শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ৭
সেই মোতাবেক সাজিয়ে মনিরাকে ছাদের এক কোনায় করে রাখা মঞ্চে বসিয়ে দিলাম….
নাচ,গান আর হৈহুল্লোড়ে বাড়ি গমগম করছে….
এরই মাঝে ছেলে পক্ষের লোকরা মানে নীলাদ্রি দা আর তার বন্ধুরা সাথে মিরাজ ভাইয়ের পরিবারের লোকেরা এসেছে…..
আমিও আজ হলুদ শাড়ি পড়েছি কিন্তু নাচ,গান এর মধ্যে আমি নেই…
সবাই খুব মজা করছে।
এই প্রথম বার আমি ছেলেদের হলুদ পাঞ্জাবি পড়া দেখলাম…সবাইকে কেমন একইরকম দেখতে লাগছে
শুধু নীলাদ্রি দাকে ছাড়া।
হলুদ পাঞ্জাবি আর কাধ সমান লম্বা চুলে তাকে “হুমায়ুন আহমেদ ” এর” হিমু” এর মতো লাগছে।
যদিও “হিমু ” কাল্পনিক চরিত্র তবুও আমার কাছে তেমনই…..
গায়ে হলুদের শেষে সবাই এখন বিয়ের জন্য ব্যস্ত। হলুদের পর সামান্য খাওয়া দাওয়া করে আর ফ্রেশ হয়ে আমি মনিরাকে নিয়ে পার্লারে চলে গেলাম…
পথে আমাদের সাথে দেখা হলো নীলাদ্রি দার সাথে।তিনি আমাকে একটি শপিং ব্যাগ দিলেন…
কিন্তু কিছু না বলেই চলে গেলান বাইক নিয়ে….
সময় অল্প আর ব্যস্ততার কারণে বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে আমরা পার্লারে গেলাম……
সন্ধ্যার পর পরই বাইরে “বর এসেছে ” “বর এসেছে ” শব্দে শোরগোল বাধে গেছে।
সবাই গিয়ে গেট ধরেছে টাকার আশায়।
কিন্তু ছেলে পক্ষের লোকরা সবার আশায় জল ঢেলে দিচ্ছে..
এটা দেখে নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারলাম না। ছেলে পক্ষের লোকদের সব আশায় জল ঢেলে দিলাম আমি সেই মুহূর্তে উপস্থিত হয়ে।।
অনেক তর্কবিতর্ক আর কথার মারপ্যাঁচের পর অবশেষে টাকা নিয়ে আমরা জয়ী হলাম…
এরপর অনেক আনন্দের সাথে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো এবং সেই সাথে বিদায়।
এখন আমার বাড়িতে যেতে হবে। কিন্তু এবারও বাধ্য হয়ে মায়ের আদেশে নীলাদ্রি দার সাথে তার বাইকে করে বাড়িতে ফিরতে হলো….
এভাবেই দিন যাচ্ছে।কেন জানি ইদানীং নীলাদ্রি দার কথা মনের অজান্তেই মনে চলে আসে।
তার কথা, তার সেই কালো পোশাক পড়া বেশ এর কথা,হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে হিমু সাজের কথা ভেবেই মনে আনন্দ হয়..
সাথে হয় ঈষৎ লজ্জা ও অনূভুত হয়…
নীলাদ্রি দা মনিরার বিয়ের পর দিন ঢাকায় চলে গিয়েছেন চাকরির জন্য..
শুনেছি সেখানে নাকি সেনাবাহিনীর চাকরির জন্য তাকে ডাকা হয়েছে….
কিন্তু এতদিন হওয়ার পরেও তার না আসার কারন আমি জানি না….
তবে মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে তার সাথে কথা বলতে কিন্তু কোন কারণ দেখিয়ে কথা বলবো তা খুঁজে পাই না….
আর কারণ খুঁজে না পাবার অন্যতম কারণ..
নীলাদ্রি দা র আমাকে কোন কথা বলার প্রয়োজন হয়ে বা মনে করলে তিনি আমার মায়ের কাছে ফোন দিয়ে বলেন….
তাই আমার আর তার সাথে কথা বলা হয়ে ওঠে না।।।।
সেদিন নবুকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম তবে সরাসরি আমার মনের অবুঝ অব্যক্ত কথা আর ওকে বলা হয়ে ওঠে নি…
অনেক জড়তা নিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম…..
—– নবু নীলাদ্রি দা আমাকে আর এখন পড়াতে আসেন না কেন রে???
—- আরে..
তুই জানিস না। দাদাভাইয়ের তো সেনাবাহিনীতে চাকরি হয়ে গেছে।
এই সুখবর তো আমাদের এলাকার সবাই জানে…..
