনে পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলি….
— আপনি আমার মাথায় মেরেছেন কেন??
—- আধঘন্টা ধরে ডাকছি,তাই উঠছিলি না, তাই আমি খাতা ফোল্ড করে জাস্ট একটু মাথায় ছুইয়েছি…
আর এতেই এত হাইপার হচ্ছিস কেন???
যেখানে আমার হাইপার হবার কথা ।।
এত সময় ধরে তোর মত ফাউলের সামনে বসে আছি
সময় নষ্ট করে…….
তা কি স্বপ্ন আর বিরবির করছিলি….
প্রেমে পড়েছিস নাকি ( তাচ্ছিল্য করে)
— প্রেম?? আর আমি…..
—– তা ঠিক তোর মতো #শ্যামারঙা মেয়ের সাথে কে প্রেম করবে।( বলেই হেসে উঠলেন)
ওনার কথা শুনে বেশ অবাক হলাম
“যে ব্যক্তি তার লেখায় শ্যামাদের নিয়ে কথা বলেন,তাদের বিদ্রোহের কথা বলেন, তাদের অনুপ্রেরণা দেন ”
সেই ব্যক্তিই আজ আমাকে এভাবে কথা বলছেন…..
—- হ্যা।,তাই তো…
আমরা #শ্যামারঙা রা তো আজও এই সমাজে আপনাদের আর পরিবারের দয়ায় বেচে আছি…..
—– আমার হাতে সময় নেই তোএ ফাউল কথা শোনার জন্য,,,জাস্ট পড়া গুলো তাড়াতাড়ি করে দে।
এখানে আমার ভালো লাগছে না….
রাতের খাওয়া সেরে রুমে বসে আছি।
এত বছরেও যে গায়ের রং আমাকে কোন কিছু থেকে দমাতে পারেনি।।
আজ সেই রং নিয়ে নীলাদ্রি দার কথা শুনে ঘোরে চলে যাচ্ছি।
আচ্ছা সত্যিই আমাদের #শ্যামারঙা দের নিজস্বতা বলতে কিছুই নেই…..
আমার পরিবারের সবার গায়ের রংই দুধে আলতা
যেন সামান্য ফুলের টোকাতেই রক্ত ঝরে…
আর সেখানে আমিই তাদের উল্টোটা হয়েছি,
সামান্য টোকা কেন হাজার আঘাত করলেও# শ্যামারঙা দেহ আমার লালে পরিনত হয় না…..
চলবে……
শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ৪
আমার পরিবারের সবার গায়ের রংই দুধে আলতা
যেন সামান্য ফুলের টোকাতেই রক্ত ঝরে…
আর সেখানে আমিই তাদের উল্টোটা হয়েছি,
সামান্য টোকা কেন হাজার আঘাত করলেও# শ্যামারঙা দেহ আমার লালে পরিনত হয় না…..
সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকালে কলেজে গেলাম।ক্লাস শেষ করে বাড়ি আসার পথে মোড়ে ছটুর সাথে দেখা।।।
তার ইচ্ছা তার আপুর বিয়ের শপিংয়ে যেন আমি তাদের সাথে থাকি।
আমিও আর অমত করলাম না ওর কথায়।
কারণ ওদের সাথে কিছু সময় থাকলে ও তো মনটা ভালো থাকবে…,
প্রতিদিনকার মতো এখন নিয়ম মেনে প্রতিদিন যাচ্ছে।
মায়ের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে ছটুর সাথে শপিং য়ে জয়েন করার জন্য বেরিয়ে পরলাম….
বাসার নিচে আসতেই দেখি ছটু আর আমার বয়সী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটি দেখতে অসম্ভব সুন্দরী।
ছটু মেয়েটির সাথে আমার পরিচয় করে দিলো।
মানে মেয়েটি হচ্ছে ছটুর আপু যার নাম মনিরা….
