শ্যামারঙা,পর্ব:৫+৬

শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ৫

—- আমি???? আমি কই পাবো
না না আমি পারবো না….

এবার উনি যা বললেন তাতে আমার স্ট্রোক করার উপক্রম হয়েছে….

— প্লিজ,
আমি জানি তুই তোর এই নীলাদ্রি দার জন্য এটা করতে পারবি।আর আমিতো অনেক ভালো..
কখনো তোকে বকেছি,রাগ করেছি….
বল…..

— বলে কি এই লোক..
তিনি আমাকে কখনো বকেন নি…..

কিন্তু তার করুন মুখ দেখে যেমন মায়া লাগছে তেমন হাসিও পাচ্ছে..
তাই আর দেরি না করে আমার এক ফ্রেন্ডর কথা ওনাকে বললাম,
যে নতুন অনলাইন বিজনেস শুরু করেছে,,

আমার কথায় মনে হলো তিনি স্বস্তি পেয়েছেন…
কিন্তু আমি ডিজাইন জানতে চাইলে তিনি বলেন…
— তোর পছন্দ মতো দিয়ে দে…..

আমি ওনাকে অনেক বার আমার সেই ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলতে বলেছি,কালার,সাইজ আর পেমেন্ট নিয়ে..
কিন্তু তিনি কথা বলতে নারাজ…

তাই আর কি করা যাবে, ওনার কাছ থেকে সব কিছু যেনে পরদিন আমি অর্ডার দিয়ে দেই বিয়ের আর হলুদেএ পাঞ্জাবি গুলো…..

এতে আমার ফ্রেন্ড ও খুশি একসাথে এত অর্ডার পেয়ে আর নীলাদ্রি দাও চিন্তা মুক্ত হলেন…..

কাজ শেষ হতেই নীলাদ্রি দা আমাকে একটি শুকনো “ধন্যবাদ ” দিলেন..
আর আমিও তার বলা মহামূল্যবান ধন্যবাদ হাসি মুখে মেনে নিলাম…..

এভাবেই এক সপ্তাহ কাটলো,,
এর মধ্যে ছটুর আরও একটি আবদার আমাকে পাহাড় সমান চিন্তায় ফেললো…

ছটুর ইচ্ছা আমি যেন মনিরার বিয়ের আগের দিন ওদের বাড়িতে যাই,,
আর ওদের সাথে তাল দেই….

আগামীকাল মনিরার বিয়ে।
আমি এখন রেডি হচ্ছি ছটুদের বাড়িতে যাবার জন্য।।

আমার মা কোন মতেই রাজি ছিলেন না,,আমি টানা দুইদিন ধরে বুঝিয়ে ও মাকে রাজি করাতে পারিনি,,৷

তবে কিভাবে জানি না আমার ওই সম্যার সমাধান নীলাদ্রি দা দশ মিনিটেই সমাধান করে দিলেন।

তিনি যে মাকে কি এমন বললেন কে জানে??

তবে জাই বলুক না কেন,
আখিরে তো আমার যাওয়া হচ্ছে।
এটাই বেশি…..

বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে আর আমি রুমে রেডি হয়ে বসে আছি আর কখন এই রিমঝিম ধারা থামবে তার অপেক্ষা করছি….

তখনই ফোনে কল এলো নীলাদ্রি দার।
আমি তো অবাক এই নাম্বার দেখে।

তারপরও ফোন তুললাম…
——হ্যালো,
নীলাদ্রি দা বলুন…

—- হ্যা,
এই তুই আমার নাম্বার চিনলি বা জানলি কেমনে…

— এই রে,এবার কি বলবো…
ওও কিছু না,,
আপনি বলুন কি বলবেন….

—- আচ্ছা,শোন,

পাঞ্জাবি গুলো আমার এখন মানে একটু পর লাগবে,,মাপ-ঝাপ ঠিক আছে কি না দেখতে হবে তো…
তাই আমি নিতে আসবো,,, আমি কল দিলে তুই তোদের গেটের কাছে এসে দিয়ে যাবি তো….

— আমি….
এতোগুলা বড়ো বড় ব্যাগ নিয়ে নামবো কিভাবে….
হ্যালো….
এইরে উনি তো ওনার কথা বলে ফোন কেটে দিয়েছেন….

আমি এখন ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।
বৃষ্টি এখন কমে গেছে তাই গাছ গুলো দেখতে এসেছি…..
কারণ এই মুহূর্তে গাছের পাতায় জমে থাকা ছোট ছোট জল কনা গুলো আমার খুব পছন্দের….

ছাদে পায়চারি করছি আর নীলাদ্রি দার ফোনের অপেক্ষা করছি..
হঠাৎ চোখ গেল রাস্তায় সাইডে ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা একজন যুককের দিকে।

বৃষ্টির রিমঝিম ধারা ভিজে পুরো কাকের মতো অবস্থা তার…
লম্বা চুল গুলো মুখের সামনে এসে পড়ায় মুখ দেখা যাচ্ছে না,,,
আর আমি চশমা ছাড়া অতটা পরিষ্কার দেখতে পারছি না….
তবে বৃষ্টিতে ভিজলে যে কোন মানব কে এত সুন্দর লাগে তা আমার জানা ছিলো না….