এর পর আমার আর নবুর সাথে কথা হয়নি…
তবে শুনেছি এখন থকে প্রায় ছয় মাস তাকে ট্রেনিং এ থাকতে হবে….
তার চাকরির কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছিলাম কিন্তু দীর্ঘ সময় না দেখতে পারার কষ্টটা ভেতরে ভেতরে আমাকে তার প্রতি আরও দূর্বল করে ফেলছে।।।।
চলবে….
শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ৮
তার চাকরির কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছিলাম কিন্তু দীর্ঘ সময় না দেখতে পারার কষ্টটা ভেতরে ভেতরে আমাকে তার প্রতি আরও দূর্বল করে ফেলছে।।।।
আস্তে আস্তে দিন যাচ্ছে পরিবার, পরিবেশ,সমাজ আর সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমিও এগিয়ে যাচ্ছি।
এর মধ্যেই আমার ২য় বর্ষের পরিক্ষা শেষ হয়েছে,,
আমি এখন পুরোপুরি ফ্রী সময়ে কাটাচ্ছি।
এই কয়দিনে সকল ছেলেমানুষি গুলো ও ছেড়ে দিয়েছি।যারা আমার সাথে কাজ করতো তাদেরও নিজেদের অবস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি…
তাদের পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছি……
এত কিছুর পরও আমার পরিবারের একটাই চিন্তা। আমার মতো #শ্যামারঙা কে কিভাবে তারা বিয়ে দিবেন….
তবে আমার চিন্তা একটাই কবে নীলাদ্রি দা আসবেন আর আমি আমার মনের সকল অব্যক্ত কথা গুলো তার সামনে ব্যক্ত করবো…..
একদিন সকালে খুব ভোরে ফোনটা বেজে উঠলো।
কিন্তু আমার অলস হাত ফোনটা হাতে নিতে নারাজ..
পরপর পাচ বার রিং হবার পর এই কর্কশ আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে।
কোনমতে ফোনটা হাতে নিয়ে আন্দাজে রিসিভ করে কানে নিলাম…..
— হ্যালো ( ঘুমন্ত কন্ঠে)
— মরে গেছিস নাকি বেচে আছিস??
যে এতবার ফোন দেওয়া লাগে…
কথা গুলো শুনে আমি বিছানা ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠলাম।
এই কণ্ঠ তো আমার পরিচিত আর এখানও আগের মতো গম্ভীরতা আছে তার স্বরে।।।।
যেমনটা প্রায় বছর খানেক আগে নীলাদ্রি দার কন্ঠে ছিলো…..
— না মানে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম…
— সারাজীবন তো ঘুমিয়েই গেলি।এত বার ফোন দিলে মরা মানুষও জেগে যায়।
যাক গে….
আগামী সপ্তাহে আমরা কুয়াকাটা যাবো…
লিষ্টে আমার বন্ধুরা আর নবু তোর নাম দিয়েছে তাই তোকে জানালাম ।।
আর ফোন দিতে পারবো না।কোন কিছু জানার প্রয়োজন হলে নিজে ফোন দিয়ে জেনে নিবি….
বলেই ফোন কেটে দিয়েছেন আর আমি বোবা রোবটের মতো শুধু তার কথা গুলো শুনলাম…..
কেমন মানুষ তিনি এতদিন বাদে ফোন করলেন অথচ একটি বার আমি কেমন আছি।
আর জিজ্ঞেস করবেন সেই সময়ইবা তার আছে কোথায়??
তিনি তো এখন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা।।।
যাকে বলে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট…
তার ভাবই তো এখন অন্য রকম……
তবে চিন্তা হচ্ছে আমি বাসায় কিভাবে বলবো ওনাদের সাথে যাবার কথা।কিন্তু যেকরেই হোক আমাকে তো ওনাদের সাথে যেতেই হবে।।
এটাই উপযুক্ত সময় আমার মনের অব্যক্ত কথা অনাকে বলার….
এভাবে চিন্তা করতে করতে সপ্তাহের আর মাত্র কালকের দিন হাতে আছে।কিন্তু বাসায় এখনো আমি কিছুই বলে উঠতে পারিনি…..
বিকেলে রুমে বসে আছি আর চিন্তা করছি কিভাবে বাসায় ম্যানেজ করবো….
তখনই কলিংবেল র আওয়াজ হলো তবে সেদিকে আমার মন নেই।।
হঠাৎই মায়ের উত্তেজিত কন্ঠ আমার কানে এলো।
আমি মায়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে গেলাম তার কাছে…..
চলবে…..