সারা রাস্তা গল্প বা বকবক যে যাই বলুক না কেন তাই করতে করতে মলের কাছে পৌঁছে দেখি সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমরা গিয়ে তাদের সাথে যোগ দিলাম।
শুভেচ্ছা বিনিময় করে কথা বার্তা বলছি কিন্তু এদের মলের ভিতর যাবার নামই নেই……
হঠাৎই কানে এলো একটি পরিচিত কন্ঠস্বর।
আমার মতোই কন্ঠস্বরের শব্দ্ব পিছনে ফিরে তাকালাম….
যাদের দেখলাম বেশ অবাক হলাম কারণ এরা তো নীলাদ্রি দা আর তার বন্ধুদের দল।
এবার আমার অবাকের মাত্রা ছাড়িয়ে গেল কারণ
নীলাদ্রি দা ও তার বন্ধুরা নাকি ছটুর আপুর হবু বরের জনা মানে দুলা ভাইয়ের বিয়ের শপিং করতে এসেছ…..
আর পুরো বিষয়টা হলো যে, মনিরা আর তার হবু বরের বিয়ের শপিং আজ একসাথেই হবে….
তবে আমার প্রশ্ন বর কে??
আর আমার জানা মতে ওনাদের বন্ধু মহলে একজন ব্যক্তিই মুসলিম আর তিনি হলেন মিরাজ ভাই।।।।
তারমানে মিরাজ ভাই আর ছটুর আমার বিয়ে…..
বাহ….দুজনের নামটা কি সুন্দর মিলেছে।।।।
একজনের নাম মনিরা আর অন্যজনের মিরাজ……
সবার কথার এক ফাকে আমার আর নীলাদ্রি দার চোখাচোখি হয়।
উনি আমাকে এখানে দেখে বেশ অবাক হয়েছেন এটা নিশ্চিত তবে যখন ছটুকে আমার সাথে কথা বলতে দেখলেন আর সেই সাথে ছটুর মুখ দিয়ে
“” বসদিদি”””
ডাকটা শুনে ওনার বিরক্তি ও আমি টের পেলাম…
তবে আমার কি আমি তো আর ওনার কাজে আসিনি আমি এসেছি ছটুর জন্য….
বিয়ের শপিং শেষ করতে করতে করতে রাত প্রায় আট টা…..এর মধ্যে আমার মা না হলেও দশবার ফোন দিয়েছেন…
কারণ ‘নীলাদ্রি ‘ পড়াতে আসবে আর আজ যদি সে এসে ফিরে যায় তবে আমার খবর আছে…..
কিন্তু মাকে যখন বললাম,
তিনিও আমার মতো বর পক্ষের হয়ে এখানেই আছেন..
তখন আমার মা শান্তি পেলেন…….
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বসতে না বসতেই নীলাদ্রি দা হাজির।
আমি ওনাকে পড়া নেবার কথা বলতেই
উনি বললেন…..
—– মেঘলা
আমার একটা হেল্প লাগবে, খুব দবকার করতে পারবি।
আমি ওনার কথা শুনে অবাকের ঠ্যালায় টাস্কি খাইলাম… আজ স্বয়ং নীলাদ্রি সেন আমার মতো ফাউলের কাছে তিনি হেল্প চাচ্ছেন….
তারপর আমি বললাম…..
— হ্যা বলুন
চেষ্টা করবো…
—- আসলে মিরাজের বিয়েতে আর গায়ে হলুদে আমরা ঠিক করেছি একই পাঞ্জাবি পরব….
—- তো পড়েন…..
কে মানা করেছে….
—- আরে প্রবলেম তো সেখানেই
আমরা পাঞ্জাবি অর্ডার দিতে পারছি না….
— কেন….
—- এত কম সময়ে কেউ সেল দিতে রাজি হচ্ছে না.., এখন তুই ভরসা…
—- আমি???? আমি কই পাবো
না না আমি পারবো না….
এবার উনি যা বললেন তাতে আমার স্ট্রোক করার উপক্রম হয়েছে….
চললে…..