সবচেয়ে সুন্দর লাগছে তার পড়নের কালো পোশাকে..
কালো পোশাক যেন এই পরিবেশে তার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে……

তাকে দেখে কেন জানি না আমার চোখ সেখানেই আটকে গেছে।

মনের অজান্তেই এক মুহূর্তে তার প্রতি এক ভালো লাগা শুরু হলো….
তবে মুখশ্রী দেখতে না পারায় খুব রাগ হচ্ছিলো…..

আমার ঘোর কাটলো ফোনের আওয়াজে,,
স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি নীলাদ্রি দার নাম্বার তাই ফোন কেটে দিয়ে আবার রাস্তার সেই দিকটায় তাকালাম…
কিন্তু মন্দ কপাল আমার তাকে আর দেখতে পেলাম না….

মন খারাপ করে রুনে এসে সব কিছু নিয়ে মাকে “আসছি” বলে সেই পাঞ্জাবির ব্যাগ গুলো সাথে আমার কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে নিচে নামলাম….

গেটের কাছে আসতেই দেখি অবাক করা দৃশ্য।।।

সেই কালো ড্রেসাপের ব্যক্তি আমাদের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর আমি ভেতরে….
এযেন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।।।

তবে আমি শিওর না ইনিই তিনি কিনা।
কারণ সে আমার দিকে না তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে….

মন কে শানেকরে নীলাদ্রি দাকে ফোন দিলাম….
কিন্তু তিনি কেটে দিলেন…
তবে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে যেই না আমি আবার ফোনদেবো..
এর মধ্যেই পিছন থেকে ধমকের আওয়াজ পেলাম….

— এতো টাইম লাগে সিড়ি বেয়ে নিচে আসতে।
দিনদিন খাচ্ছিস আর ফুলচ্ছিস….

কথা গুলো শুনে পিছনে ফিরে তাকাতেই আমি টাস্কি খাইলাম,,
আমার কথা যেন গলাতেই আটকে গেছে চোখ যেন এটা বিশ্বাস করতে চাইছে না….

চলবে…..

শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ৬

কথা গুলো শুনে পিছনে ফিরে তাকাতেই আমি টাস্কি খাইলাম,,
আমার কথা যেন গলাতেই আটকে গেছে চোখ যেন এটা বিশ্বাস করতে চাইছে না….

কালো পোশাকে আর মুখের সামনে বিন্দু বিন্দু জল সহ লম্বা চুল গুলো থাকায় নীলাদ্রি দাকে কোন স্বর্গের দূত বলে মনে হচ্ছে….

ওনার দিকে তাকিয়ে কেন জানি আমার মনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূত হলো..
কিন্তু মুখে কথা বলার কোন শক্তি নেই….

আমি কেন জানি ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না।তাই চোখ নামিয়ে নিলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে নীলাদ্রি দা আবার ধমক দিয়ে উঠলেন…..

—-কিরে চুপ করে আছিস কেন….

— না,,,, এমনই

— দে ব্যাগ গুলো নিয়ে যাই….

—-নিন (কেন জানি আমার শরীর কাপছে)

—– বাবা গো……
এতভার কেন??? বলেই আমার দিকে তাকালেন…
এই,তুই কি কোথাও যাবি নাকি
ব্যাগ কেন সাথে….

—- আমি ছটুদের বাড়িতে যাব এখন….

—- ওও….
তবে মনে হচ্ছে এখন আর এখানে রিক্সা পাবি না… তাহলে চল আমি বাইকে করস তোকে দিয়ে আসি…..

ওনার কথায় আমি আকাশ থেকে পড়লাম…
উনি নাকি আমাকে ওনার নিজের বাইকে ওঠাবেন…

আজ কি হচ্ছে এসব আমার সাথে। এবার না আমি পাগল হয়ে যাই….

আমার শত মানাতেও বাধ্য হয়ে বাইকে উঠতে হলো…….

রাত এখন প্রায় বারোটা বাজে।এখানে আসার প্র থেকে সারাদিন খুব ব্যস্ততার সাথে কেটেছে…
কাল সকালে মনিরার হলুদ আর বিকেলের পরে বিয়ে…

এই নিয়ে সবাই এখন সবাই ব্যস্ত….

সকাল হতে না হতেই সারা বাড়িতে বিয়ের ধুম পড়ে গেল…ছোট থেকে বড় মেয়েরা সবাই হলুদ শাড়ি আর আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনায় সেজেছে আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি…

আমি মনিরাকে সাজাতে ব্যস্ত।
মিরাজ ভাই বলেছেন গায়ে হলুদের সাজ যেন বাড়িতেই সাজানো হয় আর সাথে যেন থাকে তাজা ফুলের গহনা…

সেই মোতাবেক সাজিয়ে মনিরাকে ছাদের এক কোনায় করে রাখা মঞ্চে বসিয়ে দিলাম….

নাচ,গান আর হৈহুল্লোড়ে বাড়ি গমগম করছে….

এরই মাঝে ছেলে পক্ষের লোকরা মানে নীলাদ্রি দা আর তার বন্ধুরা সাথে মিরাজ ভাইয়ের পরিবারের লোকেরা এসেছে…..

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here